আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ২৩

0
1877

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ বন্ধ রেখেই ফোন রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অবনী বলছি
–তুমি আমার ফোনে…
–তোমাকে সাবধান করার জন্য
–মানে
–ভালো করে শুনো অরনী তাসিন তোমাকে নয় আমাকে ভালোবাসে তুমি ওর স্ত্রী ওর পরিবারের ভয়ে শুধু তোমাকে ভালোবাসার অভিনয় করে যাচ্ছে আর ও বলেছে তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে আমাকে ওর বউ করে নিবে
–কি বলছ এসব (তাড়াতাড়ি উঠে বসতে গিয়ে খেয়াল করলাম নিজের শরীরের দিকে রাতের কথা একটু একটু মনে পরছে)
–যা সত্যি তাই বলেছি তাসিন তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমালেই ভেবো না ও তোমাকে ভালোবাসে ও সব অভিনয় করছে বুঝনা পুরুষ জাত নারীর স….
–অনেক বলেছ অবনী এবার চুপ করো
ফোনটা কেটে দিলাম রাগে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তাসিন ভালোবাসে অবনী কে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার চিন্তা করছে আবার আজ আমার সাথে ছি তাসিন আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে পারলো, আমার সব শেষ করে দিয়ে এখন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে ছাড়াচ্ছি তোর ঘুম
–তাসিন
–কি হয়েছে অন্নি (আমার চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি উঠলো)
–কি হয়েছে বুঝতে পারছ না কেন করলে এমন
–অন্নি কি বলছ কিসের কথা বলছ
–আমার অর্ধনগ্ন শরীর দেখেও কি বুঝতে পারছ না কি হয়েছে
–দেখ অরনী আমি কখনো তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করতে চাইনি কিন্তু কাল নেশার ঘোরে…
–নেশার ঘোরে
–হ্যা আমি পরে বুঝতে পেরেছি ডাবের মধ্যে নেশা জাতীয় কিছু মেশানো ছিল
–আমার ডাবেই কেন নেশা জাতীয় জিনিস থাকবে আমি বুঝেছি এইটা তোমার কাজ নাহলে অবনীর কারন আমি অবনী কে কাল ডাব বিক্রেতার পাশে দেখেছিলাম
–কি বলছ
–হ্যা অবনী ছিল এইটা তোমাদের দুজনের প্ল্যান করা ছিল
–অরনী তুমি কিন্তু ভুল বুঝছ
–কোনটা ভুল ভালোবাসবা অবনী কে আর বিছানায় নিবা আমাকে বাহ্ তাসিন চৌধুরী বাহ্
–অরনী বেশি বলে ফেলছ
–অনেক হয়েছে তাসিন চৌধুরী আর না আমি তোমার বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম তাই তুমি উল্টো আমার উপর প্রতিশোধ নিলে
–কি বলছ এসব
–আমি চাচ্চুর কাছে চলে যাচ্ছি সময় হলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব সাইন করে দিও
–অরনী আমার কথা শুনো প্লিজ
–তোমাকে অবনীর করে দিয়ে গেলাম ভালো থেকো
–অরনী আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি আমার কথা তো শুনবা প্লিজ
–আর একটা কথা বলবা তো তোমার চোখের সামনে সুইসাইড করবো
–মানে
–যা করেছ সুইসাইড করতেই ইচ্ছে হচ্ছে

তাসিন আর কোনো কথা না বলে চুপ করে বিছানায় বসে রইলো আমি ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ নিয়েই বেরিয়ে পরলাম, থাক তুই অবনী কে নিয়ে তোর মতো প্রতারক কে ভালোবাসার চেয়ে একা থাকা ভালো

গাড়িতে বসে আছি চাচ্চুর কাছে চলে যাবো ওদের মতো খুনি প্রতারকদের কাছে না থেকে চাচ্চুর কাছে থাকাই ভালো

কখন থেকে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না মাথা এমনি গরম হয়ে আছে আবার…. যাক দরজা খুলেছে
–কিরে অরনী তুই
–ছোট মা দরজা খুলতে এতোক্ষণ লাগে
–আমি রান্না করছিলাম কি হয়েছে রেগে আছিস কেন
–কিছুনা রেস্ট নিতে দাও
–তার আগে বল বিয়ের পর একবারো আমাকে দেখতে আসলি না কেন লুকিয়ে তো আসা যায়
–তাসিন সারাক্ষণ আমার পিছনে লোক লাগিয়ে রেখেছিল কিভাবে আসবো
–আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি
–আচ্ছা

খেতে বসেছি কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছে না তাসিন কে খুব মিসস করছি
–অরনী কি হয়েছে বলতো
–কিছু না ছোট মা আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো আর কে আম্মু আব্বুর খুনি সে প্রমান আমার কাছে আছে সময় হলেই তাদের শাস্তি দিবো
–প্রমান আছে
–হ্যা চমকে উঠছ কেন
–প্রমান আছে কখনো তো বলিসনি আর যদি প্রমান থেকেই থাকে তাহলে তাসিন কে বিয়ে করেছিলি কেন
–তাসিন কে বিয়ে না করলে প্রমান পেতাম না
–তাসিন কে ডিভোর্স কবে দিবি
–(নিশ্চুপ)
–তুই কি তাসিন কে ভালোবাসিস
–জানিনা এসব বাদ দাও তো
–হুম আচ্ছা তুই এখানেই থাক সমস্যা নেই
–হুম

দুই মাস পর…..
বারান্দায় বসে বসে সন্ধ্যার আকাশ দেখছি এই সময়ে আমার মন খুব খারাপ থাকে এই সময়টায় তাসিন কে খুব মিসস করি ওর দুষ্টুমি গুলো খুব মিসস করি, আজ দুইটা মাস হয়ে গেলো তাসিনের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই সেদিন রাগে সিম চেঞ্জ করে ফেলেছিলাম তাসিনও আর আমার খুঁজ নেয়নি, এই দুইটা মাসে তাসিন কে কতোটা মিসস করেছি বুঝাতে পারবো না কিন্তু ও হয়তো সুখে আছে অবনী কে নিয়ে, উফফফ মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে ইদানীং কি যে হলো শুধু মাথা ঘুরায়, বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম
–কিরে অরনী এই সন্ধাবেলায় শুয়ে আছিস
–মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে ছোট মা
–তোর কি হয়েছে বলতো কয়েকদিন ধরেই দেখছি ঠিক মতো খাবার খাচ্ছিস না শুধু শুয়ে থাকিস
–জানিনা কি হয়েছে
–সত্যি করে বলতো তাসিনের সাথে কি….
–মা বাদ দাও তো এসব
–হুম বুঝেছি দাড়া আমি আসছি

ছোট মা চলে গেলো আমি নিজেই তো জানিনা আমার কি হয়েছে
–অরনী এই দুধ টুকু খেয়ে নে
–আমি তো দুধ খাই না
–শরীরের যা অবস্থা করেছিস দুধ না খেলে হবে খেয়ে নে
–তোমার সাথে তর্ক করে লাভ নেই দাও খাচ্ছি ( ছোট মা জিদ করবে তাই একটানে সবটুকু দুধ খেয়ে নিলাম)
–ছোট মা তুমি আমাকে কি খাইয়েছ এইটা দুধ নাকি বিষ আমার গলা জ্বলে যাচ্ছে পানি দাও
–মারার জন্য বিষ খাইয়েছি কি এখন আবার বাঁচানোর জন্য
–তুমি…
–হ্যা তুই বলেছিস না প্রমান আছে তুই বেঁচে থাকলে তো আমাদের জেলে যেতে হবে
–তারমানে তোমরা আব্বু আম্মুকে খুন করেছ
–হ্যা ভেবেছিলাম তোর সব সম্পত্তি আমাদের হবে কিন্তু এখন বুঝেছি তুই মা হতে যাচ্ছিস এখন তো তোর সব সম্পত্তি তোর সন্তানের হবে তাই মা সন্তান দুটুই মর এক ডিলে দুই পাখি সাথে সব সম্পত্তি আমাদের
তাসিন ঠিকি বলেছিল আসল খুনি কে জানলে আমার সহ্য হবে না বিষের যন্ত্রনায় এতোটা কষ্ট হচ্ছে না যতোটা কষ্ট হচ্ছে চাচ্চু খুনি শুনে, আমার সন্তানটাও ওদের জন্য পৃথিবীর আলো দেখতে পেলো না, আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে, চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ছোট মার হাসি দেখতে পেলাম সাথে কানে বাজছে কে যেন অন্নি অন্নি বলে ডাকছে হয়তো মরার সময় তাসিন কে মিসস করার কারনে ডাকটা কানে বাজছে
আস্তে আস্তে চোখ দুইটা অন্ধকার হয়ে আসলো আমি মাটিতে লুটিয়ে পরলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে