আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ২৪

0
3108

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

মাথা যন্ত্রণা করছে খুব আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম, চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি, পাশে মা বাবা তিথি ভাবি পরী আসিফ ভাইয়া দাঁড়ানো, আমি চোখ খুলেছি দেখেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, মা আমার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
মা: শেষ পর্যন্ত আমার বউমা কে বাঁচাতে পারলাম জানিস এই একটা রাত আমরা সবাই কতো কষ্টে কাটিয়েছি, ডক্টর তো বলেছিল মা বাচ্চা কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হবে না কিন্তু আল্লাহর রহমতে দুজনেই সুস্থ আছিস (বাচ্চার কথা বলতেই তাড়াতাড়ি পেটে হাত দিলাম যাক শেষ পর্যন্ত আমার বাচ্চাটা বেঁচে রইলো)
তিথি: ভাবি পেটে হাত দিতে হবে না ভয় পেয়ো না আমি ফুফি হবো হিহিহি
বাবা: আমরা যেতে যদি আর একটু দেরি হতো তাহলে আজ….
মা: বাদ দাও তো এসব অলোক্ষনে কথা আমাদের সেই ছোট্ট অরনী আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে এটাই তো অনেক (ছোট্র অরনী মানে তাসিন কি সব বলে দিলো নাকি)
বাবা: মা অবাক হবার কিছু নেই তাসিন আমাদের সব বলেছে
আমি:(মাথা নিচু করে রেখেছি এখন কি বলবো আমি তো অপরাধী)
বাবা: মন খারাপ করিস না তোর তো কোনো দোষ নেই তোকে ভুল বুঝানো হয়েছে প্রত্যেক সন্তানই মা বাবার খুনের প্রতিশোধ নিতে চাইবে
মা: আমরা তোর উপর রেগে নেই আমাদের তো আজ আনন্দের দিন আমাদের সেই ছোট্ট অরনী কে ফিরে পেয়েছি (অবাক হয়ে মা বাবা কে দেখছি কতো ভালো উনারা আর আমি কিনা ছি)
বাবা: এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন
আমি: বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি না বুঝে….
বাবা: বাবা নারে পাগলী তুই তো ছোটবেলায় আমাকে বাবাই বলে ডাকতি আশরাফ তো সবসময় বলতো তুই নাকি আমার মেয়ে হাহাহা, তোর হয়তো মনে নেই এসব
আমি: চাচ্চু আর ছোট মা কে আমি শাস্তি দিতে চাই
বাবা: হ্যা দিবি ওরা এখন জেলে আছে এতোদিন সময় লাগতো না আসলে আমার কাছে প্রমান হিসেবে আশরাফের জবানবন্দী ছিল শুধু এইটা শক্ত কোনো প্রমান না তাই সেই হসপিটাল থেকে সি.সি ক্যামেরার ফুটেজ এনেছি এসব জোগাড় করতে বেশ সময় লেগে গেছে
আমি: বাবাই আমি বাসায় যাবো কবে
মা: আজকেই নিয়ে যাবো হসপিটালে রাখবো না তোকে
আমি: আমি বাসায় যাওয়ার আগে পুলিশ স্টেশনে যেতে চাই
বাবা: ঠিক আছে আমি ডক্টর এর সাথে কথা বলে রিলিজ নেওয়ার ব্যবস্থা করছি
আমি: আচ্ছা

বাসার সবাই আছে এখানে কিন্তু তাসিন নেই তাহলে কি তাসিন শুনেনি আমার যে জ্ঞান ফিরেছে নাকি শুনেও ইচ্ছে করে আসেনি, অবশ্য না আশারই কথা অবনী আছে তো
তিথি: ভাবি তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে
আমি: কি রকম
তিথি: এই যে ভাইয়া তোমাকে বার বার বুঝাতে চাইল আব্বু খুনি না তোমার আপন জনদের মধ্যেই কেউ একজন খুনি, আচ্ছা তোমার চাচ্চু ছাড়া তো তোমার আপন কেউ নেই এইটা ভেবেও কি সন্দেহ হয়নি (তাই তো এইটা আমার মাথায় আসলো না কেন আমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে)
তিথি: এখন আর টেনশন করোনা ভাইয়া ওদের জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে
–তোমার ভাইয়া কোথায়
–জানিনা ফোন দিয়েছিলাম তোমার জ্ঞান ফিরেছে শুধু বলতে পেরেছি বাচ্চার কথা বলার আগেই ফোনটা কেটে গেলো এখন তো মোবাইল সুইচড অফ বলছে
–মোবাইল অফ হবে কেন
–আরে আছে কোথাও চলে আসবে টেনশন করো না

সব জামেলা শেষ তোকে রিলিজ করে দিয়েছে চল মা (দরজায় তাকিয়ে দেখি বাবা হাসি মুখে রুমে ডুকছেন আর বলছেন)
মা: তিথি সবকিছু গোছগাছ করে নে
সবকিছু গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে, চাচ্চু আর ছোট মার মুখ দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু উনাদের শুধু একটা প্রশ্ন করার জন্য যাচ্ছি, আচ্ছা উনাদের সম্পত্তি প্রয়োজন ছিল আব্বুর কাছে চাইতো কিন্তু আব্বু আম্মু কে খুন করলো কেন খুন না করেও সম্পত্তি নেওয়া যেতো তো, আমাকে মা বাবা হারা করলো সামান্য সম্পত্তির লোভে

চাচ্চু আর ছোট মার সামনে বসে আছি কি বলবো উনাদের আমার মুখ থেকে তো কোনো কথাই বের হচ্ছে না কষ্টে নাকি ঘৃনায় বুঝতে পারছি না
বাবা: অরনী তাড়াতাড়ি কর বাসায় যেতে হবে আমরা বাইরে যাচ্ছি তুই কথা বল
আমি: হুম
আমাকে রেখে সবাই বাইরে চলে গেলো চাচ্চু আর ছোট মা মাথা নিচু করে বসে আছে
আমি: চাচ্চু কেন করলে এমন
চাচ্চু: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি তোমাদের মা বাবা জানতাম আর তোমরাই কিনা আমার আসল শত্রু আর ছোট মা তোমাকে তো সেরা অভিনেত্রীর খেতাব দেওয়া উচিত যা নিখুঁত ভাবে মায়ের অভিনয় করেছ এতো ভালোবাসা দিয়েছ যে আমি কখনো বুঝতেই পারিনি….
ছোট মা: আমাদের ক্ষমা করে দে মা
আমি: হাসি পেলো আচ্ছা এই যে ক্ষমা চেয়েছ আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলে কি আব্বু আম্মু ফিরে আসবে
ছোট মা: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমাদের ক্ষমা করলে আম্মু আব্বু ফিরে আসবে না, ফিরে আসবে না আমার এত্তোগুলো বছরের কান্না, তোমরা জানো আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কতো কান্না করি আব্বু আম্মুর জন্য, তোমাদের সম্পত্তি প্রয়োজন ছিল আব্বুকে বলতে খুন করলে কেন, আচ্ছা চাচ্চু একটু বলতো কখন কিভাবে খুন করছিলা
চাচ্চু: বাংলোতে
আমি: কখন
চাচ্চু: তুই তখন আমার বাসায় ছিলি তোকে রেখেই আমি বাংলোতে যাই ভাইয়ার কাছে টাকা চাইতে কিন্তু ভাইয়া আমাকে টাকা দেয়নি কারন আমি টাকা খারাপ রাস্তায় উড়াতাম, তখন আফজাল চৌধুরী ঘুরতে গিয়েছিল বাংলোতে শুধু ভাইয়া আর ভাবি ছিল তাই রাগের মাথায় দুজন কে খুন করি বার বার টাকা চাওয়ার চেয়ে সব সম্পত্তি আমার হয়ে যাবে এইটা ভেবে কিন্তু ভাইয়া মৃত্যুর সময় বলে যায় সম্পত্তি তোর নামে নেই আঠারো বছর হলে পর তোর নামে হবে আর এর আগে তুই মারা গেলে সম্পত্তি সব এতিমখানায় ডোনেট হয়ে যাবে
আমি: এজন্যই আমাকে খুন না করে এতো আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছ
চাচ্চু: (নিশ্চুপ)
আমি: অন্য সব সম্পত্তি তো আমার নামেই ছিল চাইলেই পেয়ে যাইতা শুধু শুধু তানিসের সাথে অভিনয় করালে কেন আমি এখন তাসিনের সামনে যাবো কিভাবে
চাচ্চু: লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তাই তোদের যে সম্পত্তি আফজাল চৌধুরীর নামে ছিল সেই সম্পত্তিও ভোগ করতে চেয়েছিলাম
আমি: এজন্য মাঝপথে আমাকে সবার কাছে ছোট করলে,
ছোট মা তোমাকে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছি না তুমি কিভাবে পারলে আমার পেটে বাচ্চা জেনেও আমাকে বিষ খাওয়াতে তুমি তো মায়ের জাত আর একজন নারী কে মা হওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিলে কিভাবে লোভ তোমাদের এতোই অন্ধ করে দিয়েছে
ছোট মা: তোর সব সম্পত্তি আমরা ভোগ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু যখন বুঝতে পারি তুই মা হতে যাচ্ছিস তখন থেকেই তোকে মারার চিন্তা করি কারন বাচ্চা হলে তো সব সম্পত্তি ওর নামে হয়ে যাবে তাই….
আমি: তাই নিজের মেয়ের মতো অরনী কে বিষ খাওয়াতে তোমার হাত কাঁপল না, মায়ের জাত তো এতো খারাপ হয় না তুমি কিভা…..
ছোট মা: অরনী মা আমাদের ক্ষমা করে দে
আমি: তোমাদের সাথে কথা বলতেও আমার এখন ঘৃনা হচ্ছে, পাপ করলে শাস্তি পেতেই হয় জেলে থেকে এখন সম্পত্তি ভোগ করো
চাচ্চু: অরনী শুন মা….
আমি: প্লিজ তোমাদের এই মুখে আমাকে আর মা বলে ডাকবা না, আর হ্যা আমি তো তোমাদের মা বাবা জানতাম সন্তান হয়ে মা বাবা কে ঘৃনা করি কিভাবে আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু যে পাপ করেছ তার শাস্তি হিসেবে তো বাকি জীবনটা জেলে কাটাতে হবেই, ভালো থেক আসি
চাচ্চু অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে কিছু করার নেই পাপ করেছে শাস্তি পাবে, ওদের সামন থেকে চলে আসলাম যতো বেশি সময় ওদের দেখবো ততোই কষ্ট বেশি হবে, নিজের মা বাবা কে তো হারালাম আজ চাচ্চু আর ছোট মা কেও হারালাম, আব্বু আম্মু কে হারিয়ে চাচ্চু আর ছোট মা কেই আব্বু আম্মু জানতাম আর আজ….
তিথি: ভাবি কি হয়েছে এলোমেলো ভাবে হাটছ কেন পরে যাইবা তো
আমি: হুম (কিভাবে বাবা মার কাছে আসলাম বুঝতে পারিনি মাথা ঘুরছে)
বাবা: বড় বৌমা ওকে ধরে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসাও

গাড়িতে বসে আছি তাসিন হয়তো বাসায় আছে আমার উপর রাগ করে হয়তো হসপিটালে আসেনি কিন্তু আমি তাসিনের সামনে যাবো কিভাবে কি বলবো ওকে
তিথি: ভাবি চলো বাসায় চলে এসেছি
আমি: হুম
বাসায় ঢুকতে ভয় হচ্ছে তাসিনের সামনে যাবো কিভাবে তাসিন কি অবনী কে ভুলে আমাকে আবার ভালোবাসবে….?

বাসার চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কিন্তু তাসিন তো নেই ও কি জানেনা আমি যে বাসায় আসবো
ভাবি: অরনী কাকে খুঁজছ
তিথি: ভাবি হয়তো ভাইয়া কে খুঁজছে
বাবা: তাসিন তো….
ভাবি: বাবা আমি বলছি, অরনী তাসিন আজ লন্ডন চলে যাচ্ছে অবনীর সাথে
আমি: মানে
ভাবি: ওদের ফ্লাইট বারোটায় আজে এগারোটা
আমি: কি বলছ ভাবি
ভাবি: এখনো সময় আছে যা ওরা হয়তো এয়ারপোর্ট এই আছে
আমি: কিন্তু এতো কম সময়ে কিভাবে এয়ারপোর্ট যাবো
ভাবি: তাহলে বসে থাক তাসিন অবনীর হয়ে যাক
আমি: না না আমি যাবো
মা: কিন্তু এই শরীর নিয়ে
ভাবি: মা ওকে যেতে দিন ভয় নেই তাসিন ওখানে আছে

আর কিছু না শুনে দৌড়ে এসে গাড়িতে বসলাম ড্রাইভার কে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট যেতে বললাম, ভয় হচ্ছে যদি তাসিন চলে যায়
সময় যেন খুব দ্রুত যাচ্ছে কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হতে চাচ্ছে না…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে