#আমার_হয়েও_আর_হইলোনা
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
১.
“এই বিয়ে হতে পারে না। কারণ আমি ঈশান ভাইয়ের বাচ্চার মা হতে চলেছি।”
নিজের ছোট বোন তৃণার মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল তৃষ্ণা। আজকে তার চাচাতো ভাই ঈশানের সাথে পারিবারিক ভাবে তার বিয়ে হওয়ার কথা। অথচ এমন সময় তার আপন বোন এসে এমন কথা বলছে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে গেছেন। তৃষ্ণা, তৃণার বাবা তৌফিক খান রাগী গলায় বলে ওঠেন,
“এসব কি বাজে কথা বলছ তুমি তৃণা? আজ তোমার বড় বোনের সাথে ঈশানের বিয়ে হবে আর তুমি এখানে এসে এসব বলছি।”
তৃণা দ্রুত শ্বাস নিতে থাকে। সে জানে আজ সে যেটা করছে তার জন্য তাকে অনেক সাহসের সঞ্চার করতে হবে নিজের মনে। এরপর থেকে হয়তো অনেক কিছু সহ্যও করতে হবে। তবুও সে দমলো না। আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠল,
“আমি যেটা বলছি সেটা শতভাগ সত্য। বিশ্বাস না হলে এই প্রেগন্যান্সি রিপোর্টটা তোমরা দেখতে পারো।”
তৌফিক খান ছুটে এসে রিপোর্টটা হাতে নিলেন। সাথে সাথেই ভীষণ ভাবে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। রাগে ক্ষোভে তৃণার গালে ঠা’স করে থা’প্পর বসিয়ে দিলেন। চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“এই দিন দেখার জন্য কি তোকে বড় করেছিলাম?”
ঈশানের বাবা রুহুল খান আর মা সাঈদা বেগমও স্তব্ধ হয়ে গেছেন। বিস্ময়তা কা’টিয়ে উঠে ঈশান বলে উঠল,
“এসব তুই কি বলছিস তৃণা? আমার নামে এরকম মিথ্যা অপবাদ কেন দিচ্ছিস তুই?”
“আমি যে মিথ্যা বলছি না সেটা তুমিও খুব ভালো করে জানো ঈশান ভাই। এই বাচ্চাটা তো তোমারই।”
“স্টপ দিস ননসেন্স। আর একটা বাজে কথা বললে আমি কিন্তু তোকে খু*ন করে দেব।”
“এখন তো আমাকে খু*ন করতে চাইবেই। আমাকে ভো*গ করা হয়ে গেছে কিনা। তাই তো এখন আমার বড় বোনকে বিয়ে করতে চাইছ।”
ঈশানের মাথা রাগে ফে’টে যাচ্ছিল। ইচ্ছা করছিল তৃণার গ’লা টিপে ধরতে। সে কিভাবে তার নামে এমন মিথ্যা অভিযোগ দিতে পারল?
এরমধ্যে তৃষ্ণা তৃণার সৎমা প্রেরণা বেগম মুখ খুললেন। তিনি বললেন,
“আমি তৃণাকে চিনি। ও মিথ্যা বলার মেয়েই নয়। তাছাড়া কোন মেয়ে নিজের ব্যাপারে এমন মিথ্যা বলে?”
ঈশান রাগে ফুসে উঠে বলে,
“সেটা আপনার মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন। কোথায় কোন ছেলের সাথে রা’ত কা’টিয়ে এখন আমার ঘাড়ে দো’ষ চাপাচ্ছে।”
এতক্ষণ চুপ থাকলেও তৃষ্ণার ধৈর্যের বাধ এবার ভেঙে যায়। ঈশানের কথা শুনে তৃষ্ণা চেচিয়ে বলে ওঠে,
“আমার বোনের নামে আর একটাও বাজে কথা বলবে না। আমার ভোলাভালা বোনটাকে ব্যবহার করে এখন ওকেই দোষ দিচ্ছ তুমি!”
“তৃষ্ণা তুই আমায় বিশ্বাস কর!”
“কিভাবে বিশ্বাস করবো তোমায়? আমি তো অনেক দিন থেকেই তোমাদের ঘনিষ্ঠতা লক্ষ্য করছি। ছোট থেকেই তো তোমাদের অনেক ভাব। বড় হওয়ার সাথে সাথে মেলামেশা আরো বাড়ে। তবু আমি এটা নিয়ে খারাপ কিছু ভাবিনি। ভেবেছি সাধারণ কাজিন হিসেবেই তোমরা মেলামেশা করো। কিন্তু আজ আমার সামনে সবটা পানির মতো পরিস্কার। তোমরা দুজন মিলে এভাবে আমায় ঠকাতে পারলে? ঈশান ভাইয়া তুমি আমার বোনের সাথে এরকম করে আবার আমার জীবনটাও ন’ষ্ট করতে চাইছিলে!”
“তুই কেন বুঝতে চাইছিস না তৃষ্ণা যে তৃণা মিথ্যা বলছে!”
তৃষ্ণা উঠে গিয়ে তৃণার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তৃণার হাত থেকে প্রেগন্যান্সির রিপোর্টটা নিয়ে বলে,
“তাহলে এই রিপোর্টটা কি মিথ্যা?”
“হ্যাঁ, এইসব মিথ্যা। আমার আর তৃণার মধ্যে এরকম কিছু হয়নি কখনো।”
তৃণা অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে, “মিথ্যা কেন বলছ ঈশান ভাই? সেদিন রাতে তো তুমি আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলে, যেদিন বাড়ির সবাই দাওয়াত খেতে গেছিল। তোমার মনে নেই সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। যার কারণে কেউ বাড়ি ফিরতে পারে নি। পুরো বাড়িতে শুধু তুমি আর আমি…”
“তুই নিজের মুখ বন্ধ কর নয়তো আমি…”
তৃষ্ণা তৃণাকে আগলে দাঁড়ায়। ঈশানের চোখে চোখ রেখে বলে,
“তুমি আমার বোনের সাথে যা অন্যায় করার তা করেই ফেলেছ। এখন এভাবে দায় এড়াতে পারবে না। তোমাকে ওর দায়িত্ব নিতেই হবে।”
“মানে?”
“তোমাকে আজ এই মুহুর্তে তৃণাকে বিয়ে করতে হবে।”
“অসম্ভব!”
“তৃণার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে এসব মনে ছিলনা? এখন এভাবে বললে তো তোমায় ছেড়ে দেব না।”
তোফিক খান কি বলবেন কিছু বুঝতে পারছিলেন না। প্রেরণা বেগম সাঈদা বেগমের কাছে গিয়ে বলেন,
“ভাবি তুমি নিজের ছেলেকে বোঝাও! ও যদি এখন তৃণাকে বিয়ে না করে তাহলে বিষয়টা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছিল জন্য কেউ জানে না। কিন্তু সত্য তো কোনদিন চাপা থাকে না। যদি কথাটা ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদেরই দূর্নাম হবে তাছাড়া পুলিশ কেইসও হতে পারে।”
সাঈদা বেগম এমনিতেই অনেক ভীতু প্রকৃতির মানুষ। প্রেরণা বেগমের কথায় তিনি আরো বেশি ভয় পেয়ে যান। তাই ঈশানের কাছে গিয়ে বলেন,
“তুই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যা ঈশান।”
” এসব তুমি কি বলছ আম্মু? অন্তত তুমি এমন বলো না।”
রুহুল খান নিজের স্ত্রীর তালে তাল মিলিয়ে বলেন,
“তোমার আম্মু একদম ঠিক বলছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তোমাকে এখন তৃণাকেই বিয়ে করতে হবে। আর এমনিতেও তৃষ্ণা আর তোমাকে বিয়ে করবে না।”
“কিন্তু আমি তৃণাকে না তৃষ্ণাকে পছন্দ করি।”
তৃষ্ণা তৃণার কাধে হাত রেখে বলে,
“আমার বোনের সাথে এত বড় অন্যায় করে এখন তুমি এসব কথা বলতে পারো না। তুমি ওকে বিয়ে করতে বাধ্য।”
ঈশান আর সহ্য করতে পারছিল না। সে বলে,
“আমি তোমাদের কারো কথা শুনতে বাধ্য নই। আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। এই মিথ্যাবাদী মেয়ের ফাঁদে আমি অন্তত পড়ব না।”
তৃষ্ণা ঈশানের পথ আগলে দাঁড়ায়। ঈশানকে টানতে টানতে বিয়ের আসরে নিয়ে গিয়ে বসায়। তৃণাকেও তার পাশে বসিয়ে দেয়। অতঃপর কাজিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন। সব ঠিক থাকবে। শুধু পাত্রীর যায়গায় তৃষ্ণা খান নাম বদলে তৃণা খান রাখুন।”
ঈশান কিছুতেই এই বিয়ে করবে না। কিন্তু পরিবারের সবাই এই বিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে। তাদের ধারণা পরিবারের সম্মান রক্ষায় এখন এই বিয়েটা হওয়া আবশ্যক। ঈশান যখন কিছুতেই কবুল বলল না সেটা দেখে প্রেরণা বেগম সাঈদা বেগম কাছে গিয়ে বললেন,
“কিছু একটা করো ভাবি। তোমার ছেলের ভালোর জন্য এখন তোমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে সে এই বিয়ে করতে বাধ্য হয়।”
সাঈদা বেগম দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে চা’কু নিয়ে চলে এলেন। অতঃপর ঈশানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
“তুই যদি কবুল না বলিস তাহলে কিন্তু আমি এই চা’কু দিয়ে নিজের হাত কে’টে ফেলব।”
“আম্মু…তুমি এমন করো না৷ ঠিক আছে, আমি কবুল বলছি।”
ঈশানের কথা শুনে প্রেরণা বেগম ও তৃণার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। পরিবারের বাকি সবাই স্বস্তি বোধ করেন। তৃষ্ণার মধ্যে কোন অনুভূতি কাজ করছিল না৷ সে না খুশি হতে পারছে আর না তো দুঃখী। ঈশানের সাথে যখন তার বিয়ের কথা ওঠে তখনো তার এমন অনুভূতি হয়েছিল। এমন না যে, সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে যাকে ভাইয়ের নজরে দেখেছে তাকে বিয়ে করার জন্য খুব একটা মত ছিল না তার। তবে তৃষ্ণা পরিবারের বাধ্য মেয়ে। তাই সকলের সিদ্ধান্ত চুপচাপ মেনে নিয়েছিল। কিন্তু আজ যে এমন কিছু ঘটবে সেটা সে ভাবতে পারেনি।
এদিকে ঈশান কবুল বলার আগে একবার শেষবারের মতো তৃষ্ণার দিকে তাকায়। যখন থেকে ভালোবাসা বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই সে ভালোবাসে তৃষ্ণাকে। পরিবারের সবাইকে বলে রাজি করিয়েছিল মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য। অথচ আজ শেষ সময়ে এসে তীরে এসে তরী ডুবল। তৃষ্ণা তার না পাওয়ার তালিকাতেই থেকে গেল। মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঈশান বলে উঠল,”কবুল।”
তৃণা ও ঈশানের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨