আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ২০
ট্রেনে বসে আছি শিলা আর আমি পাশাপাশি বসেছি আর তাসিন অবনী কে নিয়ে আমাদের সামনের সিটে বসেছে, অবনী জানালার পাশে বসেছে ওর শাড়ির আচল বার বার তাসিনের মুখে গিয়ে পরছে কিন্তু তাসিন বিরক্ত হচ্ছে না উল্টো অবনীর হাত ধরে বসে আছে উফফফ দেখতে খুব অসহ্য লাগছে কোথাও যেন খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে, এই দৃশ্য দেখতে ভালো লাগছে না তাই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম, হঠাৎ মনে পরলো কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনলেই তো ওদের দিকে মন যাবে না, ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে গিয়ে ওদের দিকে চোখ পরলো আমি তাকিয়েছি দেখেই অবনী একটা হাসি দিয়ে তাসিনের কাধে মাথা রাখলো উফফফ অসহ্য, তাড়াতাড়ি হেডফোন কানে গুঁজে দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম, অবনী কে সহ্য হচ্ছে না কেন আমি তো চেয়েছিলাম তাসিন আমাকে ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসুক তাহলে আজ সহ্য করতে পারছি না কেন এতো কষ্ট হচ্ছে কেন
এই অরনী গাড়িতেই বসে থাকবি নাকি নামবি
–হুম চলে এসেছি
–হ্যা সারাটা রাস্তা তো ঘুমিয়েই আসলি
–(এটাই ভালো হয়েছে ওদের কে দেখতে হলো না সহ্যও করতে হলো না)
–কি ভাবছিস নাম
–হুম
বড় একটা হোটেলের সামনে এসে তাসিন দাঁড়ালো এতোক্ষণের ভিতরে ও এখন আমার দিকে একবার তাকালো আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম অজতা কারো প্রেমে বাদা হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই,
–অরনী (তাসিনের ডাকে হুশ ফিরলো ভাবনার জগতে এতোটাই হারিয়ে গিয়েছিলাম যে কখন ওদের পিছু পিছু রুমের সামনে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি)
–হুম
–এই রুমে আমরা দুজন আর পাশে রুমে শিলা আর অব….
–আমি শিলার সাথে থাকবো
–তাহলে অবনী
–তোমার সাথে থাকবে
–রুমে চলো (বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো)
–এই অরনী তোমার সমস্যাটা কি বলতো
–কিসের সমস্যা
–অবনী কি আমার বিয়ে করা বউ নাকি যে এক রুমে থাকবো
–হিহিহি
–হাসছ কেন
–ঘন্টার পর ঘন্টা হাত ধরে থাকা যায় কাধে মাথা রাখা যায় আর এক রুমে থাকতে গেলেই বিয়ে হয়নি
–তারমানে তুমি সব লক্ষ করেছ আর হিংসা করছ
–মোটেই না
–বুঝা যাচ্ছে তো
–বুঝলে ভালো
তাসিন হাসছে আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি অবনী আমাদের রুমে তাও খাটের উপর তাসিনের কাধে মাথা রেখে হেসে হেসে কথা বলছে, এখন আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না
–তাসিন
–চেঁচাচ্ছ কেন
–তোমার যদি এসব করার ইচ্ছে ছিল আমার রুমে এসেছ কেন এক্ষণি এই রুম থেকে বের হও আর শিলা কে পাঠিয়ে দাও
–এইটা তোমার একার রুম না আমারো আমার যা ইচ্ছে তাই করবো তাতে তোমার কি
–তাসিন বেড়িয়ে যাও বলছি (ও আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে অবনী কে আরো কাছে টেনে নিলো, উফফফ অসহ্য পাশে একটা ফুলের টব ছিল হাতে নিয়ে জোরে ফ্লোরে আছাড় মেরে দিলাম)
–অরনী কি করছ এসব
–বেশ করেছি
–এইটা তোমার বাড়ি না হোটেল এখানে ভাঙচুর করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
–তোমার বাবার তো টাকার অভাব নেই ক্ষতিপূরণ দিবা (তাসিন অবনী কে ইশারা করলো চলে যেতে এতোক্ষণ ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল তাসিনের ইশারা পেয়ে চলে গেল, তাসিন আমার কাছে এসে আমার দুগালে ধরে বললো)
–অরনী শান্ত হও প্লিজ আমার কথা শুনো আমি অবনী কে….
–ভালোবাস তাই তো বাস তাতে আমার কি ওর রুমে গিয়ে যা খুশি করো আমার রুমে কেন
–তুমি কখনো সঠিকটা বুঝবা না
তাসিন রুম থেকে বেরিয়ে গেলো অসহ্য প্রেম করবে তাও আমার রুমে বসে সখ কতো
বিকেল হয়ে গিয়েছে ভাবছি ঘুমাবো তখনি শিলা এসে ডাকতে শুরু করলো
–অরনী খেতে চল
–খাবো না
–সারা রাস্তা তো ঘুমিয়ে কাটাইছিস কিছুই খেলি না এখনো খাবি না
–না খাবো না
–ঠিক আছে আমি ভাইয়া কে বলে খাবার রুমে আনাচ্ছি
–না ওকে কিছু বলিস না
–কেন
–অবনী কে নিয়ে থাকতে দে
–আমি জানি তুই অবনী কে সহ্য করতে পারছিস না এখনো সময় আছে ভাইয়া কে বল তুই ভাইয়া কে ভালোবাসিস
–(নিশ্চুপ)
–অবনী প্লিজ
–বাদ দে তো তুই খেয়ে আয় ঘুরতে যাবো
–তুই না খেয়ে পারবি আমি পারবো না খেয়ে আসতেছি
–হুম
সন্ধ্যা নেমে আসছে শিলা কে নিয়ে বালুচরে হাটছি, তাসিন কে বলেছিলাম আমার সাথে ঘুরতে আসতে ওর নাকি এখন ইচ্ছে হচ্ছে না তাই শিলা কে নিয়ে একাই চলে এসেছি, বালুচরে এদিক সেদিক আনমনে হয়ে হাটছি হঠাৎ একটু দূরে থাকাতেই চোখ আটকে গেলো তাসিন অবনীর হাত ধরে হাটছে মাঝে মাঝে অবনী দৌড়াচ্ছে আর তাসিন দৌড়ে গিয়ে অবনী কে ধরছে
–এই অরনী কি হয়েছে তোর
–হুম কিছুনা
–এখন এসব দেখে কষ্ট পেয়ে কি লাভ হবে বল
–আমি বলেছিলাম আসতে তাসিন বলেছে এখন ওর ইচ্ছে হচ্ছে না আর অবনীর সাথে ঠিকি এসেছে
–এটাই এখন স্বাভাবিক কান্না করছিস কেন
–জানিনা আমি যাই
–একা যাবি নাকি এই অরনী….
শিলার কথা আর না শুনে দৌড়ে হোটেলে চলে আসলাম খুব কষ্ট হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে, রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে বসে পরলাম কান্না করছি অনেক বেশি কান্না করছি কাঁদলে হয়তো কষ্ট একটু কমবে
–অন্নি দরজা খুলো (হঠাৎ তাসিনের ডাকে কান্না বন্ধ করলাম ও এখানে আসলো কেন ও তো অবনীর সাথে দুষ্টামি করতে ব্যস্ত ছিল)
–অন্নি প্লিজ দরজা খুলো
–(ডাকুক যতো খুশি আজ দরজা খুলবো না)
–অন্নি প্লিজ চুপ হয়ে থেকো না কথা বল প্লিজ দরজা খুলো
–(নিশ্চুপ)
–অন্নি প্লিজ দরজা খুলো নাহলে আমি দরজা ভাঙার ব্যবস্থা করবো (না আর চুপ করে থাকা যাবেনা ও যদি সত্যি দরজা ভেঙ্গে ফেলে)
দরজা খুলে দিতেই তাসিন এক ঝটকায় রুমের ভিতরে ডুকে এদিক সেদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজতে শুরু করলো
–কি খুঁজছ
–আমি তো ভেবেছিলাম….
–আমি সুইসাইড করবো এটাই তো হিহিহি
তাসিন আমার মুখ চেপে ধরলো তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললো
–তুমি সুইসাইড করলে আমার কি হবে আমি বাঁচবো কিভাবে
–কেন অবনী আছে না
–প্লিজ চুপ করো আর না অনেক হয়েছে আমি জানি তুমি অবনী কে সহ্য করতে পারছ না এবার অনন্ত স্বীকার করো তুমি আমাকে ভালোবাস
তাসিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি চুপচাপ কি বলবো সত্যিই তো আমি তাসিন কে ভালোবেসে ফেলেছি, তাসিন আস্তে করে আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো, আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে ও, আজ আমারো ওর বাহুডোরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে আর কোথাও হারিয়ে যেতে চাইনা তাসিন কেও হারাতে চাই না….
চলবে?