#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব- ৮
লিখা: Sidratul Muntaz
তৃষাণ তার বাবার মৃ-ত্যুর পর বাবার অফিসেই এমডি হিসেবে জয়েন করেছে। কিন্তু সে নিয়মমাফিক জীবন পছন্দ করে না। চলতে চায় মুক্ত-স্বাধীনভাবে৷ ব্যবসা-বাণিজ্যও তার পছন্দ না। প্রথমে ইচ্ছা ছিল কোনো রেপুটেড ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার পদে জয়েন করবে। শত শত স্টুডেন্ট তার কথা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকবে৷ সে নিজের হাতে গড়ে দিবে লক্ষ লক্ষ ছাত্রের ভবিষ্যৎ। ভাবতেই ভালো লাগতো। তৃষাণ লেকচারার হওয়ার অফারও পেয়েছিল। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে এতোবড় কোম্পানীর মালিক হয়ে গেছে। সে ছাড়া আর কেউ নেইও যে এসব দেখাশুনা করবে। তাই নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বাবার স্বপ্নের হালটাই ধরতে হয়েছে। মাঝখান থেকে উষ্ণতা হয়ে গেছে ইউনিভার্সিটির লেকচারার। তৃষাণ তবুও আনন্দিত। সে যেটা পারেনি তার অর্ধাঙ্গিনী সেটা পেরেছে।
তৃষাণ অফিসে থাকা অবস্থায় সচরাচর উষ্ণতা কখনোই ফোন করে না। লাঞ্চের সময় একবার করে। বাড়ি ফেরার আগে কিছু দরকার হলে তখন একবার করে। এছাড়া প্রতি ঘণ্টায় তৃষাণই উষ্ণতাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতে থাকে। তবে আজ ঘটনা একটু অন্যরকম হলো। উষ্ণতা নিজে থেকেই ফোন করল তৃষাণকে।
” হ্যালো, মাই ডিয়ার হাসব্যান্ড!কি করছেন?”
” আপনার কথা চিন্তা করছি মাই ডিয়ার ওয়াইফ।”
” সত্যি?”
” একদম সত্যি। তারপর বলুন তো, হঠাৎ আমার প্রতি এতো দয়া হলো আপনার? নিজে থেকে ফোন করলেন?”
” ফোন করেছি আপনার ঘাড়ত্যাড়া ছেলের জন্য।”
” ছেলে আবার কি করল?”
” আজ ফাহাদ ভাইয়ের ছেলে ইউশানের বার্থডে না? সন্ধ্যায় পার্টি। আমাদের ফুল ফ্যামিলিকে যেতে বলেছে। এখন তোমার ছেলে মিনিসো’তে যাবে ইউশানের জন্য গিফট কিনতে। তাই কান্নাকাটি করছে।”
” মিনিসো’তে? মাত্র বিশমিনিটের রাস্তা। নিয়ে যাও না।”
” এতো সিম্পল? নিয়ে যাও বললেই হলো? দেখতে হবে না কার ছেলে? নাম্বার ওয়ান ঘাড়ত্যাড়া। সে শুধু বাবার সাথেই যাবে। কান্নাকাটি করে চোখ-মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। এখন আসো তাড়াতাড়ি বাসায়, ছেলেকে মিনিসো’তে নিয়ে যাও।”
” ওকে! আমি ভাবছি আজকে ফুল ডে অফ নিয়ে নিবো। কি বলো?”
” ও। তা ফুল ডে অফ কার থেকে নিবে শুনি? তোমার উপরেও কি আরেকজন বস আছে নাকি?”
” অবশ্যই আছে। তুমিই তো আমার বস।”
” ইশশ ঢং! দ্রুত বাসায় এসো। ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ঘর-বাড়ি উড়িয়ে ফেলছে। রাখি।”
ফোন রাখার আগ-মুহুর্তে উষ্ণতার কণ্ঠে আনন্দ ঝরে পড়ছিল। তৃষাণ ফোন রেখেই হেসে ফেলল।
ভরাট সন্ধ্যা। সবাই তৈরী হয়ে একে একে নিচে নামছে। তৃষাণ গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে অপেক্ষায় ছিল। উদ্দেশ্য আজ ইউশানের বার্থডে পার্টি এটেন্ড করা। সবার শেষে আইলাকে কোলে নিয়ে নামল অনুপমা। বাকি সবাই গাড়িতে উঠে গেছে। পেছনে ডোনা আর উষসী বসেছে। উষসীর কোলে তৃষ্ণা। চাপাচাপি করে উষ্ণতা আর অনুপমাও সেখানে বসবে। আহমেদ থাকবে তৃষাণের পাশে। উষ্ণতা এখনও নামেনি। তৃষাণ অধৈর্য্য হয়ে অনুপমাকে বলল,” উষ্ণতা কোথায় অনু?”
” ভাবী তো আমার সাথেই নামছিল। হঠাৎ আবার কেন যেন উপরে চলে গেল। ভাবীর মনে হয় শরীর খারাপ লাগছে। ”
” বলো কি?”
তৃষাণ সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে গেল। তারপর দ্রুত বাড়িতে ঢুকল। বেডরুমে আসতেই দেখল উষ্ণতা মাথায় হাত রেখে বিছানায় বসে আছে। তৃষাণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উষ্ণতার দিকে তাকাল। তাকে চমৎকার দেখাচ্ছে। এশ কালার শাড়ি পরেছে সে। সাথে চকচকে এশ কালার ব্লাউজ। চোখে দারুণভাবে গ্লিটার আইশেড লাগিয়েছে। আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। উষ্ণতা কি পার্টি এটেন্ড করতে যাচ্ছে নাকি দুনিয়ার মানুষের হোশ উড়াতে যাচ্ছে? পাতলা শাড়ি ভেদ করে মেদহীন ফরসা পেট ঝিলিক দিচ্ছে। যা দেখে তৃষাণের নিজেরই মাথা ঘুরে যাচ্ছে। অন্যদের কি অবস্থা হবে কে জানে? উষ্ণতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে আঠাশ বছর বয়সী এক বাচ্চার মা। মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। বয়স সবে তেইশ কি চব্বিশ!
তৃষাণকে দেখেই উষ্ণতা বলল,” ভালোই হয়েছে তুমি এসেছো। শোনো না,আমার মাথা অনেক ব্যথা করছে। এতো অসহ্য যন্ত্রণা…ঔষধ খাওয়ার পরেও কমছে না।”
তৃষাণ বিচলিত হয়ে বলল,” দেখি… জ্বর আসেনি তো?”
” জ্বর কেন আসবে?”
উষ্ণতা উঠে ধীরপায়ে ড্রেসিংটেবিলের কাছে গেল। কানে দুল পরার চেষ্টা করতে করতে বলল,” তুমি যাও। আমি একটা টাফনিল খেয়ে আসছি।”
তৃষাণ তার হাত থেকে কানের দুল ছিনিয়ে নিল৷ উষ্ণতা ভাবল পরানোর জন্য নিয়েছে। তাই নিজের কান এগিয়ে দিল। কিন্তু অদ্ভুত, তৃষাণ উষ্ণতার এতো দামী কানের দুলটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। উষ্ণতা হতবাক,” আরে কি করলে? আমার শাড়ির সাথে একমাত্র ম্যাচিং রিং ছিল ওইটা। এখন আমি পরবো কি?”
” কিচ্ছু পরতে হবে না।”
” মানে?”
” মানে আমরা কোথাও যাচ্ছি না।”
উষ্ণতা তৃষাণের কথার আগা-মাথা খুঁজে না পেয়ে পুনরায় একই প্রশ্ন করল,” মানেটা কি?”
” তুমি অসুস্থ উষ্ণ। এই অবস্থায় তোমার কোথাও যেতে হবে না। আমরা বাড়িতে থাকব।”
তৃষাণ ব্লেজারের পকেট থেকে ফোন বের করল। উষ্ণতা দেখল সে আহমেদের নাম্বার ডায়াল করছে,” হ্যালো আহমেদ।”
” জ্বী ভাই।”
” শোন, তোমার ভাবীর শরীরটা তো ভালো নেই বুঝেছো? তাই আমিও ভাবছি যাবো না। তোমার ভাবীকে নিয়ে বাড়িতেই থাকব। তুমি সবাইকে নিয়ে চলে যেতে পারবে না?”
” জ্বী ভাই। অসুবিধা নেই।”
” আমি বারান্দা থেকে গাড়ির চাবি দিচ্ছি। তুমি এসে নিয়ে যাও।”
তৃষাণ ফোন রেখেই উষ্ণতাকে চোখ মারল। উষ্ণতা কোমরে দুইহাত রেখে বলল,” এইটা কি হলো তৃষাণ? আমি আমার ছেলেকে সবার সাথে একা ছেড়ে দিবো নাকি?”
তৃষাণ জবাব না দিয়ে বারান্দায় গিয়ে গাড়ির চাবিটা আহমেদের হাতে চালান করে এলো। তারপর রুমে ঢুকে ব্লেজার খুলতে খুলতে বলল,
” কাম ডাউন ডিয়ার ওয়াইফ। মা আছে, উষসী আছে। ওরা খেয়াল রাখবে তো তৃষ্ণার। তুমি এখন আমার খেয়াল রাখো তো। দেখো, জ্বরে কেমন পুড়ে যাচ্ছি আমি!”
” কোথায় জ্বর দেখি?”
উষ্ণতা কপালে হাত রাখল তৃষাণের,” একদম জ্বর নেই।”
” আছে তো। তুমি টের পাচ্ছো না৷ ”
তৃষাণ রুমের দরজা বন্ধ করতে করতে গুণগুণিয় উঠল,” কি নামে ডেকে, বলবো তোমাকে.. মন্দ করেছে আমাকে ওই দু’টি চোখে!”
উষ্ণতা লজ্জা পেয়ে বলল,” আমি না হয় অসুস্থ। কিন্তু তুমি কেন গেলে না?”
” তোমাকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে আমি পার্টিতে যাবো? এটা কিভাবে হয়? এসো তোমার মাথা টিপে দেই। ফ্রেশ ঘুম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
__________________
জীবনে শেষ কবে এতোটা খুশি হয়েছিল উষসী মনে করতে পারছে না। সে শুধু জানে, আজ তার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ দিন৷ একমাস আঠারোদিন হয়ে গেছে উষসী যে ইয়ামিনকে ম্যাসেজ দিয়েছিল। আর ইয়ামিন সেই ম্যাসেজের রিপ্লে আজকে দিয়েছে! উষসী লিখেছিল,” ভালো আছেন?”
ইয়ামিন উত্তর দিয়েছে,” আমি খুব ভালো আছি উষসী। তুমি কেমন আছো?”
উষসী ভাবতেই পারছে না। ইয়ামিন তার নামটা পর্যন্ত মনে রেখেছে! সে দেখল ইয়ামিন এখন অনলাইনেই আছে। দ্রুত ম্যাসেজ করল,” আমিও বেশ ভালো আছি ভাইয়া।”
ইয়ামিন সাথে সাথেই ম্যাসেজটা সীন করল। সে এখন টাইপিং এ। উষসীর উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছে।
ইয়ামিন লিখল,” আচ্ছা। বাড়ির সবাই কেমন আছে?”
উফফ, উষসী খুশিতে পাগলই না হয়ে যায়!
ইয়ামিন আরও লিখল,” তুমি কিসে পড়ো এখন?”
” অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। ”
” বাহ, বেশ বড় হয়ে গেছো দেখছি। মন দিয়ে লেখাপড়া করো।”
” জ্বী ভাইয়া। আমার জন্য দোয়া করবেন।”
” অবশ্যই দোয়া করবো পিচ্চি।”
ইশশ, কতদিন পর আবার সেই পিচ্চি ডাক! উষসীর মনটা খুশিতে ঝুমঝুম করছে। আঙুলগুলো কাঁপছে ম্যাসেজ লিখতে গিয়ে। খুশিতে না শ্বাস আটকে যায়! উষসী বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বার-বার। সে এখন কি লিখবে? এতো নর্ভাস লাগছে কেন? অনেক ভেবে-চিন্তে লিখল,
” আপনার জন্য কি দোয়া করবো ভাইয়া?”
” কি জানি? আমার নতুন একটা গান রিলিজ হচ্ছে। সে জন্য দোয়া করতে পারো।”
” ঠিকাছে ভাইয়া! আপনার গান যেন বিশ্বসেরা হয়।”
” থ্যাঙ্কিউ! ”
” আচ্ছা ভাইয়া, সেদিনও দেখলাম আপনার টাইমলাইনে একটি সুন্দর পোস্ট লিখেছেন। ওইটা কি গানের লিরিক্স ছিল?”
” উমমম, মনে করতে পারছি না কোন পোস্টের কথা বলছো?”
” ভাইয়া, আপনি তো খুব ভালো স্কেচ করতেন। এখন কি ছেড়ে দিয়েছেন? দেখি না যে আর!”
” না ছাড়িনি। এখনও মাঝে মাঝে করি। কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে?”
” ছোটবেলায় একবার শিমলা আন্টির সাথে আপনাদের বাড়ি এসেছিলাম। মনে আছে? আপনি স্কেচ করছিলেন, আমি দেখেছিলাম।”
ইয়ামিনের সাথে ম্যাসেজ করতে করতে উষসী গাড়িতে বসেই পাগলের মতো হাসছিল। আহমেদ ড্রাইভিং সিটের সামনে লাগোয়া আয়না থেকে পেছনের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে। ডোনা আর অনুপমা গল্পে ব্যস্ত। আর তৃষ্ণা আহমেদের পাশে বসে ফোনে গেমস খেলছে। তারা একটা পার্টি থেকে ফিরছিল তখন। আহমেদ হঠাৎ ভ্রু কুচকে বলল,” ভাবীর ছোটবোনের হলোটা কি? একা একা মুচকি মুচকি হাসছে কেন?”
আহমেদের টিটকিরি শুনে অনুপমা আর ডোনা তাকাল উষসীর দিকে। তৃষ্ণাও পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। সবার মনোযোগ পেয়ে উষসী খানিক ইতস্ততবোধ করল। এরই মাঝে তৃষ্ণা বলল,” মনে হয় এন্টসের জামায় ছাড়পোকা ঢুকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। তাই এমন কিটকিট করে হাসছে।”
উষসী চোখ বড় করে তাকাল। আহমেদ বলল,” আরে নাহ, মনে হয় আমাদের নয়া দুলাভাই ম্যাসেজ দিয়েছে।”
উষসীর মেজাজটা বিগড়ে গেল। নয়া দুলাভাই বলতে আহমেদ আসলে ইমনের কথা বুঝিয়েছে। ডোনা আর অনুপমাও এই কথা শুনে উৎসুক চোখে উষসীকে দেখছে৷ তারাও নিশ্চয়ই উল্টা-পাল্টা ভাবছে! উষসী এই অবস্থায় ফোন হাতে নিয়ে রাখতে পারল না। সে তো আর সবাইকে সত্যিটাও বলতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে বুকে পাথর চেপে মোবাইল বন্ধ রাখল। আর চাতক পাখির মতো মোবাইল হাতে নিয়ে সে অপেক্ষা করতে লাগল, কখন বাড়ি পৌঁছাবে।
যখন গাড়ি তাদের ফ্ল্যাটের সামনে থামল, উষসী ঝড়ের বেগে নেমে লিফটে উঠে গেল সবার আগে। তার প্রাণপাখি ছটফট করছে। তড়াক তড়াক করে লাফাচ্ছে ইয়ামিনের ম্যাসেজ দেখার জন্য। ইচ্ছে হলো লিফটের মধ্যেই কথা বলা শুরু করে। কিন্তু লিফটে আবার নেটওয়ার্ক থাকে না। বাড়িতে ঢুকে উষসী চটজলদি নিজের রুমে চলে এলো। মোবাইল খুলতেই ম্যাসেঞ্জারে টুং করে বেজে উঠলো বহু প্রতীক্ষিত ম্যাসেজটি। ইয়ামিনের শেষ ম্যাসেজ ছিল,” ” ড্যাম! তোমার এতোকিছু মনে আছে?”
উষসী জামা-কাপড় না বদলেই বিছানায় সটান করে শুয়ে পড়ল। । ইয়ামিনের প্রত্যেকটা ম্যাসেজ এতো মধুর কেন? মন চাইছে প্রিন্ট করে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে। উষসী রিপ্লেতে লিখল,
” মনে থাকবে না আবার? সবকিছু ঝকঝকে তকতকে ভাবে মনে আছে। আচ্ছা আপনার মনে আছে? যেদিন আমাদের লাস্ট দেখা হলো, আকাশে খুব বৃষ্টি ছিল। আপনি আমাকে বললেন অনেক দূরে চলে যাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করলাম না। ভেবেছিলাম হয়তো মজা করছেন। কিন্তু প্রিয়ন্তী আপুর কাছে যখন সত্যিটা জানলাম তখন খুব মনখারাপ হলো। আমি ভাবিনি যে আপনি এইভাবে সত্যি সত্যি চলে যাবেন।”
উষসী কথাগুলোর মাধ্যমে যেন একগুচ্ছ অভিমানী পরশ ছুড়ে দিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ম্যাসেজটা আর সীন হলো না। ইয়ামিন অনলাইন থেকে চলে গেছে। উষসী গভীর করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আবার কবে তাদের কথা হবে কে জানে!
উষসী এবার ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিল। ভারী জামাটা ছেড়ে সুতির ফতুয়া আর ট্রাউজার পড়ল। এবার একটু রেস্ট নেওয়ার পালা। আজ তৃষ্ণা নাকি তার দাদীর সাথে ঘুমাবে। গাড়িতেই বলে দিয়েছিল। তাই উষসী একটু শান্তিতে থাকতে পারবে। ছেলেটা এতো বিচ্ছু, ঘুমের মধ্যে কাবাডি খেলে। উষসীর শরীরের হাড়গোড় ভেঙে অর্ধেক হয়ে যায়। এই কথা যখন সে উষ্ণতাকে জানিয়েছিল, উষ্ণতার জবাব ছিল,” তুইও ছোটবেলায় এমন করতি। তোর ভাগিনা তোর মতোই হয়েছে।”
উষসী একদম বিশ্বাস করেনি৷ সে মোটেই ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে না। কি শান্তভাবে ঘুমায়, যেভাবে রাতে শোয় সকালে উঠে নিজেকে সেই সেইম পজিশনে আবিষ্কার করে। উষসী আবার ফোনটা হাতে নিল। কেউ একজন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। মনটা তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। ইয়ামিন নয়তো? ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই উষসী দেখল ম্যাসেজ এসেছে ইমনের থেকে। মনটা বিষণ্ণতায় ভরে গেল। ইমনরা যেদিন তাকে দেখতে এসেছিল সেদিন রাতেই ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট পাঠিয়েছিল। উষসী অনাগ্রহ নিয়ে এক্সেপ্ট করেছে। এখন আবার ম্যাসেজও দিচ্ছে,” কেমন আছেন?”
উষসী লিখল,” বিন্দাস।”
” তাই? আপনি কি সবসময় বিন্দাস থাকেন?”
” উহুম। সবসময় না। তবে যেদিন থেকে আপনার সাথে বিয়ে ঠিক হলো সেদিন থেকে খুব বিন্দাস আছি।”
” আরে বাহ, তার মানে বিয়েতে আপনি খুশি?”
” অবশ্যই খুশি। কারণ এই বিয়ের মাধ্যমে আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে পাবো।”
” সেটা কিভাবে? বিয়েটা তো আপনার আমার সাথে হচ্ছে।”
” সেটা আপনি আর আমার বাড়ির লোক জানেন। কিন্তু আমি জানি, আমার বিয়ে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথেই হবে। ”
” হাউ?”
” সিম্পল! বিয়ের দিন রাতে আমি পালাবো।”
” রিয়েলি?”
” একদম।”
” ঠিকাছে, আমি তাহলে আপনাকে পালাতে হেল্প করবো। ব্যাপারটা কেমন হবে বলুন তো? বিয়ের রাতে বউকে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালাতে পূর্ণ সহযোগিতা করল জামাই। ইন্টারেস্টিং না?”
উষসী রাগের ভঙ্গিতে লিখল,” ভেরি ফানি! হুহ!”
” হাহাহা! কি করছেন?”
” নৃত্য। বিয়ের খুশিতে নৃত্য করছি।”
” বাহ, আমার হবু বউ নৃত্যও পারে নাকি?”
উষসীর খুব রাগ হলো। আর কোনো রিপ্লে করতে ইচ্ছে হলো না। তার শুধু ইয়ামিনের কথা ভাবতে ভালো লাগছে। আচ্ছা, কেমন হয় যদি উষসী প্রীতমকে ফোন করে ব্যাপারটা জানায়? প্রীতম নিশ্চয়ই শক খাবে।
উষসী তৎক্ষণাৎ প্রীতমকে ফোন করল। প্রীতম উষসীর এমন একজন বন্ধু যার সাথে মনের সব কথা শেয়ার না করলে তার ভালো লাগে না। দুইবার রিং হতেই প্রীতম রিসিভ করল,” হ্যালো।”
” দোস্ত, জানিস আজকে কি হয়েছে?”
” না বললে জানবো কিভাবে?”
” আচ্ছা শোন বলছি, ইয়ামিন ইব্রাহীম আমার ম্যাসেজের রিপ্লাই দিয়েছে। ”
” এহ, আন্দাজি।”
” সত্যি দোস্ত, ইনবক্সে আয়। তোকে এখনি স্ক্রিনশট দেই।”
” আগেই উড়িস না বেশি৷ ফেইক আইডিও হতে পারে।”
” না দোস্ত, এটা জীবনেও ফেইক আইডি না। তুই ম্যাসেজগুলো পড়লেই বুঝতে পারবি। দাঁড়া তোকে পাঠাচ্ছি।”
উষসী একে একে সবগুলো চ্যাটের স্ক্রিনশট দিল। প্রীতম বলল,” বাহ, ভালোই তো চলছে।”
” তুই ভাবতেও পারবি না আমার কত্ত বেশি ভালো লাগছে। মন চাইছে খুশিতে মরে যেতে।”
” তাহলে বসে আছিস কেন? যা মর!”
” সত্যি সত্যি মরে যাবো নাকি? এখনও তো কলকাতা যাওয়া বাকি! ইয়ামিন ইব্রাহীমের অটোগ্রাফ নিবো, সেলফি তুলবো, তার ছোঁয়ায় নিজেকে ধন্য করবো! কত কাজ বাকি! কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে।”
” কি?”
” তৃষাণ ভাইয়া বেঁকে বসেছে। সে এখন কাশমীর যাওয়ার তাল করছে।”
” ওয়াও, ওয়ান্ডারফুল!”
” আরে, তুই এতো খুশি কেন?”
” খুশি হবো না কেন? কাশমীর তো দারুণ জায়গা। একদম স্বর্গ।”
” সে যতই স্বর্গ হোক, আমি যাওয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না।সেখানে গেলে ইয়ামিনের সাথে দেখা করব কি করে? প্লিজ কিছু একটা কর প্রীতি। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।”
উষসী প্রীতমকে মজা করে মাঝে মাঝে প্রীতি বলেও ডাকে। প্রীতম রুক্ষ গলায় বলল,” আমি কি করব এই ব্যাপারে?”
” আশ্চর্য, তুই কি ইয়ামিন ইব্রাহীমের সাথে দেখা করতে চাস না?”
” মোটেও না৷ সে কোথাকার কে?”
” কোথাকার কে মানে?” উষসী ভীষণ রেগে গেল। ইয়ামিনের নামে একটা উল্টো কথাও সে সহ্য করে না। প্রীতম ঝাঁজালো স্বরে বলল,” আমার এতো শখ নেই যে কোথাকার কোন সেলিব্রিটি রিপ্লে দিল আর সেজন্য আমি খুশিতে মরে যেতে চাইলাম। যত্তসব আঁতলামি।”
এ কথা বলেই প্রীতম ফোন কেটে দিল। অদ্ভুত তো! ছেলেটা এতো রেগে গেল কেন? প্রীতম কি তাকে হিংসা করছে নাকি? ইয়ামিনের মতো বড় একজন সেলিব্রিটি উষসীর সাথে সুন্দর করে কথা বলেছে এটা দেখে কি সে জ্বলছে? তা জ্বলুক, উষসী এখন অন্যকিছু নিয়ে ভাবতেও চায় না। তার টার্গেট শুধু কলকাতা যাওয়া।
_______________
উষসীর মা যুথি বেগম এতোদিন নারায়ণগঞ্জ বোনের বাড়িতে বেড়াচ্ছিলেন। আজ সকালেই আহমেদ গিয়ে তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছে। উষসী ঘুম থেকে উঠেই মায়ের মুখ দেখল। আনন্দে চিৎকার দিতে মন চাইল তার। মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” মা, আমার মা। তোমার জন্য কত অপেক্ষা করেছি জানো? এতো দেরি করলে কেন মা? আর তোমার ফোন কোথায়? একবারও ফোন দিয়ে তোমাকে পাওয়া যায়নি কেন?ফোন বন্ধ করে ছিলে নাকি? খালি নেওয়ার্ক বিজি।”
” তোর খালার বাসাটা একটু গ্রামের দিকে তো, তাই নেটওয়ার্ক ঝামেলা করে। তোরা ফোন দিলে আসে না। কিন্তু আমি দিলে আবার যায়।”
” তাহলে তুমি একবার আমাকে ফোন দিতে পারলে না? আপুকে তো রোজ ফোন দিতে। ”
” উষ্ণর থেকেই তোর সব খবর পেতাম। তাহলে আলাদা করে তোকে ফোন দেওয়ার দরকার কি?”
” আমার তো কিছু বলার থাকতে পারে তাই না?যাইহোক, এখন তো এসেছো। এখন কথা শোনো, বাড়িতে কত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে জানো কিছু? খবর রেখেছো?”
” হ্যাঁ রেখেছি তো। আমার ছোটমেয়ের বিয়ের খবর আমি রাখবো না তো আর কে রাখবে?”
উষসীর চোখগুলো কোটরাগত করে বলল,” এর মানে তুমি বিয়েতে রাজি? ”
” রাজি না হওয়ার কি আছে? এতো ভালো পাত্র কি হাত ছাড়া করা যায় নাকি? ছেলে আবার সাব-ইন্সপেক্টর। আমার তো দেখেই পছন্দ হয়ে গেছিল।”
” তুমি দেখলে কিভাবে?”
” কয়দিন আগেই তো তৃষাণ তোর খালার বাসায় এসে আমাকে পাত্রের ছবি আর বায়োডাটা দেখিয়ে গেল। আমি পছন্দ করলাম বলেই না বিয়ে পাকাপোক্ত হলো।”
উষসীর গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। তলে তলে তাহলে এতোকিছু? মা সব জানতেন! অথচ উষসী আশায় ছিল মা এলেই যেভাবে হোক বিয়েটা আটকাবে৷ এখন সেই আশাতেও গুঁড়েবালি! উষসীর মুড অফ দেখে যুথি প্রশ্ন করলেন,”তোর কি হয়েছে? ছেলে পছন্দ না?”
উষসী অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। তারপর হঠাৎ মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেউভেউ করে কাঁদতে শুরু করল।
” ওমা, ওমা, কাঁদছিস কেন?”
উষসী কাঁদতে কাঁদতে বলল,” তুমি এর একটা বিহিত করো মা। আমি কিছু জানি না। সবাই আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে-পরে লেগেছে। অথচ আমার এখনও বিয়ের বয়সটাই হলো না।”
যুথি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম সুরে বললেন,” বিয়ে করতে বয়স লাগে নারে মা, লাগে ভাগ্য। তোর অনেক ভাগ্য ভালো বলেই এমন একটা পাত্র পেয়েছিস। আর তৃষাণ কি তোর জন্য খারাপ সম্বন্ধ আনবে? তোর মনে হয়?”
” তোমরা দুইজনই আসলে একরম। যেমন তুমি তেমন ভালো আন্টি। একজন জামাই পাগল আরেকজন ছেলে পাগল। তৃষাণ ভাইয়া তোমাদের দু’জনেরই ব্রেইন ওয়াশ করে রেখেছে। তাই এখন আমার কথা মাথায় ঢুকছে না।”
” ব্রেইন ওয়াশ করে রেখেছে মানে? কি বলছিস এসব আবোল-তাবোল?”
” ঠিকই বলছি। আচ্ছা মা তুমিই বলো, আমার বয়সী কয়টা মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে দেখেছো? এখন আমার পড়াশুনার বয়স৷ বিয়ে নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমি লেখাপড়ায় কনসেনট্রেশান ব্রেক করতে চাই না।”
” তোকে কনসেন্ট্রেশন ব্রেক করতে কে বলল? তুই তোর মতো পড়। আর বিয়ে কি এখনি হয়ে যাচ্ছে নাকি? এখন শুধু এংগেজমেন্টটা হয়ে থাকবে।”
” যাইহোক, আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতেও চাই না। আমার বিয়ে ছাড়াও অনেক স্বপ্ন আছে। তাছাড়া বিয়ে হয়ে গেলে কি আমি ঘর সামলাবো নাকি পড়াশুনা?”
” তোর আপুরও কিন্তু প্রায় তোর মতো বয়সেই বিয়ে হয়েছিল। সে কি লেখাপড়া আর ঘর একসাথে সামলায়নি? এখন কি সে পিছিয়ে আছে? উষ্ণ যদি পারে তাহলে তুই কেন পারবি না মা?”
” তুমি বুঝতে পারছো না মা। আপুর মতো সোনার কপাল তো সবার না। সবাই তৃষাণ ভাইয়ার মতো বউকে রাণী বানিয়েও রাখবে না। বেশিরভাগ পুরুষ বউ হিসেবে খুঁজে দাসী। আমি কারো দাসত্ব করতে চাই না।”
” ঠিকাছে তোকে দাসত্ব করতেও হবে না। তুই যখন চাইবি তোর তখন বিয়ে হবে। এখন শুধু এংগেজমেন্ট হয়ে থাকবে। হয়েছে?”
” সত্যি বলছো?”
” হ্যাঁ সত্যি। এখন এই বিষয়ে কথা বলা বন্ধ কর। ভালো লাগছে না তোর এতো ঘ্যানঘ্যানানি। ”
” তাহলে তৃষাণ ভাইয়াকেও রাজি করাবে তুমি। যতদিন আমি না বলব ততদিন যাতে বিয়ের কথা না বলে। প্রমিস করো!”
” আচ্ছা যা, প্রমিস করাবো।”
” ইয়ে… আমার লক্ষী মা।” উষসী মাকে জাপটে ধরে চুমু দিল।
কাশ্মীর যাওয়ার ব্যাপারে উষসী একদম আগ্রহী ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই যখন জানতে পারল ইয়ামিন ইব্রাহীম এখন কাশ্মীরেই আছে এবং সেখানেই তার নেক্সট গানের শ্যুটিং স্পট ঠিক করা হয়েছে তখনি আনন্দে ঝুমঝুম করে উঠল তার মন। সবার চেয়ে বেশি তার নিজের উৎসাহই বেড়ে গেল। কাশ্মীর যাওয়ার জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল সে।
প্রীতম এসব শুনে বলল,” ভালোই হয়েছে। যা গিয়ে কোলাকুলি কর। পারলে বিয়ে করে সারাজীবন কাশ্মীরেই থেকে যা। ফিরে আসার দরকার নেই।”
” উফফ, তুই একদম আমার মনের কথা বলেছিস দোস্ত৷ এজন্যই তোকে এতো পছন্দ করি। কিন্তু বিয়ে তো আমি একা করতে পারবো না। তোরও সাহায্য লাগবে।”
” বয়েই গেছে তোকে সাহায্য করতে আমার। এসব বেআইনি কাজে আমি নেই।”
” বেআইনি বলছিস কেন?”
” অবশ্যই বেআইনি। ওই ইয়ামিন ইব্রাহীম হচ্ছে একটা দেশদ্রোহী,গাদ্দার। নিজের দেশের মাটি ছেড়ে যে অন্যদেশে গিয়ে প্রতিভা বিকাশ করে, অন্যদেশের সেবা করে, তার মতো বেঈমানকে তুই আবার বিয়ে করতে চাইছিস! এটা বেআইনি নয়তো কি? আমার তো মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তোকেও কিক মেরে বাংলাদেশ বর্ডারের বাহিরে পাঠিয়ে দিতে। বাংলাদেশে থাকার অযোগ্য তুই।”
” এসব কি বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেলি নাকি? মাথার কয় নাম্বার তার ছিঁড়েছে শুনি?”
” আমার মাথার তার ঠিকই আছে। বরং তোর মাথায় গন্ডগোল দেখা দিয়েছে। শোন, তুই সুস্থ হওয়ার আগে আমাকে আর একবারও ফোন করবি না৷ এ ধরণের উল্টা-পাল্টা কথা বলার জন্য আবার ফোন করলে বাড়ি এসে তোর চুল ছিঁড়বো আমি।”
” মানে?”
প্রীতম খট করে লাইন কেটে দিল। ছেলেটা ইদানীং এমন করছে কেন উষসী বুঝতে পারছে না। একটু পর প্রীতমকে ম্যাসেজ করল,” আচ্ছা, কাল বাসায় কখন আসছিস তুই? আমাদের ফ্লাইট কিন্তু সন্ধ্যায়। মনে আছে তোর?”
” আমি যাবো না।”
” মানে?”
প্রীতম কোনো রিপ্লে করল না। কিন্তু পরদিন ঠিকই সঠিক সময়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে হাজির হলো। উষসী হাসতে হাসতে বলল,” কিরে, আসবি না বলেও এলি যে?”
প্রীতম আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে বলল,” বুড়োটা কোথায়?”
” কোন বুড়ো?”
” তোর বর বুড়ো। পুলিশম্যান।”
উষসী খিলখিল করে হেসে উঠল,” বুদ্ধুরাম, এটা ফ্যামিলি ট্রিপ। ওই বেটাকে কেন নিয়ে যাবো?”
” তাহলে তুই যে কালরাতে বললি?”
” ওইটা তো তোকে রাগানোর জন্য বলেছি।”
” উষুর বাচ্চা, আজকে সত্যিই তোর চুল ছিঁড়বো আমি।”
উষসী হাসতে লাগল আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে। আজ সে ভীষণ খুশি! কতদিন পর ইয়ামিনের সাথে দেখা হতে যাচ্ছে। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে তার।
চলবে