#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩৪ (অন্তিম পর্ব)
#সুমাইয়া মনি।
চার বছর পর….
-“নিথান এখানে এসো বাবা শার্টটা পড়িয়ে দেই।” নবনী হাঁকিয়ে ওর ছেলে নিথানকে ডাকছে।
হাতে ফোন নিয়ে দুই বছরের নিথান থপথপ পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে তার মায়ের দিকে। তখনই আদি রুমে এসে খপ করে নিথানকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমুতে ভরিয়ে দেয় । নবনী কিছুটা রাগ নিয়ে আদিকে বলে,
-“তোমাকে কতবার বললাম অফিস থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে নিথানকে ধরবে না। কথাই শুনছো না তুমি।”
-“নিথান বাবা বলো তো মাম্মামকে, তাতে তোমার কি?” আঙুল দিয়ে নবনীকে দেখিয়ে বলতে বলে নিথানকে।
নিথান মৃদুস্বরে আওড়ায়,
-“তাথে তোমাত কি?”
নবনী কোমড়ে দু হাত রেখে রাগী ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। আদি, নিথান হাসছে একে অপরকে দিকে তাকিয়ে। নবনী মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“একটু পরেই তিশা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে বাড়ি থেকে বের হয়েছি কি-না। দেখেছো কয়টা বাজে।”
-“নিথান বাবা তুমি শার্টটি নিয়ে দাদুর কাছে যাও।” নবনীর কাছ থেকে শার্টটি নিয়ে নিথানের হাতে দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়। নবনী, ‘নিথান তুমি যাবে না.. ‘ বলে এগিয়ে যেতে নিলে আদি থামিয়ে দেয়। নিথান হাসতে হাসতে চলে যায়।
আদি বাঁকা হেসে নবনীর দিকে তাকায়। এ বাঁকা হাসির কারণ নবনী ভালো করেই বুঝতে পারে। সরু চোখে তাকায় আদির দিকে।
-“তো? হয়ে যাক…” এক ভ্রু উঁচু করে শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে গিয়ে বলে আদি।
-“কি হবে?” দু কদম পিছিয়ে বলে নবনী।
-“রোমাঞ্চ!” বলেই নবনীকে জড়িয়ে ধরে দরজায় লাথি দিয়ে চাপিয়ে দেয়।
ভালোবাসার খুনসুটি আরম্ভ হয় তাদের। আজ নিভ্র ও তিশার বিবাহ বার্ষিক। বড়ো করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাতে অনুষ্ঠান। সেখানে যাওয়ার জন্য আদি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে।
সেদিন রাতে নিভ্রর জীনের মোড় ঘুরে যায়।
পরেরদিন ভোর পাঁচটার দিকে আপন ও আদির পরিবাবের সবাইকে রওয়ানা হতে হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। মূলত হঠাৎ নিভ্রর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তাদের ঢাকাতে আসা। নিভ্র কাল রাতেই তিশার বাবাকে বিয়ের ব্যাপারে বলে। তারা আগে থেকেই রাজি ছিল তাই অমত করেনি। কিন্তু কাল জিনানের সঙ্গে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত শুনে প্রথমে রাজি ছিল না। পরক্ষণে নিভ্র ফোস করাতে রাজি হতে হয় তাদের। ফোনে তিশার বাবা আজিম উদ্দীন, আজমল উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারাও বিয়েতে রাজি হয় ঠিকিই, তবে হঠাৎ নিভ্রর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তারা অবাক হয়।
আদি, নবনী বিষয়টি জানার পর কিছু বলেবি। বরং তারা আরো খুশি হয়েছে। নিভ্র অতীত ভুলে নতুন জীবনের সূচনা করবে ভেবে। জিনান, মায়ার পর, নিভ্র, তিশার গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। বুকে শত কষ্ট চাপিয়ে রেখে হলুদ দিতে স্ট্রেজে বসছিল নিভ্র। পরেরদিন বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। তিশাও জানতো নিজেদের সম্পর্ক এত সহজে স্বাভাবিক হবে না। আর কেনই বা ওঁকে বিয়ে করা হয়েছে। শুধু মাত্র আদি, নবনীর জীবন থেকে সরে যাওয়ার এটাই ভালো সুযোগ ছিল। এছাড়া আর কোনো উপায় নিভ্রর কাছে ছিল না। বিয়ের পর নিভ্রর পোস্টিং আবার কুমিল্লাতেই হয়। আলাদা বাড়ি কিনে তিশাকে নিয়ে থাকতে আরম্ভ করে। প্রথমে তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা দূরত্ব খাপছাড়া হলেও আস্তেধীরে নিজেদের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরি হয়। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার রূপ নেয়। হ্যাঁ! নিভ্র দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়েছে তিশার। ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিল তিশাকে। সেদিনের সেই ক্লেশ এখন আর তার মনে নেই। তিশা নিজের ভালোবাসা দিয়ে নিভ্রর অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে। ভুলিয়ে দিয়েছে নবনীর প্রতি সুপ্ত ভালোবাসাটুকু। এক বছর অতিবাহিত হতেই আপন পুনোরায় তনুজাকে বিয়ে করে। আপন তার কথা রেখেছে।
এবং এবার বিয়ে আপনের মর্জিতেই হয়। কেননা সে নিভ্রর মতোই দ্বিতীয় বারের মতো তনুজাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
তিন জোড়া শালিকের জীবন ভালোবাসায় আবদ্ধ এখন।
দু বছরের মাথায় নবনীর কোল জুড়ে নিথানের আগমন হয়। তিন বছর পর তিশার মেয়ে হয়। তনুজা সবে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। তিন দম্পতির জীবন এখন অনেকটা সুন্দর ভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে।
আদি, নবনী ও বাকি সবাই রেডি হয়ে ড্রইংরুমে বসে আপন আর তনুজার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরাও কিছুক্ষণ বাদে ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হয়। এক সঙ্গে সবাই রওয়ানা হয় নিভ্রদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। পুরো বাড়িতে মেহমানে গিজগিজ করছে। উপস্থিত হতেই নিভ্র সবাইকে ভেতরে নিয়ে আসে। অনেক আগেই জিনান, মায়া এসেছে। মায়ারও এক ছেলে। নিথানকে কোলে নিয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত নিভ্র। আদি নিভ্রর মেয়ে ও জিনানের ছেলে কোলে নিয়ে খেলছে।
নবনী তনুজাকে নিয়ে তিশার বেড রুমে আসে। তিশা তখন শাড়ির কুঁচি ঠিক করছিল। নবনী ও তনুজাকে দেখে তিশা খুশিতে আত্মহারা। নবনী মায়াকে পেয়ে খুশি আরো খুশি হয়। অনেকদিন পর দু বান্ধবী এক হয়েছে। চার জা বান্ধবীদের মতো একদম ফ্রি। এক সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত তারা। নিচে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেই বিষয় একেবারে ভুলেই গেছে। শেষে আপন ওদের ডাকতে আসে । এগারোটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিভ্র, তিশা তাদের মেয়ে ফুলকে সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হয়। নাচগান আরম্ভ হয়। রংবেরঙের লাইটের সমারোহ। একের পর এক লাইট জ্বলছে আর নিভছে। চার জোড়া কাঁপল এক সঙ্গে নাচছে। কিছুক্ষণ পর পাটনার পাল্টিয়ে ডান্স পুনোরায় শুরু হয়। আপাতত নিভ্র নবনীর পাটনার, আদি তনুজার, জিনান তিশার ও আপন মায়ার। আদি বেশ সাবধানে তনুজাকে নিয়ে ডান্স করছে। যাতে তনুজার ধাক্কা, ঝাঁকি না লাগে। আদি মুচকি হেসে তনুজাকে বলে,
-“সেদিন যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে, তাহলে আজ চার, পাঁচ বাচ্চার মা হতে।”
-“হ আইছে..” মুখ বাকিয়ে বলে তনুজা।
-“তাহলে কি! তুমি তো একটাই পেন্ডিংয়ে ঝুলিয়ে রেখেছো।”
-“আর নিজে যে এক ছেলের বাবা হয়ে বসে আছো সেটা বলছো না। ওনি নাকি আবার চার-পাঁচ বাচ্চার বাবা হবে।” ভেংচি কেটে বলে তনুজা।
-“আহা! নবনী তো ছোট বাচ্চা। এত কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে বলো।”
-“আর আমি কি বুড়ি?” মেকি রাগ নিয়ে বলে তনুজা।
-“এইতো স্বীকার করলে তুমি বুড়ি। এটাই তো শুনতে চেয়েছিলাম এতক্ষণ।” হেসে ফেলে বলে আদি।
তনুজা রেগে চিমটি কাঁটে আদির বাহুতে। বাড়িতে বসে তনুজার সঙ্গে অনেক দুষ্টুমি করে। ভাবি, দেবর বলে কথা।
তার মধ্যে তনুজাকে বুড়ি বলে সারাক্ষণ রাগায়। আদির সেই পুরোনো অভ্যাস আর গেল না। এখনো মানুষকে বিরক্ত করার টেকনিক চালু রেখেছে আদি।
-“ইশশ! বরকে কেউ এভাবে মারে নাকি।” আদি বাহুতে হাত বুলিয়ে বলে তনুজার উদ্দেশ্যে।
-“আইছে রে আমার বালের বর।”
-“বরই তো। আমি হলাম তোমার দ্বিতীয় বর।”
-“কেমনে?” কোমড়ে এক হাত রেখে বলে।
-“দেবর, এটাকে ভাঙ্গলে দে+বর=দ্বিতীয় বর হয়। হিসার বুঝো নাই, না বুঝলে আমার ছেলের ফিটার একটু টেস্ট কইরো।”
-“সর শয়তান।” বলেই কান টেনে ধরে আদির।
-“আহহ! লাগতেছে ছাড়ো তনুজা ভাবি।”
তনুজা আরো কষে কান মলে দেয় আদির।
এদিকে ওরা বেশ সুন্দর ভাবেই ডান্স করছে। দূর থেকে আদি ও তনুজার দুষ্টুমিও দেখেছে সবাই। ডান্স করার এক পর্যায়ে নিভ্র নবনীকে প্রশ্ন করে,
-“আমার ভাইকে কষ্ট দিচ্ছো না নবনীতা? ”
-“কি মনে হয় নিভ্র ভাইয়া।” নাচের স্টেপ মিলিয়ে বলে নবনী।
-“মনে হয় তো কষ্ট দিচ্ছো।”
-“মনে হয় বলেই প্রশ্নটা করেছেন, রাইট?”
-“রাইট!”
নবনী কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে। তারপর ফের বলে,
-“চার বছর আগে আপনার ভাই আমাতে আসক্ত বলেছিল। সেই আসক্তি কাঁটতে দেইনি। এখনো আদি আমাতেই আসক্ত। শুধু আদি নয়, আমিও আদিতে আসক্ত নিভ্র স্যার।” লাস্টের কথাটা নিভ্রর কানের কাছে এসে বলেই ঘুরে দাঁড়ায় নবনী। অনেকদিন পর নবনীর মুখে স্যার ডাকটি শুনেছে। তবে এখন আর নিভ্রর খারাপ লাগে না। কেননা সে এখন নবনীতে নয় বরঞ্চ তিসাতে আসক্ত। নিভ্র মুচকি হাসে। নবনী ঘুরে নিভ্রর দিকে তাকায়। ডিজে লাইটের আলোয় নবনী নিভ্রর ঠোঁটের হাসি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। নিজেও হেসে দেয়।
ভালোবাসার আসক্ততায় পরিপূর্ণ তাদের জীবন। নেই দুঃখ, নেই ভালোবাসার কোনো অভাব। ওদের দেখে শেখা উচিত, দ্বিতীয় বারের মতো কাউকে ভালোবাসা যায়, প্রেমে পড়া যায়। আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা যায়। যদি সেই মানুষটি সঠিক, সৎ চরিত্রবান হয়। তবেই তার ভালোবাসার মুগ্ধতায়, আসক্ততায় কাঁটিয়ে দেওয়া যায় পুরো জীবন।
সমাপ্ত।
আপাতত গল্পের সমাপ্তি নিয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার আপনারাই বলবেন। পুরো গল্পটির বিষয়ে ছোট, বড়ো মন্তব্য করে যাবেন। ধন্যবাদ!
Darun story ♥️♥️♥️
অনেক সুন্দর হয়েছে গল্পটা
গল্পের শেষটা সুন্দর হয়েছে কিন্তু মন এখনও চায় নিভ্র আর নবনীতার মিল হলে ভালো হতো 😌 কিন্তু তা হলো না💔এমন জায়গায় গল্পটি মোর পাল্টে নিল যে সব কিছুই মানতে একটু কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আর কি ভালোই হয়েছে যা হয়েছে♥️