#আমি_যারে_চেয়েছিলাম
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat
সেহরীশ এবার না পেরে বলল,’আপনি আমার পিছনে হাটছেন কেনো?পাশাপাশি হাটুন।’
রুদ্ধ এক ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো?
‘মনে হচ্ছে আপনি আমাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
‘আচ্ছা তাহলে আমি সামনে হাটি তুমি পিছনে হাটো কিন্তু পাশাপাশি হাটা যাবে না।তোমার বাড়ির সামনে আসলে ডাক দিও।’
‘আচ্ছা।’
এরপর দুজনের অবস্থান পরিবর্তন হলো।রুদ্ধ সামনে গেলো আর সেহরীশ পিছনে।পিছন থেকে সেহরীশ রুদ্ধকে পূর্ণদৃষ্টিতে লক্ষ করলো।আধ ভেজা স্যান্ডো গেঞ্জি আর কালো জিন্স পড়া একটা তাগড়া যুবক।ভেজা গেঞ্জির বাইরে পিঠের একাংশ বেরিয়ে আছে।তাতে দুই তিন বিন্দু বৃষ্টির ফোটা।ফর্সা না হলেও শ্যমলা ধরন।লম্বায় ৫’১০” হবে।সেহরীশ নিজের হাইট আর রুদ্ধের হাইট তুলনামূলক মেপে বুঝলো ও রুদ্ধ’র চোয়াল বরাবর হতে পায়ে।
সারা রাস্তা রুদ্ধকে আগাগোড়া গবেষণা করতে করতে এসেছিলো বলে খেয়াল নেই কখন বাড়ির গেট ছেড়ে আরো দূরে চলে এসেছে।হঠাৎ রুদ্ধ পেছন ফিরে বলল,’আর কতোটুকু?তুমি না বললে কাছেই?’
রুদ্ধের কথা শুনে সেহরীশ থতমত খেয়ে খেয়াল করলো বাড়ির গেট থেকে আরো কিছুদূর চলে এসেছে ওরা।সেহরীশ জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,’ইশ!খেয়াল ছিলো না।কখন গেট পেরিয়ে চলে এসেছি।’
রুদ্ধ দুই ভ্রু কুঁচকে বলল,’খেয়াল ছিলো না মানে?খেয়াল কোথায় ছিলো?’
সেহরীশ মুখে না বললেও মনে মনে বলল ‘আপনাকে গবেষণা করছিলাম কিন্তু এখন এটা বললে মান ইজ্জত শেষ!শুধু শেষ না পুরাই শেষ।’
তাই সেহরীশ রুদ্ধের কথার জবাব না দিয়ে আবার ইউটার্ন নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগলো।বাড়ির সামনে এসে রুদ্ধের শার্ট’টা ওর হাতে দিয়ে বলল,’ধন্যবাদ কিন্তু আপনার মিথ্যা কথাটা বলা উচিত হয় নি।কতোগুলো মানুষের সামনে আমার মান ইজ্জত শেষ হয়ে গেলো।’
রুদ্ধ নিজের শার্ট নিয়ে পরতে পরতে বলল,’মান ইজ্জত শেষ হওয়ার মতো কি করলাম?’
‘নাটক করবেন না।আপনি কাল আপনার আসল নাম না বলে ‘বাবু’ বলেছিলেন।কিন্তু ওটা আপনার নামই না।’
‘হ্যাঁ!এতে তোমারই দোষ।তুমি বিশ্বাস করলে কেনো?প্রথম দেখাতেই আমার কথাগুলো বিশ্বাস করাটাই তোমার বোকামি।ধরো ভার্সিটি লাইফে এটাই তোমার প্রথম শিক্ষা।এরপর আস্তে আস্তে আরো শিক্ষা পাবে।তবে একটা কথা মনে রাখবে ভালো সবাইকেই বাসা যায় কিন্তু বিশ্বাস সবাইকে করা যায় না।বুঝলে?’
সেহরীশ মুগ্ধ হয়ে রুদ্ধের কথা শুনলো।রুদ্ধের কথাগুলোর গুরুত্ব বুঝলো।আসলেই রুদ্ধ’ই সঠিক।সেহরীশ ওষ্ঠদ্বয় প্রশ্বস্ত করে মিহি একটা হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই খেয়াল করলো,’রুদ্ধও আসছে।’
রুদ্ধকে আসতে দেখে জিগ্যেস করলে,’আপনি আসছেন যে?’
‘তোমার বাসায় যাবো।’
সেহরীশ কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,’কেনো?আমি কি করেছি?’
‘সেটা তোমার বাসায় গিয়েই বলবো।’
দুইতলায় এসে সেহরীশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,’কেন আসবেন আমার বাসায় একটু বলুন না?দেখুন আমি আপনার কিচ্ছু করি নি।’
রুদ্ধ সেহরীশের কথায় হাসলো।তারপর বলল,’একটু আগে কি বলেছিলাম?ভুলে গেলে?কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে না করেছিলাম।আমি তোমার বাসায় কি করতে যাবো?আমি এই বাসায় পড়াই।তিন তলায় দুইটা ছেলেকে পড়াই।’
সেহরীশ নিজের বোকামির জন্য লজ্জা পেলো।তারপর দরজায় নক করলো।আর রুদ্ধ ওপরে চলে গেলো।
দরজা নক করতেই সেহরীশ চাচী দরজা খুললো।ওকে ভেজা জামা কাপড়ে দেখে বলল,’ভিজলি কি করে মনা?’
সেহরীশ ঘরে ঢুকে বলল,’আর বইলো না ছাতা নিতে ভুলে গেছি।ভার্সিটি থেকে বের হতেই ঝপাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।তারপরই ভিজে গেলাম।’
‘মনে করে নিবি না?দাড়া কাল থেকে আমি মনে করে দিবো।এখন তাড়াতাড়ি গোসল করে চেঞ্জ করে খেতে আয়।’
‘আচ্ছা যাচ্ছি।’
সেহরীশ নিজের ঘরে গিয়ে জামা কাপড় নিয়ে শাওয়ারে চলে গেলো।
সেহরীশের দুইবছর বয়সে ওর বাবা মা মারা যায়।ওর বাবা এক্সিডেন্টে মারা যায় আর ওর মা এর পাঁচ দিন পর একদিন ঘুমিয়ে ছিলো রাতে কিন্তু পরেরদিন আর সকালে ওঠে নি।ডাক্তার বলেছিলো ঘুমের মধ্যেই ব্রেইন স্ট্রোক করেছে।সেই থেকে সেহরীশ ওর চাচা চাচির কাছে মানুষ হয়েছে।ভাইয়ের মেয়ে বলে কখনো অবহেলা করে নি তারা।নিজেদের দুই ছেলের সাথে ওকে কখনো তুলনা করে নি।নিজের মেয়ের মতো বড়ো করেছে।সেহরীশও ওদের নিজের বাবা মায়ের মতো ভালোবাসে।সেহরীশের বড়ো চাচাতো ভাই আদিব পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে থাকে এবার আসলে ওর বিয়ে দিবে।পাত্রীও পছন্দ আছে।আর ছোটজন রাফিন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে।
শাওয়ার নিয়ে বেরুতেই দেখলো ওর চাচি আফসানা হক খাবার নিয়ে বসে আছে।উনি সেহরীশকে দেখেই বলল,’এদিকেই মাথা মুছে দেই।এতোবড়ো হয়েও ঠিকভাবে মাথা মুছতে পারিস না আমার মুছে দিতে হয়।বিয়ে দিলে কে দেবে তোর মাথা মুছে?’
সেহরীশ মুচকি হেসে বলল,’আমি বিয়েই করবো না।সবসময় তোমার কাছেই থাকবো মামণি।’
আফসানা হক হেসে বললেন,’হ্যাঁ রেখে দিবো তোকে।এবার খেতে আয়।’
‘তোমরা খেয়েছো?’
‘হ্যাঁ তোর পাপা আর আমি খেয়েছি।রাফিন প্রাইভেট পড়ে এসে খাবে।’
‘আচ্ছা।খাইয়ে দাও।’
আফসানা হক সেহরীশকে খাইয়ে দিতে লাগলো।প্রতিদিন একবেলা হলেও ওনার সেহরীশকে খাইয়ে দিতে হয়।এতে উনি বিরক্ত হন না বরং মেয়ে না থাকার অতৃপ্তিটা ঘুচে।মাঝেমধ্যে সেহরীশকে খাইয়ে দিতে দেখলে রাফিনও বায়না ধরে তারপর দুজনকেই খাওয়াতে হয়।
————–
রাতে সোয়া আট’টা।সেহরীশ পড়ছিলো।আফসানা হক দরজায় দাড়িয়ে বললেন,’আসবো?’
সেহরীশ চোখ পাকিয়ে বলল,’মামণি তুমি আমার রুমে আসতে অনুমতি চাও কেনো?সোজা চলে আসবে।মেয়ের কাছে আসতে মায়ের কোনো বাধা নেই।’
আফসানা হক দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।তারপর বললেন,’না মনা তুই এখনো ছোটো নেই।বড়ো হয়েছিস।আর এটা ভদ্রতা।’
‘তুমি পারোও বটে।’
‘হয়েছে এবার দুধের গ্লাসটা খালি কর।’
সেহরীশ একটানে শেষ করলো।আগে ও একদম দুধ খেতে চাইতো না কিন্তু আফসানা হক আস্তে আস্তে অভ্যাস করিয়েছেন।প্রথম প্রথম এক ঢোক,দুই ঢোক তারপর আস্তে আস্তে এখন পুরোটাই খায়।
দুধ খেয়ে গ্লাসটা চাচির হাতে দিয়ে দিলো সেহরীশ।আফসানা হক ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।সেহরীশ একটু হেসে আবার পড়ায় মনোযোগী হলো।
————
আজকে লেট।যথাসম্ভব দ্রুত পা চালিয়ে সেহরীশ ভার্সিটিতে পৌছালো।ক্লাসে গিয়ে দেখলো স্যার চলে এসেছে।ও অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসলো।
ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে আসতেই একটা সিনিয়র আপু সেহরীশের কাছে এসে বলল,’তুমি রুদ্ধ’র কয় নাম্বার গার্লফ্রেন্ড?’
‘মানে?’বেশ অবাক হয়েই সেহরীশ প্রশ্ন করলো।
‘মানে বোঝো না?কাল ভার্সিটিতে আসলে আর কালই ওই লম্পট’টা তোমাকে পটিয়ে ফেললো।আরে ভাই ভার্সিটিতে সিঙ্গেল ছেলের অভাব নাই তবুও যে কেনো ওই মেয়েবাজটার প্রমে পড়তে হয় আল্লাহ জানে!’
এটা বলেই মেয়েটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেলো।ক্যান্টিনের প্রায় ওর দিকে কেমন করে যেনো তাকালো।সেহরীশ আর ওখানে দাড়ালো না।বের হয়ে গেলো।ক্যাম্পাসে আসতেই আরো অনেকেই জিগ্যেস করলো ও রুদ্ধ’র কতো নাম্বার প্রেমিকা?পুরো ভার্সিটির অনেকের কাছেই রটে গেলো সেহরীশ রুদ্ধ’র প্রেমিকা।এতোদিন তো রুদ্ধ ফেমাস ছিলো তারসাথে এখন সেহরীশও ফেমাস।ভার্সিটিতে আসতে না আসতেই এভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতেই পারে নি ও।কিন্তু এগুলে কে ছড়িয়েছে?
ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় অনেকেই সেহরীশকে দেখিয়ে একজন আরেকজনকে বলছে ‘ওই দ্যাখ ওই মেয়েটাই’।
সেহরীশের ভিষণ কান্না পেতে লাগলো।মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে দু’টো চড় মারতে রুদ্ধ’কে।কিন্তু ও তো আজকে আসেই নি।
সেহরীশ দুঃখী মন নিয়ে বাসার সামনে আসতেই দেখলো রুদ্ধ ওর বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে।
চলবে…