#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৪(বোনাস)
#Raiha_Zubair_Ripte
বাংলাদেশে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যাস্ত শহর দেখতে ব্যাস্ত হেনা। তার অনুভূতি গুলো দিনকে দিন নিকোটিনের ধোঁয়ার মতো উবে যাচ্ছে। হাতে রয়েছে আরহামের চিঠি। চিঠিতে জ্বল জ্বল করে লেখা। কিছু বাক্য। এই নিয়ে শ’খানেক বার পড়ে ফেলো হেনা।
বেয়াইন সাহেব,,
জীবনে হঠাৎই আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে
আপনার আগমন এই কানাডায়। ২০২৩ সালের ১০ ই জুন আপনার সাথে আমার প্রথম কথা। ধীরে ধীরে শুরু হয় জীবন চেনার পর্ব। সম্পর্কটা যেন দুষ্ট মিষ্টি বাঁধনে আটকে গেল। সকাল–বিকেল খোঁজখবর নেওয়া, একটু দেখতে চাওয়া,আপনাকে রাগানো। সব মিলিয়ে মনে হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায় খুঁজে পেয়েছি আপনারর মধ্যে। মনের ভেতর মায়ার বীজ গজাতে লাগল। আমার সব ভাবনাজুড়ে শুরু হলো আপনার বসবাস। একপর্যায়ে হৃদয়ের সবটা দখল করে নিলেন আপনি। মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেললাম আপনায়য়। শুরু হলো ভালোবাসার ফুলঝুড়ি। খুনসুটির মধ্যে আপনায় বেয়াইন সাহেবা’ বলে ডাকি, বিশ্বাস করুন কয়েকটা মেয়ের সাথে আমার রিলেশন থাকলেও কখনো তাদের সেভাবে স্পর্শ করি নি। জাস্ট টাইম পাস রিলেশন ছিলো। যবে থেকে উপলব্ধি করলাম আমি সত্যি কারে অর্থে আপনায় ভালোবেসে ফেলেছি বিশ্বাস করুন কোনো মেয়ের দিকে তাকাই নি,তারা জাস্ট নামের গার্লফ্রেন্ড ছিলো আমার। যেসব মেয়েদের সাথে চলাচল ছিলো তাদের সাথেও চলাফেরা করা বাদ দিয়ে।দিছি। শুধু মাত্র আপনার জন্য। আপনি হয়তো ভাবছেন এই কয়েকদিনে কি করে এতো ভালোবাসলাম। আচ্ছা বলুন তো ভালোবাস কি বলে কয়ে আসে? আসে না তো। যার উপর আসে সে তো বুঝে না। এই যেমন আপনি বুঝতে চাইছেন না। কিন্তু আমি তো আপনায় হারাতে রাজি না হেনা। নিজের জিনিস নিজের করে নিতে জানি। ।❝ আমার আমি বলতে শুধু আপনাকেই জানি,, ঐ নীল আকাশ টা জানে আমি আপনায় ভালোবাসি ঠিক কতখানি ❞
হঠাৎ মায়ের ডাকে ঘোর ভাঙে হেনার চিঠিটা বালিশের তলে রেখে রুমের বাহিরে বের হয়। তার মা ফরিদা বেগম জানান পরশু এনা ও শানরা আসছে। কথাটা শুনে হেনা তপ্ত শ্বাস ফেললো। পুনরায় আবার নিজের রুমে চলে আসলো।
.
এনা কাপড় চোপড় প্যাক করছে পরশুই তো বাংলাদেশে যেতে হবে। এক মাস হতে চললো তাদের বৈবাহিক জীবনের। আলমারি থেকে কাপড় বের করতেই একটা ফাইল দেখতে পায়। কৌতুহল নিয়ে ফাইল টা বের করে। ফাইলটা খুলতেই দেখে শানের রিপোর্ট এটা। ভ্রু কুঁচকে আসলো এনার শানের আবার কিসের রিপোর্ট? রিপোর্ট টা পড়ে এনার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। শানের ক্যান্সার অথচ শান তাকে বলে নি। এনার দেহ কেঁপে উঠে সহসা ফ্লোরে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে। রিপোর্ট টা বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মুনিয়া এসেছিলো ভাবির কাছে একটা দরকারে হঠাৎ এনাকে হাঁটু গেঁড়ে কান্না করতে দেখে দৌড়ে চলে আসে।এনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
” কি হয়েছে ভাবি কান্না করতেছো কেনো।
ফুপিয়ে কান্নার কারনে কিছু বলতেও পারছে না এনা। কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট টা মুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। মুনিয়া রিপোর্ট পড়তেই রিপোর্ট টা হাত থেকে পড়ে যায়। দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে যায় মুনিয়া। মারুয়া আর আব্রাহাম আরহামের সাথে কথা বলছিলো হঠাৎ মুনিয়াকে কাঁদতে কাঁদতে রুমে আসতে দেখে ভরকে যায় তারা। মারুয়া বেগম মেয়েকে ধরে।
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
” মা শান ভাইয়া।
” হ্যাঁ শান ভাইয়া কি?
” মা শান ভাইয়া ক্যান্সারে আক্রান্ত।
কথাটা শুনে চমকে উঠে সবাই। আব্রাহাম এগিয়ে আসে।
” কি বলছো এসব?
” সত্যি বলছি বাবা। ভাবি কান্না করতেছে খুব।
সবাই এনার রুমে আসে এনা ফ্লোরে বসে কান্না করতেছে। আরহাম রিপোর্ট টা পড়ে দেখে সত্যি তার ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত।
শান নিজের রুমে এসে সবাই কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। অফিস থেকে ফিরেছে,ফ্লোরে এনাকে কাঁদতে দেখে এনার কাছে আসে।
” কাঁদছো কেনো?
এনা নিশ্চুপ।
” কি হলো কাঁদছো কেনো?
এনা সহসা শানের হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে দেয়। আরহাম রিপোর্ট টা তার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। শান রিপোর্ট টা দেখে বুঝতে পারে। স্মিত হাসে।
” এতে কান্না করার কি আছে বুঝতেছি না। সামান্য তো একটা রিপোর্ট ই।
আব্রাহাম শানের সামনে দাঁড়ায়।
” এটা তোমার কাছে সামান্য রিপোর্ট মনে হচ্ছে? তুমি ক্যান্সারে আক্রান্ত ভাবতে পারছো?
” হুমম বাবা ট্রিটমেন্ট হচ্ছে ঠিক সেরে যাবো।
” কোন ডক্টর?
” ডক্টর জেলেক্স। চিন্তা করো না আমি ডোজ নিচ্ছি কয়েক মাস চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হয়ে যাবো। আর এনাকে কাঁদতে মানা করো।
” ডক্টরের সাথে দেখা করবো আমি।
শান এনার পানে চায়।
” ডক্টরের সাথে দেখা করে কি করবা?
” আমি দেখা করবো ব্যাস।
” ঠিক আছে ডক্টর কে আসতে বলছি। কথাটা বলে শান ডক্টর জেলেক্স কে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে। ডক্টর জেলেক্স এসে তার পরিবার কে বুঝায় ক্যানসার শব্দটাই আমাদের ডরানোর জন্য যথেষ্ঠ। অসুখের নাম শুনলেই বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠবে এটাই স্বাভাবিক । তবে চিন্তা করার কারণ নেই শান চিকিৎসা নিচ্ছে সুস্থ হয়ে যাবে। সবাই ক্ষান্ত হলো কিন্তু এনার মন ক্ষান্ত হলো না।
” তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তো শান ডক্টর?
” হ্যাঁ সুস্থ হয়ে যাবে চিন্তার কারন নেই।
ডক্টর চলে যায়। শান সবার উদ্দেশ্যে বলে,,
” হয়েছে শুনেছো কোনো চিন্তার কারন নেই। আমরা পরশু বাংলাদেশ যাচ্ছি যে যার কাপড় প্যাক করে নাও। কথাটা বলে শান নিজের রুমে চলে যায়। এনা ও শানের পিছু পিছু চলে আসে।
বিছানায় বসে আছে শান। সামান্য একটা রিপোর্ট নিয়ে এতো কিছু হলো। এনা শানের পাশে বসে কারো মুখে কথা নেই। আচমকা এনা শানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
” কাঁদছো কেনো?
” একমুহূর্তের জন্য মনে হয়ছিল আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো শান। নিশ্বাসটা থেমে গিয়েছিল।
” পাগল মেয়ে কিছু হবে না। চোখের জল মুছো তো দেখি।
শান এনার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
আরাভ এসেছে এ বাড়ি শুনেছে শানের বিষয় টা। মেন দরজায় আসতেই সামনে মুনিয়াকে দেখে।
” তোমার ভাই কোথায়?
” শান ভাইয়া?
” হ্যাঁ।
” ভাবির সাথে রুমে।
” সিরিয়াস কিছু আই মিন ভয়ের কিছু নেই তো।
” না ডক্টর বলছে চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে যাবে।
” ওহ্।
আজ আঠারো দিন পর মুনিয়া আরাভ কে দেখলো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। কেমন যেনো লাগছে দেখতে তাকে। আরাভের অস্বস্তি হয় মুনিয়ার চাহনিতে। মেয়েটা কিভাবে যেনো তাকিয়ে থাকে। গভীর সে চাহনি কিছা একটা থাকে সেই চাহনিতে। মুনিয়ার দৃষ্টি সরানোর জন্য কেসে উঠে আরাভ। মুনিয়া নিজের দৃষ্টি আরাভের থেকে সরিয়ে আনে।
” আচ্ছা আসি মুনিয়া। পরশু যাচ্ছো তো তোমরা?
” হ্যাঁ যাচ্ছি।
” ওহ্ আচ্ছা তাহলে বিডিতে দেখা হচ্ছে।
কথাটা বলে আরাভ শানের সাথে দেখা করে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।
#চলবে?
#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব২৫
#Raiha_Zubair_Ripte
বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে সদ্য কানাডা থেকে আসা দু পরিবার। তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে এনামুল হক। মেয়ে,মেয়ের জামাই আর বড় ভাই ও তার পরিবার কে নিতে এসেছে। আজ দশ বছর পর বাংলাদেশ পা রাখলো আরমান সাহেব। নিজের জন্মভূমির মাটিতে পা রাখতে পেয়ে যেনো পুরোনো সব অতীত মনে পড় গেলো। চেনা গন্ধ, চেনা পরিবেশ মন টাকে আরো আপ্লুত করে তুললো। ফাস্ট টাইম মুনিয়া, আরহাম,শান বাংলাদেশে এসেছে। তাদের কান্ট্রির থেকে বাংলাদেশের কান্ট্রির আবহাওয়া অনেকটা আলাদা। ফারাহ্ র এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতে আসা বাংলাদেশ। এর আগে দু বার এসেছে তার বাবার সাথে। এই যেমন আজ কড়া রৌদ আরহাম মুনিয়া শানের গরমে নাজেহাল অবস্থা। হঠাৎ এক দেশের আবহাওয়ায় থেকে অন্য দেশের আবহাওয়ার সাথে নিজেকে মানাতে পারছে না। এতো গরম হয়তো এই ফাস্ট টাইম তারা অনুভব করলো। মুনিয়া এবার না পেরে এনার হাত ধরে বলে,,
” ভাবি আমি আর পারছি না এতে গরম কেনো। মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবো।
এনা নিজের ওড়না দিয়ে মুনিয়ার ঘামার্তক মুখটা মুছে দেয়। তার ও খারাপ লাগছে।
” তোমার কি অনেক খারাপ লাগছে মুনিয়া?
মুনিয়া মাথা নাড়ায়। যার অর্থ অনেক খারাপ লাগছে।
” আচ্ছা চলো একটা জিনিস খাওয়াই। আই থিংক বেটার লাগবে।
মুনিয়া চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি খাওয়াবে? এনা মুনিয়ার হাত ধরে বলে,, গেলেই দেখতে পারবে চলো। কথাটা বলে মুনিয়ার হাত ধরে নিয়ে যায় একটা ভ্যানের সামনে।
এনামুল হক ভাই ও তার পরিবার কে এক গাড়িতে বসিয়ে আরহামদের আরেক গাড়িতে বসায়। শানের দিকে এগিয়ে এসে বলে,,
” বাবা বেয়াই বেয়াইন যে আসলো না?
শান টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,,
” আসলে বাবাা তো অনেক কাজ তাই আসতে পারে নি। চিন্তা করবেন না বিয়ের আগের দিন চলে আসবে। ছোট মা আর বাবা।
” ওহ আচ্ছা গাড়িতে গিয়ে বসো।
” এনা কোথায় গেলো?
” তোমার বোনকে নিয়ে একটু ওদিকটায় গেছে হয়তো শরবত খাওয়াতে।
শান গাড়ির কাছে গিয়ে আরহাম কে জিজ্ঞেস করে,,
” শরবত খাবি?
” কিসের শরবত?
” জানি না খাবি?
” চলো টেস্ট করি আগে।
কথাটা বলে আরহাম গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। শান আর আরহাম সোজা এনার কাছে চলে যায়। এনা ভ্যানে থাকা লোকটাকে বলে,,
” মামা এক গ্লাস শরবত দিন তো।
লোকটা এক গ্লাস শরবত এনার হাতে দেয়। এনা সেটা নিয়ে মুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। ইশারায় বলে খেতে। মুনিয়া গ্লাস টা নিয়ে মুখে নেয় শরবত, হালকা নোনতা নোনতা আবার মিষ্টি, কড়া গন্ধ লেবুর, ঠান্ডা পানি, সব মিলিয়ে টেস্ট টা দারুন লাগলো মুনিয়ার ঢকঢক করে সব টুকু শরবত খেয়ে ফেললো। ফাস্ট টাইম এমন শরবত খেলো মুনিয়া।
এনা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন তাকাতেই দেখে শান আর আরহাম আসছে। তাদের দেখে এনা বলে,,
” আপনারা কষ্ট করে আসতে গেলেন কেনো? আমি তো নিয়েই যেতাম বোতলে করে।
আরহাম ভ্যান থেকে একটা লেবু নিয়ে বলে,,
” ভাবিপু লেবুর শরবত?
এনা মাথা ঝাকায়।
” ওয়াও খেতে কেমন?
মুনিয়া আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” টেস্ট অসাধারণ ভাইয়া। জাস্ট খেয়ে দেখো হৃদয় ঠান্ডা হয়ে যাবে এই গরমে।
আরহামের আর তর সইলো না। ভ্যানের লোকটাকে এক গ্লাস শরবত দিতে বললো।
লোকটা শরবত আরহামের হাতে তুলে দেয়। আরহাম শরবত টা মুখে নেওয়ার সাথে সাথে তার মুখের রং বদলে যায়। মুনিয়া খুশি হয়ে বলে,,
” অনেক টেস্ট তাই না ভাইয়া।
আরহাম শরবত টা মুনিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। কোনো রকমে মুখের শরবত টুকু শেষ করে বলে,
” ইশ টেস্ট এমন কেনো?
” কেমন?
” এমন নোনতা নোনতা আবার মিষ্টি মিষ্টি কেনো? কেমন যেনো পানশে লাগলো।
এনা হেসে দেয় আরহামের কথা শুনে।
” তোমার ধারনা আছে আরহাম। এই শরবত কত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ জায়গায় এই শরবতের ভ্যান দেখতে পাবা। আর এটা পানশে না। এই যে দেখছো ফিল্টার এখানে বরফ আর নিচে দেখছো নরমাল ঠান্ডা পানি যেটা বরফ গলে গলে পড়েছে এই নরমাল পানিতে সুগার মানে চিনি মিশানো। আর এই পানি গ্লাসে নিয়ে বিটলবণ দিয়ে বানানো হয় লেবুর রস চেপে দিয়ে।
” তবুও ভাবিপু আমি ভেবেছিলাম হয়তো ফুল মিষ্টি হবে এখন দেখছি এমন টেস্ট।
” আরেকবার ট্রাই করো।
” নো ভাবি এর থেকে আমি দোকান থেকে টান্ডা ওয়াটার কিনে নিচ্ছি।
কথাটা বলে আরহাম দোকানে যায় পানির বোতল কিনতে। এদিকে মুনিয়ার বেশ ভালো লেগেছ শরবত টা। ভাইয়ের শরবত টা ও ঢকঢক করে গিলে ফেলে। শানের দিকে তাকিয়ে এনা বলে,,
” খাবেন আপনি?
শান মাথা ঝাকায়। সে খাবে। এনা লোকটাকে আবার বলে দু গ্লাস শরবত দিতে। লোকটা দু গ্লাস শরবত দেয়। শানের দিকে এক গ্লাস শরবত বাড়িয়ে দেয় এনা। শান সেটা মুখে নেয়। এনা জিজ্ঞেস করে,,
” টেস্ট কেমন?
শান আরেক ঢক খেয়ে বলে,,
” নট ব্যাড ভালোই।
এনা নিজের শরবত খেয়ে বিল মিটিয়ে চলে আসে।
গড়ি চলছে নিজ গতিতে,,কাট ফাটা রোদ থাকলেও গাড়ির জানালা দিয়ে আসছে হালকা বাতাস। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে দিয়েছে মুনিয়া। এই হালকা বাতাস টা তার সারা শরীর কে জুড়িয়ে দিচ্ছে। পাশে বসে থাকা এনার ফোনে ফোন আসে। এনা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরাভ ফোন করেছে। আরাভের ফোন আসায় ভ্রু কুঁচকে ফেলে এনা। পেছনে থাকা আরাভদের গাড়ির দিকে তাকায় এনা। ফোনটা রিসিভ করতেই আরাভ গম্ভীর গলায় বলে উঠে,,
” মুনিয়াকে বলো মাথা ভেতরে আনতে। এটা কানাডা না এটা বাংলাদেশ পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে যে কোনো মূহুর্তে অঘটন ঘটতে পারে।
কথাটা বলেই আরাভ ফোন কেটে দেয়। এনা মুনিয়ার হাত ধরে খানিক টেনে আনে,,
” এভাবে আর মাথা বের করবা না এনা। যেকোনো মূহুর্তে গাড়ি এসে পড়তে পারে তখন! আরাভ ভাই কিন্তু পেছন থেকে ফোন করে বললো। আর এমন করো না।
মুনিয়া একবার পেছনে ঘুরে তাকায় আরাভদের গাড়ির দিকে। এনার কথায় মাথা নাড়ায় আর বের করবে না মাথা।
আরাভ সামনে বসেছে ড্রাইভারের সাথে। দৃষ্টি সামনে রেখেই বলে,,
” ভাবি তোমাদের দেশ টা সুন্দর কিন্তু গরম বেশি।
” হুমম তা যা বলেছো। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ বুজেছো। অন্যান্য দেশে তো আর ছয় ঋতুর পাওয়া যায় না। খানিকটা তো আলাদা হবেই বাংলাদেশের আবহাওয়া জলবায়ু।
” খানিকটা না ভাবি পুরোই আলাদা। আচ্ছা ভাবি যার বিয়ে খেতে আসা সে কেনো আমাদের নিতে আসলো না।
” বাসায় আম্মুকে হয়তো হাতে হাতে হেল্প করছে। তাই হয়তো আসতে পারে নি।
” ওহ্ আচ্ছা ভাবু আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে?
” বেশি না মিনিট ত্রিশ লাগবে।
” আরো আধ ঘন্টা।
” হ্যাঁ।
এদিকে শানের শরীর জ্বলছে। হয়তো এলার্জি প্রবলেমে পড়েছে। চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে। এনা শানের মুখ দেখে বলে,,
” কি হয়েছে আওনার চোখ মুখ ওমন দেখাচ্ছে কেনো?
শান চোখ মেলে তাকায়।
” না কিছু হয় নি ঠিক আছি।
এনা শানের হাত ধরতেই দেখে হাতে লাল হয়ে গেছে জায়গায় জায়গায়।
” আপনার শরীরে এগুলো কি হয়েছে শান?
” তেমন কিছুনা গরমে এলার্জি প্রবলেম হচ্ছে।
এনার খারাপ লাগছে। সামান্য গরমেই মানুষটার এই হাল।
” খুব কষ্ট হচ্ছে?
শান স্মিত হাসে দু দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে না। কষ্ট হলেও সেটা কে এনার সামনে দেখাতে চায় না।
প্রায় দেড় ঘন্টার গাড়ির চালিয়ে বাড়ি পৌঁছালো এনারা। গাড়ি থেকে একে একে সব ব্যাগ নামানো হয়। দু তলা এক ভবন চারিপাশে খোলা জায়গায়। সব বাড়ির থেকে কিছুটা আলাদা। যেমন খোলার জায়গায় নিচে একা এক বাড়ি। বাড়ির সামনে ছোট্ট পরিসরে বাগান সেখানে হরেক রকমের সবজির গাছগাছালির বাহার। টমেটো গাছে লাল টকটকে টমেটো ধরেছে,লাউ গাছে লম্বা লাউ,মরিচ গাছে সারি সারি মরিচ ধরেছে। আর এক পাশে রয়েছে লম্বা বকুল ফুলের গাছ। বাড়ির সৌন্দর্য কয়েকশ গুন বাড়িয়ে দিয়েছে এই বাগান। বাড়ির সামনে খাঁচার ঝুলে আছে কাকাতুয়া পাখির দুটো ছোট ছোট বাচ্চা পাখি। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো হেনা ও তার মা। বোন কে দেখে দৌড়ে বোন কে জড়িয়ে ধরলো হেনা। এনা ও পরম আবেশে বোন কে জড়িয়ে ধরলো। ফরিদা বেগম হেনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
” হয়েছে তো আগে ঘরে ঢুকতে দে কতদূর থেকে এসেছে। কথাটা বলে হেনাকে বলে শান দের রুমে নিয়ে যেতে বলে। হেনা শান মুনিয়া আর আরহামকে নিয়ে ভেতরে ডুকতে নিলে আরহাম বলে উঠে সে পড়ে যাবে। অগ্যতা আরহাম কে রেখেই এনা মুনিয়া আর শান কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে। হেনা আরহাম কে দেখে কিন্তু কিছু বলে না। কি বা বলবে লোকটা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে হেনার দিকে। হেনার সাহস হয় না সেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলানলর। দেখেও না দেখার ভান করে।
ফরিদা বেগম পেছনে ফিরে দেখে তার ভাসুর রাও চলে এসেছে। ফরিদা বেগম গিয়ে ভাসরু দের গাড়ির সামনে যায়। রত্না বেগম গাড়ি থেকে নেমে ফরিদা বেগমের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। আমান ফারাহ কে ধরে নামায়। আরমান আর এনামুল হক গাড়ি থেকে নামে। ফারাহ্ গাড়ি থেকে বের হয়ে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। আমান তার চাচির সাথে কথা বলে ফারাহ্ কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে। আরমান,রত্না, এনামুল,ফারিদা ও বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। আরাভ গাড়ি থেকে নেমে হেনা কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
” সেদিন তোমাদের ব্যাগ টেনেছি আমি আজ তুমি আমার ব্যাগটা নিয়ে আসবা শোধবোধ বুঝছো। কথাটা বলে আরাভ নিজের ব্যাগটা রেখে ঢুকে পড়ে বাড়ি। আরাভের শরীর চলছে না। প্লেনে জার্নি করে আবার গাড়ি চালিয়ে আসায় শরীর নেতিয়ে গেছে।
হেনা ভেঙচি কে’টে গাড়ি থেকে আরাভের ল্যাগেজ বের করে তার বাবা চাচার পেছন যেতে নিলে এমন সময় পাশ থেকে কেউ হাত টেনে অভিযোগ শুরে বলে উঠে,,
” শুধু কি বোন কে জড়িয়ে ধরবেন হেনা? আমি ও এসেছি সদূর কানাডা পাড়ি দিয়ে আপনায় দেখতে আমায় কি একটু ও জড়িয়ে ধরা যায় না? একটু ও কি জড়িয়ে ধরে এই অশান্ত মন কে শান্ত করা যায় না! আপনি যে দেখেও না দেখার ভান করছেন এটা যে আমায় পিড়া দিচ্ছে খুব। এই কয়েকটা দিন আপনাকে না দেখে কিভাবে কাটিয়েছি আপনি কি জানেন? ফোন কল ও রিসিভ করেন নি কেনো?
সহসা হেনার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হলো। শরীর কেঁপে উঠল,আরহামের বলা কথা গুলো শুনে।
#চলবে।