আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-৩৪+৩৫

0
545

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৩৪
লিখা- Sidratul Muntaz

(বর্তমান)
চোখ খুলে উষসী অনুভব করল, আলোকিত ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে সে। তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে অনবরত। আয়শা আর অনম তার মাথার কাছেই বকবক করছে। যদিও উষসী তাদের দেখতে পাচ্ছে না। মাথা তুলে আশেপাশে তাকানোর শক্তিটুকুও তার নেই। সে শুধু কথা শুনতে পাচ্ছে।

আয়শার কণ্ঠ প্রায় কাঁদো কাঁদো,” অনম ভাই, ম্যাডামের গা তো কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না। এতো পানি ঢাললাম। জ্বরে পুড়েই যাচ্ছে শরীর। স্যারকে আবার ফোন করেন না!”

অনম হতাশ কণ্ঠে আওড়াল,” স্যারকে রিচ করা যাচ্ছে না। আমি কি করতে পারি, বলো। ম্যাডাম যে অসুস্থ এই খবরটা অন্তত জানাতে পারলেও স্যার দু’মিনিটে বাড়িতে চলে আসতো। যেখানেই থাকুক। কিন্তু খবরটা তো স্যারকে জানাতেই পারছি না।”

” হায় আল্লাহ, এর মধ্যে যদি ম্যাডামের কিছু হয়ে যায়? আমরা কি করব?”

” কিছু হবে না, আল্লাহ ভরসা। এটা শুধু ঠান্ডা জ্বর। সিরিয়াস কিছু তো না।”

” আপনি ধরে দেখেন, ম্যাডামের শরীর শুধু গরম হচ্ছে…”

আয়শা থামল। সে খেয়াল করল আগের চেয়ে উষসীর শরীর এখন কিছুটা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে। তাছাড়া উষসী চোখ মেলেও তাকিয়েছে। সে স্বস্তিভরা কণ্ঠে বলল,”আলহামদুলিল্লাহ। ম্যাডাম আপনি ভালো আছেন? ”

উষসী আয়শাকে ধরে উঠে বসতে চাইল। আয়শা তাকে সাবধানে আর ধীরে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। তার ভেজা চুলে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে দিল।

নিজের গায়ের পোশাক দেখে দূর্বল গলায় প্রশ্ন করল উষসী,” আমার ড্রেস কে বদলেছে আয়শা? তুমি?”

” জ্বী ম্যাডাম, আপনি তো হুশেই ছিলেন না। ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা লেগে যেতো।”

” ধন্যবাদ আয়শা, তোমাকে অনেক কষ্ট দিলাম।”

” ছি, কি বলেন ম্যাডাম… আপনার জন্য কষ্ট না করলে কার জন্য করব?”

” তোমাকে আগেও একবার বলেছিলাম….আমাকে ম্যাডাম ডাকবে না। আমি তোমার ম্যাডাম না।”

আয়শা একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। উষসী নিজেকে ম্যাডাম ডাকতে নিষেধ করে। এই বুঝে আয়শা কয়দিন আপামনি ডেকেছে। ইয়ামিন একদিন এটা শুনতে পেয়ে ধমক দিয়ে বলল,” আমি তোমার কে হই?”

আয়শা ক্ষীণ গলায় বলেছে,” স্যার, আপনি আমার স্যার।”

” তাহলে আমার বউ তোমার কি হবে?”

” ম্যাডাম হবে। ”

” আর কখনও যেন ‘আপা-টাপা’ না শুনি।”

তারপর থেকে আয়শা খুব সাবধানে চলে। অনম হঠাৎ বলল,” ইয়েস! স্যারের ফোন রিচ করতে পেরেছি। রিং হচ্ছে।”

আয়শা উজ্জ্বল মুখে বলল,” বলুন ম্যাডাম খুব অসুস্থ। স্যারকে দ্রুত বাড়ি আসতে বলুন।”

” না, খবরদার! ” উষসী সু-উচ্চ স্বরে নিষেধ করে দিল। গম্ভীর হয়ে বলল,” আমার অসুস্থতার ব্যাপারে কিছুই যেন উনি না জানে।”

আয়শা আর অনম একটা দোলাচলে পড়ে গেছে। ইয়ামিন নির্দেশ দিয়েছে উষসীর প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপও যেন তাকে জানানো হয়। উষসী একটু বাথরুমে গেলেও যেন ইয়ামিন বাইরে থেকে সেই খোঁজ পায়। অথচ উষসী বলেছে, সে ম-রে গেলেও যেন ইয়ামিনকে জানানো না হয়। বরং ইয়ামিন আসার আগেই যেন তাকে দাফন করে ফেলা হয়!

দুইজনের এমন বিপরীতধর্মী আদেশ পালন করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আয়শা আর অনম।

অনম অবশ্য উষসীর কথা শোনে না। ইয়ামিনকে সবকিছু জানায়। আয়শা মাঝে মাঝে উষসীর কথাই শোনে। কিন্তু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো সে অবশ্যই ইয়ামিনকে জানায়।

এবারের ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। আয়শা বলল,” প্লিজ ম্যাডাম, স্যার এই কথা না জানলে দ্রুত বাড়ি আসবেন না। আর আপনার অবস্থা তো ভালো নেই।”

উষসী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,”তোমাদের স্যার এলেই আমি ভালো হয়ে যাবো কে বলল? সে কি ডাক্তার? তার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হয়নি, সে ফিরবে না। আমার তাকে কিছু জানাতে ইচ্ছে করছে না। আমি জানাবো না, ব্যস। তার ইচ্ছের দাম আছে। আমার নিজের ইচ্ছের কি কোনো দাম নেই?”

অনম অসহায় দৃষ্টিতে আয়শার দিকে চাইল। আয়শার চোখমুখ আরও করুণ। স্বামী-স্ত্রীর এই মান-অভিমানের খেলায় তারা দু’জন পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনম সেটাই করল, যেটা তার কাছে সহজ মনে হলো। ঘর থেকে বের হয়ে ইয়ামিনকে ফোন করতে গেল সে।

আয়শা উষসীর পাশে বসে বলল,” কিছু খেয়ে নিন, ম্যাডাম। আপনি সারাদিন প্রায় না খেয়েই আছেন।”

উষসী ত্যক্ত গলায় বলল,” এই বাড়ির কোনো খাবারই আমার গলা দিয়ে নামবে না আয়শা। আমি পারব না খেতে। তুমি কি আমাকে একটা হেল্প করতে পারবে?”

” অবশ্যই পারব ম্যাডাম! হেল্প কেন বলছেন? অর্ডার করুন শুধু।”

উষসী মেঝের দিকে চেয়ে কঠিন স্বরে বলল,” আমাকে বাংলাদেশ ফ্লাইটের টিকিট কেটে দিতে হবে। কিন্তু ইয়ামিন যেন জানতে না পারে।”

আয়শা থতমত খেল। তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল। উষসী তাকাতেই মাথা নিচু করে ফেলল আয়শা।

মৃদু হেসে উষসী বলল,” অর্ডার করতে বললে না? করলাম তো অর্ডার। আমি নাকি তোমার ম্যাডাম? তাহলে আমি যা বলব, সেটাই তোমার করা উচিৎ। কিন্তু তুমি পারবে না, তাই না? দিনশেষে তোমার স্যারের অনুমতি ছাড়া কিছুই করবে না তুমি। এই এতোবড় বাড়িতে আমার ন্যূনতন স্বাধীনতাও নেই। বন্দিনীর মতো পড়ে থাকতে হয় সারাক্ষণ। তাহলে কেন আমাকে ম্যাডাম-ম্যাডাম করো? এখানে তো আমার কোনো ইচ্ছার কদর করা হয় না। আমিও তোমাদের মতো বাধ্য হয়ে এই বাড়িতে আছি। পার্থক্য শুধু তোমাদের বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে,আর আমাকে বেতন দেওয়া হয় না। বন্দী আমি।”

” এভাবে বলবেন না, ম্যাডাম৷ আপনি বন্দিনী কেন হবেন? স্যার আপনাকে অনেক ভালোবাসে বলেই…”

আয়শা তার কথা শেষ করতে পারল না। উষসী পাশের টেবিল থেকে ছোট্ট কাঁচের বাক্সটি নিয়ে ছুঁড়ে মারল। তীক্ষ্ণ শব্দে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল জিনিসটি। রাগে উষসী মাথায় দুই হাত চেপে কাঁদতে শুরু করল। তার অসহ্য লাগছে পুরো পৃথিবী।

আয়শা তার কাঁধে হাত রেখে কিছু বলতে নিতেই শরীর ঝাঁকাল উষসী। ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,” বের হয়ে যাও। খবরদার আমার সামনে আসবে না কেউ। গেট লস্ট।”

উষসী আয়শাকে ধাক্কা মারতে লাগল। আয়শা দ্রুত ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। উষসীর ফোন বাজল এমন সময়। সে রাগে ফোনটাও আছাড় মারতে নিয়েছিল। তখন প্রীতমের নাম্বার দেখে তার হাত থেমে গেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

আচ্ছা, প্রীতম কি তাকে বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু সাহায্য করতে পারবে? এই বাড়িতে সে আর একদম থাকতে পারছে না। তার শ্বাস অবরুদ্ধ হয়ে আসছে। উষসী ফোন রিসিভ করে বলল,” হ্যালো প্রীতম, কেমন আছিস? আমি তোর কথাই ভাবছিলাম।”

প্রীতম বিরস কণ্ঠে বলল,” আমার কথা কেন?”

” তোর সাথে আমার জরুরী দরকার আছে।”

” তোর সাথেও আমার জরুরী দরকার।”

” তাহলে তো ভালোই। দেখা করতে পারবি?”

” অসম্ভব, যা বলার আমি ফোনেই বলব। তারপর আমাদের যোগাযোগ না রাখাই ভালো।”

” মানে?” উষসী ভ্রু কুঁচকালো। উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধাল,” এমন কথা কেন বলছিস? এই ভিনদেশে তুই ছাড়া আমার কে আছে যে আমাকে একটু সাহায্য করবে? তুই তো জানিস, আমার পরিবারের কেউ এখন আর আগের মতো নেই। তৃষাণ ভাইকেও সত্যিটা জানাতে পারছি না। আমি কি করব, কি বলব…”

প্রীতম খুব রূঢ় ভঙ্গিতে বলল,” ইয়ামিন তোকে জীবনেও ডিভোর্স দিবে না৷ এটা নিশ্চয়ই তুই ভালো করে জানিস? তাই এসব নাটকের কোনো মানে হয় না।”

” মানে… আমি কিছু বুঝলাম না। আমি আবার তোর সাথে নাটক করলাম কিভাবে?”

” আজ সকালে ইয়ামিন ভার্সিটিতে এসে আমাকে সবার সামনে ইনসাল্ট করে গেছে। বলেছে তোর আশেপাশে কখনও গেলে নাকি আমার ঠ্যাং ভেঙে ফেলবে।”

উষসী ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,” কি আশ্চর্য! উনি যে এসব করেছেন তা তো আমি জানিও না৷ তুই আমাকে কেন এর জন্য ব্লেইম করছিস? আমি কি ওকে পাঠিয়েছি? ”

“শোন উষসী, আমি তোর হাতের পুতুল না যে বার-বার আমাকে নিয়ে খেলবি৷ তোর বিয়ের পর তোকে পাওয়ার আশা আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম৷ খুব কষ্টে তোকে ভুলতে চেষ্টা করেছি। আমি কিভাবে নিজের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি সেটা শুধু আমি জানি। কিন্তু লস এঞ্জেলসে দেখা হওয়ার পর… তুই যখন বললি তুই ইয়ামিনকে ডিভোর্স দিবি তখন সত্যি বলতে দ্বিধা নেই যে আমার মনে আবারও আশা জেগেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি বোকামি করছি। ইয়ামিন তোকে জীবনেও ডিভোর্স দিবে না৷ তাই তুইও আমার ফিলিংস নিয়ে খেলা বন্ধ কর, প্লিজ। রাখছি।”

প্রীতম এক নিঃশ্বাসে সবকিছু বলে ফোন রেখে দিল। উষসী তার এহেন আচরণে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। তার মাথা ভনভন করতে লাগল। সে কল্পনাও করেনি যে প্রীতম তাকে নিয়ে এখনও এসব চিন্তা করে!

নিজের বোকামি দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হলো উষসী৷ এই প্রীতমকেই সে আবার বিশ্বাস করতে চেয়েছিল। ভেবেছিল বন্ধু হিসেবে নিজের এমন বিপদের দিনে অন্তত প্রীতমকে সে পাশে পাবে! অথচ প্রীতম কি-না তার কাছে এসেছিল শুধুই স্বার্থের জন্য!

আর যখনি সে বুঝতে পারল ইয়ামিন উষসীকে ছাড়বে না, তখন সে নিজেই উষসীর হাতটা ছেড়ে দিল। সে আসলে কখনোই উষসীকে বন্ধু ভাবতে পারেনি। আহারে…উষসী তার এক জীবনে যত মানুষকে বিশ্বাস করেছিল, সবাই তাকে ঠকিয়েছে! এমন ঠকে যাওয়ার জীবন কারো না হোক!

________________
উষসীর সাথে অভিমান করে সারাদিন বাইরে ছিল ইয়ামিন। স্ট্রিট বেঞ্চে রাত কাটাবে বলেও ঠিক করেছিল। তবুও সে বাড়ি ফিরবে না। কিন্তু অনমের ফোন পেয়ে যখন জানতে পারল উষসীর অবস্থা… তখন আর এক মুহূর্ত মন স্থির থাকল না। সে খুব দ্রুত বাড়ি ফিরল।

আয়শা আর অনম ড্রয়িংরুমে উদাস মুখে বসে আছে। ইয়ামিন ঢুকেই প্রশ্ন করল,” উষসী কোথায়?”

আয়শা দাঁড়িয়ে বলল,” স্যার, ম্যাডাম প্রচন্ড রেগে গেছে। একটু আগে ভাঙচুর করছিল।”

” হোয়াট? ও যে সারাদিন খায়নি এই কথা কেউ আমাকে জানালে না কেন?”

আয়শা ভয়ার্ত গলায় বলল,” আমি ভেবেছিলাম… অনম আপনাকে জানিয়েছে”

অনম বলল,” স্যার… আমি তো সারাদিন আপনাকে রিচ করতে পারিনি। আপনার ফোন বন্ধ ছিল।”

ইয়ামিনের ইচ্ছে করল নিজের ফোনটাই আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। কখন ফোন সুইচড অফ হয়ে গেছিল তা সে টেরও পায়নি। যখন বুঝতে পেরেছে… তখন সাথে সাথেই ফোন খুলেছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।

সব রাগ ভুলে ইয়ামিন উষসীর ঘরের সামনে গিয়ে খুব জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগল। অস্থিরচিত্তে বলতে লাগল,” আই এম স্যরি। সব ভুল আমার ছিল। তুমি যদি বলো মাফ চাইতে তাহলে চাইবো। একশোবার বললে একশোবার। তবুও দরজা খোলো উষসী, প্লিজ!”

অনম আর আয়শা হাঁ করে ইয়ামিনের দিকে চেয়ে আছে। তারা বিস্ময় নিয়ে দেখছে ইয়ামিনের উন্মত্ততা।

ইয়ামিন হালকা অস্বস্তিবোধ করল। বিরক্ত গলায় বলল,” তোমরা আমার পেছনে কেন এসেছো? আমি কি ডেকেছি কাউকে? যাও এখান থেকে। ”

অনম-আয়শা দ্রুত সরে গেল। ইয়ামিন উতলা হয়ে বলল,” প্লিজ, প্লিজ দরজা খোলো উষু।”

তারপর হঠাৎ ইয়ামিনের মনে পড়ল, এই ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি তার পকেটেই আছে। সবসময় উষসী দরজা বন্ধ করে রাখে বলেই সে চাবির ব্যবস্থাটা করেছিল। কিন্তু দুশ্চিন্তায় ব্যাপারটা মনেও ছিল না। এবার মনে পড়ায় চাবি দিয়ে অনায়াসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে পারল । কিন্তু উষসীকে বিছানায় পাওয়া গেল না৷ অসুস্থ অবস্থায় তো তার শুয়ে থাকার কথাই ছিল। মেয়েটা কোথায় গেল? বাথরুমেও তো নেই।

ত্রস্ত পায়ে বারান্দায় যেতেই মাথা নষ্ট হওয়ার মতো দৃশ্য দেখল ইয়ামিন। উষসী বারান্দায় অচেতনের মতো পড়ে আছে৷ দুই চোখের কার্ণিশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অশ্রুধারা। তার শরীর এতোটাই দূর্বল যে নড়াচড়াও করতে পারছে না। এমন ঠান্ডার মধ্যে অসুস্থ শরীরটা নিয়ে বারান্দায় শুয়ে থাকার কি মানে?

ইয়ামিন দুইহাতে উষসীকে তুলে বিছানায় এলো। খুকখুক করে কেশে উঠল উষসী। সে চোখ মেলে না তাকিয়েই বিড়বিড় করে বলল,” আমাকে আপনার থেকে মুক্তি দিন, প্লিজ। প্রয়োজনে মৃ-ত্যু দিন। তবুও মুক্তি দিন। আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না।”

ইয়ামিনও একইভাবে বিড়বিড় করে বলল,” এভাবে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে ভালো আমাকে একেবারে মে-রে ফেলো তুমি।”

তারপর শুধুই নীরবতা। কেউই কোনো কথা বলল না। অথচ দু’জনেই কাঁদছে নিঃশব্দে।

চলবে

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ৩৫
লিখা- Sidratul Muntaz
( অতীত)
বিয়ের সাতদিনের মাথায় ইয়ামিন বিদেশ চলে যায়। উষসীকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে উষসী জানায়, সে যাবে না।

তার এমন সিদ্ধান্তে আজগর সাহেব এবং মিসেস শিমলা খুবই বিরক্ত হোন। শিমলা উষসীকে শাসন করে বললেন,” যাবে না মানে? অবশ্যই যেতে হবে। আমার ছেলে বিদেশে গিয়ে একা থাকবে নাকি? আর তুমি আমাদের বুড়ো-বুড়ির সাথে এখান থেকে করবে কি?”

উষসী হাসিমুখে বলল,” ভুল বুঝবেন না, আম্মু। আমি আসলে যেতাম। কিন্তু আমার সামনে সেমিস্টার ফাইনাল। এই অবস্থায় বিদেশে ঘুরতে গেলে তো চলবে না।”

আজগর সাহেব বললেন,” আরে, বোকা মেয়ে! তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। পড়াশুনার ব্যাপার তুমি আমাদের উপর ছেড়ে দাও। তোমরা আমেরিকায় সেটেল হলে সেখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যেও। পড়ালেখা, ক্যারিয়ার যেটাই হোক, স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকা ভালো ব্যাপার নয়।”

উষসী অনুরোধ করে বলল,” কিছু মনে করবেন না বাবা প্লিজ! আমি এখানেই থাকতে চাই। পরিবারের সাথে আরও কিছুদিন সময় কাটাতে চাই। আমেরিকা চলে গেলে সবার সাথে আবার কবে না কবে দেখা হয় তার ঠিক নেই। এর চেয়ে ভালো গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলেই বিদেশে যাওয়ার কথা ভাববো। ততদিন আমি আপনাদের সাথে আর আমার পরিবারের সাথে থাকবো।”

শিমলা আর আজগর কিছুতেই মানতে রাজি নয়। তাছাড়া বউকে রেখে ছেলেকে বিদেশ পাঠালে মানুষ কি বলবে? মানুষ ভাববে শেষ বয়সে বউয়ের সেবা-শুশ্রূষা পাওয়ার আশায় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে তারা। পুত্রবধূর নামে বাড়িতে আয়া আনা হয়েছে বাড়িতে। ইয়ামিন এতো জনপ্রিয় যে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। এসব নিয়ে দেখা গেল নিউজও তৈরী হয়ে যাবে। আর পাবলিকও সেটা গিলবে।

তাছাড়াও পুত্রবধূ শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে থাকার ব্যাপারটা দৃষ্টিকটূ দেখায়। স্বামী যেখানে থাকবে স্ত্রীও সেখানেই থাকবে। এটাই তো নিয়ম।

উষসী নিয়মের ধার ধারল না। সে জেদ করে থেকেই গেল। আর ইয়ামিনও তাকে রেখে চলে গেল বিদেশে। ধীরে ধীরে শিমলা আর আজগর বুঝতে পারলেন… উষসী আর ইয়ামিনের সম্পর্ক ঠিক নেই। তারা এই বিষয়ে একদিন উষসীকে প্রশ্নও করেছেন।

উষসী খুব অস্বস্তিতে পড়ে যায় সেদিন৷ সত্যি কথা সে বলতে পারবে না। কিন্তু সত্যিটা সে জানে! বিয়ের আগে ইয়ামিন কাউকে ভালোবাসতো। সেই মেয়েটা কে তা আজও জানে না উষসী। কিন্তু এতোটুকু নিশ্চিত যে ইয়ামিন এখনও সেই মেয়েকেই ভালোবাসে! এজন্যই সব ভুলে উষসীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারছে না। কখনও হয়তো পারবেও না।

খুব আশ্চর্যের বিষয়, বিয়ের পর থেকে উষসীর সাথে ইয়ামিনের ভালো করে কোনো কথাই হয়নি৷ অনেক বেশি প্রয়োজন না হলে ইয়ামিন তার ঘরেই আসতো না৷ রাতের বেলা অবশ্য আসতো। তাকে আসতে হতো। অন্য ঘরে ঘুমাতে গেলে হয়তো মা অথবা বাবার কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

উষসী এই ব্যাপারটা বুঝতো বলেই আগ বাড়িয়ে ইয়ামিনের সাথে এই নিয়ে কিছু বলতে যায়নি। কিন্তু একদিন রাতে ইয়ামিন নিজে থেকেই উষসীর সাথে কথা বলতে এলো। হয়তো বিবেকের তাড়নায়।

ভারী অপরাধী স্বরে সে বলল,” আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। এভাবে বিয়েটা করা আমার উচিৎ হয়নি। আমি জীবনে কখনও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করিনি। একমাত্র এই বিয়েটা ছাড়া।”

উষসীর মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো তখন। সে হতবাক চিত্তে বলল,” ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করেছেন মানে? কেন করেছেন? আমি বলেছিলাম যে আমাকে বিয়ে করুন? আপনি বিয়ে না করলে কি আমি ম-রে যেতাম? একবারও কি বলেছিলাম এরকম? নাকি আপনার পায়ে ধরেছিলাম, বলুন! আপনার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। তাহলে এখন আপনি এসব কি কথা বলছেন? ”

ইয়ামিন কুণ্ঠিত গলায় বলল,” কাম ডাউন। বাইরে থেকে কেউ শুনে ফেলবে।”

উষসীর তখন মাথার ঠিক নেই৷ রাগে সে অন্ধকার দেখছে চোখে- মুখে। চেঁচিয়ে বলল,” শুনলে শুনবে। বিয়ের রাত থেকে শুরু করে গত তিনদিন যাবৎ আমরা অপরিচিত মানুষের মতো আচরণ করছি। আপনি এমন ভাব করছেন যেন আমাকে জোর করে আপনার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ বিয়ের আগে আমি বার-বার আপনার মতামত জানতে চেয়েছিলাম। প্রত্যেকবার আপনি পজিটিভ রেসপন্স করেছেন। তাহলে এখন এসব কি? আমার জীবন নিয়ে ছেলে-খেলা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?”

এতো কথা শুনে ইয়ামিনও চুপ থাকতে পারল না। দ্বিগুণ তেজ নিয়ে সেও বলে উঠল,” আমাকে এতো কথা বলার আগে ভেবে দেখো, বিয়ের আগে তুমি নিজে কি করেছিলে? সেদিন যে তোমাকে হসপিটালে নেওয়া হলো.. ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলে তুমি। সেটা কি আমার জন্য না?”

উষসী বিব্রত হলো। ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল। এগিয়ে আসতে আসতে বলল,” ওই দিন মায়ের অসুস্থতার ব্যাপারে মিথ্যা বলে আমাকে রসুলপুর নেওয়ার প্ল্যানটা কি তোমার ছিল না? রাতে আমাকে চা দিতে আসার অযূহাতে আমার পাশে ঘুমিয়ে যেতে কি আমি বলেছিলাম তোমাকে? এটাও তোমার ভুল ছিল। এতোকিছু করার পরেও তুমি বলছো তোমার জীবন নিয়ে আমি ছেলে-খেলা করেছি? তাহলে তুমি নিজে কি করেছো? উল্টা আমার ক্যারিয়ারটা ব্লেন্ডার করেছো৷ এখন আমার লাইফ কনফিউশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমার জন্যই আজকে আমার এমন অবস্থা। নিজের বাড়িকেও জাহান্নাম মনে হয়। আমি শাস্তিপ্রাপ্ত আসামীর মতো এখানে আটকে আছি, তোমার সাথে। ট্রাস্ট মি, আমি আর পারছি না।”

একসাথে এতো বিষাক্ত কথা শুনে উষসী নির্বাক হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে সামলে, চোখের জল মুছতে মুছতে সে বলল,” মানছি যে আমি ভুল করেছি। আপনাকে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। ”

ইয়ামিন আঙুল তুলে বলল,” আর আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমাকে বিয়ে করা!”

উষসীর চোখ আবার ঝাপসা হয়ে উঠল। বাম চোখ থেকে অচিরেই গড়িয়ে পড়ল দু’ফোঁটা জল। ইয়ামিন সেটা লক্ষ্য করে নরম হলো কিছুটা। মেজাজ সামলে নিয়ে বলল,” স্যরি বাট… আই এম ফেড আপ।”

উষসী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” আমি আপনাকে বিয়ের জন্য জোর করিনি। আপনি চাইলেই এই বিয়ে ভেঙে দিতে পারতেন।”

” না, আমি পারতাম না। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।”

উষসী এবার গর্জে উঠল,” আমার কষ্ট হলে আপনার কি? আমি মরে গেলেই বা আপনার কি? এতো মহান সাজতে আপনাকে কে বলেছে? দয়া দেখান আমার প্রতি? একটা অসহায় মেয়েকে বিয়ে করে মহাপুরুষ সাজতে চেয়েছিলেন নাকি?”

ইয়ামিন হৃদয়ের দহনে পুড়ছে। কিন্তু সত্যিটা সে কি করে বলবে? উষসীর কিছু হলে উষ্ণতা সহ্য করতে পারতো না। আর ইয়ামিন কোনো অবস্থাতেই উষ্ণতাকে কষ্ট দিতে পারতো না!

উষসী কাঁদতে কাঁদতে বলল,” এতোই যখন ফেড আপ আপনি, তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিলেই পারেন। আমি জোর করে আপনার জীবনের সাথে জুড়ে থাকতে চাই না। কোনো অবস্থাতেই না!”

ইয়ামিন নির্বিকার চিত্তে বলল,” ডিভোর্স আমি তোমাকে দিতে পারব না। সেটা দুই পরিবারের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তার চেয়ে ভালো উপায় আমরা আলাদা হয়ে যাই।”

” এর মানে?”

” আমি ক্যারিয়ারের কথা বলে বিদেশ চলে যাবো। আর তুমি পড়াশুনার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশেই থাকবে। সিম্পল! কিছু বছর পর যখন সবাই আমাদের দূরত্ব মেনে নিতে শুরু করবে তখন আমরা একটা ফলস রিজন দেখিয়ে ডিভোর্স নিবো৷ এতো কারো কোনো অসুবিধাই হবে না। তুমি কি রাজি?”

উষসী মনে মনে বলল,” রাজি হওয়া ছাড়া আর কি কোনো উপায় রেখেছেন আপনি?”

মুখে বলল,” হ্যাঁ রাজি। আপনার মতো মানুষের সঙ্গে সারাজীবন থাকা আমার পক্ষেও সম্ভব না।”

ইয়ামিন বিদেশ যাওয়ার পরেও কিন্তু উষসী নিজের বাড়িতে ফিরে গেল না। এরপর শুরু হয়েছিল তার নতুন সংসার। মিসেস শিমলা আর আজগর সাহেবের সাথে তার খুব ভাব হয়ে গেল। উষসীর মনেই হয় না যে এই মানুষগুলোর সাথে মাত্র কিছুদিনের পরিচয়। মনে হয় যেন তারা কত আপন!

আট বছর বয়স থেকে বাবা ছিল না তার। আজগর সাহেবকে উষসী তাই বাবার চেয়েও বেশি যত্ন করতে লাগল।আর তিনি এতো ভালো মানুষ যে উষসীর নিজেকে প্রচন্ড ভাগ্যবতী মনে হয়। আর মিসেস শিমলা তো মায়ের মতোই মিষ্টি।

উষসী এমন এক বিবাহিত নারী যার জীবনে স্বামী ছাড়া সব আছে। সুখের কোনো কমতি নেই। কিন্তু সুখী হওয়ারও কারণ নেই।

এভাবেই কাটছিল সময়। দীর্ঘ এক বছর পর ইয়ামিন হঠাৎ দেশে ফিরল। উষসী ভেবেছিল এবার বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। ইয়ামিন হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে উষসীর কাছে ক্ষমাও চাইবে। উষসী প্রথমে মানবে না। ইয়ামিনকে খুব শাস্তি দিবে। তারপর একদিন সেও সব মেনে নিবে। তাদের জীবনটায় কাল্পনিক রূপকথার মতো হ্যাপি এন্ডিং হবে।

অথচ উষসী জানতো না, বাস্তব জীবনে কখনোই হ্যাপি এন্ডিং হয় না। মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে… দুঃখ তার চিরসঙ্গী হয়ে সবসময় পাশে থাকে। মাঝে মাঝে দমকা বাতাসের মতো জীবনে সুখ উঁকি দেয়। আবার তা মিলিয়ে যায়। উষসীর জীবনেও সুখ উঁকি দিয়ে আবার মিলিয়ে গিয়েছিল।

(বর্তমান)
রাতটা এভাবেই কাটল। উষসী বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ল। ইয়ামিন তার হাত ধরে সারারাত বসে রইল। আলতো স্পর্শে উষসীর কপালে, নাকে চুমু দিল। একসময় তার চোখ লেগে আসায় সে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ঘুমের জন্য যে এতোটা আফসোস করতে হবে তা কি সে জানতো? জানলে হয়তো কখনোই ঘুমাতো না।

সূর্যের তেজস্বী আলো চোখে লাগতেই ইয়ামিনের ঘুমটা ভেঙে যায়। বিছানায় এখনও উষসীর সুবাস লেগে আছে। আজকের সকালটা সত্যি সুন্দর। ইয়ামিন আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নামল। উষসী এখানে নেই। পুরো রুমটা কেমন থমথম করছে। ইয়ামিন তার বুকের বামপাশে একটা হাহাকার টের পেল। কেমন অবিচ্ছিন্ন শূন্যতা ঘিরে ধরেছে যেন চারদিক থেকে। সকালে উঠেই মন বিষণ্ণ লাগার ব্যাপারটা কি ঠিক?

ইয়ামিন ভেবেছিল বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেই উষসীকে দেখবে। কিন্তু উষসী এখানেও নেই। মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ হলো তার। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সে যখন ব্রেকফাস্ট করতে ডাইনিং টেবিলে এসেছে, তখনও সবকিছু নিশ্চুপ। ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে। এই সময় তো আয়শার উঠে যাওয়ার কথা। সে আজ এতো সময় ধরে ঘুমাচ্ছে কেন? উষসীকেও দেখা যাচ্ছে না।

ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠল ইয়ামিনের মন। সে উষসীকে এদিক-ওদিক খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ খেয়াল করল স্টোর-রুম থেকে কারো গোঙানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অচিরেই ইয়ামিনের পা থেমে গেল। আশঙ্কায় বুক কাঁপল। সে ভেতরে ঢুকেই দেখল কালো কাপড়ে আয়শার মুখটা বাঁধা। সে নড়াচড়া করতে পারছে না। কারণ পুরো শরীর নাইলনের মোটা দড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে আবদ্ধ।

আতঙ্কে ইয়ামিনের ঘাম ছুটে গেল। আয়শার এই অবস্থা হলে উষসী কোথায়? সে দ্রুত হাতে আয়শার মুখের বাঁধন খুলল। আয়শা উৎপীড়িত গলায় বলল,” ম্যাডাম নেই স্যার। ম্যাডাম পালিয়েছে।”

ইয়ামিন বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। একটু পর চোখ-মুখ কুচকে উচ্চারণ করল,” হোয়াট?”

আয়শা ক্লান্ত স্বরে বলল,” সকালে ম্যাডামকে বের হওয়ার সময় দেখে ফেলেছিলাম আমি। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে আটকানোর জন্য। চিৎকার করে আপনাকেও ডাকতেই নিয়েছিলাম। কিন্তু ম্যাডাম কান্নাকাটি করে আমাকে স্টোর-রুমে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখানে এনে যে আমাকে এভাবে বেঁধে রেখে চলে যাবে সেটা তো বুঝিনি।”

ইয়ামিন এখনও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। উষসী পালিয়েছে মানে? কোথায় পালাবে সে? আর কেনই বা পালাবে? তার ইচ্ছে করল পুরো বাড়ি তছনছ করে দিতে। উষসী এখানেই আছে। সে কোথাও যায়নি। এই ভেবে ইয়ামিন অগত্যাই সারাবাড়ি খোঁজাখুঁজি করল। আয়শা এই অবস্থা দেখে ঘরের এক কোণে বসে কাঁদতে লাগল। কারণ সে জানে… উষসী হয়তো আর কখনোই ফিরবে না। ফিরে আসার জন্য তো কেউ ছেড়ে যায় না।

যথারীতি উষসীকে কোথাও পাওয়া গেল না। কিন্তু টেবিলে পাওয়া গেল একটা ছোট্ট নোটবুক। উষসীর হাতের কিছু লেখা,”জীবনের গতিপথ পাল্টে যাওয়া আর মরিচীকায় ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হওয়া, উদ্দেশ্য হারিয়ে ব্যর্থ হওয়া তারপর নিজেকেও হারিয়ে ফেলা… এমন বিষাক্ত জীবন কারো না হোক!

আমি হেরে গেছি আমার কাছে। এখন আয়নায় তাকালে নিজেকে আর খুঁজে পাই না। হন্যি হয়ে খুঁজতে শুরু করি সেই অতীতের আত্ম সত্তাকে। অথচ খুঁজতে গিয়ে বারংবার হোঁচট খাই। অতীত আমাকে কটাক্ষ করে আর, আমি পথ হারিয়ে ফেলি।”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে