আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-০৪

0
791

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব৪
#Raiha_Zubair_Ripte

বিছানায় এনাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ফারাহ্। ফারাহ্ সম্পর্কে এনার ভাবি। আরাভের বড় ভাই আমানের স্ত্রী। ফারাহ্ কানাডার মেয়ে। দেখতে বিদেশি লাগলেও আচারনে একদম বাঙালির মতো। ফারাহ্-র মা কানাডিয়ান হলেও ফারাহ্-র বাবা একজন বাঙালিয়ান। সেই সূত্রে ফারাহ্ তার বাবার মতোই হয়েছে। ফারাহ্ আর আমানের বিয়ে হয়েছে সাত বছর হবে। তারা একে ওপরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে। প্রথম দিকে ফারাহ্-র মায়ের সমস্যা থাকলেও মেয়ের খুশির জন্য তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়। সবাই তো আর অ্যাডেলা না যে সব সময় শুধু নিজের মতামত নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবে। এনা ফারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ফারাহ্ ভাবি কখন আসলে তুমি?

ফারাহ্ এনাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে বলে,,

” এই তো কেবলই আসলাম তোমার ভাইয়া কে রেখে এসেছি। সে তার বিজনেস মিটিং নিয়ে পড়ে থাকুক আমি পারবো না। আমার এনা কিউটি এসেছে আর আমি মিটিং নিয়ে পড়ে থাকবো ইম্পসিবল। আমি তো আর বিজনেসে হাত লাগাচ্ছি না। সারাটাদিন তোমার সাথে ঘুরবো সময় কাটাবো।

এনা বিছানা থেকে উঠে ফারাহ্ কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,

” ভাবি তুমি এতো সুন্দর করে বাংলা কিভাবে বলতে পারছো? আগে তো এতো সুন্দর করে বলতে পারতে না!

ফারাহ্ বিছানা থেকে উঠে এনার নাক চেপে বলে,,

” টানা এক বছর ধরে প্রাকটিস করে শিখেছি বুঝেছো। জানো তো বাংলা ভাষায় কিছু একটা আছে। এই ভাষায় কি সুন্দর মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। যদিও ইংলিশ ও কোনো অংশে কম না তবুও বাংলায় কথা বললে নিজেকে একদম খাঁটি বাঙালিয়ান লাগে।

” খালাম্মা কিছু বলে না যখন তার সামনে বাংলায় কথা বলো?

” আগে মা বিরক্ত হতো তখন তো বাংলা ভাষার কিছু বুঝতো না। এখন মা ও হালকা পাতলা বলতে পারে। আর হ্যাঁ শুনো আমার মা’কে এখন খালাম্মা ডাকলেও আমার মা খেপবে না।

এনা ফারাহ্ কে বিছানায় বসিয়ে বলে,,

” কেনো কেনো আগে তো খালাম্মা ডাকলে তোমার মা রেগে রণমুর্তি রূপ ধারন করতো।

” কেনো সেটা গেলেই বুঝতে পারবা। চলো আজ ঘুরতে যাই আরাভ তো বাসায়ই আছে।

” আজ তো আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা। আরাভ ভাই ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে।

” সমস্যা নেই ওখান থেকে তোমায় ভর্তি করিয়ে তার পর না হয় আমরা ঘুরতে যাবো।

” হ্যাঁ তাহলে যাওয়াই যায়।

” ঠিক আছে তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো ডাইনিং টেবিলে। খেয়েদেয়ে তারপর বের হবো।

” আচ্ছা।

খাবার টেবিলে বসে আছে আরাভ ফারাহ্ এনা আর রত্না বেগম। সবাই খাচ্ছে শুধু আরাভ বাদে। ফারাহ্ বিষয়টা লক্ষ্য করতেই আরাভকে বা হাত দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলে,,

” কি হয়েছে আরাভ খাচ্ছো না কেনো?

আচমকা ফারাহ্ -র কথা শুনে চমকে উঠে আরাভ। ফারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলে,,

” কোথায় খাচ্ছি তো।

কথাটা বলে আরাভ খাবার মুখে তুলে নেয়। আরাভের এমন ব্যাবহারে বেশ অবাক হয় ফারাহ্। আরাভ কে আর কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয় ফারাহ্।

খাওয়া দাওয়া শেষে রত্না বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ফারাহ্, এনা,আর আরাভ। আসার আগে রত্না বেগম কেও বলেছিলো কিন্তু তিনি একা বাড়ি ফেলে যাবে না।

এনাকে নিয়ে ফারাহ্ আর আরাভ প্রথমে আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।
আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯০৮ সালে আলেকজান্ডার ক্যামেরন রাদারফোর্ড (আলবার্টার প্রথম প্রিমিয়ার) এবং হেনরি মার্শাল টরি (বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম প্রধান) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় হলো কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি যা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সাধারণত U of A অথবা UAlberta বলা হয়। এটির অ্যাডমন্টনে চারটি ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্রোজে একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। বর্তমানে ১৫৬ দেশ থেকে ৪০.০০০ এর উপরে শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

প্রধান ক্যাম্পাসটি উত্তর সাসকাচোয়ান নদী উপত্যকার প্রান্তে আলবার্টা প্রদেশের রাজধানী এডমন্টনের ১১৬ স্ট্রিট এবং ৮৫ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত। এটি ৫০টি শহরের ব্লক কভার করে, যার ১৫০টি ভবনের মধ্যে প্রচুর সবুজ স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশে থাকাকালীন এডমিশন প্রসেস কমপ্লিট করেছিলো বলে এনার এখন বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নি। “Doctor of medicine” কোর্সে ভর্তি হলো এনা। সেপ্টেম্বর মাস থেকে যথারীতি ক্লাস করতে পারবে। ভর্তির কার্যক্রম সব শেষ করে তারা “bonnie doon shopping Center” নামের একটা শপিং সেন্টারে আসে কিছু কেনাকাটার জন্য। ফারাহ্ শপিং সেন্টারের ভেতর একাই ঢুকেছে। শপিং সেন্টারের বাহিরে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে টুকটাক কথাবার্তা বলছে আরাভ আর এনা। তাদের কথার মাঝে হুট করে এক বাচ্চা মেয়ে আরাভ আঙ্কেল বলে দৌড়ে এসে আরাভ কে জড়িয়ে ধরে। বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে এনার। পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে আরাভ বলে,,

” আরে প্রিন্সেস , কেমন আছো?

” আমি ভাল আছি, আঙ্কেল।

” তা প্রিন্সেস তুমি এখানে কেনো,তোমার সাথে কেউ আসে নি?

” পাপা আর মম এসেছে সাথে। কথাটা বলেই পাশে থাকা এনার দিকে চোখ যায় মেয়েটির। আরাভের কোল থেকে নেমে মেয়েটা এনার সামনে এসে ডান হাত মুখের সামনে নিয়ে কিছু একটা ভাবার ভঙ্গি নিয়ে বলে,,

” আঙ্কেল জানো তো এই আন্টি টাকে কোথাও দেখেছি আমি।

আরাভ কিছুটা ঝুঁকে মেয়েটার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে,,

” তাই বুঝি তা কোথায় দেখেছো তোমার এই আন্টি টাকে?

” সেটাই তো মনে পড়ছে না।

এনা মেয়েটার কথা শুনে কিছু বলতে নিবে আর তখনই কোথা থেকে এক চব্বিশ বছরের যুবতী দৌড়ে আসে। মেয়েটার হাত ধরে রাগান্বিত চোখে বলে ,,,

” তোমার সমস্যা কি, অ্যাঞ্জেলিকা? আমাকে না বলে এখানে এসেছ কেন?

অ্যাঞ্জেলেকা তার মায়ের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,,

” রিলাক্স মম , আরাভ আঙ্কেল কে দেখে দৌড়ে এলাম।)

হেলেন এবার আরাভের দিকে তাকায়। পাশে থাকা এনাকে দেখে ভ্রুকুটি করে। আরাভের উদ্দেশ্যে বলে,,

” মেয়েটি কে? আরভ।

আরাভ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,

” ওর নাম এনা। আমার মনে হয় আপনি ওকে চিনেন

আরাভের কথা শুনে হেলেন তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে বলে,,

” হ্যাঁ, আমি কেবল তার সম্পর্কে শুনে এসেছি এতদিন । আজ আমি তাকে সামনা-সামনি দেখতে পেলাম। আমি তাকে যেমনটা ভেবেছিলাম সে তেমন নয় দেখতে।)

কথাটা বলে হেলেন এনার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অ্যাঞ্জেলেকা কে নিয়ে চলে আসে। এনা হেলেনের সেই দৃষ্টির মানে বুঝলো না।

#চলবে

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে