#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
তৃণা অনেক ক্ষণ থেকে বাগানের সামনে পায়চারি করছে। আজ তার মন বেশ বিক্ষিপ্ত। নিজের মধ্যে ন্যায় অন্যায়ের দ্বন্দে হিমশিম খাচ্ছে তৃণা। এরইমধ্যে হঠাৎ করে সে ঈশানকে দেখতে পেল। থমথমে মুখ করে এদিকেই এগিয়ে আসছে সে। হয়তো সবেমাত্র বাড়িতে ফিরল।
তৃণা ঈশানকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কিন্তু ঈশান ঠিক তৃণার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। তৃণার দিকে ঘৃণাভাজন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তৃণা পিছন ফিরে না তাকিয়েই ঈশানের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে। কম্পনরত কন্ঠে সুধায়,
“তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও ঈশান ভাই?”
“বলতে তো চাই অনেক কিছুই। তোর মতো মেয়ের সাথে ঠিক যতোটা জঘন্য ব্যবহার করা যায় ততোটা করতে চাই কিন্তু আমার শিক্ষা আমাকে বাধা দিচ্ছে।”
“আমার মতো মেয়ে বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছ?”
“তোর মতো মেয়ে মানে যারা বিয়ের আগেই বে* মতো নিজের ই*জ্জ*ত অন্য কারো কাছে সপে দিয়ে তারপর সেই দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়।”
“ঈশান ভাই! আমার ব্যাপারে একদম খারাপ কথা বলবে না। আমি মোটেই কোন অন্যায় করিনি। বরঞ্চ…”
“থামলি কেন? বল কি বলবি?”
“কিছু না। আমি যাই বলি না কেন তুমি তো আমায় বিশ্বাস করবে না। তাহলে বলে কি লাভ বলো?”
“এসব কথা বলে কোন লাভ হবে না। তোর গর্ভে যে সন্তান বড় হচ্ছে তার আসল বাবা আমি নই৷ তবে এই সন্তানের আসল বাবা কে বল আমায়?”
“তুমিই এই সন্তানের পিতা।”
“আমার মেজাজ কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে তৃণা। ভালোয় ভালোয় তুই সত্য কথা বল নয়তো আমি…”
“আমি যা বলেছি একদম সত্যিই বলেছি। আমার পেটে তোমারই বাচ্চা ”
“ঠিক আছে, তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি নিজে থেকে সব সত্য বের করে আনব। তোর সন্তানের আসল বাবাকেও আমি বাইরে বের করে আনব।”
ঈশান কথাটা বলেই চলে যায়। তৃণা করুণ দৃষ্টিতে ঈশানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
★★★
তৃণা ফোন নিয়ে বাইরে এসেছে। কারো সাথে বেশ রেগেমেগে কথা বলছে সে। ঈশান তৃণাকে আজ সকাল থেকেই অনুসরণ করে চলেছে। তৃণার গতিবিধির উপর সার্বক্ষণিক নজর রেখে চলেছে সে। তাই তৃণাকে বাইরে আসতে দেখে তার পিছন পিছন ঈশানও বাইরে চলে এসেছে।
ঈশান দূর থেকেই তৃণার বলা কথা গুলো শুনতে থাকে। তৃণা যেন কাউকে প্রচণ্ড রেগে বলছে,
“তুমি কেন আমার সাথে এমন করলে? তুমি না বলেছিলে আমায় ভালোবাসো। এই সেই ভালোবাসার পরিমাণ। আজ সত্যটা জানার পর তোমার ভালোবাসা নাই হয়ে গেল?”
বিপরীত দিক থেকে কি উত্তর এলো সেটা ঈশানের কর্ণগোচর হলো না। কারণ ফোনটা স্পিকারে দেওয়া ছিল না৷ তবে ঈশান এতটুকু ঠিকই বুঝতে পারল যে ওপাশ থেকে তিক্ত কিছু কথা বলা হয়েছে। যার কারণে তৃণার চোখ জলে ভিজে যায়। তৃণা বলে,
“আমি এই বাচ্চাটা কোন ভাবেই ন*ষ্ট করতে পারবো না। যাই হোক না কেন, তাতে তো ওর কোন দো’ষ নেই। তাহলে ওকে কেন আমি শা’স্তি দেব? আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমি ওকে পৃথিবীর আলো দেখাবোই। তার জন্য আমাকে যা করতে হয় করব। তুমি যদি আমার পাশে না থাকো তাহলে কোন সমস্যা নেই।”
বলেই তৃণা ফোনটা রেখে দেয়। সাথে সাথেই ঈশান তৃণার একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তৃণা ঈশানকে হঠাৎ এভাবে নিজের সামনে দেখে হচকচিয়ে যায়। দু পা পিছিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে, “ঈশান ভাই তুমি!”
“আমি আসায় তোর খুব ক্ষতি হয়ে গেল তাইনা?”
“ক্ষতি কেন হতে যাবে? আশ্চর্য!”
“তুই কি এত কিছুর পরেও সত্যিটা লুকাবি তৃণা? আমি কিন্তু তোর সব কথোপকথন শুনেছি।”
“কি শুনেছ তুমি?”
“আমি এটাই শুনেছি যে তুই কাউকে এই বাচ্চাটার ব্যাপারে বলছিলি। আই থিংক সে এই বাচ্চাটার আসল বাবা। রাইট?”
“তুমি ভুল ভাবছ….”
“ওহ তৃণা জাস্ট শাট আপ। তুই কেন এমন করছিস বল তো? সেই ছোটবেলা থেকেই তো তুই আমাকে চিনিস বল। তোর সাথে তো আমার কাজিন কম বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি ছিল। তুই জানিস আমি মিথ্যা সহ্য করতে পারি না। তাও কেন মিথ্যা বলছিস?”
“আমি কোন মিথ্যা কথা বলছি না ঈশান ভাই।”
“তাহলে আমি এতক্ষণ ধরে যা শুনলাম তা সব কি ভুল? তোকে বেশি কিছু করতে হবে না তুই শুধু আমাকে ঐ ছেলেটার ঠিকানা বল৷ আমি নিজে ওর সাথে কথা বলব। ওকে বোঝাবো ও যাতে এই বাচ্চাটা সহ তোকে মেনে নেয়। এর ফলে তুইও লাইফে খুশি হবি আর আমিও…”
“অন্য কেউ তোমার বাচ্চাকে কেন মেনে নেবে ঈশান ভাই? এই বাচ্চাটা তো তোমার।”
ঈশানের ধৈর্যের সকল বাধ ভেঙে যায়। ঈশান তৃণার গলা চেপে ধরে বলে,
“খবরদার! আর একবার এই চরম মিথ্যা কথাটা বললে আমি কিন্তু তোকে…”
তৃণা কাশতে কাশতে বলে,
“তুমি এমন করলেই কি সত্যটা মিথ্যায় পরিণত হবে ঈশান ভাই?”
ঈশান তৃণাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“একদম ঠিক করছিস না তুই। এর ফল তোকে পেতেই হবে।”
★★★
তৃষ্ণা রাতে বাসায় ফেরার পরপরই ঈশান তৃষ্ণার সাথে দেখা করে। ঈশানকে দেখেই তৃষ্ণার রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায়৷ সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তুমি কোন সাহসে আমার সামনে এসেছ?”
“তোকে কিছু কথা বলার ছিল।”
“কিন্তু আমি তোমার কোন কথা শুনতে বাধ্য হই। আমার সামনে থেকে দূর হও।”
“তৃষ্ণা! সবসময় এরকম রাগ দেখাবি না। ভুলে যাস না আমি বয়সে তোর বড় হই।”
“এটাই তো আমার দূর্ভাগ্য। যদি তুমি আমার চেয়ে বড় না হতে তাহলে আমি…”
“কি করতি তুই? বল চুপ করে আছিস কেন?”
“আমার শিক্ষা আমাকে এসব বলতে বাধা দিচ্ছে।”
“তুই প্লিজ নিজের শিক্ষা নিয়ে বড়াই করিস না। কি শিক্ষা পেয়েছিস তুই? চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করা? তোর বোন এসে বলল সে আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে আর তোরা সবাই কোন বাধ বিচার না করেই আমার সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দিলি! আমাকে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার একটা সুযোগ পর্যন্ত দিলি না!”
“প্রেগ্ন্যাসি টেস্টের রিপোর্ট দেখার পর তুমি আর কোন মুখে এই কথা বলছ?”
“তৃণা গর্ভবতী মানেই কি ওর সন্তানের বাবা আমি?”
“তৃণা তোমার ব্যাপারে মিথ্যেই বা বলবে কেন?”
“সেটা তোর বোনই ভালো বলতে পারবে। তবে আমি নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার উপায় পেয়ে গেছি।”
“হেয়ালি না করে যা বলার স্পষ্ট করে বলো।”
“আমি আজ তৃণার কারো সাথে ফোনে কথোপকথন শুনেছি। ও তাকে বলছিল ওর বাচ্চার দায়িত্ব নিতে। আমার মনে হয়, ও নিজের বাচ্চার আসল বাবার সাথেই কথা বলছিল।”
“তুমি নিজের দোষ ঢাকতে আর কত মিথ্যা বলবে বলো তো শুনি?”
“আমি কোন মিথ্যা কথা বলছি না। যদি তোর আমার কথা বিশ্বাস না হয় তাহলে কাল সকালে আমার সাথে ইকো পার্কে চল। কাল ওদের দুজনের ইকো পার্কে দেখা করার কথা।”
“বেশ তবে তাই হবে। আমি এই শেষবারের মতো তোমাকে বিশ্বাস করলাম। এরপর ইকো পার্কে গিয়ে যদি কাউকে না দেখি তাহলে কিন্তু আমি আর কখনো তোমায় বিশ্বাস করবো না।”
“আমি বিশ্বাস করি,কাল তৃণার প্রেমিক নিশ্চয়ই ইকো পার্কে আসবে। তারপর সব সত্য তোর সামনে উন্মোচিত হবে।”
★★★
পরদিন সকালে,
তৃষ্ণা ও ঈশান ব্রেকফাস্ট করেই একসাথে ইকো পার্কের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে৷ তৃষ্ণা বেশ অবাক হয়ে গেছে। কারণ আজ সকালেই তৃণা সত্যি সত্যি কোথায় যেন বেরিয়ে গেছে৷ তৃষ্ণার মনে এখন শুধু একটা কথাই ঘুরছে।
“তাহলে কি ঈশান ভাই যা বলেছে তাই ঠিক? তৃণা কি সত্যি আজ তার প্রেমিকের সাথে..”
তৃষ্ণার ভাবনার মধ্যেই দুজনে ইকো পার্কের সামনে এসে দাঁড়ালো। তৃষ্ণা ও ঈশান দেখল তৃণা পার্কে প্রবেশ করছে। দুজনেই তার পিছু নেয়। পার্কের ভিতরে ঢুকেই তারা দেখতে পায় তৃণা একটি ছেলের সাথে দেখা করছে। তৃষ্ণার চোখ কপালে উঠে যায়। সে এখন নিশ্চিত যে ঈশান সত্য বলছিল। তৃষ্ণা দ্রুত এগিয়ে যায় তৃণার দিকে। তৃণা তৃষ্ণাকে দেখে থমকে যায়৷ সে ভাবতেও পারে নি এভাবে ধরা পড়ে যাবে। তৃষ্ণা একেবারে তৃণার সামনে এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর…
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨