আমার ভীনদেশী এক তারা পর্ব-১৮

0
637

#আমার_ভীনদেশী_এক_তারা
#পর্ব১৮(বোনাস)
#Raiha_Zubair_Ripte

রাতে ডিনার করে চলে গেছে শানরা। এনা বেলকনিতে বসে আছে তার পাশেই হেনা। হেনা থেকে থেকে এনার পানে চাইছে। এনার মুখে লেগে থাকা হাসিটা দেখেতে পেয়ে তার ভালো লাগছে। কতোগুলো বছর পর তার বোন কে এভাবে হাসতে দেখছে। ছয় বছর আগে যখন দেশে ফিরেছিল তখন একদম চুপচাপ শান্তশিষ্ট হয়ে। হাস্যজ্বল মেয়েটাকে হঠাৎ এমন চুপ হতে দেখে বাবা মা ও ভীষণ চিন্তিত হয়ে গেছিল। শানের জন্য প্রায় রাতেই কেঁদে উঠতো তার বোন। বাবা মা শানের ব্যাপারে জানত না। হেনা জানত। মাঝেমধ্যে তো কখনো হেনা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে রাত পার করে দিত। সেই সময় বোন কে নানান ধরনের কথা বলে বুজ দিতো।

” এনা এখন অনেক খুশি তুই তাই না?

এনা হেনার দিকে না তাকিয়েই সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,,

” আজ হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে খুশি ব্যাক্তিগুলোর তালিকায় সবার আগে আমি জানিস তো হেনা। আমি উনাকে পেয়েছি আর কি চাই আমার।

” এভাবেই হাসি খুশিতে থাক সেটাই চাই। আচ্ছা আসি অনেক রাত হলে যা ঘুমিয়ে পড় আমি গেলাম ঘুম ধরছে খুব।

এনা মাথা ঝাকায়। হেনা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

আরহাম বাসায় এসে ফোন চেক করে দেখে তার গার্লফ্রেন্ডের নাম্বার থেকে বিশ টা মিসড কল উঠে আছে। আরহাম কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। এই মেয়েটা একদম আঠার মতো পেছন পড়ে আছে। আর বাকি গার্লফ্রেন্ড গুলল এতো প্যারা দেয় না আরহাম কে। আরহাম এনাদের বাসায় থাকাকালীন ফোন টা সাইলেন্ট করে রেখেছিল। তপ্ত একটা শ্বাস ফেলে ভেরোনিকা কে ফোন করে।

” হ্যালো বেবি ফোন করছিলে কেনো।

ভেরোনিকা আরহামের ফোন পেয়ে ন্যাকি কান্না করে বলে,,

” হ্যালো আরহাম বেবি তুমি কোথায় তোমাকে ফোন করে পাচ্ছিলাম না।

আরহাম কান থেকে ফোনটা সামনে এনে বিরক্ততে ঠোঁট কামড়ে ধরে।

” আসলে জান আমি তো একটু বিজি ছিলাম তাই ফোনটা ধরতে পারি নি। রাগ করো নি তো বেবি।

” না জান আমি কি রাগ করতে পারি নাকি তোমার উপর।

” তাহলে রাখি ফোনটা আসলে আমি খুব টায়ার্ড বেবি কাল দেখা করবো নি ঠিক আছে।

” আচ্ছা বেবি আই লাভ ইউ।

” আচ্ছা টু বেবি বাই।

কথাটা বলে ফোনটা কে’টে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কবে যে এই মেয়ের থেকে পিছু ছুটবে কে জানে।

***

সকাল থেকে তিন চার বুমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে ফারাহ্। শরীর তার নেতিয়ে গেছে। রত্না বেগম খুব চিন্তিত। আমান বাসায় নেই, পরিচিত ডক্টর কে কল করে বাসায় আসতে বলে আরমান সাহেব।

ডক্টর এসেছে ফারাহ্ কে দেখছে। আরমান ফারাহ্-র খবর শুনে চলে এসেছে। সোফায় বসে বারবার বলছে,,

” বলেছিলাম মেয়েটাকে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে শুনে নি। নিশ্চয়ই আবার প্রেশার লো হয়ে গেছে।

ডক্টরকে ফারাহ্-র রুম থেকে বের হয়ে আসতে দেখে আমান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডক্টরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

” ডক্টর ফারাহ্-র আবার প্রেশার লো হয়েছে তাই না? মেয়েটা কে নিয়ে আমি আর পারি না।

ডক্টর আমানের কাঁধে হাত দেয়।

” জাস্ট রিলাক্স ইয়াং ম্যান। বাবা হতে যাচ্ছ এতো রাগ মাথায় থাকলে কি চলবে। এখন তো আরো সহ্য করতে হবে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই আমানের সারা শরীর বরফের মতো জমে যায়। এনা দৌড়ে ফারাহ্-র কাছে চলে যায়। আরমান আর এনামুল একে ওপরের দিকে তাকায়। রত্না বেগম ডক্টরের সামনে এসে বলে,,

” সত্যি ডক্টর আমার বউমা প্রেগন্যান্ট।

” হ্যাঁ।

রত্না বেগম দৌড়ে ফ্রিজ থেকে মিষ্টি এনে ডক্টর সহ সবাই কে মিষ্টি মুখ করায়।

আমান নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে না। কতোগুলো বছর মাস চেষ্টা করে আজ এই সুখবর টা পেলো। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। নিঃসন্দেহে এটা ছিলো প্রাপ্তির অশ্রু।

এনা ফারাহ্ কে জড়িয়ে ধরে।

” ভাবি তুমি প্রেগন্যান্ট আমি ফুফু হচ্ছি। আমার যে কি আনন্দ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।

ফারাহ্ এনার মাথায় হাত দিয়ে বলে,,

” তোমার ভাইয়া আসে নি?

” এসেছে তো। দাঁড়াও আমি ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কথাটা বলে ফারাহ্ কে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে দরজার সামনে আমান।

” ভাবি দেখো ভাইয়া চলে এসেছে।

আমান কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমে ঢুকে। ফারাহ্-র পাশে বসে। মুখে কোনো কথা নেই দৃষ্টি তার জানালার দিকে।

ফারাহ্ আমানের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

” খুশি হও নি?

আকস্মিক আমান ফারাহ্ কে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ্ কাঁধে গরম কিছু অনুভব করতেই বুঝতে পারে মানুষটা নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।

” কাঁদছো কেনো?খুশি হও নি?

আমান ফারাহ্ কে ছেড়ে দেয়।

” লাইফের বেস্ট একটা মূহুর্ত যখন ডক্টর জানালো আমি বাবা হতে চলছি। কতো প্রত্যাশার পর আমরা এই দিনটা পেলাম। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই এই মূহুর্ত টা আমাদের এনে দিয়েছে।

দরজার বাহির থেকে ভাই ভাবির এমন ভালোবাসা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো এনার। নিজের রুমে এসে ফোন করে শান কে সুখবর টা জানায় এনা।

*★★*

বিকেলের দিকে হঠাৎ করে দমকা হাওয়া বইতে শুরএ করেছে। হেনা এসেছে মার্কেটে কিছু দরকারী জিনিস কিনতে। হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন অবস্থা দেখে মনে মনে নিজেকে শ’খানেক গালাগাল করে। কেনো যে আসলো আজ মার্কেটে। কাল এনার সাথে আসলে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তড়িঘড়ি করে জিনিসপত্র কিনে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। দেরি করলে আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। যে কোনে সময় বৃষ্টি নামবে।

বাড়ির সামনে এসে সদর দরজা পার হতেই অচেনা এক যুবক কে সোফায় বসে থাকতে দেখে ভ্রুকুটি করে তাকায়। এখন আপাতত অচেনা লোকটাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। ড্রয়িং রুম ক্রস করে যেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিবে আর তখনই ভেসে আসে অচেনা লোকটার থেকে কিছু কথা।

” হেই মিস এনা কেমন আছেন?

হেনা পিছে ঘুরে তাকায়।

” আমাকে বলছেন?

” হুমম আপনি তো মিস এনা। আপনাকে ছাড়া আর কাকে বলবো।

” সরি আমি এনা নই হেনা। বাট আপনি কে?

” ও আমার ভাই হেনা ফাইয়াজ। আর ফাইয়াজ ও এনা না হেনা। এনার জমজ বোন।

কথাটা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে ফারাহ্। হেনা ফারাহ্ কে ধরে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।

” আচ্ছা ভাবি থাকো আমি উপর থেকে প্যাক গুলে রেখে আসতেছি।

কথাটা বলে হেনা উপরে চলে যায়। ফাইরাজ বোনের দিকে চেয়ে বলে,,

” এনারা টুইনস আপু?

” হ্যাঁ। মম আসলো না যে?

” মম আর ড্যাড আসছে আমি খবর টা শুনে আর থাকতে পারি নি তাই চলে এসেছি। আচ্ছা এনা কোথায়?

” এনা তো বাহিরে গেছে হাঁটতে।

” ওহ সেদিন হাসপাতালের সামনে এনার সাথে দেখা হয়েছিল। এনা চিনে না আমায় আমি ঠিক চিনে ফেলছিলাম।

” ওহ্ ঐ দেখ এনা চলে এসেছে।

কথাটা বলে ফারাহ্ সদর দরজার দিকে তাকাতে বলে। এনা একটু ফ্রেশ হাওয়া খেতে বাহিরে গিয়েছিল। সোফায় সেদিন হাসপাতালের সামনে দেখা লোকটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ফারাহ্-র পাশে বসে বলে,,

” ভাবি ইনি কে?

” আমার ভাই। দেখোনি কখনো আসলে ও তো এখানে ছিলো না।

” ওহ্ সেদিন বললেই পারতেন উনি তোমার ভাই।

ফাইরাজ স্মিত হাসে। হেনা এসে এনার পাশে বসে। এনার হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠে। এনা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে শান ফোন করেছে। ফোন টা রিসিভ করে,,

” হ্যালো এনা আমি আরহাম কে দিয়ে একটা পার্সেল পাঠিয়েছি একটু কষ্ট করে বাসার পাশের মাঠটায় এসে কালেক্ট করো। আসলে আমি একটু দরকারে বাহিরে এসেছি।

” আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

ফোনটা রেখে হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হেনা একটু হেল্প কর। সামনের মাঠটায় গিয়ে দাঁড়া আরহাম একটা পার্সেল নিয়ে আসতেছে ওটা নিয়ে আয়।

হেনা মাথা ঝাকায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই ফাইয়াজ বলে উঠে,,

” আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি?

হেনা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ভদ্রতার খাতিরে বলে,, আসুন।

শান আজ এসেছে ডোস্টারলিম্যাব ডোজ নিতে। এনার সাথে বাকিটা পথ চলতে হলে আগে নিজেকে সুস্থ হতে হবে। ডক্টর জেলেক্স ডোস্টারলিম্যাব ডোজ টা শানের শরীরে প্রয়োগ করে।

হেনা আর ফাইয়াজ মিনিট দশেকের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আরহামের আসার নাম গন্ধ নেই। বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে আরহাম তার তেড়াবেকা দাঁত গুলো দিয়ে হাসতে হাসতে এদিকে আসতেছে। লোকটার হাসি মারাত্মক সুন্দর।

” ভাবি এই নিন আপনার পার্সেল।

পার্সেল টা হেনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে।

” আমি আপনার ভাবি নই।

” ওহ্ তাহলে বেয়াইন সাহেবা এসেছেন। দেখুন কি কপাল আমাদের আপনি ভাবির জন্য এসেছেন আর আমি ভাইয়ের জন্য। আচ্ছা উনি কে আপনার বয়ফ্রেন্ড?

” না ভাবির ভাই ভাইয়া লাগে আমার।

আরহাম মুখটাকে কালো করে বিরবির করে বলে,,

” ভাইয়া মানেই তো আজকাল ছ্যাইয়া ছ্যাইয়া।

হেনা আরহামের বলা কথাটা ভালো ভাবে শুনতে পায় নি দেখে বলে উঠে,,

” কিছু বললেন?

” না কিছু বলি নি। আসি আর একটু থাকলে রূপের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো।

হেনা হা হয়ে যায় কিসের রূপ আর কিসের ছাই। ফাইয়াজ হেনার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” চলুন তাহলে বাসায় ফেরা যাক।

” হুমম।

ফাইয়াজ আর হেনা পার্সেল টা নিয়ে চলে যায়। আরহাম গাড়িতে বসে সেই দৃশ্য দেখে। কেমন যেনো লাগছে তার। আগে তো এমন অনুভূতি হয় নি। কিসের জন্য হচ্ছে এমন বুজতেছে না আরহাম। হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করলে মন মেজাজ দুটোই ফুরফুরে হয়ে যাবে।

#চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে