#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ঈশান খু্শি মনে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু আগেই আরেফিন এসে ডিভোর্স পেপারটা দিয়ে গেছে। ঈশান দেখল সেখানে তৃণার সই রয়েছে। এখন অনেকটা শান্তি লাগছে তার।
এরইমাঝে তৃষ্ণা বিষন্ন মনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে থাকে। যত যাই হোক না কেন তৃণা তো তার নিজেরই বোন। তাই না চাইতেও তৃণার জন্য তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। যদিও তৃষ্ণার মনে হচ্ছে তৃণা যা করেছে তাতে সে এটারই যোগ্য কিন্তু তবুও কোথাও একটা খারাপ লাগা থেকেই যায়।
তৃষ্ণাকে দেখামাত্রই ঈশানের মুখে হাসির রেখা দেয় দেয়। ঈশান তৃষ্ণার মুখোমুখি হয়ে বলে,
“তৃণা ডিভোর্স পেপারে সই করে দিয়েছে তৃষ্ণা।”
তৃষ্ণা কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বলে,
“ও কিভাবে এত সহজে সই করে দিল?”
“সই না করে কি ওর আর অন্য কোন উপায় ছিল নাকি? ওর পাপ সবার সামনে এসেই গেছে।”
তৃষ্ণা কিছুই বলল না। শুধু করুণ দৃষ্টিতে ডিভোর্স পেপারের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে নিলো। এমন সময় ঈশান পিছু ডেকে বলল,
“তৃষ্ণা শোন, এখন যখন প্রমাণিত হয়েই গেছে যে আমি নির্দোষ এবং তৃণার সাথে আমার ডিভোর্সও হয়ে গেছে তখন নিশ্চয়ই এখন আমাদের বিয়েতে আর কোন বাধা নেই।”
ঈশানের কথায় তৃষ্ণা থতমত খেয়ে যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চাই না ঈশান ভাই। আমার এখন এসব ভাবার জন্য কিছুটা সময় চাই।”
ঈশান আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু তখনই তার মা সাঈদা বেগম চলে এলেন৷ তিনি এসেই বলতে লাগলেন,
“তোর সাথে আমি তৃষ্ণার বিয়ে দেবো না ঈশান।”
সাঈদা বেগমের কথা শুনে ঈশান বলে উঠল,
“এসব তুমি কি বলছ আম্মু?”
“আমি একদম ঠিক কথাই বলছি।”
“কিন্তু কেন আম্মু? তৃষ্ণাকে নিয়ে তোমার কি সমস্যা?”
“সত্যি বলতে, তৃষ্ণাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমাজ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে ঈশান। সেটাও তো আমাদের ভাবতে হবে। তোর সাথে তৃণার বিয়ে হয়েছিল আবার ডিভোর্সও হয়েছিল৷ এখন আবার তুই তারই বড় বোনকে বিয়ে করবি। মানুষ তো আর আমাদের বাড়ির সব খবর জানে না। তারা শুধু জানে তোর সাথে তৃণার বিয়ে হয়েছিল। এখন যদি আবার তুই তৃষ্ণাকে বিয়ে করিস তখন লোকে তোদের নিয়ে নানা কুৎসা রটাবে। বলবে এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে তৃষ্ণাকে এসব নিয়ে অনেক কথা শুনতে হবে। সবাই তাকে বলবে সে নিজের বোনের সংসার নষ্ট করেছে।”
ঈশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তৌফিক খান এসে বললেন,
“সমাজের লোকের কথা এত পরোয়া করে লাভ নেই ভাবি। তারা তো এমন অনেক কথাই বলে। সেই জন্য তো আমরা আমাদের ছেলে মেয়ের কোন খারাপ চাইতে পারি না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আগামী মাসের শুরুতেই আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে ঈশানের সাথে তৃষ্ণার বিয়ে দেব। প্রয়োজন হলে তৃণার কুকর্মের কথাও সবাইকে জানাব।”
“কিন্তু এতে তো আমাদের পরিবারের বদনাম হবে।”
“যা হয় হোক। সেসব পড়ে দেখা যাবে। একবার এই বদনামের কথা ভাবতে গিয়েই আপনি আর ভাইয়া মিলে অনেক ভুল করেছিলেন ভাবি। আপনারা যদি আগেই আমাদের সব কিছু জানাতেন তাহলে পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন হতো৷ সে যাইহোক এখন আর অতীত নিয়ে ভাবতে চাই না৷ সামনে যেন সব ঠিকঠাক হয় সেটাই আমার চাওয়া।”
★★★
“কিচ্ছু ঠিকঠাক হবে না। তুই শুধু ঐ তৃণাকে সামলা। এই তৃষ্ণাকে আমি সামলে নেব।”
ফোনে আরেফিনের উদ্দ্যেশ্যে কথা গুলো বলতে লাগল প্রেরণা বেগম। প্রতিত্তোরে আরেফিন বলল,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না ফুপি। আমি এদিকটা সামলে নিতে পারব। তুমি শুধু যেভাবেই হোক ঐ তৃষ্ণা নামক পথের কাঁটাকে দূর করো।”
“ওকে দূর করতে আমার দু মিনিটও সময় লাগবে না। তৃণাকে তো তৌফিক খান এমনিতেই ত্যাগ করেছে এখন যদি তৃষ্ণাকে দূর কথা যায় তাহলে অটোমেটিকলি ওর সব সম্পত্তির উপর একক আধিপত্য হবে আমার। আমি তো আর এমনি এমনি তৌফিক খানকে ফাসিয়ে বিয়ে করিনি৷ তার সব সম্পত্তি নিজের দখলে করার জন্যই করেছি।”
“কিন্তু আমি যে তোমার সাথে মিলে এত কিছু করলাম এর বিনিময়ে আমি কি পাবো ফুপি?”
“আরে পাগল। আমার যা কিছু আছে সেসব তো তোরই। আমার নিজের তো কোন ছেলে মেয়ে নেই। তাই তো তোর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঐ অজপাড়া গ্রাম থেকে তোকে এই শহরে নিয়ে এসে রেখেছি। আমার পর তুই তো এসবকিছুর একছত্র অধিপতি হবি।”
“সেটা তো তুমি ঠিকই বলেছ ফুপি। ও হ্যাঁ ভালো কথা। ঐ তৃষ্ণার সাথে তুমি কি করতে চাও? ওকেও কি তৃণার মতো কোনভাবে ফাসাবে নাকি?”
“আরে না রে পাগল। এমনটা করা সম্ভব হবে না। তৃষ্ণাকে এমনিতে যেমনই মনে হোক ও কিন্তু বেশ বুঝেশুনে চলে। ওকে তৃণার মতো ফাসানো যাবে না।”
“তাহলে ওর সাথে কি করবে?”
প্রেরণা বেগম শয়তানি হাসি হেসে বললেন,
“জীবনে তো আর কম পাপ করিনি। সেই ১৬ বছর বয়সে আমার মা-বাপ গ্রামের এক আধবুড়ো লোকের সাথে আমার বিয়ে দেয়। কিন্তু আমিও কম না। একদিন সুযোগ বুঝে ঐ বুড়োকে বালিশ চাপা দিয়ে মে*রে ফেলি। এরপর শহরে আসি৷ ছোটবেলা থেকে বেশ সুন্দরী ছিলাম। তাই খুব সহজেই বিভিন্ন পুরুষের মন গলাতে পারি। কয়েক বছর পর দেখা হলো আব্দুল করিমের সাথে। ব্যাটা বেশ পয়সাওয়ালা ছিল। তাই ওর গলায় ঝুলে পড়লাম। ২০ বছর বেশ ভালোভাবেই সংসার করলাম। তারপর হঠাৎ ওর মাথায় ভূত চেপে বসলো। আমাদের যেহেতু কোন সন্তান নেই তাই সব সম্পত্তি অনাথ আশ্রমে দান করতে চাইল। কিন্তু আমি থাকতে তো সেটা হতে দিতে পারি না। তাই সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়ে ওটাকেও টপকে দিলাম। আর সবাই ভাবল স্বাভাবিক মৃত্যু। এরপর তো ওর ধনী বন্ধু তৌফিক খানের গলায় ঝুললাম। তো এখন আমি ভাবছি জীবনে দুটো খু*ন যখন করলামই তখন আরেকটা করতে তো কোন অসুবিধা নেই।”
আরেফিন ক্রুর হেসে বলল,
“তার মানে তুমি ঐ তৃষ্ণাকেও খু*ন করবে।”
আড়াল থেকে সব কথোপকথন শুনে নেয় তৃণা। আরেফিন ও প্রেরণা বেগমের ভয়ানক পরিকল্পনা শুনে তার কলিজা কেপে ওঠে। সে দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। কাপতে কাপতে বলে,
“আমাকে কিছু করতেই হবে। আপুকে এই বিপদের হাত থেকে যে করেই হোক রক্ষা করতেই হবে আমায়।”
তৃণা আশেপাশে তাকায়। একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার কথা ভাবে। কিন্তু আরেফিন দরজায় তালা মে*রে রেখেছে। তাই তৃণা ভাবে তৃষ্ণাকে ফোন করে তার বিপদের ব্যাপারে সচেতন করবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
তৃণা আসার সময় তার ফোন সাথে করে আনতে পারে নি। সেইজন্য আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে আরেফিনের বাড়ির টেলিফোনের কাছে যায়। অতঃপর তৃষ্ণার নাম্বার ডালায় করে কল করতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যে তৃষ্ণা ফোনটা রিসিভ করে বলে,
“হ্যালো, কে বলছেন?”
“আপু আমি তৃণা বলছি।”
“কেন ফোন করেছিস তুই? তোকে না বলেছি আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ না রাখতে।”
“আপু প্লিজ আমার কথাটা শোনো। তোমার সামনে অনেক বড় বিপদ। আরেফিন আর প্রেরণা বেগম মিলে..”
“এটা আবার তোর কোন নতুন নাটক তৃণা।”
“আমি কোন নাটক করছি না আপু। আমি সত্যি বলছি৷ আমার কথাটা..”
“চুপ করে থাক। আমি তোর কোন কথা শুনব না। ফোন রাখ বলছি।”
বলেই তৃষ্ণা ফোনটা কে’টে দেয়। তৃণার প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। এদিকে তৃণা ভীষণ অস্থির হয়ে যায়৷ যে করেই হোক আগত বিপদ থেকে তার তৃষ্ণাকে উদ্ধার করতেই হবে। তাই সে আবার তৃষ্ণাকে ফোন করতে উদ্যত হয়। এমন সময় আরেফিন সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তৃণার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,
“কি করছ তুমি এখানে?”
ভয়ে তৃণার হাত থেকে টেলিফোন পড়ে যায়। আরেফিনের দিকে তাকাতেই সে আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। আরেফিন রাগে ফোসফাস করতে করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তৃণা খুব সহজেই বুঝতে পারল আজ তার সাথে খুব ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨