#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
তৃণাকে ঈশান বাড়ি থেকে বের করে দিতে যাবে এমন সময় ঈশানের মা সাঈদা বেগম এসে তার পথ আটকে দাঁড়ায়। ঈশান অবাক হয়ে নিজের মায়ের দিকে তাকায়। অতঃপর জিজ্ঞেস করে,
“তুমি আমাকে আটকালে কেন আম্মু?”
সাঈদা বেগম তখন উত্তর দেন,
“কারণ তৃণা ঠিক বলছে। ও তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছে।”
“এসব তুমি কি বলছ আম্মু?”
“হ্যাঁ, আমি ঠিকই বলছি।”
“তুমি এরকম কথা কিভাবে বলছ আম্মু?”
সাঈদা বেগম এবার ডুব দেন অতীতে। তিনি মনে করেন সেই দিনের কথা যেদিন তারা সবাই বিয়ের দাওয়াত খেতে বাইরে গেছিল। সেদিন দাওয়াত খেয়ে ফিরে এসে তিনি আর তার স্বামী রুহুল রহমান প্রথমে ঈশানের রুমে যান। ঈশানের রুমে গিয়ে তাদের দুচোখ থমকে যায়। কারণ তারা দেখতে পায় তৃণা ঈশান এক রুমে অবস্থান করছে। দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। দুজনের গায়ের অর্ধেক পোশাক। তবে দুজনেই ঘুমের মধ্যে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল সারারাত তারা এভাবেই ছিল। সাঈদা বেগম এই ঘটনায় পুরোপুরি হতবাক হয়ে যান। রুহুল রহমান এর অবস্থাও এক ছিল সেই সময়। তারা দুজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান। এর মধ্যে তৃণার ঘুম টাও ভেঙে যায়৷ তৃণা উঠে এসে রুমের বাইরে আসে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কোন ঘোরের মধ্যে ছিল।
বাইরে এসে তৃণা কাঁদতে শুরু করে। সে বলে ওঠে,
“আমি জানতাম না কিভাবে কি হয়ে গেল। কাল রাতে আমি আর ঈশান ভাই দুজনেই ভাত খেয়েছিলাম সাথে জুস। জানিনা জুস খাওয়ার পর হঠাৎ করে আমার মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে আর তারপর আমি আর নিজের জ্ঞানের ছিলাম না। ঈশান ভাইয়ের অবস্থাও হয়তো আমার মতোই ছিল।”
তৃণার কথা শুনে সাঈদা বেগম ও রুহুল রহমান ও কোন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করতে ভুলে যান। একটা বড় দূর্ঘটনা যে ঘটে গেছে এটা তো তখন পরিস্কার ছিল। এর পরিমাণ যে ভালো হবার নয় সেটাও স্পষ্ট ছিল। সাঈদা বেগম তখন অনেক অনুনয় বিনয় করে বলেন,
“যা হবার হয়ে গেছে আমার ছেলেটার নামে খারাপ কিছু বলো না প্লিজ। তুমিই তো বললা যে এসব কিছু জুস খাওয়ার পর হয়ে গেছে। আর ঈশান বা তুমি কেউই তো একে অপরকে ভালোবাসো না। তাই তুমি এসব নিয়ে আর জল ঘোলা করো না। এই সব একটা দূর্ঘটনা ভেবে ভুলে যাও।”
“এভাবে কিভাবে সব কিছু আমি ভুলে যাব চাচি? আমার সম্মানের ব্যাপার।”
সেই সময় রুহুল রহমান বলে ওঠেন,
“দেখ তোমার বা ঈশানের মধ্যে তো কোন সম্পর্ক নেই। তুমি এই সব কিছু নিয়ে আর কথা না বললেই ভালো হবে। তোমার বোনের সাথে তো ঈশানের বিয়ে হবার কথা। সব দিকটা ভেবেই তোমার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
“তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমার বোনের কথা ভেবে আমাকে নিজের সম্মানের কথা ভুলে যেতে হবে। আজ যেটা হয়েছে সেটা মোটেই কোন সাধারণ ঘটনা নয়। আমার সতীত্ব আমি হারিয়েছি। একটা মেয়ের কাছে এটা কোন সাধারণ ব্যাপার নয় সেটা আপনারাও খুব ভালো করে জানেন।”
“কিন্তু এতে ঈশানের তো কোন দো’ষ নেই। আমার মনে হয় এটা কোনো তৃতীয় ব্যক্তির প্ল্যানিং।”
“যাইহোক না কেন সবদিক দিয়ে তো আমিই বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।”
রুহুল রহমান ও সাঈদা বেগম মিলে অনেক অনুনয় বিনয় করে সেদিন তৃণার মুখ বন্ধ করেন।
★★★
অতীত থেকে বেরিয়ে এসে সাঈদা বেগম বলেন,
“এইজন্য আমি আর তোর বাবা এত সহজে তোর আর তৃণার বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নেই। আমরা জানি ঈশান যে তোর কোন রকম কোন ভুল ছিল না কিন্তু তবুও যা কিছুই হয়েছে তাতে তুই না চাইলেও তোকে এই ভার বহন করতে হবে।”
ঈশান চিৎকার করে বলে ওঠে,
“আমি মানিনা এসব কিছু। ও মিথ্যা বলছে। ও যাই বলুক আমি মানিনা যে এমন কিছু হয়েছে। যতই আমি নেশার মধ্যে থাকি না কেন যদি এমন কিছু হতো তাহলে আমার কিছুটা হলেও তো আবছা আবছা মনে থাকতো। কিন্তু আমার তো কিছুই মনে নেই। এখান থেকেই স্পষ্ট যে এটা পুরোপুরি আমাকে ফাসানো হয়েছে।”
তৃণা বলে,
“আমি তোমাকে কোন ভাবেই ফাসাই নি। এসব সত্যি। তোমার আর আমার মধ্যে সেদিন..”
“চুপ কর তুই। আমি জানি তুই এসব মিথ্যা কথা বলছিস। এসব তোর পরিকল্পনা তাই না। তোকে তো আমি…”
তৃষ্ণা এরইমধ্যে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। তৃষ্ণা এসেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,
“তোমরা সবাই থামো। এত দিন ধরে অনেক নাটক হয়েছে। সত্যটাকে অনেক ভাবে গোপন করা হয়েছে। অনেক নাটক হয়েছে। তবে আর নয়। এবার সব সত্য সামনে আসার পালা। আর কে সত্য বা কে মিথ্যা সেটা জানার জন্য এখন একটাই উপায় আছে। আর সেটা হলো DNA টেস্ট।”
তৃণা ও ঈশান দুজনেই তৃষ্ণার দিকে তাকায়। ঈশান বলে ওঠে,
“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস তুই। এবার DNA টেস্টই করাতে হবে। তাহলে সব সত্য সামনে আসবে।”
তৃণা আপত্তি করে বলে,
“না আমি DNA টেস্ট করাবো না। আমার বাচ্চা এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি। যদি DNA টেস্ট করালে ওর কোন ক্ষতি হয়।”
“তুই ভুল ভাবছিস তৃণা। এখন টেকনোলজি অনেক উন্নত হয়েছে। ডিএনএ টেস্ট করালে বাচ্চার কোন ক্ষতি হবে না। আমি একজন ডাক্তার হিসেবে তোকে এটার নিশ্চয়তা দিতে পারি।”
“আমি করাবো না। কারণ আমি জানি এই বাচ্চা ঈশান ভাইয়ের। আর ঈশান ভাই যদি মেনে নিতে না চায় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। আমি বাচ্চাটাকে একা মানুষ করব তাও কোন ডিএনএ টেস্ট করাবো না।”
ঈশান তৃণার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“অনেক দিন থেকে তোর অনেক নাটক আমি দেখে চলেছি কিন্তু আর নয়। এবার তুই চাস বা না চাস আমি ডিএনএ টেস্ট করাবোই। তোর সব খেলা এবার শেষ হবেই।”
তৃষ্ণা তৃণা ও ঈশানকে বলে,
“তোমরা আমার সাথে চলো ল্যাবে। ওখানে গিয়েই ডিএনএ টেস্ট করানো যাবে।”
তৃণা কোন মতেই যেতে চায় না। ঈশান তখন তাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। সে জেন বদ্ধ পরিকর সব সত্য সামনে আনার জন্য।
★★★
ঈশান ও তৃণার বাচ্চার DNA নেওয়া হয়ে গেছে। এখন শুধু টেস্টের রিপোর্ট আসা বাকি। পরিবারের সব সদস্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে এই টেস্ট এর রিপোর্ট কি আসে তা জানার জন্য। সবার মধ্যে উন্মাদনা কাজ করছে।
বিশেষ করে ঈশান, তৃষ্ণা ও তৃণার মাঝে। এরমধ্যে একজন লোক ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে হাজির হন। তিনি রিপোর্ট তৃষ্ণার হাতে তুলে দেন। তৃষ্ণা রিপোর্ট টা খুলে। রিপোর্ট টা দেখেই সে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবাক হয়
তৃষ্ণার মুখের ভঙ্গি দেখে কিছু বুঝতে না পেরে ঈশান জিজ্ঞেস করে,
“রিপোর্ট কি এসেছে? চুপ করে থাকিস না বল রিপোর্ট কি?”
তৃষ্ণা বলে ওঠে,
“রিপোর্ট বলছে যে…”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨