আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ২১

0
2889

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

–বাহ্ বাহ্ এই তাহলে তোমার আসল পরিচয় (কথাটা শুনে তাসিন আমাকে দূরে সরিয়ে দিল, দরজায় তাকিয়ে দেখি অবনী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
অবনী: যদি ওকেই ভালোবাস তাহলে আমার সাথে অভিনয় করেছ কেন
তাসিন: (নিশ্চুপ)
অবনী: তুমি তো বলেছিলে ওকে ভালোবাস না তাহলে এখন কেন…
তাসিন: অবনী আমার কথা শুনো প্লিজ
অবনী: কি শুনবো হ্যা আর তুমি কেমন মেয়ে প্রথমে নিজের স্বামী কে ভালোবাসনি এখন যেই আমি ওকে ভালবেসেছি ওমনি ভালোবাসতে শুরু করেছ
তাসিন: অবনী চুপ করবা
আমি: তাসিন ওকে বলতে দাও
অবনী: যে মেয়ে নিজের স্বামী কে ভালোবাসে না অন্য মেয়ের ভালোবাসা কেড়ে নেয় তাকে আমার আর কিছু বলার নেই
আমি: অবনী অনেক বলেছ এবার থাম আমি ওকে ভালোবাসতাম না আমার ভালোবাসা পাবার জন্য ও অনেক কিছু করেছে আর তোমার সাথে রিলেশন হবার পরও যদি ও আমাকে ভালোবাসি বলে তাহলে সেটা কি আমার দোষ, শুনো কারো ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই তোমার তাসিন তোমারই আছে
তাসিন: অরনী শু…
আমি: তাসিন এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও আর কখনো আমার রুমে আসবা না
তাসিন: অরনী আমার কথা তো শুনবা
আমি: তুমি যদি এক্ষণি এই রুম থেকে না বের হও আমি উল্টাপাল্টা কিছু করে বসব
তাসিন: ঠিক আছে যাচ্ছি

জানালা দিয়ে সমদ্রের বুকের চাঁদ দেখছি আর ভাবছি এই চাঁদটার মতো তো আমিও একা মা নেই বাবা নেই এতোকিছুর পর তাসিন কে ভালোবাসলাম সেও এখন অন্য কারো
শিলা: অরনী দরজা খুল খাবি চল (সেই সন্ধ্যা বেলায় তাসিন রুম থেকে বেরুনোর পর দরজা বন্ধ করেছিলাম আর ওদের সামনে যাইনি, দরজা খুলে বিছানায় এসে বসলাম শিলাও এসে বসলো)
শিলা: অরনী খাবি না সারাদিন ধরে তো কিছুই খাইছিস না
–হুম
–এখন আর ভেবে লাভ নেই ওদের কে ওদের মতো থাকতে দে আর নিজেকে অজতা কষ্ট দিস না খেতে চল
–হুম চল

শিলার পিছু পিছু দরজার বাইরে আসতেই দেখি তাসিন আর অবনী আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এই মেয়ের সাথে একসাথে বসে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাও যেতে হবে কিছু করার নেই, ওদের পিছু পিছু হাটছি
আমি: শিলা আমরা কোথায় যাচ্ছি
তাসিন: পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে ওখানের খাবার নাকি খুব ভালো তা….
আমি: আমি কি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি
তাসিন: হাহাহাহা শিলা নিজেই তো জানেনা কোথায় খেতে যাচ্ছে
আমি: (উফফফফফ অসহ্য)
তাসিন: কিছু বললে
আমি: না

কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি খেতে এসেও অবনীর অপর সিটে বসতে হলো আমার খাওয়া যে আর হবে না বুঝে গেছি
তাসিন: কি হলো অরনী খাচ্ছ না কেন
আমি: (বাহ্ এখন আর অন্নি ডাকা হয় না)
শিলা: কি ভাবছিস খেয়ে নে
আমি: আমার ভালো লাগছে না খাবো না আমি বরং রুমে যাই
তাসিন: না খেয়ে এখান থেকে যেতে পারবে না
আমি: তোমার কথা শুনব কেন
তাসিন: অরনী
আর কিছু না শুনে চলে আসলাম অবনীর সামনে বসে খাবার খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া ভালো, রুমে এসেই শুয়ে পরলাম

উফফফ সকালে তাড়াহুড়ো করে অল্প খেয়েছিলাম সারা দিন কিছুই খাইনি এখন তো খিদায় ঘুম আসছে না
–অরনী দরজা খুলো (আবার তাসিন এসেছে অসহ্য)
–কেন
–আমার কি ঘুমাতে হবে না নাকি
–অন্য কারো রুমে গিয়ে ঘুমাও আমার রুমে কেন
–দরজা খুলো বলছি
দরজা খুলে দিয়ে এসে দফ করে বিছানায় বসে পরলাম, তাসিন পিছন থেকে হাত এনে আমার সামনে ধরলো হাতে খাবারের প্যাকেট
–খেয়ে নাও
–খাবো না
–অরনী এতো জিদ ভালো না খিদায় তো এতোক্ষণ ধরে ছটফট করতেছ চুপ করে খেয়ে নাও
–না
–ঠিক আছে
তাসিন খাবারের প্যাকেট বিছানায় রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো
–অরনী তোমার লাইব্রেরীর কথা মনে আছে
–কেন
–লাইব্রেরী তে যা ঘটেছিল এখন তাই ঘটবে
–মানে কি
–তুমি তো খাবার খাবে না কিন্ত তোমার খিদা তো আছে স্বামী হয়ে তোমাকে না খাইয়ে রাখি কিভাবে তাই আমার ঠোট খাওয়াবো তোমাকে
–তাসিন ভালো হবে না কিন্তু
–কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সেটা আমি বুঝি
তাসিন ভেজা তোয়ালে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলো তারপর আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, তাসিনের ঠোট আমার ঠোটের একদম কাছে
–তাসিন আমি খাবো
–ঠোট তো তোমার ঠোটের একেবারে কাছে খেয়ে নাও
–আমি খাবার খাবো বলেছি
–অরনী তুমি না একদম রোমান্স বুঝনা এই সময়ে কেউ কথা বলে, আমার ইচ্ছে হচ্ছে আমি এখন খাবো
–তাহলে আমি খাবার খাবো না কান্না করবো (যাক এই কথায় কাজ হয়েছে তাসিন দূরে সরে গেলো)
–এদিকে এসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি
–লাগবে না আমি খেতে পারি
–আসো নাহলে অর্ধেক রোমান্স হয়েছে বাকিটা পূরন করে ফেলবো
ওকে বিশ্বাস নেই আবার এমন করতে পারে তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে রইলাম, তাসিন নিজের হাতে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছি
–এভাবে চেয়ে থেকো না কপালে কালো টিপ নেইতো নজর লেগে যাবে হাহাহাহা
তাসিনের কথায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম

খাওয়া শেষ করে বিছানায় বসে আছি ভাবছি আমি সোফায় ঘুমাবো নাকি তাসিন কে বলবো
–অরনী ঘুমাতে আসো
–মানে কি এক বিছানায় ঘুমাবো নাকি আমি সোফায় ঘুমাবো
–আসবা নাকি আবার শুরু করবো
–না না আসছি

বিছানার এক পাশে চুপ করে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে রইলাম কতোদিন যে এভাবে ঘুমাতে হবে আল্লাহ জানেন কেন যে কক্সবাজার এসেছিলাম, অবশ্য কক্সবাজার আসাতে লাভ হয়েছে তাসিন কে যে আমি ভালোবাসি এইটা বুঝতে পেরেছি কিন্তু অবনী
–অরনী এভাবে শুয়ে আছ কেন
–এমনি
–এদিকে আসো
তাসিন আমাকে টেনে ওর বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরলো
–তাসিন ছাড় আমাকে
–কেন আমার বুকে ঘুমাতে ভালো লাগছে না
–আমি কিন্তু অবনী কে বলে দিবো
–তাই না বলাচ্ছি তোমাকে (তাসিন আমার মাথায় জোরে চেপে ধরে ওর দিকে ঘুরালো তারপর আমার ঠোট খেতে শুরু করলো, ওকে তো সহজে আমি ছাড়াতেও পারি না দম বন্ধ হয়ে আসছে, অনেক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে হাসতে শুরু করলো)
–এখন থেকে আমার কথা না শুনলেই তোমার মিষ্টি ঠোট দুইটা খাবো
আর কিছু না বলে চুপচাপ তাসিনের বুকে শুয়ে আছি, তাসিন একহাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আর একহাত দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে

এভাবে তাসিনের বুকে ঘুমাতে তো আমিও চাই, আমি তো চাই তাসিন শুধু আমার হউক কিন্তু আমাদের মধ্যে যে এখন অবনী দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে আছে, আচ্ছা তাসিন যদি আমাকেই ভালোবাসে তাহলে অবনী কে বলে ওকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে না কেন……

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে