#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৮
#সুমাইয়া মনি।
ভোর পাঁচটার দিকে নবনী পড়তে বসে। পরিক্ষা অতি নিকটে। হেলামি দিলে চলবে না। শত কষ্ট, বেদনাকে দূরে ঠেলে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চায় সে। অতীন নয়, ভবিষ্যত নিয়ে এখন ভাবছে। কাল সন্ধ্যার আগে মায়াদের বাড়িতে যাওয়ার দরুণ বই পড়া হয় না। তাই ভোরে ঘুম কামাই দিয়ে পড়তে বসেছে। নবনীর পড়ার শব্দ নিলুফা বেগম শুনতে পায়। মেয়ের কাছে এলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন,
-“মাথার চুল গুলো বেঁধে নিতে পারতি।”
-“সমস্যা হচ্ছে না আম্মু।” বইয়ের দিকে নজর রেখেই বলে নবনী।
হাত সরিয়ে নিলেন তিনি। নবনীর দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে পুনরায় শুধালো,
-“আদিকে মেনে নিতে পেরেছিস কী?”
নবনীর পড়া থেমে যায়। হঠাৎ মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা থমকাল। চোখ তুলে না তাকিয়ে নরম স্বরে জবাব দেয়,
-“এখনো না আম্মু। তবে চেষ্টা করছি।”
বড়ো নিশ্বাস ফেলে সে। আবার বলে,
-“অতীতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার আশা করা বৃথা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবাই উত্তম।”
নবনী সরল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাতটি ধরে কৃত্রিম হেসে বলে,
-“আম্মু, আমি প্রতিনিয়তে অতীতকে দূরে ঠেলে ভবিষ্যতের কথা ভাবছি। অতীত আমার পূর্বে ছিল, এখন নেই। কিন্তু অতীত মাঝেমধ্যে না চাইতেও যখন সামনাসামনি হাজির হয় না। তখন নিজেকে সংযত করতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। তবুও ধৈর্য হারাই না। নিজেকে শান্ত শক্ত রাখতে শিখে গেছি। যে কোনো পরিস্থিতিতেই ভেঙে পড়ার সুযোগ নেই আর।”
-“অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই নবনী।”
-“বড় তো অনেক আগেই হয়েছিলাম আম্মু। শুধু বিবেক বুদ্ধি, ম্যাচুরিটির অভাব ছিল।”
ফের ভারী নিঃশ্বাস ছাড়েন তিনি। মেয়ের মাথায় পুনোরায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। নবনী সাতটার দিকে পড়া শেষ করে উঠে খেয়েদেয়ে কাঁধে ব্যাক চেপে কলেজের জন্য রওয়ানা হয়। সব ক’টি ক্লাস শেষ করে তিন বান্ধবী মিলে আগের দিনের মতো ক্যান্টিনে এসে বসে। মায়ার এনগেজমেন্ট হয়েগেছে। এই সপ্তাহেই বিয়ে। বিয়ের আয়োজন বড় করে করা হবে। বিয়ের জন্য ভীষণ নার্ভাস মায়া। মাথা নত রেখে এনগেজমেন্টের আংটি খুঁটছে নখ দ্বারা। নার্ভাসের চোটে কথা বলার বাক্য হারিয়ে ফেলেছে। খুশি মায়ার এমন নার্ভাসূলভ আচরণ দেখে এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,
-“এত নার্ভাস হবার কি আছে বুঝতেছি না। বিয়ে হবে তো হতে দে। নবনী তুই কিছু বল ওঁকে।”
-“মেয়েদের জীবনের বড়ো পরিক্ষার দাপ বিয়ে! স্বামীর হাত ধরে যখন মেয়েটি নতুন বাড়ি, নতুন সংসারে যায়। প্রতিনিয়তে ভাবে, শ্বশুর বাড়িতে সবাইকে মানিয়ে নিতে পারবে কি? মন জয় করতে সক্ষম হবে।”
-“এ সব ক’জন ভাবে বল নবনী। সবাই ভাবে বিয়ে হলেই মেয়েটি মুক্ত!” অসহায় কন্ঠে বলে মায়া।
-“শ্বশুর বাড়িতে গেলে সবাই শুধু দেখে মেয়ে তার বাবার বাড়ি থেকে কি নিয়ে এসেছে। অথচ একবারও ভাবে না মেয়েটি তার বাবার বাড়িতে কী ফেলে এসেছে। একটি মেয়েকে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বোঝার ক্ষমতা রাখে না তারা।” কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে বড়ো নিশ্বাস টানে নবনী।
-“সত্যি! আমি, তুই হয়তো ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি বিধায় এসব অনুভব করি না। আর যে মেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে আছে, কিভাবে ফেইস করছে সে?” করুণ স্বরে বলে খুশি।
-“মেয়েদের জীবনই এমন। তাই তো হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক’। -সহিহ মুসলিম।
ইসলাম ধর্মে নারীকে যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা প্রদান করেছে। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদের তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। -সূরা আন নিসা: ৪।”
নবনীর বলা হাদিস মায়া, খুশি মন দিয়ে শুনে। নারীদের দিয়ে আরো বিভিন্ন কথা বলে ওদের, যেগুলো ওদের অজানা ছিল।
কথার এক পর্যায়ে আদির কল আসে। নবনী ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে মাঠের পাশে বেঞ্চে এসে বসে ফোন রিসিভ করে আগের দিনের মতো সালাম দেয়। আদি সালামের উত্তর দিয়ে বলে,
-“ইন্টারভিউ সাকসেসফুল। মেনেজার পোস্টে চাকরি হয়েছে আমার। অবশ্য বাবার বন্ধুর কোম্পানি বলে সুবিধা হয় নি। এখন অফিসে আছি।”
-“অভিনন্দন!”
-“ধন্যবাদ। তো কেমন আছো?”
-“আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?”
-“শূন্যতায় ভুগছি।”
-“পূর্ণতা পাবেন কিভাবে?”
-“তোমাকে পেলে।” অকপটে বলে ফেলে আদি।
অজানা অনুভূতিতে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে নবনীর। হাতের মাঝে ওড়না খাঁমচে ধরে। ইদানীং আদির কথা গুলো তার হৃদয়ে বেশ লাগে। নবনীকে নীরব থাকতে দেখে মুচকি হেসে নিজে থেকে বলে,
-“তো? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
-“ভালো। আপনার?” ছোট্ট উত্তরে বলে।
আদি সরু নিশ্বাস টেনে বলে,
-“আছি একলা, মন চায় দুকলা, কবে যে হবো তেকলা।”
নবনী নিঃশব্দে হাসে। আদি বুঝতে পারে। নিজেও নবনীর মতো নিঃশব্দে মুচকি হাসে। আদি ফের জিজ্ঞেস করে,
-“কি করছিলে?”
-“ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ”
-“কার সঙ্গে?”
-“বান্ধবী দের সঙ্গে।”
-“নাম?”
-“মায়া, খুশি?”
-“সিঙ্গেল?”
-“জেনে কি করবেন?”
-“যদি লাইন-টাইন করা যায়। তুমি তো সায় দিচ্ছো না।”
-“মেয়ের অভাব নেই। আমার বান্ধবীরা মিঙ্গেল।”
-“তার মানে তুমি বলতে চাইছো অন্য মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করি। মানে পারমিশন?”
-“চালাকি করে কেউ যদি পারমিশন নিয়ে নেয়। আমি কি বলব বলুন।”
-“হাইরে পাগলিনী! ধরে ফেললে।” মুচকি হেসে বলে।
-“জি!”
-“জানো, মানুষ যদি একজনে আসক্ত হয়। দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে এনে দিলেও তার প্রতি সে আসক্ত হতে পারবে না।”
-“জানতাম না।”
-“বোকা পাগলিনী।”
নবনী মৃদু হাসে। আদি মুখে পাগলিনী নামটি ভালো লেগেছে। -“গেলাম।”
-“সবে তো কথা শুরু করলাম।”
-“আমি ক্যান্টিনে। বাসায় গিয়ে কথা বলব।”
-“কি আর করার, অপেক্ষা করা ছাড়া।”
-“রাখছি।” বলে ফোন রেখে দেয় নবনী।
আদি কান থেকে ফোন সরিয়ে নজর বন্দি রাখে স্ক্রিনের দিকে। স্মিত হেসে ফোন টেবিলের ওপর রেখে দেয়। আজ প্রথম দিন দেখে কাজ তেমন একটা নেই। সবার সঙ্গে পরিচিত হয়ে কিছুক্ষণ আগেই কেবিনে এসে বসেছে। তারপর নবনীকে কল দেয়। সে জানে এই সময় নবনী ক্যান্টিনে, নয়তো বাসায় থাকবে।
_________________
বিয়ের অর্ধেক দায়িত্ব নিভ্রর ঘাড়ে সঁপে দেয় জিনান। নিভ্র দায়ভার নিতে আপত্তি জানালেও জিনান কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। শপিং থেকে শুরু করে ডেকোরেশনের দায়িত্ব তার। আপাতত জিনান নিভ্রকে সঙ্গে নিয়ে শপিংমলে এসেছে।
একটি শেরওয়ানি নিয়ে চেঞ্জির রুমের দিকে এগিয়ে যায় জিনান। নিভ্র বিরক্ত মুখে উঠে করিডোরের দিকে হাঁটা ধরে। এখান থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজছে সে। দ্রুত হাঁটার কারণে হঠাৎ বেখেয়ালিতে একটি মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়। নিভ্র চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মেয়েটিকে একটা দেখেনিল। সাদা রঙ্গের সেলোয়ার-কামিজ পরিধান পরীর চেয়ে কম দেখাচ্ছে না তাকে। নিভ্র অতি বিনয়ী স্বরে বলল,
-“স্যরি, খেয়াল করি নি।”
-“ইট’স ওকে।”
কৃত্রিম হেসে চলে যাওয়া ধরলে মেয়েটি তার নাম ধরে ডেকে উঠে,
-“আপনি নিশ্চয় নিভ্র আহমেদ?”
উৎসুক দৃষ্টিতে নিভ্র ঘুরে তাকায় মেয়েটির দিকে। তার মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে প্রশ্ন। কিভাবে মেয়েটি তার নাম জানলো? হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় জিনান। মেয়েটিকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“হেই তিশা, কেমন আছিস তুই?”
-“ভালো ভাইয়া, তুমি?” জিনানকে ছেড়ে দিয়ে বলে।
-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ।”
-“ভালো তো থাকারই কথা। বিয়ে যো হচ্ছে তোমার।”
-“হপ! নিভ্র, তিশা আমার চাচাত বোন। আজই এসেছে চট্টগ্রাম থেকে।” নিভ্রর উদ্দেশ্যে বলে জিনান।
-“সে আমার নাম জানলো কি করে?” নিভ্র পাল্টা প্রশ্ন করে।
জিনান কিছুটা অবাক হয়ে তিশার দিকে তাকায়। তিশা মৃদু হেসে বলে,
-“ভেরি সিম্পল! জিনান ভাইয়ার ফেসবুক আইডিতে আপনার ভাইয়ার এক সঙ্গে ছবি দেখেছি। সেখানে আপনার আইডি মেনশন করা ছিল। সেভাবেই জানলাম।”
ডাউট ক্লিয়ার হয় নিভ্র ও জিনানের। জিনান বলে,
-“আমি এখানে কিভাবে জানলি?”
-“কাকি বলেছে। আমার ভাগ্য ভালো যে বেশি ঘুরতে হয়নি তোমাদের খুঁজতে। তার আগেই পেয়েগেছি।”
-“যাক ভালো হয়েছে। এবার এসে তোর হবু ভাবির লেহেঙ্গা চয়েস করে দে।”
-“চলো।”
-“আয় নিভ্র।” বলেই জিনান হাঁটা ধরলে নিভ্র বলে।
-“আমি এখন যাচ্ছি। তিশাকে নিয়ে বাকি শপিং করে নে। রাতে বাসায় আসব।”
-“যাবি? যাহ তাহলে।”
নিভ্র কথা না বলে দ্রুত এগিয়ে যায়। যেন সে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। নিভ্র যাওয়াতে তিশার কিছুটা মন খারাপ হয়। তবে রাতে বাসায় আসবে ভেবে খুশি লাগে। জিনানকে বলে,
-“ভাইয়া একটা সিক্রেট কথা বলি?”
-“বল?” ঘাড় ঘুরিয়ে তিশার দিকে তাকায়।
-“তোমার বন্ধু নিভ্র আমার ক্রাশ।”
-“সিরিয়াসলি?”
-“হ্যাঁ! যেদিন ফাস্ট তার ছবি তোমার সঙ্গে দেখেছিলাম। সেদিন থেকেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। প্রতিদিন তার আইডিতে এক বার দু বার করে ঘুরে আসি নতুন কোনো ছবি আপলোড দিয়েছে কি-না। কখনো কথা হয়নি। কিন্তু ইদানীং সে ফেসবুকেই আসে না। কেন বলো তো?”
অনলাইনে না আসার মূল কারণ নবনীর কথা মনে পড়ে যায় তার। টপিক পাল্টিয়ে বলে,
-“ব্যস্ত আছে তাই। এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
-“চলো।”
তিশা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। শ্যামল গায়ের রং। দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। সবার সঙ্গে বিনয়ী সুন্দর করে কথা বলে। জিনানের মতো তিশাও একা। ওর কোনো ভাইবোন নেই। জিনানের বিয়ে উপলক্ষে তার এখানে আসা। বিয়ের অর্ধেক শপিং সেরে তারা বাড়িতে ফিরে যায়। বাকি শপিং করার জন্য পরশু আবার আসবে।
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৯
#সুমাইয়া মনি।
সন্ধ্যার দিকে নিভ্রর বাধ্য হয়ে জিনানদের বাড়িতে যেতে হয়। কেননা বার বার জিনান ফোন দিয়ে বাড়িতে আসার তাগাদা দিচ্ছে। উপায় না পেয়ে নিভ্র চলে আসে এ বাড়িতে। ড্রইংরুমে বসে তখন জিনান এবং বাবা-মা, তিশা বিয়ের কার্ডের ওপর আত্মীয় দের নাম লিখতে ব্যস্ত ছিল। তিশা নিভ্রকে দেখে আনন্দিত। সর্বপ্রথম বিয়ের কার্ড জিনান নিভ্র এবং ওর পরিবারকে দেওয়া হয়। নিভ্র কার্ড হাতে নেয়। সবাই মিলে চা-কপি খায়। খানিকক্ষণ পর নিভ্রর ফোন বেজে উঠার দরুণ ড্রইংরুমের এডজাস্ট বারান্দায় এসে কথা বলতে থাকে। রুবিনা বানু ফোন দিয়েছে। দশ মিনিট কথা বলার পর ফোন রেখে দেয়। নিভ্র মৌন হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। আজও তার বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি। এতে নিভ্র বিরক্ত হয়েই এক প্রকার ফোন রেখে দেয়।
-“কিছু ভাবছেন কী?”
গেটের সামনে থেকে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটি বলে তিশা। নিভ্র তিশার দিকে একবার তাকিয়ে নজর সরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
-“তেমন কিছু না।”
তিশা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
-“আপনি সব সময় এমন চুপচাপ থাকেন কেন?”
-“নীরবতা আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু।”
-“এমনও হয় নাকি!”
-“হবে না কেন।”
-“আপনি সবার থেকে আলাদা একজন মানুষ।”
নিভ্র প্রতিত্তোরে মৃদু হাসি প্রদান করে। তিশা আবার বলে,
-“আপনার সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি।”
-“যেমন?” প্রশ্ন করে সে।
-“এই যেমন, আপনি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন, আপনার প্রিয় রং কালো, কুকুর পছন্দ করেন, লাভ হেট করেন। আচ্ছা আপনি ভালোবাসাকে ঘৃণা করেন কেন? ” পাল্টা প্রশ্ন করে তিশা।
-“আগে করতাম, এখন করি না।”
-“এমনটা কেন?”
-” অজানাই থাক।”
-“এমনটা করবেন না। রাতে আমার ঘুম হবে না। প্লিজ বলুন।” মিনতি স্বরে বলে তিসা।
-“উঁহু!”
-“যান, আর ফোস করব না।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।
তিশার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
-“ধন্যবাদ।”
-“আপনি পঁচা।” অভিমানি স্বরে বলে।
-“মেনে নিলাম।”
-“গুড!”
আরো অনেকক্ষণ যাবত তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তিশা অনেক মিশুক মেয়ে। সেটা ওর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারে নিভ্র।রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসে সে।
___________________
পরেরদিন নবনী কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরার পর জিনান ও নিভ্রকে দেখতে পায় ওদের বাড়িতে। ড্রইংরুমে বসে তারা নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথা বলছিল। মূলত জিনান তার বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে নবনীদের বাড়িতে। সঙ্গে নিভ্রকে নিয়ে এসেছে। নিভ্রকে দেখে নবনীর মন কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়। জিনান মিষ্টি হাসি প্রদান করে নবনীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“বিয়ের দাওয়াত রইলো নবনী। গায়ে হলুদ থেকে বৌ-ভাতের পরেরদিন পর্যন্ত।”
-“ওকে।” স্বাভাবিক ভাবে বলে নবনী। তারপর ফিরে আসে নিজের রুমে। নিভ্র নবনীর দিকে তাকাতে চেয়েছিল না। কিন্তু নবনীকে এক নজর দেখার জন্য এ বাড়িতে সে এসেছে। তাই লোভ সামলাতে পারেনি। ওঁকে এত শক্ত স্বাভাবিক থেকে নিভ্রর কেন জানি ভালো লাগে। বুঝতে পারে অতীত থেকে সে বের হতে সক্ষম হয়েছে। কিছুক্ষণ পর চলে যায় তারা। নবনী বিছানায় জড়ো হয়ে হাঁটর ওপর মাথা রেখে বসে রয়েছে। মনে ঝড় বইছে। আদির সঙ্গে এখন সে ভালোই আছে। সারাক্ষণ কাটে বই পড়ে এবং আদির সঙ্গে কথা বলে।
কিন্তু মাঝেমধ্যে নিভ্র নামক ঝড় এসে তাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। জানা নেই তার কবে এই ঝড় থেকে মুক্তি মিলবে। ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। এই সময় আদি ছাড়া আর কেউ তাকে কল দেওয়ার মতো নেই। স্ক্রিনের দিকে নজর পড়তেই আদির নাম থেকে তার ধারণা সঠিক হয়। ফোন রিসিভ করে চুপ করে রয়। আগের দিনের মতো সালাম না দেওয়ায় আদি নিজেই সালাম দেয়। নবনী জবাব দিয়ে এবারও নিশ্চুপ থাকে। আদি কিছুটা আন্দাজ করতে পারে নবনীর মন খারাপ। মনে হচ্ছে এখনই অশ্রু বর্ষিত হবে। সরাসরি জিজ্ঞেস করে,
-“মন খারাপ নাকি?”
-“হুম।”
-“হঠাৎ?”
নিরুত্তর থেকে যায় নবনী। আদির মনটাও যেন নিমিষেই বিষণ্ণতায় ঘিরে দাঁড়ায়। এমনই বুঝি হয়! প্রিয় মানুষটির মন খারাপ থাকলে অপর ব্যক্তির মন মলিনতায় জড়িয়ে যায়।
হায় ভালোবাসা!
আদি বিমর্ষ কণ্ঠে বলে,
-“কেঁদোনা, মন খারাপ কোরো না। মনে রেখো, তোমার একটুখানি মন খারাপেও শত মাইল দূরে বসত করা একজনের চোখমুখ কালো হয়ে যায়। বুকের ভেতর ঝড় ওঠে। তুমি কি চাও তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হোক?”
আদির কথাটি তীরের মতো বিঁধে যায় নবনীর বুকে। সে কিছুতেই চাইবে না তার জন্য অন্যের হৃদয় দমে যাক। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“নাহ!”
-“নিজের ওপর আশ্বাস রাখো। মন খারাপের কারণ গুলোকে এড়িয়ে চলো। কিছুতেই নিজেকে অসহায় মনে কোরো না। একটি কথা মাথায় রাখবে, তুমি একা নও, তোমার জীবনে একজনের আগমন হয়েছে। সম্পর্কে তুমি তার অর্ধাঙ্গিনী!”
বুকটা যেন ভরে উঠলো আদির বলা বাক্যগুলো শুনে। আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। আজ তাকে সামলানোর, আশা-আকাঙ্ক্ষা জোগানোর মানুষ পেয়েছে। যে তাকে সব সময় আগলে রেখে সাহস জুটাতে সাহায্য করবে।
নবনীর উত্তের অপেক্ষা না করে আদি নিজ থেকে বলে,
-“এবার কি তোমার পতিকে বলবে, কেন মন খারাপ?”
নবনী চোখ মেলে বিরসমুখে বলে,
-“একদিন বলব নিশ্চয়!”
-“আজকাল দেখছি মন খারাপের বাক্য গুলো অন্য দিনের জন্য তুলে রাখছো?”
-“কিছু সময়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।”
-“সেই সময়ের অপেক্ষা করলাম।”
-“শুকরিয়া।”
-“তা এখন কি করা হচ্ছে? নিশ্চয় মন খারাপের সঙ্গে নীরবতা পালন করছো?”
-“হুম।”
-“ঠিক ধরেছি।” হেসে বলে আদি।
নবনী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অপর পাশ থেকে আদি সেটি শুনতে পায়। আদি চেয়ারের সঙ্গে পিঠ এলিয়ে বলে,
-“রহস্যময় নারী তুমি। তোমার এই রহস্যময়তা-ই তোমাকে স্পেশাল করে তুলে।”
-“কেন মনে হলো আমি রহস্যময় নারী?”
-“নিজ থেকে বুঝে নেও।”
-“বলবেন না?”
-“উমম! নাহ।”
নবনী মৌন হয়ে রয়। আরো আধা ঘণ্টার মতো ফোনালাপ চলে তাদের। একজন স্টাফ আদির কেবিনে আসার দরুন না চাইতেও ফোন রেখে দিয়ে হয় তাকে। নবনীর মন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আদিকে তার মন খারাপের ঔষধ হিসাবে গন্য করে নেয়।
___________
মায়া নবনীকে সঙ্গে নিয়ে জিনানের জন্য ঘড়ি এবং সঙ্গে আরো কিছু জুয়েলারি কিনার জন্য শপিংমলে আসে।
ঘড়ি কিনে জুয়েলারি দোকানের সামনে থেকে আসার সময় নবনী দাঁড়িয়ে যায়।খেয়াল না করায় পিছনে ফেলে মায়া এগিয়ে যায়। সেখানে একটা মেয়ে পুতুলের পরনের লেহেঙ্গাটি তার পছন্দ হয়। গর্জিয়াছ কাজ বিহীন ব্লু রঙের লেহেঙ্গাটি তার মনে ধরে। একবার স্পর্শ করে। তখনই জুয়েলারি দোকানের ভেতর থেকে মায়ার ডাক শুনতে পায়। নবনী দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। লেহেঙ্গাটির কথা সে প্রায় ভুলে যায়। কেনাকাটা শেষ করে তিনটার দিকে বাড়িতে ফিরে তারা।
.
.
সকালে নবনী ঘুম থেকে একটু লেট করে উঠে। অবশ্য কাল বৃহস্পতিবার ছিল বিধায় রাতে জেগে বই পড়ার ফলে ঘুমাতে দেরি হয়। যার দরুন ন’টায় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। খাবার নিয়ে টিভি ছেড়ে সোফায় বসে পড়ে সে। অনেক পুরোনো দিনের অভ্যেস আজ পুনোরায় আওড়াচ্ছে। রুটি ছিঁড়ে ভাজি মেখে মুখে তুলতেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। নবনী উঠার আগেই নিলুফা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দেয়। একটি ডেলিভারি বয়কে দেখতে পায়। সে নবনীর নামে পার্সেল এসেছে খবরটি তাকে বলে। নিলুফা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে,
-“হ্যারে..তুই কিছু অর্ডার দিয়েছিলি নবনী?
নবনী মনে করার ভঙ্গিতে বলে,
-“কই নাতো।”
-“তাহলে পার্সেল এসেছে যে তোর নামে।”
-“কই দেখি।” বলতে বলতে উঠে দরজার কাছে আসে। ছেলেটির হাত থেকে প্যাকেটটি নেয়। তাদের বাড়ির ঠিকানা ব্যতীত আর কিছু লিখা নেই। নবনী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“কে দিয়েছে?”
-“আই ডোন্ট নো ম্যাম। আমার কাজ শুধু পার্সেল ডেলিভারি করা।” ছেলেটি বিনয়ী কণ্ঠে বলে।
নবনী পার্সেলটি হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দু’জনার তীক্ষ্ণ নজর এখন পার্সেলটির উপর। কোনো আইডিয়া নেই তার। সোফায় বসে খুলতে আরম্ভ করে প্যাকেটটি
পুরো খুলে ফেলার পর নবনী প্রায় বিস্মিত। এটি সেই লেহেঙ্গা যেটা কাল শপিংমলে দেখেছিল । কিন্তু অদ্ভুত বিষয় লেহেঙ্গাটি কে দিলো? আর জালনই বা কি করে তার পছন্দের ব্যাপারে। ভাবতেই নবনীর মস্তিষ্ক অচল অনুভব করে।
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।