আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ০৬
সকালে তাসিনের ডাকাডাকি তে ঘুম ভাঙ্গলো
–কি হইছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন
–তিথি নাস্তা করার জন্য ডাকছে আমি দরজা খুলতে পারছি না তুমি সোফায় ঘুমে দেখলে ও কি ভাববে
–যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি সবাই দেখুক তুমি আমাকে নিয়ে সুখে নেই
–শুনো অন্নি যা কষ্ট দেওয়ার আমাকে দাও আমার পরিবারের সবার কাছে আমার ভালোবাসা কে ছোট করো না প্লিজ বলেই নিচে চলে গেলো
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম রুমে আসতেই দেখি কাজের বুয়া নাস্তা হাতে দাড়িয়ে আছে
–কি ব্যাপার
–স্যার কইছে আপনের শরীর ভালো না নাস্তা যেন রুমে দিয়ে যাই
–রেখে যাও
–আইচ্ছা
বুয়া নাস্তা রেখে চলে গেলো বুঝলাম না তাসিন নাস্তা রুমে পাঠালো কেন, দুর যা খুশি করুক খিদে লেগেছে খেয়ে বসে থাকি
নাস্তা করে বিছানায় বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছি তখন তিথি আসলো
–ভাবি
–হুম
–আব্বু তোমাকে ড্রয়িংরুমে যেতে বলেছেন
–কেন
–কি যেন জরুরী কথা বলবে সবাইকে নিয়ে
–তুমি যাও আসছি
কি কথা বলবে কিছু টের পেয়ে গেলো না তো, যদি টের পেয়ে যায় তাহলে তো খেলা এখানেই শেষ এসব ভাবতে ভাবতে নিচে চলে আসলাম সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি নিচে আসতেই মা ডেকে উনার পাশে আমাকে বসিয়ে দিলেন
বাবা: অরনী তোমাদের সবার সাথে একটি কথা বলার ছিল
আমি: কি কথা বাবা
বাবা: তাসিনের অসুস্থতার জন্য তো বৌভাত করা হয়নি এখন তাসিন অনেকটা সুস্থ হয়েছে তাই ভাবছি বৌভাতটা করে ফেলি (যাক বাঁচলাম আমি তো ভেবেছিলাম আমার প্লেন বুঝে পেলেছে কিন্তু এসব অনুষ্ঠান যে আমার ভালো লাগে না এখন কি বলি)
আমি: বাবা বৌভাত না করলে হয়না আমার এসব ভালো লাগে না
বাবা: কি বলছ মা সবাই কি ভাববে বল তো
তাসিন: আব্বু অন্নির কথা শুনো না তো তুমি আগামীকাল বৌভাতের আয়োজন কর
বাবা: ঠিক আছে
(আমার কথা না শুনে তুমি বৌভাতের আয়োজন করতে বলেছ তাসিন চৌধুরী এইটার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে)
সবার সাথে ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলাম, বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি বৌভাতের অনুষ্ঠান যখন হবেই তখন এই সুযোগ কাজে লাগাতে হয়, অনুষ্ঠান এর ভীড়ে সবাই ব্যাস্ত থাকবে পরী কে তখন-ই কিডন্যাপ করাতে হবে এইটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ, তাসিন রুমে নেই তাড়াতাড়ি চাচ্চুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো চাচ্চু
–হ্যা বল
–সময় নেই যা বলি মন দিয়ে শুনো
–বল
–তুমি তো আসতে পারবা না একজন চালাক লোক ভাড়া করো যেন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে পরী কে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে আর আমি তো এখানে আছিই লোকটার একটি ছবি আমাকে ইমেইল করবে আমি ওকে সাহায্য করবো আর হ্যা পরী দুদিন তোমাদের কাছে থাকবে খবরদার ওকে কষ্ট দিবা না সবসময় হাসিখুশি রাখবা
–ঠিক আছে
–বৌভাত হবে আগামীকাল সেখান থেকেই সন্ধ্যার সময় পরী কে কিডন্যাপ করতে হবে আর হ্যা খুব সাবধানে ওরা কিন্তু পুলিশের কাছে যাবে পুলিশ যেন কোনো ভাবেই পরী কে উদ্ধার করতে না পারে
–ওকে
ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম যাক কাজটা এখন ভালো ভাবে হলেই হয় চৌধুরী পরিবারে অশান্তি নেমে আসবে আর আমার মনে আসবে শান্তি পরম শান্তি
সারা বাড়িতে অনুষ্ঠানের কাজ চলছে চারদিক একটু ঘুরেফিরে দেখলাম তারপর পরীর রুমের দিকে গেলাম এই একদিনে একটু ফ্রি হয়ে নেই, রুমে গিয়ে দেখি পরী বিছানায় পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–পরী আম্মু কি করছ
–খেলছি আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো
–ছোট আম্মু বলে ডাকবা আর তুমি করে বলবা
–তুমি খুব ভালো আম্মু
–শুধু আম্মু না আমি তোমার বন্ধুও
–তাহলে চলো আমরা দুজন খেলা করি
–ঠিক আছে
যাক এই পিচ্ছিটার সাথে তো ফ্রি হয়ে গেলাম এখন কাজটা অনেক সহজ হবে
পরীর সাথে অনেক্ষণ খেলা করে রুমে আসলাম তাসিন বিছানায় বসে আছে খুব চিন্তিত লাগছে, সে যাই হউক আমার কি আমি বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম
–অন্নি কোথায় ছিলে
–পরীর কাছে
–হুম
–কেন সন্দেহ হচ্ছে
–মানে
–কিছু না শুধু এইটুকু জেনে রাখো এতো তাড়াতাড়ি যাবো না ভয় পেয়ো না
–অন্নি কেন করছ এমন কি লাভ হচ্ছে তোমার
–(লাভ একটাই আমার মনে শান্তি পাই, এখন তো কমই করছি আস্তে আস্তে সবার উপর আমার অত্যাচার বেড়ে যাবে তখন বুঝবা)
–কি হলো কথা বলছ না কেন কি ভাবছ
–কিছুনা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না
–হুম
রাতে চাচ্চু একজন লোকের ছবি পাঠালো বুঝলাম এই লোক পরী কে কিডন্যাপ করবে, খুব কান্না পাচ্ছে আমি তো এতো খারাপ না যে পরীর মতো পিচ্ছি একটি মেয়ে কে কিডন্যাপ করাবো কিন্তু নিয়তি যে আমাকে খারাপ বানিয়ে দিয়েছে, আমাকে যে প্রতিশোধ নিতেই হবে নাহলে যে আব্বু আম্মুর আত্মা শান্তি পাবে নাহ, খুব অসহ্য লাগছে চোখ থেকে পানি ঝরছে আমি তো এসব চাইনি প্রত্যেক মেয়ের মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম কাউকে ভালোবাসবো সংসার করবো সবাইকে নিয়ে কিন্তু নিয়তি আমাকে এমন জায়গায় এনে দাড় করিয়েছে সব স্বপ্ন মাটি চাপা দিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে হয়েছে মনে আর এখন সেই প্রতিশোধ নিতে হচ্ছে, তাও এসবের মাঝে আমি একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি কিন্তু মনে একটু শান্তি আনতে চাইলেও মনে পরে যায় আমি আমার আব্বু আম্মুর খুনির বাড়িতে আছি এই খুনিদের সাথে একসাথে থাকছি খাবার খাচ্ছি উফফফ এসব মনে পরলে খুব যন্ত্রণা হয়, কেন আফজাল চৌধুরী সামান্য সম্পত্তির লোভে আব্বু আম্মুকে খুন করলো আমাকে এতিম করলো……
চলবে?
(রহস্য বের হলো এবার সবাই খুশি☺)