আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ১৮
মাঠের এক কোনে বসে বসে ভাবছি তাসিন কিসের প্ল্যানের কথা বলছিল আবার কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ওর এই কথায় হঠাৎ দেখলাম তাসিন এদিকে আসছে
তাসিন: অন্নি এই নাও তোমার ফোন
আমি: লাগবে না
তাসিন: কেন
আমি: ক্লাসে তো আমাকে না চেনার ভান করেছ আর এইটা তোমার দেওয়া ফোন তাই তুমি নিয়ে গেছ এখন আবার দিচ্ছ কেন
তাসিন: তুমি ক্লাস না করে গান শুনছিলে তাই নিয়েছি রাগ করো না প্লিজ
আমি: লাগবে না তোমার ফোন আর এখান থেকে যাও তোমার অবনী দেখলে রাগ করবে
তাসিন: সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি ফোনটা নাও শুধু
আমি: আমার ফোন লাগবে না
তাসি: তাহলে আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
আমি: কোনো প্রয়োজন নেই তো কথা বলার অবনী তো আছেই
তাসিন: (নিশ্চুপ)
আমি: যাও
তাসিন: অন্নি ফোনটা নাও প্লিজ আমি অবনী কে ভালোবাসি কিন্তু তোমার সাথে….
আমি: একসাথে দুই মেয়ের সাথে কথা বলতে চাও
তাসিন: (আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে এই সুযোগে ওকে শাস্তি দেওয়া যাক আমাকে না চেনার ভান করে ফোন নিয়ে যাওয়া এবার বুঝবে ঠেলা)
আমি: নিতে পারি এক শর্তে
তাসিন: কি বলো
আমি: কান ধরে উঠবস করো আর বলো আমার গান শুনাতে কখনো ডিস্টার্ব করবা না
শিলা: অরনী পাগল হয়ে গেছিস কি বলছিস এসব এই কলেজের….
তাসিন: শিলা থামো সমস্যা নেই ওর কথায় আমি সব করতে রাজি (বলেই কান ধরে বসতে গেলো)
আমি: তাসিন আমি ফাজলামো করেছি সবাই দেখছে কান ছাড়ো
তাসিন: না
আমি: তাসিন প্লিজ সবাই হাসছে আমি ফাজলামো করেছি ফোন দাও আমি নিচ্ছি
অবনী: তাসিন কি করছ এসব (পাশে তাকিয়ে দেখি অবনী রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর রাগ দেখে তাসিন কান ছেড়ে সুজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো)
অবনী: এসব কি করছিলে সবাই যে হাসছে দেখেছ ওহ বুঝেছি এই মেয়ের কথায় এসব করেছ
তাসিন: (নিশ্চুপ)
অবনী: এই মেয়ে তোমার নাহয় লজ্জা শরম নাই ও তো এই কলেজের টিচার ওকে কান ধরতে বললা কিভাবে (অবনী আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো একদমে বলে ফেললো আমি তো ফাজলামো করেছিলাম তাই বলে এসব বলবে)
তাসিন: অবনী মুখ সামলে কথা বলো অন্নি কে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলো
অবনী: পারবো না তুমি এখন আমার তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্বটাও আমার আর ওকে কখনো অন্নি বলে ডাকবা না এতো আদর করে ডাকতে হবে না চলো আমার সাথে
নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তাসিন চুপচাপ অবনীর সাথে চলে যেতে লাগলো, আবার ফিরে এসে ফোনটা শিলার হাতে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো “নিজের দোষে আমাকে হারিয়েছ আর অন্য মেয়ে তোমাকে এত্তোগুলো কথা শুনানোর সুযোগ করে দিয়েছ” বলেই হনহন করে চলে গেলো, আমি মাঠে বসে পড়লাম আমি ফাজলামো করেছিলাম আর মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনালো তাসিনও মেয়েটা কে কিছু বললো না
শিলা: এখন কান্না করে কি হবে নিজের দোষেই সব হারালি
–তাই বলে মেয়েটা আমাকে এতো কথা শুনাবে
–মেয়েটা ভাইয়া কে ভালোবাসে তাই ওর অধিকার আছে
–হুম
–নিজের অধিকার তো নিজেই শেষ করে দিলি
–তুই থাক আমি হোস্টেলে যাই
হঠাৎ শিলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, হোস্টেলে এসে শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি
–রাত হয়ে গেছে উঠে পড়তে বস আর ভাইয়া অনেক বার ফোন দিয়েছিল তুই ঘুমে তাই জাগাতে বারন করেছিল এখন ফোন দে
–পারবো না
–কেন
–ওর সাথে তো আমার কোনো কথা নেই যা কথা হবার ডিভোর্স এর সময় হবে
–পাগলামি করিস না
–আমি কাল তাসিনের বাবার কাছে যাবো প্রমান চাইবো
–কিন্তু
–আর কতো অপেক্ষা করবো আর বাবা হয়তো এতোদিনে সুস্থ হয়েছেন
–ঠিক আছে
সকালে শিলা কে নিয়ে তাসিনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম, কলিংবেল বাজাতেই তিথি এসে দরজা খুলে দিলো, আমাকে দেখেই জরিয়ে ধরে সবাইকে ডাকতে শুরু করলো ভাবি এসেছে ভাবি এসেছে বলে, মুহূর্তের মধ্যে বাড়ির সবাই ড্রয়িংরুমে এসে হাজির, মা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন
মা: আমাদের কথা মনে পড়েছে বুঝি কতোদিন পর তোকে দেখলাম
ভাবি: তাসিন কে তো কলেজেই সারাক্ষণ কাছে পায় বাসায় এসে কি করবে আমাদের জন্য কি আর কষ্ট করে আসবে (বলেই আমাকে ধাক্কা মারলো সবাই আমাকে কতোটা ভালোবাসে আজ বুঝতে পারলাম)
আমি: মা বাবা কোথায়
মা: কেন তুই জানিস না কাল রাত থেকে তো উনি অসুস্থ তাসিন বলেনি
আমি: হ্যা বলেছিল এজন্যই তো দেখতে এসেছি (মিথ্যে বলা ছাড়া উপায় নেই রাতে হয়তো তাসিন বার বার এজন্যই ফোন দিয়েছিল দুর সব প্ল্যান বেস্তে গেলো আবার উনার সুস্থ হবার অপেক্ষা)
বাবার রুমে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বসা আমাকে দেখেই বাবা হাত বাড়িয়ে দিলেন আমিও গিয়ে বাবার মাথার কাছে বসলাম
বাবা: এতোদিন পর আসলি
তাসিন: আব্বু ও আসতে চেয়েছিল আমিই না করেছি ওর সামনে পরিক্ষা তো তাই (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আজো ও আমাকে ভালো সাজিয়ে দিলো)
বাবা: ঠিক আছে মা ভালো করে পড়াশুনা করবি কেমন আর বাবার জন্য দোয়া করবি
আমি: আচ্ছা
সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, তাসিন কে কোথাও দেখতে না পেয়ে আমাদের রুমে গেলাম, রুমের যা অবস্থা করে রেখেছে কিন্তু তাসিন তো রুমেও নেই হঠাৎ দেখলাম বারান্দার দরজা খুলা এগিয়ে দেখি তাসিন বাইরে তাকিয়ে আছে হাতে সিগারেট
–তাসিন
–হুম (তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলে দিলো)
–এখন তো অবনী আছে সিগারেট খাচ্ছ কেন
–(মৃদু হাসল)
–অরনী শুনো না….
–বাহ অবনীর কথায় অন্নি থেকে অরনী
–সরি ভুল হয়ে গেছে
–আগে এমন ভুল হতো না বাদ দাও আসি
রুমের যা অবস্থা এমন অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই রুম গুছাতে লেগে গেলাম, বালিশ ঠিক করতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে একটি পায়েল, পায়েল হাতে নিয়ে তাসিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি
–তুমি বাসায় নেই বালিশের নিচে পায়েল আসলো কোথায় থেকে এইটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছ আসলে সেদিন একটা কাজে এক জায়গায় গিয়েছিলাম এই পায়েলটা দেখে পছন্দ হয়েছে তাই এনেছি কিন্তু তোমাকে দেওয়ার সাহস হয়নি যদি রাগ করো
–(সত্যি কি ও অবনী কে ভালোবাসে যদি অবনী কে ভালোবাসে তাহলে ও আমার জন্য পায়েল আনবে কেন আর…)
–অন্নি প্লিজ একটি কথা রাখবে আমার
–হুম বল
–পায়েলটা তোমার পায়ে পড়িয়ে দেই প্লিজ (কি করবো বুঝতেছি না তাসিন মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে)
–ঠিক আছে
তাসিন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো খুশি হয়ে আমার পায়ের কাছে বসে পড়লো তারপর খুব যত্ন করে পায়েলটা পড়িয়ে দিলো….
চলবে?