#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২৪
লিখা- Sidratul Muntaz
মুহূর্তেই মধ্যেই ঘটে গেল বড় অপ্রত্যাশিত কান্ড। তৃষাণ আর ইয়ামিনের মতো দু’জন পূর্ণবয়স্ক মানুষ লড়াই শুরু করেছে যেন শিশুদের মতো। ক্রোধে ফেটে পড়ছে উভয়ের শরীর। কেউ কারো কাছে হারতে রাজি নয়। তৃষাণ ইয়ামিনের হাঁটুতে লাথি মেরে ভূমিতে ফেলল। পরমুহূর্তেই ইয়ামিন উঠে দাঁড়িয়ে তৃষাণের চোয়ালে ঘুষি মারল। ভয়ংকরভাবে তারা আঘাত করছে একে অন্যকে। তৃষ্ণা আড়াল থেকে সবকিছু দেখে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেল।
ইয়ামিন এই বাড়িতে আসার পর থেকে সর্বক্ষণ তার পেছনেই ঘুরঘুর করছে তৃষ্ণা। ফলশ্রুতিতে ইয়ামিন যে তার বাবাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সেই অস্বাভাবিক দৃশ্য তার নজর এড়ায়নি৷ সে সহসা ভেতরে গিয়ে উষ্ণতাকে ডেকে আনল,” মাম্মা দ্রুত আসো। সিংগার আঙ্কেল আর পাপা মা-রামারি করছে। ঢিসুম, ঢিসুম।”
উষ্ণতা গোমরা মুখে অতিথিদের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত ছিল৷ রান্নাঘরে তখন শুধু সে আর অনুপমা। তৃষ্ণার কথা শুনে অনপনা মজা ভেবে হেসে উড়িয়ে দিল। কিন্তু উষ্ণতার ভ্রু কুঁচকে এলো। তৃষ্ণা সব বিষয়ে একটু বাড়িয়ে কথা বলে এটা ঠিক। কিন্তু কখনও মিথ্যা বলে না৷ আর তৃষাণের সাথে একটু আগেই তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। সেই রাগে আবার তৃষাণ ইয়ামিনকে কিছু বলেনি তো? উষ্ণতা তৃষাণের স্বভাব ভালোমতোই জানে। সে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে তৃষ্ণাকে প্রশ্ন করল,” কি হয়েছে বাবা?”
তৃষ্ণা দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলল,” সিংগার আঙ্কেল পাপাকে বাগানে নিয়ে এইভাবে ডিসুম, ডিসুম করে মারছে। পাপাও মারছে।”
উষ্ণতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার নয়বছরের ছেলের বড় বড় চোখের দিকে। ছেলেটা আতঙ্কে কেমন কাঁপছে। নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু হয়েছে। নয়তো তৃষ্ণা ভয় পাচ্ছে কেন? এহেন অদ্ভুত কথা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও উষ্ণতাকে বিশ্বাস করতে হলো। তৃষ্ণা উষ্ণতার হাত ধরে বলল,” আমার সাথে আসো মাম্মা। তোমাকে দেখাই।”
উষ্ণতা ধারণা করেছিল তৃষাণ আর ইয়ামিনের মধ্যে হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক চলছে। সেটাকেই তৃষ্ণা বাড়িয়ে বলছে মারামারি! কিন্তু বাগানে গিয়ে সে যেই দৃশ্য দেখল তা যেকোনো মানুষকে বাকশূন্য করার জন্য যথেষ্ট। ইয়ামিনের ঠোঁটের কোণে রক্ত, তৃষাণের কপালে আঘাতের চিহ্ন। তারা এখনও সর্বশক্তি দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করেই যাচ্ছে। কি ভয়ংকর প্রতিহিংসা দু’জনের চোখেমুখে! উষ্ণতা স্তব্ধীভূত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। তারপর ছুটে গেল। চিৎকার করে বলল,” স্টপ ইট, তৃষাণ স্টপ! তোমরা কি শুরু করেছো এসব?”
উষ্ণতার আগমনে যেন বজ্রপাত হলো। তার গলা শুনে এবং তাকে দেখে দু’জনে নিমেষেই একে-অন্যকে ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালো। যেন এতোক্ষণ কিছুই হয়নি। উষ্ণতা হা করে তাদের দিকে ক্ষণমুহূর্ত চেয়ে থেকে শ্লেষ মাখা কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” তোমরা এমন অস্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করছো কেন? কি হয়েছে তোমাদের?”
প্রচন্ড লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল ইয়ামিন৷ তৃষাণও বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। উষ্ণতাকে দেখে দু’জনেই চরম অপ্রস্তুতবোধ করছে। যদি উষ্ণতা তাদের লড়াইয়ের কারণ জানতে চায়, তাহলে সত্যিটা কেউই বলতে পারবে না। তাদের চুপসে যাওয়ার মূল কারণ এটাই।
উষ্ণতা তৃষাণের দিকে তাকিয়ে কৈফিয়ৎ চাইল,” বলো, কি প্রবলেম? কেন এমন উন্মাদের মতো আচরণ করছিলে তোমরা? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না…. তোমরা কি পাগল? বাড়িতে এতো মানুষ, কেউ যদি দেখে ফেলতো? কি হতো? ”
তারা নিরুত্তর। উষ্ণতা আবার বলল,” কি এমন হয়েছে যে তোমাদের এইসব করতে হবে? জানো আমি কার কাছে এই খবর পেয়ে এইখানে এসেছি? তৃষ্ণা! ও ভয় পেয়ে গেছে তোমাদের আচরণ দেখে। যেখানে আমারই বুক ধুকপুক করছে সেখানে ওর কি অবস্থা হওয়া উচিৎ? তৃষাণ আমি তোমার সাথে কথা বলছি। আমার কথার উত্তর দাও প্লিজ। এগুলো কি দেখলাম আমি?”
তৃষাণ আঁড়চোখে ইয়ামিনের দিকে চাইল। ইয়ামিনের অবাধ্য নজর উষ্ণতার দিকে বিচরণ করছে। চোখ দিয়েই যেন সে উষ্ণতাকে শুষে ফেলবে। পুনরায় মেজাজটা মাথায় চড়ে উঠল তৃষাণের। সে উষ্ণতার হাত শক্ত করে ধরে তাকে ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,” এখান থেকে চলো।”
উষ্ণতা নাছোড়বান্দা। সবকিছু না জেনে সে যাবে না। তৃষাণকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বলল,” ছাড়ো আমার হাত। আগে তোমাদের বলতে হবে তোমরা এমন কেন করছিলে? কি হয়েছিল? ইয়ামিন, তুমি অন্তত আমাকে বলো।”
উষ্ণতা ইয়ামিনের দিকে এগোতে নিলেই তৃষাণ বাধা হয়ে দাঁড়ালো। তাদের দু’জনের মাঝখানে সে যেন কোনো শক্ত প্রাচীর। শক্ত গলায় বলল,” যাবে না ওদিকে। ঘরে চলো।”
” আমি ঘরে যাবো না। তুমি ইয়ামিনের সাথে কেন এমন ব্যবহার করলে সেটা আমাকে জানতে হবে। আর ইয়ামিনই বা কেন তোমার গায়ে হাত তুলল? তুমি কি করেছো? আমার মাথায় কিছু আসছে না। তোমরা এসব কেন করেছো?”
তৃষাণ জোরপূর্বক উষ্ণতাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। তাই দেখে ইয়ামিন আরও রাগল। গর্জন করে বলল,” খবরদার, আপনি যদি আরেকবার ওর গায়ে হাত তুলেছেন তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না, মিস্টার তৃষাণ।”
তৃষাণ ইয়ামিনের কথার তোয়াক্কাই করল না। তাকে বাইরে রেখে মুখের উপর দরজা আটকে দিল। উষ্ণতা হতভম্ব হয়ে বলল,” কি বলছিল ও?”
তৃষাণ ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,” কিছু না।”
” তুমি এইভাবে ওকে অপমান করতে পারো না তৃষাণ। দরজা খোলো। আমি ওকে ইনভাইট করেছি। তাহলে তুমি কেন এমন করছো?”
” ও এখানে থাকবে না। ও থাকলে সবকিছু স্পয়েল হয়ে যাবে উষ্ণ। আমি ওকে আমার বাড়িতে আর এক মুহূর্তের জন্যেও এলাউ করব না।”
উষ্ণতা বিস্মিত নয়নে বলল,” কেন এতো ক্ষোভ তোমার ওর প্রতি? ও, এইবার বুঝেছি আমি।”
তৃষাণ ভয় পেল। চুপসে যাওয়া কণ্ঠে বলল,” মানে? কি বুঝেছো তুমি?”
উষ্ণতা হাত ভাঁজ করে বলল,” ও উষসীর গায়ে হাত তুলতে নিষেধ করছিল, তাই না?”
তৃষাণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। এখানে উষসী কোথ থেকে আসল? উষ্ণতা হাসিমুখে বলল,” তুমি যে জোর করে উষুকে বিয়ে দিতে চাইছো এটা নিশ্চয়ই ইয়ামিন বুঝে গেছে। তাই তোমাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি ইয়ামিনকেই সাপোর্ট করব। কারণ ও উষুকে ভালোবাসে। ”
তৃষাণ উষ্ণতার কথা শুনে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। রাগী কণ্ঠে বলল,” কি উল্টা-পাল্টা ভাবছো?ও কেন উষুকে ভালোবাসবে? ও কাউকেই ভালোবাসার যোগ্য না।”
” এটাই তো তোমার প্রবলেম তৃষাণ। তুমি বিশ্বাসই করতে পারছো না যে ওর মতো একজন মানুষ আমাদের উষুর মতো সাধারণ একটা মেয়েকে এতো ভালোবাসতে পারে। তুমি ভাবছো উষু ওর কাছে ভালো থাকবে না। ও হয়তো উষুর যোগ্য না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে একমাত্র ও-ই উষুর যোগ্য। আচ্ছা তৃষাণ, তোমার মনে আছে বিয়ের আগে আমার দিকে কেউ নজর দিলেই তুমি মেরে তার হাত-পা ভেঙে দিতে? একই কাজ এখন ইয়ামিন করছে। তুমি উষুকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছো বলেই ও তোমাকে সহ্য করতে পারছে না। ও হয়তো ভাবছে তুমি উষুর উপর টর্চার করছো। সেজন্য ও এমন করেছে। আমি ঠিক বলেছি না?”
তৃষাণ ভ্যাবাচেকা খেল। সত্যি কথা জানার চেয়ে ভালো উষ্ণতা এখন যেটা ভাবছে সেটাই ভাবুক। সে মাথা নেড়ে বলল,” হুম।”
উষ্ণতার চোখ উজ্জ্বল দেখালো। সে হাসিমুখে বলল,” আমি এতোদিন শুধু এটাই চেয়েছি। তুমি আমাকে যেমন করে ভালোবাসো, তেমন আরেকজন আসুক যে আমার উষুকেও একইভাবে ভালোবাসবে। ঠিক তোমার মতো করে। আমার মনে হয় সেই একজন এসে গেছে।”
” ফালতু কথা এসব।”
” তোমার কাছে ফালতু হলেও আমার কাছে এসব ফালতু না। এটা আমার একমাত্র ছোটবোনের জীবনের প্রশ্ন। আমি এতোটুকু কমপ্রোমাইজ করব না।”
” কি করবে তুমি?”
” আমি ইয়ামিনের সাথে কথা বলবো।” উষ্ণতা উৎফুল্ল হয়ে উঠল। তৃষাণ ভয় পেল এবার। শক্ত করে উষ্ণতার হাত চেপে ধরে কঠিন গলায় বলল,” খবরদার উষ্ণ, তুমি ওর সামনেও যাবে না। যদি যাও তাহলে…”
তৃষাণকে থামতে হলো। পেছনে ইমন এসে দাঁড়িয়েছে। সে ভদ্রগলায় ডাকল,” ভাইয়া, আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিল। যদি আসতেন…”
ইমনকে দেখেই উষ্ণতার মনখারাপ হয়ে গেল। সে এই ছেলের সঙ্গে উষসীর বিয়ে কোনোভাবেই মানতে পারবে না। তৃষাণ উষ্ণতাকে ছেড়ে ইমনের সাথে গেল। এই মুহূর্তে ইমনকে হাতে রাখা সবচেয়ে জরুরী। উষসীর বিয়েটা হলেই চিন্তামুক্ত হবে তৃষাণ। তাহলে উষ্ণতাও আর কোনো বাহানায় ইয়ামিনকে বাড়িতে ডাকতে চাইবে না। তৃষাণ চলে যেতেই উষ্ণতা দরজা খুলে বাইরে এলো।
ডিভানের মতো জায়গায় চুপচাপ বসে আছে ইয়ামিন। তার মুখে গাঢ় বিষণ্ণতার ছাপ। উষ্ণতা তার কাঁধে হাত রেখে কোমল স্বরে বলল,” আই এম স্যরি, ইয়ামিন।”
ইয়ামিন একটা অসহ্য শীতলতা অনুভব করল হৃদয়ে। তার চেহারা থেকে বিষণ্ণতা সরে গিয়ে ঠোঁটে ফুটে উঠল হাসি। সে উদগ্রীব কণ্ঠে শুধাল,” উষ্ণতা মিস, ইজ এভরিথিং ওকে?”
উষ্ণতা ইয়ামিনের পাশে বসতে বসতে বলল,” কিছুই ওকে নেই। তৃষাণ উঠে-পরে লেগেছো উষুর বিয়ে দেওয়ার জন্য।”
তারপর ইয়ামিনের দিকে চাইতেই তার ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখে উষ্ণতা আফসোস করে বলল,” ইশ, কি অবস্থা হয়ে গেছে তোমার। ভেতরে চলো, স্যাভলন লাগিয়ে দিচ্ছি।”
” লাগবে না। আগে বলুন, আপনি ঠিকাছেন তো?”
উষ্ণতা চোখ বড় করে বলল,” এই অবস্থায় আমি কিভাবে ঠিক থাকবো যেখানে আমার বোন ঠিক নেই? উষুর মত ছাড়াই তৃষাণ ওকে বিয়ে দিচ্ছে। এটা আমিও মানবো না।”
ইয়ামিন নিচু গলায় বলল,” ও… তাহলে এসব নিয়েই আপনাদের ঝগড়া হয়েছে?”
” হ্যাঁ এসব নিয়েই ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু তৃষাণকে তুমি যত খারাপ ভাবছো ও কিন্তু ততটাও খারাপ নয়।”
ইয়ামিন কিড়মিড় করে বলল,” খারাপ না হলে এমন একটা জঘন্য কাজ কিভাবে করলেন উনি?”
ইয়ামিন উষ্ণতার গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা ইঙ্গিত করেছে। কিন্তু উষ্ণতা বুঝল অন্যকিছু। সে ভাবল উষুকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে ইয়ামিন। সে হেসে বলল,” তুমি চাইলেই সব ঠিক হতে পারে।”
” আমি অবশ্যই চাই যে সব ঠিক হয়ে যাক।”
” তাহলে এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। কিছু একটা করো। এই বিয়েটা তো ভাঙতে হবে।”
ইয়ামিন অবাক হয়ে বলল,” শুধু বিয়ে ভাঙলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে?”
উষ্ণতা অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল,” বোকা নাকি তুমি? বিয়ের জন্যই তো সব ঝামেলা হচ্ছে। বিয়ে না ভাঙলে প্রবলেম কিভাবে সোলভ হবে?”
ইয়ামিন এবার উঠে দাঁড়িয়ে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,” আপনি কিছু ভাববেন না মিস। এই বিয়ে আমি কোনোভাবেই হতে দিচ্ছি না।”
উষ্ণতা তার কথায় খুশি হয়ে বলল,” আমি জানি সেটা। তোমার উপর আমার বিশ্বাসও আছে। ”
ইয়ামিন উষ্ণতার হাসি মাখা মুখের দিকে চেয়ে বিভোর হয়ে গেল। এই হাসির জন্য সে দুনিয়া ভাসিয়ে দিতে পারে। উষ্ণতার সুখের জন্য সব করতে পারে। সেখানে সামান্য একটা বিয়ে ভাঙা কি এমন কঠিন কাজ?
চলবে
#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২৫
লিখা- Sidratul Muntaz
“আমি উষসীকে বিয়ে করতে পারব না ভাইয়া, আমাকে মাফ করে দিবেন।” অনেক উশখুশ করে অবশেষে আসল কথাটা বলেই ফেলল ইমন। সে মাথা নিচু করে রেখেছে।
তৃষাণ বুঝতে পারল না, আজকের দিনটা এতো খারাপ কেন? সকাল থেকে একটার পর একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। সকালে উষ্ণতা ইয়ামিন আর উষসীর বিয়ে কথা বলল। সন্ধ্যায় ইয়ামিন স্ব-শরীরে এই বাড়িতে এসে হাজির। তারপর হঠাৎ তার উপর আক্রমণ। আর এখন ইমনের মত বদল। তৃষাণের মনে হচ্ছে তার মাথা ফেটে যাবে। বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে এলো। সামান্য রাগ নিয়ে বলল,” এসবের মানে কি?”
ইমন ইতস্তত গলায় বলল,” আমাকে ভুল বুঝবেন না ভাইয়া। কিন্তু যথাযথ কারণ আছে বলেই আমি বিয়েটা ভাঙতে চাইছি। এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
” কারণটা কি আমাকে বলা যাবে?” তৃষাণের কণ্ঠ গম্ভীর।
ইমন খুব অপ্রস্তুত হলো,” ভাইয়া আপনি আমার উপর রাগ করবেন না প্লিজ। আমার মনে হচ্ছে উষসী এই বিয়েতে রাজি না। ওর মতের বিররুদ্ধে আমি বিয়ে করতে চাই না।”
তৃষাণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। হতাশা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,” উষসী বাচ্চা মেয়ে। তুমি ওর কথা শুনে এমন একটা সিদ্ধান্ত কিভাবে নিচ্ছো?”
ইমন সামান্য অবাক হয়ে তাকাল,” যে বিয়ে করবে তার মতামত জানা কি জরুরী না?”
তৃষাণ রূঢ় স্বরে বলল,” কোনটা জরুরী আর কোনটা অ-জরুরী সেটা আমি বুঝি ইমন। উষুকে তোমার চেয়েও ভালো আমি চিনি। ও অন্যকাউকে ভালোবাসে সেজন্য তোমাকে বিয়ে করতে চায় না।”
ইমন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তৃষাণ তাহলে সত্যিটা আগেই জানে। যাক, তাকে এখন আর কসরত করে মিথ্যা বানিয়ে বলতে হবে না। আলোচনা সহজ হয়ে গেল। সে বলল,” এক্সাক্টলি ভাইয়া। ও যেহেতু অন্যকাউকে চায় তাহলে আমার শুধু শুধু ওর জীবনে জোর করে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। আপনারা ওর সম্পর্ক মেনে নিন।”
” কিসের সম্পর্কের কথা বলছো তুমি? কোনো সম্পর্ক নেই। উষু তোমাকে মিথ্যা বলেছে। ও শুধু এখন বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু আমি জানি ওর জন্য কি ভালো হবে। তুমি যদি বিয়েতে রাজি না হও তাহলে আমি অন্য পাত্র ঠিক করব। কিন্তু উষুর বিয়ে হবেই। এবার তুমি ঠিক করো, কোনটা ভালো? আমি যতটুকু জানি তুমি উষসীকে অনেক পছন্দ করেছিলে। এখন কি এই সামান্য কারণে ওকে হারাতে চাও?”
তৃষাণের রাশভারী দৃষ্টির দিকে চেয়ে ইমন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল মুহূর্তেই। উষসী কি সত্যি তাকে মিথ্যা বলেছে? কিন্তু তার চোখের জল দেখে আর তার কথা শুনে তো একবারও সেটা মনে হয়নি! ইমন মনখারাপের সুরে বলল,” আপনি যদি একবার ওর সাথে কথা বলে নিতেন… তাহলে ভালো হতো ভাইয়া। আমার মনে হচ্ছে ওর কারো সাথে অবশ্যই সম্পর্ক আছে। আপনাকে লজ্জায় বলতে পারছে না হয়তো…”
তৃষাণ তাচ্ছিল্যের সাথে বিড়বিড় করল,” হুহ….লজ্জা থাকলে কি আর নির্লজ্জটার জন্য পাগল হতো?”
” ভাইয়া কি বললেন? আমি শুনিনি।”
” শোনার দরকার নেই। তুমি বিয়ে করতে চাও না তো? ওকে ফাইন। আমি তোমার চেয়ে হাজার গুণ ভালো পাত্র ঠিক করব উষুর জন্য।”
ইমন হকচকিয়ে গেল। তৃষাণ যে এতোটা রেগে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। উষসীর অন্যকারো সাথে বিয়ের কথাও সে ভাবতে পারছে না৷ তাই তাড়াহুড়ো করে বলল,” স্যরি ভাইয়া, আমার ভুল হয়ে গেছে।”
তৃষাণ ঘুরে তাকাতেই ইমন মাথা নিচু করে বলল,” আমি বিয়ে করব।”
তৃষাণ ইমনের কাঁধ চাপড়ে বলল,” সাবাশ।”
___________________
ইমনের বাবা-মায়ের সাথে বসে হাসিমুখে গল্প করছে উষসী। তার এই মুহূর্তে কিছুটা হালকা বোধ হচ্ছে। অন্তত ইমনকে সে সবকিছু জানাতে পেরেছে। আশা করা যায় ইমন কিছু একটা করবে। সে মনে হয় তৃষাণের সাথেই কথা বলতে গেছে। কিন্তু উষসীর ভয় তৃষাণকে নিয়ে। সে এসব শুনে কেমন ব্যবহার করবে কে জানে?
” তোমার প্রিয় কাজ কি? মানে তুমি কি কি করতে পছন্দ করো?”
ইমনের মা প্রশ্ন করলেন স্নেহমাখা কণ্ঠে। উষসী মুচকি হেসে ইয়ামিনের গিটারের দিকে চেয়ে বলল,” আমার গিটার বাজানো শুনতে খুব ভালো লাগে, আন্টি।”
ইমনের বাবা এবং মা অবাক হয়ে তাকালেন। মা বললেন,” শুধু গিটার? আর কিছু ভালো লাগে না?”
উষসী বলল,” হ্যাঁ লাগে তো। গান শুনতেও আমার ভালো লাগে।”
ইমনের বাবা বললেন,” গান, গিটার… এসবের বাইরে তোমার কি পছন্দ?”
উষসী মুখ গোমরা করে বলল,” জানি না।”
তৃষাণ আর ইমন ড্রয়িংরুমে ঢুকল এমন সময়। তাদেরকে দেখে উষসীর মনে কিঞ্চিৎ আশার আলো জেগে উঠল। ইমন নিশ্চয়ই কিছু করেছে। উষসীর বুক দুরুদুরু করতে লাগল। এখন কি হবে? ধামাকা!
তৃষাণ খুব জরুরী আলোচনায় আসার মতো ভঙ্গি করে বলল,” আন্টি, আঙ্কেল, আপনাদের ছেলের সাথে আমার কথা হয়েছে। সে আপনাদের দোয়া নিয়ে উষসীকে সবার সামনে আংটি পরাতে চায়৷ আর আমি ঠিক করেছি আজকেই বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে ফেলবো। সবাই যখন রাজি… দেরি করে লাভ কি?”
ইমনের বাবা-মা একসাথে উচ্চারণ করল,” শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। ”
উষসী ইমনের দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে। অথচ ইমন তার দিকে তাকাচ্ছে না। এভাবে বেইমানি করতে পারল সে! ঘরের ভেতরে তো বলেছিল এই বিয়ে সে করবে না। অথচ এখন সবার সামনে এসে অন্যকথা বলছে কেন? সবাইকে সুখবর জানানো হলো। যুথি আর ডোনা মুখে হাসি নিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলেন। অনুপমা, আহমেদ, আইলা, তৃষ্ণা, উষ্ণতা এক কথায় বাড়ির সবাই উপস্থিত। এখন সকলের সামনে ইমন উষসীকে আংটি পরাবে।
উষসীর হাত কাঁপছে। চিৎকার করে সবার সামনে বলতে মন চাইছে,” থামো তোমরা। আমি বিয়ে করব না। অসম্ভব।”
কিন্তু বুক ফাটলেও কথা বলার সাহস তার নেই। সে বাধ্য হয়ে নিজের হাত এগিয়ে দিল। উষ্ণতা রাগী দৃষ্টিতে তৃষাণের দিকে তাকাচ্ছে। সে ঠিকই উষসীর এংগেজমেন্ট করিয়েই ছাড়ল। কারো নিষেধ শুনল না। হঠাৎ দরজার সামনে থেকে ভেসে এলো একটি ভরাট কণ্ঠ,” প্লিজ থামুন, এসব কি হচ্ছে?”
ইয়ামিনের কণ্ঠ শুনে সবার নজর গিয়ে স্থির হলো দরজার সামনে। তৃষাণ ক্রুদ্ধ গতিতে এগিয়ে যেতে নিল তখনি উষ্ণতা হাত ধরে থামালো তাকে। অনুপমা হাসছে। যুথিও তৃষাণের মতো বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে রইলেন। ইমনের বাবা এবং মা কিছু বুঝতে পারল না। ইমনও হতবাক। আর উষসীর চেহারায় বিস্ময়। ইয়ামিন কাছে এসে উষসীর হাত টেনে ধরে বলল,” তুমি এটা করতে পারো না। আমাদের আট বছরের সম্পর্ক। এক নিমেষে শেষ হয়ে যাবে? তুমি আমাকে ছেড়ে একটা অপরিচিত ছেলেকে বিয়ে করে ফেলবে? হাউ কুড ইউ ডু দ্যাট?”
সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। ইমনের মা আশ্চর্য হয়ে গালে হাত রাখলেন। ইমনের বাবার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। ইমন অসহায়ের দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাচ্ছে। আর উষসীর মনে হচ্ছে সে বেহুশ হয়ে যাবে। তৃষাণ থমথমে কণ্ঠে বলল,” হোয়াট ডু ইউ মিন? এসব কি ধরণের কথা? তুমি এখান থেকে… ”
উষ্ণতা তৃষাণের হাত টেনে এনে ফিসফিস করে বলল,” একদম চুপ। আমি ইয়ামিনকে বলেছি এসব করতে। খবরদার আমাদের প্ল্যান চপট করবে না তুমি।”
” আর ইউ ক্রেজি উষ্ণ?”
” হ্যাঁ। তুমি আমার কথা না শুনলে এমনই হবে।”
রাগে আর বিরক্তিতে তৃষাণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। ইয়ামিন সবার উদ্দেশ্যে বলল,” এমন অদ্ভুত একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট করার জন্য আমি স্যরি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। আমি উষসীকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তাই অন্যকেউ ওর আঙুলে আংটি পরাচ্ছে দেখে আমি সাইলেন্ট থাকতে পারিনি।”
অনুপমা খুশিতে গদগদ হয়ে উচ্চারণ করল,” ইয়েস!”
আহমেদ কড়া দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকাল। অনুপমা নিজেকে সামলে নিল। এদিকে ইয়ামিনের কণ্ঠে এসব শুনে উষসীর দুনিয়া দুলছে। সে যেন হাওয়ায় ভাসছে। এটা নির্ঘাত তার স্বপ্ন। কিন্তু আবার ঘুমটা ভেঙে যাবে না তো?
ইমনের বাবা যুথির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলেন,” এই ছেলে কি বলছে এসব? কে এই ছেলে?”
যুথি কিছু বলার আগেই ইয়ামিন দরাজ কণ্ঠে বলল,” আমি উষসীর বয়ফ্রেন্ড। আমাদের আটবছরের সম্পর্ক। কিন্তু এই কথা কেউ জানতো না। অন্যকাউকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। আপনার যা প্রশ্ন করার আমাকে করুন। আমি সবকিছুর উত্তর দিবো। এখানে উষসীর পরিবারের কারো কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। তাই আপনাদের যদি রাগ ঝারতে হয়… আমার উপর ঝারবেন।”
ইমনের মা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,” এই গিটার তোমার, তাই না?”
” হ্যাঁ, কেন?”
” এবার বুঝলাম। উষসীর কেন গিটার আর গান ছাড়া অন্যকিছু পছন্দ নয়। আর তোমাদের সম্পর্ক কয়বছরের? আটবছর আগে তো উষসীর দুধের দাঁতও পড়েনি। ওই বয়সে প্রেম করতো? ছি… কেমন পরিবার…”
ইয়ামিন সাথে সাথে বলল,” প্লিজ, ওর পরিবার তুলে কথা বলবেন না। আমি আগেই বলেছি কারো কোনো দোষ নেই এখানে। সব দোষ আমার। কারণ আমি উষসীকে ভালোবাসি।”
ইয়ামিন উষসীর হাতের উল্টোপিঠে চুমু দিল। এবার উষসীর চোখ দু’টি বন্ধ হয়ে গেল। সে নির্ঘাত মরে যাচ্ছে। এতো খুশির ঘটনা সব একসাথে ঘটছে কেন? ইমন উষসীর দিকে চেয়ে দুঃখী গলায় প্রশ্ন করল,” ছেলেটা কি ঠিক বলছে উষসী? তুমি সত্যি ওকে ভালোবাসো?”
উষসী উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সে দুনিয়ার জগৎ ছেড়ে আলাদা হয়ে গেছে অনেক আগেই। বিচরণ করছে এক অন্যরকম সুখময় স্বপ্নের জগতে। তৃষাণের গর্জনে তার হুশ ফিরল,” আর একটা ফালতু কথা বললে আমি তোমাকে খু’ন করে ফেলব, স্কাউন্ড্রেল।”
উষসী ঝটপট বলল,” না, তুমি ওকে কিছু করবে না। তাহলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো।”
ইমনসহ তার পরিবার হতভম্ব হয়ে গেল উষসীর প্রতিবাদে। উষসী এক নিশ্বাসে বলল,” আমি ইয়ামিনকে ভালোবাসি। কিন্তু ভয়ে বাড়িতে বলতে পারিনি। সেজন্য বিয়েতে রাজি হয়েছি। কিন্তু এখন ইয়ামিন সবার সামনে সাহস দেখিয়ে সত্যিটা বলে দিয়েছে। তাহলে আমি কিভাবে নীরব থাকব? এটা অন্যায়! আমি ইয়ামিনকে ভালোবাসি, বাসি, বাসি। প্রচন্ড ভালোবাসি।”
তৃষাণ এই কথা শুনে আর রাগল না। ভীষণ হতাশ হয়ে মনে মনে আওড়াল,” নিজের ভালো পাগলেও বোঝে কিন্তু উষসী বোঝে না।”
যুথি উঠে এসে উষসীর গালে ঠাটিয়ে চড় মারলেন। উষসী ছিটকে এসে ইয়ামিনের বুকের উপর পড়ল।
ইয়ামিন তাকে দুইহাতে আগলে ধরল। এরপর কিভাবে কি হলো উষসীর কিছুই মনে নেই৷ সে শুধু জানে তার বিয়েটা ভেঙে গেছে। ইয়ামিন তাকে ভালোবাসে। আজ থেকে তার স্বপ্নে আর বাস্তবে কোনো পার্থক্য নেই। তার স্বপ্নটাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। সে পৃথিবীর একমাত্র সুখী মেয়ে।
বাড়িজুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে তখন। যুথি বেগম বলেছেন উষসী যেন এখনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। উষ্ণতা আর তৃষাণের মধ্যে ঝগড়া চলছে। ডোনা আর অনুপমাই শুধু খুশি। তারা উষসীর খুশিতে সবসময়ই খুশি হয়। কিন্তু উষসী এখনও স্বাভাবিক হতে পারছে না। করিডোরে দাঁড়িয়ে সে মুহূর্তগুলো আবার কল্পনা করছে। ইয়ামিন নিজের মুখে উচ্চারণ করেছে ভালোবাসার কথা। তাও সবার সামনে! উষসীর পাগল হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। হঠাৎ ইয়ামিন পেছনে এসে বলল,” দারুণ অ্যাকটিং করেছো তুমি।”
উষসী কেঁপে উঠল। অবাক হয়ে বলল,” অ্যাকটিং মানে?”
” ড্রয়িংরুমে সবার সামনে যা করলে… সেটার কথা বলছি। তুমি তো আমার চেয়েও ভালো একটিং করো। কংগ্রাচুলেশনস। এখন তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে। তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কিছু হবে না। তোমার আপুও খুব খুশি।”
উষসী দিশেহারার মতো প্রশ্ন করল,” আপনি তখন সবার সামনে অ্যাকটিং করেছেন?”
” অ্যাকটিংটা না করলে তোমার বিয়ে এতো সহজে ভাঙতাম কি করে? অবশ্য আন্টি একটু রেগে গেছেন। তাকে সামলাতে হবে। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কি খুশি হওনি?”
উষসী কয়েক মুহূর্ত ইয়ামিনের দিকে চেয়ে থেকে ঘরে চলে গেল। ইয়ামিন ঠোঁট উল্টে বলল,”এতোকিছু করলাম আর একটা থ্যাংকস পর্যন্ত দিয়ে গেল না? স্ট্রেঞ্জ!”
ইয়ামিন জানে না, দরজার আড়ালে নিজের ঘরের ভেতরে উষসী বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদছে এখন। নিজের অজান্তেই সে একটা মেয়ের বহু বছরের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন জঘন্যরূপে তছনছ করে দিয়েছে! এতোবড় ধোকা খেয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার মতো শাস্তির পাওয়ার চেয়ে উষসীর পক্ষে ইমনকে বিয়ে করাই ঢের ভালো ছিল।এসব কিছুই জানে না ইয়ামিন। হয়তো জানবে না কখনোই।
চলবে