আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-২২+২৩

0
510

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২২
লিখা: Sidratul Muntaz

উষ্ণতার মাথা ঝিমঝিম করছে। তৃষাণের ফোন সকাল থেকে সুইচড অফ। প্রথম প্রথম বিষয়টা একদম পাত্তা দেয়নি সে। কারণ আজ সকালেই তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার বিষয়-বস্তু খুব একটা জটিল না৷ উষ্ণতা ভাবতেও পারেনি যে এইরকম একটা কারণে তৃষাণ ঘর থেকে বের হয়ে যাবে এবং দুপুর ঘনিয়ে বিকাল হওয়ার পরেও ফিরে আসবে না। আজ সকালে তৃষাণের মন-মেজাজ ভালোই ছিল। গোসল সেরে বের হয়ে তৃষ্ণার মাধ্যমে উষ্ণতাকে ডেকে পাঠাল সে। তৃষ্ণা এসে বলল,” মা, বাবা তোমাকে ডাকছে। খুব জরুরী কথা আছে। ”

উষ্ণতা খুব ভালো করেই জানে তৃষাণের জরুরী কথার মানে। যদি আসলেই জরুরী কথা হতো তাহলে নিজেই আসতো। ছেলেকে দিয়ে বেডরুমে ডেকে পাঠাতো না।

উষ্ণতা কাজ ফেলে বেডরুমে ঢুকতেই দেখল তৃষাণ ভেজা গায়ে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে শুধু একটা ট্রাউজার পরে দাঁড়িয়ে আছে। উষ্ণতা জিজ্ঞেস করল,” ডেকেছো?”

তৃষাণ বলল,” হ্যাঁ, আমার কমলা টি-শার্ট খুঁজে পাচ্ছি না।”

উষ্ণতা দেখল কমলা টি-শার্ট হ্যাঙ্গারেই ঝুলানো আছে। একদম চোখের সামনে। বিরক্ত ভঙ্গিতে সেটা এগিয়ে দিয়ে বলল,” এইতো, এটাই খুঁজছো নাকি?”

তৃষান একটু অপ্রস্তুত হলো। তারপর হেসে বলল,” হ্যাঁ। আরে, এটা আমার চোখে পড়ল না কেন?”

” মন দিয়ে খুঁজলেই না চোখে পড়বে। যাইহোক, ব্রেকফাস্ট করতে এসো।”

” উষ্ণ, শোনো না।”

” বলো।”

তৃষাণ কাছে এসে উষ্ণতার কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে দিল। তারপর কপালে চুমু দিতে নিলেই উষ্ণতা বিড়বিড় করে বলল,” দরজা খোলা। ছেলে যেকোনো সময় চলে আসবে।”

তৃষাণ তাতেও দমল না। ছোট্ট করে কপাল বরাবর একটা চুমু দিয়ে বলল,” চলো না, আমরা কোথাও ঘুরতে যাই৷ এবার শুধু তুমি আর আমি। মালদ্বীপ গেলে কেমম হয়?”

উষ্ণতার কথাটা শুনেই ক্লান্তি চলে আসল৷ তারা মাত্র কিছুদিন হলো কাশ্মীর থেকে ফিরেছে। বিশ্রামের সময় পেল না আর তৃষান আবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলছে? এতো এনার্জি কই পায় এই লোক?

উষ্ণতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। তৃষাণ হাসি মুখে বলল,” এটা তো ফ্যামিলি ট্রিপ ছিল। আমি হানিমুন ট্রিপের কথা বলছিলাম ডিয়ার ওয়াইফ।”

উষ্ণতা হাসি দমিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,” ডিয়ার হাজব্যান্ড, এসব চিন্তা বাদ দিয়ে খেতে এসো। তোমার মতো এতো আজাইরা সময় আমার হাতে নেই। অনেক কাজ আছে।”

তৃষাণ উত্তরে খুব দুষ্ট একটা কথা বলল৷ উষ্ণতা তৃষাণের পেট বরাবর জোরালো একটা ঘুঁষি মারল এবার। তৃষাণ মুখ কুচকে শব্দ করল,” আউচ!”

উষ্ণতা দৌড়ে দরজার কাছে চলে এলো। তৃষান ভেবেছিল উষ্ণতা বুঝি পালিয়েই যাবে। কিন্তু না, সে দরজা বন্ধ করে আবার তৃষাণের কাছেই ফিরে এলো। তৃষাণ হতবাক! উষ্ণতা তৃষাণের গলা থেকে তোয়ালে খুলে নিল৷ তারপর সেই তোয়ালে দিয়ে তৃষাণের পিঠের সাথে আটকে তাকে কাছে টেনে আনল। তৃষাণ বিস্ময়ের সীমা পাচ্ছে না। যে কাজগুলো তার করার কথা সেগুলো উষ্ণতা করছে! হঠাৎ কি হলো মহারাণীর? উষ্ণতা খুব রোমান্টিক মুডে বলল,” তোমার সাথে আমার ইম্পোর্ট্যান্ট কথা আছে।”

তৃষাণের নজর তখন উষ্ণতার কোমল ঠোঁটে, ফরসা গলায়। সে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল,” বলো না।”

উষ্ণতা এই সময়টারই অপেক্ষা করছিল। তৃষাণের মেজাজ এখন উষ্ণতার নিয়ন্ত্রণে। সে চাইলেই ইয়ামিন-উষসীর ব্যাপারটা বলে তৃষাণকে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে৷ এর থেকে ভালো সুযোগ আর হয় না। উষ্ণতা বলল,” উষসীকে নিয়ে আমি এই কয়েকদিন অনেক ভেবেছি। তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তৃষাণ উষ্ণতার গলায় নাক ঘষতে ঘষতে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করল,” কি সিদ্ধান্ত?”

” ইমনকে আমার পছন্দ হয়নি। উষসীরও পছন্দ নয়৷ তাই ওদের বিয়েটা ভেঙে দিলেই ভালো হয়।”

তৃষাণ ভ্রু কুচকে তাকালো। উষ্ণতা বলল,” দেখো তুমি যা-ই বলো, আমার কাছে আমার বোনের সুখ আগে৷ ও যেটা চায় না সেটা আমি ওকে জোর করে করাতে পারবো না।”

” তাহলে আগে নিষেধ করোনি কেন? কথা-বার্তা ফাইনাল হয়ে গেছে। কিছুদিন পর এংগেজমেন্ট হবে। এখন কি এসব কথার মানে হয়?”

উষ্ণতা তৃষাণের ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরল। কোমল গলায় বলল,” এংগেজমেন্ট হয়েছে এখনও হয়নি৷ উষসীর একটা দোষ দেখিয়ে দিবো৷ ব্যাস, বিয়ে ভেঙে যাবে।”

তৃষাণ ত্যাড়া গলায় বলল,” খুব সুন্দর আইডিয়া৷ তোমার কি মনে হয়? দোষ দেখিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলে উষসীর জন্য সেটা ভালো হবে? অনেক বড় প্রবলেম হয়ে যাবে।”

” উহুম। কোনো প্রবলেম হবে না। এর থেকেও ভালো ব্বে। আমার কাছে উষুর জন্য অনেক ভালো পাত্র রেডি আছে।”

তৃষাণের চেহারায় বিস্ময় খেলে গেল,” তাই নাকি? তাহলে এটা আমাকে আগে বললেই হতো। এতো দেরিতে কেন বলছো?”

” আগে তো আমি পাত্রের সন্ধান পাইনি। বলবো কিভাবে?”

” আচ্ছা, কে পাত্র? কি করে?”

উষ্ণতা খুশি খুশি কণ্ঠে বলল,” সিংগার।”

তৃষাণের চোখ দুটি ধ্বক করে জ্বলে উঠল। কি হলো উষ্ণতা কিছুই বুঝল না। তৃষাণ এতোক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরেছিল৷ এইবার ছেড়ে দিল। গম্ভীরমুখে আয়নার সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল। কমলা টি-শার্ট পরল। উষ্ণতা বুঝে গেল তৃষাণ মুখে না বলেই বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে তার উষ্ণতার প্রস্তাব পছন্দ হয়নি।

উষ্ণতা শক্ত কণ্ঠে বলল,” আমি আজকে ইয়ামিনকে ডিনারে ইনভাইট করেছি। উষসীও ওকে পছন্দ করে। আর আমার মনে হয় ইয়ামিনেরও ওর প্রতি ইন্টারেস্ট আছে। তাহলে ওদের মধ্যে যেহেতু সবকিছু ঠিক তাহলে আমরা কেন শুধু শুধু বাঁধা দিবো? আমি আমার বোনের ভালো চাই।”

তৃষাণ উষ্ণতার একটা কথারও জবাব দিচ্ছে না। উষ্ণতা রাগে বলল,” উষু আমার বোন। ওর ভালো-মন্দ বোঝার দায়িত্ব আমার। তুমি মানো আর না মানো ইয়ামিনের সাথেই বিয়ে হবে।”

তৃষাণ এতোক্ষণে কথা বলল,” যা ইচ্ছা তাই করো। কিন্তু আজকে থেকে এইটা ভুলে যেও যে আমি তোমার হাসব্যান্ড। ”

উষ্ণতা বাকরুদ্ধ! তৃষাণ এটা কেমন কথা বলল? এবং এই কথা বলেই সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল৷ এরপর আর ফিরে আসেনি। উষ্ণতা আজ সারাদিন অপেক্ষা করেছে। তৃষাণের মেজাজ একটু বেশি। সে ভেবেছিল রাগ কমলেই তৃষাণ বাড়ি ফিরে আসবে। সবকিছু মেনেও নিবে। কিন্তু তৃষাণ এখনও আসেনি৷ এদিকে ইয়ামিনকে ডিনারের দাওয়াত করা হয়ে গেছে। সে চলেও আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। অথচ তৃষাণের খোঁজ নেই। উষ্ণতার এখন ভয় লাগছে। সে আবার তৃষাণের নাম্বারে ফোন করল। এখনও সুইচড অফ। উষ্ণতা অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারী করতে লাগল।

উষসী বিছানায় শুয়ে পড়ল। শক্ত করে একটা বালিশ চেপে ধরে ভেতরের অস্থিরতা কমানোর বৃথা চেষ্টা চালালো। এই অবস্থাতেই তার ঘুমে চোখ লেগে এলো। সে এক প্রশান্তির ঘুম!
দরজার খটমট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল উষসীর। অনুপমা তাড়াহুড়োয় বলল,” সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস? ওদিকে ইয়ামিন তো এসে গেছে।”

” এসে গেছে মানে? কোথায় উনি?” উষসীর গলা কাঁপছে। সীমাহীন ভালোলাগায় মন আবেশিত হচ্ছে। অনুপমা দুষ্ট হেসে বলল,” করিডোরের দিকে আছে। যা,যা, দ্রুত যা। আর একটু সেজেগুজে যাস!”

এই কথা বলেই চোখ মারল সে। লজ্জায় উষসীর গাল লালচে দেখালো। সে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে কাঁপা হাতে চিরুনি নিল। খুব বুক কাঁপছে। কতদিন পর আবার দেখা! আয়নায় নিজের চেহারাটা কেমম অদ্ভুত দেখাচ্ছে। ইয়ামিন তার নর্ভাসনেস বুঝে ফেলবে না তো? উষসী তার চুলটা আঁচড়ে চোখে হালকা কাজল লাগিয়ে নিল। লিপস্টিক দিতে গিয়েও দিল না। বেশি সাজলে বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।

উষসীদের বাড়ির করিডোরের মতো জায়গায় একহাতে গিটার নিয়ে চেয়ারে বসে রয়েছে ইয়ামিন। তার গাঁয়ে ফুলহাতা ফোল্ড করা এশ কালার শার্ট। ঠোঁটে মৃদু হাসি। ইয়ামিনকে বরাবরের মতোই হ্যান্ডসাম লাগছে। উষসী তাকে দেখা মাত্রই কেমন এলোমেলো হয়ে পড়ল। ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগল তার কাছে। ইয়ামিন অবশ্য তাকে তখনও দেখেনি। সে নিজের মনে গিটার বাজিয়ে গান গাইছে,

” বলতে গিয়ে মনে হয়…
বলতে তবু দেয় না হৃদয়, কত তোমায় ভালোবাসি!
চলতে গিয়ে মনে হয়…
দূরত্ব কিছু নয়, তোমারই কাছে ফিরে আসি!”

উষসী মন্ত্রমুগ্ধের গান শুনতে শুনতে একরাশ বিভোরতা নিয়ে এগিয়ে গেল।

ইয়ামিন হঠাৎ গান গাওয়া থামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। উষসীর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,” কেমন আছো?”

উষসী উতলা কণ্ঠে বলল,” আমি ভালো আছি। কিন্তু আপনি থামলেন কেন? প্লিজ, গানটা শোনান। প্লিজ?”

ইয়ামিন ভ্রু কুচকে বলল,” কেন?”

যদিও তার মুখে তখন হাসি লেগে আছে। উষসী লজ্জামাখা গলায় বলল,” আপনার কণ্ঠে ওই গানটা শুনতে আমার খুব ভালো লাগছিল।”

” তাই? কিন্তু এই গানটাই কেন? অন্য গান ভালো লাগবে না?”

“লাগবে তো। কিন্তু আমার মনে হয়….” নিশ্বাসে টান পড়ায় থামল উষসী। ইয়ামিন বলল,” বলো, কি মনে হয়?”

উষসী লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে বলে ফেলল,” এই গানের প্রত্যেকটি শব্দ আপনি আমাকে ইঙ্গিত করে গাইছেন। এটাই মনে হয়।”

উষসী দুইহাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল তীব্র লজ্জায়। ইয়ামিন হেসে বলল,” তোমাকে কেন ডেডিকেট করবো? এটা তো প্রেমের গান।”

” উফফ, আপনি কি কিছুই বোঝেন না? ” এবার একটু বিরক্তই হলো উষসী। ইয়ামিন রসিক কণ্ঠে বলল,” বুঝি না যখন বোঝাও।”

উষসী চোখমুখ খিচে বলল,” আপনি বুঝেন না?আমি আপনাকে কত ভালোবাসি?”

উষসী আবারও মুখ ঢাকল। বড় শ্বাস ছাড়তে লাগল এবার। হৃদযন্ত্রটা যেন বিকল হয়ে যাবে। এদিকে ইয়ামিনের পক্ষ থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না। উষসী একটু পর মুখ থেকে হাত সরিয়ে উপরে তাকাল। দেখল ইয়ামিন নিষ্পলক তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পেছনে দুইহাত গুটিয়ে হালকা নিচু হয়ে তাকে দেখছে৷

মুহূর্তেই উষসীর হৃৎপিন্ড হাজার গতিতে ছুটতে লাগল। বিবশের মতো সেও তাকিয়ে রইল ইয়ামিনের দিকে। কেউ কিছু বলছে না, শুধু হৃদয়ের আলোড়ন বেড়ে চলেছে। উষসী বাঁধা পড়ল ইয়ামিনের কালো বলের মতো ওই চমৎকার চোখ দু’টির কৃষ্ণগহ্বরে! ঘোর লেগে আসছিল তার। হঠাৎ ইয়ামিন নিচু গলায় বলল,” আমিও তো।”

উষসী সম্বিৎ ফিরে পেলো। অপ্রস্তুত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” মানে?”

” মানে আমিও….ভালোবাসি!”

উষসীর আনন্দে কান্না পেয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। ঘুমের মধ্যেই বালিশ জড়িয়ে সে কাঁদতে লাগল৷ খুশির কান্না! এরই মাঝে দরজায় খটখট আওয়াজ শোনা গেল। উষসীর ঘুম ভাঙল আচম্বিতে। এ কেমন সুখ স্বপ্ন দেখল সে? কেন এই স্বপ্ন ভাঙল? সুখের স্বপ্ন ভাঙলে বড় কষ্ট হয়! উষসীর বুক চিনচিনে ব্যথায় ভরে উঠল।

সে নিরাশ মনে দরজা খুলতেই অনুপমা তাড়াহুড়ো করে বলল,” সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস? ওদিকে ইয়ামিন তো এসে গেছে।”

” এসে গেছে মানে? কোথায় উনি?” উষসীর গলায় সীমাহীন কৌতুহল। এই দৃশ্যটা যেন ঠিক তার স্বপ্নের দৃশ্য! অনুপমা বলল,” করিডোরের দিকে আছে। যা,যা, দ্রুত যা। একটু সেজেগুজে যাস!”

ঠিক স্বপ্নের মতোই অনুপমা দুষ্টমি করল। উষসী বাকরুদ্ধ। এবার আর তার লজ্জা লাগল না। বরং বিস্ময়ে সে হতবাক। সবকিছুই স্বপ্নের মতো ঘটছে কেন? তাহলে কি… উষসীর বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল প্রবল উত্তেজনায়। সে চুল আঁচড়ে চোখে কাজল দিয়ে নিল। লিপস্টিক ইচ্ছে করেই দিল না। সবকিছু স্বপ্নের সাথে মিল থাকা চাই।

বাড়ির করিডোরের মতো জায়গায় উষসী গিয়ে থামল। কারণ স্বপ্নে ইয়ামিন এখানেই ছিল। ওইতো, চেয়ারে একহাত গিটার নিয়ে বসে রয়েছে ইয়ামিন। তার গাঁয়ে ফুলহাতা ফোল্ড করা এশ কালার শার্ট। স্বপ্নে উষসী শার্টের রঙ বুঝতে পারেনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এই রঙের শার্টই তার গায়ে ছিল। একদম স্বপ্নের দৃশ্যপট। উষসী কি এগিয়ে যাবে? এরপর কি হতে চলেছে? ইয়ামিন নিশ্চয়ই তার দিকে ঘুরে মৃদু হাসবে এখন? তারপর গান গাইতে শুরু করবে? ভাবতেই উষসীর লজ্জায় মূর্ছা যাওয়ার উপক্রম হলো।

উষসী কাছে গিয়ে ইয়ামিনের কাঁধে হাত রাখল। তখনি ঘুরে তাকাল মানুষটা। উষসীর ভুবন কেঁপে উঠল এবার। আহত মনে দুই পা পিছিয়ে এলো সে। কারণ তার সামমে দাঁড়ানো মানুষটি ইয়ামিন নয়, ইমন!

চলবে

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ২৩
লিখা- Sidratul Muntaz

“কেমন আছেন, মিস উষসী?” ইয়ামিনের গিটার হাতে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করল ইমন। তার চোখে মুগ্ধতা।

সদ্য ঘুম থেকে জেগে ওঠা উষসীর চেহারা কিঞ্চিৎ ফ্যাকাশে লাগছে। তার বড় বড় দুই চোখে কাজলটা দারুণভাবে মানিয়ে গেছে। এতো সুন্দর কেন এই রমণী? ইমন প্রচন্ড মিস করছিল উষসীকে। তাই তৃষাণ বলা মাত্রই পরিবার নিয়ে অনতিবিলম্বে চলে এসেছে।

উষসী ইমনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না। তার মন ভেঙে গেছে। কেমন বিষাক্ত একটা অনুভূতি হচ্ছে। এতোদিন তো সে ভুলেই গেছিল নিজের বিয়ের কথা। ইমনকে দেখে আবার তা মনে পড়েছে। ইমন যেন তার সুখময় স্বপ্নের জগতে দুঃখ হয়ে ঢুকে গেছে। উষসী সেটা মেনে নিতে পারছে না। সে পিছিয়ে এলো। তারপর হঠাৎ দৌড়ে চলে গেল।

ইমন তার আচরণ দেখে কিছুটা বিস্মিত। কিছু একটা ভেবে সে হেসে ফেলল। উষসী এতোদিন পর দেখা হওয়ায় লজ্জা পেয়েছে হয়তো। গিটার হাতে নিয়ে গান গাওয়ার ভং ধরল ইমন,” তুমি এসেছিলে পরশু… কাল কেন আসোনি.. আমায় ভালোবাসোনি!”

উষসী পাগলের মতো ছুটে ঘরের দিকে যাচ্ছিল তখনি ধাক্কা খেল কারো সাথে। সামনের মানুষটি নরম গলায় বলল,” আরে, সাবধানে!”

উষসী উপরে চাইতেই ইয়ামিনের মুখ দেখল। সাথে সাথেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। ইচ্ছে করল ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলতে। ইয়ামিন অবাক হয়ে বলল,” কি ব্যাপার?”

উষসী চোখের জল মুছতে মুছতে প্রশ্ন করল,” আপনি কেমন আছেন?”

” ভালো… কিন্তু তোমার কি হয়েছে? চোখে পানি কেন?”

” স্বপ্ন ভেঙে গেলে চোখে পানি তো আসবেই।”

এই কথা বলে উষসী হাসল। কিন্তু বুকের চিনচিনে সূক্ষ্ম ব্যথাটা যেন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ইয়ামিনকে সে কোনোদিনও পাবে না এই কথা ভাবতেই পৃথিবী অর্থহীন মনে হচ্ছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না উষসী। তার হাউমাউ করে কান্না পাচ্ছে। দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা আটকালো। তার হাব-ভাব কিছুই বুঝল না ইয়ামিন। কিন্তু সে খুব একটা ভাবলও না এই নিয়ে। তার চোখ দু’টো উষ্ণতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই কখন থেকে!

আজ উষসীর এংগেজমেন্ট হবে। ইমনের পুরো পরিবার এসেছে। বাড়িতে বিরাট হৈচৈ বেঁধে গেল। যুথি বেগম মহাভোজের আয়োজন শুরু করেছেন। তৃষাণ বাড়ি ফিরেছে ইমনদের সাথে নিয়ে। এই সব কিছু তারই পরিকল্পনা। সে অনুপমাকে আদেশ দিল উষসীকে নিয়ে পার্লারে যেতে। অনুপমা ক্ষীণ গলায় বলল,” উষসী তো ইমনকে দেখার পর থেকেই কাঁদছে।”

তৃষাণ গম্ভীর গলায় বলল,” কাঁদুক। এই সময় মেয়েরা একটু-আধটু কাঁদেই। তোমাকে যা বলা হয়েছে তাই করো।”

উষ্ণতা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,” আমার বোন কাঁদলে তোমার কোনো সমস্যা নেই, তাই না? ”

তৃষাণ শান্ত গলায় বলল,” আমাকে ভুল বুঝো না উষ্ণ। আমি ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি ভালো করেই জানো উষসী কখনও আমার শালিকা ছিল না, সে সবসময় আমার ছোটবোন। আর আমি আমার বোনের জন্য কখনও খারাপ সিদ্ধান্ত নিবো না।”

” তাই?” উষ্ণতা তাচ্ছিল্য হাসল। উত্তপ্ত কণ্ঠে বলল,”তুমি শুধু নিজের মান-সম্মানের কথা ভাবছো। সেজন্য উষুর জীবন নষ্ট হলে হোক, তোমার কি? ”

” মানে?” তৃষাণ সামান্য অবাক হলো উষ্ণতার কথায়।

উষ্ণতা ক্রোধান্ধ কণ্ঠে বলল,” তুমি টক্সিক গার্ডিয়ানের মতো আচরণ করছো তৃষাণ। উষু বিয়েতে রাজি না এইটা জানার পরেও তুমি কিভাবে ওদের এইখানে নিয়ে এলে? হোয়াটস রং উইদ ইউ? তুমি কি চাও?”

তৃষাণ প্রশমিত গলায় বলল,” আমি শুধু সবার ভালো চাই।”

” ভুল। তুমি শুধু নিজেকে উপরে রাখতে চাও। বিয়ের কথা হয়ে যাওয়ার পর তা ভেঙে গেলে ওদের কাছে তোমার সম্মান নষ্ট হবে। সেজন্য উষসীর মত নেই জানার পরেও জবরদস্তি ওকে এংগেজমেন্ট করাতে চাইছো। আমি এটা মানবো না। এই এংগেজমেন্ট হবে না। যেভাবে পারো ওদের বিদায় করো। ”

” বিদায় করবো?” তৃষাণ হতবাক। উষ্ণতা রোষ সিক্ত কণ্ঠে বলল,” অবশ্যই করবে।”

তৃষাণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” সম্ভব না। আজকেই এংগেজমেন্ট হবে।”

” তুমি যা চাও তাই হবে নাকি? আমার বোনের জীবনের সিদ্ধান্ত তুমি নিবে?”

তৃষাণ হতভম্ব হয়ে তাকাল,” তোমার বোন মানে? উষসী শুধু তোমার বোন? আমার কেউ না!”

উষ্ণতা মুখের পেশি শক্ত করে উত্তর দিল,” তোমার কাছে আমার বোনের মতামতের কোনো মূল্য নেই, তুমি ওর কেউ না।”

তৃষাণ অনেকটা আহত হলো। রাগান্বিত ভঙ্গিতে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,” তোমার বোন কি নিজের ভালো বুঝে? সেই বয়স হয়েছে ওর? তাহলে ওর মতামতের গুরুত্ব কেন দিবো আমি?”

” ও না বুঝলেও আমি তো বুঝি। আমি চাই না যে ইমনের সাথে বিয়ে হোক।”

” কেন? ইমনের মধ্যে খারাপ কি আছে? জাস্ট একটা নেগেটিভ সাইড দেখাও। আমি এখনি বিয়ে ভেঙে দিবো।”

উষ্ণতা চুপ করে রইল। তৃষাণ কাছে এসে কিড়মিড় করে বলল,” আসল প্রবলেম হচ্ছে ওই ইয়ামিন ইব্রাহীম। তাই না?”

” উষসীর যদি তাকেই পছন্দ হয় তাহলে তোমার কি প্রবলেম?”

” আমার অনেক বড় প্রবলেম।” তৃষাণ চেঁচিয়ে উঠল। উষ্ণতা সামান্য হকচকিয়ে গেল তার আচরণে।

তৃষাণ ক্রোধসিক্ত কণ্ঠে আওড়াল,” এই ব্যাপারে কথা এখানেই শেষ। আর ভুলেও ইয়ামিনের নাম যেন তোমার মুখে না শুনি আমি। ”

উষ্ণতা জেদ নিয়ে বলল,” শুনলে কি করবে তুমি?”

” আমি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো।”

উষ্ণতা আশ্চর্য হয়ে গেল। বিস্মিত গলায় বলল,” তুমি এমন কেন করছো তৃষাণ? জোর করে উষুর বিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তোমার জেদের জন্য আমি আমার বোনের জীবন নষ্ট করব নাকি? ইয়ামিনকে তোমার পছন্দ হয়নি বুঝলাম। কিন্তু ইমনকেও তো আমার পছন্দ হয়নি। তাও কেন তুমি জোর করে…”

উষ্ণতাকে থামিয়ে তৃষাণ প্রশ্ন করল তীব্র কণ্ঠে,” ইমনকে তোমার কেন পছন্দ হয়নি? কারণ দেখাও।”

উষ্ণতা এবার পাল্টা প্রশ্ন করল,” ইয়ামিনকে তোমার কেন পছন্দ হয়নি? আগে সেই কারণ দেখাও।”

তৃষাণ কিছু বলতে না পেরে রেগে ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে পারফিউমের বোতল ধাক্কা মেরে ভেঙে ফেলল। উষ্ণতা কেঁপে উঠল। তৃষাণও কাঁপছে রাগে। হঠাৎ কি হলো তার? বাইরে থেকে উঁকি দিল ইমনদের সাথে আসা কাজের মেয়েটি। উষ্ণতার মুখ অপমানে থমথম করছে। কি ভাববে এখন সবাই? তৃষাণ সামান্য বিষয় নিয়ে এমন সিন ক্রিয়েট না করলেও পারতো। রাগে উষ্ণতা ঘর থেকে বের হয়ে গেল। তৃষাণ হতাশ ভঙ্গিতে বসল সোফায়। উষ্ণতাকে সে একদম রাগাতে চায়নি। একবার যদি কোনো কারণে উষ্ণতা রেগে যায় তাহলে সেই রাগ ভাঙাতে খুব কষ্ট হয়।

উষসীর গাঁয়ে চমৎকার লাল রঙের একটা শাড়ি। হাতে লাল চুড়ি, কানে দুল, গলা খালি কিন্তু মাথায় ছোট্ট একটা টিকলি। ন্যাচরাল মেকাপে উষসীকে একটু অন্যরকম লাগছে। তবে দারুণ সুন্দর লাগছে। উষসী এমনই একটা মেয়ে যাকে বিনা প্রসাধনীতেও রাজকন্যা লাগে। ইমন উষসীর বেডরুমে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। উষসী নিজেই তাকে ডেকেছিল। কিন্তু এখন কোনো কথা বলছে না সে। ইমন বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে এক পর্যায় অধৈর্য্য গলায় বলল,” আপনার কি মনখারাপ?”

উষসীর শান্ত, স্থির দৃষ্টি জানালার দিকে। ইমনের প্রশ্ন সে শুনেছে কি-না বোঝা গেল না। তবে এতোক্ষণ পর কিছু একটা বলল, ” আচ্ছা, আপনি কখনও কাউকে ভালোবেসেছেন?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে ইমন একটু অপ্রস্তুত হলো। কলেজ লাইফে তার একটা প্রেম ছিল বটে। কিন্তু একসময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। হবু বউয়ের সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করতে সংকোচ লাগছে ইমনের।

উষসী হঠাৎ তার প্রেমের বিষয়ে জানতে চাইল কেন? ইমন হ্যাঁ বা না উত্তর দেওয়ার আগেই উষসী বলে উঠল,

” ভালো করে ভেবে বলবেন। প্রেম আর ভালোবাসা দু’টো ভিন্ন জিনিস। প্রেম সবার জীবনেই হয়তো আসে। কিন্তু ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য সবার হয় না! প্রেমের সম্পর্কগুলো হয় ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ভালোবাসা হলো এমন এক অনুভূতি যা একবারই হয় এবং চিরস্থায়ী ভাবে হয়। যার হয়, তার সবকিছু বিনাশ করে ছাড়ে। ছাড়খাড় করে নিঃশেষ বানিয়ে দেয়। এমনকি তাতেও ক্ষান্ত হয় না। যতদিন মানুষটি বেঁচে থাকে ততদিন পুড়ে যাওয়া হৃদয় ভালোবাসা নামক অগ্নিদাহে জ্বলতেই থাকে। আর সবচেয়ে অবাক কান্ড কি জানেন? কোনো জিনিস পুড়ে গেলে জ্বলে যায়। কিন্তু ভালোবাসায় যে মন পোড়ে তা কখনও জ্বলে যায় না বরং খাঁটি হয়। যে হৃদয় যত ভালোবাসার দহন সহ্য করতে পারে সেই হৃদয় তত খাঁটি!”

নিজের থেকে কমপক্ষে দশ বছরের ছোট মেয়েটির মুখে এমন ভারী ভারী কথা শুনে স্বভাবতই ইমনের ভ্রু খানিক কুচকে গেল। উত্তর দেওয়ার জন্য শব্দ পেল না সে। মুহুর্তেই এলোমেলো হয়ে পড়ল।মেয়েটা হঠাৎ এমন সিরিয়াস কথা কেন বলছে? অনেক হম্বিতম্বি করে ইমন শেষমেষ জিজ্ঞেস করল,” আপনি কি কাউকে ভালোবেসেছেন?”

উষসী মুচকি হাসল৷ তার নজর তখনও জানালার দিকে। ওইতো করিডোরে ইয়ামিনকে দেখা যাচ্ছে। তার কানে ফোন। উষসী তার চোখে মুগ্ধতা আর কণ্ঠে আক্ষেপ মিশিয়ে বলল,” ভালোবাসা এমন এক জিনিস, যা সৌভাগ্য এবং দূর্ভাগ্য দু’টোই বয়ে আনে। তবে আমার ক্ষেত্রে দূর্ভাগ্যের পাল্লাটা একটু বেশিই ভারী।”

” এ কথা কেন বলছেন? আপনি কাকে ভালোবাসেন?”

উষসী আবারও হাসল। ওর হাসিটা এতো আশ্চর্য সুন্দর কেন? ইমন বার-বার আটকে যাচ্ছে ওই অলীক সৌন্দর্য্যে। ওই ঠোঁটে, চোখে, মুখে!

” কাকে ভালোবাসি সেটা বড় কথা না। কতটা ভালোবাসি সেটাই বড় কথা। আমার ভালোবাসার পরিমাণ যত, আপনার পরিশ্রমও তত। যতদিন না আমার মনে গড়ে উঠা এই অনুভূতির পাহাড় আপনি টলাতে পারছেন ততদিন আমি আপনার হবো না। হয়তো আমার শরীর আপনার কাছে থাকবে কিন্তু মনের অস্তিত্ব আপনি খুঁজেও পাবেন না।”

উষসীর চোখ টলমল করছে। সে মনের ব্যথায় সিক্ত হয়ে বলল,” তবে আপনার কাছে যদি পাওয়া মানে শুধুই শারীরিক চাহিদা হয় তাহলে ভিন্ন কথা! আমি নির্দ্বিধায় নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিতে রাজি।”

এই কথার পর কোনো সত্যিকারের পুরুষ হয়তো প্রতিবাদ না করে থাকতে পারবে না। ইমনও প্রতিবাদ করল। দুর্ধর্ষ প্রতিবাদে তার কণ্ঠ গর্জে উঠল,” আমার কাছে বিয়ে মানেই শুধু শারীরিক চাহিদা না উষসী। যাকে আমি বিয়ে করবো সে হবে আমার অর্ধাঙ্গিনী অর্থাৎ আমার জীবনের অর্ধেক। আমি তার মনের রাজা হয়ে রাজত্ব করবো। আর যদি সেটা না পারি, যদি সে আমাকে নিজের মনের মালিক হওয়ার সুযোগ না দেয় তাহলে আমিও তাকে মিথ্যে সম্পর্কের বেড়াজালে আটকে রাখতে চাইবো না।”

” তাই যদি হয়, তাহলে সম্মতি নেই জানার পরেও কেন আমাকে জোর করে বিয়ে করছেন?”

ইমন অপ্রস্তুত হলো। উত্তর দেওয়ার মতো কিছু পেল না। মুখ ফুটে না বললেও মনে মনে ঠিক বলল,” আপনাকে আমার অসম্ভব ভালো লেগে গেছে মিস উষসী৷ আপনার মতো মেয়েকে ভালো না বেসে থাকাই যায় না! কোনো সাধারণ পুরুষের পক্ষে এটা অসম্ভব!”

ইমন উষসীর দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু উষসীর দৃষ্টি ইয়ামিনের দিকে নিবদ্ধ।

করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল ইয়ামিন। তখনি খেয়াল করল ব্যালকনিতে উষ্ণতা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে পানি। ইয়ামিনের মনোযোগ সেদিকে আটকে গেল। ওই পাশ থেকে মিসেস শিমলা কথা বলে যাচ্ছেন,” কখন ফিরবি, বাবা? হ্যালো।”

ইয়ামিনের খেয়াল নেই মায়ের কথায়। সে অবাক হয়ে দেখছে উষ্ণতার চোখের বড় বড় ফোঁটার অশ্রু। কে কাঁদালো উষ্ণতাকে? কেন কাঁদছে উষ্ণতা? ইয়ামিনের হৃদয়ে অবাধ তোলপাড় শুরু হলো। পৃথিবীর সকল নির্মম দৃশ্য সহ্য করতে পারলেও উষ্ণতার চোখের পানি সে সহ্য করতে পারবে না।

তৃষ্ণা ইয়ামিনের হাত টেনে বলল,” শিল্পী আঙ্কেল, তোমার গিটার কই? গান বাজাবে না? এদিকে এসো। এসো না!”

ইয়ামিন তৃষ্ণাকে থামালো। তাকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল। উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন করল,” তোমার আম্মুর কি হয়েছে তৃষ্ণা? তুমি কি জানো?”

তৃষ্ণা ব্যালকনির দিকে তাকাল। একটু আগেই উষ্ণতা আর তৃষাণকে ঝগড়া করতে দেখেছিল সে। তাই ফিসফিস করে বলল,” পাপা আমার মাম্মাকে মেরেছে। এজন্য মাম্মা কাঁদছে।”

“হোয়াট?” ইয়ামিনের আহত হৃদয় আরও আহত হলো। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ক্রোধে,” তুমি শিউর? তোমার পাপা তোমার মাম্মাকে মেরেছে? ”

” হ্যাঁ। ” ইয়ামিনের চোখ দু’টো জ্বলে উঠল। বাচ্চা মানুষ নিশ্চয়ই মিথ্যা বলবে না। সে যা দেখেছে সেটাই বলছে। কিন্তু তৃষাণের সাহস কিভাবে হলো উষ্ণতার গায়ে হাত তোলার? ইয়ামিনের চোখের সাদা অংশ নিমেষেই রক্তিম হয়ে গেল। শিরা-উপশিরা কাঁপতে লাগল দূর্দমনীয় রাগ আর হিংস্রতায়।

তৃষাণকে করিডোরে আসতে দেখে সে আচম্বিতে আক্রমণ করে বসল। দুই হাতে তৃষাণের কলার ধরে তাকে টেনে নিয়ে গেল বাইরে। ভেতরে সবাই ইমন আর উষসীর এংগেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। এই ঘটনা কেউ দেখল না। বাইরে এসেই তৃষাণ ইয়ামিনকে ধাক্কা মেরে সরালো। কুঁচকে যাওয়া শার্ট ঠিক করতে করতে হতভম্ব গলায় বলল,” এটা কি করছো তুমি? মাথা ঠিকাছে?”

ইয়ামিন তেড়ে এসে আবারও চেপে ধরল তৃষাণের কলার। রাগে উন্মত্ত সে। গর্জে উঠে বলল,” আপনার সাহস কি করে হয় উষ্ণতা মিসের গায়ে হাত তোলার? আপনার হাত আমি ভেঙে ফেলবো। আপনাকে আমি খু’ন করে ফেলবো।”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে