আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ২২
সকালে অবনীর চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো, তাসিন এখনো আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে রেখেছে, অবনীর চেঁচামেচি শুনে আমাকে ছেড়ে তাসিন দরজা খুলতে গেলো, আমি বিছানায় উঠে বসলাম দেখি কি হয় অবনী এতো রেগে আছে কেন, তাসিন দরজা খুলতেই অবনী তাসিন কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুমের ভিতরে এসে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো
তাসিন: কি হয়েছে অবনী
অবনী: কয়টা বাজে
তাসিন: জানিনা
অবনী: জানবে কিভাবে এতোক্ষণ ধরে তো ঘুমেই
তাসিন: তো কি করবো
অবনী: কি করবা মানে তুমি এই মেয়ের সাথে এক রুমে এতোক্ষণ ঘুমাবা কেন (এখন বুঝলাম কেন এতো রেগে আছে)
তাসিন: আজব তো অরনী আমার স্ত্রী ওর রুমে ঘুমাবো নাতো কোথায় ঘুমাবো
অবনী: তুমি তো বলেছ ওকে ডিভোর্স দিয়েই আমাকে বিয়ে করবা (ডিভোর্স শব্দটা শুনেই মাথা ঘুরতে শুরু করলো, আমি তো তাসিন কে ডিভোর্স দিতে চাই না আমি তাসিন কে ভালোবাসি)
তাসিন: সেটা সময় হলে দেখা যাবে
অবনী: তারমানে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না (বলেই কাঁদতে শুরু করলো)
তাসিন: অবনী শু….
তাসিনের কথা না শুনেই অবনী কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো তাসিনও পিছন পিছন গেলো, আমি পাথরের মূর্তির মতো বিছানায় বসে আছি, অবনী ডিভোর্স এর কথা বলেছে ওদের বিয়ের কথা বলেছে তারমানে তাসিন অবনী কে কথা দিয়েছে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অবনী কে বিয়ে করবে, কিন্তু আমি তাসিন কে ভালোবাসি অনেক বেশি ওকে হারাতে পারবো না আমি ডিভোর্স চাইনা, তাসিনের পাশে অন্য মেয়ে কে আমি সহ্য করতে পারবো না
–এই অন্নি কাঁদছ কেন (তাসিন এসে আমার পাশে বসে দু গালে আলতো করে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
–আমাকে আর কখনো অন্নি বলে ডাকবা না
–কষ্ট হচ্ছে
–(নিশ্চুপ)
–আমি দুজনকেই ভালোবাসি এখন তোমাদের মাঝে যে আমাকে বেশি ভালোবাসে আমি তার হবো
–মানে
–হুম এখন তুমি প্রমান করো অবনীর চেয়ে বেশি ভালোবাস আমাকে
–(এইটা কেমন কথা কিভাবে প্রমান করবো আর ভালোবাসা প্রমান করা যায় নাকি)
–কি হল কি ভাবছ
–কিছুনা
–তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও ভালোবাসা প্রমান করার
তাসিন বেরিয়ে গেলো এখন কি করবো ভালোবাসা প্রমান করে কিভাবে আমি তো জানিনা তাহলে কি তাসিন অবনীর হয়ে যাবে
শিলা: অরনী আসবো
–আয়
–কি ভাবছিস
–আচ্ছা ভালোবাসা প্রমান করে কিভাবে
–সময় হলে বুঝতে পারবি এখন চল নাস্তা করবি
–হুম
শিলা আর আমি একাই নাস্তা করছি তাসিন কে কোথাও দেখছি না অবনীও নেই
–কিরে কি খুঁজছিস
–তাসিন নাস্তা করবে না
–অবনী কে নিয়ে ঘুরতে গেছে
–হুম
–মন খারাপ না করে ভাইয়া কে নিয়ে ঘুরতে যা দেখিস ভাইয়া অবনী কে ভুলে যাবে
–সত্যি
–হুম
–ঠিক আছে তাসিন আসলেই যাবো
রুমে পায়চারী করছি আর তাসিনের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ও আসার নাম নেই, এই প্রথম ওর সাথে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হলো কিন্তু ও আসার নাম নেই আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছে, আচ্ছা ফোন দিলে কেমন হয় রাগ করবে না তো, রাগ করবে কেন তাসিন তো আমাকে ভালোবাসে ফোন দিয়েই দিলাম
–অরনী বল
–কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি আসো
–কেন কি হয়েছে
–আগে আস তো
–আচ্ছা দশ মিনিটের ভিতরে আসছি
–ওকে
ফোন রেখে ভাবছি তাসিনের সাথে যখন এই প্রথম নিজের ইচ্ছায় ঘুরতে যাবো তাহলে ওর পছন্দের শাড়ি পরলে কেমন হয়, ভাবতে ভাবতেই শাড়িটা বের করে পরতে শুরু করলাম
মাত্র দশ মিনিটে নিজেকে তাসিনের মনের মতো সাজিয়ে নিলাম তাসিন দেখলে খুব খুশি হবে, হঠাৎ দরজায় ঠোকা পরলো, দরজা খুলে দেখি তাসিন আর অবনী হাপাচ্ছে
তাসিন: কি হয়েছে অরনী
আমি: কিছু নাতো
তাসিন: তাহলে এভাবে আসতে বললে যে
আমি: আমি ঘুরতে যাবো তাই
তাসিন: ঘুরতে যেতে চাও এইটা কি ফোনে বলা যেতো না আমি কতোটা ভয় পাইছিলাম জানো আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে….
অবনী: তাসিন চুপ করো
আমি: কি বলো
তাসিন: কিছুনা চলো ঘুরতে নিয়ে যাই
অবনী: তাসিন তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ঘুরতে যাবা মানে (তাসিন কিছুক্ষণ অবনীর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর কি যে হলো ও আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো)
অবনী: তাসিন ঘুরতে যাবে না
আমি: সত্যি তাসিন যাবে না তুমি
তাসিন: না
আমি: ওহ অবনীর কথায় এখন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে না ঠিক আছে আমি একাই যাবো
তাসিন: এই রুম থেকে তুমি বেরুতে পারবে না চুপ করে রুমে বসে থাকো
আমি: মানে কি
তাসিন: যা বলেছি তাই কর
তাসিন বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো, কি হলো এইটা তাসিন অবনীর কথায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে গেলো না
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম সন্ধ্যা নেমে এসেছে, আজ সারাদিন তাসিন আমাকে রুমে বন্দি করে রেখেছে, কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুইটা ফুলে গেছে, আচ্ছা ও আমার সাথে এমন করছে কেন…..?
হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেলাম ভেবেছিলাম তাসিন এসেছে কিন্তু নাহ শিলা এসেছে
শিলা: অরনী চল
–কোথায়
–সারাদিন তো রুমে ছিলি একটু ঘুরে আসি
–যাবো না
–আরে ভাইয়া নিয়ে যায়নি তো কি হয়েছে আমি নিয়ে যাবো চল হাটলে ভালো লাগবে
–হুম
শিলা আর আমি সমুদ্রপারে হাটছি হঠাৎ তাসিন সামনে এসে দাঁড়াল
তাসিন্ন: শিলা অবনী একা হোটেলে তুমি চলে যাও আমি অরনী কে নিয়ে আসবো
শিলা: ঠিক আছে
(শিলা চলে গেলো তাসিন যে কি আগে হলে আসে না আর এখন শিলা কে বিদায় করে দিল)
–অন্নি রেগে আছ
–(নিশ্চুপ)
–চলো ওখানে বসি (কিছু না বলে চুপচাপ এসে বালুর মধ্যে বসে পরলাম, হঠাৎ ডাব দেখে খেতে ইচ্ছে হলো পানি পিপাসাও ধরেছে)
–ডাব খাবো
–তুমি বস আমি নিয়ে আসছি
একটু পর তাসিন খালি হাতে আসলো
–একটু অপেক্ষা করো ডাব নিয়ে আসবে
–তুমি আননি কেন
–এগুলো নাকি ভালো না
–কি যে বলো
কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে ডাব দিয়ে গেলো খাচ্ছি আর চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি হঠাৎ ডাব বিক্রেতার কাছে অবনীর মতো কাউকে দেখলাম আমার চোখ পরতেই সরে গেলো, অন্ধকারে বেশি বুঝতে পারিনি
–তাসিন এইটা কি ডাব নাকি অন্য কিছু আমার মাথা ঘুরছে কেন
–আমারো তো একি অবস্থা মাথা ঘুরছে খুব, অন্নি হোটেলে চলো তুমি এখানে পরে গেলে বিপদ হবে
তাসিন কে ধরে ধরে হোটেলে আসলাম এসেই বিছানায় শুয়ে পরলাম তাসিনেরও একি অবস্থা, মাথা ঘুরছে কেমন যেন নেশা নেশা লাগছে, হঠাৎ তাসিন এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো ওর চোখের দিকে তাকালাম কেমন যেন নেশা ধরে যাচ্ছে, তাসিন আমার কপালে ঠোটে গলায় একের পর এক মায়া দিয়ে যাচ্ছে আজ আর ওকে আটকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমিও তাসিন কে জরিয়ে ধরলাম…..
চলবে?