আমার বোন প্রীতি পর্ব-২+৩

0
1090

#আমার_বোন_প্রীতি
#পর্ব_০২_ও_০৩
লেখক:_ #সানি_আহমেদ

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো সবাই। ততোদিনে ও কেমন যেনো চুপ হয়ে গেলো কারো সাথে কথা বলে না তেমন একটা। এমনকি আমার নানু নানা ভাইয়ার সাথেও না। তারপর ঐ যে জামা কিনেছিলো সেখান থেকে একটা পরলো, আর আম্মু বললো ছবি তুলতে কারণ, এই চুল ফেললে আবার কবে না কবে এমন বড় হবে তাই! (আমরা তো আর ওতো কিছু বুঝিনি যে ও আর আসবেনা) আর তাছাড়া এর আগে ও ওর সব ছবি ডিলেট করে দিয়েছিলো, কেনো করেছে জানিনা, হয়তো আল্লাহর ইচ্ছায়।

তারপর আমি ব্রাশ করছিলাম ও আমাকে না বলেই চলে গিয়েছিলো, আমি তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে জাস্ট ওর পিছনের অংশ দেখেছিলাম, আমি যদি জানতাম আমার বোন আর ফিরবে না তাহলে তো যেতেই দিতাম না। নানু, আম্মু অনেক কান্না করতেছিলো, নানু বারবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো, সাহস দিচ্ছিলো কিন্তু সে আর ফিরেও থাকায় নি আমাদের কারো দিকে! সোজা হেঁটে চলে গেছে।

হয়তো আল্লাহ আস্তে আস্তে সবার থেকে মায়া উঠিয়ে ফেলেছিলো! এদিকে অন্য সবাই নাকি বুঝতে পেরেছিলো যে ও হয়তো আর থাকবে না, কারণ কিছু কিছু লক্ষন প্রকাশ পায় সেগুলা দেখে, কিন্তু আমরা কেউ বুঝিনি। ওর চেহারা ভেংগে গিয়েছিলো, একদম শুকনা হয়ে গেছিলো, আর চোখ ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিলো।

যাই হোক, আমার আম্মুও আমাদের আদর করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো, এই জীবনে কোনোদিন আমাদের ছাড়া কোথাও এক রাত ও থাকেনি আমার আম্মু, ঐ জায়গায় অনিশ্চিতভাবে কতো দিনের জন্য প্রিতীর সাথে থাকবে তাতো আর জানেনা তাই। আমি আবার খাওয়া দাওয়ায় প্রচুর অনিয়ম করি, আম্মু খাইয়ে না দিলে খেতাম না এরকম ছিলাম, সেজন্য আম্মু বারবার আমাকে বলেছিলো যাতে ঠিক মতো খাই, ছোট বোন ২ টার খেয়াল রাখি। তারপর তারা মেডিক্যাল গেল।

কেবিন নিয়েছিলো যাতে ওর কষ্ট না হয়, আর প্রাইভেট মেডিক্যাল এর কেবিন ভাড়া কতো তাতো সবাই ই জানেন!
১৮ তারিখ রাত ১২ টা পর্যন্ত আমি ওর সাথে কথা বলছি, বুঝাইছি নিজে কান্না করছি। তখন আম্মু, আর আমার ২ মামা মেডিক্যাল ছিল। মামারাও অনেক কষ্ট করছে,আম্মু ওর রুমে সোফায় ঘুমাতো মামারা মেডিক্যালের মসজিদে, আমার আব্বু তখন বাসায় আমাদের সাথে ছিল। তো রাত ১২ টা বাজে ও বলে আপু রাখ, নার্স আসছে চুল কাটতে। আমি বলেছিলাম তুই টেনশন করিছ না তুই ফালা আমিও ফালায়া দিবো, তারপর হাসলো আর বললো ঠিকাছে।

আবার বললো,”জানোছ আমার কেবিনে টিভি, ফ্রিজ সব আছে, আর তুই কালকে আসিস না তুই তো জার্নি করতে পারোছ না। “আহারে আমার বোন রে! ১৯ তারিখ সকাল ৯ টায় ওর অপারেশন। পরে সকালে আমি নানু, নানাভাই যাই ৭ টায়। ও তখন বেডে শুয়ে ছিলো, আম্মু বলছিলো সব আয়না সরিয়ে ফেলেছে যাতে ও নিজেকে এই অবস্থায় দেখতে না পারে, নাহলে তো অনেক কান্না করবে। কিন্তু ওয়াশরুমে আয়না থাকায় ও নাকি ওর মাথার চুল নাই এটা দেখে কান্না করছে অনেক আর বমিও করছে, তো আমরা যাওয়ার পর আমি ওর পায়ে শুরশুরি দিছিলাম কারণ ও খেয়াল করেনি আমরা যে আসছি।

তারপর আমার দিকে ফিরে যেই একটা হাসি দিছে গো আপুরা, আমি এখনো ভুলতে পারিনা। আমি বলছিলাম তোরে অনেক সুন্দর লাগতাছে, একটা ছবি তুলি একটু হাস! তারপর ও হেঁসে আমাকে বললো ঐখানে পিজ্জা আছে তুই আর নানু খা, আমার ছোট বোনটার কতো খেয়াল ছিলো। এরপর আমি অসুস্থ হয়ে গেছিলাম, জার্নি করায়। তাই আমি শুয়ে ছিলাম তখন ওরে রেডি করায় নেয়ার আগে আব্বু বলছিল, তুমি আমার আব্বা। টেনশন করিওনা।নতুমি না আমার সাহসী মেয়ে। আল্লাহ ভরসা সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার আব্বু আম্মু সহ সবাই অঝোরে কাঁদছিলো।

পরে ওরে অনেক সাহস দিল। আমি যে চোখ খুলবো ঐ এনার্জি টুকুও পাচ্ছিলাম না, আমি শুধু শুনছি। তারপর ওকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাচ্ছিলো, আমাকে কেউ উঠায় নি,নভাবছে সহ্য করতে পারবোনা তাই। কিন্তু আমি তাও উঠে গিয়েছিলাম, কিন্তু এবারও ওকে সামনা সামনি দেখতে পারিনি শুধু ওকে নিয়ে যাচ্ছে এটুকুই দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম। আহারে আমার বোন রে আমার কলিজার টুকরা রে! আহারে আল্লাহ।
পরে ওকে ওটিতে নেয়া হয় আমরা বাইরে সবাই কাঁদছিলাম আর দোয়া করছিলাম। এই যে আমি এরকম সিচুয়েশনে ছিলাম আমার ২ টা ফ্রেন্ড ছাড়া একজন ও আমার খোঁজ নেয়নি! প্রায় ১২ ঘন্টা পর মানে রাত ৯ টায় ওকে ওটি থেকে বের করে একটা রুমে রাখে! ডাক্তার রা বলে অপারেশন সাক্সেস্ফুল।

আমরা সবাই তো খুশি, আমরা কি আর জানতাম যে এক অংশ ও তারা বের করতে পারেনাই। এরপরও আমি নির্লজ্জের মতো ফ্রেন্ডসদের গ্রুপে বলতাম তোরা সবাই দুয়া করিছ, কে জানে কার দোয়ার উছিলায় আমার বোনটা ভালো হয়! কিন্তু তারা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজেদের আলাপ চালিয়ে যেতো! আহারে! তারপর আমি ভাবলাম আমি মেডিক্যাল থাকবো কিন্তু আম্মু বললো বাসায় বাকি বোনেরা একা আমি যাতে চলে যাই।

পরে আমার মামার রিকুয়েস্ট এ আমাকে ওকে দেখতে দেয়া হয়! যদি বিশ্বাস করতে আপুরা পুরা শরীরে মনে হয় তার দিয়ে ছিদ্র করে রাখছে.। আহারে আমার বোনরে কতো কষ্ট সহ্য করছে! আমি তো দেখেই কান্না শুরু করছি, ও তখন চোখ খুলে আমাকে ডাকতে শুরু করলে ডাক্তার রা আমাকে বের করে দেয়, কারণ মাত্র এতো বড় অপারেশন হইছে এখন কথা বললে স্ট্রোক করতে পারে! আর স্ট্রোক করলেই শেষ।
পরে আমি বাসায় চলে আসলাম নানুদের সাথে। আর তো মেডিক্যাল যাইনি!

প্রতিদিন আম্মুর সাথে কথা বলতাম, কি অবস্থা ওর, আম্মুর কি খবর এইসব ব্যাপারে। আর আমার আব্বু মেডিক্যাল টু বাসা, বাসা টু মেডিক্যাল যেহেতু সবাই একই বাসায় তাই নানুদের বাসায় খেতাম! তো ২ দিন পর প্রিতীকে বেডে আনা হয়, আমরা ভাবি যাক আলহামদুলিল্লাহ ও হয়তো সুস্থ।

তারপর আস্তে আস্তে কথা বলতো আমার সাথে, মানে আমি যদি জিজ্ঞেস করতাম কেমন আছত? ২ মিনিট পর আস্তে আস্তে বলতো ভালো আছি। কথা বলতে পারতো না, মাথার চারপাশ খুলে সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে রাখছিলো। তো আম্মু সারাদিন বরখতমের দোয়া পড়তো, আর ও হিসাব রাখতো আম্মু কতোবার পড়ছে।
এদিকে আমার অবস্থা খারাপ সবাই বলছিলো তোর বড়টার তো অবস্থা খারাপ বাসায় আয়, আম্মু বলে অইগুলারে আল্লাহর কাছে রাইখা আসছি, আমার আল্লাহ দেখবো, এদিকে আমি এই মেয়ের কাছে থাকি,যদি আমারে দেখতে চায় তখন আমি এতো দূরে কেমনে আসমু। তো সবাই আম্মুকেও বাসায় আনতে চাইছিলো কিন্তু পারেনাই। এরপর আস্তে আস্তে ও একটু সুস্থ হইছে, মানে বসতো আর খালি হাসতো। মানুষ বলে না যে মরার আগে মানুষ সুস্থ হয়।

আমরা তো বুঝিনাই, আমার মামারা শয়তানি করতো খালি ওরে হাসাতো, যাতে ওর কষ্ট না হয়। আমার বড় মামা বলতো তুমি বাসায় গেলে মুনত্বাহা, মরিয়ম(আমার কাজিন)সবাইর চুল ফেলে দিবো তখন ও খালি হাসতো।আমার মামারা বলতো যেনো নিষ্পাপ হাসি।
আমার আব্বু ততোদিনে মেডিক্যালেই থাকত, মেডিক্যাল থেকে বাসা দূরে হওয়ায় আসা যাওয়ায় প্রব্লেম হত, আর আব্বুর মন মানতো না! হয়তো আল্লাহ তাই চাইছে যে তার মেয়ের লাস্ট সময় গুলাতে যাতে বাবা মায়ের কাছে থাকে।
আমার আব্বু নিচে শুইতো, আম্মু থাকতো সোফায় প্রিতী তো ওর বেডে আর মামারা মসজিদে। ও আবার বলতো আধো আধো গলায় যে কতো কষ্ট হইতাছে সবার আমার জন্য! এদিকে বাসায় শুধু আমরা ৩ বোন।
তো মেডিক্যাল যাওয়ার ৫ দিনের মাথায় ও যখন একটু সুস্থ হইছে তখন আমার একদম ছোট বোন দেখা করতে গেছে, প্রিতী নাকি ওকে দেখেই কান্না করে দিছে। হয়তো বুঝতে পারছে যে আর থাকবে না, এরপর ওকে যখন ফলের রস খাওয়ানো হতো ও নাকি খেতে চাইতো না, আম্মু যখন বলতো বাবা তাড়াতাড়ি খাও, তাইলে দ্রুত সুস্থ হইবা, নইলে তোমার আব্বুর কষ্ট হইয়া যাইবো এতো টাকা দিতে, তখন ও খাইত।

কারণ ও অনেক চিন্তা করতো এসব নিয়ে,তাই আম্মুও এগুলা বলে খাওয়াইত। এর মাঝে মেডিক্যালের ৬ দিনের দিন ডাক্তার এসে আম্মুরে বলে আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করেন, এসব রোগী অপারেশনের পর হয় প্যারালাইসিস /মারা যায় আপনার মেয়ে তো দিব্যি সুস্থ, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এই সুখ বেশিক্ষন আর সয় নি !

#আমার_বোন_প্রীতি
#পর্ব_০৩
লেখক:_ #সানি_আহমেদ

দুপুরের দিকে ওর মাথার সেলাই খুলে যায় আর পানি বের হতে থাকে বালিশ পুরা ভিজে যায়। আর আমার বোন তাও কিচ্ছু বলেনা যে ওর কষ্ট হইতাছে, তারপর আম্মু দেখে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে করতে নার্সকে ডাক দেয় উনারা আবার ডাক্তার কে ডাকে তখন তিনি বলে আবার অপারেশন করাতে হবে।

এদিকে ওর বমিও বেড়ে যায়! বুঝতেই তো পারতেছো মাথার সেলাই ছুটে গেছে তার মধ্যে বমি ডাক্তার বলে ইমার্জেন্সি অপারেশন করাতে হবে নইলে শেষ! পরে আমার আম্মু তো কান্না করতে করতে শেষ যে দিবেই না, কারণ ডাক্তার আজকেই বলে গেছে যে এসব অপারেশনের পরে কি হয়! এদিকে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আর অপারেশন করাবে না! যদি বিপরীত কিছু হয়।

কিন্তু এদিকে আমি বাসায় সবাইকে বুঝাই ঐদিকে আমার ছোট মামা মেডিক্যালে সবাইকে বুঝায় যে দেখেন এখন অপারেশন না করাইলে ও আমাদের সামনে কষ্ট পাইতে পাইতে শেষ হয়ে যাবে, আবার ভাববে যে টাকার দিকে তাকিয়ে হয়তো ওরে আমরা অপারেশন করাইতাছি না।

এখন অপারেশন করাই, আল্লাহ চাইলে হয়তো সুস্থ ও হতে পারে! তখন সবাই রাজি হয়। ঠিক করা হয় ৭ দিনের দিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় ওর আবার অপারেশন হবে। তাই অপারেশনের আগে খাবার দেয়া যাবেনা। এদিকে আমার আম্মু তখনো তেমন একটা রাজি হয়নাই।
তাই আমরা ডাক্তারকে বলে স্পেশাল ভাবে আলাদা নার্স রাখি গার্ড দেয়ার জন্য যদি আম্মু কিছু খাইয়ে দেয় আমার বোনক, কারণ মায়ের মন ত, পরে তো অপারেশনের সময় ওর সমস্যা হবে।

এদিকে আমার বোনকে আম্মু জিজ্ঞেস করে বাবা বাড়ি যাবা না, ও বলে না। এতোদিন বলতো যাবে ঐদিন বলে যাবেনা, আমার বোন হয়তো বুঝতে পারছে। এতোদিন আম্মু আধা ঘন্টা /১ ঘন্টা পরপর ওকে জুস খাওয়াতো যেহেতু অন্য কিছু খেতে পারবেনা! আজকে আমার বোন নাকি মেডিক্যাল থাকা অবস্থায় ঐ প্রথম আম্মুকে আম্মু বলে ডাক দেয়।

তখন আম্মু নামাজ পড়ছিলো আম্মু তো অবাক হয়ে যায়, কারণ ও ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না! ও ২ বার ডাক দিছে আম্মু তাকাইছে ও বলে আম্মু খুধা লাগছে জুস খাওয়াও! আম্মু তখন অঝোরে কান্না করা শুরু করে কারণ ওরে আর বলে নাই যে সেকেন্ড টাইম অপারেশন হবে, এদিকে আম্মু ট্রাই করছে খাওয়ানোর জন্য কিন্তু মামা আর নার্সদের জন্য পারেনাই।

আব্বুও গেছিলো খাওয়াইতে যখন শুনছে ও নিজের মুখে খাইতে চাইছে। এতো বড় শরীরে কি আর ফলের রসে পেট ভরে! তাও আজকে দিতেছে না দেখে ও বলছে তখন আম্মু বলে বাবা তোমার মাথার সেলাই খুলছে তো ড্রেসিং করানো লাগবো তাই খাওয়ানো যাবেনা। কারণ মিথ্যা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না, নইলে ও অনেক হাইপার হয়ে যেতো।

তারপর ও এইটা শুনে নাকি কিচ্ছু বলেনাই উল্টো ঘুরে শুইয়ে পরছে। তো ওটিতে নেয়ার আগে আম্মু ওরে দোয়া দরুদ পড়াইতাছে। আম্মু কালেমা পড়াইতে গিয়ে তখন ভুলে বরখত্মের দুয়া পড়ায়া ফেলছিলো(যেহেতু ২ টার শুরুতেই সেইম,আর আম্মু এতো দিন শুধু বরখতমের দুয়ায় পড়ছে কয় লাখ যেনো, তাই বারবার ঐটাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল) তখন ও নাকি হেসে বলে নিজে পারেনা আসছে আমারে পড়াইতে, তারপর নাকি নিজে নিজে কালেমা পড়ছে।

এরপরই ওকে ওটিতে নেয় আবার ঠিক ১২ ঘন্টা পর মানে ২৫ তারিখ সকাল ৬টায় ওর অপারেশন শেষ হয়। ওকে আবার আগের রুমে নেয়া হয় মানে ও এখন সেইফ, কিন্তু! এর কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর খিচুনি উঠে চোখ বড় করে ফেলে। আমার আব্বু এইটা দেখে সহ্য করতে পারেনা বের হয়ে আসে।
তারপর সব ডাক্তার রা ওর ঐ রুমে যায়, এদিকে এসব দেখে আম্মুরা তো কান্না করতে করতে শেষ, তারপর ওকে আই.সি.ইউ তে রাখে ৩ ঘন্টা, ওর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাওয়ায় নেয়া হয় লাইফ সাপোর্টে।

আহারে আমার ছোট বোনটারে! তারপর টানা ৩ দিন লাইফ সাপোর্টে, ওর ব্রেইন ডেথ হয়ে গেছিলো। একদম জ্ঞান নেই, এদিকে আমি এগুলা শুনে তো কান্না করতে করতে শেষ, আমার আম্মু খালি ওর রুমের বাইরে গিয়ে বসে থাকতেো আর কান্না করতো, ডাক্তার রা বলছিলো যাতে আম্মুর কেবিনটা ছেড়ে দিতে কারণ অনেক খরচ উঠছিলো, কিন্তু আম্মুর এক কথা উনি বাসায় যাবেননা, প্রিতীর জ্ঞান ফিরলে যদি আম্মুকে দেখতে যায় তখন কি হবে! এদিকে আম্মু নিজেকে অনেক দোষ দিতে থাকে, যে আম্মু কেন রাজি হইলো, কেন প্রিতীরে খাওয়াইলো না।

আম্মু পরে খালি বলছিলো আমি কেমন মা, যে আমার মেয়ে খাইতে চাইছে শেষবার আমি খাওয়াইতে পারিনাই। ওরে মিথ্যা কথা বলছি, যখন আবার ঐ রুমে ওরে ঢুকাইছে না জানি ওর কেমন লাগছে যে ওর আম্মু ওরে মিথ্যা বলছে! এগুলা ভেবে ভেবে আম্মু তো শেষ।

এদিকে ২৭ তারিখ আমার যে ২টা বান্ধুবী খবর নিতো তার মধ্যে একটা আসে, এসে রুটি বানিয়ে আমাকে আর আমার বোনদের খাওয়ায় তারপর বলে আবার বিকালে আসমু। এদিকে আম্মু আমাকে তখন বলে প্রিতীর নাকি জ্ঞান ফিরছে, আমি তো খুশিতে শেষ, সবাইকে ফোন দিয়ে বলছি। আমি কি আর জানতাম যে আমার বোন আর নাই।

আমার আম্মুও জানতো না, ২০২১ সালের মার্চের ২৭ তারিখ ভোর ৫ টায় রোজ শনিবার আমার ময়না টা, আমার বোনটা আমাদের ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়, এই দুনিয়াবি ঝামেলা থেকে মুক্তি পায়, এই পাপের দুনিয়া থেকে রেহাই পায়। এই ক্ষনস্থায়ী জীবন থেকে হাজার কষ্ট নিয়ে দূরে চলে যায়।

আমার এই ছোট বোনটার ১ মাস ২১ দিন পর ১৫ তে পা দেয়ার কথা ছিলো অথচ এর আগেই সে পাখি হয়ে উড়ে যায় মুক্ত আকাশে।

২৭ তারিখ সকালে আমার ফ্রেন্ড যখন আমাদের বাসায় ছিলো তখন ই আম্মু ফোন দিয়ে বলেছিলো যে প্রিতীর নাকি জ্ঞান ফিরছে, আসলে আমাদের যেই ডাক্তার উনি প্রিতীর অপারেশনের পর আবার নোয়াখালী চলে গিয়েছিলো, আরেকটা সার্জারি করাতে। তাই সবকিছু এতো সহজ ছিলো না।
২৭ তারিখ প্রিতী মারা যায় ভোর ৫ টায়, অথচ উনারা আমাদের বলে ওর নাকি জ্ঞান ফিরছে। আসলে মানুষের বিবেক সম্পর্কে কি আর বলবো! ডাক্তাররাও মরা মানুষ নিয়ে ব্যবসা করে।

প্রতিদিন আমার আম্মু তাহাজ্জুদ পড়তো, যিকির করতো, কিন্তু ২৭ তারিখ আম্মু ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। আল্লাহ হয়তো এটাই চেয়েছে। এর আগে আবার ওর হাত, পা বেঁধে রাখছিলো। যদি ওর জ্ঞান ফিরে এরপর যদি হাত পা ছড়াছড়ি করে তাই। আমার বোনটা কতো কষ্ট করছে কতো কষ্ট পাইছে। এছাড়া সবাই যে বলে লাইফ সাপোর্টে মরা মানুষ রেখে বলে বেঁচে আছে টাকা খাওয়ার জন্য, এজন্য প্রিতী যেই ৩ দিন ছিলো ২ দিন ই আম্মু যখন যেতো তখন ই ওর বুকে তারপর পেটে, মেশিনে লক্ষ্য রাখতো।

কিন্তু যেদিন মারা যায় ঐদিন আম্মু যে ঘুমিয়ে পরেছিলো, ফজরের সময় উঠছে তারপর আম্মুর নাকি কেমন জানি লাগছিলো, সেজন্য নামাজ পড়ে দৌঁড়ে গেলো ওর রুমের বাইরে। নরমালি ৮ টায় ঢুকতে দেয়, আর অন্য সময় আম্মুরা ঐ টাইমেই যায়। কিন্তু আজকে আম্মুর খারাপ লাগায় ৫ টায় ওর রুমের বাইরে বসে কান্না করছিলো। তখন ই তো আমার বোনের প্রান যায়।

তারপর আম্মু দেখে তারা ছোটাছুটি করছে, আম্মুকে এভাবে বসে বসে কান্না করতে দেখে একটা জুনিয়র ডাক্তার এর মায়া হয়, উনি প্রিতীর ব্যাপারে সব জিজ্ঞেস করে, তারপর বলে সমস্যা নাই আল্লাহ ভরসা।

তারপর ৩ ঘন্টা বাইরে বসে থাকার পর ৮ টা বাজে আম্মুকে ঢুকতে দেয়া হয় ততোক্ষনে তো আমার বোন আর নাই! তাও তারা ঢুকতে দিচ্ছিলো না ঐ ভালো ডাক্তারের কথায় আম্মু যেতে পারে।
তারপর অনেক কান্না করে বলে,”প্রিতী, বাবা উঠো আম্মুরে ডাক দাও.!

চলবে…….?

[ এক আপুর জীবন থেকে নেওয়া ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে