#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩০
#সুমাইয়া মনি।
তনুজার জন্য পুনোরায় ছেলে ঠিক করেছে নিলাজ হোসাইন। কিছুক্ষণ আগেই ছেলে বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। বাবা, মা ও ছেলে। গেস্ট রুমে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে তারা।
তনুজা বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। সে এক প্রকার ঘাপটি মেরে রুমে বসে রয়েছে। রেডি হয়েছে কি-না সেটা দেখার জন্য আমেনা বেগম তনুজার রুমে এলেন। চুপটি করে জানালার কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে তনুজা। মেয়েকে এমন নীরব দেখে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলায়। মৃদুস্বরে বলে,
-“তোর আব্বু রেগে যাবে। রেডি হয়ে নে তনুজা।”
তনুজা আগের ন্যায় সেভানেই দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
-“আম্মু, আব্বুকে বলে দেও বিয়ে আমি করব না।”
-“বিয়ে না করার কারণ নিশ্চয় আপন?” কপাট কন্ঠে বলে এগিয়ে আসেন নিলাজ হোসাইন।
আমেনা বেগম স্বামীর পানে তাকালেও, তনুজা সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়। কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তার আব্বুর কথায়।
নিলাজ হোসাইন মেয়ের নীরবতা দেখে আরো রেগে গেলেন। বললেন,
-“জবাব কি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশ্নের জবাব দেও।”
-“বুঝতেই যখন পারছো, জিজ্ঞেস না করলে ভালো হয় আব্বু।” তনুজা নমর ভঙ্গিতে উত্তর দিলেও নিলাজ হোসাইন ক্ষেপে যান। পুনরায় বলে,
-“আপনের সঙ্গে কক্ষনোই তোমার বিয়ে হবে না।”
-“যাকে একবার মনে স্থান দিয়েছি, দ্বিতীয় বার কাউকে দেয়া সম্ভব নয়। এতে আপন আমাকে বিয়ে করুক বা না করুক।”
নিলাজ হোসাইন মেয়ের এমন কথা শুনে কিছু বলার আগ্রহ দেখায় না। ফোঁস করে রাগী নিঃশ্বাস ফেলে রুম ত্যাগ করেন।
আমেনা বেগম স্বামীর রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পিছু পিছু বেরিয়ে যায়। তনুজার কোনো কিছুতেই আক্ষেপ নেই। না সে পরোয়া করে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে খাটের উপর নজর তাক করে। সেখানে শাড়ি, চুড়ি রাখা ছিল। নজর সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এ নিশ্বাস বলে দিচ্ছে তার কষ্টের পাল্লা কতটা ভারী।
____________________
নিজের কক্ষে পায়চারী করে করে হাঁপিয়ে উঠেছে নবনী। ভেবে পাচ্ছে না কে সেই আগন্তুক ব্যক্তি। যে তাকে লেহেঙ্গা উপহার দিয়েছে। প্রথমে ভাবে আদির কথা। কিন্তু আদি কুমিল্লা। সে কিভাবে জানল সে এই লেহেঙ্গাটি পছন্দ করেছে! এটা হতেই পারে না। পরপরই মত ঘুরিয়ে নিয়ে ভাবে নিভ্রর কথা। নিভ্র তাকে লেহেঙ্গা দিবে, প্রশ্নই আসে না! এই মতও পাল্টে দেয়। মাথায় যেন তার ঘুরতে আরম্ভ করেছে। স্থির হয়ে দপ করে বিছানার উপর বসে। আর ভাবতে পারছে না। এসব সাইড করে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হয় টেবিলের দিকে। বই পড়ার জন্য। কিন্তু তখনই ফোনের রিংটোন বাজতে আরম্ভ করে। তাকে আবার ফিরে আসতে হয় খাটের কাছে। ফোন হাতে নিতেই নবনীর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এই অজানা অনুভূতি তাকে ক্ষণে ক্ষণে দূর্বল করে দিচ্ছে আদির প্রতি। ফোন রিসিভ করার পর আদি ঘুম জড়িত আদুরে কন্ঠ ভেসে আসে,
-“সুইটহার্ট, গুড মর্নিং কিস চাই।”
কথাটা শুনেই নবনী চট করে ফোন কান থেকে সরিয়ে নেয়। স্পন্দন যেন আরো বেড়ে যায় নবনীর। দশটা বাজতে চলল এখনো ঘুমিয়ে আছে আদি। অবশ্য আজ শুক্রবার বিধায় তারও অফিস ছুটি। কিন্তু সকাল সকাল আদির এমন উদ্ভট বায়না শুনে নবনী বিস্মিত! নিবর থাকতে দেখে আদি আবার বলে,
-“কই দিলে না যে।”
নবনী চোখ দু বার পিটপিটিয়ে বলে,
-“আমাকে বলছেন?”
আদি মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“নাহ! আমার জি,এফ’কে বলতে গিয়ে তোমাকে বলে ফেলেছি।”
-“সত্যি?”
-“সত্যি তোমার মোটা মাথা। কল তোমাকে দিয়েছি। বলব কি আরেক জনকে!” রাগ ঝেড়ে বলে আদি।
নবনী বোকা হয়ে যায়। কিন্তু আপাতত বুঝতে পারে আদি রেগে গেছে। তাই চুপ করে আছে, কথা বলছে না।
মিনিট কয়েক পর নবনী আমতা আমতা করে বলে,
-“আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন?”
-“উঁহু! নাচতেছি।” গম্ভীর কণ্ঠে।
-“নাচ দেখবো, ভিডিও কল দেই।” নবনী দুষ্টুমি করে বলে।
-“দেও।”
-“না থাক।”
-“থাকবে কেন, দেও দেও।”
-“আমি তো মজা করেছি।”
-“এটাও তোমার দ্বারা সম্ভব!”
-“কেন?”
-“সারাক্ষণ তো বোবা ভূতের মতো বোবা হয়ে থাকো।”
-“আপনার বুঝি তাতে সমস্যা হয়?”
-“চরম লেভেলের সমস্যা হয়।”
-“তো, আমি কি করব।”
-“নাচো।”
-“বয়ে গেছে।”
-“বইবে সময় হলেই। নাচবো, এবং নাচাবো।”
-“দেখা যাক।”
-“দেখবে তুমি, করে দেখাবো আমি।”
-“আচ্ছা।”
-“ইয়েস! পাগলীনি।”
কথা হয় আরো কিছুক্ষণ। তারপর ফোন রেখে নবনী পড়তে বসে। পড়ার মাঝেও আদির কথা গুলো প্রতিধ্বনি হতে থাকে কানে। হেসে ফেলে সে। লেহেঙ্গার কথাটি আপাতত মাথা থেকে সরে যায় তার।
.
.
আপন নতুনে এইটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। কাল থেকে জয়েন্ট। নতুন কিছু শার্ট,প্যান্ট কিনার জন্য বিকেলের দিকে মার্কেটে আসে। শার্ট চয়েজ করার এক পর্যায়ে আপনের ফোন বেজে ওঠে। পকেট হাতিয়ে ফোন বের করে অচেনা নাম্বার দেখে ফোন কেটে দেয়। ফের সেই নাম্বার থেকে কল আসে। বিরক্ত হয়ে সে ফোন রিসিভ করে। হ্যালো বলে চুপ করে থাকে। অপর পাশের কথা শুনে আপন ‘আসছি’ বলে ফোন রেখে দেয়।
আধাঘন্টা পর…
আপন এবং আমেনা বেগম একটি ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছে। আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা তেমন একটা নেই। কেউ নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত। আবার কেউ আড্ডা দিতে। নিরবতা পালন করছে শুধু তারা দু’জন। আপনের দৃষ্টি নত। সে জানে না তিনি কেন ওর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। আমেনা বেগম সব কিছুকে উপেক্ষা করে আপনের পানে চেয়ে নমর স্বরে বলে,
-“তনুজার বিয়ের সম্মন্ধ আসে। আজও এসেছিল। তারা তনুজাকে আংটি পড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তনুজা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় না বলে দেওয়া হয়। ওর আব্বু ভীষণ রেখে আছে, আবার দুঃখও লাগছে মেয়ের জন্য।” এতটুকু বলে তিনি থামেন। আপন আগের ন্যায় বসে রয়েছে।
সে আবার বলে,
-“তনুজা তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না বলে মন স্থির করে রেখেছে। বাবা, তুমি কি অতীত ভুলে আমার মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবে?” আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন তিনি। চোখ তার পানি ছলছল করছে।
আপন চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে নিয়ে মেলে নেয়। ভুলটা তরাই ছিল। তনুশ্রীর কথাটা যদি সে আগে সবাইকে জানাত,তাহলে আজ হয়তো তনুজার জীবনে নতুন মোড় ঘুরতো। এভাবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। আমেনা বেগম সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আপনের উত্তর শোনার জন্য সে ব্যাকুল। সরু নিশ্বাস ফেলে আপন চোখ তুলে তাকায়। বলে,
-“আমাকে একটু সময় দিন আন্টি। কথা দিচ্ছি, তনুজাকে আমি বিয়ে করব।”
খুশির ঝলক দেখা মিলে আমেনা বেগমের চেহারাতে। আপনের কথায় সে আশ্বাস পায়। এতেই সে খুশি।
.
.
.
#চলবে?
#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩১
#সুমাইয়া মনি।
বিয়ের এক সপ্তাহ পর ওদের পরিক্ষা। বিয়ে উপলক্ষে মায়া আগেভাগে পড়ে রাখছে। বিয়ের ক’দিন ঝামেলার জন্য পড়ার সময় হবে না তাই। নবনীও ঠিক একই কাজ করছে। তিনদিন অতিবাহিত হয়। পরেরদিন মায়ার গায়ে হলুদ। সেন্টারে উভয়ের গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। আলাদা ভাবে গায়ে হলুদ হবে না। নবনী সন্ধ্যার দিকে পড়তে বসে। সঙ্গে নিয়ানকে পড়াচ্ছে। অনেকক্ষণ পড়ার পর নয়টার দিকে আদি ফোন দেয়। নিয়ানকে পড়তে বলে নবনী ফোন নিয়ে বারান্দায় আসে।
-“বলুন।”
-“কি করছো?”
-“পড়ছিলাম, নিয়ানকে পড়াচ্ছিলাম। আপনি?”
-“বাসায় যাচ্ছি ড্রাইভ করে।”
-“জানেন না ড্রাইভ করার সময় কথা বলা নিষেধ।”
আদি মৃদু হাসে। বলে,
-“এক্সিডেন্ট হবে তাই?”
-“বুঝেন যখন, তখন বলছেন কেন। ফোন রাখুন। বাসায় গিয়ে কল দিয়েন।”
-“উঁহু! ব্লুটুথ কানে সমস্যা নেই।”
-“যাই হোক না কেন এখন কথা বলব না।”
-“আরে বাপরে! পাগলিনী দেখি রেগে গেছে।”
-“ফোন রাখতে বলেছি না।”
-“এই ধরো এক্সিডেন্ট হলো, তখন….”
বাকিটা বলার আগেই ফোন কেঁটে দেয় নবনী। আদি জোরে হেসে ফেলে। নবনী যে রেগে গেছে সেটা তার বুঝতে অসুবিধা হয় না। আদি এখন বুঝতে পারে নবনীর মনেও ওর প্রতি ফিলিংস আছে। হতেই হবে। স্বামী, স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ তারা। না চাইতেও ভালোবাসা পয়দা হবে আল্লাহর রহমতে।
বাসায় ফিরে আগের দিনের মতো আদি আপনের কক্ষে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। আপন তখন টেবিলে বসে ল্যাপটপে একটি প্রজেক্ট তৈরি করছিল। আদিকে দেখে ল্যাপটপ হালকা বন্ধ করে নেয়। বলে,
-“কথা ছিল।”
-“বল।” এক হাতে ভর রেখে আপনের পানে তাকায় আদি।
আপন কিছুক্ষণ চুপ করে রয়। পরমুহূর্তে তনুজার মায়ের সঙ্গে কথোপকথন গুলো বলে। আদি চট করে উঠে বসে। সে কিছুটা অবাক হয় এটা শুনে তনুজাকে বিয়ে করার কথা জেনে। আপন আদির দিকে তাকান অবস্থায় এগিয়ে আসে। দৃষ্টি নিচু আপনের। কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“এবার অন্তত আগের মতো ভুল করিস না। কথা দিয়ে কথা খেলাফ করা বড্ড অপরাধ।”
আপন আদির দিকে চোখ তুলে তাকায়। আদির হাতের ওপর হাত রেখে বলে,
-“রাখবো ইনশাআল্লাহ!”
স্মিত হাসে আদি রুম ত্যাগ করে। আপনের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।
—————–
আলস্য ভঙ্গিতে সোফায় আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে নিভ্র। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে। সে তিশার কথা ভাবছে। এই মেয়েটা দিন দিন ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। যে ভাবেই হোক ওঁকে সরাতে হবে নিজের নিকট থেকে। বলতে হবে তার মনে অন্য একজনের বসবাস। তাকে ফেলে ওঁকে মনে জায়গা করে দেওয়ার কোনো চান্স নেই। ভাবতে ভাবতেই তিশার ফোন আসে। বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে আসে নিভ্র। এখন যদি ফোন না তুলে তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই আলস্য ভঙ্গিতেই ফোন রিসিভ করে কানে তুলে,
-“হুম।”
-“কি করছেন?”
-“আধোঘুমে আছি।”
-“উঠুন, মেইন দরজাটা খুলে দিন।”
-“কেন?”
-“আহা! খুলে দিন না।”
এই মেয়ের জ্বালাতনের শেষ নেই। নড়েচড়ে বিরক্ত নিয়ে ফোন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হয় দরজার দিকে। দরজা খুলে দিতেই তিশা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ‘ভউ’ বলে ভয় দেখায় নিভ্রকে। শান্ত নরম ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে নিভ্র। না সে তিশাকে দেখে অবাক হয়েছে, না ভয় দেখাতে ভয় পেয়েছে। তিশা কোমড়ে হাত রেখে সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা আপনি এমন কেন? আনরোমান্টিক কলা গাছ কোথাকার।”
-“এখানে কেন?”
-“ভাইয়ার সঙ্গে এসেছি।”
বলতে বলতে জিনান গাড়ি পার্ক করে এগিয়ে আসে। জিনানের দিকে তাকায়। এক সঙ্গে ড্রইংরুমে বসে ওরা।
-“কোনো কাজ ছিল?” নিভ্র প্রশ্ন করে।
-“তেমন বড়ো কোনো কাজ নেই। আবার ছোটও না।” জিনান আলস্যজনক ভঙ্গিতে বলে।
-“সরাসরি বল, না পেঁচিয়ে।”
-“তিশা তুই গাড়িতে গিয়ে বোস। আমি আসছি।”
টেরা চোখে একবার তাকিয়ে তিশা চলে যায়। জিনান মৃদু স্বরে বলে,
-“চাচ্চু, চাচিমা তোকে পছন্দ করেছে। তিশার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করতে চাইছে তারা।”
-“এটাতো ফোনেও বলতে পারতি। এখানে এসে বলার কি বেশি প্রয়োজন ছিল?” ভাবলেশহীন ভাবে বলে নিভ্র।
-“তিশা জেদ করছিল এখানে আসার। তাই আসতে হলো। তোর কোনো মতামত?”
-“সব জানিস। তবুও আমার মতামত চাইছিস।”
-“অতীতের কথা ভুলে যা। কেননা তুই তো আর ভালোবাসতি না ওঁকে। তাই এখন ওসব মনে রেখে লাভ নেই।”
-“না চাইছেও মনে পড়ে যায়। দিন শেষে ওর বিরহ গুলো আমায় তাড়া করে বেড়ায়। ভুলতে পারি না। ওর সেই অশ্রুসিক্ত চোখ, মলিনত্ব মুখ। খুব যন্ত্রণা দেয় আমায়। খুব!” আহত কন্ঠে জিনানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে নিভ্র।
জিনান কথা বলার বাক্য যেন হারিয়ে ফেলেছে। নবনীর বিরহে নিভ্র অজান্তেই ওঁকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা বুঝতে পারে সে। কিন্তু এখন বুঝে কোনো লাভ নেই। এখান থেকে বের হওয়ায় উত্তম। জিনান ফোস করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
-“মূল্যহীন জিনিসের যেমন দাম নেই, তেমন এই বিরহেরও কোনে মূল্য নেই। ভুলে যা।”
নিভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“চাইলেই কিছু বিরহ ভুলে যাওয়া যায় না জিনান।”
-“চেষ্টা করতে হবে।”
-“চাইছি না।”
-“তুই তোর বিরহকে রেখে দেয়। কিন্তু আমি তিশাকে তোর সঙ্গে বিয়ে দেবোই।”
-“বোনের জীবন নষ্ট করিস না।”
-“আমি তোর জীবনও নষ্ট হতে দেখতে পারব না।”
নিভ্রু জিনানের দিকে অসহায়ত্ব চোখে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নত করে রাখে। জিনান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিভ্রর নিকট এসে কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“তোর ওপর রাগ হলেও, রেগে বসে থাকতে পারি না। কেননা তুই আমার প্রিয় বন্ধু। তোর কষ্ট গুলো উপলব্ধি করতে পারি আমি। এতটুকু সেন্স আছে আমার। তিশা ভীষণ ভালো মেয়ে। তোকে পছন্দ করে। ওর সঙ্গে বিয়ে হলে তুই সুখি হবি নিভ্র।”
মৌন হয়ে রয়ে যায় নিভ্র। জিনানের কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। সবাই ওঁকে নিয়ে ভাবে। সুখি হতে বলে। কিন্তু একবারও সুখে থাকার বস্তুটি এনে দেওয়ার কথা বলে না। বলবেই বা কি করে, প্রতিবন্ধকতা বলে যে একটি বাক্য দেয়াল হয়ে মাঝখানে রয়েছে। নিভ্রকে নিরুত্তর দেখে জিনান অবার বলে,
-“একটু ভেবে দেখিস। চললাম।” স্থান ত্যাগ করে জিনান।
নিভ্র সেই একই ভাবে বসে রয়। কিছুক্ষণ বাদে টমি দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে ওর কাছে আসে। নিভ্র সম্বিৎ ফিরে পেল। টমিই আপাতত তার একনিষ্ঠ বন্ধ। আলতোভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
___________________
ফোনালাপ চলছে আদি ও নবনীর মধ্যে। খেয়েদেয়ে তারপর কথা বলতে শুরু করেছে। নবনী কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করে,
-“জিনান ভাইয়ার বিয়েতে আসবেন?”
-“নাহ! নতুন চাকরি ছুটি দিবে না।”
শুনে মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায় নববীর। ছোট করে বলে “ওহ!”
-“আসলে খুশি হতে?”
-“তেমন কিছু না।” মিনমিন করে বলে।
-“ভাবলাম হয়তো বলবে।”
-“বেশি ভেবে নিয়েছেন।”
-“বেশি ভাবা কি অন্যায়?”
-“সেটা তো বলি নি।”
নিরুত্তর থেকে যায় আদি। নবনীও চুপ করে রয়। দু’জনার মাঝে নীরবতা ভর করছে। নবনী এপাশ ফিরে মৃদুস্বরে বলে,
-“কিছু বলছেন না যে?”
নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদি বলে,
-“কতোকিছুই তো বলতে মনে চায়। একটা কথার সামনে কতো যে দ্বিধার দেয়াল! অতো বাঁধা টপকে কথাগুলো আর আওয়াজ পায় না, বুকের গহীন থেকে আরো গহীনে জমা হতে থাকে।”
-“জমা রাখলে কেউ দেখবে ও শুনবে না। বললে ভালো লাগবে, মনও হালকা হবে। আপনার জীবনে কি কেউ ছিল?”
-“নাহ! অনেক চান্স পেয়েছিলাম প্রেম করার। কিন্তু এসবের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না।”
-“ওহ! রাখছি, ঘুম পেয়েছে।”
-“এত তাড়াতাড়ি!”
-“সকালে ওঠে পড়তে হবে। কাল মায়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বিকেলে আর পড়া হবে না।”
-“বুঝলাম। ঘুমাও। গুড নাইট।”
-“গুড নাইট।”
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।