#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ১২
(অতীত)
ইয়ামিন শান্ত হতে পারছে না কিছুতেই। রুমের এই মাথা থেকে ওই মাথা পায়চারী করে যাচ্ছে সে। তার দৃষ্টি এলোমেলো, মন অস্থির! মস্তিষ্কে অসামঞ্জস্য তোলপাড়। চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। আশ্চর্যজনকভাবে চোখ বন্ধ করলেই ব্যালকনিতে ঘটে যাওয়া সেই অপ্রত্যাশিত ভুলটির কথা মনে পড়ছে। যদি হাবিলদার ওয়াকিল না আসতো তাহলে কি হতো? এই প্রথম, দীর্ঘ নয়বছর পর ইয়ামিন কোনো নারীর প্রতি আকর্ষণবোধ করছে। কি অবাক কান্ড! কামলার সাথে তার পরিচয় মাত্র একদিনের। এই একদিনে কি এমন হয়ে গেল যে মেয়েটাকে এতো বেশি আপন লাগছে?
কীর্তির সাথে তো চারবছর ধরে ইয়ামিনের ফ্রেন্ডশীপ। কিন্তু কখনও তো কীর্তির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেনি সে। অথচ কীর্তি কামলার চেয়েও সুন্দরী, কয়েকগুণ আকর্ষণীয়। প্রেমে পড়ার মতো সব গুণ কীর্তির মধ্যে আছে। বরং কামলার মধ্যে এসব কিছুই নেই। কত সহজ-সরল একটা মেয়ে সে। ভীষণ সিম্পল! তাও কেন ইয়ামিন এইভাবে কামলার মোহে আটকে পড়ল? এ কেমন ফাঁদ? মুহূর্তেই উত্তরটা পেয়ে গেল ইয়ামিন। উষ্ণতা! সে ছাড়া এই আকর্ষণের অন্যকোনো কারণ নেই।ইয়ামিন আসলে কামলার মধ্যে উষ্ণতাকে পেতে চেয়েছে। যা কোনোভাবেই সম্ভব না।
মুম্বাই থাকা অবস্থায় ইয়ামিন তার বিশাল ফ্ল্যাটে যেখানে সে একাকিত্ব নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছে, এমন কোনো মুহুর্ত তৈরী হয়নি যখন তার উষ্ণতার কথা মনে পড়েনি। এইযে তার কণ্ঠের এতো সুর, শুধুই উষ্ণতার জন্য। তার প্রতিটি প্রেমের গান উষ্ণতাকে উৎসর্গ করে লেখা। তার আবেগ-অনুভূতি সবকিছুতে শুধু উষ্ণতার রাজত্ব।
ইয়ামিনের এতোবড় ক্যারিয়ারের পেছনেও উষ্ণতার অবদান মুখ্য। সে কিভাবে এতোবড় সিংগার হয়ে গেল? কেন মুম্বাই আসল? উষ্ণতার জন্যই তো! উষ্ণতার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর হৃদয়ের অসহ্য কষ্ট এড়াতে সে পড়াশুনার জন্য আমেরিকা চলে গিয়েছিল। উষ্ণতার সাথে কখনও দেখা না হলে ভেবেছিল আস্তে আস্তে তাকে ভুলে থাকবে। কিন্তু হলো বিপরীত। সে তো উষ্ণতাকে ভুলতে পারলই না বরং উষ্ণতার স্মৃতিগুলো আরও প্রকটভাবে তার মস্তিষ্কে হানা দিতে লাগল। কল্পনায় সে উষ্ণতাকে অনুভব করতো। প্রতিটি অনুভবে উষ্ণতা তার সামনে আসতো। ম্যাডাম হয়েই তাকে ধমকাতো, বোঝাতো, শেখাতো।
ইয়ামিন দৈনন্দিন জীবনে, লেখাপড়ায়, কোনোকিছুতেই কনসেন্ট্রেট করতে পারছিল না। তার গিটার বাজানোর প্রতি তীব্র শখ ছোটবেলা থেকেই। মাঝে মাঝে উষ্ণতাকে ভুলতে সুরের মাঝে ডুবে থাকতো। কখনও কখনও গিটার বাজিয়ে নিজের মতো গান গাইতো। নিউইয়র্কে যেই ছোট্ট ফ্ল্যাটে সে থাকতো সেখানে তার আশেপাশে বেশিরভাগ ছিল ইন্ডিয়ানরা। ইয়ামিন প্রায় প্রতিরাতেই ব্যালকনিতে বসে গিটারে গান করতো। সে গাইতো চোখ বন্ধ করে, উষ্ণতার স্মৃতিমন্থন করতে করতে। যখন গাইতো, তার দুইচোখের কিনারা দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হতো। সেই অশ্রুময় বৃষ্টি শুকিয়ে চেহারায় দাগ রেখে যেতো। তাও ইয়ামিনের ঘোর কাটতো না৷ সে আপনমনে গাইতো।
কখনও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে, কখনও বা মৃদু সুরে ভীষণ নীরবে! তার ইন্ডিয়ান প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন ইনফ্লুয়েন্সার ছিল। সে ওই গান ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপ্লোড করে দিয়েছিল ইয়ামিনের অজান্তেই। রাতারাতি ফেমাস হয়ে গেল ইয়ামিন। রাস্তায় বের হলেই দুয়েকজন তার সাথে সেলফি তুলতে চাইতো। প্রথম প্রথম ইয়ামিন পাত্তা দিল না। তখনও আসল ঘটনা জানতো না সে। জানার চেষ্টাও করেনি।
তারপর একদিন ভার্সিটির প্রোগ্রামে বন্ধুরা তাকে অনুরোধ করেছিল বাংলা গান শোনাতে৷ আবদ্ধ ঘরে নিজের মতো গান গাওয়া আর বাইরে এতো মানুষের মধ্যে গান গাওয়া;তফাৎ অনেক! তবুও ইয়ামিন সবার অনুরোধ রক্ষার্থে গান গেয়েছিল। সেই গানের জন্য ভার্সিটির ডিরেক্টর নিজের অফিসরুমে ডেকে নিয়ে তাকে পুরষ্কৃত করেছেন।
সেদিন থেকেই ইয়ামিনের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আরও বাড়ে তার পরিচিতির প্রচার,প্রসার। তারপর হঠাৎ একদিন মুম্বাই থেকে একজন মিউজিক ডিরেক্টর ইয়ামিনকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যাসেজ করে। তখন ইয়ামিন মোটামুটি জনপ্রিয় মুখ। ইয়ামিন ইব্রাহীম বলতেই অনেকে চিনে ফেলে! বিশেষ করে সুন্দর চেহারার জন্য মেয়েদের মধ্যে তাকে নিয়ে বেশি মাতামাতি ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো তোলপাড়ের ঝড় তুলেছিল তরুণীরা।
সবাই জানে ইয়ামিনের একটা ‘সিকরেট লাভ’ আছে। কিন্তু কে সেই ভাগ্যবতী নারী তা সবার কাছেই ধোঁয়াশা। ইয়ামিন যত জায়গায় এই পর্যন্ত ইন্টারভিউ দিয়েছে সব জায়গায় এই প্রশ্নটির সম্মুখীন তাকে অবশ্যই হতে হয়েছে। কিন্তু ইয়ামিন ব্যাপারগুলো খুব কৌশলে এড়িয়ে যেতো। তাই বিষয়টা নিয়ে মানুষের আগ্রহেরও সীমা নেই। যাদের সাথেই ইয়ামিন কাজ করেছে, প্রায় সবাই ইয়ামিনকে সর্বপ্রথম এই প্রশ্নটি করেছে। কে মেয়েটি? ইয়ামিনের এমন কোনো কো-আর্টিস্ট নেই যে ইয়ামিনকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেনি।
শুধুমাত্র কামলা ব্যতিক্রম। এই মেয়েটির আসলে সবকিছুই অন্যরকম। অদ্ভুত সুন্দর! কোনো ভাণ নেই, কাউকে মুগ্ধ করার চেষ্টা নেই। সে একদম নিজের মতো। সুন্দর, সুচালো,তীক্ষ্ণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যেমনটা ছিল উষ্ণতা! এ কারণেই হয়তো আজ এতোবছর পর উষ্ণতাকে ছেড়ে ইয়ামিন অন্যকাউকে নিয়ে এতো গভীরভাবে চিন্তা করছে।
দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। ইয়ামিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল কামলা। হৃদস্পন্দন ত্বরিত হলো। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করল সে। কামলা যদি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতো তাহলেই বুঝতে পারতো ইয়ামিন তার মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো লুকানোর চেষ্টায় এমন বোকা বোকা হাসি দিচ্ছে। কামলা রুমে ঢুকে ইয়ামিনের পাশে বসতে বসতে বলল,” আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো।”
“না, ঘুমাইনি। একটা গান নিয়ে চিন্তা করছিলাম।”
” তাই? কি গান? শোনাও তো!”
হয়ে গেল না বিপদ? ইয়ামিন তো কোনো গান নিয়ে চিন্তাই করেনি। সে চিন্তা করছিল কামলার বিষয়ে।
ইয়ামিন ভ্রু কুচকে বলল,” স্পেশাল কোনো গান না! পরে শোনাবো কোনো একসময়। তুমি মনে হয় কিছু বলতে এসেছিলে?”
” হুম। মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। ওর সাথে কথাও বলতে পেরেছি। আমরা যা ভেবেছিলাম তাই। ওরা ট্যুরিস্ট। মেয়েটার থেকে যতটুকু জানলাম, সম্পর্কে ছেলেটা তার বেস্টফ্রেন্ড। ফ্যামিলির সাথে ট্যুরে এসেছিল ওরা। রাতে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে হোটেল থেকে পালিয়েছে। তারপর নাকি পাগলা ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে এই এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
” লাভ কেইস নাকি?”
” আরে না, তেমন কিছু না। শুধু ঘুরতে বেরিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়নি।”
কামলা কেমন অদ্ভুতভাবে হাসছে। ইয়ামিনের চোখের চামড়া কুচকে গেল ওর হাসি দেখে।
” তুমি হাসছো কেন?”
” একটা মজার কথা ভেবে হাসছি।”
” কি কথা?”
” মেয়েটা সেকেন্ড টাইম কেন বেহুশ হয়ে গেছিল জানো?”
” কেন?”
” তোমাকে দেখে।”
কামলা কথাটা বলেই শব্দ করে হেসে উঠল। ইয়ামিন আশ্চর্য হয়ে বলল,” আমাকে দেখে মানে?”
” মানে তোমার ম্যাড ফ্যান! তোমাকে দেখেই উত্তেজনায় বেহুশ হয়ে গেছে মেয়েটা।”
” সিরিয়াসলি?”
এইবার ইয়ামিনও হেসে ফেলল। বদ্ধ ঘরে দুই মানব-মানবীর প্রাণখোলা হাসির অমায়িক শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল।
কামলা ঠাট্টার স্বরে বলল,” ভালোই তো ফেমাস আপনি মিস্টার সিংগার! যেখানেই যাচ্ছেন ফ্যানদের কুপোকাত করে দিচ্ছেন। মেয়েরা আপনাকে দেখে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার জ্বর বাঁধিয়ে ফেলছে।”
” জ্বর কে বাঁধালো আবার?”
” নায়রা তো আপনাকে দেখার পর আর বাসাতেই এলো না। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আপনি ওকে টেনে দাঁড় করিয়েছিলেন বলে খুশিতে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছে পাগলিটা। আর এখন এই মেয়ের এই অবস্থা!”
ইয়ামিন লজ্জিত মুখে বলল,” এসব হলো ফ্যানদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, কামলা সিং! তুমি বুঝবে না।”
” হুম অনেক বেশি ভালোবাসছে মেয়েরা আপনাকে।”
এই কথা বলে আবার হাসিতে ঢুলুঢুলু হলো কামলা। ইয়ামিন অবাক হয়ে দেখছিল। ঠিক যেন উষ্ণতা হাসছে। কতদিন পর উষ্ণতাকে এতো কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে সে৷ হাসলে কামলাকে উষ্ণতার মতোই সতেজ লাগে! ইয়ামিন আবার ঘোরে ডুবে যাচ্ছে। ঘোর কাটাতে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাল। প্রসঙ্গ পাল্টাতে প্রশ্ন করল,” আচ্ছা, ছেলেটা এখন কোথায়? ওদের হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কিছু ভেবেছো?”
” হ্যাঁ। এই ব্যাপারেই তোমার সাথে কথা বলতে এসেছিলাম। ছেলেটা এখন ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুমটা আগে ভাঙুক। আর মেয়েটা তো তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে।”
ইয়ামিনের এখন কারো সাথে দেখা করতে একটুও মন চাইছে না। তাই অনিচ্ছার সুরে বলল,” এখন? তুমি কি বলেছো?”
” আমি বলেছি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো। সকালে দেখা করিয়ে দিবো।”
কামলার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে খুব আপ্লুত হলো ইয়ামিন। মুচকি হেসে বলল,” গুড। এটা ভালো করেছো।”
” ঠিকাছে তুমি তাহলে এখন রেস্ট নাও মিস্টার সিংগার! আমি যাই।”
কামলা একহাত দিয়ে ইয়ামিনের মাথার চুল ঘেঁটে দিল। আবারও মনে পড়ল উষ্ণতার কথা। ইয়ামিনের মন গলে গেল অনুভূতির উত্তাপে। কামলা চলে যাওয়ার সময় ইয়ামিন বিবশের মতো ডাকল,” উষ্ণতা মিস!”
” কি বললে?”
ঘুরে তাকাল কামলা। ইয়ামিন অপ্রস্তুত হলো। কেন এই নামে ডাকল সে? আমতা-আমতা করে খুব অপ্রয়োজনীয় একটা প্রশ্ন করে ফেলল” ওদের নাম জিজ্ঞেস করেছিলে?”
” হ্যাঁ। মেয়েটার নাম লামিয়া ইমরোজ উষসী। আর ছেলেটা প্রীতম রহমান। ওরা বাংলাদেশী।”
ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল,” মেয়েটার কি নাম বললে?”
” লামিয়া ইমরোজ উষসী৷”
ইয়ামিন হতবাক! যা ভেবেছিল তাই! মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই চেনা চেনা লাগছিল তার। কিন্তু উষ্ণতা মিসের ছোটবোন এখানে কিভাবে আসবে সেটা ভাবতে পারেনি।
কামলা বলল,” কেন কি হয়েছে?”
” না, কিছু না। তুমি বললে না মেয়েটা আমার সাথে দেখা করতে চায়? আমি দেখা করবো। ডাকো ওকে।”
” সিউর?”
” হুম।”
” ঠিকাছে, আমি এখনি ডেকে আনছি।”
চলবে
#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব ১৩
লিখা- Sidratul Muntaz
উষসীর ধারণা এই মুহুর্তে তার শুধু হাত নয়, হাতের শিরা-উপশিরাও কাঁপছে। শরীরের সব রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। সে শ্বাস নিতেও অক্ষম। মরা-মরা অবস্থায় মানুষটির সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে,, মানুষটি কি তাকে বোকা ভাবছে? কিন্তু উষসী আর কি করবে? তার যে সবকিছুই স্বপ্ন মনে হচ্ছে!
ইয়ামিন কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,” বসছো না কেন?”
ব্যালকনির গোল টেবিলের সাথে বসে আছে ইয়ামিন। তার মুখোমুখি চেয়ারটা ফাঁকা। উষসী বসছে না। ইয়ামিনের কথায় যখন তার সম্বিৎ ফিরল, তখন সে তাড়াহুড়ো করে বসতে নিয়েই চেয়ারসহ উল্টে পড়ে গেল। দেয়ালের সাথে মাথায় বারিও খেল। একহাত কপালে ঠেঁকিয়ে শব্দ করে বলল,” ইশ!”
ইয়ামিন উঠে এলো। সতর্কতার সাথে উষসীকে টেনে দাঁড় করিয়ে বলল,” বেশি লেগেছে?”
উষসী লজ্জায় দ্রুত সরে গিয়ে বলল,” না। আমি ঠিকাছি। এক্সট্রিমলি স্যরি, আমি পড়ে গেছি।”
ইয়ামিন হেসে ফেলল। তার হাসি দেখে উষসীর বুকের ধুকপুকানি এতো বেড়ে গেল যে সে কাঁপতে লাগল। ইয়ামিন বলল,” পড়ে যাওয়ার জন্য স্যরি বলছো কেন?”
উষসী বোকার মতো তাকিয়ে রইল। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা। সে শুধু ইয়ামিনকে দেখছে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে। ইয়ামিন নীরবতা কাটাতে প্রশ্ন করল,” তোমরা কি এখানে শুধু ঘুরতে এসেছো নাকি অন্যকোনো পারপাস?”
উষসীর আবেগে আপ্লুত হয়ে বলতে ইচ্ছে করল,” আমার জীবনের সমস্ত পারপাস আপনি। সবঘটনা আপনাকে নিয়ে। যদি আপনি কাশ্মীরে না আসতেন তাহলে আমারও এতো উৎসাহ নিয়ে আসা হতো না। এখন আপনার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরে নিজেকে আমার স্বার্থক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এই অবস্থায় মরে গেলেও আমার দুঃখ থাকবে না।”
উষসীর উত্তর না পেয়ে ইয়ামিন আবার বলল,”আর ইউ ওকে? দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হলে বসতে পারো। আশা করি আমার পাশে বসতে তোমার প্রবলেম নেই।”
এবার দারুণ লজ্জা পেল উষসী৷ ইশ, সে এমন গাঁধার মতো আচরণ কেন করছে? একটু স্বাভাবিক হতে কেন পারছে না? সে অপ্রস্তুত গলায় বলল,”কি যে বলেন ভাইয়া…কিসের প্রবলেম? আমি এখনি বসছি। এইতো।”
উষসী পড়ে থাকা চেয়ারটা তুলতে গেল। তখন ইয়ামিন তাকে থামিয়ে নিজেই তুলে দিল সেই চেয়ার। এবার উষসী বসল। প্রায় দম আটকে আসা কণ্ঠে বলল,” আই এম স্যরি। আমার খুব নর্ভাস লাগছে একটু।”
” খুব নর্ভাস লাগছে নাকি একটু?” ইয়ামিন প্রশ্ন করল ঠাট্টার স্বরে।
উষসী এবার হেসে ফেলল। সে একদম আঁতেল হয়ে গেছে। কথাও বলছে ভুল-ভাল। সে আসলে নিজের মধ্যে নেই। আর কোনো বোকামি করে ফেলার আগেই দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। এক নিশ্বাসে বলল,” আমি এখন যাই।”
সে দৌড়ে পালাতেই নিচ্ছিল। ইয়ামিন তার হাত চেপে ধরে বলল,” আরে থামো, আমার কথা শোনো।”
উষসী তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। তার কাঁপুনি থামছেই না। সে মনে হয় আবার বেহুশ হয়ে যাবে। ইয়ামিন কি সত্যি তার হাত ধরে আছে?
ইয়ামিন প্রশ্ন করল সাবধানে,” সবাই কেমন আছে?”
” কোন সবাই? কাদের কথা বলছেন?” উষসীর কণ্ঠ কম্পমান।
ইয়ামিন উদগ্রীব হয়ে বলল,” উষ্ণতা মিস কেমন আছে?”
” ভালো। আমরা এখানে ট্যুরে এসেছি। তৃষাণ ভাইয়া আর উষ্ণতা আপুর অষ্টম ম্যারেজ এনিভারসেরি উপলক্ষ্যে ট্যুর।”
অষ্টম ম্যারেজ এনিভারসেরি কথাটা শুনে ইয়ামিন দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল। আটবছর হয়ে গেছে উষ্ণতার বিয়ের! তাদের কয়টা বাচ্চা? ইয়ামিন জানতে চাইল,” কয়টা বাচ্চা তাদের?”
” একটাই।”
” ছেলে নাকি মেয়ে?”
” ছেলে। তৃষ্ণা নাম। সেও আপনার অনেক বড় ফ্যান।”
” তাই নাকি?”
” হুম।” উষসী লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে যাচ্ছে। ইয়ামিন তার সঙ্গে এতো কথা কেন বলছে? তার মতো সেলিব্রিটি উষসীর মতো সাধারণ মেয়েকে হাত ধরে আটকে রেখে গল্প করছে! ব্যাপারটা কেমন? উষসীর এতো আনন্দ কেন লাগছে?
” তোমরা এখানে কয়দিন থাকবে?”
উষসীর হার্টবীট বাড়ছে ক্রমশ। নিজেকে সামলে বলল,” জানি না। ঘুরাঘুরি শেষ হলেই চলে যাবো।”
” গ্রেইট! ঘোরাঘুরির জন্য কাশ্মীর ইজ ফাবিউলাস। সুইজারল্যান্ডের বিকল্প কাশ্মীর। এখানে যত ঘুরবে ততই সেটিসফ্যাকশন বাড়বে।”
ইয়ামিন কথাগুলো বলছিল অন্যদিকে তাকিয়ে। যতবার সে অন্যদিকে তাকায় ততবার উষসী ইয়ামিনের চেহারার দিকে তাকায়। কিন্তু ইয়ামিন যখনি তার দিকে তাকায় তখনি সে মাথা নুইয়ে ফেলে লজ্জায়। শরীর আচমকা কেঁপে উঠে তার। কাশ্মীরের হিমশীতল বাতাসের চেয়েও যেন অধিকতর শীতল ইয়ামিনের ওই ধারালো দৃষ্টি!
ওই অসহ্য শীতল দৃষ্টিতে চোখ রাখার স্পর্ধা উষসীর নেই। একটু পর ইয়ামিন বলল,” ঠিকাছে যাও। হ্যাভ আ নাইস ট্রিপ।”
তারপর নিজেই হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করার জন্য। উষসীর হাত এতো কাঁপছিল!নিজের হাতটা কখনও এতো ভারী মনে হয়নি। হ্যান্ডশেক করার জন্য হাতটা ওঠাল সে। ইয়ামিনের সাথে হাতের স্পর্শ লাগতেই শরীরে লজ্জারাঙা স্রোত বয়ে গেল। অসীম ভালোলাগায় মন ছেয়ে গেল! এ যে তার অতি প্রিয় মানুষের হাত!
ইয়ামিন বলল,” ও হ্যাঁ, কালকে এখানেই মিউজিক ভিডিও শ্যুট হবে। চাইলে সবাইকে নিয়ে শ্যুটিং দেখতে আসতে পারো। দেখা হবে আবার।”
ইয়ামিন কথাটা বলেছে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে। যদি এই সুযোগে উষ্ণতাকে দেখার ইচ্ছেটা পূরণ হয়। যদি দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়! যদি তার মনটা যদি একটু তৃপ্তি পায়!
এদিকে উষসীর মন খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল। ইয়ামিন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভেবে সে হাওয়ায় ভাসতে লাগল। উত্তেজনায় ঘাড় নেড়ে বলল,” আমি নিশ্চয়ই আসবো।”
হোটেল থেকে প্রীতম-উষসীকে বের হতে দেওয়া হয়নি, কিন্তু ঠিকই ঢুকতে দেওয়া হলো। গার্ড নিজে এসে মেইন গেইট খুলে দিলেন। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন,” আপনারা এতো রাতে কোথা থেকে এসেছেন?”
প্রীতম ধমক মেরে বলল,” আপনার কি দরকার? নিজের কাজ করুন।”
উষসী গটগট করে হেঁটে রুমে চলে আসছিল। পুরো রাস্তায় প্রীতমের সাথে সে একবারও কথা বলেনি। উষসীর চলে যাওয়া দেখে প্রীতম চড়া মেজাজ দেখিয়ে বলল,” স্বার্থপর! তোর জন্য আমি এতো রিস্ক নিলাম, তোকে বাঁচাতে গিয়ে পাগলা ঘোড়ার লাথি খেলাম। তাও তোর কোনো গিল্টিনেস নেই? নবাবজাদীর মতো ড্যাঙড্যাঙ করে হেঁটে চলে যাচ্ছিস! এই তোর হৃদয়টা কি ইস্পাত দিয়ে তৈরী? একবার তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারিস যে আমি কেমন আছি? আমার মাথার আঘাতের কি অবস্থা?”
উষসী চোখ রাঙিয়ে বলল,” যদি লজ্জা থাকে তাহলে আর কখনও আমার সামনে আসবি না তুই।”
এই কথা বলেই উষসী ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিল। আর প্রীতম স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইল বন্ধ দরজার সামনে বেশ কয়েকমিনিট।
উষসীর কথাটার ধাক্কা সামলাতে তাকে বেশ বেগ পেতে হলো! সে কি বিরাট কোনো ভুল করেছে? শেষমেষ কি তাদের ফ্রেন্ডশীপটাই নষ্ট হয়ে যাবে? না,না, উষসী এটা করতে পারে না। সে এখন রাগের মাথায় এসব বলেছে। কাল নিশ্চয়ই হাসিমুখে এসে প্রীতমকে স্যরি বলবে। সবকিছু আগের মতো হয়ে যাবে। উষসী হেসে হেসে আবারও বলবে,” দোস্ত, চল আমরা একসাথে হাঁটি। নে, আমার হাতটা ধর!”
প্রীতম এসব ভেবে মিথ্যামিথ্যিই নিজের মনকে সান্ত্বনা দিল।
উষসী দরজা আটকেই কাঁদতে বসে গেছে। প্রীতমকে সে ছোটবেলা থেকেই ভাইয়ের নজরে দেখে। উষসীর কাছে বন্ধু হিসেবে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসের জায়গা ছিল প্রীতম! কিন্তু সে যে উষসীকে নিয়ে মনে মনে অন্যকিছু ভাবে তা উষসী কোনোদিন কল্পনা করেনি। কোথায় যেন শুনেছিল, ছেলে আর মেয়ে কখনও ভালো বন্ধু হতে পারে না। তাহলে কি কথাটা সত্যি? কেন সবছেলে একই রকম হয়? কেন কাউকে বিশ্বাস করা যায় না? শেষমেষ প্রীতমও উষসীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করল। বন্ধুত্বের মতো সুন্দর একটা সম্পর্ক এইভাবে নষ্ট করল!
সারারাত ঘুম হলো না উষসীর। সে বারান্দায় আকাশের দিকে চেয়ে পুরো রাত্রি পার করল। বিছানায় ডোনা, যুথি আর তৃষ্ণা জড়াজড়ি করে ঘুমাচ্ছিল। শীতের রাতে ঠান্ডা বাতাসে উষসীর শরীর বরফের মতো জমে যাচ্ছিল। কিন্তু হৃদয়ের উত্তাপের কাছে শারীরিক এই শীতের অত্যাচার বিশাল কিছু মনে হলো না। ভোরে যখন সবার ঘুম ভাঙল, উষসী তখন জ্বরে কাতর। কেঁপে কেঁপে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। জ্বরের ঘোরে কথাও বলা যাচ্ছে না। অথচ সবাই তখন ঘুরতে বের হবে।
আজকের প্ল্যান পেহেলগাম ভ্রমণ। কিন্তু উষসী তো বিছানা ছেড়েই উঠতে পারছে না। উষ্ণতা বোনের এই অবস্থা দেখে ট্রিপ ক্যান্সেল করতে চাইল। কিন্তু উষসী বলল,” প্লিজ আপু, আমার জন্য তোমাদের আনন্দটা মাটি করো না। তোমরা ঘোরাঘুরি করো। কাশ্মীর ইজ ফাবিউলাস। সুইজারল্যান্ডের বিকল্প কাশ্মীর। যত ঘুরবে তত স্যাটিসফ্যাকশন বাড়বে। আর না ঘুরলে আফসোস। ”
উষ্ণতা ধমক মেরে বলল,” তুই চুপ করতো। আমার বোনের এই অবস্থা আর আমি ঘুরতে যাবো? এটা কিভাবে হয়?”
” মা তো থাকবে আমার সাথে। ডোনা আন্টিও আছেন৷ তাছাড়া আইলা কান্নাকাটি করছে। তৃষ্ণাও সকাল থেকে বের হওয়ার বায়না করছে। আমার জন্য ওদের আনন্দ নষ্ট হোক এটা আমি চাই না। প্লিজ তোমরা যাও। নাহলে আমার খারাপ লাগবে।”
” তুই সুস্থ হলে আমরা সব জায়গায় ঘুরবো।”
” আমি সুস্থ হলেও তোমাদের সাথে যাবো না আপু।পেহেলগাম আমার পছন্দ না। বরফের মধ্যে হাঁটতে বিশ্রী লাগে। যেদিকেই তাকাই শুধু সাদা পাহাড়।”
উষ্ণতা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলল,” তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এতো সুন্দর জায়গা বিশ্রী বলছিস?”
তারপর সে উষসীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” পাগলি একটা! আমাদের পাঠানোর জন্য এসব বলছিস তাই না?”
” বুঝতেই যখন পারছো তাহলে বসে আছো কেন? যাও।”
” আচ্ছা যাবো। এখন বল তোর জন্য কি আনবো?”
” একটা কিউট দেখে আইসম্যান নিয়ে এসো।”
উষসী হেসে ফেলল। একটু পরেই তৃষাণ ঘরে ঢুকল। উষ্ণতা বলল,” দেখো তোমার শালিকা কি বলে। আমরা নাকি ওকে রেখেই ঘুরতে চলে যেতাম।”
” কেন? গেলে সবাই একসাথেই যাবো। আমাদের এতো তাড়া নেই। তুমি সুস্থ হও আগে উষু।”
” সমস্যা নেই তৃষান ভাইয়া। আমি মা আর আন্টির কাছে ভালো থাকবো। তোমরা ঘুরে এসো।”
তৃষান উষ্ণতার দিকে তাকালো,” তুমি কি বলো?”
উষ্ণতা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” তোমার ইচ্ছা!”
তৃষান কাছে এসে বসল উষসীর। মাথায় হাত রেখে বলল,” জ্বর কেমন?”
” এখন একটু ভালো লাগছে। তবে বাইরে গেলে অবস্থা খারাপও হতে পারে।”
” এটা ঠিক বলেছো। তোমার বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না। আজকে অনেক ঠান্ডা।”
” এজন্যই তো বলছি। তোমরা যাও না। আমার সামনে মুখ ভোঁতা করে বসে থাকার চেয়ে ভালো ইঞ্জয় করো।”
” শিউর?”
” একদম শিউর।”
” ঠিকাছে, তুমি একা থাকতে পারলে আমাদের প্রবলেম নেই। মা আর আন্টি তো আজকে এমনিতেও বের হবে না। একদিন ঘুরেই তাদের অবস্থা খারাপ। আমাদের আজ ফিরতে রাত হবে। অথবা নাও ফিরতে পারি। পেহেলগামে রাতে থাকতে হবে পারে। অসুবিধা নেই তো?”
উষসী মিষ্টি হেসে বলল,” কোনো অসুবিধা নেই।”
” ওকে। সাবধানে থেকো। আর কোনো প্রবলেম হলে ফোন করো। বাহিরে বের হওয়ার দরকার নেই। হোটেলের ভেতরেই আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়ে যাচ্ছি। সময়মতো খাবার পেয়ে যাবে। আর কিছু দরকার হলে আব্দুল নামের একজন ম্যানেজার আছে। ওকে ডাকবে।”
“ঠিকাছে ডাকবো।”
তৃষাণ যাওয়ার আগে আবারও রিমাইন্ডার দিল,” হোটেলের বাহিরে কিন্তু একদম বের হবে না উষু।”
উষসী বিরক্ত কণ্ঠে বলল,” এই অবস্থায় আমি কেন বের হবো তৃষাণ ভাইয়া? আর আমি কি আশেপাশের কিছু চিনি যে একা একা বাইরে যাব? এতো সাহস নেই আমার।”
তৃষাণ মনে মনে হাসল। উষসীর মিথ্যে বলার কৌশল সে জানে। মেয়েটা নিজেকে খুব চালাক মনে করে। এটাই তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা! গতরাতে তারা কয়টায় বাড়ি ফিরেছিল সেই সম্পর্কে তৃষাণ অবগত। অনেক আগেই তার খোঁজ নেওয়া হয়ে গেছে। প্রীতমের মাথার ব্যান্ডেজ দেখেই সে সন্দেহ করেছিল।
আজকে ব্রেকফাস্টের সময় তৃষাণ যখন প্রীতমকে ব্যান্ডেজের কথা জিজ্ঞেস করল, তখন প্রীতম বলেছে সে বাথরুমে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেছে। তারপর মাথায় আঘাত পেয়েছে। হোটেল থেকে তাকে ফার্স্ট এইড বক্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তৃষাণ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে এমন কিছুই হয়নি। বরং কালরাতে প্রীতম আর উষসী হোটেল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিল। যখন তাদের বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো না, তখন তারা অন্য ব্যবস্থা করে দেয়াল টপকে পালিয়ে বের হয়েছিল।
সিসিটিবি ফুটেজও চেক করেছে তৃষাণ। এখন সে বাইরে বের হলে সর্বক্ষণ হোটেলে নজরদারি করবে। উষসীর যদি ভিন্ন পরিকল্পনা থাকে তাহলে তৃষাণ সেটা অনায়াসে জেনে যাবে। তাই উষসী যতই মিথ্যে বলুক, লাভ নেই। ধরা তো সে পড়বেই!
সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর উষসীর নিজেকে মুক্তপাখি মনে হলো। এখন সে যা ইচ্ছা করতে পারে। তার জ্বর নিমেষেই উধাও হয়ে গেল!সে ইয়ামিনের গেস্ট হাউজে যাবে শ্যুটিং দেখতে৷ ইয়ামিন তাকে কত মিষ্টি করে আমন্ত্রণ জানিয়েছে! সে কি না গিয়ে থাকতে পারে?
লাঞ্চের পর ডোনা আর যুথি গল্প করতে করতে যখন ভাতঘুমে ঢুলে পড়লেন তখন উষসী চুপিচুপি বাইরে বের হওয়ার জন্য তৈরী হয়ে গেল। সবচেয়ে সুন্দর নীল রঙের শাড়িটা বের করে পরল।
তার একটা দারুণ রাণী গোলাপী রঙের ব্লেজার আছে। শাড়ির সাথে ব্রেজারটা বেশ মানিয়ে গেল। মাথায় পরল নীল কানটুপি। চুলগুলো ছেড়েই রাখল। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিল। আর নিজের রূপে নিজেই মুগ্ধ হয়ে আয়নাতে অসংখ্যবার উড়ন্ত চুমু দিয়ে বলল,” মাশাল্লাহ!”
ব্লেজারের পকেটে হাত গুঁজে বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে উষসী বাইরে বের হতে যাচ্ছিল। কিন্তু বাঁধ সাধলেন হোটেলের ম্যানেজার আব্দুল ভাই। বিশ্রী আরশোলার মতো চেহারা নিয়ে প্রশ্ন করলেন,” কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম?”
উষসী বলল,” বের হচ্ছি।”
” কেন বের হচ্ছেন? কিছু লাগলে আমাকে বলুন?”
” কিছু লাগবে না। শুধু আপনি আমার সামনে থেকে সরুন।”
লোকটি সরল না। উষসীর সামনে বেরিকেডের মতো দাঁড়িয়ে থেকে বলল” স্যরি ম্যাডাম। আপনি এভাবে বের হতে পারবেন না।”
” মানে?”
” স্যারের নিষেধ আছে। আপনি পাঁচমিনিট ওয়েট করুন। আমি স্যারের থেকে পারমিশন নিয়ে তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।”
” এক্সকিউজ মি, কোন স্যার? কার এতোবড় সাহস যে আমাকে বের হতে নিষেধ করে?”
” তৃষাণ স্যার নিষেধ করেছেন ম্যাডাম।”
উষসীর পিলে চমকে উঠলো। তৃষাণ ভাই? মুহূর্তেই শরীর তিরতির করে কাঁপতে লাগল। আব্দুল তৃষাণের সাথে দুইমিনিট ফোনে কথা বলে এসে উষসীকে জানাল,” আই এম স্যরি ম্যাম। স্যার আপনাকে ঘরে আটকে রাখতে বলেছেন। আমার কিছু করার নেই।”
উষসী অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। রাগে-দুঃখে কিছু বলতে না পেরে ঘরে চলে এলো। তার এখন ইচ্ছে করছে দরজা আটকে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে।
চলবে