#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৪
#সুমাইয়া মনি।
একদিন থেকে পরেদিন সকালে আদি, নবনী ফিরে আসে এবাড়িতে। আসার পর নবনী রানী খাতুন ও রুবিন বানুর সঙ্গে ড্রইংরুমে বসে টুকটাক কথা বলছিল। আদি সেই মুহূর্তে তার তিন জন বন্ধুদের নিয়ে ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হয়।
মূলত আদি নবনীর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছে। নবনী সালাম দিয়ে কথা বলে সঙ্গে। নাস্তা দেওয়া হয় তাদের। কথা বলার মধ্যমে তারা অনেকটা ফ্রি হয় নবনীর সঙ্গে। এর মধ্যে নিভ্র সেখানে উপস্থিত হয়। ওঁকে দেখে নবনীর অস্বস্তি বোধ করে। আদি নিভ্রকে সবার সঙ্গে বসতে বলে। সেটা শুনে নবনী ‘একটু আসছি’ বলে সে উঠে বাহিরের গার্ডেনে আসে। নিভ্র সেটি বুঝতে পারে। মনে মনে তার রাগও হয়।
মৃদু ঝিরিঝিরি বাতাস ছিল বাহিরে। গাছের ফুল গুলো দুলছে। হেঁটে ফুলের বাগানের কিছুটা কাছে এগোয়। তখনই সে খেয়াল করে এখানে যে যে ফুল গাছ লাগান আছে। ঠিক তেমনি নিভ্রর বাড়িতেও ফুল গাছ আছে। উদাস হয়ে যায় সে। পিছনে সরে আসতে নিলে হঠাৎ কারো সঙ্গে ধাক্কা লাগায় দ্রুত পিছনে ফিরে চোখ তুলে তাকায়। নজরে পড়ে নিভ্রকে। দ্রুতগতিতে চোখ নামিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া ধরলে নিভ্রর কাঠিন্য স্বরে ‘নবনীতা’ ডাক শুনে থেমে যায়। কিন্তু সে পিছনে ফিরে তাকায় না। চোখ জোড়া বন্ধ করে হাত মুঠোবন্দীতে ওড়না চেপে রাখে নবনী। তার পুরো নামটি এক সময় যখন নিভ্রর মুখে শুনতো, সে খুশিতে দিকদিশা হারিয়ে ফেলতো। কিন্তু আজ তার মুখে নামটি শুনে মন অশান্ত লাগছে। কেমন অস্থির বোধ করছে সে। পুনোরায় নিভ্রর কঠোর কণ্ঠের স্বর শুনতে পায় নবনী,
-“কিছু কথা বলতে চাই।”
উত্তর দেয় না নবনী। স্থির হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়। নিভ্র নবনীর পিঠের দিকে তাকায়। বুঝতে পারে নবনীর দাঁড়িয়ে থাকার কারণটি। নিভ্র মৌন হয়ে রয় সেকেন্ড কয়েক। তারপর ফের বলে,
-“আদিকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। ওর জীবন থেকে চলে যাও তুমি।”
বাকহারা পাখিরা যেমন বাসা ভেঙে যাওয়ার শোকে শোকাভিভূত স্থির হয়ে রয়। তেমনই নবনী নিশ্চুপ, বাকরূদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয় সেভাবেই। নবনী বিয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে হয়ে গেছে সেটা জানার সত্বেও সে কিভাবে এই কথাটি বলতে পারল, বুঝতে পারছে না। সে তো আদিকে ইচ্ছে করে বিয়ে করেনি। শুধু মাত্র মামার মানসম্মানের দিকে চেয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আর যখন বিয়ে হয়ে গেছে। তবুও সে চাইছে তাদের ডিভোর্স হোক। নবনীর চুপ থাকাকে উপেক্ষা করে নিভ্র নিজ থেকেই আবার বলে,
-“আমার জন্য যেমন তুমি পারফেক্ট নও, তেমন আদির জন্যও নও! আমি চাই না তুমি আমার ছোট ভাইয়ের জীবন জীবনসঙ্গী হয়ে থাকো। তুমি নিজ থেকে আদিকে ডিভোর্স দিলে কেউ কিচ্ছু ভাববে না। আমি তার সব ব্যবস্থা করে দিবো।”
রাগে ফুঁসছে নবনী। চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে রাখে সে। নিজের কথা বন্ধ রেখে সে আদির কথা ভাবে। নিজের কথা না ভেবে পরিবারের জন্য স্যাকরিফাইস করতেও ভাবে নি আদি। আর এখন তার ভাই কি-না নিরদ্বিধায় তাদের বিচ্ছেদের কথা উল্লেখ করছে। কেমন ভাই সে? ঘুরে তাকায় পিছনের দিকে। নিভ্রর চোখে চোখ রেখে কপাট কন্ঠে বলে,
-“আপনাদের চেয়ে আমাদের অবস্থান কম নয় যে আপনি আমাকে ছোট বলে অপমান করছেন। প্রথম দিন না হয় আমি আপনাকে সঠিক বলে মনে করে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আজ আমার ধারণা হয়ে গেছে আপনি কতটা কিট প্রকৃতির লোক।”
-“নবনীতা তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে কিট বলার।” রেগে বলে সে।
-“সাহস নয়,অধিকারের জোরে বলছি। ঘৃণা লাগছে আমার, আপনার মতো লোককে ভালোবেসে ছিলাম । স্যরি! ওটাকে তো বোধহয় ভালোবাসা বলেই না। ভালোলাগা, মোহ বলে, আমার পাগলামো ছিল সেটি। ভুল সময় ভুল মানুষকে আমার ভালোলেগে গিয়েছিল। আপনি আমাকে অপমান করেছেন। আপনার যোগ্য নই, আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার ভালোবাসা? তাকে অপমান করার রাইট আপনার ছিল না। যে ব্যক্তির মধ্যে ভালোবাসা নেই, ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধ নেই, তাকে কিছুতেই ভালোবাসা যায় না। পাগল ছিলাম আমি, মহা পাগল যে আপনাকে…।
এখন সব ক্লিয়ার। ইচ্ছে করে আপনার ভাইকে আমি বিয়ে করিনি, সেটা আপনি নিশ্চয় জানেন। না আমি জানতাম আপনি তার বড়ো ভাই। আপনার ভাই আমদের সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে চায়। আমাকে সময়ও দিয়েছি। কিন্তু আমি! পড়ে ছিলাম সেই ভালোবাসা, ভালোলাগা, অহেতুক মোহর পিছনে। আসলে একজনকে মনে জায়গা দিলে, সহজে তাকে বের করা যায়। আমার ভালোবাসা এতটাও সস্তা নয়। চাইলেই বেচে দিবো। তবে চেষ্টা করব, সময় দিবো আমাদের সম্পর্ককে আগে বাড়ানোর। বিচ্ছেদের জন্য নয়। বাঙ্গালী মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়। যেটা যে কোনো পরিস্থিতিতেই হোক না কেন।” কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে নবনী থামে।
নিভ্র অনিমেষ দৃষ্টিতে নবনীর কথা গুলো শুনছিল। তার ভেতরে এখন রাগ, অপমান বোধ হচ্ছে। আজকের নবনী, আগের নবনীর মধ্যে আকাশ – পাতাল পার্থক্য দেখতে পাচ্ছে সে। এ কি সেই নবনী? যার মধ্যে মার্জিত, ডিসেন্ট ম্যানার টুকু ছিল না। হতবিহ্বল নিভ্র!
দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না নবনী। ওর চোখ ছলছল করছে। বুকের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া ধরলে মাঝ পথে থেমে যায়। পিছনে না ফিরে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“সত্যিই আমার একটা ধাক্কা খাওয়ার খুব প্রয়োজন ছিল। নয়তো আমার হুঁশ ফিরতো না। এখন আমি আর বাচ্চা নেই। অনেক বদলে গেছি। বাস্তবতা শিখেছি, বুঝেছি। চঞ্চল খাপছাড়া অগোছালো মেয়েটা আজ জীবনের মূল্য বুঝতে শিখেছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। ইমম্যাচিউর মেয়েটিকে ম্যাচিউরিটি শিখানোর জন্য।” বলেই সে দ্রুত প্রস্থান করে।
নিভ্র নবনীর যাওয়ার দিকে মৌন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। নবনীর বলা প্রত্যেকটা কথা তার বুকে এসে বিঁধেছে। কেন জানি নিজেকে দোষী বলে মনে হচ্ছে। খারাপ লাগছে। পরিস্থিতির কারণে হলেও আজ নবনী ম্যাচিউর হয়েছে, যেটা তার বুঝতে অসুবিধা হয় না। নবনীর বলা কথাটিই কি তাহলে সত্যি। আসলেই কি সে কিট?
.
রুমের জানালার সামনে এসে দাঁড়ায় নবনী। খুব কান্না পাচ্ছে তার। নিভ্রর কাছ থেকে এমন বার্তা সে এক্সপেক্ট করেনি। এটা কি তার নিয়তি, নাকি পরিনতি? কান্না আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করেও পারে না। চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
-“নবনী শুনুন।”
পিছন থেকে আদির কণ্ঠের স্বর শুনতে পেয়ে দ্রুত চোখ মুছে ফেলে ঘুরে তাকায়। বলে,
-“বলুন।”
-” কিছু কথা ছিল? কিন্তু তার আগে বলুন? আপনার কি মন খারাপ?”
-“নাহ।” ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে।
-“কেন জানি মনে হচ্ছে। আচ্ছা শুনুন, আপনার তো পড়াশোনা রানিং। আপনি কি ঢাকার কলেজ থেকে টিসি নিয়ে এখানের কলেজে ভর্তি হবেন? নাকি এই এক বছর পড়ে সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি এখানে হবেন?”
আদির পানে তাকায় সে। যে কথাটি তাকে বলতে চেয়েছিল। সেটি সে নিজ থেকেই বলছে। কিছুক্ষণের জন্য আদিকে অন্তর্যামী বলে মনে হয় তার। আপাতত সে এখানে থাকতে চাইছে না। এখানে থাকতে হলে তাকে নিভ্রর ফেইস হতে হবে। তাই সে দ্বিতীয় অপশনে আগ্রহ পোষণ করবে ভাবে। মৌন কাটিয়ে বলে উঠে,
-“আমি এই বছরটি ঢাকাতেই পড়তে চাই।”
নবনী উত্তর আদি আগে থেকেই জানত। তাই তার মন খারাপ হচ্ছে যায় কিছুটা। এ দু’দিনে আদি নতুন করে কাউকে পেয়েছে। যার সঙ্গে সে টাইম স্পেইন করতে পারে। বলে,
-“ঠিক আছে। আপনার তো কলেজ খোলা। তাই আব্বুকে বলে কাল আমি, আপনি নিভ্র ভাইয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো।”
স্বাভাবিক ভাবে তাকায় নবনী। পরক্ষণে ভ্রুকুটি কিঞ্চিত বাঁকিয়ে তাকাতেই আদি বুঝে ফেলে,
-“সমস্যা নেই। আব্বু আমাকে না করবে না।”
বুঝতে পারল সব বিষয়। কিন্তু নিভ্রর বিষয়টি সে বুঝতে পারেনি। তার জন্য তো মেয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সে কেন এত দ্রুত ঢাকা ফিরে যাবে। বুঝতে পারছে না নবনী।
-“আচ্ছা আমি ওদের বিদায় দিবে আসছি। পরে কথা হবে।” বলেই আদি রুম ত্যাগ করে। নবনী খাটের উপর এসে বসে। বার বার কেন যে তার নিয়তি নিভ্রর মুখোমুখি হতে বাধ্য করছে। তবে এখন তার সময়টি এমন হয়েছে কিছুতেই সে চমকে না, সহজে অবাক না, খুশি হয় না। এখন ওর নিত্যদিনের সঙ্গী কষ্ট।
.
আপন সি,আই,ডি-এর চাকরি থেকে রিজাইন নিয়ে এসেছে। সে এখন আর সি,আই,ডি-এর কর্মকর্তা নয়। বিষয়টি সবাই জেনেও আপনকে কিছু বলে না। কারণ তারা চায় আপন যেভাবে থাকতে চায় থাকুক, ভালো থাকুক। সেদিনের পর থেকে আপনের সঙ্গে তনুশ্রীর বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলে না কেউ। না তারা চায় এই বিষয়ে কথা বলতে। যেটা হয়েছে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো বলে মনে করে সবাই। তারা এটাও চায় আপন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।
আপনের রিজাইন নেওয়ার কারণ ছিল তনুশ্রী। এসবের মধ্যে যে জড়িয়ে আছে সে।
_____________
পরের দিন ভোর বেলায় তারা তিনজন গাড়িতে করে রওয়ানা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। ড্রাইভিং সিটে নিভ্র, তার পাশে আদি। পিছনে নবনী। আদি কথা বলছে নিভ্র হ্যাঁ, না উত্তর দিচ্ছে। ক’য়েক বার নবনীর সামনাসামনি হবার পরও নিভ্র ওর দিকে তাকায়নি। নবনী নিজেও নজর সব সময় এদিক সেদিক ঘুরিয়ে রেখেছিল। জানালার পানে চেয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে নবনী। এই দু তিনে আদির পরিবার নিভ্র, আপন বাদে বাকিরা তাকে অনেক আপন করে নিয়েছে। তারা যেতে দিতে চাইছিল না। কিন্তু নবনীর পড়াশোনার কথা ভেবে তারা না করে নি।ঢাকায় তার নিজের বাবার বাড়িতেই থাকবে। এতে করে নবনী অনেকটা নিভ্রর কাছ থেকেও দূরে সরে থাকতে পারবে। নিভ্র বিয়ের জন্য সবার কাছে এক মাস সময় চেয়েছে। তারপরই মেয়েদেখা শুরু করবে তারা। এই জন্যই সে ঢাকাতে আসার সুযোগ পেয়েছে। আর তখন আদিও নবনীর পড়াশোনার ব্যাপার আলাপ করে। যার দরুণ এখন তারা গাড়িতে। লম্বা সফর। নিভ্র একা ড্রাইভ করবে বলেছে।
আদিকে ড্রাইভ করতে সে দিবে না।
রাত দশ-টা নাগাদ তারা পৌঁছে যায় ঢাকা। নিভ্র নবনীদের বাড়িতে যায় না। শুধু আদি, নবনী আসে। নিলুফা বেগম খুশি হয় তার মেয়ে আরো এক বছর এখানে থাকবে ভেবে।
আদির আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি সে রাখে না। এক হাতে সব পদের রান্নার কাজ সামলেছে। রাতে এক সঙ্গে তারা খাবার খেতে বসে। সঙ্গে নিভ্রও ছিল। মাহবুব হাসান ওঁকে ডেকে এনেছে। মানবতার খাতিরে নিভ্রকে এ বাড়িতে আসতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা খাবার খাচ্ছিল, নবনী ততক্ষণ রুমেই ছিল। নিভ্র চলে যাওয়ার পর সে বের হয়। আদি নিয়ানকে নিয়ে নবনীর রুমে আসে। নবনী খাবারের সঙ্গে নিলুফা বেগম ও মাহবুব হাসানের সঙ্গে টুকটাক কথা বলছিল। তারা মেয়েকে পেয়ে ভীষণ খুশি ছিলেন।
আধাঘন্টা পর নবনী রুমে আসে। তখন আদি খাটের উপর বসে একটি পরিক্ষার পেপার পড়ছিল আর মুচকি মুচকি হাসছে। নবনী একটু কাছে এসে পেপারের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সেটি নিয়ানের। আদি হেসে বলে,
-“নিয়ান তো বেশ ভালো ছাগল রচনা লিখেছে।”
নবনী আদির হাসির কারণ এবার ধরতে পারে। সে আগেই এটি অনুমান করেছিল। বলে,
-“হ্যাঁ।”
-“ছাগল থেকে ছাগা। বেশ ভালো।” বলে হেসে ফেলে আদি।
নবনীর হাসতে ইচ্ছে করছে না। সে চলে যায় অতীতে। তখনকার দিন গুলোও ভালো ছিল। না ছিল বিষাদ, না কষ্ট।
সারাদিন মায়ের সঙ্গে দুষ্টুমিতে সময় কাঁটত। বোরিংনেস তার ডিকশনারীতে ছিল না। আর এখন! তার জীবন বদলে গেছে। নতুন মানুষ জুড়ে গেছে তার জীবনে। শুরু হয়েছে নতুন পথচলা। ফোস করে নিশ্বাস ফেলে সে। বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হবে। এটাই যে নিয়ম।
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৫
#সুমাইয়া মনি।
সকালে নিভ্রর বাইকে নবনীকে কলেজে নিয়ে যায় আদি। প্রথমে তো নিলুফা বেগম নিষেধ করেছিল আজ কলেজে যেতে। কিন্তু পরক্ষণে আদি যেতে দেয়। যতক্ষণ নবনী ক্লাস করছিল, ততক্ষণ আদি লাইব্রেরীতে ছিল। বই পড়ে সময় ব্যয় করছিল সে। বইয়ের এক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নেয় সে। এমন করতে করতে এগারোটা বেজে যায়। নবনী লাস্টের ক্লাস মিস করে ক্যান্টিনে এসে বসে। সঙ্গে মায়া ও খুশি ছিল। মূলত কুমিল্লা যাওয়ার পর বিয়ের ঘটনা আর নিভ্রর বলা কথা গুলো সব খুলে বলে ওদের। এই জন্য আদিকে ক্যান্টিনে আসতে বলে না। ওর সামনে নিভ্রর কথা বলতে পারবে না তারা। সব বলা শেষে মায়া নবনীর বাহুতে আলতো হাত রেখে বলে,
-“তোর ওপর দিয়ে কি যাচ্ছে বুঝি আমরা। নিজেকে আদির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবি তো নবনী?”
-“চেষ্টা!” সরু নিশ্বাস ফেলে বলে নবনী।
-“ঐ নিভ্রকে অনেক কিছু বলতে মন চায়। কিভাবে বলতে পারল ডিভোর্স দিতে।” খুশি মেকি রাগ নিয়ে বলে।
-“ছাড়! আল্লাহ যা ভাগ্যে লিখেছে তাই হবে। বলে লাভ নেই।” নবনী মৃদুস্বরে বলে।
-“দুঃখ করিস না নবনী।”
-“আমি নিজের জন্য দুঃখ করি না। দুঃখ তো লাগে আপন ভাইয়া আর তনুজা আপুর জন্য। তাদের জীবনটা ভিন্ন হয়ে গেল।”
-“আসলেই!” দৃষ্টি নত করে বলে খুশি।
-“জানি না আপু স্বাভাবিক কবে হবে।”
কথাটি বলার বল তিন জনার মধ্যে কিছুক্ষণ নীরবতা কেটে যায়। পরক্ষণে নবনী উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“আমি চলি রে। সে আমার জন্য লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করছে।”
-“আচ্ছা।”
নবনী দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় লাইব্রেরীর দিকে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই চুলের ছোট্ট কাঠিটি খুলে যায়। পিছনের হাত রেখে থেমে যায় নবনী। হিজাব পড়া অবস্থায় আছে। এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। সকালে মাথা না আঁচড়িয়েই কাঠি দ্বারা চুল আটকিয়ে তার উপর হিজাব পড়ে ছিল। যার দরুণ এখন মহা মুশকিলে পড়তে হয় তাকে। কি করবে বুঝতে পারছে না।
আশেপাশে তেমন ছাত্রছাত্রীদের দেখা যাচ্ছে না। তাই পাশে সরে হিজাবের ক’টি পিন খুলতেই মনে পড়ে লাইব্রেরীর কথা।
লাইব্রেরীর পিছনের ওদিকটায় আয়না ফিট্ করা আছে। সেখানে কারো আনাগোনা নেই। এই ভেবে হিজাব সেভাবেই রেখে আবার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে আরম্ভ করে।
কিছুক্ষণ বাদে লাইব্রেরীর সামনে পৌঁছায়। দরজায় কাছে এসে ভেতরে প্রবেশ করতেই আচমকা তীব্র বাতাসে হিজাব খুলে এলোমেলো চুল গুলো উড়তে আরম্ভ করে। সব মুখের ওপর এসে পড়ে চুল। এদিকে আদি গেটের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। নবনীর হিজাব খুলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে চোখ পিটপিটিয়ে তাকায়। বুঝার চেষ্টা করছে কি থেকে কি হলো। তবে খোলা চুলে নবনীকে তার কাছে স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগছে। যেন মনে হচ্ছে কোনো এলোকেশী কন্যার প্রবল আসক্তিতে আঁটকে গেছে। নজর সরানো দায় হয়ে গেছে। তার মোহমত্ততা প্রেমে পড়ে গেছে সে। নেশাতুর চোখে দেখছে নবনীকে।
এদিকে নবনী কিছুতেই বাতাসের বেগে আগে, পিছনে যেতে আসতে পারছে না। আদিতে স্ট্যান ফ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিতে মেকি রাগ নিয়ে বলে উঠে,
-“উফফ! ফ্যানটা বন্ধ করুন।”
আদির নেশা কেটে যায়। দ্রুত ফ্যান বন্ধ করে অপরাধী চোখে তাকায় নবনীর পানে। একটু আগে ওপরের স্লিম ফ্যানে তেমন বাতাস হচ্ছিল না দেখে উঠে গিয়ে স্ট্যান ফ্যান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্যানের মাথা ঘুরিয়ে সুইচ লাগানোর পর অন করতেই এমন পরিস্থতির সম্মুখীন হতে হয় তাকে ও নবনীকে। আসলে ফ্যানের মুখ ছিল বরাবর দরজার দিকে।
সে ইচ্ছে করে কিছু করেনি। অজান্তেই হয়ে গেছে। না জানত নবনী এখন লাইব্রেরীতে আসবে। নবনী দ্রুত হিজাব দিয়ে মাথায় ঘোনটা টেনে নেয়। সেদিনের মতো ক্লাস চলছিল সকল স্টুডেন্টদের, তাই লাইব্রেরীতে তারা ব্যতীত আর কেউ ছিল না। আদি অপরাধ বোধ নিয়ে এগিয়ে আসে নবনীর দিকে। বলে,
-“স্যরি!”
নবনী আদির কথায় পাত্তা না দিয়ে দ্রুত হেঁটে পিছনের দিকটায় যায়। আদি লজ্জামুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার কাছে বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ লাগে। নবনী যে রেগে গেছে তার ওপরে, উত্তরে না দেওয়ার ফলে সেটা বুঝতে পারে আদি। কয়েক সেকেন্ড পর নবনী হিজাব বেঁধে ফিরে আসে। আদি নবনীকে দেখে চটজলদি বলে উঠে,
-“আমি আসলে ইচ্ছে করে ফ্যান…. ”
-“বুঝেছি, বলতে হবে না আপনার।” হাত জাগিয়ে নরম স্বরে বলে নবনী।
-“সত্যি?”
-“জি।”
-“যাক, বোঝার জন্য ধন্যবাদ।” কিছুটা খুশি হয়ে বলে।
-“চলুন,আমার ক্লাস শেষ।”
-“ক্যাফেতে যাবেন নাকি পার্কে…যদি আপনি রাজি থাকেন তো। নয়তো ডিরেক্ট বাসায় যাব।”
নবনী কিছুক্ষণ মৌন থেকে জবাব দেয়,
-“আপনার যেখানে ইচ্ছে চলুন।”
-“তাহলে পার্কে চলুন। আমার পছন্দের একটি পার্কে নিয়ে যাব আপনাকে।”
নবনী মুখে কিছু না বলে আগে হাঁটা ধরে। আদি নবনীর এমন নীরবতায় কিছুটা বিব্রতবোধ করে। তারপর পিছনে হেঁটে কলেজের গেটের কাছে এসে থামে। আদি বাইকে বসে স্টার্ট দেয়। নবনী উঠে সোজা হয়ে বসে। আদি ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
-“ধরে বসুন, নয়তো পড়ে যাবেন।”
নবনী প্রতুত্তরে চুপ করে বসে রয়। আদিকে ধরার প্রয়োজন বোধ করছে না সে। চলতে শুরু করে বাইক। নবনী সামনে দিয়ে তাকিয়ে আছে। আদি আয়নার মধ্যে একবার নবনীকে দেখে নেয়। তারপর সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ কর নবনীর উদ্দেশ্য মৃদু হেসে বলে,
-“আচ্ছা ধরুন, আজ যদি আমি আপনি প্রেমিক-প্রেমিকা হতাম তবে কি আমাদের মাঝে এতটা দুরত্ব থাকতো?”
নবনী আদির কথা শুনে ভ্রুকুটি কিঞ্চিত বাঁকিয়ে আয়নার মধ্যে দিয়ে আদিকে একবার দেখে নেয়। সরল মুখখানায় দুষ্টমির ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। কিছুটা বিরক্ত বোধ করে নবনী। আদি নবনীর ফেইস আয়নার মাধ্যমে দেখে সেটা বুঝতে পারে। ফের বলে উঠে,
-“স্বামী – স্ত্রী সম্পর্ক নাকি পবিত্র সম্পর্কের বন্ধন। সেটা নিশ্চয় শুনেছেন?”
এবার নবনীর ভ্রু দু’টি আরো কুঁচকিয়ে যায়। আসলে আদি কি বুঝাতে চাইছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে সে। আগের বারের মতো উত্তর দেয় না নবনী। নজর সরিয়ে নেয় অন্যদিকে। এই বিষয়ে কথা বলার ইচ্ছে নেই তার। আদি এইবার অপমান বোধ করে। তবে রাগ হয় না তার। কিছুতেই বিরক্ত করা টেকনিকটি নবনীর উপর প্রভাব পড়তে না। বার বার ব্যর্থ হচ্ছে সে। কিন্তু সে থেমে যাবে না। বিরক্ত করার চেষ্টা ততক্ষণ চালাবে যতক্ষণ না সে নবনীর রাগী ফেইস দেখছে। ভেবে মুচকি হাসে আদি।
___________________
নিজের কেবিনে আছে নিভ্র। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে বসে আছে। তার ভাবনার নদী জুড়ে রয়েছে নবনীর বিচরণ। কূলকিনারাহীন সাঁতরাচ্ছে সে। একই কথা কানে বাজছে তার। কিট! এই কথাটি কিছুতেই ভুলতে পারছে না।
কিভাবে ভুলবে। ভুলে যাওয়ার মতো তো বিষয়টি নয়। বিষয়টি মারাত্মক সিরিয়াস। সত্যি কী সে কিট?
প্রশ্ন করে নিজের কাছেই প্রতিত্তোর মিলে না। দরজা খোলার আওয়াজ হয়। চোখ মেলে তাকিয়ে জিনানকে হেঁটে আসতে দেখতে পায়। নিভ্র ঝুঁকে বসে সামনের দিকে। জিনান হেঁটে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। বলে,
-“ভাবছিস কিছু?”
-“নাহ!” মৃদুস্বরে বলে।
-“মিথ্যাবাদী।” ভ্রু কিঞ্চিৎ ভাঁজ করে বলে জিনান।
স্মিত হাসে নিভ্র। জিনানের দিকে নজর তাক করে বলে,
-“বলতে পারিস, অতীত কিভাবে ভুলতে পারে মানুষ?”
-“অতীত কখনোই ভুলা যায় না। কোনো না কোনো কারণে সামনে আসবে, মনে পড়বেই। হোক সেটা খারাপ বা ভালো। তুই কোন অতীত ভুলে যাওয়ার কথা বলছিস?”
-“নবনী!”
-“কি?”
-“অশুভ অতীত।”
জিনানের রাগ হয় নিভ্রর ওপর। বলে,
-“মাঝে মাঝে মনে হয় তুই আমার বন্ধুই না।”
-“যথেষ্ট কারণ আছে বিধায় ভাবিস।” ভ্রুক্ষেপহীন নজরে তাকিয়ে বলে।
-“ওর ভালোবাসাকে অস্বীকার করে অপমান করেছিস। আমি তবুও মেনে নিয়েছি। নিজের ভাইয়ের জীবন থেকে সরে যেতে বলেছিল। এটাও মানলাম। এখন আবার বলছিল নবনী তোর অশুভ অতীত। বাহ!” তাচ্ছিল্য হেসে কথা গুলো বলে জিনান।
-“হোয়াট ডু ইউ মিন?” ক্ষেপে বলে নিভ্র।
-“এটাই মিন করতে চাইছি অশুভ নবনী নয় তুই! তুই ওর জীবনের অশুভ অতীত হিসাবে দেখা দিয়েছিলি।” রেগে আঙ্গুল তুলে বলে জিনান।
নিভ্র শান্ত ভঙ্গিতে তাকায় জিনানের পানে। কিছু বলতে চাইলে জিনান থামিয়ে দিয়ে ফের বলে,
-“নবনী সেদিন তোকে প্রপোজ করেনি। তুই ইচ্ছে করে ভালোবাসার কথাটি তুলেছিস। তারপর নিজের অযোগ্য, ইমম্যাচিউর বলে অপমান করেছিস। তোর জীবনে পারফেক্ট মানুষ নয় সে, এটাও বলেছিলি। বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে নবনী। যে মেয়ের মধ্যে চঞ্চল, বাচ্চামো, দুষ্টুমির ছাপ ছিল, তার বিন্দু মাত্র নেই বললেই চলে। জীবন টাই বদলে গেছে মেয়েটার। একটা মানুষ জন্মের পরই ম্যাচিউর পারফেক্ট হয়ে আসে না। কিছু মানুষ বয়সের সঙ্গে ম্যাচিউর হয়। আর কিছু মানুষের ম্যাচিউরিটি আসে বাস্তবতা দেখে। তোর দ্বারা নবনী চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে এটা তো পরিষ্কার । এখন নবনী পুরো ম্যাচিউর। ওর ভাগ্যে ছিল আদি। আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছে তার লীলাখেলা। চাইলেও তুই আমি ওদের পবিত্র বন্ধনকে ভাঙতে পারব না। যতক্ষণ না আল্লাহ চাইবে। আদি যদি জানতে পারে তুই….। একটু ভাব, ভেবে দেখ তুই কী করতে চাইছিস। কাকে অশুভ বলছিল।” বলেই উঠে দাঁড়ায় জিনান। চেয়ার পাশে সরিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
নিভ্র এক ধ্যানে দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ করে রেখেছে। জিনানের বলা প্রত্যেকটা কথা তার মনে করুণ ভাবে লেগেছে। কথা বলার ভাষা নেই তার। নবনীকে অশুভ বলে কী সে ভুল করেছে? প্রশ্ন!
_______________
পার্কে ঘুরেফিরে একটু আগে বাড়িতে ফিরে ওরা। আদি নবনীদের বাড়িতে না গিয়ে নিজেদের বাড়িতে আসে। নবনী সেটা দেখে কিছু বলে না। নিভ্রর রুমে এসে আদি গোসল সেরে নেয়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নিভ্র এসেছে।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর নিভ্র গোসল করতে যায়।
অনেকক্ষণ পর নবনী আসে সেখানে। আদি তখন ড্রইংরুমে বসা ছিল। নামাজ পড়ে উঠার পর নিলুফা বেগমের নির্দেশে লাঞ্চের জন্য তাদের ডাকতে আসে। প্রথমে নিয়ানকে পাঠাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু নবনী নিজেই আসার আগ্রহ পোষণ করে। আদি নবনীকে দেখে মিষ্টি করে হেসে বলে,
-“ডাকতে এসেছেন?”
-“জি। আম্মু খাবার খেতে ডেকেছে।”
-“ভাইয়া গোসল করে বের হোক। এক সঙ্গে যাব।”
-“আচ্ছা।” বলেই চলে যাওয়া ধরলে থেমে যায়। ঘুরে তাকিয়ে মৃদু হেসে আদির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-“আপনার চুল থেকে পানি পড়ছে। টাওয়ালটা দিন আমি মুছে দিচ্ছি চুল।”
ছোট্ট ধাক্কা খেলো যেন আদি। বিস্মিত হয়ে চোখ কিছুটা বড়ো বড়ো করে তাকায় নবনীর দিকে। যে মেয়ে কিনা কথাই ঠিক মতো বলে না। সে তার চুল মুছে দিবে বলছে। অবাক না হয়ে পারছে না আদি। নবনী আদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজে থেকে টাওয়াল হাতে নিয়ে চুল মুছতে আরম্ভ করে। আদি কপাল কুঁচকে নবনীকে দেখছে। নবনী নিজের কাজ করছে। এরি মাঝে নিভ্রর আগমন ঘটে সেখানে। আদি নিভ্রকে দেখে সরে গিয়ে চট করে উঠে দাঁড়ায়। নবনীর উদ্দেশ্য আস্তে করে বলে,
-“ভাইয়া এসেছে সরে দাঁড়ান।”
নবনী নিভ্রর দিকে ঘুরে তাকায়। ভাবলেশহীন ভাবে নজর সরিয়ে নিয়ে আদির মতো আস্তে করে বলে,
-“তাতে কি? আমরা তো আর জি,এফ, বি,এফ না। না চুরি করে প্রেম করছি। এদিকে আসুন তো।”
নবনীর কথা শুনে আদি এবারও অবাক। আস্তে করে বলে,
-“লাগবে না আপনি বাসায় যান প্লিজ।”
-“আচ্ছা।” বলেই আদির হাত ধরে টাওয়ালটা খুব সুন্দর ভাবে হাতে তুলে দিয়ে মৃদুহাসে। হেঁটে নিভ্রর পাশ কাঁটিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলে,
-“নিভ্র ভাইয়া তাড়াতাড়ি তাকে সঙ্গে নিয়ে খেতে আসবেন কিন্তু।” বলেই প্রস্থান করে সে। আদি নবনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। পরক্ষণে নিভ্রর উদ্দেশ্যে বলে,
-“ভাইয়া চেঞ্জ করে নেও।”
নিভ্র আদির দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে নজর সরিয়ে রুমে আসে। নবনী ফিরে যাওয়ার সময় নিভ্রর বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পায়। এতক্ষণ যা করেছে ইচ্ছে করে করেনি। সবটা অভিনয় ছিল নবনীর। যাতে সে নিভ্রকে বোঝাতে পারে তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা দুরত্বহীন ঠিকঠাক চলছে। নেই কোনো ভুলত্রুটি।
নিভ্র রুমে এসে বিছানার উপর ধীরে বসে পড়ে। তার ভীষণ খারাপ লাগছে। রাগ হচ্ছে। কিন্তু কেন? নবনীর মুখে ভাইয়া ডাক শুনে? নাকি আদির সঙ্গে নবনীকে দেখে?
বোঝার ক্ষমতা নেই তার। জিনান চলে যাওয়ার পর সে প্রচুর ভেবেছে। তবুও, নিজের ভুল গুলো সংশোধন করতে চাইছে না। চলছে, চলুক এভাবে। মাথা ব্যাথা নেই তার। তবে এখন কেন তার খারাপ লাগছে জানে না। চোখ জোড়া বন্ধ করে সরু নিশ্বাস ফেলে নিভ্র।
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।