আমার_ঘর_আমার_সংসার
৩য় পর্ব
তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ আমাকে কষিয়ে চড় দিতে নিল।আমি এবারও তুর্জের হাত ধরে বললাম
-অনেক সহ্য করেছি, সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করলে আমিও আর সহ্য করব না।আমি বোকা না।নিজের অধিকার আদায় কিভাবে করতে হয় আমি জানি।আপনার আগের বউ এর মত অবলা না।আগেরটা পালিয়ে গিয়েছে বলে আমি আপনার মার খাওয়ার পর পালিয়ে যাব সেটা ভাববেন না।বউকে সম্মান দিতে পারবেন না তো বিয়ে কেন করেছেন?কাপুরুষের মত আচরণ করেন আবার মেয়েদের গায়ে হাত তুলে নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চান।আপনার আগের বউ পালিয়ে গিয়ে ভালোই করেছে। কারন আপনার মত কাপুরুষের সাথে থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আমি তো বাধ্য হয়ে আপনার কাছে থাকতেছি।
আরও কিছু বলতে নিব ঠিক এ মুহুর্তে তুর্জ আমার হাত থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে জোরে একটা চড় দিল।আমি চড়টা খাওয়ার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বেশ গম্ভীর হয়ে গিয়েছে আমার একথা গুলো শুনে আর আমাকে চড়টা দিয়ে।আমাকে চড়টা দেওয়ার পর কেমন জানি দম ধরে বসে পড়ল।খেয়াল করলাম কিছুক্ষণের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমি বুঝতে পারছিলাম না তুর্জের কি হল?মুহুর্তের মধ্যে তুর্জ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ কি এমন হল যে তুর্জ এভাবে জ্ঞান হারাল।আমি তু্র্জকে ধরে ডাকতে লাগলাম।তু্র্জের কোন সেন্স কাজ করতেছিল না।আমি পানি এনে তুর্জের মুখে ঝাপটা দিতে লাগলাম।তুর্জের জ্ঞান ফিরতেছিল না তবুও।এর মধ্যে তুর্জের রুমে থাকা মেয়েটা চলে গেল।বাড়িতে শুধু আমি একা।আমার শ্বাশুড়ি মা বাইরে।এখন কি করব কোনভাবেই বুঝতে পারছিলাম না।অনেকটা অসহায়ের মত নিজেকে মনে হল।আমার কোন আলাদা মোবাইল ও নাই যে কাউকে কল দিব।আমার শরীরটা বেশ কাঁপতে লাগল।কোনভাবেই তুর্জের জ্ঞান ফিরছিল না।আমি কোন দিশা না পেয়ে তুর্জের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম।তুর্জের মোবাইলটা দেখলাম ওয়ারড্রবের উপর পড়ে আছে।মোবাইলটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিলাম।এর আগে কখনও উনার মোবাইল আমি হাতে নেই নি।যতবার মায়ের সাথে কথা বলেছি সেটা শ্বাশুড়ি মায়ের ফোন দিয়ে।তাই মোবাইলটা নিতেও আমার বেশ ভয় লাগছে।তবুও সাহস করে মোবাইলটা হাতে নিলাম।মোবাইলটা একটা চাপ দেওয়ার সাথে সাথে লক স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠল।বেশ সুন্দরী পরিপাটি একটা মেয়ে।মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল এ মেয়ে কে?হতে পারে কোন বাইরের মেয়ে।উনার জীবনে তো মেয়ের অভাব নেই।এসব ভেবে লাভ নেই।কিন্তু মোবাইলটা লক করা খুলব কিভাবে?মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।একের পর এক চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না।হুট করে মনে হল মোবাইলে তো ফিঙ্গার দেওয়া আছে তাই তারাহুরা করে উনার কাছে গেলাম।উনার হতটা দেওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের লক টা খুলল।লকটা খুলার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ঐ মেয়েটার আরেকটা ছবি।আমি বেশ চমকালাম।এটা কোন মেয়ে আর এ মেয়ের ছবি উনার ফোনে কেন?
সাত পাঁচ ভাবার সময় এখন না।তাই সাত পাঁচ না ভেবে আমি আমার শ্বাশুড়ি মাকে কল দিলাম।শ্বাশুড়ি মাকে সবটা খুলে বললাম।আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন
-না জেনে এত কিছু না বললেও পারতে।আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছাবে।তুমি ওকে পানির ঝাপটা দিতে থাক।দেখ জ্ঞান ফিরে কি না।
এই বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন।আমার শ্বাশুড়ি মা ফোনটা কাটার পর আমি উনার শরীরে হাত দিয়ে খেয়াল করলাম উনার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি উনার শরীরটা মালিশ করতে লাগলাম।খানিক্ষণ এর মধ্যে ডাক্তার চলে আসল।ডাক্তার তুর্জকে দেখে বলল
-রোগীর অবস্থা তো তেমন ভালো মনে হচ্ছে না।রোগীকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে।
কথাটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।মনে মনে নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হতে লাগল।কেন জানি না মনে হতে লাগল এসবের জন্য আমিই দায়ী।আমার উচিত হয় নি উনাকে এভাবে কথা বলা।আজকে উনার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।এর মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসল।উনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।আমার শ্বাশুড়ি মা তুর্জের এ অবস্থা শুনে বেশ স্তব্ধ হয়ে গেল।ফোনটা কেটে দিল।আমি এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে গেলাম।তু্র্জকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল।আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।আমার মনটা বেশ ছটফট করতে লাগল।এতটা বাড়াবাড়ি আমার করা উচিত হয় নি।কিন্তু কেন উনি এভাবে জ্ঞান হারাল আমার মাথায় সেটাও আসছে না।খানিকক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল
-রোগীর ছোটখাট একটা এটাক হয়েছে।এক সাইড অবশ হয়ে গিয়েছে।প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এমন হয়েছে।জ্ঞান ফিরতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে।আর হাঁটা চলা তেমন করতে পারবে না।কথাও বলতে পারবে না।থেরাপি এক্সারসাইজ করলে হয়ত ঠিক হতে পারে।তবে সেটাও সময় সাপেক্ষ। আপনার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় এসেছে।উনাকে সবটা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল এর আগে।তবুও কেন সতর্ক হয় নি।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-এর আগেও বলা হয়েছিল মানে?
-এর আগেও উনার এরকম এটাক হয়েছিল।তখনেই উনাকে না করে দেওয়া হয়েছিল যে কোনরকম উত্তেজিত যেন না করা হয়।তবে উনাকে এভাবে কি বিষয়ে উত্তেজিত করল সেটা জানা দরকার।আপনার শ্বাশুড়ি কোথায়?
-মা জ্যামে আটকে আছে।কাছাকাছি চলে এসেছে।এর আগে কিজন্য এমন হয়েছিল আমাকে বলুন প্লিজ।
-সেটা আপনি আপনার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিবেন।আপাতত কিছু টাকা একাউন্টে জমা দিতে হবে সেটার ব্যাবস্থা করুন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম
-আমার হাতে তো এখন এত টাকা নেই।মা আসলেই সবটা দিবেন।আপনি চিকিৎসা করতে থাকুন
-আচ্ছা ঠিক আছে।চিকিৎসা চলেতেছে।আপনার শ্বাশুড়ি আসলে দ্রূত আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।
-আচ্ছা।
তুর্জের এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।কেন যে এমন হল।আল্লাহ আমার আর কত পরীক্ষা নিবেন জানি না।আমার ভিতটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।ভিতরটা বেশ শূন্য শূন্য লাগছে।কেন আমি এমন করতে গেলাম এ প্রশ্নটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।তবুও কাঁদতে পারছি না।হুট করে খেয়াল করলাম মা এসেছে।মাকে দেখে একটু ভরসা পেলাম।দৌঁড়ে মায়ের কাছে গেলাম
-মা ডাক্তার সাহেব বলেছে আপনাকে দ্রূত উনার সাথে যোগাযোগ করতে।
-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেই এসেছি।এখন তুর্জ একটু ভালো আছে।তবে আবার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।এর আগে এমন হয়েছিল অনেক চিকিৎসা, থেরাপি নেওয়ার পর ভালো হয়েছিল।এখন আবার হয়েছে।কি হবে কে জানে।কে ওর দেখাশুনা করবে আমি সেই টেনশনে আছি।
-মা আপনি দেখাশুনার চিন্তা করবেন না সেটা আমিই করতে পারব।কিন্তু এর আগে উনার এরকম কেন হয়েছিল।
-এগুলো বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে তবুও কথা শেষ হবে না।
-মা আমি উনার স্ত্রী । আমার জানার অধিকার অবশ্যই আছে।আপনি আমাকে বলুন।
-কি শুনবে মা?শুনলে কি তুমি সহ্য করতে পারবে?
-এতকিছু সহ্য করতে পেরেছি আরও কঠিন কিছু হলেও পারব।কপাল তো এমনেই ফাটা আর কত ফাটবে।আপনি বলুন।
-তাহলে শুন তুর্জ যখন…..
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা