#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
তৃষ্ণা তৃণার সামনে এসে উপস্থিত হয়। তৃণা হঠাৎ তৃণাকে এভাবে দেখে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে। সব পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবে সেটাই বুঝতে পারে না। তৃণা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। তৃষ্ণা তখনো নিশ্চুপ। তৃণা নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের মতো কিছু কথা সাজিয়ে নেয়। অতঃপর সেই কথাটা তৃষ্ণার সামনে উপস্থাপন করতে যাবে তার পূর্বেই তৃষ্ণা তৃণার গালে ঠা’স করে থা’প্পর বসিয়ে দেয়। তৃণা গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে হয়ে তাকিয়ে রয়। তৃষ্ণা রাগে ফোসফোস করতে করতে বলে ওঠে,
“ছি! তোকে আমার বোন বলতেও লজ্জা করছে। তার মানে ঈশান ভাই ঠিক বলছিল। তুই তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিলি। আর এই ছেলেটাই তোর সন্তানের আসল বাবা।”
জয় এতক্ষণ ধরে চুপচাপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে চলেছিল। এই রকম সময় হঠাৎ করে নিজের দিকে দো’ষ চলে আসায় সে পুরোপুরি তাজ্জব বনে যায়। তৎক্ষণাৎ আপত্তি করে বলে,
“এসব কি বলছেন আপনি? আমি কেন এই সন্তানের বাবা হতে যাব? আমার নামে একদম মিথ্যা অপবাদ দেবেন না।”
ঈশান এগিয়ে এসে জয়ের কলার চেপে ধরে। কঠিন স্বরে বলে,
“একদম কোন মিথ্যা কথা বলবি না। একটা মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে তো খুব মজা লেগেছিল তাই না? আর এখন বাচ্চা পেটে আসতেই তার দায়ভার নিতে পারছিস না।”
জয় এই কথাটা অস্বীকার করে বলে ওঠে,
“কিসের বাচ্চা, কার বাচ্চা? তৃণার পেটে যেই বাচ্চা বড় হচ্ছে সেটা আমার নয়। আল্লাহর কসম করে বলছি এই বাচ্চার বাবা আমি নই।”
ঈশান রেগে গিয়ে দু-চারটা ঘু’ষি বসিয়ে দেয় জয়ের মুখে। এতকিছুর পরেও জয় নিজের স্বীকারোক্তিতে অটল থাকে। সে বলতে থাকে,
“এই বাচ্চার বাবা আমি নই। তৃণাকে আমি ভালোবাসি এটা ঠিক কিন্তু সেটা একতরফা ভালোবাসা ছিল। তৃণা আর আমি একই ভার্সিটিতে পড়ি। ওকে প্রথম দেখাতেই আমি ভালোবেসে ফেলি। ওকে অনেক বার নিজের ভালোবাসার কথা বলেছি কিন্তু ও আমাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে আমি আশা ছাড়িনি। তৃণার মন জয় করার চেষ্টা করে গেছি। এভাবে দিন চলে যেতে থাকে। হঠাৎ করে একদিন তৃণা আমাকে নিজে থেকে ফোন করে। আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি কিনা,ওর জন্য সব করতে পারব কিনা। আমি তখন বলি, হ্যাঁ আমি তোমার জন্য সব করতে পারব। তখন ও হঠাৎ করে বলে ও নাকি প্রেগন্যান্ট। আর এই বাচ্চাটা সহ আমায় ওকে বিয়ে করতে হবে। এটা ঠিক যে আমি তৃণাকে ভালোবাসি। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, আমি অন্য কারো বাচ্চাকে নিজের বাচ্চা হিসেবে স্বীকৃতি দেব। তাই আমি তৃণাকে বলি এই বাচ্চাটা ন*ষ্ট করতে। তাহলে আমার কোন অসুবিধা থাকবে না ওকে মেনে নিতে। কিন্তু ও মানল না। তারপর অনেক কান্নাকাটি করল। আমাকে আজ এখানে এসে দেখা করতে বলল।”
ঈশান জয়ের কলার আরো জোরে ধরে বলে,
“আমি জানি এই সব মিথ্যা বলছিস তুই।”
এরমধ্যে তৃণা হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“ও কোন মিথ্যা কথা বলছে না ঈশান ভাই। জয় সত্যি এই বাচ্চাটার বাবা নয়।”
“তাহলে তুই ওর সাথে কেন যোগাযোগ করছিলি?”
“তোমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ঈশান ভাই। তুমি যখন আমাকে আর আমার সন্তানকে মেনে নিতে চাইছোনা তখন আমিও চাইনা জোর করে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বোধহয় আমি জয়ের উপর অন্যায় ভাবে বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইছিলাম।”
ঈশানের রাগের মাত্রা বাড়তে থাকে। সে জয় নামের ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না যে সে মিথ্যা বলছে। ঈশান ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। জয় তৃণার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার দরজা এখনো তোমার জন্য খোলা আছে তৃণা। তুমি শুধু এই বাচ্চাটা ন*ষ্ট করে দাও। আমি খুশি খুশি তোমাকে গ্রহণ করতে রাজি আছি।”
তৃণা দৃঢ়তার সাথে বলে,
“তুমি এখান থেকে চলে যাও জয়। আমি কখনোই এমন কিছু করব না। এই বাচ্চাটাকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাবোই।”
ঈশান এবার ভীষণ রেগে যায়। তৃণার উদ্দ্যেশ্যে চিৎকার করে বলে,
“কোন প***তিতা পল্লীতে গিয়ে পেট বাধিয়ে এসেছিস তুই?”
তৃণার ধৈর্যের বাধ আজ ভেঙে যায়। সে সপাটে থা’প্পর বসিয়ে দেয় ঈশানের গালে। চিৎকার করে বলে ওঠে,
“আমি কোন পতি**তা পল্লীতে যাইনি৷ বরং এই বাচ্চাটা তোমার নিজেরই। তোমার কি সত্যি মনে নেই সেই বর্ষণভেজা রাতের কথা? যেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। তুমি সেদিন নেশা করে ছিলে। আর…”
ঈশান হাত দিয়ে ইশারা করে তৃণাকে থামিয়ে দেয়। অতঃপর কিছু একটা ভেবে বলে,
“আমার সেদিনের কথা কিছু মনে নেই। শুধু এটুকু মনে আছে আমি সেদিন সন্ধ্যায় ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তারপর সকালে যখন ঘুম ভাঙে তখন আমার কিছুই মনে ছিল না।”
“জানি আমি সেটা। তোমার কিছু মনে না থাকাই স্বাভাবিক। তুমি নেশা করেছিলে আর…”
“তুই আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ একদম দিবি না। আমি জানি আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি।”
“কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে এই বাচ্চার বাবা তুমি?”
“তুই আমাকে এমন কোন প্রমাণ এনে দে যাতে করে তোর কথা প্রমাণিত হয়।”
“ঠিক আছে আমি কথা দিচ্ছি আমি সব প্রমাণিত করে দেব।”
“আমি তোকে ২৪ ঘন্টার সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে যদি সত্যটা প্রমাণ করতে পারিস তো ভালো। আর নাহলে তুই কথা দে যে তুই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবি।”
“আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি হয় আমি ২৪ ঘন্টার মাঝে তোমার কাছে সব সত্য প্রমাণিত করে দেব আর নাহয় আমি বের হয়ে যাব আমাদের বাড়ি ছেড়ে।”
তৃষ্ণা এসব কিছুর নীরব দর্শক হয়। সে বুঝেই উঠতে পারছিল না যে এসব কি হচ্ছে। তৃষ্ণা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। একবার ঈশান তো একবার তৃণার দিকে তাকায়। তাদের কাউকেই দেখে মনে হচ্ছে না যে তারা কেউ মিথ্যা বলছে। তাহলে আসল সত্যি কে বলছে?
তৃষ্ণার মাথা কাজ করছিল না। সে বুক ভড়ে শ্বাস নেয়। অতঃপর বলে ওঠে,
“আমি এখন হসপিটালে যাচ্ছি। তোমাদের যা ইচ্ছা তোমরা করো। আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না।”
তৃষ্ণা চলে যেতে নিলে ঈশান পিছন থেকে বলে ওঠে,
“তুই কোন চিন্তা করিস না। ২৪ ঘন্টা কেন ২৪ বছর সময় দিলেও তৃণা কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ ও মিথ্যা বলছে। আর মিথ্যা দিয়ে সত্যকে কখনো আড়াল করা যায়না।”
ঈশানের কথা শুনে তৃণাও বলে ওঠে,
“কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা সেটা তো আগামী ২৪ ঘন্টা পরই সবার সামনে আসবে। তুমি তখন আর চাইলেও আমাকে বা আমাদের সন্তানকে অস্বীকার করতে পারবে না। তুমি শুধু আমারই হবে।”
“আমি কখনোই তোর হবো না। তোর মতো মিথ্যাবাদী মেয়েকে আমার মে*রে ফেলতে ইচ্ছা করছে।”
তৃষ্ণা তাদের এসব কথায় বিরক্ত হয়ে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। একটু এগিয়ে এসে একটা রিক্সায় চড়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয়। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যে হঠাৎ তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। তৃষ্ণা ফোনটা বের করে দেখে কেউ ম্যাসেজ করে লিখেছে,
“তোমার বোন একটা ঠক। তাকে কখনো বিশ্বাস করো না। ঈশান সত্য বলছে। তুমি ঈশানের পাশেই থাকো।”
ম্যাসেজটা দেখে তৃষ্ণা হতবাক হয়ে যায়। যেই নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে সে সেই নাম্বারে কলও দেয়। কিন্তু ফোন নট রিচেবল বলছে। তৃষ্ণার মনে শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরতে থাকে। কে দিলো এই ম্যাসেজ?
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨