আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-৪২+৪৩

0
538

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৪২
লিখা- Sidratul Muntaz

মৃদু শব্দে উষসী দরজায় কড়া নাড়তেই ইয়ামিনের ঘুম ভেঙে গেল। উষ্ণতাও চোখ পিটপিট করে তাকাল। নিজের পায়ের কাছে ইয়ামিনকে দেখে প্রথমেই কিছুটা ভড়কে গেল সে। গায়ের কাপড় ঠিক করার চেষ্টা চালালো। ইয়ামিনের সামনে সে কিভাবে শুয়ে ছিল আল্লাহ মালুম। কেমন অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে এলো শরীর।

” তুমি… এখানে কি করছ?”

উষ্ণতা প্রশ্নটা করেই ইয়ামিনের দিকে চেয়ে রইল।ইয়ামিন চোখ-মুখ কচলাতে লাগল। তারও খুব অস্বস্তিবোধ হচ্ছে। এখানে সে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল তা খেয়ালই নেই। রাতে ওই কথা কাটাকাটি হওয়ার পর উষসী ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে। ইয়ামিন অনেক বার দরজা ধাক্কানোর পরেও সে খোলেনি। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই বসতে হয়েছে। কিন্তু এভাবে ঘুমিয়ে পড়া উচিৎ হয়নি।

উষসী নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বলল,” ও সারারাত এখানেই ছিল আপু। তোমার পায়ের কাছে ঘুমিয়েছিল।”

” ওমা, সেকি! কেন?”

” তোমার যদি কিছু প্রয়োজন হয়… সেজন্য হয়তো। যাইহোক, ভোর হতে যাচ্ছে। আমাদের এখন একবার হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ। ”

উষ্ণতা অস্থির গলায় বলল,” হ্যাঁ তাইতো। আমি হাসপাতালে যেতে চাই। উষু, তোর তৃষাণ ভাইয়ের কোনো খবর পেয়েছিস?”

” এখনও পাইনি। হাসপাতাল থেকে কেউ ফোন করেনি। আমরা গেলেই জানতে পারব।”

উষ্ণতা হু হু করে কাঁদতে শুরু করল আবার। ইয়ামিন শুকনো মুখে উষসীর দিকে তাকাচ্ছে। উষসীর দৃষ্টিও ইয়ামিনের দিকেই নিবদ্ধ। তিনজনের মন তিন ধরণের ভিন্ন ব্যথায় কাতর। অথচ তারা কেউই তা জানে না।

ক্লায়েন্টের সাথে একটা জরুরী মিটিংয়ে আজ সকাল-সকাল নুহাশপল্লী যেতে হয়েছিল তৃষাণকে। তৃষ্ণার জন্য কেক আর গিফটস নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে পেছনের একটা ট্রাকের ধাক্কায় তার এক্সিডেন্ট ঘটে৷ সেই ট্রাক ড্রাইভার আপাতত পুলিশ কাস্টাডিতে আছে৷ তৃষাণের মাথায় অনেকটা আঘাত লেগেছে আর হাত-পায়ে ইনজুরি হয়েছে যদিও তেমন গুরুতর কিছু ক্ষতি হয়নি। কিন্তু উষ্ণতা হাসপাতালে এসে তাকে দেখেই খুব কান্নাকাটি শুরু করল।

তৃষাণ হাসার চেষ্টা করে বলল,” ধাক্কা খুব জোরে লেগেছিল৷ একটুর জন্য গাড়ি উল্টে যায়নি। যদি উল্টাতো তাহলে আজকে হয়তো আমাকে আর জীবিত দেখতে না।”

সে এমনভাবে কথা বলছে যেন এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। উষ্ণতা কটমট করে বলল,” চুপ, একটা থাপ্পড় দিবো এসব ফালতু কথা বললে।”

তারপর খুব শক্ত করে তৃষাণকে জড়িয়ে ধরল সে। অশান্ত মন কিছুটা হলেও সুস্থির হলো এতে। তৃষাণ মৃদু কণ্ঠে জানতে চাইল,” বেশি ভয় পেয়েছিলে?”

” আরেকটু হলে আমি মরেই যেতাম। ফোন কেন ধরোনি আমার?”

তৃষাণ দুইহাতে উষ্ণতাকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই ডানহাতে ব্যথা অনুভব করল। “আহ” করে চেঁচিয়ে উঠতেই উষ্ণতা বলল,” কি হয়েছে? উফ, তোমার হাতটা নাড়ানোর কি দরকার?”

তৃষাণ বলল,” ফোনে চার্জ ছিল না। সেজন্যই সুইচড অফ হয়ে গেছিল বোধ হয়৷ স্যরি।”

” ইটস ওকে। এখন থেকে পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখবে। বাইরে থেকে তুমি ফোন না ধরলে আমি পাগল হয়ে যাই। তাই সবসময় ফোন ধরার চেষ্টা করবে।”

” যো হুকুম মহারাণী!”

উষ্ণতা হেসে ফেলল। তৃষাণও হাসছে৷ তাদের কত সুখী দেখাচ্ছে! কেবিনের বাইরে থেকে ঝাপসা দৃষ্টিতে এই দৃশ্য দেখছে উষসী। এই যাবৎকালে তার দেখা সবচেয়ে রোমান্টিক জুটি তার আপু আর দুলাভাই। ইশ, তাদের মতো যদি সবার সম্পর্ক হতো তাহলে এই পৃথিবীতে বিচ্ছেদ বলে কিছু থাকতো না।

ইয়ামিন পাশে এসে দাঁড়াতেই দ্রুত হাতে চোখের জল মুছল উষসী। ইয়ামিন খাবারের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,” কালরাত থেকে না খেয়ে আছো তুমি। এখন একটু খেয়ে নিবে, এসো।”

উষসী ইয়ামিনের দিকে না তাকিয়েই দায়সারা গলায় বলল,” আমার ক্ষিদে নেই।”

তারপর কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করেই চুপচাপ জায়গাটা থেকে সরে গেল। ইয়ামিন তার আচরণে হতচকিত। উষসী কখনও এমন করে না। সে কি কিছু আঁচ করতে পেরেছে? নিজের করা ভুলের জন্য দেয়ালে মাথা ঠুঁকতে মন চাইল ইয়ামিনের।

বাড়ি ফেরার পর থেকে সারাদিন একবারও উষসী ইয়ামিনের সাথে কথা বলেনি। ইয়ামিন নানান বাহানায় তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। ইয়ামিন বুঝতে পারছে… কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে। আচ্ছা, উষ্ণতার ঘরে ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা নিয়ে কি উষসী মাইন্ড করেছে? করারই কথা। কিন্তু সেটা তো তার ক্লিয়ারলি ইয়ামিনকে বলা উচিৎ। এভাবে রাগ দেখানোর কি মানে?

আয়শা বিছানা ঝারতে ঘরে এসেছিল৷ এই সুযোগে ইয়ামিন বলল,” উষসীকে গিয়ে বলো.. আমার খুব মাথা ব্যথা করছে। ও যেন একটু ঘরে আসে।”

” জ্বী স্যার। এখনি বলতাছি।”

” বলতাছি না, বলছি। তোমাকে শুদ্ধভাষা শেখার কথা কতবার বলতে হবে?”

আয়শা জীভ কেটে অপরাধের ভঙ্গিতে বলল,” স্যরি স্যার… এখনি বলছি।”

ইয়ামিন অপেক্ষায় রইল। একটু পর আয়শা গরম নারকেলের তেল নিয়ে ঘরে ঢুকল। ইয়ামিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি ব্যাপার?”

আয়শা হাসিমুখে জানাল,” ম্যাডাম বলছে, আপনার মাথায় গরম তেল মালিশ করে দিতে। তাহলেই মাথাব্যথা ঠিক হয়ে যাবে। আর শান্তির একটা ঘুম আসবে।”

ইয়ামিন রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,” আমি কখন বললাম যে ঘুমাতে চাই? উষসীকে আসতে বলো। এখনি।”

আজগর সাহেবের সাথে ড্রয়িংরুমে বসে দাবা খেলছে উষসী। আয়শা এসে বলল,” স্যার আপনাকে ডাকছে ম্যাডাম।”

” তোমাকে না বললাম তেল গরম করে নিয়ে যেতে? ”

“নিয়ে গেছিলাম তো। কিন্তু গরম তেল দেখে স্যার উল্টা আমার উপরেই গরম হয়ে গেছেন। বলেছেন আপনাকেই যেতে হবে।”

উষসী শ্বশুরের সামনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” আমি যেতে পারব না। এখন ব্যস্ত আছি। ওকে বলো একটা টাফনিল খেয়ে শুয়ে পড়তে।”

আয়শা পড়ল মহা মুশকিলে। এখন গেলে যদি আবার ধমক খায়? বিরক্ত গলায় বলল,” আমি পারব না। আপনিই গিয়ে বলেন।”

আজগর রাগী আওয়াজে বললেন,” পারবে না কেন? বউমা যা বলছে তাই করো। কথা বাড়িও না। যাও।”

বাধ্য হয়ে আয়শাকে যেতে হলো। মিসেস শিমলা গরম চা আর পাকোড়া নিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন। তিনি উষসীর টিমে। চিয়ার করছেন উষসীকে। কিন্তু জেতার পথে আছেন আজগর সাহেব। শিমলা উষসীকে বিভিন্ন কৌশলে শিখিয়ে দিচ্ছেন কখন কিভাবে কিস্তিমাৎ চাল দিতে হবে। আজগর সাহেব খুবই অসন্তুষ্ট হচ্ছেন স্ত্রীর কাজে৷ টান-টান উত্তেজনার মুহুর্ত। উষসী গরম চায়ে চুমুক দিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। এমন সময় আয়শা ফিরে এসে বিরস মুখে বলল,” ভাবী, স্যার বলেছেন টাফনিলে কাজ হবে না। আপনাকেই লাগবে।”

উষসীর মুখ থেকে ছিটকে চা বেরিয়ে গেল। শ্বশুর-শাশুড়ীর সামনে লজ্জায় আটসাঁট হয়ে গেল তার মুখটা। মিসেস শিমলা অবাক হয়ে জানতে চাইলেন,” মানে?”

আয়শা কিছু বলার আগেই উষসী বলল,” তেমন কিছু না, আম্মু। আমি একটু উপরে যাচ্ছি। ”

” কি বলো? খেলার এমন ইন্টারেস্টিং মোমেন্টে তুমি চলে যাবে? আরেকটু পরে যাও।”

আজগর বললেন,” থাক, ওকে যেতে দাও৷ তোমার ছেলে নাহলে বিরক্ত করতেই থাকবে।”

শিমলা এবার মুচকি হেসে বললেন,” ঠিকাছে, যাও।”

উষসী মাথা হেঁট করে উপরে গেল। ইয়ামিনের উপর মনে মনে ভীষণ রাগ হলো তার৷ সে ঘরে ঢুকতেই ধপাশ করে দরজাটা আটকে দিল ইয়ামিন। উষসী রাগে কিড়মিড় করে বলল,” আপনার প্রবলেম কি?”

” তার আগে বলো, তোমার প্রবলেম কি? এতোক্ষণ ধরে ডাকছি, আসছিলে না কেন? কি এমন রাজকার্যে ব্যস্ত ছিলে?”

” আপনি ডাকলেই আমাকে আসতে হবে নাকি? আপনার কথা শোনা ছাড়া কি আমার কোনো কাজ নেই? আমি কি আপনার ক্রীতদাসী?”

ইয়ামিন বিস্মিত গলায় বলল,” এভাবে কেন কথা বলছো? হোয়াটস রং উইদ ইউ?”

উষসী ক্রোধ নিয়ে বলল,” আমার তো আপনার সাথে কথাই বলা উচিৎ না।”

” তাই? তাহলে বলছো কেন কথা?”

” কারণ আমি নির্লজ্জ, বেহায়া! তাই।”

” উষসী, ক্লিয়ারলি বলো। হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

” হোয়াট হ্যাপেন্ড না। বলুন হোয়াট ডিডন্ট হ্যাপেন্ড?জানেন, সবচেয়ে বড় ভুল কি? আমাদের বিয়েটা। এর চেয়েও বড় ভুল কি জানেন? ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত বদলানোটা। যদি সেদিনই আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেতো তাহলে আজকে আর এতোকিছু হতোই না। ”

” মানে কি এসবের?” ইয়ামিন শক্ত করে চেপে ধরল উষসীর বাহু৷ তার কপালের নীল শিরা ফুলে উঠেছে। চোখ লাল হচ্ছে।

” যদি তোমার ডিভোর্সই দরকার ছিল তাহলে আগে বললে না কেন? সেটাই তো করতে চেয়েছিলাম আমি।”

উষসী ঝারি মেরে বলল,” কারণ আমি ব্রেইনলেস ছিলাম। বোকার মতো বিশ্বাস করেছিলাম আপনাকে। কিন্তু আপনি শুধুই আমার বিশ্বাসের ফায়দা লুটেছেন। আমাকে হাতের পুতুল ভেবেছেন।”

” আমি তোমাকে হাতের পুতুল ভেবেছি?”

” হ্যাঁ ভেবেছেন। নেহায়েত আম্মু আর বাবা কষ্ট পাবে… তাই আমি তাদের কিছু জানাতে চাই না। আর মাত্র সাতদিন তো? এরপরেই লস এঞ্জেলসে চলে যাচ্ছি আমরা। সেখানে গিয়ে আপনি আপনার রাস্তায় চলবেন আর আমি আমার রাস্তায়।”

” তার মানে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও?”

” হ্যাঁ চাই।”

” আমি কি কারণটা জানতে পারি?”

উষসী অকপটে বলল,” না।” তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ইয়ামিন নিথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল অনেকটা সময়। উষসীর থেকে এমন আচরণ অপ্রত্যাশিত!

সকাল-সকাল আয়শা স্টোর-রুম পরিষ্কার করার কাজে লেগেছে। উষসী তাকে হেল্প করতে ঢুকেছিল। অনেক ধুলা-বালি থাকায় সে ভাবল চলে যাবে। তখনি তার পায়ের কাছে ঠেঁকল একটা কাঠের বাক্স। সেই বাক্স খুলতেই বের হয়ে এলো উষ্ণতার অল্প বয়সের কিছু ছবি। আর ইয়ামিনের হাতে আঁকা কিছু স্কেচ। কত যত্ন করেই না উষ্ণতার ছবি এঁকেছে সে। কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসলেই হয়তো এইভাবে তার ছবি আঁকা যায়। এতোবছর আগের ছবি সংরক্ষণ করেও রাখা যায়! উষ্ণতার কিছু ছবিতে লালরঙা মার্কার দিয়ে হার্ট শেপ আঁকা হয়েছে। ছবির পেছনে লেখা হয়েছে প্রেমের আবেগময় গান, কবিতা। এসব দেখতে দেখতে উষসীর চোখ অজান্তেই ঝাপসা হলো। গলার কাছে এসে আটকাল তীব্র বিষব্যথা।

পেছন থেকে আয়শা বলল,” ম্যাডাম, কি দেখেন?”

উষসী দ্রুত বাক্সের জিনিসগুলো গুটিয়ে বলল,” কিছু না। আমি এই বাক্সটা নিয়ে যাচ্ছি।”

” এটা? আচ্ছা নেন। আমি তো ভাবছিলাম ফেলায় দিবো। আপনার ভালো লাগলে রাখেন।”

উষসী বাক্সটা নিয়ে ঘরে চলে এলো। কলিংবেল বাজছে। মিসেস শিমলা দরজা খুলতেই উষ্ণতাকে দেখলেন।

” আরে, মিষ্টি মেয়ে… কেমন আছো তুমি?”

” ভালো আছি আন্টি। উষসীর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। ও তো কাল চলে যাচ্ছে…”

” ও হ্যাঁ… তুমি না এলে আমিই ওকে পাঠাতাম তোমাদের সাথে দেখা করার জন্য৷ ভেতরে আসো মা। বাসার সবাই কেমন আছে?”

” আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের দোয়ায় সবাই বেশ ভালো। ”

” তোমার হাজব্যান্ডের এক্সিডেন্ট হয়েছিল না? এখন কি অবস্থা?”

” আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। মা উষসীর জন্য একটু পিঠা আর আঁচার বানিয়ে পাঠিয়েছিল৷ ”

” ওমা, তাই? উষসী উপরের ঘরে আছে। আমি ওকে ডাকব না তুমি যাবে?”

” আচ্ছা আমিই যাই।”

উষ্ণতা ঘরে ঢুকে উষসীকে কোথাও পেল না৷ হাতের জিনিসগুলো একপাশে রেখে বিছানায় বসল সে। উষসীর মোবাইল বেজে উঠল হঠাৎ। উষ্ণতা মোবাইল খুঁজতে গিয়ে দেখল ওয়্যারড্রপের উপর একটা কাঁঠের বাক্স। নিজের অল্পবয়সের একটা ছবি দেখে সেখানেই তার নজর আটকে গেল। কৌতুহলবশত বাক্সের আধখোলা ঢাকনাটি সরাতেই সে হতভম্ব!

চলবে

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৪৩
লিখা- Sidratul Muntaz

উষ্ণতা ওপরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মিসেস শিমলাও উঠে আসেন। বেডরুমে উষ্ণতাকে হতবিহ্বলের মতো বসে থাকতে দেখা যায়। শিমলা প্রশ্ন করলেন,” কি হয়েছে মা? উষসীকে পাওনি? ও মনে হয় নিচে আছে।”

হাতের কাঠের বাক্সটা উপরে তুলে কাঁপা কণ্ঠে জানতে চাইল উষ্ণতা,” এই জিনিসটা কার আন্টি?”

শিমলা ভ্রু কুঁচকে কয়েক মুহূর্ত বাক্সটির দিকে চেয়ে থেকে সহাস্যে বললেন,” এটা তো ইয়ামিনের ছোটবেলার বাক্স। তুমি কোথায় পেলে? দেখি তো…”

শিমলা এগিয়ে এসে উষ্ণতার হাত থেকে বাক্সটি নিতে উদ্যত হয় কিন্তু উষ্ণতা দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়। চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,” এটা ইয়ামিনের বাক্স? আপনি কি নিশ্চিত?”

” হ্যাঁ। ছোটবেলা থেকে তো এটা সবসময় ওর কাছেই দেখেছি। ও বিদেশ থেকে যখন ফিরল তখন ওর লাগেজেও আমি দেখেছিলাম। খুবই পারসোনাল জিনিস। কাউকে ধরতেও দেয় না। তুমি বরং আমার কাছে দিয়ে দাও… আমি রেখে দিচ্ছি।”

উষ্ণতা বলল,” এর ভেতরে কি আছে তা কি আপনি জানেন?”

” না৷ আমি জানব কেমন করে? বললাম তো ও নিজের জিনিস কাউকে ধরতেই দেয় না। আমার ছেলেটা খুব ইন্ট্রোভার্ট ছোট থেকেই।”

উষ্ণতার চোখের স্বাভাবিক রং বদলে গেছে। ক্রমশ লাল হচ্ছে চেহারা। গম্ভীর স্বরে বলল,” আপনি ভুল করেছেন আন্টি। আপনার দেখা উচিৎ ছিল যে এর মধ্যে কি আছে।”

উষ্ণতা তার কিছু ছবি শিমলার হাতে তুলে দিয়ে বাক্স নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। শিমলা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেন না। তারপর উষ্ণতার ছবিগুলো দেখে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর মাথায়। তিনি হতভম্বের মতো ছবিগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। ইয়ামিন ছোট থেকে একটা মেয়েকে ভালোবাসে। কিন্তু মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছিল। এইটুকু শিমলা জানতেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কখনও কল্পনা করেননি যে সেই মেয়েটি উষ্ণতা হবে!

হায় আল্লাহ, এ কি সর্বনাশ হলো? উষসী এসব জানলে কি হবে? আর বাক্সটা যখন উষ্ণতার হাতে পড়েছে তার মানে উষসীরও জানতে দেরি নেই। শিমলা দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হোন। উঁচু স্বরে ডাকলেন,” উষ্ণতা, আমার কথা শোনো মা।”

উষ্ণতা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সচল পায়ে সে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে আসে। তার দুই চোখ অস্থির হয়ে খুঁজছে ইয়ামিনকে। ব্যাকইয়ার্ডে পৌঁছাতেই তার দেখা পাওয়া গেল।

ইয়ামিনের হাতে ফোন। তখন থেকে উষসীকে ফোন করে নিচে আসার জন্য বলছে। কিন্তু উষসী তার ফোনটাই ধরছে না। হঠাৎ উষ্ণতার ক্ষীপ্র আগমন ইয়ামিনকে চমকে দিল। হাতের বাক্সটি দেখে সে আরও বড় ধাক্কা খেল।

উষ্ণতার চোখ-মুখ থেকে আগুন বের হচ্ছে। প্রায় উন্মতের মতো প্রশ্ন করল সে,” এসব কি ইয়ামিন? কি এগুলো? ”

ছবিগুলো বের করে ইয়ামিনের মুখে ছুঁড়ে মারল সে। অতঃপর আছাড় মেরে মেঝেতে ফেলে দিল বাক্সটি। শাণিত শব্দে ইতস্তত হলো ইয়ামিন। হকচকানো কণ্ঠে বলল,” এটা আপনি কোথায় পেলেন?”

” তোমাদের ঘরে।”

বিস্ময়ে ইয়ামিন ভ্রু কুঁচকাল। এই বাক্সটি তো গতকালই সে ফেলে দিয়েছিল স্টোর-রুমে। উষসীর হাতে যেন কখনোই এগুলো না পড়ে। তাই এতোবছরের সব স্মৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিল জীবন থেকে। কিন্তু সে যা চায় সবসময় তার উল্টোটাই কেন হয়? কেন এই বাক্স উষ্ণতার হাতেই পড়তে হলো? কেন? কেন? কেন?

লজ্জা আর জড়তায় ইয়ামিন মাথা তুলে তাকাতেই পারল না। কোনো জবাব দেওয়া তো দূর। উষ্ণতা দুই কদম এগিয়ে এসে পুনরায় প্রশ্ন করল স্ব- প্রকোপে,” আমি জানতে চাই, এসব কি? উত্তর দাও ইয়ামিন। আমি যা ভাবছি, যা দেখছি… সব কি সত্যি?”

উষ্ণতা চূড়ান্ত উত্তেজিত। ইয়ামিন অসাড় গলায় উচ্চারণ করল,” সত্যি।”

রাগ দমন করতে না পেরে উষ্ণতা সবেগে ইয়ামিনের গালে চড় মারল। গর্জন করে বলল,” তুমি আমার বোনের জীবন কেন নষ্ট করলে? কোন সাহসে? উষসী এসব জানতে পারলে কি হবে?”

ক্রোধে ফেটে পড়ছে উষ্ণতার শরীর। ইয়ামিন মাথা নিচু করে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলল,” ও এসব কখনও জানবে না।”

” আমার তো মাথাতেই আসছে না এগুলো কিভাবে সম্ভব? এই ভোলাভালা চেহারার আড়ালে যে এমন কুৎসিৎ রূপ লুকিয়ে আছে তা যদি আমি বুঝতাম তাহলে কখনও উষুর সাথে তোমার বিয়ে দিতাম না। আমার বোনের জীবনটা মনে হচ্ছে নিজের হাতেই শেষ করে দিলাম আমি। ছি!”

” উষসীর জীবন শেষ হয়নি। আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম যে ওকে সবসময় ভালো রাখব। আর আমি আমার কথার খেলাফ করব না।”

” চুপ করো তুমি। মিথ্যাবাদী, প্রতারক! এখনও কথা বলতে তোমার লজ্জা করছে না? ”

উষ্ণতা এই পর্যায় তেড়ে এসে ইয়ামিনের কলার টেনে ধরল। ক্রুর দৃষ্টিতে প্রশ্ন করল, “অ্যাই, তোমার মনে যে এইসব ছিল তা আগে কেন বলোনি? বিয়ের আগে কেন বলোনি? উষুকে কেন বিয়ে করলে তুমি?”

ইয়ামিন উত্তর দিল না। বামপাশে নজর পড়তেই থমকে গেল সে। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে উষ্ণতা সেদিকে তাকাতেই দেখল উষসী দাঁড়িয়ে আছে। আতঙ্কে স্তব্ধ হলো এবার উষ্ণতা নিজেও। ত্বরিতে ইয়ামিনের কলার থেকে হাত সরিয়ে নিল। উষসীর দুই চোখ ভর্তি অশ্রু। বেদনাভরা দৃষ্টি। একটা কথাও সে বলল না। একহাতে চোখের জল মুছে সামনে হাঁটতে শুরু করল হঠাৎ। যেন সে সবকিছু বুঝে নিয়েছে, সবকিছু মেনে নিয়েছে।

উষ্ণতা সবেগে দৌড়ে গিয়ে টেনে ধরল বোনের হাত। বেদনায় সিক্ত হয়ে বলল,” উষু, আমার কথাটা শোন৷ আই এম স্যরি। আমি কিছু জানতাম না… বিশ্বাস কর! আমাকে তুই মাফ করে দে।”

নিষ্ঠুরের মতো নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল উষসী। উষ্ণতার দিকে একটা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই ভেতরে ঢুকে গেল। প্রচন্ড আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল উষ্ণতার মন। সে দাঁড়িয়ে রইল অসহায়ের মতো৷ পুরো পৃথিবী আঁধারে ঢেকে গেল যেন। এটা কোনো দুঃস্বপ্ন নয়তো?

ইয়ামিন দ্রুত বেগে উষসীর পেছনে গেল। উষ্ণতাও যাওয়ার জন্য কদম বাড়ালে মিসেস শিমলা তাকে আটকে দিলেন। কোমল গলায় বললেন,” ওদের মধ্যকার ঝামেলা ওদেরকেই সামলাতে দাও। এখানে তোমার কোনো দোষ নেই। সবই ভাগ্যের খেলা।”

উষসী ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকে যেতে নিচ্ছিল। ইয়ামিন তীব্র গতিতে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত হাতে। উষসীর কান্নার বেগ বৃদ্ধি পেল আরও। কান্নার সাথে প্রবল শব্দে সে চেঁচাতেও শুরু করল এবার। ছাড়া পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় ছটফট করতে লাগল। ইয়ামিন ছাড়ল না তাকে। বলিষ্ঠ আলিঙ্গনে বন্দী রেখেই কাতর গলায় বলল,” আই এম স্যরি… স্যরি!”

” আমাকে ছাড়ুন৷ আমি আপনার থেকে কোনো এক্সপ্লানেশন শুনতে চাই না। লীভ মি এলোন।”

ইয়ামিন অধীর হয়ে উষসীর মুখটা আঁজলায় নিল৷ আবেগকম্পিত কণ্ঠে বলল,” প্লিজ, আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি সব ঠিক করে দিবো৷ তুমি আমার নতুন স্বপ্ন। আমি তোমাকে আর একবারও হারাতে চাই না।”

ছলছলে দৃষ্টি মেলে উপরে চাইল উষসী। ইয়ামিনের দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,” কিন্তু আমি আপনাকে আর একবারও পেতে চাই না। আপনি আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন। আফসোস!”

এই কথা শোনার পর ইয়ামিন থমকে গেল, স্তম্ভিত হলো। তার শরীর নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। উষসী তাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকল। তুমুল শব্দে বন্ধ করল দরজা। সেদিন শুধু ওই কাঠের দরজাটাই বন্ধ হয়নি…একই সাথে ইয়ামিনের জন্য উষসী মনের দরজাও বন্ধ হয়েছিল।

আমেরিকায় আসার পর উষসী আলাদা এপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু ইয়ামিন তাকে ডিভোর্স দিতে প্রস্তুত না। উষসী ডিভোর্সের জন্য পাগলামি শুরু করে। একটা দূর্দমনীয় প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে তাকে উন্মাদ বানিয়ে দেয়। তারপর হঠাৎ যখন তার প্রেগন্যান্সির খবর জানা গেল, তখন ইয়ামিন যেন আরও বেশি ডমিনেটিং হয়ে গেল তার প্রতি। সে খুব ভালো করেই জানে যে জোর করে কখনও একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। তবুও ইয়ামিন কেন এমন করছে তা জানে না উষসী।

(বর্তমান)
ভেজা শাড়িতেই ফ্লোরে বসে ঠকঠক করে কাঁপছে উষসী। ঠান্ডায় তার শরীর প্রায় অবশ হয়ে এসেছে। গায়ের জ্বরটা যেন আরও একধাপ বেড়ে গেছে। চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে সে। মাথায় কি প্রচন্ড ব্যথা!

ইয়ামিন ঘরে ঢুকে এই অবস্থা দেখে খুব ঘাবড়ে গেল। ভেজা শাড়িটা এখনও বদলানো হয়নি। উষসীকে দেখে মনে হচ্ছে সে অর্ধ অচেতন। ইয়ামিন নিজেই তার শাড়ি বদলে দিল। তাকে বিছানায় শোয়ালো। তার কপালে জ্বরপট্টি দিয়ে দিতে লাগল৷ একসময় উষসী চোখ মেলে তাকাল।

ইয়ামিন হাসল তার দিকে চেয়ে। খানিক ঝুঁকে এসে মৃদু গলায় বলল,” এখন কেমন লাগছে? ক্ষিদে পেয়েছে? কিছু নিয়ে আসি?”

দূর্বল কণ্ঠে উষসী বলল,” না।”

তারপর হঠাৎ ইয়ামিনের কলার টেনে ধরে প্রশ্নবিদ্ধ কণ্ঠে শুধাল,” কেন এসব করছেন? এসব করে কোনো লাভ নেই।”

” লাভ-ক্ষতির হিসাব পরে৷ আগে তুমি সুস্থ হও। আমাদের বাবু সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসুক। ”

উষসী আহত কণ্ঠে বলল,” আপনি শুধু বাবুর জন্য আমাকে আটকে রাখতে চাইছেন?”

” না, আমি নিজের জন্য তোমাকে আটকে রাখতে চাইছি৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায় উষসী। তোমাকে হারালে আমি ধ্বংস হয়ে যাব।”

তৃষ্ণার্তের মতো উষসীর কপালে চুমু দিল সে।

” আমি তো আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইনি কখনও। কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন। আমি কি করব?”

ইয়ামিন ঠোঁট দিয়ে উষসীর চোখের জল মুছে দিল। ব্যাকুল গলায় বলল,” আমাকে ভালোবাসো আগের মতো আবার। আর কিচ্ছু করতে হবে না।”

উষসী দুই পাশে মাথা নাড়ল। গাঢ় ব্যথায় টনটনে কণ্ঠ নিয়ে উচ্চারণ করল,” আমি পারব না, এটা অসম্ভব। আপনি আবার আমাকে ছেড়ে যাবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে?”

” আমি আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”

” ছাড়ুন আমাকে। চলে যান এখান থেকে। আমি আপনার কোনো কথা বিশ্বাস করি না। চলে যান। ”

এই কথা বলেও দুই হাতের মুঠিতে ইয়ামিনের টি-শার্ট চেপে ধরে রাখল সে। অর্থাৎ মুখে তিরস্কার করলেও মন থেকে সে কোথাও যেতে দিতে চায় না ইয়ামিনকে। সেটা বুঝতে পেরেই প্রশ্রয়ের হাসি ফুটল ইয়ামিনের ঠোঁটে। উষসীর সারা মুখশ্রীতে সে চুমু দিল। এমনভাবে আদর করতে লাগল যেন উষসী কোনো ছোট্ট শিশু।

উষসী ব্যগ্র কণ্ঠে বলল,” ছাড়ুন নয়তো আপনাকে আমি খু-ন করব।”

” তোমার হাতে খু-ন হতেও আমার আপত্তি নেই।”

উষসী অসহায় হয়ে বলল,” কেন এমন করছেন? আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে আপনার?”

” তুমিও কি কষ্ট কম দিচ্ছো আমাকে? আমার জীবনে আরও আগে কেন এলে না উষসী?”

” আমি এসেছিলাম। কিন্তু আপনি আমাকে গ্রহণ করেননি।”

” আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা করে দাও।”

” সব ভুলের সত্যিই কি ক্ষমা হয়?”

” কেন হয় না?”

প্রশ্নগুলো ঢাকা পড়ল রাতের অন্ধকারে। গোপন হলো দীর্ঘশ্বাস। একটা নতুন সূর্যোদয়ের আশায় কাটল রাত্রী।

সকালে উষসীকে পাশে না পেয়ে তড়াক করে জেগে ওঠে ইয়ামিন। উষসী কোথায়? সেদিনের মতো আবারও পালিয়ে যায়নি তো? সেটা সম্ভব না। মেইন গেইট ক্রস করে উষসী বের হওয়ার আগেই গার্ড তাকে আটকাবে।

তবুও ইয়ামিনের ভয় হচ্ছে। উষসীকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় ধারালো খঞ্জরের মতো খুঁড়ে খাচ্ছে তার ভেতরটা। সচল পায়ে সে পুরো ঘর তল্লাশী করল। তার হৃৎস্পন্দন সর্বোচ্চ উর্ধ্বসীমায়। উষসীকে না দেখা পর্যন্ত এতোটুকু শান্ত হবে না মন।

লিভিংরুমে পা রাখতেই প্রাণ ফিরে পেল ইয়ামিন। উষসী পিলারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তার পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছে শুধু। ইয়ামিন ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে।

গভীর উচ্ছ্বাস নিয়ে ঠোঁটে কিস করল। সঙ্গে সঙ্গেই দুইহাতের ধাক্কায় দিয়ে তাকে শান্ত হতে ইশারা করল উষসী। ইয়ামিন শান্ত হলো। সামনে তাকাতেই দেখল সোফায় তৃষাণ বসে আছে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে