#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat
সেহরীশ ঘাবড়ে গেলো রুদ্ধের কথা শুনে।ঢোক গিলে বলল,’ক.. কি ক.. করবেন আপনি?’
রুদ্ধ হাসলো।বলল,’ভয় পেয়ো না।কিছুই করবা না আমি।অতোটাও খারাপ না যতোটা ভাবো।তবে আমি তোমার গায়ে হাত দিয়েছি বা অসভ্যতা করেছি এগুলো প্রিন্সিপালকে না বললেও পারতে।মিথ্যে কথাগুলো বানিয়ে বলার কি প্রয়োজন ছিলো।
রুদ্ধ’র কথাগুলো শুনে সেহরীশ আকাশ থেকে পড়লো।এমন কোনো কথাই তো সে স্যারকে বলে নি।যা সত্যি তাই বলেছে।এক বর্ণ মিথ্যেও বলে নি সে তাহলে রুদ্ধ এগুলো কেনো বলছে?সেহরীশ বিস্মিত হয়ে বলল,’না,এগুলো তো আমি বলি নি।আমি শুধু বলেছি আপনি নতুনদের র্যাগ দেন।এবং আমাদের নিয়ে যে কাহিনি রটেছে সেটার কথা বলেছি।এছাড়া আর কিছুই বলি নি।সত্যি!’
রুদ্ধ এক ভ্রু কুঁচকে বলল,’সত্যি?’
সেহরীশ অসহায় চাহনী দিয়ে বলল,’হ্যাঁ সত্যি।বিশ্বাস করুন।’
‘কিন্তু আমাকে তো আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড বলল তুমি আমার নামে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ এনেছো!’
‘না,আমি কোনো হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ আনি নি।আমি তো র্যাগিং এর কথা বলেছি।আপনার বিশ্বাস নাহলে আমার চাচার সাথে কথা বলতে পারেন।আমার চাচাও সাথে গিয়েছিলো।’
রুদ্ধ বুঝতে পারলো এখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।ওকে ভুল ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে।তবুও রুদ্ধ বলল,’হ্যাঁ তবুও তো নালিশ করেছো।’
রুদ্ধ’র এই কথা শুনে সেহরীশ বলল,’হ্যাঁ আপনি আমাদের মতো নিরীহ,মাসুম,অবলা স্টুডেন্টদের র্যাগিং দিলে দোষ নাই আর আমি নালিশ করলেই দোষ?’
সেহরীশের এমন অভিযোগে রুদ্ধ’র চেহারায় মৃদু হাসির রেখা খেলে গেলো।উত্তরে বলল,’র্যাগিং না দিলে জুনিয়র’রা ঠিক থাকে না সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করে।’
‘কিন্তু আপনারা তো শুধু শুধু র্যাগিং দেন।যাদের দেওয়ার দরকার নেই তাদেরও দেন।’সেহরীশ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল।
‘র্যাগিং দেওয়া ভালো জানো?র্যাগিং দিলে মন মেজাজ ভালো থাকে,শারীর ভালো থাকে।শরীরে একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব আসে।র্যাগিং না দিলে জুনিয়র’রা কিভাবে বুঝবে যে আমরা সিনিয়র!’
সেহরীশ রুদ্ধ’র যুক্তিহীন ব্যাখা শুনে মুখ বাঁকা করে মনে মনে বলল,’এহ!সিনিয়র ভাব নিতে চায় আবার!’
কিন্তু মুখে এগুলে কিছুই বলে নি।
তারপর আরো অনেক্ক্ষণ ছাদে দাড়িয়ে কথা বলল।সেদিন ওদের মধ্যে যে ভয়/ভীতি বা জড়তা সেটা চলে গিয়েছিল।দু’জনই দুজনের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে।এরপর থেকে রুদ্ধ আর ভার্সিটিতে যায় না।তবে ওদের মধ্যে প্রায়ই ফেসবুকে নাহয় সরাসরি কথা হয়।
এদিকে সব ভালোই চলছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন ওরা দুজনই রাস্তা দিয়ে হাটছিলো কথা বলতে বলতে।আজকে রাস্তায়ই দুজনের দেখা হয়।কোনো এক কৌতুহলে সেহরীশ রুদ্ধ’র কাছে ওর অতীত সম্পর্কে জানতে চাইলো।রুদ্ধ সবই বলল।সব শুনে সেহরীশ বলল,’দেখুন একটা মেয়ের জন্য আপনি আপনার লাইফটা নষ্ট করতে পারেন না।সবাইতো আর আপনার এক্স না।এমন কেউ আছে যে হয়তো আপনাকে খুব ভালোবাসবে তার জন্য হলেও শুধরে নিন নিজেকে।প্রতিষ্ঠিত হোন।’
রুদ্ধ উদাশ গলায় বলল,’আমি তো ওকে ভুলতে পারছি না।একবছর হয়ে গেলো এখনো স্মৃতিগুলো আমায় বড্ড পোড়ায়।এমন কে আছে যে ওর নামটা আমার হৃদয় থেকে মুছে নিজের নাম গড়ে নেবে?আমিও তো চাই মুক্ত হতে।কিন্তু পারছি না!’
সেহরীশের কি হলো কে জানে।সে হঠাৎ রুদ্ধ’র হাত ধরে বলল,’আমি যদি ভালোবাসি আপানকে?’
‘তুমি ভালোবাসবে আমায়?’
‘হ্যাঁ বাসবো তবে আমায় কথা দিতে হবে আপনি নিজেকে পরিবর্তন করবেন।’
‘কথা দিলাম।’
শুরু হলো একসাথে নতুন পথচলা।সেহরীশ এর জন্য এখন আবার চাকরীর ইন্টারভিউ দেয় রুদ্ধ।আগের সব গার্লফ্রেন্ডের কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্রেকাপ করেছে।এখন দুজনের সম্পর্ক ভালোই চলছে।রুদ্ধ চাকরী পেলে সেহরীশ ওর বাসায় রুদ্ধ’র কথা বলবে।
————–
প্রায় ৪ মাস পরের কথা….
রুদ্ধ আজকেও ইন্টারভিউতে গেছে।এই চাকরীটা হওয়ার সম্ভবনা আছে।এই চাকরীটা হলেই সেহরীশের বাসায় প্রস্তাব পাঠানো যাবে।
সেহরীশ রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো।আফসানা হক সেহরীশে রুমে আসলো।তারপর ওর পিছনে দাড়িয়ে বলল,’আজকে ভার্সিটি যাস না।তোর পাপা বন্ধুর ছেলে আসবে তোকে দেখতে।’
সেহরীশ আফসানা হকের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’মামণি,আমি এখন বিয়ে করবো না।অন্তত ফার্স্ট ইয়ারটা শেষ হোক।’
‘আরে কে তোকে বলেছে বিয়ে করতে?দেখা শেষ হলে মানা করে দিবি।তোর পাপার বন্ধু বলে কিছু বলি নি আমি।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি আমরাও বিয়ে দিবো না।’
আফসানা হকের কথা শুনে সেহরীশ আর ভার্সিটিতে গেলো না।ওই ছেলের সাথে দেখা করতে রেস্টুরেন্টে গেলো।
দেখা করে কথাবার্তা বলে ছেলেকে বুঝালো ও এখন বিয়ে করবে না।ওর ইনিয়েবিনিয়ে না করাটা ছেলে বুঝে গেলো তাই কথা আর দীর্ঘস্থায়ী হলো না।এতে সেহরীশ অবশ্য খুশিই হয়েছে।
বসায় ফিরে রুদ্ধ’র মেসেজ চেক করতেই দেখলো ও দেখা করতে বলেছে বিকেলে।কি যেনো বলবে!’
বিকেলে আফসানা হককে বলে সেহরীশ বাইরে গেলো রুদ্ধ’র সাথে দেখা করতে।গিয়ে দেখলো রুদ্ধ আগেই চলে এসেছে।সেহরীশ রুদ্ধ’র কাছে গিয়ে দাড়ালো।বলল,’হঠাৎ এতো জরুরী তলব?’
‘দু’টো নিউজ আছে।দুটোই আনন্দের একটা দুঃখের।কোনটা আগে বেশি আনন্দের?নাকি কম আনন্দের?’
‘কম আনন্দ দিয়ে শুরু করে বেশি আনন্দ দিয়ে শেষ করো।’
রুদ্ধ সেহরীশের হাতে একটা খাম দিয়ে বলল,’আমার চাকরী হয়ে গেছে!’
রুদ্ধ’র কথা শুনে সেহরীশ খুশীতে লাফিয়ে উঠে বলল,’সত্যি!’
‘হ্যাঁ সত্যি।’
‘এবার তাহলে ট্রিট দাও।’
‘কিসের ট্রিট?বেতন পেলে দিবো।এখন গরিব আমি।’
‘আচ্ছা তাহলে এবার বেশি আনন্দের সংবাদ’টা দাও।’
‘বেশি আনন্দের সংবাদ হলো তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি।আমাদের বিয়ে বোধহয় হয়েই যাবে।’
সেহরীশ ভিষণ খুশী হলো।একসাথে এতোগুলো খুশীর সংবাদ মনটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিলো।
——————
সেহরীশ নিজের রুমে বসে রুদ্ধ’র সাথে চ্যাট করছিলো।হঠাৎই আফসানা হক সেহরীশের রুমে এলো।তারপর উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,’জানিস!তোর পাপার কাছে ওই বখাটে ছেলের বাবা এসেছিলো তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।তোর চাচা মানা করে দিয়েছে।একদম ঠিক হয়েছে।ওমন ছেলের কাছে আমি তোকে দিবো না।’
আফসানা হকের কথা শুনে সেহরীশের মাথায় হাত পড়লো।ইশ!কি সর্বনাশটা হয়ে গেলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)