আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ পর্ব-১৩+১৪

0
268

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(১৩)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(২৫)
মেহরিন কিছুটা আনমনা ভাব নিয়ে খাবারের ট্রেটা হাতে রাখা অবস্থায় নিজেদের রুমে প্রবেশ করে বিছানার পাশে থাকা টেবিলের সম্মুখে এসে স্থির হয়ে দাঁড়ায়। কিয়ৎক্ষণ পর কাঁধে কারোর স্পর্শে কিন্ঞ্চিত ভ*র*কে উঠে মেহরিন পিছন ফিরতেই রিজওয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে। রিজওয়ান বললো….

—“কখন থেকে তোমাকে ডেকে যাচ্ছি শুনছোই না তুমি। কোন চিন্তায় এতো গভীর ভাবে ডুবে আছো মেহরিন!”

রুমির বিষয়টা মেহরিন এখন-ই রিজওয়ানকে বলবে নাকি বলবে না সেই বিষয়ে ওর মন ভিষণ ভাবে খচখচ করছে। অতঃপর মেহরিন এই বিষয়ে ভাবার জন্য নিজেকে কিছুটা সময় দিতে আপাত পরিস্থিতি সামলাতে বললো….

—“ভাবছিলাম এই সংসারটা তো আমার, বড় ভাবী, মেজো ভাবীর আমাদের সবারই। আমরা একে-অপরের সাথে রে*ষা-রে*ষি না করে যদি মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করি তাহলে কি হয় না! মানছি বড় ভাবী, মেজো ভাবী বিগত সময় গুলোতে আমাদের দু’জনের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন, ক*টু ও ক*ষ্ট দায়ক কথা শুনিয়েছেন কিন্তু আমরাও যদি এখন তাদের সাথে তাদের মতো আচার-ব্যবহার করি তাহলে আমাদের আর তাদের মধ্যে তো কোনো পার্থক্য থাকবে না বলো! তোমার নতুন চাকরি হয়েছে দিনের পুরো সময়টা এমনকি রাতের প্রথম ভাগও তোমাকে কাজের জন্য বাহিরে থাকতে হবে প্রতিদিন। কিন্তু আমাকে তো ২৪টা ঘন্টাই এই বাড়ির ভিতরেই থাকতে হবে। এই বাড়িতে বসবাসরত বাকি মানুষগুলোর সম্মুখেও দাঁড়াতে হবে। সারাজীবন কি এভাবেই তাদের সাথে আমরা আমাদের সাথে তারা রে*ষা-রে*ষি করেই কাটিয়ে দিবো বলো?”

মেহরিনের বলা কথাগুলো রিজওয়ান নিরব হয়ে শুনে। কিয়ৎক্ষণ পর মেহরিন আবারও বললো….

—“বাবার বয়স হয়েছে। কিছুদিন পর এমনিও তিনি নিজ থেকেই দেশে একেবারের জন্য চলে আসবেন। বাড়ির মানুষগুলোর আসল চেহারা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। হুট করে সবকিছু জানতে পেরে যদি তার বড় কোনো ক্ষ*তি হয়ে যায় তখন কি হবে? যদি তিনি দেশে ফেরার আগেই কিংবা তাকে সবার সম্পর্কে সব সত্য জানানোর পূর্বেই আমাদের মিলেমিশে চলার চেষ্টার ফলসরূপ পরিবারের সবার চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ পরিবর্তন হয় তাহলে কি খুব খারাপ হবে!”

রিজওয়ান মেহরিনের দু’কাঁধে নিজের দু’হাত রেখে বললো…
—“তোমার মতো এতো সহজ ভাবে যদি ওরা সবাই চিন্তা করতো মেহরিন তাহলে ওরা নিজ থেকেই অতীতে নিজেদের করা কাজের জন্য মনে মনে অনুশোচনা করতো, লজ্জা বোধ করতো। বিগত দুইদিন ধরে আমি ওদের প্রত্যেকের চেহারায় আমাদের জন্য কেবল রাগ-ক্ষো*ভ ব্যতিত কিছুই দেখি নি। বি*ষা*ক্ত সা*প দের শত চেষ্টা করেও নিজেদের বশে আনানো যায় না। তারা কেবল আমাদের দেখানোর জন্য নিজেদের বশীভূত বলে দাবী করে। কিন্তু তাদের নিজস্ব সময় ও সুযোগ হলে তারা আমাদের নিজেদের শরীর দ্বারা পিষ্ট করে বি*ষ দাঁত অবশ্যই বসিয়ে দিবে। তবে তুমি নমনীয় হয়ে চলতে চাইছো যখন তখন চলতে পারো। কিন্তু নমনীয় হতে ধরে এসব বি*ষ ধর সা*প*দের আর কখনও নিজের মাথায় ছো*ব*ল দেওয়ার মতো সুযোগ দিও না। রইলো বাবার কথা! তাকে একদিন না একদিন সব সত্য সম্পর্কে অবগত হতেই হবে। আর এই সত্য জানানোর জন্য আমরা যদি অধিক সময় নিয়ে ফেলি তাহলে আমাদের চারপাশে থাকা বি*ষ ধর সা*পে*রা তাদের বি*ষা*ক্ত চিন্তা-ধারা দ্বারা বাবার মন ও মস্তিষ্ক দখল করে নিবে। তাই আমি খুব শীঘ্রই আমার মতো করে বাবাকে সম্পূর্ণ সত্য সম্পর্কে অবগত করার যথাযথ চেষ্টা করবো।”

রিজওয়ানের বলা প্রতিটি কথার মানে মেহরিন খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে। অতঃপর মেহরিন স্মিত হাসি দিয়ে বললো….

—“কথা শুনে কিংবা বলে তো তোমার পেটের ক্ষুধা নিবারণ হবে না। খাবার গুলোও মনে হয় ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। একটু অপেক্ষা করো আমি আবার খাবারগুলো আবার গরম করে নিয়ে আনতেছি।”

এই বলে মেহরিন খাবারের ট্রে টা নিতে টেবিলের দিকে অগ্রসর হতেই রিজওয়ান মেহরিনের হাত ধরে ওকে নিজের কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে বললো…

—“আর নতুন করে খাবার গরম করতে হবে না তোমায়। একটু ঠান্ডা হলেও সমস্যা নেই। তুমি আমায় নিজ হাতে খাইয়ে দাও যদি তাহলে এই খাবার-ই আমার কাছে অতুলনীয় স্বাদের হয়ে যাবে।”

রিজওয়ানের এরূপ কথা শুনে মেহরিনের ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। মেহরিন হাসিমুখে বললো…

—“ঠিক আছে, বসো তুমি। আমি নিজ হাতে তোমায় খাবার খাওয়াবো আজ।”

অতঃপর রিজওয়ান বিছানায় গিয়ে বসে। মেহরিন টেবিলের উপর থেকে খাবারের ট্রে টা নিয়ে রিজওয়ানের সম্মুখে বিছানায় বসে খুবই যত্নসহকারে ওকে খাইয়ে দেয়। সম্পূর্ণ খাবার খাওয়া শেষ হতেই রিজওয়ান বললো….

—“অনেকদিন পর এতোটা তৃপ্তি নিয়ে খাবার খেলাম বউ।”

মেহরিন হাসিমুখে হাত ধুয়ে নিজের আঁচল দিয়ে রিজওয়ানের মুখ মুছে দেয়।

(২৬)
পরেরদিন সকালবেলা…….
রিজওয়ান আর মেহরিন ব্যতিত সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। সেই সময় রাজিবুল বললো….

—“নানান ঝামেলায় তোমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানানোর কথা স্মরণহারা হয়ে গিয়েছিলো আমার।”

রাহেলা খাবার খেতে খেতে বললেন….
—“কি বিষয়?”

উপস্থিত বাকিদের মাঝেও রাজিবুলের থেকে সেই বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য যে কৌতুহল কাজ করছে তার ছাপ তাদের সকলের চেহারায় স্পষ্ট ফুটে আছে। কিয়ৎক্ষণ পর রাজিবুল বললো….

—“আমার অফিসের ম্যনেজার স্যারের স্ত্রী ১মাস আগে হার্ট অ্যা*টাক করে মা*রা গিয়েছিলেন। তার একজন ১২ বছর বয়সী ছেলে আর ৪ বছর বয়সী একজন মেয়ে আছে। আকস্মিক ভাবে স্যারের স্ত্রী মা*রা যাওয়ায় তার এবং তার সন্তানদের অবস্থা বেহাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল তিনি আমাকে পারসোনালি ডেকে বললেন এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য তার একজন সঙ্গী প্রয়োজন। অফিস, সংসার, বাচ্চাদের একসাথে তার একার পক্ষে সামলানো অসম্ভব হয়ে উঠছে। ম্যনেজার সাহেবের বয়স একটু বেশি হলেও তার মানসিকতা অনেক ভালো। দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ তিনি ঐ কোম্পানিতে চাকরি করছেন। আমি তো তাঁকে বিগত ৫বছর থেকেই চিনি। তার সাথে সকল কাজে উঠাবসা আমার। দুই-তিনবার ওনার বাড়িতেও গিয়েছিলাম আমি। বিশাল বড় বাড়ি ওনার। জায়গা-জমির ও অভাব নেই। ম্যনেজার সাহেবের কথার ধরনে যখন আমি বুঝতে পারলাম তিনি ২য় বার বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হতে চাচ্ছেন তখন তার জন্য মেয়ের খেয়ালে আমার রুমির কথার স্মরণ হয়েছিলো।”

রাজিবুলের মুখে এরূপ কথা শোনার পর রুমি অত্যন্ত অবাক হয়ে রাজিবুলের দিকে তাকায়। ওর হাতে থাকা খাবার প্লেটে পরে যায়। রফিকুল হাসিমুখে বললো….

—“আমাদের ছোট্ট বোনটা যে বিয়ের বয়সী হয়ে গিয়েছে সে কথা আমার খেয়াল হারাই হয়ে গিয়েছিলো।”

—“আম্মা তুমি বলো যদি তাহলে আমি ম্যনেজার সাহেবকে বলতে পারি আমাদের রুমিকে দেখতে আসার জন্য। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি রুমির বিবাহ কার্য সম্পন্ন……!”

রাজিবুল পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই রুমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বললো….

—“বড় ভাইয়া তুমি এমন লোকের সাথে আমার বিয়ের কথা ভাবতে পারলে কি করে? আর মেজো ভাইয়া তুইও কি করে বড় ভাইয়ার কথার তালে তাল মিলাচ্ছিস?”

রাজিবুল বললো……
—“রুমি! তুই এভাবে রিয়েক্ট কেনো করছিস? আমার আনা সম্বন্ধে সমস্যা কি তোর?”

—“সমস্যা কি সেটা আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছো তুমি? বাবার বয়সী একজন লোকের সাথে আমার বিয়ের বিষয়ে কথা বলছো আবার তার কিনা ১২ ও ৪ বছরের দু-দু’টো ছেলে-মেয়েও আছে। এসব জানার পরেও কি করে তুমি আমার জন্য ঐ লোকের সম্বন্ধ আনতে পারলে বলো?”

—“বাবার বয়সী কি করে হলেন উনি? তোর আর আমার বাবার বয়স ৫৫ বছরের অধিক। আর ওনার বয়স তো ৪০ এ পড়েছে কেবল। আর পুরুষ মানুষের বয়স দেখে বিচার করা হয় না। পুরুষ মানুষ ৮০ বছর বয়সেও বিয়ে করার যোগ্যতা রাখেন। রইলো ওনার ছেলে-মেয়ের কথা। আগে এই সম্বন্ধ চূড়ান্ত হোক। তারপর যখন তুই বিয়ে করে ওনার বাড়ি যাবি তখন আমাদের মায়ের মতো ঐ সংসার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিবি। ছেলে-মেয়ে দু’টো বেশি জ্বালাতন করলে ওদের বিরুদ্ধে বড়-সড় একটা কাহিনী রটাবি তারপর তোর সংসার থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে যা ব্যবস্থা করার ম্যনেজার সাহেব নিজেই করবে। একটা বার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর ওতো বড় বাড়ি, সয়-সম্পত্তির মালকিন তুই হবি। তোর রাজত্ব চলবে সেখানে।”

রুমি রাগী স্বরে বললো…..
—“কোনো সয়-সম্পত্তির মালিকানা কিংবা রাজত্বের শখ নেই আমার বড় ভাইয়া। আমি পরিষ্কার ভাবে তোমাদের সবাইকে বলে দিচ্ছি এই মুহূর্তে আমি কোনো বৈবাহিক সম্বন্ধে আবব্ধ হতে ইচ্ছুক নই।”

এই বলে রুমি দ্রুত কদমে ডায়নিং স্থান ত্যগ করে নিজ রুমে চলে যায়। উপস্থিত বাকিরা এক দৃষ্টিতে রুমির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়। এতোসময় ধরে দোতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের সবার সব কথপোকথন মেহরিন শুনে শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে। রুমির এই মুহূর্তে বিয়ে করতে না চাওয়ার কারণ সম্পর্কে কেবল মেহরিন-ই অবগত।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

#আমি_তোমারি_সনে_বেঁধেছি_আমারো_পরাণ💙(১৪)
#Maisha_Jannat_Nura(লেখিকা)

(২৭)
রুমি নিজরুমে এসে পায়চারি করতে করতে রাগী স্বরে বললো….

—“এক নাড়ির সম্পর্ক হয়েও বড় ভাইয়া আমার সাথে এতো বড় অ*ন্যা*য় করার কথা চিন্তা করতে পারলো কি করে! মায়ের সাথে আমার তুলনা করছে। মায়ের মতো তো আমি ডিভোর্সি, সন্তান সমেত মহিলা হয়ে নিজের বাবার বাড়িতে পরে নেই তাই নিজের থেকে দ্বিগুণ বেশি বয়সের বউ মারা যাওয়া, দুই সন্তান ওয়ালা পুরুষকে বিয়ে করতে হবে! আমি একজন অবিবাহিত মেয়ে। যথেষ্ট সুন্দরীও। তাহলে আমাকে কেনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখে দাঁড়ালো করালো সে? যেভাবেই হোক জিহাদের সাথে আমাকে দেখা করতে হবে। ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলাটাও জরুরী। যদি পরিস্থিতি আমার হাতের বাহিরে চলে যায় তখন কি হবে?”

রুমির ভাবনায় ছেদ ঘটে দরজায় কারোর কড়া নাড়ার শব্দে। রুমি দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে দরজার সামনে মেহরিন দাঁড়িয়ে আছে। এই অসময়ে মেহরিনের উপস্থিতি রুমিকে অবাক করে। রুমি স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো….

—“কি চাই তোমার? কেনো এসেছো এখানে?”

মেহরিন নিজের মুখশ্রী জুরে শান্ত ভাব স্পষ্ট রেখে রুমির রুমের ভিতরে প্রবেশ করে দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। মেহরিনের এরূপ কাজ রুমির অবাকের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। মেহরিন রুমির সম্মুখপানে এসে দাঁড়িয়ে বললো….

—“বিয়ের জন্য সরাসরি না করে দিলে যে! আমি যতোদূর তাদের চিনি উপযুক্ত কোনো কারণ না তুলে ধরা পর্যন্ত তারা এই বিয়ের কথা থেকে পিছু হটবে না।”

—“আমার বিষয় নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে বলি নি তো। এই বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙার জন্য আমার যা যা করনীয় করা দরকার আমি তা অবশ্যই করবো। তোমায় কোনো জ্ঞান ও দিতে হবে না। আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাও তুমি। আমি একা থাকতে চাই এখন।”

—“শুধু এই একটা সম্বন্ধই ভাঙতে চাও তুমি নাকি এরপর যতো সম্বন্ধ আসবে সবই ভাঙতে উঠে পরে লাগবে?”

মেহরিনের এরূপ প্রশ্নে রুমি ভ*র*কে উঠে। রুমি তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললো….

—“মানে! কি বলতে চাইছো তুমি?”

—“তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে। তাই এখন একের পর এক অনেক সম্বন্ধই আসতে শুরু করবে। এই সম্বন্ধ না হয় যেকোনো ভাবে ভাঙতে সম্পন্ন হলে তুমি কিন্তু এরপর কি করবে? বারবার কি তোমার অজুহাত কাজে দিবে?”

রুমি মেহরিনের সম্মুখপান থেকে সরে অন্যত্র এসে দাড়িয়ে বললো….
—“এই তুমি যাও তো আমার রুম থেকে। অহেতুক প্রশ্ন করে আমার মাথা ব্যথা ধরিয়ে দিও না।”

মেহরিন স্মিত হাসি দিয়ে বললো….
—“যার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ ভাঙার চেষ্টা তোমার তাঁকে আগে পরোক করে দেখো। সে কি আদেও তোমার যোগ্য? যখন পরিস্থিতি তোমার হাতের বাহিরে চলে যাবে তখন সে কি তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত করে তোমার হাতটা ধরার ক্ষমতা রাখতে পারবে! সময় থাকতে এটাও যাচাই করে নিও। নয়তো একূল-অকূল দু’কূলই হারিয়ে পথভ্রষ্ট পথিকের মতো ঘুরে বেড়াতে হবে তোমায়।”

রুমি মেহরিনের কথার ধরণে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে যে মেহরিন ওর সাথে জিহাদের সম্পর্কের বিষয়ে অবগত হয়ে গিয়েছে। রুমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রয় কেবল। মেহরিন আবারও বললো….

—“চেয়ারম্যনের মতো নি*কৃ*ষ্ট, ব*র্ব*র ও নিম্ন মানসিকতার মানুষ এই এলাকায় আর দ্বিতীয় কেউ আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি ২৪ ঘন্টা ধরেই কেবল তার সামান্য ক্ষমতার বরই করে বেড়ান সাড়া গ্রামজুরে। তার মতো মানুষ এই পরিবারের মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ বানিয়ে ঘরে উঠাবেন কি আদেও? এই প্রশ্নটাও জিহাদ ভাইকে করে দেখিও। তার উত্তরের মাঝেও অনেক কিছু খুঁজে পাবে তুমি। যা হয়তো তোমাকে ভরসা দিবে নয়তো তোমার সব ভরসা ভে*ঙে চূ*র*মার করে দিবে।”

এই বলে মেহরিন রুমির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। রুমি ধপ করে বিছানায় বসে পরে। মেহরিনের বলে যাওয়া প্রতিটা শব্দ রুমির কানে বাজছে এখনও।

(২৮)
নিজ রুমে বিছানায় একলা বসে আরফা ওর মায়ের ছবিতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…..

—“মাম্মাম, তোমার স্টার হয়ে যাওয়ার জন্য বাবাই সবসময় আমাকে কেনো দোষ দেন? জানো মাম্মাম বাবাই আমাকে কখনও নিজের কোলে বসিয়ে আদর করেন না। আমার স্কুলে আমার ফ্রেন্ডসদের বাবাইরা আমার সামনে তাদের কোলে তুলে নিয়ে কত্তো আদর করে। সেসব দেখে আমার ভিষণ কান্না পায়। মাম্মাম তুমি আকাশ থেকে নেমে আবার আমার কাছে চলে এসো না। আমি তোমাকে বাবাইয়ের কাছে দিয়ে বলবো, দেখো বাবাই তোমার জন্য আমি আমার মাম্মামকে আবার ফিরিয়ে এনেছি। এখন একটু আমাকে কোলে নিয়ে আদর দাও না!”

কথা গুলো বলতে বলতেই ছোট্ট আরফার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু হয়। আরফা দু’হাতে নিজের চোখের পানি মুছে নিজের মায়ের ছবিটা যত্ন সহকারে বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে বিছানা থেকে নেমে জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে দৃষ্টি স্থির করে।

(২৯)
রাতের বেলা,
শেফালি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিনুনি করছে। সেইসময় রাজিবুল শান্ত স্বরে বললো….

—“শেফালি, তুমি আগামীকাল রুমির সাথে আমার আনা সম্বন্ধের বিষয়ে কথা বলো। আর যেভাবেই হোক ওকে রাজি করানোর চেষ্টা করো।”

—“সকালে শুনলে না রুমি কি বললো? এই লোককে বিয়ে করতে চায় না সে। আমি বুঝালেই সে বুঝে যাবে এতো সহজ-সরল মেয়ে রুমি নয় তা তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো।”

—“রুমিকে বুঝতে হবে। আর এই বিয়ে করার জন্য ওকে রাজি হতেই হবে। তুমি তোমার সবটুকু দিয়ে ওকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে। তুমি ব্যর্থ হলে আমি মা’কে বলবো কাজটা যেভাবেই হোক তিনি যেনো সম্পন্ন করেন।”

—“এই সম্বন্ধের পিছনে তুমি এতো মরিয়া হয়ে পড়লে কেনো বলোতো রাজিব!”

রাজিবুল বসা অবস্থা থেকে উঠে শেফালির পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বাঁ*কা হেসে বললো….
—“ম্যনেজার সাহেবের সাথে রুমি বিয়ের সম্বন্ধ পাঁকা হলে আমাদের জন্য সেটা অনেক ভালো হবে।”

—“ভালো! কিভাবে হবে শুনি?”

—“আমাদের অফিসের বস ম্যনেজার সাহেবকে অনেক সম্মান করেন। মাসের পর মাস অফিসের সম্পূর্ণ দায়ভার তার উপর দিয়ে বস নিশ্চিন্ত মনে বিদেশ ভ্রমণ করে আসেন। এই কয়েক বছরে আমি ম্যনেজার সাহেবের অনেকটা ক্লোজ হতে পেরেছি। যদি রুমির সাথে ম্যনেজার সাহেবের বিয়ে হয় তাহলে আমাদের মাঝের বন্ধন টা আরো মজবুত হবে। তখন আমি ম্যনেজার সাহেবকে অনায়াসেই আমার প্রমোশনের বিষয় নিয়ে বসের সাথে কথা বলাতে পারবো। আর এভাবে প্রমোশনের পর প্রমোশন মিললে আমাদের ঘর টাকা দিয়ে থৈ থৈ করবে।”

শেফালি কোনো প্রতিত্তুর না করে আয়নায় রাজিবুলের
প্রতিচ্ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।

(৩০)
মেহরিন যত্নসহকারে রিজওয়ানকে নিজ হাতে খাবার উঠিয়ে খাওয়াতে খাওয়াতে সকালে রুমির জন্য রাজিবুলের আনা বিয়ের সম্বন্ধের কথা জানায়। রুমি রাজি নয় সে কথাও জানায়। জিহাদের বিষয়টা কেবল গোপন রাখে। রিজওয়ান বললো…..

—“বড় ভাইয়া রুমির জন্য এমন সম্বন্ধ কেনো এনেছেন তা বুঝতে বাকি নেই আমার।”

মেহরিন রিজওয়ানের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। রিজওয়ান আবারও বললো……

—“নিজ কর্মস্থানে নিজের জায়গা আরো উচ্চে নিয়ে যেতেই এই চিন্তা তার। নিজের স্বা*র্থ হা*সি*লের জন্য নিজের ছোট বোনকে কু*র*বা*নি দিতেও যে দু’বার ভাববে না ওরা দুই ভাই সেটাও জানি আমি। কিন্তু রুমির শরীরে তো কেবল ওদের দু’জনের র*ক্ত বইছে না। আমার র*ক্তও বইছে। রুমির ভালো-ম*ন্দ চিন্তা করার অধিকার যেমন ওদের দু’জনের আছে তেমনই আমারও আছে। রুমি যদি শেষ পর্যন্ত এই সম্বন্ধে রাজি না থাকে তাহলে ওদের আমি রুমির উপর জোর খা*টাতে দিবো না কিছুতেই।”

রিজওয়ানের এরূপ কথা শুনে মেহরিনের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে