#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat
রুদ্ধকে বাড়ির সামনে দেখে সেহরীশ এগিয়ে এলো।বলল,’আপনার জন্য আজকে মানুষের কাছে অপদস্ত হতে হচ্ছে আমার।পুরো ভার্সিটিতে রটে গেছে আমি আপনার প্রেমিকা।শুধু প্রেমিকা না কতো নাম্বার প্রেমিকা এটা জিগ্যেস করছে সবাই।’
রুদ্ধ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,’তো?তাতে কি হয়েছে?তোমার গায়ে ফোস্কা পড়েছে?মানুষের কথা এতো গায়ে লাগলে তো টিকতে পারবে না এই দুনিয়ায়!কয়েকদিন বলবেই তারপর নতুন ইস্যু পেলে এটা ভুলে যাবে।জাস্ট ইগনোর ইট!কাম অন!’
‘আপনার কাছে এতো সহজ মনে হলেও আমার কাছে একদমই মনে হচ্ছে না।চিনিও জানিও না এমন একটা ছেলের সাথে গুজব রটিয়ে দিলে কার ভাল্লাগবে?যত্তসব!’
এটা বলেই সেহরীশ রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।আর রুদ্ধ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোনটা বের করে তাসিনকে ফোন দিলো।তাসিন রিসিভ করতেই বলল,’দোস্ত আর কতক্ষণ লাগবে?’
‘এইতো আসছি।তুই মাঠে যা।’
‘আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।’
রুদ্ধ ফোন রেখে মাঠের দিকে হাটা ধরলো।একটু আগে আজকের দিনের শেষ টিউশনি করিয়ে বের হলো রুদ্ধ।আজ সব টিউশনি সকালে করিয়ে ফেলেছে।আজকে ম্যাচ হবে।ক্রিকেট ম্যাচ।অনেকদিন হয় বন্ধুরা একসাথে ক্রিকেট খেলা হয় না।আজকে তাসিনের অফিস বন্ধ।কিন্তু অনিমেষের ডিউটি আছে তবে ও অফিস থেকে এসে জয়েন করবে।
————
আকাশে সন্ধ্যা ভর করেছে।আস্তে আস্তে দিনের আলো নিভে যাচ্ছে ছেয়ে যাচ্ছে অন্ধকার!কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আজান পড়বে।সেহরীশ ঘরের দরজা বন্ধ করে পোট্রের্ট করছে।তার মামাণি আর পাপার।কয়েকদিন পরই তাদের বিবাহবার্ষিকী।ওইদিন এটা গিফট করবে বলেই এই পোট্রের্ট’টা সেহরীশ লুকিয়ে তৈরি করছে।
দরজায় কেউ নক করতেই সেহরীশ অসম্পূর্ণ পোট্রের্ট’টা আলমারিতে লুকিয়ে ফেললো।তারপর সবকিছু ঠিকঠাক করে দরজা খুলতেই দেখলো আফসানা হক পায়েসের বাটি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।উনি সেহরীশকে দেখে বললেন,’নে পায়েসটা খেয়ে বল কেমন হয়েছে।’
সেহরীশ পায়েসের বাটি’টা একহাতে নিয়ে আরেকহাতে আফসানা হকের একহাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসালো নিজেও পাশে বসে বলল,’চলো,একসাথে খাই।’
আফসানা হক কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,’আচ্ছা।’
সেহরীশ এক চামচ নিজে খাচ্ছে পরের চামচ চাচীকে খাওয়াচ্ছে।আর ফাকে ফাকে টুকটাক কথা হচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ দরজায় বেল বাজায় আফসানা হক দরজা খুলতে চলে গেলেন।দরজা খুলতেই দেখলো রাফিন ঘামে গোসল করে ফিরেছে।ওর পিছনে আরো তিনজন ছেলেকে দেখা যাচ্ছে।রাফিন ঘরে ঢুকে ৩ টা ছেলেকে বলল,’ভাইয়া আপনারা ঘরে আসুন।’
ওরা ঘরে আসলো।রাফিন আফসানা হককে উদ্দেশ্য করে বলল,’মা,ওনাদের সাথে আজকে আমি ক্রিকেট খেলেছি।ভাইয়ারা অনেক টায়ার্ড হয়ে আছে।একটু নাস্তা দিও।’
আফসানা হক সৌজন্য হেসে বললেন,’আচ্ছা তোমরা বসো।আমি আসছি।’
আফসানা হক চলে গেলেন।রুদ্ধ,অনিমেষ আর তাসিন সোফায় বসলো।আর রাফিন ভেতরে চলে গেলো।বসার ঘরের চারপাশে চোখ বুলাতেই রুদ্ধ খেয়াল করলো একটা জলছবি।জলছবিটা তিনটা ছেলেমেয়ের।এদের মধ্যে দুইজনকে চেনা যাচ্ছে কিন্তু আরেকজন কে?ছবিটার মাঝখানে সেহরীশ চেহারা হাসার ঝিলিক।বামপাশে রাফিন আর ডানপাশের ছেলেটাকে চেনা যাচ্ছে না।তবুও রুদ্ধ আন্দাজ করে নিলো এটা হয়তো ওদেরই ভাই হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আফসানা হক নাস্তা নিয়ে এলেন।এই ফাঁকে রাফিনও ফ্রেশ হয়ে আসলো।রাফিন আফসানা হকের সাথে ওদেরও পরিচয় করিয়ে দিলো।এরপর টুকটাক সবার মধ্যেই কথা হতে লাগলো।নাস্তা শেষে ওরা আফসানা হক আর রাফিনের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
এই এতক্ষণের মধ্যে একবারও সেহরীশ ওদের সামনে আসলো না।শুধু দরজা দিয়ে একবার উঁকি দিয়ে মানুষগুলোকে দেখে নিয়ে নিজের রুমেই বসে রইলো।
ওরা যাওয়ার পর আফসানা হক আবারও রুমে এলেন।সেহরীশ আফসানা হককে ডেকে বলল,’মামণি রাফিনকে বলো ওই ছেলেগুলোর সাথে মিশতে না ওরা ভালো না।’
আফসানা হক ভ্রু কুঁচকে বললেন,’কি বলিস!তুই চিনিস নাকি ওদের?’
‘হ্যাঁ সব ক’টা ফালতু।আমাদের ভার্সিটির ওরা।মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু তবুও ভার্সিটিতে আসে নতুন ছেলেমেয়েদের জ্বালাতন করতে।’
তারপর সেহরীশ প্রথম দিন কি কি হয়েছে রুদ্ধ কি বলেছে!সব আফসানা হককে বলল।
আফসানা হক চটে গিয়ে বলল,’তোদের স্যার’রা কিছু বলে না?এসব বেয়াদবদের ভার্সিটিতে ঢুকতে দেয় কেনো?আমি তোর পাপাকে বলবো।কাল তোরা গিয়ে নালিশ দিয়ে আসবি।আর রাফিনকেও বলছি।সর্বনাশ!ছেলেটা কাদের সাথে মিশছে!’
এগুলো বলেই আফসানা হক সেহরীশের ঘর থেকে বেরিয়ে রাফিনের ঘরে গেলো ওকে ওদের সাথে না মেশার জন্য বলতে।
————–
রেজাউল হক আর সেহরীশ আজ একসাথে বেরিয়েছে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।কাল রাতে আফসানা হক রেজাউল হককে সবটা জানিয়েছেন।সামনে সেহরীশও ছিলো।সব শুনে রেজাউল হক নিজেই রাজি হলেন নালিশ করার জন্য।তাই আজকে সকলে চাচা ভাতিজী একসাথে রওনা হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
প্রথমে সেহরীশের ডিপার্টমেন্টের হেড’কে জানানোর পর উনি বললেন প্রধান শিক্ষককে বলতে হবে।রেজাউল হক আর সেহরীশের প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ দিয়ে আসলো।উনি ওদের আশ্বস্ত করেছেন ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার।
ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে রেজাউল হক তর অফিসে চলে গেলেন আর সেহরীশ লাইব্রেরিতে গেলো।চমৎকার একটা উপন্যাস নিয়ে পড়তেও বসে গেলো।ক্লাস শুরু হওয়া পর্যন্ত পড়া যাবে।
—————
আজকেও বাউলা গানের আসর ছিলো বটতলায় কিন্তু দারওয়ান ওদের ঢুকতে দিচ্ছে না।জিগ্যেস করতেই বলল প্রধান শিক্ষকের নাকি কড়া না আছে।এখন থেকে ওরা আর ভার্সিটিতে আসতে পারবে না কিন্তু হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো রুদ্ধ,অনিমেষ,তাসিনসহ বাকিরা কেউই বুঝতে পারছে না।
রুদ্ধ দারোয়ানকে টাকা দিয়েছে বিষয়টা জানার জন্য!দারোয়ান তো আগেই জানতো তাই ব্যাটা টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল,’আপনাদের নামে কেউ নালিশ করেছে তাই আপনাদের ঢোকা মানা।’
রুদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলল,’কে নালিশ দিয়েছে সেটা জানো চাচা?’
‘না সেটা তো জানি না।’
সেদিনের মতো এতটুকু খবর নিয়ে রুদ্ধ’রা চলে গেলো।এরপর আরো কয়েকদিনও ওরা ভার্সিটির গেট থেকে ফিরে এসেছে।কিন্তু ঢুকতে দেয় না।রুদ্ধ ভিষণ রাগ লাগছে।কার এতো সাহস নালিশ দেয়!জানতে হবে! রুদ্ধ ওর কয়েকজন জুনিয়রকে দায়িত্বে রাখলো খবর নেওয়ার জন্য।জানতে পারলেই যেনো বলে।
———-
এরপর আরো কয়েকদিন কাটলো।ভার্সিটিতে কেউই আর এখন সেহরীশকে খোঁচা দেয় না।সবাই ব্যাপরটা ভুলে গেছে।সাথে সেহরীশও।আজকাল রুদ্ধ’র সাথে ওর দেখাও হয় না।কারণ সময়ই তো মিলে না কারো সাথে।
সেহরীশ ছাদে দাড়িয়ে আছে।আজ আকাশ পরিষ্কার।মেঘ নেই।এখন বিকেল।আকাশে রং বেরঙের ঘুড়ি উড়ছে।দেখতে ভালোই লাগছে।সেহরীশ আকাশ পানে চেয়ে ঘুড়ির কাটাকাটি দেখছে।ছাঁদে আর কেউ নেই।আফসানা হক শপিং এ গেছেন।সেহরীশকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ও যাবে না তাই উনি একাই গেলেন।রেজাউল হক বিকেলে হাটতে বেরিয়েছেন আর রাফিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে গেছে।খালি বাসায় থেকে সেহরীশ বোর হচ্ছিলো বলে ছাদে চলে এসেছে।এখন ভাল্লাগছে।
হঠাৎ পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেহরীশ ঘুরে দাড়ালো।রুদ্ধ!হ্যাঁ রুদ্ধ’ই দাড়িয়ে আছে।রুদ্ধকে হঠাৎ দেখে সেহরীশ এক মুহুর্তের জন্য ভয় পেয়ে গেছিলো।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’আপনি?’
‘হ্যাঁ আসলাম একটা কারণ জানতে।’
এবার সেহরীশ একটু ভয় পেলো।রুদ্ধ কি কোনো ভাবে জেনে গেলো নাকি?না না ওর সাথে কথা বলা যাবে না।কিছুতেই না।এই ভেবে সেহরীশ বিনাবাক্যে চলে যেতে নিলেই রুদ্ধ পেছন থেকে ওর ওড়না ধরলো।ওড়নায় টান পড়ায় সেহরীশ পেছনে তাকিয়ে দেখলো রুদ্ধ হাসছে।তারপর রেলিং এ আয়েশি ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বলল,’তোমার সাথে কথা আছে।কথা শেষ না করে এভাবে তো যাওয়া যাবে না।’
।সেহরীশ ঢোক গিলে বলল,’আ আমার ক কোনো কথা নেই।আমার ওড়না ছাড়ুন।’
‘পারলে ছাড়িয়ে নাও।কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওড়না ছাড়া হবে না।যদি কথা না বলেই চলে যেতে চাও তাহলে হয়তো ওড়না ছাড়াই চলে যাও আর নয়তো আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নাও।’
সেহরীশ আর কি করবে!আগে জানলে আজকে ছাদেই আসতো না দরকার পরলে আফসানা হকের সাথে মার্কেটেই চলে যেতো।সেহরীশ রুদ্ধর পাশে এসে দাড়ালো।রুদ্ধ সেহরীশের ওড়নাতে একবার গিট দেয় আবার খোলে।বেচারি কিছু বলতেও পারছে না সইতেও পারছে না।হুট করেই রুদ্ধ বলল,’স্যারের কাছে নালিশ করাটা কি খুব দরকার ছিলো?আমি তোমার সাথে কি কোনো অসভ্যতামি করেছি?তোমার গায়ে হাত দিয়েছি?নাহ!এগুলো কিছুই করি নি।কিন্তু তবুও তুমি আমার নামে নালিশ করলে।মিথ্যা অপবাদ দিলে।যারা আমাকে প্লে বয় বলে ওদের বলো এমন প্রমাণ দিতে যে আমি কোনো মেয়ের সাথে অসভ্যতা করেছি।হ্যা আমি কয়েকটা প্রেম করি কিন্তু সেগুলো শুধুই নাম মাত্র।আচ্ছা এবার বলো তুমি যে অপবাদটা দিলে এখন যদি তোমার সাথে অসভ্যতা করি তাহলে অপবাদটা সত্যি হয়ে যাবে!আর জানো তো আমার না মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে না।তাই অপবাদটা সত্যিই করে দেই কি বলো?’
চলবে…