আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-২৬+২৭

0
605

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৬
#Raiha_Zubair_Ripte

“আরহাম হাত ছাড়ুন কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে। এটা কানাডা না।

হেনার হাত ছেড়ে দেয় আরহাম। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে দু হাত গুঁজে বলে,,

” এটা কানাডা না বলেই ছেড়ে দিলাম হাত টা বেয়াইন সাহেবা। তবে মনে রাখবেন এর পর আপনার কথা মতো এবার হাত ছেড়ে দিয়েছি বলে পরের বার ও দিবো। তখন হাজার বললেও ছেড়ে দিবো না।
কথাটা বলে আরহাম বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। হেনা আরহামের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে ল্যাগেজ নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে ফারাহ্, আমান,মুনিয়া,আর হেনা। টেবিলে খাবার সাজাতে ব্যাস্ত দুই জা। আরমান সাহেব আর এনামুল বাড়ির আশেপাশ টা ঘুরে দেখছে। শান বিছানায় শুয়ে আছে শরীরের এলার্জির মাত্রা বেড়েই চলছে। এনা শানের পাশে বসে রয়েছে। হেনাকে ফোন করে এলার্জির ঔষধ আনতে বলে বাড়ির পাশের ফার্মেসী থেকে। হেনা নিজের রুমে এসে খুচরা টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হতে নিলে ফরিদা বেগম বলে উঠে,,

” কোথায় যাচ্ছিস?

” পাশের ফার্মেসী তে।

” কেনো কি হয়েছে?

” দরকার আছে তাই যাচ্ছি।

” আমাকেও নিয়ে চলুন বেয়াইন সাহেবা।

হেনা রাগান্বিত হয়ে তাকায়।

” আন্টি দেখুন আপনার মেয়ে কিভাবে তাকায়। আপনার মেয়ের কি উচিত না আমাকে একটু আশপাশ টা ঘুরিয়ে দেখানোর।

ফরিদা বেগম আরহামের কথায় সায় জানিয়ে শুধায়,,

” ঠিকই তো। এই হেনা আরহাম কে নিয়ে যা একটু ঘুরিয়ে আন।

” মা উনারা এখনো খান নি তো?

” তো কি হয়েছে আন্টি চাপ নিয়েন না আমি এয়ারপোর্ট থেকে খেয়ে এসেছি।

অগ্যতা অনিচ্ছুক থাকা শর্তেও হেনা আরহাম কে নিয়ে যায়। যতো চাইছে লোকটার থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে ততোই লোকটা গা ঘেঁষে থাকতে চাইছে। বাসা থেকে বের হতেই সামনে ঝুলে থাকা খাঁচার ভেতর থেকে পাখি দুটো চেঁচিয়ে উঠে। হেনা পাশ থেকে পাখির খাদ্য বের করে খাবার দেয়। আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আসুন দাঁড়িয়ে না থেকে।

আরহাম ভদ্র ছেলের মতো হেনার পেছন পেছন যায়। ফার্মেসীর দোকান থেকে এলার্জির মেডিসিন নিয়ে বাসায় চলে আসে ওরা।

রাত বাজে পনে আটটা। ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের ডিনার করছে সবাই। নেই শুধু মুনিয়া, মুনিয়ার শরীর টা ভালো লাগছে না তাই রুমে শুয়ে আছে। খাবে না জানিয়ে দিছে। এনামুল হক সোফায় বসে বাদ পড়া আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের ফোন করে বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে। পাশেই বসে আছে বড় ভাই আরমান। দু’জনের খাওয়া সবার আগে শেষ। সবাই খাওয়া দাওয়া করে যে যার রুমে চলে যায়।

এনা কাল শান কে মেডিসিন খাইয়েছে। আপাতত আগের চাইতে ভালো লাগছে তার। শান কিছুক্ষন বাগানে পায়চারি করতেই দেখে তার শশুর এদিকটায় আসছে ।

” চলো শান এলাকা টা ঘুরিয়ে দেখাই।

শান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।

এনামুল হক মেয়ের জামাইকে নিয়ে আশেপাশ টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায়। আর রাস্তা ঘাটে দেখতে পাওয়া পরিচিতদের সাথে শানের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো হাটাহাটি করে বাড়ি চলে আসে তারা। এনা হেনা মা আর চাচিকে হেল্প করছে সকালের নাস্তা বানাতে। রান্না ঘর থেকেই এনা শান আর বাবা চাচার আওয়াজ শুনে শানের জন্য কফি আর বাবা চাচার জন্য চা নিয়ে যায়। বাড়ির আর কেউ উঠে নি এখনো ঘুম থেকে। হেনা ব্রেকফাস্ট গুলো ডাইনিং টেবিলে সাজায়। ফরিদা বেগম হেনাকে বলে সবাইকে ডেকে আনার জন্য।

হেনা বাধ্য মেয়ের মতো সবাইকে ডাকতে যায়। মুনিয়ার রুমে গিয়ে মুনিয়াকে জেগে তোলে। আরাভ কে ডাকতে যেতে নিলে এনার সাথে দেখা হয়। এনা ও আরাভের রুমে যাচ্ছিল। হেনাকে দেখে বলে,,

” তুই আরহাম কে ডেকে উঠা,আমি তে আরাভ ভাইয়ের কাছে যাচ্ছিই।

হেনা মাথা নাড়িয়ে আরহামের ঘরের দিকে যায়। আরহাম উপর হয়ে শুয়ে আছে। হেনা দরজায় ঠকঠক শব্দ করে। এতে আরহামের বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে আসে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,

” কে?

হেনা ঠোঁট দিয়ে জিহ্বা ভিজিয়ে নিয়ে বলে,

” আমি হেনা। মা ডাকছে খেতে তাড়াতাড়ি আসুন।

কথাটা বলে আর একমুহূর্ত ও দেরি করলো না চলে আসলো দরজার সামনে থেকে। আরহাম হেনার কন্ঠ শুনে হুড়মুড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে। দরজার দিকে চাইতেই দেখে হেনা নেই। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

ব্রেকফাস্ট করে সবাই শপিং এর জন্য বের হয়। বাসায় থাকে মুনিয়া, আরাভ আর রত্না বেগম। মুনিয়ার শরীর খারাপ। এ দেশের আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।

শপিং মলের দোকানে এনা হেনার জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা আর শাড়ি চয়েস করে দেয়। রুমানের আসার কথা থাকলেও শপিং মলে আসার পনেরো মিনিট পর ফোন দিয়ো জানিয়ে দেয় সে আসতে পারবে না। আরহাম হেনার পাশে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,,

” এমন এক দায়িত্বহীন ছেলে কে বিয়ে করছেন বাহ যার কি-না হবু বউয়ের জন্য সময় নেই।

হেনা কটমট করে তাকায়।

” জাস্ট শাট-আপ হয়তো কোনো কাজে বিজি তাই আসতে পারে নি।

” পরশু আপনাদের বিয়ে শুনলাম আপনার হবু স্বামী ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে তাহলে আবার বিজি কেনো?

” আপনার সমস্যা কি?

” আমারই তো সমস্যা।

হেনা আর কথা না বাড়িয়ে এনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

বাগানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আরাভ। জানালা দিয়ে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে মুনিয়া। রত্না বেগম পুরো বাড়িতে একা একা ফিল করায় মুনিয়ার রুমে আসে। দরজার সামনে এসে এক ধ্যানে মুনিয়াকে বাহিরে তাকাতে দেখে চুপিচুপি রুমে ঢুকে রত্না বেগম। মুনিয়ার ঠিক পেছন টায় দাঁড়িয়ে মুনিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখে নিচে তার ছেলে। আরাভের দিকেই তাকিয়ে আছে মুনিয়া। এভাবে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ জাগে রত্না বেগমের। সহসা মুনিয়ার কাঁধে হাত রাখে। ভয়ে চমকে উঠে মুনিয়া। মুনিয়াকে চমকে উঠতে দেখে রত্না বেগম ভ্রু কুঁচকে ফেলে। রত্না বেগম কে নিজের রুমে দেখে ভয়ে ঢোক গিলে মুনিয়া। মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বলে,,

” আন্টি আপনি!

” হ্যাঁ আমি।

” কখন এলেন বুঝতেই পারি নি।

” আমি ও কিছু বুঝতেছি না।

” মানে?

” না মানে টানে কিছু না। একা বোর ফিল করছিলাম তাই গল্প করতে আসলাম।

” ওহ্ আচ্ছা আন্টি বসুন না।

কথাটা বলে রত্না বেগম কে হাতের ইশারায় বিছানায় বসতে বলে। রত্না বেগম ঘাড় উঁচিয়ে নিচে থাকা আরাভ কে একবার দেখে বিছানায় বসে। মুনিয়া ও এক পাশে বসে পড়ে।

——————

সন্ধ্যা হয়ে গেছে কেবলই এনারা ফিরেছে শপিং থেকে। ড্রয়িং রুমের টেবিল টায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শপিং এর ব্যাগ গুলো। সবাই টায়ার্ড এই গরমে শপিং করে। এনামুল হক ফোন কানে নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়। রুমানের বাবা রবিউল খান ফোন দিয়েছে। এনা তার বাবার মুখের দিকে তাকায়। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ রকমের রেগে আছে।

” আপনাদের কি মাথা খারাপ রবিউল ভাই আপনার ছেলে বিয়ে করবে না এখন সেটা বলছেন? এটা কি ছেলেখেলা যখন ইচ্ছে হলো বিয়ের জন্য হ্যাঁ বললো আর যখন ইচ্ছে হলো না তখন না করলো? আমার কি মানসম্মান নেই? কাল বাদে পরশু বিয়ে আর আপনার ছেলে বলছে সে বিয়ে করবে না বাহ! মামার বাড়ির আবদার নাকি?

কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবাই আশ্চর্য হয়। হেনা নেই হেনা নিজের রুমে গেছে ফ্রেশ হতে। এনা উঠে আসে বাবার পাশে দাঁড়ায়। শান বাসায় নেই। শান আর আরমান সাহেব গেছে পাশের মোড়ের দোকানে চা খেতে।

” কি করবো বলেন ভাই, আমার ছেলে যে এভাবে লাস্টে এসে বিয়ে করতে না করে দিবে ভাবতে পারি নি। তাছাড়া মানসম্মান শুধু আপনারই নষ্ট হবে না সাথে আমার ও হবে। আমার আত্মীয় স্বজন দের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে অনেকে এসেও পড়েছে।

” আরে রাখেন আপনার কথা মিয়া। মানুষ জন দাওয়াত দেওয়া শেষ বিয়ের শপিং করা শেষ এখন বলছে আপনার ছেলে এসব। এখন কেনে বলছে আগে কেনো বলেনি?

” ছেলো আগে থেকে এক মেয়েকে পছন্দ করতো।

” পছন্দ করতো মানে? আপনি আপনার ছেলের মত নেন নাই বিয়েতে? আর অন্য জায়গায় যখন পছন্দ ছিলো মেয়ে তাহলে আমার মেয়েকে দেখতে আসলেন কেনো?

” আসলে ভাই ও মেয়ে আমার পছন্দ ছিলো না। ছেলেকে শর্ত দিয়ে বিয়ে তে রাজি করিয়েছিলাম। এখন ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ঐ মেয়ে কে নিয়ে।

” বাহ! কেমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করেছেন ছেলেকে। আর আপনি ও কেমন বাবা ছিঃ আপনাদের নামে কেস করবো আমি থানায়। আমার মেয়ের জীবন নওয়ে ছিনিমিনি খেলা বের করবো। দেখতে থাকুন কি করি। হাজতের ভাত খাওয়াবো আপনার ছেলে কে।

কথাটা বলে এনামুফোন কে’টে দেয়। মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়ে। এনা এনামুলের কাঁধে হাত রেখে বলে,,

” কি হইছে বাবা। রুমান বিয়ে করবে না?

এনামুল মাথা তুলে তাকায়।

” না ঐ বেয়াদব ছেলে গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে পালিয়েছে। আগে থেকেই রিলেশনে ছিলো। বিয়ে করবে না।

” তাহলে হেনার কি হবে এখন।

” হেনার কি হয়েছে?

কথাটা বলতে বলতে বাহির থেকে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে আরমান আর শান।

রত্না বেগম উঠে স্বামীর কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। আরহাম সোফায় বসে ড্রামা দেখছে। তার বেশ ভালো লাগছে ছেলেটাকে আচ্ছা মতো ধোলাই দিয়েছে। আরমান সাহেব এগিয়ে ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে,,

” হেনার সাথে যদি আরাভের বিয়ের প্রস্তাব রাখি তাহলে কি মানা করবি এনামুল।

সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আরহাম। মুখের হাসি বিলিন হয়ে যায়। মুনিয়ার বুকটা ধক করে উঠে। আড় চোখে আরাভের দিকো তাকায়। আরাভ অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তার বাবা এসব কি বলছে। যেখানে হেনা কে বোনের নজরে দেখে এসেছে সেখানে বউ ইম্পসিবল। সহসা উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় আরাভ এই বিয়ে নিয়ে।

#চলবে?

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৭
#Raiha_Zubair_Ripte

“ সরি বাবা আমার পক্ষে হেনা কে বিয়ে করা পসিবল না। হেনা কে কখনো আমি ঐ নজরে দেখিনি বোন ব্যাতিত। সেখানে বিয়ে করে সংসার নট পসিবল। আরহাম আছে আমার থেকেও ভালে ছেলে। তার সাথে দাও বিয়ে।

কথাটা শুনে আরমান সাহেব ছেলেকে কিছু শোনানোর জন্য উদ্যত হলে এনামুল থামিয়ে দেয়। আরহাম কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে। এই সুযোগ হাত ছাড়া করা মানে হেনাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলা। এনামুল হকের সামনে এসে বলে,,

” আঙ্কেল একটা প্রস্তাব রাখতে চাই আমি আপনার কাছে।

এনামুল মাথা তুলে তাকায়। ভ্রুকুটি করে বলে,,

” কি প্রস্তাব?

আরহাম জিহ্বা দিয়ে শুঁখনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয়। আশেপাশে সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।

” আঙ্কেল আমি হেনাকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে।

কথাটা শুনে এনামুল হক আরহামের পানে চায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এক ছেলে বলছে বিয়ে করবে না আরেক ছেলে বলছে সে হেনাকে বিয়ে করবে। শান আরহামের দিকে এগিয়ে এসে কনুই ধরে বলে,,

” মজা করছিস তুই?

” নো ব্রো আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াসলি হেনাকে বিয়ে করতে চাই।

” কিন্তু তোমার বাবা মা?

আরহাম এনামুল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” চিন্তা করবেন না আঙ্কেল বাবা মা তো কালই এসে পড়বে আর তাছাড়া তাদের কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না।

” কিন্তু হেনা তো মনে হয় রাজি হবে না। যদি একবার শুনে বিয়ে ভেঙে গেছে তো।

” সে আঙ্কেল আমার উপর ছেড়ে দিন হেনাকে আমি মানিয়ে নিবো। আপনারা তো রাজি হয়ে যান। এতে এ কূল ও কূল দুই কূল ই রক্ষা পাবে। আপনার মানসম্মান অক্ষুণ্ণ রইলো আর হেনার আর আমার বিয়েটাও হয়ে গেলো।

মুনিয়া ও এবার আরহাম কে সাপোর্ট করে বলে,,

” হ্যাঁ আঙ্কেল রাজি হয়ে যান। তাছাড়া আমার ভাই পাত্র হিসেবে দারুন এনা ভাবি তো থাকেই এখন না হয় হেনা আপু ও থাকবে।

” আমি কোথায় থাকবো মুনিয়া।

কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে হেনা। মুনিয়া কিছু বলতে নিবে এনা থামিয়ে দেয়।

” ও কিছু না। এমনি বলছে মুনিয়া। আমাদের সাথে তোকেও নিয়ে যাবে কানাডা।

” ওহ্। আচ্ছা আব্বু রুমান ফোন ধরছে না কেনো আমার। সন্দিহান হয়ে বলে হেনা।

এনামুল কি বলবে ভেবে পায় না। এনা নিজে থেকে জবাব দেয়,,

” হয়তো ব্যাস্ত তাই ফোন ধরছে না। ফ্রী হলে কল ব্যাক করবে। আর তাছাড়া কাল তোর গায়ে হলুদ সেটায় ফোকাস কর।

_________________

ড্রয়িং রুমে বসে আছে আরহামের বাবা মা পাশেই বসে আছে এনামুল, আরমান,রত্না,ফরিদা। আব্রাহাম গলা ঝেড়ে বলে,,

” আমাদের সমস্যা নেই বেয়াই সাহেব এক মেয়ে তো আমার বড় ছেলের বড় আপনার অন্য মেয়ে না হয় আমার ছোট ছেলের বউ হবে। যেখনে ছেলে রাজি বিয়ে করতে সেখানে আমরা না করি কিভাবে।

আরহাম যেনো এতোক্ষণে দেহে প্রাণ ফিরে পেলো। এনামুল হক শান্তি পেলো আব্রাহামের কথা শুনে। এখন মেয়ে রাজি হলে হয়।

গায়ে হলুদের সাজে সেজে আছে হেনা। একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। আরহামকে বেশ হাসি খুশি দেখছে হেনা। লোকটা না সেদিন বড় গলায় বললো তার বিয়ে হতে দিবে না তাহলে এমন হাসিখুশি কি করে?

আরহাম হাতে হলুদ নিয়ে হেনার মুখে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,,

” গায়ে হলুদ ছোঁয়ালাম বউ জান।

কথাটা বলেই চলে আসে। আরহামের বউ ডাকটা এখনো কানে বাজছে।

এনামুল হক অল্প কয়েকজন ইনভাইট করেছে বিয়েতে। তাদের আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব হাতে গুনা কয়েকজন।

এনা বোনের মুখে হলুদ ছুঁয়ে দেয়। হালকা নাচ গান করে যে যার মতো ঘুমোতে যায়। ঘুম নেই আরহামের চোখে। তার আর তর সইছে না কখন সকাল হবে হেনাকে বউ করে নিয়ে যাবে। সারারাত নির্ঘুম হয়ে কাটালো।

সকাল সকাল তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বিয়ের। হেনা পাত্র রুমানের জায়গায় আরহাম এসেছে কথাটা শুনে ভরকে যায়। বাবার দিকে তাকাতেই এনামুল সব খুলে বলে হেনাকে। হেনা রাগান্বিত হয় তাকায় বাবার দিকে।

” তাই বলে যার তার সাথে বিয়ে দিতে চাইবে।

” যার তার সাথে কই আরহামের সাথে ঠিক করেছি। ছেলেটা তো ভালোই।

” আমি খারাপ কখন বললাম।

” তাহলে আপত্তি কোথায়।

” যা ভালো মনে হয় তাই করো গিয়ে। মন চাইবে একজনের সাথে বিয়ে দিতে সে পালিয়ে গেলে তখন আরেক জনের সাথে বিয়ে দিতে চাইবে।
কথাটা বলে নিজের রুমে চলে আসে হেনা। ভীষণ ভালো লাগছে উফ ফাইনালি বিয়ে ভেঙেছে। এবার খুশি মনে পার্লারে যাবে সাজতে।
দুই জনে মিলে বিয়ে ভাঙতে পারলো তাহলে। আরহামের ফোনে ফোন দেয় হেনা। আরহাম রেডি হচ্ছে,,

” ফাইনালি বিয়ে ভাঙলাম আমরা। ট্রিট দিন আমায়।

” কিসের ট্রিট আপনায় বিয়ে করে লগ্ন ভ্রষ্টা থেকে বাঁচাচ্ছি সেটাই কি ট্রিট নয়।

” এহহহ এটা ট্রিট কিভাবে।

” ট্রিট টা বাসর রাতের জন্য তোলা থাকুক। রাখি যাও রেডি হয়ে নিন।

কথাটা বলে ফোন কেটে দেয় আরহাম।

ফাইনালি আরহাম আর হেনা বিয়ে হয়ে গেলো। নিজের রুমে বসে আছে হেনা। আরহাম পাশে এসে বসে হেনার। হেনার ঘুমটা উঁচু করে, ট্রিট কই। স্মিত হাসে আরহাম পকেট থেকে ডায়মন্ডের আংটি বের করে হেনার অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দেয়।

” ফাইনালি আপনায় নিজের করে পেলাম। ভাগ্যিস ছেলেটার আগে থেকে গার্লফ্রেন্ড ছিলো তা না হলে কি করে বিয়ে ভাঙতাম বলুন।

” আমি তো আছি, আমিই তো শিখিয়ে দিলাম ছেলেকে কি কি বলতে হবে।

” তা যা বলেছেন হেনা। আমি ভাবতেই পরি নি নি আপনি নিজে থেকে হেল্প করবেন আমায় সিরিয়াসলি।

” দয়া হলো তাই দয়া করলাম।

” দয়া করে উদ্ধার করে ফেলছেন আমায়।

” হুমমম। এবার কিসসসসি দিন জানেন না বউকে চুমু খেতে হয় বাসর রাতে।

” শুধু কি কিসসসসি সাথে তো আরো কিছু করতে হয়।

” অ’সভ্য, হাতে কিস দিতে বলেছি। আংটি পড়িয়েছেন কিস করেন নি।

আরহাম তাজ্জব বনে যায়। আরহাম ভেবেছিলো অন্য কোথায় কিস করতে। কিন্তু এ দেখি হাতের আংটির উপর করতে বলছে।

রত্না বেগম ড্রয়িং রুমে বসে আফসোস শুরে বলে,,

” সবারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার আরাভের কবে বিয়ে হবে ছেলে টা তো বিয়ের নাম শুনলেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে। পাত্রী পাবো কোথায়,যে এই ছেলেকে বিয়ে করবে।

এনা ফস করে বলে ফেলে,,

” আমাদের মুনিয়া আছে তো বিয়ে দিয়ে দাও।

আব্রাহাম ভরকে যায় ছেলের বউয়ের কথা শুনে। রত্না বেগম কিছু একটা ভেবে বলে,,

” মন্দ বলিস নি এনা। আব্রাহাম ভাই আপনি কি বলেন?

আব্রাহাম কি বলবে ভেবে পায় না। ছেলের বউয়ের বোনের বিয়ে খেতে এসে তাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাচ্ছে এখন আবার মেয়েকে টানছে। মারুয়া বেগম উৎসুক হয় তার বেশ লেগেছে কথাটা। মেয়ে তার কাছেই থাকবে তাহলে।

” ভালোই হয় তাহলে। এখান থেকে না হয় কাবিন করিয়ে নিয়ে কানাডায় গিয়ে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করলাম।

এদিকে এনা হা হয়ে আছে। সে বুঝতে পারে নি তার কথাটা কে তারা এভাবে সিরিয়াস নিবে।

” চাচি,মনি আপনারা সিরিয়াসলি নিয়েছেন আমার কথাটাকে? আমি তো মজা করে বলেছি।

মারুয়া এনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” তোমার ননদকে গিয়ে রাজি করাও।

আব্রাহাম স্ত্রীর পানে চায়। মারুয়া স্বামীর দৃষ্টি কে তোয়াক্কা না করে বলে,, কি হলো যাও এনা।

এনা চলে আসে। আসার পথে শানের সাথে দেখা হয়। শান কে সব খুলে বলে। শান মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,

” ছোট মা এসব কি বলছো? আরাভের সাথে মুনিয়ার বিয়ে? আরাভ একজন কে ভালোবাসে। একজন কে ভালোবাসে কি করে অন্য একজন কে বিয়ে করবে?

মারুয়া বেগম অবাক হয়। তার জানা ছিলো না আরাভ কাউকে ভালোবাসে। রত্না বেগম বসা থেকে উঠে বলে,,

” ভালোবাসতো আগে এখন বাসে না। আর তাছাড়া মেয়ে খ্রিস্টান সেখানে বিয়ে পসিবল না তাই বলে কি আমার ছেলে তার আশায় থাকবে?

” না আন্টি তা বলি নি। কিন্তু যার বিয়ের কথা বলছেন সে কি রাজি?

” আমার ছেলে আমার কথা কখনো ফেলতে পারবে না। ধরে নাও সে রাজি।

” আপনার ছেলেকে নিজের মুখে বলতে বলুন সে আমার বোনকে বিয়ে করতে রাজি।

” বেশ।

কথাটা বলে রত্না বেগম ছেলের ঘরে চলে আসে। ছেলে তার ল্যাপটপে মুখ গুঁজে কিছু একটা করছে। ছেলের সামনে বসে ল্যাপটপ টা কেঁড়ে নিয়ে বলে,,

” তোর মাকে তুই ভালোবাসিস?

হঠাৎ মায়ের এমন লজিকনেস কথা শুনে বিরক্ত হয় আরাভ।

” মা ল্যাপটপ দাও এসব লজিকনেস কথা না বললেই কি নয়?

” না নয়। বল ভালোবাসিস কি না আমায়।

” অবশ্যই ভালোবাসি।

” তাহলে আমি যা বলবো তাই শুনবি। আমার কথা মতো চলবি।

” তাই তো চলি।

” জানি,তাহলে আমার কথা মতো বিয়ে করবি। আমি যাকে তোর জন্য পছন্দ করবো চোখ বুজে তাকেই বিয়ে করবি।

সহসা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় আরাভ।

” এসব কি বলছো? বলেছি না বিয়ে করবো না। আর বিয়ে খেতে এসে হঠাৎ আমার বিয়ের কথা বলছো কেনো?

” আমার এক মেয়েকে ভারি পছন্দ হয়েছে তাই।

” আমার পক্ষে বিয়ে সম্ভব না। কাল এবার বলেছি হেনাকে বিয়ে করবো না। আবার বিয়ের পেঁচাল শুরু করছো।

” হেনা না মুনিয়া। আমি মুনিয়াকে তোর বউ করতে চাই।

” মানে?

” মানে হচ্ছে মুনিয়াকে আমি বউ করতে চাই তোর।

” মাথা কি খারাপ তোমার মা।

” আমার মাথা ঠিকই আছে। হেফজিবার জন্য আর কত অপেক্ষা করবি। হেফজিবা তো বিয়ে করে স্বামী নিয়ে সংসার করছে। আমার কি ছেলেকে সুখে দেখতে ইচ্ছে করে না? তুই যদি আমায় মা বলে একটু ও সম্মান ভালোবাসিস তাহলে নিচে গিয়ে বলবি তুই মুনিয়াকে বিয়ে করবি ব্যাস।

কথাটা বলে রত্না বেগম চলে যায় ঘর থেকে।

আরাভ দোটানায় পড়ে যায়। ফোন বের করে হোয়াটসঅ্যাপে হেফজিবাকে ফোন দেয়। হেফজিবা অফিস থেকে ফিরে কেবলই সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ এতো গুলো মাস পরে আরাভের ফোন পেয়ে চমকে উঠে ফোন রিসিভ করবে কি করবে না ভেবে পায় না। ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়। আবার ফোন কল বেজে উঠে হেফজিবা ফোন রিসিভ করে।

” কেমন আছো হেফজিবা?

” ভালো আপনি?

” ভালো নেই আমি তুমি ছাড়া। তুমি তো স্বামী বিয়ে বেশ সুখেই আছো তাহলে।

হেফজিবার কি বলবে ভেবে পায় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,

” হ্যাঁ স্বামী নিয়ে অনেক সুখে আছি।

” আমি বিয়ে করছি সামনে।

সহসা হৃদপিণ্ড টা কেঁপে উঠলো হেফজিবার। আরাভ বিয়ে করছে? পরক্ষণেই নিজেকে বুঝ দিলো সে তো এটাই চেয়ছিল আরাভ মুভ অন করুক।

” মেয়েটা কে?

” শানের বোন মুনিয়া। মায়ের ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাকে।

” কংগ্রাচুলেশনস আগামী দিন সজ্জিত হোক। ভালো থাকবেন।

কথাটা বলে হেফজিবা ফোন কে’টে দেয়। ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে। কান্না পাচ্ছে খুব। আরাভের বিয়ে মানতে কষ্ট হচ্ছে। যতোই কষ্ট হোক এটা তাকে মানতেই হবে বিয়ে করে সুখে থাকুক আরাভ সেটাই হেফজিবা চায়।

❝ আপনি আমার কাছে এক ভীনদেশী তারা ছিলেন আরাভ যাকে চাইলেও আর ভালোবাসতে পারবো না,পারবো না আর আপনার মুখের হাসির কারন হতে রোজ। কারন নিজের হাতেই দিয়েছি সেসব রাস্তা বন্ধ করে, করেছি দাফন নিজের সুখ। বিধাতার তটে চাই এমন ভালোবাসা না দিক আর কোনো মানবীর জীবনে। যে ভালোবাসার প্রাপ্তি নেই। ভালো থাকুন ভিনদেশী তারা। নতুন জীবনের জন্য প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল ❞

#চলবে?

(ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে