আমার_ঘর_আমার_সংসার ৪র্থ পর্ব

0
1783

আমার_ঘর_আমার_সংসার
৪র্থ পর্ব

-তাহলে শুন।তুর্জ যখন ভার্সিটিতে পড়ত।তখন তুর্জের সাথে লামিসা নামের এক মেয়ের রিলেশন হয়।প্রথমে ভালো বন্ধুত্ব হয় পরে আস্তে আস্তে সে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।তুর্জের তখন মদের নেশা, অন্য কোন মেয়ের নেশা ছিল না।তখন আমার সোনার টুকরা ছেলে ছিল তুর্জ।লামিসার সাথে বন্ধুত্বটা আস্তে আস্তে প্রেমে গড়ায়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সম্পর্ক।একদিন আমার ছেলে এসে আমাকে লাজুক মুখে বলল

-মা একটা কথা বলব।রাগ করবে না তো।

আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম

-কি কথা?রাগ কেন করব।টাকা লাগবে?

-আরে মা টাকা লাগবে না।তবে…

-কি রে আটকে গেলি যে।

-নাহ মানে।

-কি রে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিস মেয়েদের মত ঘটনা কি?

আমার ছেলে লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিল

-মা আমি লামিসাকে খুব পছন্দ করি।তুমি যদি চাও আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।

আমারও মনে মনে লামিসাকে বেশ পছন্দ ছিল।মেয়েটা সুন্দরীও ছিল আর শিক্ষিতাও ছিল।আচার ব্যাবহার ও অনেক ভালো ছিল।তাই আমি ছেলের প্রস্তাবে আর অমত করেনি।তুর্জকে হাসতে হাসতে বললাম

-এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?লামিসাকে আমার ও বেশ পছন্দ।কবে ওদের বাড়ি যাব আমাকে বলিস।

তুর্জ মাথা চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল

-তুমি যদি চাও কালকেই যাব ওর বাসা থেকেও অন্য জায়গায় বিয়ের প্রেসার দিচ্ছে।এজন্য যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভালো।

-আচ্ছা। কালকেই যাব তাহলে।ওদেরকে জানাতে বল।

পরদিন সকালে আমি আর তুর্জ লামিসাদের বাসায় যাই।লামিসার মা,বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখি।তারাও অমত করে নি।তারাও হাসি মুখে বলেছিল

-ছেলে মেয়ে পছন্দ করেছে এখানে আমাদের অমতের কিছু নেই।

কিছুদিনের মধ্যেই লামিসা আর তুর্জের বিয়ে হয়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সংসার।কোন জগড়া বিবাদ কিছুই ছিল না।হাসি খুশি সুখী সংসার বলতে পার।

মা এবার কথাগুলো বলে একটু দম নিতে লাগলেন।আমি বুঝতে পারলাম না এত সুখী সংসার রেখে লামিসা কেন চলে গেল।তার মানে লামিসা কি পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল।আমি মাকে প্রশ্ন করলাম

-মা লামিসাকে কি তাহলে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল?অন্য ছেলের সাথে কি চলে গিয়েছিল।

মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল

-নাহ এমন কিছুই হয় নি।

-তাহলে?

-জানি না লামিসার কি হয়েছিল কোথায় গিয়েছে আর কেন গিয়েছে।লামিসাকে ৫ বছর যাবত পাওয়া যাচ্ছে না।বিয়ের ১ বছর পর যে কোথায় চলে গিয়েছিল বুঝতে পারে নি।জানতেও পারি নি।অনেক খুঁজ নিয়েছি খুঁজ পায় নি।সবাই তো বলে বসল পালিয়ে গিয়েছে কোন ছেলের সাথে।তুর্জ ও এখন ভাবে হয়ত লামিসা পালিয়ে গিয়েছে।এরপর থেকে তুর্জের বদঅভ্যাস গুলো বাড়তে থাকে।অনেকবার বিয়ের কথা বলেছি রাজি হয় নি।লামিসাকে কোনভাবেই তুর্জ ভুলতে পারে নি।লামিসার কথা শুনলেই তুর্জ রেগে যায়।লামিসা চলে যাওয়ার পর এমন একটা এটাক হয়েছিল।আর আজকে তুমি ওকে এসব নিয়ে বেশ কথা শুনিয়েছ তাই আবার এমন হল।

আমার ভিতরেও একটা প্রশ্ন জাগল তাহলে লামিসা কোথায় গেল?মনে মনে বেশ অপরাধবোধ ও হল। কারন না জেনে উনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।এমনটা করা আমার উচিত হয় নি।কথা শুনতে শুনতেই ভোর হয়ে গিয়েছে।মসজিদে ফজরের আযানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে।আমি অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম।রবের কাছে আমার স্বামীর সুস্থতা কামনা করলাম।আমার দুই নয়নে শ্রাবনের মেঘ যেন বেয়ে চলেছে।নামাজ শেষ করে এসে দেখলাম ডাক্তার সাহেব এসেছে।ডাক্তার সাহেবকে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলাম

-তুর্জের অবস্থা কেমন?

ডাক্তার সাহবে স্বস্তি ভরা গলায় জবাব দিলেন

-আমরা তো ভেবেছিলাম উনি হাঁটতে চলতে পারবে না।কিন্তু এটা তো ক্ষতি উনার হয় নি।হাঁটতে চলতে পারবে তবে কথা বলতে পারবে না।উনার মুখের ব্যায়াম গুলো বেশি বেশি করাতে হবে আর উনার সামনে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।তাহলে হয়ত কথা বলতে পারবে আবার।আর আবারও সাবধান করে দিচ্ছি উনাকে কোনভাবে উত্তেজিত করা যাবে না।

আমি শান্ত সুরে জবাব দিলাম

-সেটা মাথায় থাকবে।আমি কি একটু দেখা করতে পারি উনার সাথে?

-হ্যা পারবেন।তবে যেকোন একজন যেতে পারবেন।আপনাদের মধ্যে কে যাবেন ভেবে একজন যান।

আমি কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।মনে হয় আমার শ্বাশুড়ি মা যেতে চাইবে।কিন্তু ঠিক এ মুহুর্তে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

-মা তুমিই যাও।

কথাটা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না।দৌঁড়ে তুর্জের কাছে চলে গেলাম।দেখলাম উনি তাকিয়ে আাছে।আমি উনাকে ধরে কাঁদতে লাগলাম।উনি আমাকে ছাড়াতে চাইলেও আমি উনাকে ছাড়তে চাইলাম না।ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম

-আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আর এমন করব না।আমি কিছু না জেনে এমন করেছি।আপনি যে সুস্থ আছেন এতেই আমি খুশি।

একের পর এক এসব বলতে লাগলাম।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম তুর্জ আমায় চিমটি দিয়ে বসল।আমি তুর্জের চিমটি খেয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তুর্জ কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।হাতে ইশারা দিয়ে যেন কি বুঝাতে চাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি খাতা কলম চাচ্ছে।আমি একটা খাতা আর কলম জোগাড় করে উনাকে দিলাম।উনি কি একটা যেন লিখছেন।লিখার পর আমাকে দেখালেন।আমি লিখাটা দেখে বেশ লজ্জা পেয়ে বসলাম।উনি লিখেছেন

-তুমি আমার উপর এভাবে হামলে পড়েছ কেন?আর যা হয়েছে তো হয়েছেই এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।এত মাফ চাইতে হবে না।আর দয়াকরে আবার আমাকে ঝাপটে ধরে আমার উপর হামলে পড় না।

আমি লজ্জায় লাল মুখ হয়ে মাথা নেড়ে বললাম

-আচ্ছা।

দুইদিন হাসপাতালে থাকার পর উনাকে বাসায় নিয়ে গেলাম।ডাক্তারের কথা মত উনার সাথে অনেক কথা বলতে লাগলাম।বেচারা মাঝে মাঝে আমার কথা শুনে হাসে আবার বিরক্ত ও হয়।কিন্তু আমার কথার ফুলঝুরি আর থামে না।উনি বিরক্ত হয়ে খাতায় লিখল

-তুমি এত বক বক কেন করছ পাগলের মত।বেশ বিরক্ত লাগছে।আমার রাগ উঠার আগে এখান থেকে বের হও তো।

-হ্যা আপনার কথায় আমি বের হয়ে যাই।আর আপনি এভাবে পড়ে থাকেন।আমি বের হওয়ার পর আপনার সেবা কে করবে শুনি?ঐদিন বাসায় যে রুব্বানকে নিয়ে এসেছিলেন।যে রুব্বানের জন্য আমাকে ঘর থেকে বের করে উনার সাথে থেকেছিলেন।সে রুব্বান তো আপনার এ হাল দেখে চলে গিয়েছিল।ঐগুলা তো আসে টাকার জন্য।কেন আপনি এসব করবেন।আমি আপনার স্ত্রী। একজন মানুষের জন্য তো আপনি আরেকজনকে কষ্ট দিতে পারেন না।আর সবাই তো এক না।আর এটা ভাব্বেন না যে আমি চলে যাব।চলে যাওয়ার হলে এত কিছু সহ্য করতাম না।আপনি শুধু আমার থাকেন।আপনার এ অবস্থা না হলে জানতামেই না আমি আপনাকে কতটা ভালোবেসেছি।আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন উপলব্ধি করেছি যে আমি আপনাকে মনের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আর শুনেন আজকে নাকি চকলেট ডে।তাই আপনার জন্য চকলেট এনেছি।

উনি আবারও বিরক্ত মাখা মুখে কাগজে লিখলেন

-তুমি যাও তো।আমি চকলেট খাব না।আর পরের বার ঘরে আসলে একটা কস্টেপ নিয়ে আসবা।

আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

-আপনি কস্টেপ দিয়ে কি করবেন?

কাগজে লিখে জবাব দিলেন

-তেমার মুখে মারব।

আমি হাসি হাসি মুখে বললাম

-আপনি চকলেট টা না খেলে কিন্তু আমি আরও বক বক করব।জানেন তো কলেজে আমি অনেক বকবক করতাম।আমার পাশে কেউ বসত না আমার বকবকের জ্বালায়।

কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে হাসি হাসি মুখে লিখে জবাব দিলেন

-সে তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর চকলেট খানা দাও।আমি খাচ্ছি।আর তুমি এখন বিদায় হও।

আমি চকলেটটা দিয়ে চোখ টিপুনি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।

খানিক্ষন পর উনার রুমে এসে বেশ চমকে গেলাম।কারন উনি…

লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে