আমার হয়েও আর হইলোনা পর্ব-০২

0
847

#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

বাসর ঘরে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তৃণা। একটু আগেই তৃষ্ণা এসে তাকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে। তৃণা তৃষ্ণার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তৃষ্ণা তৃণাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে কোন কথা না বলেই চলে গেছে। তৃণার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেছে। তৃষ্ণা তার নিজের বড় বোন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে কত আদর যত্ন করে বড় করেছে। অথচ আজ তৃণার জন্য তাকে অনেক কষ্ট পেতে হলো। তৃণার একটু খারাপ লাগলেও সে ভাবল এমনটা হওয়ারই ছিল। তবে সে আশাবাদী একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

এরমধ্যে সময় এগিয়ে যেতে লাগল। তবে ঈশানের আসার কোন নামগন্ধ নেই। এতে করে তৃণার যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমন একটু স্বস্তিও হচ্ছে। কারণ তৃণা খুব ভালো করেই জানে তার এই বাসর রাত অন্য আর পাঁচটা মেয়ের মতো সুখকর হবে না। অনেক কিছুর মোকাবিলা করতে হবে তাকে। ঈশান এসেই হয়তো তাকে বাজেভাবে অপমান করবে।

তৃণা ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল৷ দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ১২ টা বাজতে চলেছে। তৃণার মুখে আমাবস্যার অন্ধকার নেমে এলো।

আর কিছু সময় অপেক্ষা করার পর তৃণা ভাবল ঈশান বোধহয় আজ রাতে আর আসবে না। তাই সে শুয়ে পড়ল। তার চোখে ঘুমও নেমে এলো। সবেমাত্র দুচোখ বন্ধ করেছে তৃণা এমন সময় রাগে ক্রোধে উন্মাদ হয়ে ঈশান বাসর ঘরে প্রবেশ করল। তৃণাকে বাসর ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে দেখে ঈশানের রাগের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে গেল। সে দাঁত কটমট করতে করতে বলল,
“আমার জীবনের সব শান্তি নষ্ট করে তুই এখানে শান্তিতে ঘুমাচ্ছিস। দাড়া তোর ঘুম আমি বের করছি।”

বলেই ঈশান ছুটে গেল তৃণার দিকে। তৃণার কাছে গিয়ে তাকে টেনে তুলল। সবেমাত্র তৃণার চোখ লেগে গিয়েছিল। ঈশান এভাবে অতর্কিত ভাবে টেনে তোলায় থতমত খেয়ে গেল তৃণা। পিটপিট করে তাকিয়ে রইল ঈশানের দিকে। ঈশান তৃণাকে টেনে তুলেই ক্ষান্ত হয়না। তৃণাকে টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে।

তৃণার অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে। তৃণা আর্তনাদ করে বলে ওঠে,
“ঈশান ভাই ছাড়ুন আমার লা’গছে।”

ঈশান ক্ষেপে গিয়ে বলে,
“একদম চুপ। তুই এটাই ডিজার্ভ করিস। আমার জীবন নষ্ট করে তুই শান্তিতে থাকবি সেটা তো হতে পারে না।”

“আমি কিভাবে তোমার জীবন নষ্ট করলাম ঈশান ভাই?”

“একদম নাটক করবি না। তুই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমায় বিয়ে করেছিস। আজ এই ঘরে তৃষ্ণার থাকার কথা ছিল। কিন্তু তুই সেটা হতে দিস নি। আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছিস তৃষ্ণাকে। কেন এমন করলি তুই তৃণা? তুই জানতি না আমি তৃষ্ণাকে কত ভালোবাসি? তুই যেদিন আমায় তোর মনের কথা বলেছিলি সেদিনই তো আমি স্পষ্ট অনেক তোকে এটা বলে দেই যে আমি শুধু আর শুধুমাত্র তৃষ্ণাকে ভালোবাসি।”

“আমি নিরুপায় ছিলাম ঈশান ভাই। আমার নিজের জন্য নয়, আমার সন্তানের জন্যই আমি এই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি।”

ঈশানের মাথা আরো বেশি গরম হয়ে যেতে থাকে। সে এবার চিৎকার করে বলে,
“নিকুচি করেছে তোর বাচ্চার। আমি জানি এই সব তোর মিথ্যা নাটক। আর আজ আমি সেটা প্রমাণ করে দেব।”

বলেই ঈশান তৃণাকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। তৃণা তখন বলে ওঠে,
“ঈশান ভাই আস্তে,আমাদের বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়ে যাবে।”

তৃণার কথা শুনে ঈশানের রাগ আরো বেড়ে যায়। সে আরো জোরে জোরে টানতে টানতে নিয়ে যায় তৃণাকে।

তৃণাকে টানতে টানতে তৃষ্ণার ঘরে নিয়ে যায় ঈশান। তৃষ্ণা অনেক রাত অব্দি জাগে। আজ দরজাটা খোলা রেখেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল তৃষ্ণা। নিজের আপন জনদের থেকে কষ্ট পেয়ে তার মনটা একদম বিষিয়ে গেছে। এমন সময় রুমের মধ্যে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রুমে চলে আসে তৃষ্ণা। তৃণা আর ঈশানকে দেখে তার ভ্রু কুচকে যায়। সাথে রাগও হয় খুব। তৃষ্ণা বেশ রাগী স্বরে বলল,
“তোমরা কেন এসেছ এখানে? আজকে না তোমাদের দুজনের জীবনের সবথেকে সুন্দর রাত। আমার এখানে এসে সেই রাতটাকে নষ্ট করো না।”

ঈশান তৃণাকে ধাক্কা দিয়ে তৃষ্ণার সামনে ফেলে দিয়ে বলে,
“তোর বোনের আসল রূপ তোর সামনে তুলে ধরার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি। তুই না একজন ডাক্তার। তোর কাছে নিশ্চয়ই প্রেগ্ন্যাসির কিট আছে। তখন ও যেই রিপোর্ট দিয়েছিল তার উপর আমার কোন বিশ্বাস নেই। তুই এখন ওকে আরেকটা কিট দে। দেখি এবার কি রিপোর্ট আসে।”

তৃষ্ণা তাই করে তৃণাকে একটা প্রেগ্ন্যাসির কিট দেয়। তৃণা আমতাআমতা করে বলে,
“তখন তো টেস্টের রেজাল্ট দিলামই। আর কতবার টেস্ট করতে হবে।”

তৃষ্ণা সন্দেহভাজন স্বরে বলল,
“তুই যদি সত্যি বলে থাকিস তাহলে তো টেস্ট করতে অসুবিধা নেই। আরেকবার টেস্ট করলে নিশ্চয়ই রিপোর্ট বদলে যাবে না।”

তৃণা কাপাকাপা হাতে টেস্ট কিটটা হাতে তুলে নেয়। অতঃপর চলে যায় ওয়াশরুমে। অনেকক্ষণ পরও যখন সে বেরিয়ে আসে না তখন ঈশান বাইরে থেকে চিৎকার করে বলে,
“কি হলো? এত সময় কেন লাগছে তোর?”

তৃণা একটু পরেই বেরিয়ে এলো। এসে কিটটা তৃষ্ণার হাতে তুলে দিল। ঈশান তৃষ্ণাকে শুধালো,
“রিপোর্ট কি এসেছে?”

“নিজেই দেখে নাও।”

ঈশান কিটটা হাতে নিয়ে দেখে রিপোর্ট পজেটিভ। তার নিজের চোখকেই বিশ্বাস হতে চায় না। সে বলে ওঠে,
“এটা হতে পারে না। তৃণা নিশ্চয়ই কোন কারসাজি করেছে।”

এরমধ্যে তৃণার হঠাৎ করে খুব বমি পায়। সে মুখে হাত দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছোটে। গলগল করে বমি করে দেয়। তৃষ্ণা ঈশানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি কি এরপরেও সত্যটা অস্বীকার করবে ঈশান ভাই?”

“হ্যাঁ, কারণ আমি জানি আমি নির্দোষ। এসব প্রেগ্ন্যাসির কিটে আমার কোন বিশ্বাস নেই। কাল আমি ওকে নিয়ে তোর হাসপাতালে যাব। ওর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাবো। তারপরই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।”

তৃষ্ণা বিরক্তির সাথে বলে ওঠে,
“তোমার যা করার তুমি করো। কিন্তু প্লিজ এখন তোমার ওয়াইফকে নিয়ে এই রুম থেকে বেরিয়ে যাও। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ।”

ঈশান রুম থেকে চলে যায়। তৃণা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঈশানকে না দেখে তৃষ্ণাকে শুধায়,
“আপি ঈশান ভাইয়া কোথায়?”

“জানিনা আমি। তুই এই রুম থেকে এক্ষুনি বের হ। তোকে সহ্য হচ্ছে না আমার।”

“বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই প্রেগন্যান্ট।”

“তুই কি বা***- ল হবি হ। আমার রুম থেকে বের হ বলছি। জাস্ট লিভ।”

তৃণা মাথা নিচু করে বের হয়ে যায়।

★★★
পরের দিন ঈশান বেশ দ্রুতই অফিস থেকে চলে আসে। উদ্দ্যেশ যে করেই হোক তৃণার সব ষড়যন্ত্র সবার সামনে আনা। বাড়িতে এসেই সে তৃণার নাম ধরে ডাকতে থাকে। পুরো বাড়ি মাথায় তুলে। ধীরে ধীরে বাড়ির সবাই নিচে নামে। তৃণাও প্রেরণা বেগমের সাথে নিচে নেমে আসে। ঈশান তৃণাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“তুই এক্ষুনি আমার সাথে হসপিটালে চল। আজ তোর সব জারিজুরি বের করব।”

তৃণা প্রেরণা বেগমের দিকে তাকায়। প্রেরণা বেগম তৃণাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না। সবকিছু ঠিক থাকবে।”

তৃণা ভরসা পেয়ে ঈশানের সাথে চলে যায়। তৃণাকে নিয়ে ঈশান হসপিটালে যায়। সেখানে গিয়ে তৃণার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানো হয়। হাসপাতালেই তৃষ্ণার সাথে দেখা হয়ে যায় তাদের। তৃষ্ণা তাদের এড়িয়ে চলে যেতে চাইলে ঈশান তাকে আটকে বলে,
“একটু থাম তৃষ্ণা। এক্ষুনি তৃণার প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট চলে আসবে। আসল সত্যটা দেখে তারপর যা।”

একটু পরেই রিপোর্ট নিয়ে আসেন একজন নার্স। তিনি রিপোর্টটা ঈশানের হাতে দেন। ঈশান তৃষ্ণাকে রিপোর্টটা দিয়ে বলে,
“তুই নিজের চোখে সবটা দেখে নে।”

তৃষ্ণা রিপোর্টটা খুলে দেখে। অতঃপর বিস্ফোরিত নয়নে তৃণার দিকে তাকায়। তৃণা ভয়ে ঢোক গিলে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে