আমার হয়েও আর হইলোনা পর্ব-০৬

0
765

#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

তৃষ্ণা হাসপাতাল থেকে আজ বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল। তার শরীর এবং মন দুটোর অবস্থাই ভালো না। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। বাড়িতে ফিরেই তৃষ্ণা নিজের রুমে চলে গেল। শাওয়ার নিয়ে অতঃপর ঘুমানোর উদ্দ্যেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোনে কল এলো। তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করল। বিপরীত দিক থেকে একটা গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে এলো। কেউ তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“যদি আপনার বোন তৃণার ব্যাপারে সকল সত্য কথা জানতে চান তাহলে আজ রাতে আপনাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যেই পুরাতন ফ্যাক্টরিটা আছে সেখানে দেখা করবেন। তারপর সব সত্য আপনার সামনে প্রকাশিত হবে।”

“আপনি কে আর…হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো..”

বিপরীত দিক থেকে ফোনটা রেখে দেয়। তৃষ্ণা আরো কয়েকবার নাম্বারটায় কল করে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখায়। তৃষ্ণার ভ্রু কুচকে যায়। সে চুপচাপ বিছানায় এসে বসে। অতঃপর ভাবতে থাকে আজ দেখা করতে যাওয়া উচিৎ হবে কি হবে না।

★★★
তৃণা প্রেরণা বেগমের কক্ষে উপস্থিত হয়েছে। প্রেরণা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে সে বলে চলেছে,
“আপনি তো সব সত্য জানেন। তাহলে প্লিজ ঈশানের সামনে সবটা বলুন না।”

প্রেরণা বেগম বলে ওঠেন,
“আমাকে এসবের মধ্যে কেন জড়াচ্ছ তুমি? এমনিতেই এই পরিবারে আমার অবস্থাটা নড়বড়ে। তার উপর এখন আমি কিছু বললেই যে ঈশান বিশ্বাস করবে তেমন টা তো নয়।”

“কিন্তু এই বাচ্চাটা যে ঈশানের সেটা প্রমাণ করার জন্য এছাড়া তো আমার হাতে আর কোন উপায় নেই। আপনি সবার সামনে বলুন না যে, সেইদিন আপনি আমাদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছিলেন।”

প্রেরণা বেগম মনে মনে ছক কষতে থাকেন যে তিনি কি করবেন। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে৷ তাই তিনি বলেন,
“তোমাকে কিছু করতে হবে না৷ তুমি শুধু চুপচাপ থাকো। ২৪ ঘন্টা পর এমনিই সবাই তোমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।”

★★★
তৃষ্ণা ম্যাসেজ অনুযায়ী রাতে একা একাই সে পুরাতন ফ্যাক্টরিতে চলে এসেছে। কিন্তু এখানে এসে সে কারো দেখা পায়নি। বেশ বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করে ফিরে যেতে ধরে তৃষ্ণা। এমন সময় পেছন থেকে কেউ তার নাম ধরে ডেকে ওঠে৷ তৃষ্ণা পিছন ফিরে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়৷ তার চোখেমুখে বিস্ময়ের ছাপ স্পষ্ট হয়। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“তুমি!”

” হ্যাঁ, আমি। আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।”

“কিন্তু তুমি এসব আমাদের পরিবারের ব্যাপারে এত কিছু কিভাবে জানলে? তোমার তো এসব কিছু জানার কথা নয়।”

আরেফিন মৃদু হেসে বলে,
“আমি জানি কারণ আমি তোমাদের বাড়ির খোঁজ খবর রাখি।”

তৃষ্ণার বেশ রাগ হয়। এই আরেফিন হলো প্রেরণা বেগমের ভাতিজা, মানে ভাইয়ের ছেলে। প্রেরণা বেগমের সাথে তৌফিক খানের বিয়ের পর ছেলেটা বারকয়েক তাদের বাড়িতে ঘুরতে এসেছিল। এই ছেলেটাকে একদম পছন্দ নয় তৃষ্ণার। এর চোখের ভাষায় কেন জানি কোন খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দেয়। তবে তৃষ্ণার আজ কেন জানি ছেলেটার উপর বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। তাই সে আরেফিনকে জিজ্ঞেস করে,
“বলো কি জানো তুমি।”

“আমি কি জানি সেটা নাহয় পরে বলব, আগে তুমি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”

“কি প্রশ্ন?”

“তোমার কি নিজের বোন তৃণার উপর একটি বারও সন্দেহ হয়নি?”

“তা তো হয়েছিল।”

“তাহলে একজন ডাক্তার হওয়ার পরেও তুমি ডিএনএ টেস্টের কথা বলো নি কেন ওকে?”

আরেফিনের কথায় তৃষ্ণা বেশ হোচট খায়। সত্যি তো ব্যাপারটা তার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল। আরেফিন তৃষ্ণার মনোভাব বুঝতে পেরে বলে ওঠে,
“এখন আমি বলি আমি কি জানি। এই বাচ্চাটা ঈশানের নয়।”

“তাহলে বাচ্চাটা কার?”

“আমার।”

“কি? এসব তুমি কি বলছ?”

“যা সত্যি তাই বলছি। তোমার বোনের সাথে আমার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আর এই সম্পর্কের ফলেই…”

“তুমি যেই কথাগুলো বলছ তার প্রমাণ কি? আমি তো কখনো আমার বোনকে তোমার সাথে মিশতে দেখিনি।”

“বাহ,তৃষ্ণা বাহ। তোমার বোন যখন এসে বলল সে ঈশানের বাচ্চার মা হতে চলেছে তখন তুমি একবাক্যে তার কথা মেনে নিলে। তার কাছে কোন প্রমাণও চাইলে না। আর আমি যখন সত্যটা বলছি তখন তোমার সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না!”

“না হচ্ছে না। কারণ আমি তো তোমার সাথে তৃণাকে কখনো মিশতে দেখিনি।”

“ঈশানের সাথে তৃণাকে মিশতে দেখেছ?”

“হ্যাঁ, দেখেছি তো। ওরা সবসময় একে অপরের সাথে গল্প করতো,আড্ডা দিত। আমি তো অনেকবার তৃণাকে দেখেছি হাসতে হাসতে ঈশান ভাইয়ের গালে ঢলে পড়তে। ঈশান ভাই এসবের কোন প্রতিবাদই করতো না।”

“এবার আমার কাছে সবটা পরিস্কার। তার মানে সন্দেহ থেকেই তুমি ঈশানকে দোষী ভেবে নিয়েছ। যাইহোক তুমি এখন বাড়ি ফিরে যাও। আমার কথায় বিশ্বাস করলে করো না করো নাই৷ তবে সত্য খুব শীঘ্রই সবার সামনে আসতে চলেছে।”

তৃষ্ণা আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে ফিরে আসতে লাগল। আরেফিন তৃষ্ণার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসল। তৃষ্ণা ফিরে আসতে আসতে আরেফিনের বলা কথাগুলোই ভাবতে লাগল। তার মধ্যে এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল যে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।
★★★★
Khushi khushi pehna, Tera diya gehna
Kitna kangan jachay, dekh kalai, ay, ay, ay
Tujhey mere liye, mujhey tere liye
Hai banaya gyaa, oh harjaai ay, ay, ay

আপনমনে গানটা গুনগুন করে গাইছিল তৃণা। এমন সময় হঠাৎ করে ঈশান তার রুমে প্রবেশ করে। তৃণাকে এভাবে নিশ্চিতে গান বলতে দেখে ঈশানের মাথা গরম হয়ে যায়। সে তৃণাকে একপ্রকার টেনে তুলে বিছানা থেকে। তৃণা বলে ওঠে,
“এসব তুমি কি করছ ঈশান ভাই?”

“চুপ থাক। তোকে দেওয়া ২৪ ঘন্টা সময় শেষ হয়ে গেছে। তুই কি এখন এমন কোন প্রমাণ দেখাতি পারবে যাতে এটা প্রমাণিত হয় যে এই বাচ্চাটা আমার?”

তৃণা কিছুই বলে না। কারণ তার হাতে সত্যি কোন প্রমাণ নেই। তৃণাকে চুপ থাকতে দেখে ঈশানের রাগ আরো বেশি বেড়ে যায়। তাই সে তৃণার হাত ধরে একপ্রকার টানতে টানতে নিচে নিয়ে যেতে থাকে।

বাড়ির সবাই তখন ডিনারে ব্যস্ত। ঈশান তৃণাকে নিয়ে এভাবে চলে আসায় সবার নজর এইদিকে আসে। তৌফিক খান উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
“এসব হচ্ছে টা কি?”

ঈশান রাগে ফোসফাস করতে করতে বলে,
“তোমার মেয়েকে আমি ২৪ ঘন্টা সময় দিয়েছিলাম চাচু। আর বলেছিলাম এরমধ্যে প্রমাণ করে দিতে ওর গর্ভে যেই সন্তান বেড়ে উঠছে সেটা আমার। কিন্তু তোমার মেয়ে সেটা পারে নি। তাই এবার শর্ত অনুযায়ী আমি ওকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেব।”

তৌফিক খান একপলক তৃণার দিকে তাকান অতঃপর বলেন,
“তোমার যা খুশি করতে পারো। আমার কাছে এমনিতেও এই মেয়েটা মৃত। আমার এখন একটাই মেয়ে আর সে হলো তৃষ্ণা।”

নিজের বাবার কথা শুনে তৃণার চোখে জল চলে আসে। সে ভেবেছিল অন্তত তার বাবা তার হয়ে কথা বলবে। এরমধ্যে হঠাৎ প্রেরণা বেগম বলে ওঠেন,
“তুমি এভাবে তৃণাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারো না। ওকে আর কিছুটা সময় দাও নিজেকে প্রমাণ করার।”

“আমি ওকে আর এক মিনিটও সময় দেব না।”

বলেই তৃণাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে ঈশান। এমন সময় ঈশানের মা সাঈদা বেগম তার রাস্তা আটকে দিয়ে বলে,
“তৃণা এই বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।”

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ঈশান।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে