আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-২৮+২৯

0
518

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২৮
লিখা: Sidratul Muntaz

উষ্ণতার ক্ষীপ্র ধাক্কায় উষসী হড়বড় করে জেগে উঠলো। তার শরীর তখন ইয়ামিনের বাহুতে বন্দী। ইয়ামিন ঘুমে বিভোর। উষসী চোখ খুলে সামনে তাকাতেই আত্মা নড়ে ওঠার মতো দৃশ্য দেখল। দরজার সামনে পুরো গ্রামবাসী ভীড় জমিয়েছে। রক্তিম চোখমুখ নিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যুথি। তার চেহারাতে ঘৃণা, বিস্ময়, রাগের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। সারারাত কি হয়েছিল সেটা উষসী ছাড়া কেউ জানে না। কিন্তু সবার চেহারা দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তারা খুব জঘন্য কিছু কল্পনা করছে।

উষসীকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলো না। যুথি বেগম তেড়ে এলেন উষসীকে থাপ্পড় মারতে। উষ্ণতা দুইহাতে আটকে দিল। অস্পষ্ট স্বরে বলল,” মা, প্লিজ। ”

যুথি বেগম উন্মাদের মতো বললেন,” ছাড় আমাকে, ছাড়! এই কলংকিনীকে আজ খু*ন করবো আমি।”

এই কথা বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি। উষসীর বুক জুড়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা শুরু হলো। তীব্র শব্দে ইয়ামিনও জেগে উঠেছে। সে উষসীকে নিজের পাশে দেখে আর আশেপাশে এতো ভীড় দেখে ঘাবড়ে গেল। অবুঝ কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” কি ব্যাপার?”

উষসীর লজ্জায় তখনি মন চাইল ম*রে যেতে। রাতে হাসপাতাল থেকে ফিরে সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছিল। ইয়ামিনের আসার খবর কেউ জানে না। সকালে সর্বপ্রথম মাইমুনা উষসীর ঘরে এসে এই ইয়ামিন আর তাকে একসঙ্গে দেখতে পায়। তারপর সবাইকে ডেকে আনে।

উষ্ণতা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইয়ামিনের দিকে তাকালো। তার ধারণা ইয়ামিন উষসীর আবেগী মনের ফায়দা লুটেছে। শুধু উষ্ণতা না ডোনার ধারণাও তাই। সে তেড়ে এসে ইয়ামিনের কলার ধরে তাকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কি করেছো তুমি আমার উষুর সাথে? এখন নাটক করা হচ্ছে?”

উষসী বিকট চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এসে ডোনার হাত ধরে বলল,” ভালো আন্টি প্লিজ, উনার দোষ নেই। উনাকে কিছু বোলো না দোহাই লাগে।”

যুথি বেগম এই কথায় আরও রেগে গেলেন। চুলের মুঠি ধরে উষসীকে দাঁড় করালেন। একাধারে থাপ্পড় মারতে লাগলেন দুইগালে। ডোনা তাকে থামালেন। উষ্ণতার তখন মাথা ঘুরছে৷ সে দরজা ধরে খুব কষ্টে দাঁড়িয়ে রইল। ইয়ামিন ঘুম থেকে উঠে এমন পরিস্থিতি দেখে বাকরুদ্ধ। সে জানে না তার অপরাধ কোথায়! কিন্তু এইটুকু বুঝতে পারছে যে বিরাট কিছু ভুল হয়েছে।

উষসী ডোনার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। হঠাৎ তার চোখ গেল মিসেস শিমলার দিকে। তিনি হতভম্ব হয়ে পুরো ঘটনা দেখছেন। নিজের ছেলের এতো অপমান মেনে নিতে পারছেন না।

উষসী মিসেস শিমলার কাছে গিয়ে হাত জড়ো করে বলল,” আমাকে মাফ করে দিন আন্টি। সব ভুল আমার। রাতে উনি আসার পর আমি আপনাকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিল। তারপর উনি ঘুমিয়ে গেলেন।আর উনার খুব জ্বর ছিল সেজন্য আমিও অন্যঘরে যাইনি। তারপর কখন চোখ লেগে এসেছিল বুঝতে পারিনি…”

উষসী থামল, ইয়ামিন যে ঘুমের ঘোরে তার হাত ধরে রেখেছিল আর সেজন্যই সে উঠে যেতে পারেনি সেই কথা আর বলল না সবার সামনে। পাশ থেকে মাইমুনার মা বললেন,” এটা আবার কেমন কথা? তুমি উপযুক্ত মাইয়া হয়া একটা পোলার পাশেই ঘুমায় যাইবা? কোনো হুশ থাকব না? এগুলাই কি তোমাগোর শহরের আদব-কায়দা! তওবা তওবা।”

যুথির চোখ দু’টো আগুন মতো ধিক ধিক করে জ্বলছে। পারলে তিনি উষসীকে এখনি খু*ন করে ফেলতেন।ডোনা খুব কোমল স্বরে বললেন,” আপনারা আমাদের মেয়েকে ভুল বুঝবেন না। ইয়ামিন তো ওর বড়ভাইয়ের মতো। আমাদের আত্মীয় হয়। ওদের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই বিশ্বাস করেন!”

উষ্ণতার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। নিজের পরিবারের মানুষদের এমন অসহায় অবস্থা দেখে নিজেকেও খুব অসহায় লাগছে। ইয়ামিন হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মিসেস শিমলা ছেলেকে কিছু বললেন না। উষসীর কাঁধে হাত রেখে শুধু বললেন,” এভাবে কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

উষসী স্বস্তি পেল অন্তত এই ভেবে যে শিমলা আন্টি তাকে ভুল বোঝেননি। কিন্তু অন্যদের মুখ তো থেমে থাকবে না। তারা মেহমান দেখে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এই খবর তো ঠিক রটিয়ে যাবে। একটা অবিবাহিত ছেলে আর মেয়েকে ফাঁকা বাড়িতে ঘনিষ্ট অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই ঘটনার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। সবাই সেটাই ভাববে, আপাতদৃষ্টিতে যেটা ভাবা উচিৎ!

সেদিনের পর থেকেই উষসীর জীবনটা নরক হয়ে গেছে। তারা ঘাটাইল থেকে ফিরে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে খবরের কাগজে পর্যন্ত এই ঘটনা প্রচার করা হচ্ছে। রসুলপুরে একজন নিউজ রিপোর্টার এই কাজ করেছেন। উষসী তার পরিবারকে বুঝাতে পারলেও বাইরে কাউকে বুঝাতে পারবে না যে তাদের মধ্যে সেদিন কোনো খারাপ সম্পর্ক হয়নি। বাইরে বের হলেই এখন মানুষ উষসীর দিকে আগ্রহ নজরে তাকায়। যেন চিড়িয়াখানার কোনো জন্তু দেখছে। মজার রসালো টপিক পেয়ে ফেসবুকে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। মিমস শেয়ার হচ্ছে। রোস্টিং ভিডিও হচ্ছে, ট্রল হচ্ছে। যা ইয়ামিনের ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং উষসীর পুরো জীবনের জন্যই!

উষসী নিজেকে ঘরবন্দী করে ফেলল। গুজব বাড়তে বাড়তে মহামারী আকার ধারণ করেছে। উষসীর ভার্সিটি যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার বলতে লাগল উষসী নাকি প্রেগন্যান্ট। কিছু কিছু বান্ধবীরা উষসীকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। উষসী সবার ফোন ধরা বন্ধ করে দিল। একদম তিল থেকে তাল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। যুথি বেগম তো একদিন বলেই দিলেন,” আমার সাথে ডাক্তারের কাছে চল। তোকে টেস্ট করাবো। বলা তো যায় না, যদি সত্যিই সর্বনাশ হয়ে থাকে! পেট থেকে পাপ সরাতে হবে না?”

উষসী মায়ের কথার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। কিন্তু রুমে এসে মেঝেতে গড়াগড়ি খেয়ে কেঁদেছে। তার নিজের থেকেও বেশি খারাপ লাগছে ইয়ামিনের জন্য। নিষ্পাপ মানুষটা শুধুমাত্র উষসীর ভুলের জন্য সবার কাছে অপদস্থ হচ্ছে। উষসীকে কোন ভূতে পেয়েছিল যে সে সেদিন ইয়ামিনের ঘরে ঘুমিয়ে পড়ল? হায় আল্লাহ! এই কলংকের দাগ মুছবে কি করে?

তৃষাণের মনে পড়ে যায় নয়বছর আগের সেই অভিশপ্ত দিনগুলোর কথা।এইরকম একটা জঘন্য পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে উষ্ণতাকেও যেতে হয়েছিল। সেজন্যও ইয়ামিন দায়ী। আজকের এই ঘটনার জন্যেও দায়ী সেই একই ব্যক্তি! তাই ইয়ামিনের উপর তৃষাণের ক্রোধ সীমাহীন। সাধ্য থাকলে সে ইয়ামিনকে খু*ন করে ফেলতো। সত্যিই খু*ন করে ফেলতো।

একদিন মিসেস শিমলা উষসীদের বাড়িতে হাজির হলেন। তাকে দেখে সবাই খুব অবাক এবং একইসাথে অপ্রস্তুত হলো। শিমলা ইয়ামিন আর উষসীর বিয়ে দিবেন বলে মনস্থির করেছেন। রসুলপুরে প্রথমে এই প্রস্তাবটা তিনি ডোনার কাছেই দিয়েছিলেন। কিন্তু ডোনা জানতো তৃষাণ রাজি হবে না। তাই তিনি গোপনে নাকচ করে দেন। পরে কাউকে এই বিষয়ে কিছু জানাননি।

আজ শিমলা পুনরায় একই প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। তৃষাণ বাড়িতেই আছে। সে এসব শুনলে ভয়ংকর অবস্থা হবে। ডোনা ভয়ে চুপসে গেলেন। কিন্তু তৃষাণ খুব বেশি সিন ক্রিয়েট করল না। সে ঠান্ডা মাথায় নিষেধ করে দিল,”এমন কিছু হয়ে যায়নি যে বিয়ে দিতে হবে। মানুষের মুখ বন্ধ করা কোনো ব্যাপার না। তাছাড়া আমার শালিকার জন্য আমরা অনেক ভালো পাত্র পেয়ে যাবো। মেয়ে লাখে একটা। আপনি আর আপনার ছেলে নিশ্চিন্ত থাকুন।”

শিমলা অপমান গায়ে মাখলেন না। তিনি বুঝে নিলেন তৃষাণ একটু ঘাড়ত্যাড়া ধরণের। কিন্তু উষসীকে তিনি খুব পছন্দ করে ফেলেছেন। তাছাড়া ছেলের বিয়ের আশা তো তিনি ছেড়েই দিয়েছিলেন। এই উছিলায় যদি তাও বিয়েটা হয়! উষসীর মতো মিষ্টি একটা মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে পাওয়ার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতেই চান না।

শিমলা আলতো হেসে বললেন,”আমি জানি, তোমাদের মেয়ে লাখে একটা। আমার ছেলের চেয়েও অনেক যোগ্য পাত্র তোমার সুন্দরী শালিকার জন্য পাওয়া যাবে। তবুও আমি একটা আবেদন নিয়ে এসেছি। এটা আমার একান্ত অনুরোধ। আমি উষসীর থেকে ভালো মেয়ে আমার ছেলের জন্য পাবো না। প্লিজ, একটু কনসিডার করো।”

তাঁর কণ্ঠের আর্দ্রতা দেখে যুথির মন সঙ্গে সঙ্গে ভিজে গেল। যে মহিলার কথা এতো কোমল আর আচরণ এতো নিরহংকারী; তাঁর বাড়ির বউ হয়ে গেলে নিশ্চয়ই উষসী অসুখী হবে না। কিন্তু ইয়ামিনকে নিয়ে একটা সমস্যা থেকেই যায়। আবার এতোবড় একটা ঘটনা ঘটার পর সেই সমস্যাকে বড় করে দেখারও মানে হয় না। যুথি ঠিক করে ফেললেন, এই বিয়ের প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করবেন!

তৃষাণ সোজা-সাপটা জবাব দিল,” সম্ভব না আন্টি। আমরা মেয়ে দিবো না। কিছু মনে করবেন না।”

যুথি ড্রয়িংরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভেতরে এসে বললেন,” কিন্তু আমি আমার মেয়েকে দিবো।”

হঠাৎ যুথির এমন কথা শুনে তৃষাণ হতচকিত হলো। বিস্মিত দৃষ্টিতে শুধাল,” মা, এসব কি বলছেন?”

যুথি অনুভূতি শূন্য কণ্ঠে বললেন,” ঠিকই বলছি। আমার মেয়ের বদনাম হয়ে গেছে। বিয়ে না হলে ওর জীবন অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভালো বিয়ে হোক।”

তৃষাণ বোঝানোর চেষ্টা করল,” মা, এই সামান্য বিষয়ে উষুর জীবন নষ্ট হবে না। বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ কিছুদিন গেলেই সব ভুলে যাবে। কিন্তু এভাবে বিয়ে হলে সারাজীবন রিগ্রেট করতে হবে।”

শিমলা আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন,” কোনো রিগ্রেট করতে হবে না। আমি কথা দিচ্ছি, উষসীকে আমি সর্বোচ্চ যত্নে রাখবো। তোমাদের কাছে আমি অনুরোধ নিয়ে এসেছি। আপা প্লিজ, আপনি অন্তত নিষেধ করবেন না।”

যুথি বললেন,” আমি নিষেধ করছি না। আমিও চাই এই বিয়ে হোক। উষু আমার মেয়ে। ওর বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আমার আছে।”

তৃষাণ রাগ করে উঠে চলে গেল। রান্নাঘরে উষ্ণতা শিমলার জন্য চা বানাচ্ছিল। তৃষাণ আচমকা সেখানে ঢুকে দাঁতে দাঁত চিপে বলল,” তোমার মাকে বোঝাও।”

উষ্ণতা আশ্চর্য হয়ে তাকাল। ‘তোমার মা’ এভাবে তৃষাণ আগে কখনও বলেনি। উষ্ণতা রাগী গলায় জানতে চাইল,”মানে? কি করেছে আমার মা?”

” শিমলা আন্টি ইয়ামিন আর উষসীর বিয়ের প্রস্তাবে নিয়ে এসেছে। সেই প্রস্তাবে তোমার মা আমার নিষেধ না শুনেই হ্যাঁ বলে দিয়েছে।”

এই কথা শুনে উষ্ণতা মনে মনে ভীষণ আনন্দিত হলেও সেটা তৃষাণের সামনে প্রকাশ করল না। ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিল। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। যদি এমন হয় তাহলে সত্যি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

যুথি আনন্দের সাথে মিসেস শিমলার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। শিমলা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ উচ্চারণ করে যুথিকে জড়িয়ে ধরলেন খুশি হয়ে। উষসীও শোরগোল শুনে ড্রয়িংরুমে ঢুকল। মিসেস শিমলাকে দেখে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ছুটে এসে বলল,

” আন্টি, আপনি এসেছেন? কেমন আছেন আন্টি?”

শিমলা উষসীকে জড়িয়ে ধরে বললেন,” ভালো আছি মা। তুমি কিন্তু একবারও আমার বাসায় এলে না।”

” স্যরি আন্টি। একদিন নিশ্চয়ই আসব।”

” আর আসতে হবে না। তোমাকে পার্মানেন্টলি আমার বাড়িতে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।”

উষসী এই কথার অর্থ বুঝতে পারল না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সে আসলে চিন্তাও করতে পারেনি যে এতোকিছুর পরে শিমলা আন্টি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তাদের বাড়ি আসবেন। যখন ডোনার কাছে সে বিস্তারিত সব শুনল, তখন না আনন্দিত হতে পারল আর না বিস্মিত। সে বুঝতেই পারল না যে তার কি করা উচিৎ। তাছাড়া একটা দ্বিধা এখানে থেকেই যায়। ইয়ামিন কি বিয়েতে রাজি? সে বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছে না তো! উষসী এভাবে কখনও ইয়ামিনকে পেতে চায়নি।

চলবে

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২৯
লিখা- Sidratul Muntaz

বিয়ের আগে ইয়ামিনের সাথে আলাদা কথা বলা জরুরী। কিন্তু উষসী এই আবদার করার সাহস পাচ্ছে না। উষ্ণতারও ব্যাপারটা নিয়ে খটকা লাগছে। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মিসেস শিমলা একা এসেছেন। ইয়ামিন কেন আসেনি? তৃষাণও বেঁকে বসে আছে। সে কোনো অবস্থাতেই বিয়ে মানবে না।

উষ্ণতার মনে হয় মানুষ চেনার ক্ষমতা তার থেকে তৃষাণের অনেক বেশি। সে ইয়ামিনকে এতো অপছন্দ করে মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। উষ্ণতা ইয়ামিনের সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলার সিদ্ধান্ত নিল। তবে এর আগে উষসীর মত জানাও জরুরী। প্রথমে সে উষসীর সাথেই কথা বলল। সবকিছু বিস্তারিত জানতে চাইল। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল,” ইয়ামিনকে তুই বিয়ে করতে চাস?”

উষসী কেঁদে ফেলে বলল,” না৷ আমি তো আমার ছায়াও তার জীবনে পড়তে দিতে চাই না। আমি পাপী। খুব বড় পাপ করেছি।”

” তোর কাজ যদি পাপ হয় তাহলে সেও পাপী। তুই একা কেন শাস্তিভোগ করবি?”

” না আপু, উনার কোনো দোষ নেই। তুমি বিশ্বাস করো! উনি নির্দোষ। বরং আমার জন্যই উনার ক্যারিয়ারটা ধ্বংস হয়ে গেল।”

” কিভাবে সে নির্দোষ হয়? বল আমাকে!”

উষসী সেইরাতের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করল। সবকিছু শোনার পর উষ্ণতা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল।

আসলেই কি এমন ঘটেছে? নাকি উষসী ইয়ামিনকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বানিয়ে বলছে? মেয়েটা খুব বোকা। সে এমন করতেই পারে।

সত্যতা যাচাই করতে উষ্ণতা চিন্তা করল ইয়ামিনের সাথেও একই বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলবে। যদি সেও একই স্টেটমেন্ট দেয় তাহলে বুঝতে হবে ঘটনা সত্যি। আবার এমনও হতে পারে যে সে উষসীকে বাঁচানোর জন্য নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিতে চাইবে। যদি এটা হয়, তাহলে উষ্ণতা অন্তত এইটুকু নিশ্চিত হবে যে ইয়ামিন তার বোনকে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসে! তখন প্রয়োজনে তৃষাণের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও উষ্ণতা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করবে।

ইয়ামিনের সাথে উষ্ণতা দেখা করল তার ভার্সিটির ক্যান্টিনে। ইয়ামিনকে নির্দিষ্ট সময় আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ইয়ামিন আরও একঘণ্টা আগেই এসে অপেক্ষা করছে। এর মাঝে পুরো ভার্সিটিতে ভীড় জমে গেল। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলে সেলফি, অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। ইয়ামিনের একঘণ্টা সময় ফ্যানদের নিয়েই কেটে গেল।

তারপর উষ্ণতা ক্লাস নেওয়া শেষ করে বের হলো। তাকে দেখে ইয়ামিনের হৃদয় জুড়ে হু হু করে এক গাঢ় বেদনাময় বাতাস প্রবাহিত হলো। কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে উষ্ণতার চেহারাটা। দেখে বোঝাই যায় বোনের চিন্তায় অস্থির সে। ইয়ামিনের মনে অপরাধবোধ তৈরী হলো৷ সে আসলেই উষ্ণতার জীবনের অভিশাপ। যতবার সে উষ্ণতার জীবনে প্রবেশ করে ততবার উষ্ণতার গোছানো জীবন তছনছ হয়ে যায়!

ইয়ামিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিজের ভালোবাসা নামক কালো ছায়া নিয়ে আর জীবনেও উষ্ণতার সামনে দাঁড়াবে না। কিন্তু উষ্ণতার আহ্বান তাকে নিজের কাছে করা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে বাধ্য করেছে। উষ্ণতা ইয়ামিনকে বলল,” বসো।”

দুইজন দুইটি চেয়ার দখল করে বসল। উষ্ণতা কিছু অর্ডার করতে চাইল। কিন্তু ইয়ামিন খেতে চাইল না। তারপর শুধু কফি অর্ডার করা হলো। প্রথমেই উষ্ণতা কথা শুরু করল,” গতকাল আন্টি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, তোমার আর উষসীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”

ইয়ামিন কেমন অস্বস্তিবোধ করল। তার আর উষসীর বিয়ে… শুনতেই অদ্ভুত লাগছে। এটা সে কখনও কল্পনাই করতে পারে না।

উষ্ণতা বলল,” কাশ্মীরে তোমাদের দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্ক কতটা গভীর তা তো আমি জানি না। বিয়ের জন্য কি আসলেই তোমরা প্রস্তুত?”

ইয়ামিন এতো চমকালো যে প্রতিউত্তর করার জন্য শব্দ খুঁজে পেল না। এবার বুঝতে পারল যে কেন উষ্ণতা তাকে বার-বার বাড়িতে ডাকতো। অথচ ইয়ামিনের এটা একবারও মাথাতেই আসেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক চিরে।

উষ্ণতা বলল,” সে বিষয়ে কথা বলতেই তোমাকে সেদিন ডিনারে ইনভাইট করেছিলাম। কিন্তু এরপর যা হলো, বুঝতেই তো পারছো। তোমাদের সম্পর্কটা নিশ্চয়ই আগের মতো নেই। এমন অপ্রীতিকর অবস্থায় বিয়ে আমরা কেউই চাইনি। কিন্তু আমার বোনের বদনাম যে হলো, এর ক্ষতিপূরণ কি দিয়ে হবে বলো? মেয়েটা একদম পাগলের মতো হয়ে গেছে। সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। আমার এতো হাসি-খুশি বোনটার এমন মুষড়ে থাকা আচরণ ভালো লাগছে না। সবকিছু অসহ্য মনে হচ্ছে। তারপর ভাবলাম নিজেই ওর সাথে কথা বলি৷ সেদিন রাতে কি কি হয়েছিল উষু আমাকে সব বলেছে। কিন্তু তোমার থেকেও শুনতে চাই। তুমি আমাকে বড়বোন মনে করে নিঃসংকোচে বলতে পারো, সেদিন রাতে কি হয়েছিল তোমাদের মধ্যে? ”

ইয়ামিনের তখন দুনিয়া ঘুরছে। তার অগোচরে এতোকিছু হয়ে যাচ্ছিল অথচ সে একটুও বুঝতে পারেনি!

উষ্ণতা ইয়ামিনের চোখের দিকে চেয়ে বলল,” আমি বুঝেছি, তুমি হয়তো অস্বস্তিবোধ করছো। ঠিকাছে তোমাকে বলতে হবে না। কিন্তু ইয়ামিন, তোমাদের মধ্যে যে একটা সম্পর্ক ছিল এবং সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানো সম্ভব এটুকু তো নিশ্চিত তাই না? তুমি উষুকে বিয়ে করতে চাও না?”

” জ্বী?”

ইয়ামিন এমনভাবে জবাব দিল যেন তাকে বিষপান করতে বলা হয়েছে। উষ্ণতার চোখ দু’টো টলমলে হয়ে এলো। অজানা শঙ্কায় কেঁপে উঠল বুক। ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল,” আমার বোনের লাইফটা শেষ হয়ে যাবে ইয়ামিন। তুমি ওর অবস্থা জানো না। ও যে কতটা মেন্টাল স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটা আমি দেখেছি শুধু। যেকোনো সময় খারাপ কিছু করে ফেলতে পারে মেয়েটা। যদি সত্যিই ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি মরে যাবো।”

ইয়ামিন সাথে সাথে মাথা তুলে বলল,” ছি, কি বলছেন এসব?”

উষ্ণতা মুখে হাত দিয়ে নিজেকে সামলালো। ধাতস্থ হয়ে বলল,” আমার মনে হয় তোমাদের বিয়েটাই এসবের একমাত্র সমাধান। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি ইয়ামিন। সেদিনের ওই ঘটনায় সবাই তোমাকে ভুল বুঝলেও আমি ভুল বুঝিনি। আমি যেমন তোমাকে বিশ্বাস করি…তেমন আমার বোনকেও বিশ্বাস করি। তাই নিঃসন্দেহে ওর দায়িত্ব আমি তোমাকে দিতে চাইছি। তুমি কি দায়িত্বটা নিবে?”

ইয়ামিন ভাবল। কয়েক মুহুর্তেই অনেককিছু ভেবে ফেলল। উষ্ণতার কাছে সারাজীবন ঘৃণিত হয়ে থাকার চেয়ে একজন ভরসাযোগ্য পাত্র হতে পারা ইয়ামিনের জন্য অনেক বেশি সৌভাগ্যের!

উষ্ণতা একরাশ ভরসা নিয়ে ইয়ামিনের উত্তরের অপেক্ষা করছে। ইয়ামিন কি করে নিভে যেতে দিবে এই ভরসার আলো? সে কি পারে না সারাজীবনের জন্য উষ্ণতা মিসের ভরসার পাত্র হয়ে যেতে ? সেজন্য নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতে হলেও সে দিবে। তাও উষ্ণতা মিসকে ভালো রাখবে। ইয়ামিন সাথে সাথেই হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল। বলল,” নিশ্চয়ই।”

উষ্ণতা হাসল। আনন্দের হাসি। তারপর হাত বাড়িয়ে বলল,” এভাবে বললে তো হবে না। আগে আমাকে কথা দাও, আমার বোনকে সবসময় খুশি রাখবে। ওর কোনো অযত্ন কখনও করবে না। ওকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবে। প্রমিস করো।”

ইয়ামিন মিথ্যে কথা দিতে পারে না। সে উষসীকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারবে কি-না সেটাও সে জানে না। তবুও সে উষ্ণতার হাত স্পর্শ করল। মনে মনে প্রমিস করল,” আপনাকে আমি সবসময় খুশি রাখবো মিস। শুধু আপনাকে খুশি রাখতে, পৃথিবীর সব পারব আমি।”

উষ্ণতা ইয়ামিনের মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ ভেবে নিল।খুশিতে ঝলমল করে উঠল তার চেহারা। সেই খুশি মাখা মুখ ইয়ামিন অবাক হয়ে দেখল। এমন খুশির জন্য সে নিজেকেও ভুলতে পারে। আর একটা বিয়ে কোনো ব্যাপার হলো?

ব্রেকটাইম শেষ হয়ে এসেছে। উষ্ণতা উঠতে উঠতে বলল,” তুমি সাথে গাড়ি এনেছো না?”

” জ্বী।” সে ভাবল উষ্ণতা বুঝি তার সঙ্গে গাড়িতে করে কোথাও যাবে। কিন্তু উষ্ণতা বলল,” তাহলে উষসীকে বাসায় ড্রপ করে দাও।”

” উষসী?” ইয়ামিন থমকালো।

মাথা নিচু করে ক্যান্টিনের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে উষসী। আজকে উষ্ণতার সাথে সে কলেজে এসেছে একটাই কারণে। ইয়ামিনের সাথে আলাদা কথা বলবে। কিন্তু ইয়ামিনের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে তার। উষ্ণতা বলল,” হ্যাঁ। তোমার সাথে দেখা করার জন্যই ও এসেছে। যেতে যেতে তোমরা রাস্তায় কোথাও থামতে পারো। কফিশপ বা রেস্টুরেন্টে যেতে পারো। আমি মাইন্ড করব না।”

উষ্ণতা হাসল৷ তার গেঁজ দাঁত ঝিলিক দিয়ে উঠল। সেই হাসি ইয়ামিনের হৃদয়ে এক টুকরো সাদা মেঘের পরশ মিশিয়ে গেল। উষ্ণতা ক্যান্টিন থেকে বের হতেই দেখল উষসী দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। তার কাঁধে হাত রেখে উষ্ণতা হাসিমুখে বলল,” সাবধানে যাস। তোর তৃষাণ ভাইকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।”

” থ্যাঙ্কিউ আপু। কিন্তু আমার খুব নর্ভাস লাগছে।”

উষ্ণতা চোখ বড় করে বলল,” এখানে নর্ভাস লাগার কি আছে? পাগলি, যা তো!”

________________
পাশাপাশি বসেও নিশ্চুপ দু’জনেই। ইয়ামিন মনোযোগের সাথে ড্রাইভ করছে। উষসী কি বলে কথা শুরু করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। খুব কষ্টে উচ্চারণ করল,” আই এম স্যরি।”

ইয়ামিন অন্যমনস্ক ছিল। উষসীর কথা সে শুনতেও পায়নি। উষসী আবার বলল,” আই এম স্যরি।”

ইয়ামিন একটু অবাক হয়ে তাকাল। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলল,” স্যরি কেন?”

উষসী হতাশ সুরে বলল,” আমার ভুলের জন্যই সবকিছু হয়েছে। যদি সেদিন রাতে আমি ওই ঘরে না বসতাম…”

উষসী কথা শেষ করতে পারল না। তার গলা ধরে আসছে। ইয়ামিন ইতস্তত করে বলল,” এখানে দোষ শুধু তোমার না। আমারও আছে। আমি তোমার হাত ধরে রেখেছিলাম বলেই তুমি অন্যরুমে যেতে পারোনি।”

উষসীর চোখ দু’টো মার্বেলের মতো বড় হয়ে গেল। বিস্ময়ে অপ্রস্তুত হয়ে শুধাল,” আপনি ইচ্ছে করে আমার হাত ধরেছিলেন?”

ইয়ামিন অকপটে বলল,” হ্যাঁ। ”

তার দৃষ্টি সামনের দিকে। উষসী তার অবিশ্বাস্য চাহনী নিয়ে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত পর প্রশ্ন করল,” কেন? আপনি এমন কেন করবেন?”

ইয়ামিন অস্বস্তির সাথে উচ্চারণ করল,” কারণ আমার তখন মনে হচ্ছিল…তুমি আমার পাশে থাকলে আমার ভালো লাগবে।”

উষসীর নিশ্বাস থেমে এলো৷ মস্তিষ্ক এতো চাপ নিতে পারছে না। সেদিনের মতো এটাও ধোঁকা নয়তো? একটু পর কি ইয়ামিন আবার বলবে যে সে অ্যাকটিং করেছি?

” তোমার ফোন।”

উষসী থম মেরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইয়ামিন আবার বলল,” তোমার ফোন বাজছে উষসী।”

উষসী অন্যমনস্ক কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” হ্যাঁ? ”

ইয়ামিন উষসীর ফোনটা তুলে তার সামনে ধরল। তৃষাণের নাম্বার দেখে উষসীর হুশ ফিরে এলো। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল মন। দ্রুত মোবাইল সুইচড অফ করে দিল। তৃষাণের সাথে এখন কথা বলা সম্ভব না। ইয়ামিনের সাথে দেখা করতে আসার ব্যাপারটা সে জানে না।

উষসীর লজ্জা লাগছে প্রচন্ড। ইয়ামিনের কথা শুনে এতো বোকা হয়ে গেছিল যে ফোনের রিংটোন পর্যন্ত শুনতে পায়নি। কত পাগল সে! ইয়ামিন কি ভাববে? উষসী আড়চোখে ইয়ামিনের দিকে চাইল।

বিষণ্ণ মনে ড্রাইভ করছে সে। উষসীকে মাত্রই একটা মিথ্যা বলা হয়েছে। সেই রাতে জ্বরের ঘোরে ইয়ামিন উষসীর হাত ধরেছিল। কিন্তু তখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল না। উষসীর হাত ধরলেও মনে মনে সে কামনা করেছিল অন্যকাউকে! এই সত্যি উষসীর জানার কোনো প্রয়োজন নেই। সবাইকে সব সত্যি বলা যায় না।

ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ইয়ামিন একটা কফিশপ দেখে গাড়ি থামালো। গাড়ি থেকে নামার আগে সানগ্লাস আর মাস্ক পরে নিল। নাহলে আবার ফ্যানরা এসে হামলা চালাতে পারে। উষসী বলল,” আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

” তুমি বলো, কোথায় যেতে চাও?”

উষসী বিস্মিত হয়ে শুধাল,” আমি যেখানে যেতে চাইবো, সেখানেই নিয়ে যাবেন?”

” অফকোর্স, এখন থেকে তুমি যা চাও তাই হবে।”

উষসীর বিস্ময়ের সীমা রইল না। এটা কি বাস্তব নাকি আবারও কল্পনা?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে