আমার_ঘর_আমার_সংসার
৬ষ্ঠ পর্ব/শেষ পর্ব
হুট করে খেয়াল করলাম তুর্জ কথা বলতে শুরু করেছে।তুর্জকে কথা বলতে দেখে আমার আনন্দের মাত্রাটা যেন বেড়ে গেল।মনে হচ্ছে খুশিতে আমার কথায় আটকে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে।তারপর ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে বললাম
-তুর্জ আপনি কথা বলছেন।আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।আমার খুশিতে কথা আটকে যাচ্ছে।
তুর্জ আমার হাত থেকে তার হাত টা ছাড়িয়ে জবাব দিল
-হ্যা কথা বলতে পারছি।আচ্ছা ইশিতা তুমি এখন চলে যাও।বাকিটা আমি সামলে নিতে পারব।তুমি বাসায় যাও আর পড়তে বস।বাসায় গিয়ে পড়া শেষ কর।আমি এসে সব দেখব।ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে আর আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে খাণিকক্ষন পর আসছি।
কিন্তু তুর্জকে ছেড়ে যেতে কেন জানি না আমার একটু ও ভালো লাগছে না।তাই তুর্জকে বললাম
-আমি থাকি না আপনার সাথে।পড়া আমি সারা রাত পড়ে কমপ্লিট করে দিব।প্লিজ থাকি।
তুর্জ গম্ভীর গলায় জবাব দিল
-তোমাকে যেতে বলেছি তুমি যাও তো।আর বিরক্ত কর না।যা বলছি তাই কর।
আমি চুপচাপ হয়ে মন খারাপ করে বললাম
-আচ্ছা যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু।
উনি শান্ত স্বরে বলল
-যাও আসব তো বলছি।এবার যাও।
আমি ঐ জায়গা থেকে চলে আসলাম।মাকে সবটা বললাম।মা ও বেশ খুশি হল।মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
-সব তোমার জন্য হয়েছে মা।
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম নিজের প্রসংশা শুনে।কিছুটা লজ্জা পেয়ে উনাকে বললাম
-মা আমি এখন যাই।পড়তে বসতে হবে।এসে যদি দেখে পড়া কমপ্লিট হয় নি তাহলে আমাকে মারবে।আমি যাই।
মা হাসতে হাসতে বলল
-যাও।
আমি চলে আসলাম আমার রুমে।আমার রুমে এসে পড়তে লাগলাম।কিন্তু মনটা পড়ে রইল তুর্জের কাছে।বারবার ওর কথা মনে পড়ছে।কখন যে আসবে এটা ভেবে মন আনচান করছে।ইশ কাউকে ভালোবাসলে বুঝি এমনেই হয়।বেশ অস্থির লাগছে।অস্থিরতা যেন কাটছে না।পড়তে ও পারছি না ঠিক করে।সময় যেন কাটছে না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।তুর্জকে দেখে মনে অস্থিরতা যেন কাটল।মনের সব কষ্ট যেন দূর হল।আমার ভিতরের বয়ে যাওয়া জড় যেন থেমে শীতল হয়ে গেল।আমি তুর্জকে বলললাম
-আপনি এসেছেন।আমার আপনার জন্য মন কেমন করছে।
-হ্যা বুঝছি।যাও পড় গিয়া।
কিন্তু তুর্জ আসার পর থেকে কেমন জানি অস্থির ছিল।আমি বুঝতে পারলাম না তুর্জের কি হল।অনেক জিজ্ঞেস করলাম।তুর্জ কোন জবাব দিল না।তুর্জের জবাব না পেয়ে বেশ ব্যাহত হলাম।কিন্তু তুর্জ তবুও কোন জবাব দিল না।বেশ কষ্ট লাগল।সারাদিন এসবের মধ্যেই গেল।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্জ পাশে নেই।তুর্জকে খুঁজে পলাম না কোথাও।কোথায় গেল এত সকালে।ফোন করেও পেলাম না।অনেকক্ষণ পর তুর্জ আসল।সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে।আর আমার চিনতে বাকি রইল না এ মেয়েটাই লামিসা।আমি তুর্জকে বললাম
-লামিসাকে কোথায় পেলেন আপনি।
জবাবে তুর্জ বলল
-ঐদিন ওকে দেখেই আমার মুখে কথা ফুটেছিল। অনেক কষ্টে ওকে খুঁজে বের করে জোর করে ধরে আনি।
পাশে থাকা লামিসা আমাকে দেখে বলল
– এ কে?
তুর্জ উত্তরে বলল
-তোমার পরে ওকে বিয়ে করেছিলাম।
লামিসা তুর্জের গালে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলল
-লজ্জা করে না ঘরে বউ থাকা সত্ত্বেও আরেক বাড়ির বউকে তুলে আন।
তুর্জ বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-আরেক বাড়ির বউ মানে?
-হ্যা আরেক বাড়ির বউ।আমি তো তোমাকে রেখে আরেকজনকে বিয়ে করেছি।আমার বাচ্চাও আছে।আমি আমার জায়গায় ভালো আছি।তুমিও তোমার বউকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা কর।আর আমি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছি।তার মধ্যে তুমি এ কাহিনী করলে।
-আমি তোমাকে কতটা ভালোবেসেছিলাম সেটা তো তুমি জানতে তারপর ও এমন কাজ করতে তোমার বিবেকে আটকাল না।
-দেখ তুর্জ সব কিছু বিবেক বা আবেগ দিয়ে হয় না।আর আমি ভালো আছি।আমাকে ভালো থাকতে দাও।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-নিজের স্বামীকে সামলাও।আর আমার পিছু আসতে নিষেধ কর।আর তোমার নাম্বারটা দাও।তোমার স্বামী কোন ঝামেলা করলে যেন তোমাকে পাই।ইনফর্ম করতে পারি।
আমি নাম্বারটা দিলাম।উনি নম্বার টা নিয়ে চলে গেল।আর তুর্জ বেশ চুপ হয়ে গেল।বুঝতে পারছি ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে।ঘরে গিয়ে চুপ করে বসে রইল।খানিকক্ষণ পর তুর্জ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-চলো আমরা সব শুরু করি আগের মত।
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম
-আমি তো শুরু করতে চাই।আপনি চাইলেই সব সম্ভব।
-আমি চাই আর তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করব।
খানিকক্ষণ পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ আসল।মেয়েজটা পড়ে আমার মথাটা বেশ ঝিম ধরতে লাগল।কারন মেসেজটা দিয়েছে লামিসা আর মেসেজটাই লিখা ছিল।
আমি জানি তোমার নাম ইশিতা।আমি জানি তুমি আমার তুর্জকে ভালো রাখবে।তুর্জকে আমি অনেক ভালোবাসি।কিন্তু আমার বিয়ের ১ বছর পরেই জানতে পারি আমার ক্যান্সার হয়েছে আর বেশিদিন বাঁচব না।আমি এখন ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে আছি।বিদশেই চিকিৎসা করতেছি।হয়ত আর কিছুদিন বাঁচব।চেয়েছিলাম তুর্জ আমাকে ছাড়া ভালো থাকুক।আর আমি এখন নিশ্চিত সে সেটা পারবে।ওকে এসব বল না।তোমরা ভালো থাকো।কালকেই দেশের বাহিরে চলে যাব কোথায় যাব সেটা অজানায় রেখে গেলাম।কারন বললে হয়ত আবার ঝামেলা হবে তোমাদের মধ্যে।
লামিসা।
আমার চোখ দিয়ে অজোরে শ্রাবণের ধারা নামতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভলোবাসলে এমন করতে পারে।তুর্জকে না বলে থাকতে পারলাম না।তুর্জকে বলার পর তুর্জ বেশ কষ্ট পেল।লামিসাকে অনেক খুঁজল কিন্তু লামিসাকে আর খুঁজে পেল না।কোথায় যে গেল ও।তবে লামিসা চেয়েছিল আমি আর তুর্জ যেন ভলো থাকি।তুর্জ লামিসার জন্য আমাকে মেনে নিল।লামিসার শূন্যতা তুর্জকে মাঝে মাঝে গ্রাস করলেও আমি সেটা ভালোবাসার পাহাড় দিয়ে থামিয়ে দেই।
মাস খানেক পর আমার পেটে তুর্জের বাচ্চা আসে।তুর্জ বেশ খুশি হয়।আমার যখন ৯ মাস চলে তখন আমার ঠিকানায় একটা চিঠি আর গিফট আসে।খুলে দেখে অবাক হয়ে যাই।এগুলা সব লামিসা পাঠিয়েছে।
চিঠিটা পড়ে নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।চিঠিতে লিখা ছিল
প্রিয় ইশিতা
তুমি যখন চিঠিটা হাতে পাবে তখন হয়ত আমি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে যাব।তোমার বাচ্চা হবে শুনেছি।তোমার বাচ্চার জন্য আমার পক্ষ থেকে কিছু জিনিস দিয়ে গেলাম।তুর্জের কিছু পছন্দের জিনিস আমার কাছে ছিল সেগুলো আগলে রাখার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।আর আমার তুর্জকে আগলে রেখো।সংসারটা মন দিয়ে কর।কারন এটা যে তোমার ঘর তোমার সংসার।আর শুনেছি মেয়ে হবে।মেয়ের নাম রেখ পরী।।আশা করি আমার কথাটা রাখবে।
ইতি লামিসা
আমি চিঠিটা পড়ে তুর্জকে চিঠিটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।তুর্জ ও চিঠিটা পড়ে কাঁদতে লাগল।একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসতে পারে লামিসাকে না দেখলে বুঝতাম না।
কিছুদিন পর আমার পরী জন্ম নিল।লামিসার কথা মতেই ওর নাম পরী রাখি।ভলোই কাটতে লাগল আমাদের সংসার।মাঝে মাঝে লামিসাকে বেশ মনে হয়।কতটা ভালো মানুষ বাসতে পারে একজন কে।আমিও লামিসার দেওয়া সংসার টাকে বলতে পারি এটা “আমার ঘর আমার সংসার”
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা