আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-৪৬+৪৭

0
537

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৪৬
লিখা- Sidratul Muntaz

স্বয়ংক্রিয় ঘুম ছুটে যেতেই উষসী খেয়াল করল সে ইয়ামিনের ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে আছে। ইশ, এতোবড় ভুল কিভাবে হলো? আর ইয়ামিনও কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। অন্যহাত দিয়ে উষসীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। তার কি ব্যথাও অনুভব হচ্ছে না? খুব সাবধানে ইয়ামিনের হাতের উপর থেকে শরীরের ভর সরিয়ে উঠে বসল সে।

ইয়ামিন একটু নড়ে উঠল। মোবাইল হাতে নিতেই উষসী দেখল মিসেস শিমলার টেক্সট। তিনি এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেছেন দশমিনিট হবে। এক থেকে দেড়ঘণ্টার মধ্যেই চলে আসবেন। হাতে বেশি সময় নেই। আয়শা কি ঘুম থেকে উঠেছে? ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে। খুব দ্রুত গোসল সেড়ে উষসী তৈরী হয়ে গেল। রাতে ঘুম না হওয়ার কারণে চোখ একটু জ্বালা করছে। নিচে নেমে দেখল কীর্তি নামের মেয়েটি কোথাও নেই।

আয়শা বলল,” উনি চলে গেছেন ম্যাডাম। রাতেই চলে গেছেন। তার কোন আত্মীয়র বাসায় নাকি থাকবে।”

উষসী হাঁফ ছাড়ল। ভালোই হয়েছে যে ওই মেয়ে বিদায় হয়েছে। এখানে থেকে সে কি করতো ইয়ামিনকে উষ্কানো ছাড়া? অদ্ভুত মেয়ে মানুষ। গতরাতে উষসী না এলে কি হতো? সে কি এখানেই থেকে যেতো? সর্বনাশ! ভাগ্যিস উষসী ঠিক সময় এসেছিল।

আয়শা বলল,” বড় ম্যাডাম তো আসছে ম্যাডাম।”

” হ্যাঁ। একটু আগেই আম্মুর টেক্সট দেখলাম। সেটাই তোমাকে বলতে এসেছি। মায়ের পছন্দের ব্রেকফাস্ট বানাবো। আলু পরোটা বানালে কেমন হয়?”

” দারুণ হয় ম্যাডাম।”

” ঠিকাছে, তুমি সব রেডি করো। আমি আসছি।”

” ম্যাডাম, অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনার রান্না করার কি প্রয়োজন? আমিই পারব।”

” সমস্যা নেই। আমি নিজের হাতে রান্না করতে চাই। আম্মু প্রথম এই বাড়িতে আসছে।”

” ঠিকাছে ম্যাডাম।”

ইয়ামিন এখনও বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে। উষসীর মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপল। ভেজা চুলের পানি আলতো করে ইয়ামিনের চোখেমুখে মেখে দিল। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকালো ইয়ামিন। ঘুমো ঘুমো অসন্তুষ্ট গলায় বলল,” আরে, কি সমস্যা?”

উষসী খুব আদুরে গলায় বলল,” ওঠো না, জান!”

ইয়ামিন চোখ মেলে চাইল। উষসী খিলখিল করে হেসে উঠল। এক চোখ বন্ধ রেখে অন্য চোখ খোলা রেখে ইয়ামিন আগ্রহের সহিত প্রশ্ন করল,” কি বললে?”

উষসীর হাসির বেগ বাড়ল। লাজুক গলায় বলল,” ওঠো, ওঠো, আম্মু চলে আসছে। ফ্রেশ হয়ে নাও। আম্মুকে রিসিভ করতে যাবে না?”

ইয়ামিন বিশ্বাস করতে পারছে না। এই প্রথম উষসী তাকে “তুমি” করে বলছে। সে উষসীর হাত টেনে ধরল। গভীর কণ্ঠে বলল,” একটু আগে যেটা বললে, সেটা আরেকবার বলো। নাহলে উঠবো না”

উষসী আলতো গলায় বলল,” ওঠো না জান।”

ইয়ামিন মুচকি হেসে আওড়াল,” শুনিনি। আরেকবার।”

উষসী কপালে হাত ঠেঁকাল। সরু কণ্ঠে আওড়াল,” উফ আল্লাহ! জান, ঘুম থেকে ওঠো। হয়েছে?”

ইয়ামিন হাত টেনে তাকে কাছে এনে জড়িয়ে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল,” আরও একবার।”

” উফ, ওঠ শালা!”

ইয়ামিন হতভম্ব হয়ে উচ্চারণ করল,” হোয়াট?”

উষসী হাসতে হাসতে বলল,” ছাড়ুন। উঠুন এবার।”

” আগেরটাই তো ভালো ছিল৷ আবার আপনি কেন?”

” উফ, আপনি এতো ঢং করলে আমি ইজি হবো কিভাবে?”

ইয়ামিন কয়েক মুহূর্ত উষসীর মুখের দিকে চেয়ে থেকে শুধাল,” এতো সুন্দর লাগছে কেন? এই, তুমি কি গোসল করেছো?”

” হুম।”

” এতো দ্রুত কেন? কয়টা বাজে?”

” সকাল দশটা বেজে গেছে। আর আপনি বলছেন দ্রুত?”

“থাক, ব্যাপার না। আবার করবে।”

” মানে? কি আবার করব?”

” গোসল!”

অকপটে এই কথা বলেই উষসীর নাকে, ঠোঁটে আলতো চুমু দিল ইয়ামিন। উষসীর চোখ বড় হয়ে গেল। সজোরে, সবেগে ইয়ামিনকে ধাক্কা মারল সে। তিরিক্ষি স্বরে বলল,” অসম্ভব! সারারাত একফোঁটাও ঘুম হয়নি। এমনিতেও খুব ক্লান্ত আমি৷ এখন আবার আপনি বাজে মতলব আঁটছেন?”

” আউ…” ইয়ামিন কুঁকিয়ে উঠল ব্যথায়। ভুল করে তার ব্যান্ডেজের হাতে আঘাত করে ফেলেছে উষসী। নরম গলায় বলল,” আহা, বেশি ব্যথা পেয়েছেন?”

” হুম।”

” আমার খেয়াল ছিল না। স্যরি।”

” এতো মিষ্টি করে স্যরি বললে কোনো ব্যথাই ব্যথা মনে হয় না।”

ইয়ামিন অন্যহাত দিয়ে উষসীর কোমড় জড়িয়ে ধরল। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আতঙ্কিত হলো উষসী। দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,” আয়শা, এখানে কেন এসেছো?”

ইয়ামিন সত্বর উষসীকে ছেড়ে দরজার দিকে তাকাল। এই ফাঁকে বিছানা ছেড়ে নেমে দৌড়ে বাইরে চলে গেল উষসী৷ হাসতে লাগল শব্দ করে। ইয়ামিন উঠতে নিয়েও উঠতে পারল না। মনে পড়ল তার পায়ে ব্যান্ডেজ। এই নাটক তাকে আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে হবে। আফসোস!

সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে থামল উষসী৷ হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে। কাউকে বোকা বানালে এতো মজা হয়? আজকে উষসীর মনটা খুব ভালো। হাওয়ায় ভাসতে ইচ্ছে করছে সারাক্ষণ। ধীরুপায়ে রান্নাঘরের দিকে এগুলো সে। আয়শাকে ব্রেকফাস্টের জন্য সব রেডি করতে বলা হয়েছিল৷ তার কাজ কতদূর এগিয়েছে?

লিভিংরুমের কাছাকাছি আসতেই চলার গতি স্বয়ংক্রিয় স্থবির হয়ে এলো তার। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে আয়শার হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠ,” না অনম ভাই। স্যারের আসলেই কিছু হয়নি৷ ভাবী রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছিল। এক্সিডেন্টের খবরটা না শুনলে কিছুতেই আসতো না৷ সেজন্য স্যার এতোবড় কান্ড করেছেন। আপনাকেও জানানো নিষেধ ছিল। কিন্তু আপনি দূর থেকে টেনশন করছেন বলে জানালাম। কিছু চিন্তা করবেন না। স্যারের কোনো এক্সিডেন্টই হয়নি আসলে।”

উষসীর মুখের হাসি উবে গেল চকিতে। চোখ টলমল করে উঠল অচিরেই। নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না। বুকের উপর অসহনীয় একটা চাপ অনুভব করল। সেই চাপ আরও এক ধাপ বাড়ল যখন আয়শা বলল,” হ্যাঁ। স্যার নাটক করেছেন। নাহলে তো ভাবি এতো দ্রুত বাড়ি ফিরতেন না৷ রাতে ভাবিকে দেখে আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম..।”

চোখের কোণ ঘেঁষে এবার অশ্রু ফেটে বেরিয়েই এলো উষসীর। রাগে রিরি করতে লাগল সমগ্র গা। ক্রোধে আগ্রাসী ঝড়ের মতো সে ওপরে উঠতে লাগল সিঁড়ি ভেঙে। বিরবির করে বলল,” এতোবড় প্রতারণা! আপনি আবারও আমার সাথে প্রতারণা করলেন? যতবার আমি ভাবি যে এইবার আপনাকে বিশ্বাস করব, ততবারই আপনি আমার মন ভেঙে দেন৷ এতো নীচ আপনি, এতো বাজে! এইভাবে আমার ইমোশন নিয়ে খেলা করলেন?”

বিছানায় পুনরায় গা এলিয়ে দিয়েছে ইয়ামিন৷ দুই চোখ বন্ধ তার। উষসী হিংস্র দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষণ তার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। কত নিষ্পাপ লাগছে মুখটা। এই চেহারার দিকে চেয়ে কে বলবে যে এই মানুষটা কতবড় মিথ্যুক আর নাটকবাজ হতে পারে! হঠাৎ ক্ষুব্ধ স্বরে চেঁচাল উষসী,” উঠুন।”

ইয়ামিন থতমত খেয়ে উঠল,” কি ব্যাপার?”

উষসী ইয়ামিনের ব্যান্ডেজে বাঁধা হাতটা ধরে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল,” অনেক নাটক হয়েছে। এবার বন্ধ করুন এসব।”

” মানে?”

” একদম মানে মানে করবেন না। কাল সারাটা দিন কত দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি আমি তার কোনো ধারণা আছে আপনার? এতোবড় নাটক কিভাবে করলেন? ছি! সব ভাণ।দেখি, ব্যান্ডেজ খুলুন। আপনার কোন কোন জায়গায় ব্যথা আমি দেখব।”

উষসী টেনে ইয়ামিনের মাথার ব্যান্ডেজ খুলতে শুরু করল। খুব হকচকিয়ে আস্তে-ধীরে উঠে বসল ইয়ামিন। উষসী কিভাবে বুঝল? কে বলেছে তাকে? আয়শা? মুখ পাতলা মেয়েটার পেটে একটা কথা যদি থাকতো! শিট!

উষসী দেখল ইয়ামিন সম্পূর্ণ সুস্থ। কপালে কিছুই হয়নি তার। হাতও ঠিকাছে। আয়শার কথাই সম্পূর্ণ ঠিক। নকল ব্যান্ডেজ লাগিয়ে সারারাত ভাণ করেছে সে। সন্দেহ করলেও মনে মনে উষসী চাইছিল এসব যাতে সত্যি না হয়। কিন্তু ঠিকই সত্যি হলো। ক্রোধে উন্মাদের মতো আবারও চেঁচিয়ে উঠল উষসী। ইয়ামিন তার দুই হাত ধরে কাতর গলায় বলল,” শান্ত হও প্লিজ৷ বসো, আমার কথা শোনো।”

উষসী ইয়ামিনের গালে চড় মাড়ল। চোখমুখ থেকে ঠিকরে আগুন বের হচ্ছে তার। উত্তপ্ত কণ্ঠে বলল,” আজ থেকে আমাদের মধ্যে সব সম্পর্ক শেষ। আমি ঘৃণা করি আপনাকে। আপনার মতো মিথ্যাবাদীর সাথে আমার কোনো কথা নেই।”

উষসী হড়বড় করে বের হয়ে যেতে নিচ্ছিল। ইয়ামিন তার পথরোধ করে দাঁড়াল। উষসী ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,” আমার সামনে থেকে সরুন। নাহলে সত্যি সত্যি আপনার পা ভাঙব আমি।”

” আমার পা ভেঙে যদি তুমি শান্তি পাও তাহলে তাই করো। ”

” আর একটাও ফালতু কথা শুনতে চাই না। আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। আপনার চেহারাও আমি দেখতে চাই না। আই হেইট ইউ।”

ইয়ামিন সর্বোচ্চ শক্তিতে চেপে ধরল উষসীর বাহু। ঘাবড়ে তাকাল উষসী। দাঁত দাঁত চিবিয়ে ইয়ামিন রাগান্বিত গলায় বলল,” এতো সহজে আই হেইট ইউ বলে দিচ্ছো? তাহলে কাল সারারাত কি ছিল? ভালোবাসা না থাকলে কেন এতো আদর করলে আমাকে? কেন পাগলের মতো ছুটে এসেছো? বলো? এখন তুমি বললেই আমি বিশ্বাস করব যে তুমি ভালোবাসো না? প্রমাণ তো আমি পেয়েই গেছি। তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো, পাগলের মতো ভালোবাসো। ”

ইয়ামিনের কণ্ঠে আত্মগৌরব। উষসী হতাশ স্বরে বলল,” আমার মন নিয়ে খেলেছেন আপনি। সবসময় প্রতারণা করেছেন। আফসোস!”

“উপায় ছিল না কোনো। পনেরো দিন ধরে তোমার দেখা পাচ্ছিলাম না। এ ছাড়া আর কি করতাম আমি বলো? কি করলে তুমি খুশি হতে?”

” তাই বলে মিথ্যা বলবেন? এতোবড় নাটক করবেন?”

উষসী চিৎকার দিয়ে উঠল। ইয়ামিন শান্ত গলায় বলল,” হ্যাঁ। যদি সেটাই একমাত্র উপায় হয় তাহলে অবশ্যই আমি করব। তোমাকে পাওয়ার জন্য সব করব।”

উষসী তাচ্ছিল্য হাসল,” আমাকে পাওয়ার জন্য আমাকেই ঠকাবেন? বাহ, এটা কেমন ভালোবাসা আপনার?”

” আমি তোমাকে ঠকাইনি উষসী। শুধু আমাদের দূরত্ব মেটানোর চেষ্টা করেছি। এই দূরত্ব আর সহ্য হচ্ছিল না, বিশ্বাস করো!”

উষসী ঝারি মেরে বলল,” আর বিশ্বাস করি না আমি আপনাকে। খবরদার, আমার আশেপাশে আসার চেষ্টা আর একবারও করবেন না। আমি আপনাকে আমার ত্রিসীমানায় দেখতে চাই না।”

সে কথা শেষ করে দরজার বাইরে পা রাখার আগেই ইয়ামিনের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো,” খবরদার, এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস দেখিও না। কারণ তুমি চলে যাওয়ার পর আমি দুইটা কাজ করব।”

উষসী থামল। ইয়ামিন এদিকে ফিরে ইস্পাতের মতো কঠিন গলায় বলল,” প্রথমে তোমার নামে এবর্শন কেইস করব। তোমাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এই কেইস তোমার পরিবারের বিরুদ্ধেও হতে পারে। তারপর কোর্টে যাবো। কেইসে জিতে তোমাকে আবার এখানেই ফিরিয়ে আনবো। শুধু শুধু তোমার পরিবারের মানুষ হেনস্তা হোক, এটা নিশ্চয়ই চাও না তুমি।”

উষসী ভ্যাবাচেকা খেল। বিস্ময়ে মূক হয়ে বলল,” এবোর্শনের কেইস মানে? আমি বাচ্চা এবোর্ট করব এই কথা আপনাকে কে বলেছে?”

” তুমিই একবার বলেছিলে। সেটার ফোন রেকর্ডিং আমার কাছে আছে। তুমি চলে গেলে এই নোংরা স্টেপটা নেওয়া ছাড়া আমার কাছে অন্যকোনো উপায় থাকবে না উষসী। তাই ভেবে দেখো, কি করবে?”

ইয়ামিন ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উষসীও তাকিয়ে আছে, তার ঠোঁট কাঁপছে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে ভীষণ অচেনা মনে হচ্ছে এখন!

চলবে

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৪৭
লিখা- Sidratul Muntaz

টারমিনাল থেকে বের হতেই এয়ারপোর্টের করিডোরে বড় প্ল্যাকার্ড হাতে ইয়ামিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খুব সুন্দর করে প্ল্যাকার্ডে লেখা,” Dear Mom, Welcome.”

শিমলা ছুটে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। বহুদিন পর একমাত্র ছেলেকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হলেন।

ইয়ামিন মায়ের জন্য একতোড়া ডেইজি ফুল এনেছে। শিমলা ডেইজি পছন্দ করেন। ফুল দেখে তিনি আরও আবেগপ্রবণ হলেন। ইয়ামিন মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” আই মিসড ইউ সো মাচ। কেমন আছো?”

শিমলার চোখ খুশিতে চিকচিক করছিল,” অনেক ভালো আছি বাবা। তোরা কেমন আছিস? ”

“তোমার দোয়ায় অনেক ভালো আছি। বাবা আসেনি?”

” কাজের জন্য আসতে পারেনি। বলেছে তোদের নিয়ে যেতে। আচ্ছা, আমার বউমা কোথায়? উষু আসেনি?”

ইয়ামিন মুখের হাসি একটু ম্লান হলো। সামান্য গম্ভীর গলায় বলল,” ওর শরীরটা ভালো লাগছিল না। তাই আমিই আনিনি।”

” ওহ, থাক ভালো করেছিস৷ এখন তাহলে দ্রুত আমাকে বাড়ি নিয়ে চল। কতদিন মেয়েটাকে দেখি না। উষসীর জন্য আমি অনেক গিফটস এনেছি। ওর তেতুলের আঁচার খুব ফেবারিট। বানিয়ে এনেছি।”

” শুধু ওর জন্যই? আমার জন্য কিছু আনোনি?”

” তোরটা সারপ্রাইজ। বাড়ি গিয়ে দেখাব। ”

ইয়ামিন মিসেস শিমলাকে নিয়ে গাড়িতে ওঠার আগেই হট্টগোল বেঁধে গেল। এয়ারপোর্টে বাঙালি অনেক বেশি। আর আজ-কাল তো ইউটিউবারের অভাব নেই। ধরতে গেলে সবাই সাংবাদিক। ইয়ামিন মাস্ক পরা অবস্থাতেও মানুষ তাকে চিনে ফেলেছে।

একে একে ছুটে এসে সবাই হৈচৈ শুরু করেছে। কয়েকজন অল্প-বয়স্ক ছেলে ক্যামেরা হাতে ভিডিও করছে৷ তাদের মধ্য থেকে একজন জিজ্ঞেস করল,” ভাইয়া, আপনি গান কেন ছেড়ে দিচ্ছেন? এর পেছনে কি বড় কোনো কারণ আছে? থাকলেও সেই কারণটা আমরা কবে জানতে পারব?”

অন্যজন প্রশ্ন করল,” এতোবড় ফ্যানবেজ আপনার। কারো কথা ভাববেন না? এভাবে সত্যি গান ছেড়ে দিবেন? শ্রোতাদের ভালোবাসার কি কোনো ভ্যালু নেই?”

একটা মেয়ে প্রশ্ন করল,” ভাইয়া, আপনি না এক্সিডেন্ট করেছিলেন? এতো দ্রুত সুস্থ কিভাবে হলেন? দিজ ইজ ভেরি স্ট্রেঞ্জ।”

এতো এতো প্রশ্নের তোপের মুখে পড়ে ইয়ামিনের অবস্থা নাজেহাল। সে কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর দিল না৷ সবাইকে ঠেলে সরিয়ে কোনমতে গাড়িতে উঠে পড়ল। তার এমন আচরণের জন্য মিডিয়ায় অনেক ক্রিটিসিজম হতে পারে। কিন্তু এতে কিছুই যায়-আসে না। সে শুধু নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবতে চায় এখন। বর্তমানে তার কাছে মুখ্য শুধুই উষসী৷ সেখানেই তার সমস্ত প্রশান্তি! বাইরের রঙ-চঙ মাখা চাকচিক্যময় ওই জীবনের অত্যাচারে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। এসব থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে চায়।

বাড়িতে আসার পর থেকেই শিমলা লক্ষ্য করছেন উষসীর মুখে হাসি নেই। সে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর খুব চেষ্টা করলেও তার চোখের ভাষা পড়তে এতোটুকু অসুবিধা হচ্ছে না শিমলার। লম্বা পথ জার্নির কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। প্রথমেই ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলেন। বের হতেই দেখলেন উষসী কফি নিয়ে হাজির।

শিমলা উষসীর চিবুক স্পর্শ করে বললেন,”তুমি কেমন আছো?”

” ভালো আম্মু। আপনি লাঞ্চে কি খাবেন? বিরিয়ানি করব নাকি সাদা পোলাও?”

” এতো হেভি কিছু খাব না। ভাত করো।”

” ঠিকাছে, তাহলে সাদা ভাত করছি।”

” হুম, বসো এখানে।”

শিমলা টেনে উষসীকে বিছানায় বসালেন। সংশয়ের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলেন,” সব ঠিকাছে তো? এখানে আসার পর থেকেই দেখছি তোমার মনখারাপ। সকালেও ফোনে যখন কথা বললাম তখনও কিন্তু হাসি-খুশি দেখাচ্ছিল তোমাকে। তাহলে এখন হঠাৎ কি হয়ে গেল মা? দু’জন কি আবার ঝগড়া করেছো?”

” না আম্মু। আসলে আমার শরীরটা ভালো নেই তো.. ”

” কোনটা শরীর খারাপের ক্লান্তি আর কোনটা মনখারাপের ক্লান্তি তা আমি বুঝি। সত্যি কথা বলো। ইয়ামিন কি করেছে আবার? এখন আমি এসে গেছি না? তোমার কোনো ভয় নেই। আমি নিজে ওর বিচার করব। আমাকে শুধু বলো ও কি নিয়ে তোমাকে কাঁদিয়েছে?”

উষসী মাথা নিচু করল। তার চোখে পানি। শিমলা দুইহাতে পুত্রবধূকে আগলে ধরলেন।স্নেহময় কণ্ঠে বললেন,” এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাও যে আমি তোমার শ্বাশুড়ি। মনে করো আমি তোমারই মা। এবার আমাকে সব সত্যি কথা বলো।”

আপনি আমার কাছে মায়ের থেকে কম না আম্মু।”

” তাহলে বলো, কেন তোমার মনখারাপ? ”

শাশুড়ীর আদুরে কণ্ঠে উষসী মোমের মতো গলতে শুরু করল। প্রথম থেকে একদম সবকিছু বলতে লাগল। সব শুনে শিমলা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইলেন। তারপর হঠাৎ অট্ট হাসিতে ফেটে উঠলেন। তার এমন হাসি দেখে উষসী বিহ্বল হয়ে গেল। অভিমান মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” আশ্চর্য, আপনি হাসছেন কেন আম্মু?”

শিমলা খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে চোখের পানি মুছলেন। হাসতে হাসতে তার চোখ ভিজে এসেছে। তিনি উষসীর কাঁধে হাত রাখলেন। প্রফুল্লচিত্তে বললেন,” মা, এতো বোকা কেন তুমি? তোমার কি মনে হয় এই বাড়ি থেকে যদি সত্যি তুমি চলে যাও তাহলে ইয়ামিন আসলেই তোমার নামে মামলা করবে?”

” করবে না?”

” অবশ্যই না। ও তো শুধু তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তোমার ইচ্ছে হলে তুমিও ওকে ভয় দেখাতে পারো।”

” আমি কিভাবে ভয় দেখাবো?”

” ও যেভাবে দেখিয়েছে সেভাবেই! এটাও কি আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে?”

” কিন্তু উনি এরকম কেন করে আম্মু? উনি বোঝে না আমার যে কষ্ট হয়?”

” বোঝে মা, কিন্তু কি করবে? আমার ছেলেটাই যে এমন! এখন তোমাকে একটা গল্প বলি, শোনো। ছোটবেলায় একবার ইয়ামিনকে তোমার বাবা ভীষণ মার মেরেছিল। ছোট থেকেই তো ও খুব অবাধ্য। অল্প বয়সে স্মোক করতো, আজে-বাজে ছেলেদের সাথে মিশতো, অনেক বিগড়ে গেছিল। তখন সম্ভবত ক্লাস টেনে পড়ে৷ তিনদিন বাড়ি ফিরেনি। বোঝো অবস্থা! ওইটুকু বয়সী ছেলে যদি তিনদিন ধরে বাড়ি না ফেরে তাহলে কি বাবা-মা’র মাথা ঠিক থাকার কথা? তোমার বাবা তো খুব রেগে গেছিল। চতুর্থ দিন যখন ও ফিরল, তোমার বাবা রাগে ওকে এমনভাবে মার দিয়েছিল যে ও অজ্ঞান হয়ে যায়।”

” ওমা, তারপর?”

” তারপর কাঁদতে কাঁদতে তোমার বাবা যেন নিজেই স্ট্রোক করবেন, এমন অবস্থা। ছেলের গায়ে এতোটুকু আঁচড়ও সে সহ্য করতে পারে না। সেখানে এতো বীভৎসভাবে মেরেছে। এই আত্মগ্লানিতে সে নিজেও অসুস্থ হয়ে গেল। তখন ইয়ামিন কি করল জানো? সে বলল, ওইদিন নাকি মারের জন্য সে অজ্ঞান হয়নি। শুধু অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করেছে। তোমার বাবা এই কথা বিশ্বাস করে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিলেন। কিন্তু আমি তো মা, আমি সব বুঝি। ও আসলে মিথ্যা বলেছিল। বাবা মনে মনে নিজের ছেলেকে আঘাত করার জন্য যে অপরাধবোধে ভুগছিলেন সেই কষ্ট লাঘব করার জন্য ইয়ামিন মিথ্যা বলেছে। এবার তুমি বলো, এই গল্প আমি তোমাকে কেন শোনালাম?”

উষসী চুপ করে রইল। শিমলা মিষ্টি হেসে বললেন,” ইয়ামিন তার বাবাকে যেমন ভালোবাসে, তোমাকেও ভালোবাসে। তুমি ওকে ছেড়ে যাও এটা ও মানতে পারছে না৷ তাই তোমাকে আটকানোর জন্য মিথ্যা বলছে। আমি কিন্তু ওর মিথ্যাটাকে ডিফেন্ড করছি না। বলছি না যে এটা ভালো। শুধু তোমাকে বোঝাচ্ছি। ও তোমাকে ভালোবাসে মা।”

সম্পূর্ণ ঘর অন্ধকারে ছেয়ে আছে। একটা মানুষ কিভাবে এতো অন্ধকারে বসে থাকতে পারে? খুব সাবধানে সুইচবোর্ড হাতড়ে বাতি জ্বালিয়ে দিল ইয়ামিন। উষসী বালিশে মুখ গুজে শুয়ে ছিল। এবার উঠে বসল। চোখ কুচকে প্রশ্ন করল,” আপনি?”

ইয়ামিনের মনে কিঞ্চিৎ অপরাধবোধ। সকালের ওই ব্যবহারের জন্য এখন কিছুটা আফসোস হচ্ছে। কিন্তু সে কি করবে? উষসীকে আটকানোর অন্যকোনো বুদ্ধি মাথায় আসছিল না তখন। বাধ্য হয়ে তাকে হার্ট করতে হলো।

” এইভাবে অন্ধকারে শুয়ে আছো কেন?”

” আমার শরীর ভালো লাগছে না।” উষসীর কণ্ঠ গম্ভীর, দায়সারা। ইয়ামিন বিছানার কাছে এসে উদগ্রীব হয়ে বলল,” জ্বর এসেছে নাকি? দেখি!”

সে কপালে হাত রাখতে নিলেই উষসী সরে গেল। ইয়ামিনও তার বাড়িয়ে রাখা হাতটা গুটিয়ে নিল। উষসী শক্ত গলায় বলল,” তৃষাণ ভাইয়া ফোন করেছিল। আমাকে কখন নিতে আসবে জানতে চাইছিল। আমি বলে দিয়েছি আসতে হবে না। আমি এখানেই থাকব।”

” দ্যাটস গুড। বুদ্ধিমানের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছো। এটাই তোমার জন্য ভালো।”

” কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে।”

” শর্ত?”

“হুম! বসুন, বলছি।”

ইয়ামিন কপালে গুরুতর ভাঁজ ফেলে বসল। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। উষসী বলতে লাগল,” আমি এখানে শুধু ততদিনই থাকব, যতদিন না আমার ডেলিভারি হচ্ছে। ডেলিভারির পর আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”

ইয়ামিন প্রতিবাদ করতে উদ্যত হলেই উষসী তাকে থামিয়ে দিল,” আগে আমার কথা শেষ করতে দিন। জানি এই বাচ্চার উপর আমার যতটা অধিকার.. আপনারও ঠিক ততটাই অধিকার। তাই আপনার থেকে ওকে আমি আলাদা করব না। কিন্তু এই অযূহাতে আমি আপনার সঙ্গে থাকতেও পারব না। নবজাতক শিশু মা ছাড়া থাকে না। তাই প্রথম দুইবছর ও শুধু আমার কাছেই থাকবে। তারপর থেকে সপ্তাহে চারদিন আমার কাছে আর তিনদিন আপনার কাছে থাকবে। ওর বয়স নয় কিংবা দশ হলে থেকে মানে যখন ও মোটামুটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বয়সে আসবে তখন আপনি কিংবা আমার মধ্যে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে পারবে। আর তার সাথেই থাকবে। এটাই আমার শর্ত।”

ইয়ামিন শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ঠোঁট উল্টাল। হাত-তালি বাজিয়ে উপহাস করে বলল,” গ্রেইট। সব প্ল্যান তাহলে করে ফেলেছো? এর মানে আমাদের ডিভোর্সটা হচ্ছেই?”

” অফকোর্স হচ্ছে। কেন হবে না? আপনি ভাবলেন কিভাবে এতোকিছুর পরেও আমি আপনার সাথে থাকব?”

ইয়ামিনের এতো রাগ হলো! ইচ্ছে হলো আছাড় মেরে কিছু একটা ভেঙে ফেলতে। উষসীর সমস্যা কি? দাঁতে দাঁত চিপে নিজের মেজাজ দমন করল সে। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” মম তোমাকে খুঁজছে। নিচে আসো।”

ইয়ামিন বের হয়ে যেতেই উষসী মুচকি হাসল। ইয়ামিনকে সে এতো সহজে ছাড়বে না। আগামী ছয়মাস তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে।

মিসেস শিমলা সাতদিনের মতো আমেরিকায় থেকেছেন। এর মধ্যে একবার উষসীর পরিবারের সবাইকে ডেকে গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে। ফেরার সময় তৃষাণদের সাথেই বাংলাদেশ ফিরবেন। উষসী এখানেই থাকবে৷ তার অনাগত সন্তান হবে জন্মসূত্রে আমেরিকান। যদিও সেটা তার প্রধান উদ্দেশ্য নয়৷ ইয়ামিনের হুমকির কারণেই তাকে আমেরিকায় থেকে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া তার পাসপোর্ট, ভিসাও ইয়ামিন সিস্ট করে রেখেছে। উষসী চাইলেও সবার সাথে দেশে ফিরতে পারবে না।

সেদিন শনিবার ছিল। সবাইকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে এসেছে উষসীরা। যুথি যাওয়ার সময় খুব কান্নাকাটি করছিলেন। উষসীরও কান্না পেল। যুথি মেয়েকে শাসনের সুরে বললেন,” জামাইয়ের সাথে কিন্তু বেশি ঝগড়া করিস না।রাগ করে ঘর থেকে একদম বের হবি না কিন্তু।”

পরমুহূর্তেই আবার নরম হয়ে বললেন,” রাগের মাথায় তোকে অনেক মার-ধোর করেছি, বকা-ঝকা করেছি। আমাকে মাফ করে দিস মা।”

উষসী মাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলল,” তুমি আমাকে না বকলে কে বকবে মা? তোমাকে খুব মিস করব।”

উষ্ণতা বলল,” আমার মিষ্টি বোন, আসছি। সাবধানে থাকিস। কোনো অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবি। আমি আছি, তোর তৃষাণ ভাই আছে। কোনো ভয় নেই।”

সবশেষে তৃষাণ নির্জনে নিয়ে উষসীকে বলল,” তুমি হঠাৎ সিদ্ধান্ত কেন বদলালে তা আমি বুঝতে পারছি না। তোমার তো আমাদের সাথেই ফেরার কথা ছিল। কিন্তু যেহেতু তুমি নিজেই এখানে থাকতে চাইছো, তাহলে আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি যে কোনো অবস্থাতে তোমার পাশে থাকব বলেছিলাম৷ সবসময় আছি। ভালো থেকো উষুমনি।”

” থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া, তুমিও ভালো থেকো। খুব মিস করব তোমাদের। ”

” যেমনটা তোমার আপু বলল, যেকোনো সমস্যায় ফোন করবে। প্রয়োজনে আমি আবার এখানে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো। আর যদি সত্যিই ইয়ামিন শুধরে গিয়ে থাকে তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না।”

উষসী মৃদু হাসল। দূর থেকে ইয়ামিনকে দেখা যাচ্ছে। মিসেস শিমলার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে সে। সেদিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে উষসী ফিসফিস করে বলল,” সে শোধরায়নি তৃষাণ ভাইয়া। কখনও শোধরাবেও না। তবে এবার আমি তাকে শিক্ষা দিবো।”

সবাইকে সিঅফ করে এয়ারপোর্টে থেকে ফেরার সময় ইয়ামিন গাড়ির দরজা খুলে উষসীকে ওঠার জন্য ইশারা করল৷ উষসী বলল,” আমি আপনার সাথে যাবো না। ট্যাক্সি নিয়ে যাব।”

” মানে? দু’জন তো একই জায়গায় যাচ্ছি৷ তাহলে আলাদা গাড়িতে যাওয়ার কি হলো?”

” আমাদের রাস্তা ভবিষ্যতে এমনিতেই আলাদা হবে। এখন থেকেই প্র্যাকটিসে থাকা ভালো। ”

উষসী ট্যাক্সি নেওয়ার জন্য সামনে পা বাড়াতে নিলেই ইয়ামিন তার হাত চেপে ধরল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল,” আবার কোন নতুন ড্রামা শুরু করলে তুমি?”

উষসী শীতলভাবে হাসল,” ড্রামা তো আপনি শুরু করেছেন। এবার আমি শেষ করব। ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

ইয়ামিনের হাত ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেল উষসী। ইয়ামিন রাগে গাড়ির দরজায় একটা লাথি মারল। পরমুহূর্তেই সে চিন্তা করল, এভাবে মাথা গরম করা ঠিক নয়। উষসী এসব তাকে রাগানোর জন্য করছে। সে রেগে গেলে তো খেলাই শেষ। তাকে ধৈর্য্য ধর‍তে হবে। ইয়ামিন মাথা ঠান্ডা করে উষসীর পেছন পেছন হেঁটে গেল।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে