আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৩

1
3550

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

সারা বাসায় শুধু চেঁচামেচি সবার মুখে একটাই কথা তাসিন অসুস্থ তাসিনের খুব জ্বর এসেছে উফফফফফ আর ভালো লাগছে না এসব চেঁচামেচি, আগে জানলে সবার এই আহ্লাদের টুকরা তাসিন কে ফ্লোরে ঘুমাতে বলতাম না এখন নিজেই শাস্তি ভোগ করছি

সবাই আমদের রুমে ভীড় করে আছে আমি আর কি করবো খাটের এক কোনে বসে রইলাম, তাসিন হয়তো বুঝতে পারছে আমার অস্বস্তি লাগছে তাই ও সবাইকে রুম থেকে বের করে দিল, যাক এতোক্ষণে একটু শান্তি পেলাম
–অন্নি সরি আমার জন্য সবাই এ রুমে এসেছে আর তুমি অস্বস্তি ফিল করেছ
–(কিছু না বলে ওর দিকে শুধু থাকিয়ে রইলাম)
–অন্নি প্লিজ আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিবে
–বল
–এমন কেন করছ আমার সাথে আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে
–(কিছু বলতে যাবো তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

–হ্যালো ছোট মা
–হ্যা মা কেমন আছিস
–আর বলো না একদম অসহ্য লাগছে এখানে
–কেন কি হয়েছে
–তাসিন কে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বলেছিলাম এখন তো ওর ঠান্ডা লেগে গেছে বাড়িতে এইটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে জাস্ট অসহ্য লাগছে
–ওদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে হলে এমন জামেলা তো তোর সহ্য করতেই হবে তাই না
–ভালো লাগছে না এসব ছোট মা
–একটু ধৈর্য ধর মা তুই কি হতাশ হয়ে হেরে যাবি
–না ছোট মা আমাকে হারলে হবে না প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে
–এইতো আমার মেয়ের মতো কথা, এসব একটু সহ্য কর আর তুই যে এভাবে কথা বলছিস কেউ শুনে ফেলবে তো
–হ্যা এখন রাখি পরে ফোন করবো
–ঠিক আছে মা

ফোন রেখে রুমে আসতেই দেখি তাসিন অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে, ও কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি
–অভাক হয়ে থাকিয়ে আছ কেন
–আমার নতুন অন্নিটা কে দেখছি
–মানে
–এই যে আমার থেকে দূরে গিয়ে ফোনে কথা বলে আগে তো এমন ছিল না
–আমার ফ্রেন্ড ফোন দিয়েছিল ওর সাথেও কি তোমার সামনে কথা বলতে হবে, ভালো করে শুনে রাখো আমার ব্যাক্তিগত কোনো ব্যাপারে একদম নাক গলাতে আসবে না
–হুম
–আচ্ছা তোমার বাড়ির মানুষদের কি সামান্য বিবেক বলতে কিছু নেই সকাল দশটা হয়ে গেছে অথচ নাস্তা খেতে ডাকেনি ওরা কি ভাবে নতুন বউদের খিদে লাগে না
–আসলে আমি অসুস্থ হওয়াতে কারো মন মেজাজ ঠিক নেই তুমি বস আমি খাবার রুমে নিয়ে আসি
–হ্যা তুমি যাও আর বাড়ির মেহমানরা আমাকে অসভ্য বলুক
–(একটা হাসি দিয়ে কাকে যেন ফোন দিয়ে বললো রুমে খাবার নিয়ে আসতে)

ফোন দেওয়ার একটু পরই কাজের বুয়া খাবার দিয়ে গেলো, সোফায় বসে পা নাচাচ্ছি আর খাবার খাচ্ছি তাসিন খাবে কিনা জিজ্ঞেসও করলাম না
–অন্নি
–কি
–খিদে লেগেছে
–খাবার আছে খাও
–খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি খাইয়ে দিবে
–শুনো এসব আহ্লাদী কাজ আমি করতে পারবো না নিজে খেতে পারলে খাও না খেতে পারলে ঘুমাও
–হুম

আর একবারও তাসিনের দিকে থাকালাম না ফোনে গেমস খেলতে খেলতে খেয়ে নিলাম, খাওয়া শেষে থাকালাম দেখি তাসিন ঘুমিয়ে পড়েছে মুখটা খুব মায়াবী লাগছে, নিজের অজান্তেই ওর মাথার পাশে গিয়ে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিলাম, খুব বেশিই মায়াবী লাগছে ওকে আর কষ্ট দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাসিন তো আর কোনো অপরাধ করেনি তাহলে ওকে কেন কষ্ট দিচ্ছি

হঠাৎ এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলাম ওর মাথা থেকে, বারান্দায় এসে চেয়ারে দফ করে বসে পড়লাম, কি করছি আমি এসব আমি তো এ বাড়িতে এসেছি প্রতিশোধ নিতে তাহলে আমি তাসিনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ছি কেন, আমাকে যে দূর্বল হলে চলবে না তাসিন কে কষ্ট দিয়েই যে আমার প্রতিশোধ নিতে হবে, তাসিন এই বাড়ির সবার কলিজার টুকরা ওকে কষ্ট দিলেই সবাই কষ্ট পাবে তাই ওকেই আমার কষ্ট দিতে হবে অনেক বেশি কষ্ট

–ভাবি ভাবি (হঠাৎ তিথির ডাকে চোখ খুলে থাকালাম বারান্দায় চেয়ারে বসেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি)
–ভাবি তুমি এখানে ঘুমিয়ে আছ কেন দরজা খুলা ভাইয়াও ঘুমে
–এখানে এসে বসছিলাম কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি
–তোমার চোখে তো ঘুম রইছে যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও
–হুম

তিথি চলে গেলো রুমে এসে বিছানায় বসলাম তাসিন গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে, কি করবো বুঝতেছি না এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে, শত্রুর বাসায় তো আর শান্তি লাগবে না বরং অশান্তিই লাগবে, ঘুমও ধরছে খুব চোখ মেলে থাকাতে পারছি না, বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম

হঠাৎ পেটে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তাড়াতাড়ি চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি তাসিন আমার পেটে হাত দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে, আস্তে করে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম, সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ভালো লাগছে না কিছু তাই ছাদে গেলাম

ছাদের দোলনায় বসে বসে ভাবছি কি করলে এই চৌধুরী পরিবারের সবাই কাঁদবে আর আমি পরম শান্তি পাবো, কি করবো তাসিন কে কষ্ট দিবো নাকি অন্য কাউকে, আচ্ছা পরী কে কষ্ট দিলে কেমন হয় ও তো এই চৌধুরী পরিবারের প্রথম সন্তান অবশ্যই সবাই কাঁদবে ওর জন্য, কিভাবে কষ্ট দিব পরী কে মেরে ফেলবো….?
না না খুন করা যাবে না কাউকে খুন করতে হলে তো আফজাল চৌধুরী কে খুন করে আমার প্রতিশোধের আগুন নিবাতাম, আমি তো চাই চৌধুরী পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ কষ্ট পেতে পেতে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাক মুছে যাক এই চৌধুরী মঞ্জিল এর অস্তিত্ব

হঠাৎ নিচে চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম, ড্রয়িংরুমে সবাই ভীড় জমিয়েছে একটু সামনে যেতেই দেখলাম তাসিন ফ্লোরে পরে আছে মা ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন, কে একজন যেন চিৎকার করে বললো তাসিন মাথা ঘুরিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো ওকে হসপিটাল নিতে হবে…..

চলবে?

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে