আমার_ঘর_আমার_সংসার
পর্ব-২
কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামীর এ আগেও একটা বিয়ে করেছে।আর সে বউ তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।কে বা থাকবে এমন মানুষের সাথে।আমি তো কষ্ট সহ্য করে বাধ্য হয়ে থাকতেছি।আমার ভিতরের কষ্টটা বুঝার মত ক্ষমতা কারও নাই।আমার বাবা, মা অর্থের লোভে পড়ে ছেলের খবরও ঠিক করে নেয় নি।আজকে আমার মত অসহায় আরও কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না।ইচ্ছা করছে শ্বাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করি কেন উনি সবটা লুকিয়েছেন?কিন্তু জিজ্ঞেস করলেই বা কি হবে? উনি উনার মতই মনগড়া কয়েকটা জবাব দিবে আর বলবে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে।আর আমার মাকে বললে বলবে বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে এখন আর ঝামেলা করিস না। মানিয়ে নে আমরাও তো মানিয়ে নিয়েছি।কেউ আমার মনের দিকটা ভাববে না।তাই ওদের এসব ভিত্তিহীন নিতী কথা শুনে কাউকে কিছু বলার মত রুচি জাগল না।
সেদিন আর সব দিনের মতই ঘরে বসে ছিলাম।সারাদিন একা ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ আমার নেই।নিজেকে খুব বন্ধী পাখির মত মনে হয়।মনে হয় খাঁচার ভিতর থেকে উড়বার জন্য ছটফট করতেছি।ঠিক এসময় খেয়াল করলাম তুর্জ এসেছে।সাথে একটা মেয়েও এসেছে।মেয়েকে বেশ অন্তরঙ্গ ভাবে ধরে আছে। মেয়ের সাথে এরকম অন্তরঙ্গ ভাবে আছে দেখে মনটা বেশ অশান্ত হয়ে গেল।নিজেকে কেন জানি না সামলাতে পারলাম না।তুর্জের কাছে গিয়ে বললাম
-আপনি এত রাতে বাড়ি ফিরেছেন সাথে একটা অন্য মেয়ে নিয়ে।লজ্জা করল না ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে ঘরে তুলতে?রাতের পর রাত নেশা করে বাড়ি ফিরেন।কাপুরুষের মত ঘরে এসে বউ এর গায়ে হাত তুলেন।সাথে পর নারী নিয়ে ঘরে ফিরেন।আপনি কি মানুষ।
পাশ থেকে মেয়েটা তুর্জের দিকে তাকিয়ে বলল
-এ মেয়ে কে? আর এভাবে কথা বলছে কেন?আমাকে ইনসাল্ট করে কথা বলছে আর তুমি চুপ করে আছ।এরকম কথা শুনানোর জন্য তুমি আমাকে নিয়ে এসেছ।এরকম জানলে আমি তোমার সাথে আসতামেই না।আমি এখনেই চলে যাচ্ছি।
তুর্জ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
-ও আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।মা গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছে।ও মাথায় ও সমস্যা আছে।মাইন্ড কর না প্লিজ।
মেয়ে অবাক হয়ে তুর্জকে বলল
-একটা কাজের মেয়ের এত বড় স্পর্ধা কি করে হয় এভাবে কথা বলার।
-আরে বল না।মা এর লাই পেয়ে একদম মাথায় চড়ে বসেছে।গাইয়া ক্ষেত মেয়ে মায়ের লাই পেয়ে আমাকে স্বামী করে পাবার স্বপ্ন দেখছে।তুমি ওর কথা সিরিয়াসলি নিও না।
মেয়েটা আমার দিকে তাকাল।তারপর একটু মুখটা বাঁকালো আর বলল
-সাহস কি করে হয় এভাবে কথা বলার?কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মত থাক।
-আমি কাজের মেয়ে?না জেনে উল্টা পাল্টা কথা বলতে লজ্জা লাগছে না।আপনাদের মত নিকৃষ্ট মেয়েদের জন্যই সমাজের এ হাল।লজ্জা লাগে না, একটা পরপুরুষের সাথে বিয়ে বহির্ভূত মেলামেশা করতে?তার বেডে চলে আসতে?নিজেকে কতটা নীচে নামাবেন?
-কি বলতে চাচ্ছ তুমি।বেয়াদব মেয়ে।গাইয়া ভূত, তুমি কি বুঝবা আধুনিক যুগের চালচলন।বড় তো হয়েছে গ্রামে থেকে।
আমি একটু হেসে জবাব দিলাম
-ভাগ্যিস শহরে থেকে বড় হয় নি।শহরে থেকে বড় হলে হয়ত নিজের সম্মান কি করে পরপুরুষের হাতে বিলিয়ে দিতে হয় খুব ভালো করে বুঝে যেতাম।নির্লজ্জ বেহায়াপনা শিখে যেতাম।আধুনিকতার নাম দিয়ে নোংরামি করে বেড়াতাম।ভাগ্যিস আমি স্মার্ট না।শার্ট প্যান্ট পড়ে ছেলেদের মত বেশ ধরে নাইট ক্লাবে যাওয়া আর বউ থাকা সত্ত্বেও পরপুরুষের সাথে ঢলাঢলি করা যদি স্মার্টনেস হয় তাহলে এমন স্মার্ট আমি না তার জন্য শুকরিয়া আদায় করি।
মেয়েটা আমার কথা শুনে আরও রেগে গেল।বুঝায় যাচ্ছিল কথাগুলো মেয়েটার গায়ে লাগছে।রেগে গিয়ে আমার উপর হাত তুলতে নিল গায়ে হাত দেওয়ার জন্য।আমি হাতটা ধরে মুচর দিয়ে বললাম
-ভুলেও এ কাজ করার সাহস দেখাবেন না।আমি কোন অযৌক্তিক কথা বলে নি যে আপনি গায়ে হাত তুলবেন, আর আমি মেনে নিব।হাতটা একদম ভেঙ্গে দিব।গ্রামে থেকে বড় হয়েছি।এর আগে অনেক গাছের ডালপালা ভেঙ্গেছি।এ কোমল হাত ভাঙ্গতে বেশিক্ষণ লাগবে না।ভুলেও গায়ে হাত তুলার দুঃসাহস দেখাবেন না।
খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার কথা শুনে বেশ রাগান্বিত হল।কোন রকমে আমার হাত থেকে উনার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তুর্জকে বলল
-তুমি কি আমাকে অপমান করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছ?আমি আর এক মুহুর্ত ও এখানে থাকব না।
তুর্জ আমার দিকে তাকাল।তুর্জের চোখ রাগে রক্তলাল হয়ে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে কষিয়ে একটা চড় দিয়ে বলল
-সাহস কি করে হয় তোমার ওর সাথে এমন আচরণ করার?আর বের হও রুম থেকে।
এ বলে আমার গলাটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে বের করে দিল।যে জায়গায় নিজের স্বামীই ঠিক না সে জায়গায় আর কথা বলতে মন চাচ্ছিল না।কোনরকমে উঠলাম।খেয়াল করলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর একটু হাসি দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল।কি যে কষ্ট হচ্ছিল তখন বলে বুঝাতে পারব না।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে, পাশের রুমে গেলাম।হায়রে কপাল আমার যে ভালবাসাটা পাওয়ার অধিকার ছিল সে ভালোবাসা পাচ্ছে অন্য একটা মেয়ে।আমার শ্বাশুড়ি তো দিব্যি আমার চিন্তা রেখে ব্যবস্যা করছে।আমাকে নিয়ে ভাবার মত কারও সময় নেই।
এত টাকা তো আমি চাই নি।কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিবে না।আর আমার কি পুড়া কপাল নিজের চোখের সামনে এতকিছু করছে বলতে পারছি না।সবটা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।আজকে বড্ড অসহায় লাগছে আমার।মা কে ফোন দিলে সে একেই নিতী বাক্য শুনায়।আর কত সহ্য করব আমি।অসহায়ত্বের মত্রা কতটা তীব্র হলে এমন লাগে আজকে বুঝতে পারছি।প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা মানুষকে সব দিতে পারলেও ভালোবাসাটা দিতে পারে না।ভালোবাসার জন্য দরকার সুন্দর একটা মানসিকতার।যা সবার হয় না।
মেয়েটার সাথে যতক্ষণ তুর্জ এক রুমে ছিল।আমার বুকে ততক্ষণ একটা অজানা জড় বয়ে চলছিল।যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করতেছিল।কোনভাবেই মানতে পাড়ছিলাম না, নিজেকে সামলাতেও পারছিলাম না।এটা সহ্য করার মত ও না।কেন জানি না হুট করে আমার মধ্যে এক অজানা সাহস জাগল প্রতিবাদ করার।আমি মনে সাগস জুগিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জ দরজা খুলল।আমাকে দেখে তুর্জের রাগ টা আরও দ্বিগুণ হল।আমি তুর্জকে চিৎকার করে বললাম
-আমি আপনার স্ত্রী। আমাকে রেখে আপনি এমন কাজ করতে পারেন না।কোন মেয়েই এটা সহ্য করবে না।আপনি শুধু শুধু কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন?আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?বিয়ে করতে না চাইলে বিয়ের আগে বলতেন।আমাকে কেন এভাবে বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছেন।অমানুষের মত এসব করতে লজ্জা লাগছে না আপনার।একটা নারীর মন নিয়ে খেলছেন আপনার ত লজ্জা হওয়া দরকার।বউ রেখে পরনারীর সাথে রাত কাটায় কাপুরুষেরা।
কথাগুলো শুনে তুর্জের রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল।আমার চুলগুলো ধরে আছড়ে ফেলে দিয়ে বলল
-অনেক বেশি বলে ফেলছিস।না জেনে অনেক কথা বলেছিস।আরেক একবার দরজাটা ধাক্কা দিলে বুঝবি।
এ বলে দরজা লাগিয়ে দিল।আমার ভিতরেও ঝড়টা আরও বাড়তে লাগল।আমি পুনরায় দরজা ধাক্কা দিতে লাগলাম।এবার দরজা খুলল ঐ মেয়েটা। দরজা খুলে আমাকে বলল
-সমস্যা কি তোর?
-আমার সমস্যা কি মানে?ভদ্র ভাষায় কথা বলুন।
-সেন্স নেই তোর।এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দরজা লগিয়ে প্রাইভেট টাইম পাস করছে আর তুই এভাবে চিল্লাছিস?লজ্জা নাই তোর।তুর্জ এত মারে ঘৃনা নাই তোর?
-আমাকে লজ্জা ঘৃনার চ্যাপ্টার পড়াতে হবে না।লজ্জা তো হওয়া দরকার আপনার।আপনি জানেন যে তুর্জের বউ আছে জেনেও কিভাবে নিজেরে বিলিয়ে দিচ্ছেন।প্রাইভেট টাইম পাস করছেন নাকি বেহায়াপনা করছেন একটু ভেবে দেখুন।বেহায়াপনা করবেন আর কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে জ্ঞান দিবেন।বেশ্যা মেয়ের মত চলাফেরা করে আধুনিকতার দোহাই দেন আপনার লজ্জা লাগে না।
এটা বলার পর মেয়েটা বেশ রাগ হয়ে তুর্জকে বলল
-আমি আর এখানে থাকব না।এ কোন মেয়েকে গ্রাম থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছ আমাকে অপমান করার জন্য।
তুর্জ মেয়েটার কথা শুনে দরজার সামনে এসে আমাকে বলল
-তুই যাবি নাকি এভাবে অশান্তি করবি?
-আমি অশান্তি করছি?অশান্তি ত করছেন আপনি?এর আগেও একটা বিয়ে করেছেন বউ রেখে চলে গিয়েছে এখন আমাকে বিয়ে করে নষ্টামি করতেছেন অন্য মেয়ের সাথে।আপনার মত অমানুষ কেউ আছে বলে মনে হয় না।আগের বউটা চলে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে।আর আমি তো বেঁচে থেকেও মরে আছি।
আমার একথাটা শুনার পর তুর্জের রাগের পরিমাণ তীব্র হতে তীব্র হতে লাগল।আমাকে বলল
-এখান থেকে যা।
আমিও বেশ জোড়ালো গলায় বললাম
-যাব না কি করবেন?এ মেয়েকে বিদায় না করলে যাব না।
একের পর এক তর্ক হতে লাগল।তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ…..
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
(পর্বগুলো ছোট হবে আর একদিন পর পর দিব।কারন আমার সামনে পরীক্ষা।)