আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ০৪
তাসিন কে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো মা বাবা আর তাসিনের বড় ভাই আসিফ গেলেন সাথে, বাড়ির সবাই ড্রইংরুমে চিন্তিত মুখে বসে আছে আমার তো দেখতে বেশ মজা লাগছে, কিন্তু আমি যে আনন্দ পাচ্ছি সেটা তো প্রকাশ করা যাবে না বরং আমাকে এমন অভিনয় করতে হবে যে সবার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমি কারন আমি তাসিন কে ভালবেসে বিয়ে করেছি আর বিয়েরও মাত্র দুদিন হলো, সবকিছু ভেবে আমিও চিন্তিত মুখে ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে বসে আছি আর কান্না করার মিথ্যে নাটক করছি, প্রতিশোধ নিতে হলে তো এইটুকু নাটক করতেই হবে আমাকে
ঘরির কাটাতে রাত নয়টা বাজে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, তাসিনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে কি দিলো তাসিন….? তাহলে কি তাসিন সুস্থ হয়ে গেছে কিন্তু ও এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক সেটা তো আমি চাইনা, ফোনটা রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অরনী মা তাসিনের জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর থেকে শুধু তোমাকে দেখতে চাইছে আসিফ কে পাঠিয়েছি তুমি ওর সাথে হসপিটালে চলে এসো
–ঠিক আছে
পরলাম আরেক জ্বালায় শাশুড়ি মা ফোন করে বলেছে না গেলেও প্রব্লেম হবে কি যে করি ওদের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তো দেখি আমি নিজেই শেষ হয়ে যাবো, হসপিটালে যাওয়া মানেই তো সারা রাত জেগে থেকে তাসিনের সেবা করা যারা আমার শত্রু তাদের ছেলে কে সেবা করবো আমি ইম্পসিবল, আজ এমন সেবা করবো আমি তাসিন আর কখনো আমাকে পাশে রাখতে চাইবে না
হসপিটালে তাসিনের পাশে বসে আছি, আমার হাত তাসিনের হাতের মুঠোয় নিয়ে ও শুয়ে আছে পাশে মা বাবা তাই কিছু বলতেও পারছি না জাস্ট অসহ্য লাগছে এসব
তাসিন: আম্মু তুমি আর আব্বু বাসায় চলে যাও অন্নি তো আমার কাছে আছেই
মা: তোকে রেখে কিভাবে….
তাসিন: আম্মু অন্নি আমাকে কতোটা ভালোবাসে তোমরা তো জানো তাহলে ওর পাশে রেখে যেতে ভয় কিসের
বাবা: ভয়ের কিছু না ও মেয়ে মানুষ হঠাৎ কিছু হলে ও একা কি করবে
তাসিন: কিছু হবে না তোমরা যাও
মা: ঠিক আছে
বুঝলাম উনারা যেতে চাচ্ছেন না কিন্তু তাসিনের জিদের কাছে হার মেনে যেতে হচ্ছে
মা বাবা চলে গেলেন, এখনো তাসিন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে শুয়ে আছে আর কি এভাবে রাখা যায় এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলাম ও শুধু অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এতো অভাক হবার কিছু নেই এসব আমার ভালো লাগে না
–(মৃদু হাসল)
–হাসছ কেন
–নতুন অন্নির নতুন রূপ দেখে, আগে এই অন্নিটাই সারা দিন আমার হাত ধরে থাকতে চাইতো
–আগের অন্নি নেই পাল্টে গেছে
–হ্যা কবুল বলার সাথে সাথে আমার অন্নিটা পাল্টে গেছে
ভালো লাগছে না এসব শুনতে কেবিন থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, তাসিন আমাকে অনেক ভালোবাসে আমি জানি কিন্তু আমি তো তাসিন কে কখনো ভালোবাসিনি এতোদিন শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছি চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ হয়ে আসার জন্য, ছোট বউ হয়ে তো এলাম তাসিন কে কষ্টও দিচ্ছি কিন্তু তাসিন তো দিন দিন আরো বেশি ভালোবেসে ফেলছে আমায়, আমি কি পারবো সবসময় ওর এতো ভালোবাসা কে উপেক্ষা করে সবাইকে শাস্তি দিতে আমার প্রতিশোধ নিতে
–অন্নি অন্নি (উফফফফফ তাসিন ডাকতেছে একদম ভালো লাগছে না এসব)
–কি
–আমার ওষুধটা খাইয়ে দিবে ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো
–কেন তোমার হাত নেই নিজে খেতে পারো না
–হুম খেয়ে নিবো ভেবেছিলাম আমার পাশে থাকলে আমার কষ্ট দেখে তোমার পাথর হয়ে যাওয়া মনটা হয়তো একটু নরম হবে কিন্তু এখন দেখছি আমি সম্পূর্ণ ভুল
–আমার মন পাথরের মতো নাকি নরম সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না
–খাবার রাখা আছে খেয়ে নাও
–খাবো না
–খাবারের উপর রাগ করো না অসুস্থ হয়ে পরবে
–আমার জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না
–তুমি তো আমার জন্য চিন্তা কর না আমিই নাহয় তোমার জন্য চিন্তা করলাম
–আচ্ছা তাসিন একটা কথা বলো তো তুমি কি আমাকে হসপিটালে এনেছ সারা রাত ঝগড়া করবে বলে
–না আমার অসুস্থতার সময় তুমি পাশে থাকলে আমার ভালো লাগবে তাই এনেছিলাম কিন্তু….
–কিন্তু কি
–কিছু না ঘুমিয়ে থাকো
–হসপিটালে তো এনেছ আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কোথায় ঘুমাবো আমি ফ্লোরে
–রাগের মাথায় রুমটা মনে হয় ভালো করে দেখনি
–(ওর কথা শুনে রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম সোফা এসি টিভি সব আছে)
–আফজাল চৌধুরীর কলিজা আমি আমাকে কোনো ছোট হসপিটালে ভর্তি করানো হবে ভাবলে কিভাবে যাও সোফায় ঘুমিয়ে পরো আমার হাতে স্যালাইন লাগানো নাহলে আমি সোফায় ঘুমাইতাম আর তোমাকে বেডে ঘুমাতে বলতাম
(তুমি যে আফজাল চৌধুরীর কলিজা সেটা জেনেই তো তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করলাম বিয়ে করে চৌধুরী পরিবারের বউ হয়ে আসলাম তোমাকে দিয়েই যে আমি আমার প্রতিশোধ নিবো এসব ভাবতে ভাবতে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম)
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাসিনের দিকে থাকিয়ে দেখি ঘুমিয়ে আছে, রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম তারপর এসিটা বাড়িয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, ডক্টর বা নার্স কেবিনে আসার আগেই এসি বন্ধ করে ফেলবো, হাহাহা সারা রাতের এসির ঠান্ডায় তাসিন আরো অসুস্থ হয়ে পরবে আর কষ্ট পাবে আফজাল চৌধুরী & মিসেস আফজাল
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম, নার্সরা আসার সময় হয়েছে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে এসিটা বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পড়লাম, একবার তাসিনের দিকে থাকালাম বেচারা জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে ঠান্ডা ভালোই লেগেছে এবার শুধু ওদের কান্না দেখার পালা, ওরা ওদের কলিজার টুকরা ছেলের কষ্ট দেখে কাঁদবে আর আমি ওদের কান্না দেখে শান্তি পাবো
সোফায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি হঠাৎ নার্সদের চেঁচামেচি শুনে উঠে বসলাম, কয়েক জন ডক্টর দৌড়ে রুমে আসলো……
চলবে?