#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৩৬
লিখা- Sidratul Muntaz
বাংলাদেশে ছাড়া আর কোথায় যাবে উষসী? গতরাতে আয়েশাকে সে ফ্লাইটের টিকিট কেটে দেওয়ার জন্য বলেছিল। তাই ইয়ামিন সবার আগে অনমকে এয়ারলাইন্সে খোঁজ নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে।
কিন্তু তার মনে কিঞ্চিৎ সন্দেহ, উষসী প্রীতমের কাছে চলে যায়নি তো? এমন যেন না হয়৷ তাহলে ইয়ামিন রাগের মাথায় কি করবে তা সে নিজেও কল্পনা করতে পারছে না। গাড়ি নিয়ে সে প্রীতমের ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। এই সময় তো প্রীতমের ভার্সিটিতেই থাকার কথা। কিন্তু সেখানে তাকে না পাওয়া গেলে ইয়ামিন তার অ্যাপার্টমেন্টের ঠিকানাও বের করেছে। প্রয়োজনে সেখানে যাবে।
মনে মনে সে প্রার্থনা করল উষসীকে যেন কোনোভাবেই প্রীতমের অ্যাপার্টমেন্টে পাওয়া না যায়। তাহলে ইয়ামিন যতটা না রাগান্বিত হবে তার চেয়েও শতগুণ বেশি আঘাত পাবে মনে! মাঝপথে অনম ফোন করে জানাল,” স্যার, ম্যামের খোঁজ পাওয়া গেছে। উনি এয়ারপোর্টেই আছেন। আজ বিকাল পাঁচটার ফ্লাইটে বাংলাদেশে যাওয়ার টিকিট কেটেছেন। ”
ইয়ামিন সাথে সাথে ঘড়ি দেখল। সকাল সাড়ে নয়টা বাজে। বিকাল হতে এখনও অনেক দেরি। এটুকু সময় উষসী কি করবে? এয়ারপোর্টে বসে থাকবে না নিশ্চয়ই। সে কি প্রীতমের বাড়িতে যাবে?
ইয়ামিন গাড়ি ঘুরালো না। যেখানে যাচ্ছিল সেখানেই যেতে যেতে ফোনে অনমকে বলে দিল” ঠিকাছে। পুরো এয়ারপোর্ট তল্লাশী করো। উষসীকে খুঁজে পেলে আমাকে সাথে সাথে জানাবে।”
” স্যার আপনি কি আসছেন?”
” না। আমি অন্য জায়গায় খুঁজছি।”
” ওকে স্যার।”
ওয়েটিংরুমে বিষণ্ণচিত্তে বসে আছে উষসী। স্টারবাকসের একজন ওয়েট্রেস বলল,” ম্যাম, উইল ইউ টেক সাম কফি টু কীপ ইউরসেল্ফ এনার্জাইজড এন্ড এন্টারটেইন্ড?”
উষসী হাসল। টারমিনালে আরও অনেক মানুষ আছে। কাউকে কফি অফার করা হয়নি। উষসীকে করা হলো কেন? তাকে দেখতে কি সত্যি অনেক দূর্বল লাগছে? ফোনের স্ক্রিনে নিজের মুখটা একবার দেখল উষসী। সত্যি খুব শুকনো লাগছে দেখতে। সে দুইদিন ধরে সে প্রায় না খেয়েই আছে। যে-কোনো সময় মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কি হবে?
উষসী বলল,” ওকে।”
ওয়েট্রেস তাকে যত্ন করে কফি বানিয়ে দিল। সেই কফিতে চুমুক দিতে না দিতেই বিষম খেতে হলো তাকে। অনমকে দেখতে পেয়ে কোনোমতে হাতের ব্যাগ রেখেই দৌড়ে পাবলিক বাথরুমের কোণায় গিয়ে চোখমুখ খিঁচে লুকিয়ে পড়ল৷
অনেক মানুষ যাওয়া-আসা করছে এখানে। উষসী খেয়াল করেনি, ম্যানস টয়লেট আর উইমেনস টয়লেট আলাদা। সে এসে দাঁড়িয়েছে ম্যানস টয়লেটের সামনে। এজন্যই এখানে এতো পুরুষ! একটা ছেলে যাওয়ার সময় তাকে টিজ করল। বিরক্ত লাগলেও উষসী এখান থেকে নড়তে পারল না।যেহেতু অনম এখানে আছে, তার মানে ইয়ামিনও আসবে। উষসী কিছুতেই ধরা পড়তে চায় না।
হঠাৎই চারদিক কেমন ঝাপসা হয়ে আসতে লাগল। অসুস্থ শরীর নিয়ে না খেয়ে থাকা, বৃষ্টিতে ভেজা, দূর্বল শরীর উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হওয়া… সব মিলিয়ে মোটামুটি ধরাশায়ী অবস্থা হলো তার। মাথা ঘুরছে ঘূর্ণিপাকের মতো। শক্ত করে দেয়াল ধরে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো উষসী। আরেকটু হলেই সে মাথা ঘুরে ধপাশ করে পড়ে যেতো।
একজোড়া সবল হাত তাকে আগলে ধরতেই দুইচোখ মেলে তাকাল সে। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখল না। তবে উষসীর মাথা গিয়ে ঠেঁকেছে মানুষটির বুকে। সুপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে উষসী বিস্মিত হলেও কিছু বলার মতো অবস্থা তার ছিল না। বেশি কিছু বুঝে ওঠার আগেই উষসী জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
অনম একটা ব্যাগ আর ব্যাগের ভেতর ভিসা-পাসপোর্ট দেখেই বুঝতে পারল টারমিনালের আশেপাশে কোথাও উষসী আছে। সে খুব দ্রুত ইয়ামিনকে ফোন করে ব্যাপারটা জানাল। ইয়ামিনও প্রায় ঝড়ের গতিতে এয়ারপোর্টে হাজির হয়েছিল৷ কিন্তু পরে সম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট তন্ন-তন্ন করে খোঁজার পরেও উষসীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গতরাতেও একবার মাথা ঘুরে পড়ে গেছিল উষসী। আজকে আবারও একই কান্ড হয়েছে। সে বুঝতে পারছে তার শরীরটা সত্যি খুব দূর্বল। এক গ্লাস ফলের শরবত তাকে খেতে দেওয়া হয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর ডোনাকে দেখে উষসী নিজেকে এক মুহূর্ত সামলাতে পারল না৷ কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে উঠল।
তৃষাণ ভেতরে এসে উষসীর মাথায় হাত রাখতেই কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেল তার। সে অনুতপ্ত কণ্ঠে আওড়াল,” আই এম স্যরি তৃষাণ ভাইয়া। আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। তোমার কোনো কথা শুনিনি। তুমি সবসময় আমার ভালো চেয়েছিলে কিন্তু আমি তোমাকে কখনও বুঝিনি৷ তোমার অবাধ্য হয়েছি, তোমাকে কষ্ট দিয়েছি অথচ তুমি তো আমাকে ছোটবোনের মতো আগলে রাখতে। আমি কখনও বুঝিনি তোমাকে। এসবের শাস্তিই হয়তো এখন পাচ্ছি। প্লিজ, আমাকে মাফ করে দাও তুমি।”
তৃষাণ বলল,” এখন এসব কথা বলার সময় না। তাছাড়া অল্প বয়সে আমরা সবাই ভুল করি। আমার দায়িত্ব ছিল তোমার ভুল শুধরে দেওয়া। কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি। উল্টা আমি নিজেও ভুল করেছি… ইয়ামিনের মতো থার্ডক্লাস ছেলেকে বিশ্বাস করে ফেলেছি। ডন্ট ওরি, এবার সবকিছু ঠিক করে দিবো। ঠিক করতেই আমি এসেছি। এখন থেকে আমাদের উষু আর কাঁদবে না।”
উষসী অবাক হয়ে বলল,” আমি তো জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গেছি। তোমরা হঠাৎ লস এঞ্জেলসে কিভাবে এলে? মানে তোমাদের কি এখানে আসার কথা ছিল? কই আমাকে জানাওনি তো?”
তৃষাণ হাসল। ডোনা উষসীর কাঁধ চেপে ধরে হাসিমুখে বলল,” বোকা মেয়ে, তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যেই তো আমরা সেই কবে থেকে প্ল্যান করছিলাম যে আসব। কিন্তু এখানে আসার পর নিজেরাই চমকে গেছি। এ কি অবস্থা হয়েছে মা তোর! আর একা একা এয়ারপোর্টে কি করছিলি? তোর সাথে তো কাউকে দেখলাম না। আজকে মাথা ঘুরে পড়ে কি অনর্থটাই না হতে যাচ্ছিল। ভাগিস সময় মতো তৃষাণ তোকে ধরেছে।”
উষসী স্মিত হেসে বলল,” তৃষাণ ভাইয়া আমাকে ধরেছিল তখন? হ্যাঁ মনে পড়েছে… কিন্তু তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এয়ারপোর্টে আছি?”
ডোনা এবার না হেসে পারল না,” বোকা মেয়ের কথা শোনো! আরে আমরা জানবো কিভাবে? আমরা তো এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছিলাম। তৃষান বাথরুমে ঢুকেছে বলে সবাই অপেক্ষা করছিলাম। তারপর হঠাৎ দেখি তোকে অচেতন অবস্থায় কোলে করে নিয়ে আসছে। দেখে তো তখনি আমার দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে গেছে। হসপিটালেও নিতাম। কিন্তু উষ্ণতা বলল তুই না খেয়ে আছিস। এজন্য তোর শরীর দূর্বল। তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছি।”
উষ্ণতার নাম শুনেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে উঠল উষসীর। সে যে না খেয়ে আছে, এটা উষ্ণতা জানল কি করে? পর মুহূর্তেই উষসীর মনে পড়ল ইয়ামিনের কথা। সে ছাড়া উষ্ণতাকে এসব জানানোর মতো আর কে আছে? মুহূর্তেই রাগে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। প্রচন্ড ঘৃণা হলো নিজের জীবনের প্রতি। নিজের আশেপাশের মানুষগুলোর প্রতিও। উষসী প্রসঙ্গ বদলানোর উদ্দেশ্যে বলল,” আচ্ছা, এটা কার বাড়ি?”
তৃষাণ জবাব দিল, ” আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি এটা। ও রাতে আসবে। তখন পরিচয় করিয়ে দিবো তোমাকে।”
“এখানে এলে এই বাড়িতেই থাকবে, আমার কাছে আসবে না। এটাই কি প্ল্যান ছিল তোমাদের?”
ডোনা বলল,” আরে নারে পাগলি। তৃষাণ আসলে ইয়ামিনের বাড়িতে যেতে চায়নি। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বন্ধুর সাথে কন্টাক্ট করে এসেছে। কিন্তু তোর সঙ্গে তো আমরা অবশ্যই দেখা করতে যেতাম।”
উষসী এবার অভিমানী দৃষ্টিতে তৃষাণের দিকে তাকাল,” আমি জানি, ওই বাড়িতে থাকলে তৃষাণ ভাইয়া আমার সাথে জীবনেও দেখা করতে আসতো না। ঠিক বলেছি না আমি?”
তৃষাণ মলিন মুখে বলল,” ফরগেট ইট। সেরকম কিছু তো হয়নি। ভাগ্যে ছিল বলেই আমাদের এয়ারপোর্টে দেখা হয়ে গেছে। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।”
উষসী তাচ্ছিল্য হাসল৷ কে বলেছে যা হয় ভালোর জন্য হয়? কই, উষসীর জীবনে তো কিছুই ভালোর জন্য হলো না! সে বিরস মুখে বলল,” তুমি দেখো ভাইয়া, আমি আর জীবনে কখনও ওই বাড়িতে ফিরবো না। কখনোই না।”
তৃষাণ শক্ত মুখে বলল,” আমি তোমাকে ফিরতে দিলেই না ফিরবে। তুমি আমাদের সাথে এবার সোজা বাংলাদেশে যাবে । আর কোনো কথা নয়।”
উষসী স্বস্তিভরা হাসি হাসল। তারপর দ্রুত মাথা নাড়ল। বলল,” আমি এখন থেকে তোমার কোনো কথা অমান্য করব না ভাইয়া, তুমি যেটা বলবে শুধু সেটাই শুনবো। প্রমিস করছি।”
তৃষাণ হালকা হেসে বলল,” গুড গার্ল। এখন কি খাবে বলো?”
” আচ্ছা, আমার ব্যাগটা কই?”
উষসী আশেপাশে ব্যাগ খুঁজতে শুরু করল। মোবাইলটা তার হাতেই আছে। কিন্তু ব্যাগটা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ডোনা চমকে উঠে বলল,” তোর সাথে আবার ব্যাগ ছিল নাকি কোনো?”
” হ্যাঁ অবশ্যই ছিল। ব্যাগে আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব আছে। এসব ছেড়ে আমি বাংলাদেশে যাবো কি করে?”
তৃষাণের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি হলো। ঠোঁট উল্টে শ্রাগ করে বলল,” কোথায়? আমি তো তোমার সাথে কোনো ব্যাগ পেলাম না। ফোনটা শুধু তোমার হাতে ছিল।”
উষসী আফসোসে কপালে হাত ঠেঁকাল। অনমকে দেখে সে ব্যাগ রেখেই টারমিনাল থেকে উঠে এসেছিল। আতঙ্কগ্রস্ত কণ্ঠে বলল,” হায় আল্লাহ, আমার ব্যাগ মনে হয় এয়ারপোর্টেই পড়ে আছে।”
তৃষাণ তাকে শান্ত করতে বলল,” আচ্ছা, এতো টেনশনের কিছু নেই। ব্যাগ পাওয়া যাবে। তুমি আগে কিছু খেয়ে নাও। আমি ব্যাগ আনার ব্যবস্থা করছি।”
উষসীর খুব অস্থির লাগছে। ব্যাগটা অনমের হাতে চলে গেলে ঝামেলা হবে। ইয়ামিন যদি তাকে আটকানোর জন্য ভিসা-পাসপোর্ট লুকিয়ে রাখে তখন কি হবে? উষসী জানে না কেন এমন অবান্তর চিন্তা তার মাথায় আসছে।
হঠাৎ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল যুথি আর উষ্ণতা। উষসীর জ্ঞান ফিরতে দেখে যুথি দ্রুত এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরল,” আমার মা, কেমন আছিস মা? কতদিন পর তোকে দেখলাম। সুন্দর চেহারাটার একি হাল হয়েছে! আহারে… মা তুই নাকি খাওয়া-দাওয়া করিস না? কথায় কথায় নাকি জামাইয়ের সাথে রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে যাস? এগুলো কেমন কথা বলতো? তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কি করব? আমি তো মরেই যাবোরে মা।”
যুথি উষসীকে চেপে ধরে কপালে আর গালে চুমু দিতে লাগল। উষসী নির্বিকার। তার চোখ দু’টো থমকে আছে উষ্ণতার দিকে। উষ্ণতাও অবাক হয়ে অনেকদিন পর দেখছে একমাত্র আদরের, কলিজার টুকরো ছোটবোনকে। আগে কত প্রাণবন্ত আর মিষ্টি ছিল উষসীর মুখটা। এখন যেন খুব শুকিয়ে গেছে সে। চোখের নিচে গাঢ় কালির দাগ। গালে চোখের পানির ছাপ। মনে হয় যেন নিয়মিত কাঁদে। ধারালো সূচের মতো অপরাধবোধ হানা দিচ্ছে উষ্ণতার হৃদয়ে। আজ উষসীর এমন দূরাবস্থার জন্য সে দায়ী! এমন বিশ্রী অপরাধবোধ নিয়ে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক সহজ!
যুথি আর ডোনা উষসীর সাথে গল্প করছিল। উষ্ণতা ঘরের একপাশে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে কেবল। একটু পর ডোনা উঠে বাইরে গেল। তৃষাণ অনেক আগেই বের হয়েছিল উষসীর জন্য খাবার আনতে। যুথি মেয়েকে ধরে বসে আছে। এই মুহূর্তে ঘরে শুধু তারা তিনজন।
উষ্ণতা খুব সাহস করে একটু এগিয়ে গেল। উষসী যুথির কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। উষ্ণতা আলতো হাতে উষসীর মাথাটা স্পর্শ করে বলল,” কেমন আছিস,বোন আমার?”
উষসী সাথে সাথে সরে বসল। উষ্ণতার মনে হলো কেউ তার ভেতরটা দুইহাতে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। এতো কষ্ট হলো…. যেন হৃদয় ছিঁড়ে গেল। তৃষাণ পিজ্জা আর কোক নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। উষসী পিজ্জা খুব পছন্দ করে। তৃষাণকে জায়গা দিতে উষ্ণতা একটু পিছিয়ে দাঁড়াল। যুথি হাসিমুখে বলল,” দাও, আমার মেয়েকে আমি নিজের হাতে খাওয়াবো।”
কিন্তু উষসী জেদ ধরে বলল,” রাখো তো মা, আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”
যুথি এই কথা শুনে ধমক দিল,” এই অবস্থায় খাবি না মানে? একটা চড় দিবো। খা চুপচাপ।”
তৃষাণ বলল,” এমমিতেই তোমার শরীর ভালো নেই। আরও না খেয়ে থাকা ঠিক হবে না। কষ্ট হলেও খেয়ে নাও উষসী।”
” প্লিজ ভাইয়া, আমি খাবো না এখন। আমার একদম ভালো লাগছে না।”
তৃষাণ আঁড়চোখে উষ্ণতার দিকে তাকাল। উষ্ণতা কেমন পিপাসা ভরা দৃষ্টি নিয়ে দেখছে তার বোনকে। তৃষাণ উষ্ণতার কাছে গিয়ে বিড়বিড় করে বলল,” যদি কিছু মনে না করো.. এখান থেকে চলে যাও উষ্ণ। তোমাকে দেখেই উষসী খেতে চাইছে না হয়তো। ওর খাওয়া হয়ে গেলে না হয় আবার এসো! এখন যাও প্লিজ?”
উষ্ণতা টলমল দৃষ্টিতে চাইল। হৃদয়টা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তার। গলার কাছে আটকে আছে সহস্র ব্যথা। মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারল না। শুধু মাথা নেড়ে উচ্চারণ করল,” হুম।”
যার অর্থ সে চলে যাচ্ছে। উষসীর দিকে আরও একবার তাকিয়ে খুব ভারী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে স্থান ত্যাগ করল উষ্ণতা। ঘরের বাইরে পা রাখতেই তার চোখ দু’টো ভরে এলো অশ্রুজলে। মুখ ভেঙে এলো কান্নায়।
চলবে
#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৩৭
লিখা- Sidratul Muntaz
ঘরে ঢুকেই উষ্ণতা কান্নায় ভেঙে পড়ল। ফ্লোরে বসে মাথায় দুই হাত জড়িয়ে সে পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর তৃষাণ এসে এই অবস্থা দেখে তাকে সামলানোর জন্য হাঁটু গেঁড়ে বসল। তার কাঁধে হাত রেখে বলল,” ইটস অলরাইট। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে, উষ্ণ। কাম ডাউন!”
উষ্ণতা অপরাধে কাতর হয়ে বলল,” আমি আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করে দিলাম, তাই না তৃষাণ?”
” না, এরকম কিছু না।”
” হ্যাঁ। আমার জন্যই আজকে ওর এই অবস্থা। সবকিছু আমার জন্য হয়েছে। আমি ওর ভালো করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে ফেলেছি।”
তৃষাণ উষ্ণতার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,” তুমি নিজেকে শুধু শুধু ব্লেইম করছো। এখানে তোমার কোনো দোষ ছিল না। উষু এটা একদিন ঠিক বুঝবে। তারপর নিজের ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমাও চাইবে, দেখো।
উষ্ণতা আফসোস করে বলল,” তোমার কথা আমার শোনা উচিৎ ছিল। আমি কেন শুনিনি সেদিন? কেন এতোবড় ভুল করলাম? কেন? হায় আল্লাহ, এখন আমার উষুর কি হবে? ওর জীবনটা তো শেষ হয়ে গেল।”
উষ্ণতা হাউমাউ করে কান্না শুরু করেছে। তৃষাণ তাকে সামলাতে পারছে না। ফোন বেজে উঠল। সেদিকে তাদের কারো কোনো হুশ নেই। একটু পর উষ্ণতা ধাতস্থ হয়ে বলল,” তোমার ফোন বাজছে, তৃষাণ।”
তৃষাণ বলল,” থাকুক। পরে ধরব।”
” জরুরী কিছুও তো হতে পারে। ধরে দেখো।”
উষ্ণতা চোখের জল মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো। হাসার ভাণ ধরে বলল,” আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে যাচ্ছি।”
তৃষাণ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। উষ্ণতা বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সে একদম ঠিকাছে। কিন্তু তৃষাণ জানে, বাথরুমে গিয়ে সে আবার কাঁদবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে তৃষাণ বারান্দায় গেল৷ ফোন রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে এয়ারপোর্ট টারমিনালের একজন রিসিপশনিস্ট ইংরেজিতে বলল,” আপনি কি শাহবাজ তৃষাণ বলছেন? ”
” জ্বী, কি দরকার?”
” ইয়ামিন ইব্রাহীমের ওয়াইফ কি আপনার কাছে আছে?”
এবার চোয়াল শক্ত হলো তৃষাণের। রাশভারী কণ্ঠে বলল,” হ্যাঁ আছে। ও আমার শালিকা। নিজের ইচ্ছায় ও আমার কাছে এসেছে এবং আমার কাছেই থাকবে। ”
এবার ওই পাশের কণ্ঠস্বর বদলে গেল। একজন ভদ্রলোক রূঢ় স্বরে বললেন,”কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে আপনি উনাকে অচেতন অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে গেছিলেন। সিসিটিবি ফুটেজ সেটাই বলছে। এখন লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ ফোর্স আপনার বাড়িতে উপস্থিত হবে। ঝামেলা না করে লামিয়া ইমরোজ উষসীকে তার হাজব্যান্ডের কাছে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করছি।”
” স্যরি, আমি আপনার অনুরোধ রাখতে পারলাম না।”
” তাহলে কিন্তু আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”
” যা ইচ্ছা করুন। আই ডন্ট কেয়ার।”
” ওকে। আমরা আসছি।”
তৃষাণ ফোন রাখতেই দেখল পেছনে উষ্ণতা দাঁড়িয়ে আছে। সে ভ্রু কুঁচকে কৌতুহলপূর্ণ গলায় বলল,” কি ব্যাপার?”
তৃষাণ তাচ্ছিল্য গলায় উত্তর দিল,” ইয়ামিন আসছে তাও পুলিশ ফোর্স নিয়ে। আমরা নাকি উষসীকে অপহরণ করেছি।”
উষ্ণতা ক্ষেপে উঠল,” হোয়াট? ওর সাহস কিভাবে হলো এতোকিছুর পরেও…”
তৃষাণ তাকে থামিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে বলল,” শান্ত হও, আমি আছি। ও কিছুই করতে পারবে না।”
উষ্ণতা কিড়মিড় করে বলল,” আমি আজ ওকে ছাড়ব না তৃষাণ। ও উষুর জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমিও ওর জীবন শেষ করে দিবো।”
একটু পর তৃষ্ণা ঘরে ঢুকল। মা আর বাবাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে সে ভ্রু কুঁচকালো,” কি হয়েছে বাবা?”
তৃষাণ বলল,” কিছু হয়নি বাবা। তুই কি কিছু বলবি?”
মায়ের চোখে পানি দেখে তৃষ্ণা প্রশ্ন করল,” তাহলে মা কাঁদছে কেন?”
উষ্ণতা চোখের পানি মুছে বলল,” কাঁদছি না। বল, কেন এসেছিস?”
” সিংগার… মানে ইয়ামিন আঙ্কেল এসেছে সাথে পুলিশ। তারা নাকি এন্টসকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চায়। দাদুন বাবাকে ডাকতে বলল।”
তৃষাণ উষ্ণতার দিকে চাইল। উষ্ণতা রাগে অস্থির হয়ে বলল,” আমি দেখছি।”
তৃষাণ বাঁধা দিয়ে বলল,” না, তোমার যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুমি থাকো, আমি দেখে আসছি।”
উষ্ণতা তৃষাণের কথার তোয়াক্কা না করেই বের হয়ে গেল। তৃষ্ণা কিছু বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করল,” বাবা, মায়ের কি হয়েছে?”
তৃষাণ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” জানি নাহ।”
লিভিংরুমে ইয়ামিনকে বসে থাকতে দেখেই রক্ত উঠে গেল উষ্ণতার মাথায়। সে কাছে গিয়ে ইয়ামিনের কলার টেনে তাকে দাঁড় করাল,” তোমার সাহস কিভাবে হয় এখানে আসার? গেট আউট। আই স্যায়, গেট আউট।’
ধাক্কা মেরে ইয়ামিনকে একদম দরজার বাইরে পাঠিয়ে দিল উষ্ণতা। অফিসার বললেন,” বিহেভ ইউরসেল্ফ, এসব কি হচ্ছে?”
ইয়ামিন অনুনয় করে বলল,” প্লিজ, আমি উষসীর সাথে শুধু একবার দেখা করব।”
উষ্ণতা আক্রোশে কেঁপে উঠল,” উষসীর নামও তুমি উচ্চারণ করবে না, খবরদার। এতোকিছুর পরেও তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কোন মুখে এখানে এসেছো? আবার পুলিশও সাথে নিয়ে এসেছো? আমাদের সবাইকে এরেস্ট করাবে নাকি?”
ইয়ামিন বলল,” একদম না। শুধু উষসীর খোঁজ পাওয়ার জন্য আমি উনাদের সাথে এনেছি। এর বেশি কিছুই না।”
” তোমার কোনো কথা আমি বিশ্বাস করি না৷ বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।”
ইয়ামিন দুই পাশে মাথা নেড়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,” না। উষসীর সাথে দেখা না করে আমি কোথাও যাবো না।”
” উষসী আসবে না। ও তোমার সাথে দেখাও করবে না। ইজ ইট ক্লিয়ার?”
পুলিশ অফিসার বললেন,” সেটা তো আমরা মিসেস উষসীর থেকে শুনবো। ডাকুন উনাকে।”
” ডাকা যাবে না। আপনারা বের হোন।”
” এভাবে বললে তো আমরা যাবো না। ”
তৃষাণ বের হয়ে এলো,” তাহলে কিভাবে বললে যাবেন?”
ইয়ামিন বিনীত কণ্ঠে বলল,” ভাইয়া, প্লিজ। আমাকে উষসীর সাথে শুধু একবার দেখা করতে দিন। ও রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছে।”
” শাট আপ, ইউ ইডিয়ট! আমি যে এখনও তোমার নামে মামলা দেইনি সেটাই তোমার ভাগ্য। নাউ গেট লস্ট। ”
অফিসার রাগী স্বরে বললেন,” এটা কি ধরণের অভদ্রতা? কারো ওয়াইফকে আপনারা এভাবে আটকে রাখতে পারেন না৷ উনার হান্ড্রেড পারসেন্ট রাইট আছে মিসেস উষসীর সঙ্গে দেখা করার।”
তৃষাণ হাত ভাঁজ করে বলল,” আমরা কাউকে জোর করে আটকে রাখিনি৷ উষসী নিজেই আমাদের কাছে এসেছে। ও ইয়ামিনের সাথে আর থাকবে না। ওদের ডিভোর্স হবে।”
” সেটা আগে মিসেস উষসীকে নিজ মুখে স্বীকার করতে হবে। তাহলেই আমরা মানব। কিন্তু আপনি তো দেখাই করতে দিচ্ছেন না।”
উষ্ণতা ক্ষীপ্ত গলায় বলল,” আমার বোন এখন কারো সাথে দেখা করার অবস্থায় নেই। তাছাড়া ও তো ইয়ামিনের মুখও দেখতে চায় না।”
” তাহলে আমরা এখান থেকে যাচ্ছি না। আগে মিসেস উষসী আসবে… তারপর।”
ইয়ামিন বলল,” থাক স্যার, আপনারা চলে যান।”
অফিসার বললেন,” কেন মিস্টার ইয়ামিন? আমরা আপনার সঙ্গে থাকলে আপনার ওয়াইফকে উদ্ধার করা বেশি সহজ হবে।”
” কিন্তু ওরা আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ। এভাবে ফোর্স নিয়ে বসে থাকলে সেটা খারাপ দেখাবে। আপনারা এতোক্ষণ যা হেল্প করেছেন সেজন্য থ্যাঙ্কিউ। বাকি কাজ আমি নিজে করতে চাই।”
” ওকে, অল দ্যা বেস্ট।”
” থ্যাঙ্কিউ স্যার।”
পুলিশরা চলে যাওয়ার পর ইয়ামিন আর অনম গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল৷ প্রায় সন্ধ্যার দিকে জানালা খুলে উঁকি দিল উষসী। তাকে দেখতে পেয়েই ইয়ামিন হাসল, হাত নাড়ল। কিন্তু উষসী হাসল না। কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সে খট করে আবার জানালা আটকে দিল।
অনম বলল,” স্যার, ম্যাডাম মনে হয় বেশি রেগে আছেন। আমরা আবার কালকে আসলে কেমন হয়?”
ইয়ামিন গাঢ় স্বরে বলল,” আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না।”
” কিন্তু স্যার, আপনি এখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? অন্ধকার হতে যাচ্ছে।”
” তুমি চাইলে চলে যেতে পারো।”
” আমি আপনাকে রেখে কিভাবে চলে যাবো স্যার?”
সন্ধ্যায় তৃষাণ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ইয়ামিনকে দেখতে পেয়ে প্রচন্ড রেগে গেল।
” তুমি এখনও যাওনি? কি সমস্যা তোমার?”
” উষসী আমার স্ত্রী। ওকে রেখে আমি কোথাও যাবো না।”
তৃষাণের মাথা গরম হয়ে গেল এমন কথা শুনে। কটমটে দৃষ্টিতে বলল,” কি বললে? আরেকবার বলো!”
ইয়ামিন কাঠ কাঠ গলায় একই কথা আবারও আওড়াতেই তৃষাণ সর্বশক্তি দিয়ে তার মুখে ঘুষি মারল৷ অনম এই অবস্থা দেখে তেড়ে যেতে নিলেই তাকে থামাল ইয়ামিন,” সাবধান অনম, উনি উষসীর কাছে বড় ভাইয়ের চেয়েও বেশি।”
” কিন্তু স্যার… আপনাকে যে মারল?”
” সেটা আমি বুঝব। তোমাকে কিছু করতে বলিনি।”
” স্যরি স্যার।” অনম মাথা নিচু করে দূরে সরে দাঁড়াল।
তৃষাণ আরেকবার ইয়ামিনকে আঘাত করতে নিলেই উষ্ণতা বের হয়ে এলো,” প্লিজ তৃষাণ, স্টপ।”
” উষ্ণতা, ওকে চলে যেতে বলো প্লিজ। আমি ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছি।” তৃষাণ মাথায় হাত রেখে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করল।
উষ্ণতা অনুরোধ করে বলল,” ইয়ামিন, প্লিজ এখান থেকে চলে যাও। উষসী তোমার সাথে দেখা করতে চায় না এটা কেন বুঝতে পারছো না তুমি?”
ইয়ামিন আকুতি নিয়ে বলল,” আপনি বুঝিয়ে বললে ও নিশ্চয়ই দেখা করবে।”
এবার উষ্ণতারও ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সে উচ্চস্বরে বলল,” সেই অবস্থা কি তুমি রেখেছো? উষসী এখন আর আগের মতো নেই। তোমার জন্যই ওর এই অবস্থা। তুমি না কথা দিয়েছিলে যে আমার বোনকে ভালো রাখবে? এই তোমার ভালো রাখা? কাঁদতে কাঁদতে ওর চোখের নিচে দাগ পড়ে গেছে। আগে যেই মেয়ে কথায় কথায় হাসতো তার মুখে এখন হাসির লেশমাত্র নেই। এমন অবস্থা করে দিয়েছো তুমি ওর। আগে যে বোন আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না এখন সে আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলছে না। তোমার জন্য সব হয়েছে, তবুও কোন মুখে তুমি ওর সাথে দেখা করতে চাও? এতোকিছু করেও কি আঁশ মেটেনি তোমার?”
ইয়ামিন ব্যথা যুক্ত গলায় বলল,” এরকম হোক তা আমি কখনও চাইনি।”
” তাহলে কে চেয়েছে? বলো কে চেয়েছে?”
ইয়ামিন মাথা নিচু করে বলল,” সেদিন আপনাকে আর আমাকে একসাথে দেখেছিল উষসী। তারপর থেকেই ও সন্দেহ শুরু করে। আর আস্তে আস্তে সবকিছু জেনে ফেলে।”
” সেটা কি আমার দোষ? তুমি আমার ঘরে এসেছিলে। আমি তো ডাকিনি তোমাকে। কে বলেছিল আমার পায়ের কাছে এসে শুয়ে থাকতে? আমি বলেছিলাম?তোমার উচিৎ ছিল ওকে বোঝানোর। সেটা না করে তুমিও স্বীকার করলে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো! অথচ আমি কখনও এসব চিন্তাও করতে পারিনি তোমাকে নিয়ে। তুমি আমার বোনের চোখে আমাকে নিচে নামিয়েছো। জঘন্য তুমি। এজন্য আমি তোমাকে কখনও মাফ করব না।”
” বিশ্বাস করুন, আমি উষসীকে আপনার নামে নেগেটিভ কিছুই বলিনি। সব দোষ আমার ছিল তা আমি স্বীকার করেছি। কিন্তু উষসী ভুল বুঝেছে।”
” আর একটাও মিথ্যা কথা বলবে না তুমি। তোমার জন্য সব হয়েছে, তুমি চেয়েছো বলেই ও সব জেনেছো। আমার বোনের জীবন শেষ করে দিয়েছো তুমি। তোমাকে আমি ছাড়ব না ইয়ামিন।”
উষ্ণতা ক্রোধে প্রায় উন্মাদ হয়ে উঠল। তৃষাণ তাকে জোর করে ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল। বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ইয়ামিন দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার ভঙ্গিতে। অনম গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,” স্যার, বাড়ি চলুন স্যার। প্লিজ স্যার।”
ইয়ামিন যন্ত্রের মতো বলল,” আমি কোথাও যাবো না অনম। তুমি যাও।”
” কিন্তু স্যার, বৃষ্টির মধ্যে আপনি রাস্তায় কিভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন? এরা তো আপনাকে ভেতরেও যেতে দিবে না।”
” আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না৷ তোমাকে যেতে বলেছি।”
অনম চুপচাপ বসে রইল গাড়িতেই। উষসী অন্ধকার ঘরে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টির শব্দ শুনে সে আরেকবার বাইরে উঁকি দিল। দেখল ইয়ামিন এখনও দাঁড়িয়ে আছে। অবলীলায় বৃষ্টিতে ভিজছে। উষসী বাধ্য হয়ে তাকে ফোন করল।
উষসীর ফোন দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটল ইয়ামিনের। সাথে সাথে মোবাইল রিসিভ করল। উদগ্রীব কণ্ঠে বলল,” হ্যালো।”
ওই পাশ থেকে উষসীর বিরক্তি ঝরা কণ্ঠ শোনা গেল,” আপনি চাইছেনটা কি?”
” তোমাকে।” ইয়ামিনের সহজ স্বীকারোক্তি।
উষসীর কান্না পেলেও সে নিজেকে সামলে নিল। ইয়ামিনের ছলা-কলায় সে আর ভুলবে না। শক্ত গলায় বলল,” এখান থেকে চলে যান। ”
” তোমাকে না নিয়ে যাবো না।”
” বাড়াবাড়ি করবেন না। সব শেষ হয়ে গেছে। আমি আর জীবনে কখনও আপনার কাছে আসব না।”
” পারবে না।”
” মানে?”
ইয়ামিন আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল,” আমার কাছে না এসে তুমি থাকতেই পারবে না!”
” ও তাই নাকি? আপনার এটা মনে হয়? ঠিকাছে, আপনি থাকুন আপনার অন্ধবিশ্বাস নিয়ে। আমি রাখছি।”
উষসী ফোন রেখে দিল। কিন্তু সে বেশিক্ষণ থাকতে পারল না। ইয়ামিনের কথাকে সত্য প্রমাণ করে ঠিকই কিছুক্ষণ পর ছাতা হাতে নিচে নেমে এলো।
চলবে