আমার হয়েও আর হইলোনা পর্ব-০৮

0
825

#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ৮(ধামাকাদার পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“রিপোর্ট অনুযায়ী এই বাচ্চার সাথে ঈশান ভাইয়ের ডিএনএ মেলেনি। এর মানে বাচ্চাটা ঈশান ভাইয়ের নয় কোন মতেই।”

তৃষ্ণার কথায় যেন পুরো বাড়িতে ছোটখাটো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেল। ঈশানের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। এত দিনে সে নিজের নিরপরাধতার প্রমাণ দিতে পারল।

ঈশানের মা বাবাও অবাক হয়ে গেলেন কথাটা শুনে। তবে সব থেকে বেশি যে অবাক হয়েছে সে হলো তৃণা। তার মুখের ভঙ্গিমাই প্রমাণ করে দিচ্ছে সত্যিটা যেনে সে কতোটা অবাক হয়েছে।

তৃণা চট করে বলে ওঠে,
“এটা হতে পারে না৷ এই রিপোর্ট সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।”

ঈশান রেগে বলে,
“ব্যাস অনেক হয়ে গেছে তোর নাটক। এখন তো সবার সামনে সব সত্যও এসে গেছে। এখন আর এসব নাটক করে কোন ফায়দা হবে না।”

তৃষ্ণা তাদের মাঝখানে বলে ওঠে,
“এখনো তো সব সত্য সামনে আসে নি। এখনো অনেক কিছু জানা বাকি আছে।”

তৃষ্ণার বাবা তৌফিক খান শুধান,
“আর কি সত্য জানা বাকি আছে আমাদের? আর কি লুকিয়েছে এই ডা*ইনি মেয়েটা।”

সাঈদা বেগমও বলে ওঠেন,
“তৃণা যে এত খা*রাপ কাজ করবে আমি ভাবতে পারিনি। আমার নির্দোষ ছেলেটাকে এভাবে ফাসিয়ে দিল নির্লজ্জ মেয়ে একটা।”

তৃণার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। সে আবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলে,
“বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু করিনি। আমি তো জানতাম এই বাচ্চাটা ঈশান ভাইয়ের কিন্তু রিপোর্ট..”

তৃণা তার পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না। তার আগেই তৃষ্ণা ঠা’স করে থা’প্পর বসিয়ে দিল তার গালে। রাগী স্বরে বলল,
“বেয়াদব মেয়ে। আর কত নাটক করবি তুই? তুই আমার বোন হয়ে যে এত নিচে নামবি আমি ভাবতে পারিনি।”

তৃণা কান্না করতে করতে বলে,
“আপু আমায় বিশ্বাস করো..”

“বিশ্বাস আর তোকে অসম্ভব। যাইহোক তোর পর্দাফাঁস এখনো শেষ হয়নি। এখনো অনেক কিছু সামনে আসা বাকি। তোর বাচ্চার আসল বাবাকে এবার সবার সামনে নিয়ে আসব আমি।”

বলেই দরজার দিকে তাকায় সে। কাউকে একটা দেখে বলে ওঠে,
“তুমি আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে আসো।”

আরেফিন ত্রস্ত পায়ে হেটে বাড়িতে প্রবেশ করে। তৃণা হতবাক হয়ে আরেফিনের দিকে তাকায়। তৃষ্ণা সবার সামনে বলে,
“আরেফিনই তৃণার সন্তানের আসল পিতা। কারণ আরেফিনের সাথে ডিএনএ মিলে গেছে।”

ঈশান তৃষ্ণার সামনে এসে জিজ্ঞেস করে,
“কিন্তু তুই কিভাবে এসব জানতে পারলি যে আরেফিন তৃণার সন্তানের বাবা হতে পারে।”

“আরেফিন নিজে থেকেই আমার সাথে দেখা করে। আর ও আমাকে নিজের মুখে সব বলে। যে তৃণার গর্ভে যে সন্তান বেড়ে উঠছে আর আসল পিতা ও নিজেই। আমি তো প্রথমে বিশ্বাস করিনি তখন ও ডিএনএ টেস্টের কথা বলল। আমি তখন সিদ্ধান্ত নেই তাই করা যাক। এরপর তোমার পাশাপাশি আমি ওর ডিএনএ টেস্টেরও ব্যবস্থা করাই। আর তাতেই ফল হাতেনাতে চলে আসে।”

তৃণা তৃষ্ণার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। হতবিহ্বল হয়ে বলে,
“এসব কি বলছিস তুই আপু? আরেফিন কিভাবে আমার সন্তানের বাবা হতে পারে। আমার সাথে ওর তো তেমন কোন সম্পর্কও নেই।”

আরেফিন খানিক হেসে বলে,
“এখন আর নাটক কেন করছ তৃণা? সব সত্যি তো সবার সামনে এসেই গেছে। এখন আর এসব নাটকের কোন মানে হয়না। তুমি নিজের মুখে সবাইকে সবটা বলবে নাকি আমি বলবো বলো তো?”

“কোন সত্যির কথা বলছ তুমি?”

“তাহলে তুমি বলবে না তাই তো? ঠিক আছে, আমিই বলছি। তৃণাকে আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম। তৃণার মনোভাব ঠিক বুঝতাম না। ওকে একবার প্রপোজ করলে ও আমায় হ্যাঁ বা না কিছুই বলে না। তারপর আমিও আর কিছু বলিনি। এরপর হঠাৎ একদিন তৃণা আমার সামনে এলো আমার সামনে এসে বলল ও আমাকে ভালোবাসে। আমি ওর কথা শুনে খুব খুশি হয়ে গেলাম। এরপর থেকে আমরা মিশতে শুরু করলাম। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় হতে লাগল এবং আমরা ইন্টিমেটও হই বেশ কয়েকবার। যার ফলে তৃণা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়। ও আমার কাছে প্রাথমিক অবস্থায় কথাটা লোকায়। কিন্তু একসময় আমি ঠিকই সবটা জানতে পারি। তখন আমি ওকে বলি আমার এই বাচ্চা মেনে নিতে কোন অসুবিধা নেই এবং প্রয়োজনে আমরা বিয়ে করব। কিন্তু তৃণা সেই মুহুর্তে বেকে বসে। ও আমাকে জানায় আমাকে বিয়ে করবে বা এবং আমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি নিজে থেকে ওর সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করি কিন্তু ও আমার সাথে কোন যোগাযোগই করে না।”

তৌফিক খান প্রশ্ন করেন,
“যদি তোমরা একে অপরকে ভালোবেসে থাকো এবং তুমি তৃণার দায়িত্ব নিতেও প্রস্তুত থাকো তাহলে তৃণা তোমায় বিয়ে করতে রাজি হলো না কেন?”

এর মধ্যে প্রেরণা বেগম বলে ওঠেন,
“কারণটা আমি বলছি। এর কারণ হলো তৃণা ঈশানকে ভালোবাসতো। ঈশানকে পাওয়ার জন্য ও পাগল ছিল। কিন্তু ঈশান যখন ওকে পাত্তা না দিয়ে তৃষ্ণাকে বিয়ে করতে চায় তখন ওর ইগো হার্ট হয়। ও তখন আমার বেচারা ভাতিজাটাকে ব্যবহার করে। এরপর যখন ও জানতে পারে ও প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে তখন এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে। তোমরা সবাই যেদিন বাড়িতে ছিলে না সেইদিন সুযোগ বুঝে ঈশানকে জুসের সাথে মদ মিশিয়ে খাইয়ে সবার সামনে একটা মিথ্যা নাটক সাজায়। কারণ ঈশান ওর জেদে পরিণত হয়েছিল। আর ওকে পাওয়ার জন্য তৃণা এভাবে নিচে নামে।”

তৃণা চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এসব কিছু মিথ্যা। প্রেরণা আন্টি আপনি মিথ্যা বলছেন কেন? আপনি তো সব জানেন..”

“হ্যাঁ আমি আগে থেকে সব জানতাম। আমারই ভুল ছিল যে আমি সত্যিটা কাউকে বলিনি।”

তৌফিক খান রাগী গলায় প্রেরণা বেগমকে জিজ্ঞেস করেন,
“যদি জেনেই থাকো তাহলে আমাদের সবার থেকে এতদিন সত্য লুকিয়েছ কেন? আর তুমি তো তৃণাকে সাপোর্টও করেছ।”

“হ্যাঁ করেছি কিন্তু নিজের ইচ্ছায় নয়। ও আমায় ভয় দেখিয়েছিল যে আমি যদি সব সত্যি বলি তাহলে আমার ভাতিজা আরেফিনকে রে*প কেসে ফাসিয়ে দেবে। তাই আমি বাধ্য হই ওর সব মিথ্যায় তাল মেলাতে।”

“উনি সব মিথ্যা বলছেন। তোমরা সবাই আমায় বিশ্বাস করো..”

ঈশান ক্রুর হেসে বলে, “বিশ্বাস আর তোকে..হাসালি। তুই এতদিন ধরে আমাদের সবাইকে যেভাবে একের পর এক মিথ্যা বলে গেছিস তাতে তোকে বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠেনা। আজ যখন সব সত্য প্রমাণ হয়ে গেল তখন আমি আর এই সম্পর্ক বয়ে বেরাবো না। আমি তোকে তালাক দিতে চাই।”

তৃণার চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। ইতিমধ্যেই তাদের বিয়ের ছয়মাস হয়ে গেছে। তাই তালাক হতে আর কোন অসুবিধা হবে না। তৃণা কিছুই বলছিল না। এরমধ্যে ঈশান আবার বলে,
“তৃণা যা করেছে তার জন্য ও শাস্তি ডিজার্ভ করে।”

তৌফিক খান বলেন,
“হ্যাঁ। আর ওর শাস্তি হলো ওকে আজই আমি ত্যাগ করলাম। ওর সাথে এই বাড়ির আর কারো কোন সম্পর্ক থাকবে না। ও আজ থেকে আমাদের সবার কাছে মৃত।”

“আব্বু…”

“চুপ। আমরা তোর কেউ না।”

তৃণা শুধু কেদেই চলেছে। তৃষ্ণা আরেফিনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি ওকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাও। আজ থেকে ও এই বাড়ির কেউ৷ না।”

আরেফিন তৃণার হাত ধরে তাকে নিয়ে যেতে চায়। তৃণা হাত ছাড়িয়ে বলে,
“তোমরা বিশ্বাস করো আমাকে ফাসানো হয়েছে। আজ যা কিছু বলা হয়েছে সব মিথ্যা। আমার সাথে না আরেফিনের সম্পর্ক ছিল আর না আমি কাউকে ফাসিয়েছি। আমার মনে হয় আমার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র হয়েছে। তোমরা প্লিজ আমাকে নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দাও।”

ঈশান বলে,
“অনেক নাটক হয়েছে আর না। এবার যা নাটক করার বাড়ির বাইরে গিয়ে কর।”

আরেফিন তৃণার হাত ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। আর তৃণা শুধু কাঁদতেই থাকে আর চিৎকার করে বলতে থাকে তাকে ফাসানো হচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে