আমার হয়েও আর হইলোনা পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
1160

#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#অন্তিম_পর্ব
#লেখিকাঃদিশা_মনি

তৃণার দিকে এগিয়ে এসে তার গায়ে হাত তুলতে চায় আরেফিন। কিন্তু গায়ে হাত তোলার পূর্বেই তৃণা শক্ত করে আরেফিনের হাতটা ধরে নেয়৷ আরেফিন রেগে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তৃণা পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে ফুলদানিটা হাতে তুলে নেয়। আরেফিন কিছু করার আগেই তার মাথায় সজোরে আঘা*ত করে।

আরেফিন মাথায় হাত দিয়ে নিচে পড়ে যায়। তৃণা ঠিক এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আরেফিনের পকেট থেকে খুব চতুরতার সাথে গেইটের চাবি বের করে নেয়। অতঃপর দ্রুত দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। তারপর যত দ্রুত সম্ভব দৌড় দেয়। ৭ মাসের বাচ্চা পেটে নিয়ে দৌড়াতে যদিও তার খুব অসুবিধা হচ্ছিল কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর জন্য সে প্রাণপণে দৌড় দেয়। এদিকে আরেফিনও কিছুক্ষণের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে তৃণার পিছনে যেতে থাকে। তৃণা নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়াতে থাকে। মাঝখানে হাফিয়ে গিয়ে কবার দমও নেয়। একটি সিএনজির কাছে যায়। হাফাতে হাফাতে বলে,
“ভাই ধানমন্ডি যাবেন।”

সিএনজিওয়ালা ভ্রু কুচকে বলে,
“না যাবো না। আমি অন্যদিকে যাব।”

আরেফিন যেকোন সময় এসে যাবে। এদিকে রাস্তায় আর কোন সিএনজিও দেখা যাচ্ছে না। তাই তৃণা একপ্রকার বাধ্য হয়েই বলে,
“প্রয়োজনে আপনাকে দ্বিগুণ টাকা দেব তাও আমাকে ধানমন্ডি নিয়ে চলুন।”

দ্বিগুণ টাকার কথা শুনেই লোভ দেখা দেয় সিএনজিওয়ালার চোখে। মুহুর্তেই মত পালটে বলে,
“আচ্ছা চলুন ধানমন্ডি যাচ্ছি।”

তৃণা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। দ্রুত সিএনজিতে উঠে পড়ে। সিএনজিওয়ালাও গাড়ি চালানো শুরু করে। আরেফিন মাথায় হাত দিয়ে দূর থেকে তৃণাকে সিএনজিতে উঠতে দেখে তার নাম ধরে ডাকে। দৌড়ে ছুটে আসতে চায় কিন্তু তার পূর্বেই সিএনজি চলতে শুরু করে। আরেফিন ক্রোধে কিছু বিশ্রী গালিগালাজ দিয়ে আরেকটা সিএনজি দিয়ে তৃণাকে ফলো করতে থাকে।

★★★
ধানমন্ডিতে পৌঁছানো মাত্রই তৃণা সিএনজি থেকে নেমে নিজের বাসার দিকে যেতে ধরে। সিএনজিওয়ালা তাকে ডাক দিয়ে বলে,
“আপু আপনি না দ্বিগুণ ভাড়া দিতে চাইলেন। এখন টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছেন কেন?”

তৃণা চোখে অন্ধকার দেখে। তখন তাড়াহুড়োয় দ্বিগুণ টাকার দেওয়ার কথা বললেও আসলে তো তৃণার হাতে কানাকড়িও নেই। তৃণা আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের স্বর্ণের আংটি খুলে দিলো সিএনজিওয়ালাকে। সিএনজিওয়ালা অবাক হলো বেশ। আরেফিনও ততক্ষণে চলে এসেছে৷ তাকে দেখামাত্র তৃণা ভো দৌড় দেয়। আর আরেফিন সিএনজি থেকে নেমে তৃণার পিছনে দৌড়াতে থাকে।

★★★
খান পরিবারের সবাই লাঞ্চ করতে একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়েছে। সাঈদা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন। আর বাকিরা সবাই আয়েশ করে খেয়ে চলেছেন।

সবাই যখন খেতে ব্যস্ত তখনই হঠাৎ ছুটতে ছুটতে বাড়ির ভেতরে চলে আসে তৃণা। যাকে দেখামাত্র উপস্থিত সবার ভ্রু বিরক্তিতে কুচকে যায়। ঈশান রাগী স্বরে বলে ওঠে,
“তুই কেন এসেছিস আবার?”

তৃণা হাফাতে হাফাতে বলে,
“এমনি এমনি আসিনি। অনেক মুখোশ খুলতে এসেছি।”

তৌফিক খান খাওয়া থামিয়ে থমথমে গলায় বললেন,
“এসবের মানে কি?”

তৃণা পিছনে তাকায়। কাঙখিত ব্যক্তিটিকে দেখামাত্র চোয়াল চওড়া করে হাসে। ওদিকে তৃণার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টি ফেলে সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। সে জানে এই বাড়িতে এখন কেউ তৃণাকে এতো সহজে বিশ্বাস করবে না। তাই আরেফিন ধীরে পায়ে ভিতরে আসতে আসতে নিজের মতো করে একটা কাহিনি বানিয়ে নেয়। ভিতরে এসে সেই কাহিনি উপস্থাপন করারও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। এমন সময় তৃণা বলে ওঠে,
“সেদিন আমি তোমাদের সবাইকে বলেছিলাম আমি কোন দোষ করিনি আমাকে ফাসানো হয়েছে। আজ আমি আমার সেই কথার প্রমাণ দিতে এসেছি।”

ঈশান তৃণার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপাত্মক সুরে বলে,
“আরে কি নতুন নাটক সাজিয়েছিস তুই বল? এতদিন নাটক করেও কি তোর শান্তি হয়নি।”

এই সুযোগটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে আরেফিন। ঈশানের তালে তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, ঈশান ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন। জানেন আমি ওকে আটকাতে চেয়েও পারিনি। জানিনা আবার কোন নতুন নাটক উপস্থাপন করতে এসেছে আপনাদের সামনে।”

প্রেরণা বেগমও মুরগীর রানে কামড় দিতে দিতে আগুনে ঘি ঢালার জন্য বলে ওঠেন,
“এই মেয়ের নাটকের যে শেষ কবে হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।”

তৃণা ভীষণ চওড়া একটা হাসি দিয়ে বলে,
“কার নাটক কখন শেষ হবে সেটা তো সময়ই বলে দেবে প্রেরণা বেগম। এমনও তো হতে পারে যে আজ সবার সামনে আপনার মুখোশই না খুলে যায়।”

তৃণার কথা শুনে ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পেয়ে গেলেন প্রেরণা বেগম। তবে সেই ভয়কে দমিয়ে রেখে বললেন,
“এই মেয়ে এই,তোমার সাহস তো মন্দ নয়। তুমি আমার নাম মুখে নিচ্ছ।”

“সত্যি বলতে আপনার নাম মুখে নিতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আপনার মতো নিকৃষ্ট মহিলাকে তো..”

কথা সম্পূর্ণ করতে পারল না তৃণা। এর মধ্যেই তৌফিক খান খাবার টেবিলে জোরে শব্দ করে বলে উঠলেন,
“ব্যস, অনেক হয়েছে। আমার সামনে আমার স্ত্রীকে একদম অপমান করবে না।”

“তোমার গুণধর স্ত্রীর কাণ্ড আগে শোনো আব্বু। তারপর নাহয় যা মন্তব্য করার করো।”

তৃণা আরো একবার দরজার দিকে তাকায়। হ্যাঁ, ওনারা এসে গেছেন। এতক্ষণ এইজন্যই নানাভাবে কথা বাড়াচ্ছিল তৃণা। সিএনজিতে করে আসার সময়ই সিএনজিওয়ালার থেকে তার ফোনটা দিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিল। অতঃপর তাদেরকে আসতে বলেছিল তাদের বাড়ির ঠিকানায়।

পুলিশকে আসতে দেখেই তৃণা বলে ওঠে,
“এবার আপনাদের সব কুকর্ম সামনে আসার পালা।”

কথাটা বলেই নিজের আঁচলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা একটি ক্যামেরা বের করে তৃণা। ক্যামেরাটার দিকে তাকাতেই আরেফিনের চক্ষু চড়কগাছ হয়। এটা তো তারই ক্যামেরা। শখবশত ফটোগ্রাফির নেশা আছে আরেফিনের। তাই এই ক্যামেরাটা সবসময় তার রুমেই থাকে।

তৃণা আরেফিনের ভোতা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি ভাবছ তুমি? আমি কিভাবে এটা পেলাম? আমাকে এতোটাও বোকা ভেবো না। তোমার রুমে যখন তুমি আমায় বন্দি করে রেখেছিলে তখনই আমি এটা পেয়েছি৷ আর তোমার আড়ালে ক্যমেরাটা লুকিয়ে রেখে সেদিন আমাদের রুমে তোমার সব স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেছি। আর আজ তোমার ফুফুর সাথে সব কথোপকথনও আমি তুলেছি এখানে।”

আরেফিন ও প্রেরণা বেগম দুজনেই ভয়ে ঘামতে থাকে। ক্যামেরা চালু হতেই তাদের সব কুকীর্তি একে একে সকলের সামনে আসে।

তৃণা সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি প্রেরণা বেগমকে এটাও বলতে শুনেছি যে ওনার দুই প্রাক্তন স্বামীকে উনি নিজের হাতেই হ*ত্যা করেছেন।আপনার ওনাকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব সত্য জানতে পারবেন।”

তৌফিক খানসহ খান বাড়ির সবাই পুরো থ বনে গেছে। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। ষড়যন্ত্রের জাল যে এত গভীর ছিল সেটা কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারে নি।

তৌফিক খান ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন প্রেরণা বেগমের দিকে। শক্ত হাতে থা’প্পর বসিয়ে দিলেন তার গালে। ক্রোধে কাপতে কাপতে বললেন,
“তুমি এতটা নীচ আমি ভাবতেও পারিনি। তোমার অসহায় অবস্থার কথা ভেবে আমি তোমায় বিয়ে করেছিলাম। আর আজ তুমি তার এই প্রতিদান দিলে? আমার মেয়েদের ক্ষতি করতে চেয়েছ। এমনকি আমার বন্ধুর খু*নিও তুমি।”

কজন মহিলা পুলিশ এসেছিল যারা প্রেরণা বেগমের কাছে এসে তাকে গ্রেফতার করেন। আরেফিনকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তৃণা সব প্রমাণও পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পুলিশ তাদের দুজনকে নিয়ে গেলে সবাই তৃণার দিকে তাকায়। এই মেয়েটাকে তো সবাই অবিশ্বাস করেছিল অথচ মেয়েটা নিজেই ষড়যন্ত্রের স্বীকার৷ সংকোচে কেউ তার সাথে কথা বলতে পারছিল না।

তৃষ্ণা সর্বপ্রথম বলে,
“আমাকে ক্ষমা করে দিস তৃণা। তোকে আমি বিশ্বাস করিনি।”

ঈশানও ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সংকোচ কাটিয়ে বলে,
“আমি তোমাদের ক্ষমা করতে যাব কেন বলো? তোমরা তো ভুল কিছু করোনি। যা করেছ তা পরিস্থিতির সাপেক্ষে। দেখতে গেলেও আমিও পরিস্থিতির সাপেক্ষেই অনেক কিছু করেছি। তাই আমার দোষটাই বেশি। আমিই তোমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”

তৌফিক খান এবার তৃণার কাছে এসে নিজের মেয়ে বুকে জড়িয়ে বললেন,
“যা হবার হয়ে গেছে। অতীত তো বদলানো সুন্দর হয়। তবে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব আমাদের ভবিষ্যতট যেন ভালো হয়।”

★★★
১ বছর পর,
সময়ের স্রোত যেমন এগিয়ে গেছে সেভাবে সকলের জীবনও এগিয়ে গেছে। সময় অনেক কিছুই পালটে দেয়।

আজ তৃষ্ণা ও ঈশানের বিয়ে! হ্যাঁ তাদের এই বিয়েটা হতে বেশ সময় লেগে গেল। কারণ দুজনের একে অপরকে বুঝতে জানতে যে কিছুটা সময় লাগত। অবশেষে সকল দ্বিধা এড়িয়ে আজ তারা দুজনে এক সাথে বাধা পড়তে যাচ্ছে।

নিজের ৯ মাসের ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিয়ের সব কাজে সেভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না তৃণা। এই নিয়ে যদিও তার আফসোসের শেষ নেই। বারবার বলছিল,
“ইশ আমি যদি আপুর বিয়েতে সবার সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারতাম।”

অন্য কোন কাজ করতে না পারলেও তৃষ্ণা বিয়ের আসরে যাওয়ার পূর্বে তার মাথায় ঘোমটা তৃণাই পড়িয়ে দেয়। আয়নার সামনে তৃষ্ণাকে নিয়ে গিয়ে বলে,
“দেখ আপি বধূবেশে তোকে কত ভালো লাগছে।”

“এর আগেরবারও ভালো লাগছিল।”

অতীতের কথা মনে পড়তেই তৃণার মন বিষিয়ে যায়। দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে অন্তর দেখে৷ তৃষ্ণা তৃণার ভাব বুঝতে পেরে বলে,
“তুই আর অতীতে ডুব দিস নাতো!”

“চাইলেও কি ভোলা যায় আপু? গতবার আমার স্বার্থপরতার জন্য তোমার আর ঈশান ভাইয়ের মিল হয়নি৷”

“সেখানে তো বলতে গেলে তোর তেমন দোষ ছিলনা। তোকে ফাসানো হয়েছিল৷ তোর সামনে পরিস্থিতিটাকে এমনভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছিল যে তুই বাধ্য হয়েছিলি এমন করতে।”

“তুমি যতো যা-ই বলো তাতে আমার ভুলটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। আমি একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই..”

“উফ, তুই ও না। বাদ দে এসব। যা হবার হয়ে গেছে। প্রেরণা বেগম, আরেফিন ওরা নিজের অন্যায়ের শাস্তিও পেয়ে গেছে। এখন ওরা জেলের ঘানি টানছে।”

“তা ঠিক বলেছিস।”

দুজনের আলাপ বাড়তে পারত কিন্তু এরমধ্যে সাঈদা বেগম এসে পড়লেন তাদের মাঝে। তাড়া দিয়ে বললেন,
“তৃষ্ণা চল তাড়াতাড়ি। সবাই অপেক্ষা করছে তো। কাজিও এসে গেছে।”

তৃণা নিজের বড় বোনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি আজ নতুন জীবনে পদার্পন করতে চলেছ। আমার শুভেচ্ছা নিও।”

তৃষ্ণা মুখটা গম্ভীর করে নিয়ে বলল,
“কালকের ফ্লাইটে কি তুই সত্যি কানাড চলে যাবি?”

“হ্যাঁ,অবশ্যই। বড় মামা তো ব্যবস্থা করেই রেখেছেন। ওনারা তো ওখানেই থাকেন। আমি যখন বললাম কানাডা থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জনএর জন্য স্কলারশিপ পেয়েছি তখন ওখানে গিয়ে থাকতে বলল।”

“কিন্তু এইভাবে একটা বাচ্চাকে নিয়ে. ”

“তুমি চিন্তা করো না আপু আমি ঠিক সামলে নেব।”

তৃষ্ণা আর কথা বাড়ালো না। তৃণার দিকে একপলক তাকিয়ে চলে যেতে লাগল। কোথাও না কোথাও সেও জানে তৃণা হঠাৎ কেন এভাবে চলে যেতে চাচ্ছে। অস্বস্তি আর কষ্টের জন্যই সে এমনটা করছে।

হাজার হোক ঈশানকে তো সে বড্ড ভালোবাসত। ঈশানের সাথে বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু…ঈশান কখনোই তৃণার হয়নি। এখন সেই ঈশানের সাথেই নিজের বড় বোনের সুখে সংসার সে কিভাবে সহ্য করবে? এই গোপন কথাটা তৃষ্ণাও বোঝে। রুম থেকে যেতে যেতে তৃষ্ণা একবার পিছু ফিরে বলল,
“তুই কি আজীবনের জন্যই কানাডায় চলে যাবি?”

“যদি ওখানে সেটেল্ড হই তাহলে তাই। তবে গ্যারান্টি নেই।”

“আবার ফিরবি তো?”

“হয়তো..”

তৃণার কথার ধরণই বুঝিয়ে দিচ্ছে একবার কানাডায় চলে গেলে সে আর ফিরবে না। তৃষ্ণা তৃণার দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে বলল,
“ভালো থাকিস তাহলে।”

তৃণা স্থির রইল। তৃষ্ণা চলে যাওয়ার পর তৃণা রুমের মধ্যেই বসে রইল। তার পক্ষে যে এই বিয়েটা স্বচক্ষে দেখা সম্ভব নয়। হ্যাঁ, সে নিজেই তৃষ্ণাকে একটা বছর ধরে বুঝিয়েছে তার ঈশানকে বিয়ে করা উচিৎ। নিজেও চেয়েছে যে ঈশানের সাথে তৃষ্ণার বিয়ে হোক। কিন্তু আজ কেন জানি তার বুকের বা পাশে অসম্ভব পীড়া অনুভূত হচ্ছে। অজান্তেই চোখ থেকে একফোটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ল। তার ছোট বাচ্চার হাতে জলের ফোটা পড়তেই তার হাত নড়ে উঠল। তৃণা তৎক্ষণাৎ নিজের চোখের অশ্রু মুছে নেয়। মেকি হেসে বলে,
“তুই তো আমার সব রে! তোকে নিয়েই আমার বাকি জীবন চলে যাবে। আমার আর কাউকে লাগবে না।”

তৃণা নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাইরে চলে আসে। বিয়ের আসরে গিয়ে দেখে সবাই কোলাকুলি করছে। মানে বিয়েটা হয়েছে। ঈশান ও তৃষ্ণা দুজনের মুখেই হাসি শোভা পাচ্ছে। তাদের খুশি দেখে তৃণারও ভালো লাগে। অবশেষে সবকিছু ঠিক হলো।

কিন্তু ঈশান!! তার প্রথম প্রেম,প্রথম অনুভূতি। ঈশানের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় তৃণা। মনে মনে নিজেকে শাসিয়ে বলে,
“মন তুই আর বেহায়া হোস না।”

তৃণা একা বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঐ চাঁদ যেমন নিঃসঙ্গ আমিও তেমনই।”

অতঃপর মনের সব দুঃখ ঢেলে গেয়ে ওঠে,
“দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

তারে ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম আর পেলাম না
ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলেম আর পেলাম না

দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগল হয়ে,
সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরিতেছি পাগল হয়ে
মরমে জ্বলছে আগুন আর নেভে না।

তারে আমার আমার মনে করি,
আমার হয়ে আর হইলো না
❝আমার আমার মনে করি,
আমার হয়ে আর হইলো না❞
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা

সমাপ্ত ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে