#আমার_বোন_প্রীতি
#পর্ব_০৪ (শেষ পর্ব)
লেখক:_ #সানি_আহমেদ
বাবা উঠে দেখো তোমার আম্মু তুমার পাশে” ঐ ডাক্তার টাও বলেছিলো ডাকতে, তারা তো সবটাই জানতো, কিন্তু উনি জুনিয়র হওয়ায় চাকরি হারানোর ভয়ে আর বলেনি। এদিকে আম্মু ধরতে চাচ্ছিল, নার্সরা দেয়না, তারপর অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর আম্মু ওকে জড়ায়া ধরে, ঐদিন আর আম্মু এতো কিছু চ্যাক করে নাই, কারণ এমনেই অনেক্ষন পর ধরতে দিছে রুমে ঢুকতে দিছে তাই আর খেয়াল ছিলো না।
তারপর ৯ টার দিকে ঐ ডাক্তারের হয়তো খারাপ লেগেছিলো তাই আমার আব্বুকে বলে, আপনারে একটা কথা বলবো কিন্তু বড় স্যারকে এটা বলবেন না, আসলে আপনার মেয়ে আর নাই। এটা যখন একজন বাবা শুনে তখন তার কেমন লাগতে পারে! উনি বলেন আপনি বড় স্যারের কাছে যান, উনি স্বীকার করবে না যদিও, তারপর আমি গিয়ে বলবো।
এরপর আব্বু বড় ডাক্তারের চেম্বারে যায়, উনি বলেন টেনশন নাই আপনার মেয়ে আছে দোয়া করেন। তারপর ঐ ভালো ডাক্তার টা এসে বলে স্যার উনারা অনেক কষ্ট করে এখানে এতোটুকু এসেছে তারপর সব বলল। এরপর বড় ডাক্তার বলে সরি, আপনাদের বাকি সব কিছু শেষ করে আপনাদের মেয়ে নিয়ে যান (আল্লাহ ঐ ভালো ডাক্তারকে ভালো রাখুক)তারপর আব্বু তো আম্মুর সামনে কান্না করতে পারছেন।
তাই আমার নানাভাই কে কল দেয়, উনি তো প্রিতীর জন্য অনেক পাগল। ঐদিন নানাভাই নাকি আবার স্বপ্ন দেখছিলো ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারপর আব্বু নানাভাইকে বললে উনি বলে, আল্লাহ ভরসা আমারে নিয়া টেনশন করোনা, আমার প্রিতীরে আল্লাহর ভালো লাগছে, তাই নিছে। আসলে আব্বু নানাভাই, আম্মু আর আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলো।
এদিকে নানভাই তখন বাসায় ছিলো, কান্না করতে করতে যখন বের হতে যাবে তখন দরজার সাথে বারি খায় আর অনেক কান্না করে প্রিতী আমার প্রিতী এরকম করে। আমরা তখন আমাদের বাসায় ছিলাম মানে নিচ তলায়। এগুলা পরে শুনেছিলাম। এদিকে এতোদিন আমার ছোট মামা বাসায় আসেনি ঐদিন এসে মাত্র ভাত খেতে বসেছিলো তখনি আব্বু মামাকে কল করে বলে আসতে, মামা যখন খাবার ছেড়ে জলদি উঠে যায় তখন নানুও বুঝতে পারে। কারণ নানাভাই, আব্বু কাউকে কিচ্ছু বলেনি।
তারপর নানু বুঝতে পেরে ৪ তলায় আন্টিকে ডাক দিতে যেয়ে মাথা ঘুরে পরে যায়! এদিকে বাড়ির সবাই জানে শুধু আমি আর আমার বোনেরা জানিনা। আমাদের শুনাতে বারণ করেছিল। আমার অবস্থা তো এমনিতেই খারাপ তার উপর আবার আব্বু আম্মু কেউ নাই তাই। আর মেডিক্যালে আম্মুও জানতো না। এজন্যই তারা সবাই প্ল্যান করে আম্মুকে বলে প্রিতীর জ্ঞান ফিরছে আর এরপরই আম্মু আমাকে বলে। এদিকে আম্মুকে আগে বাসায় আনতে হবে, নাহলে মেডিক্যালে শুনলে আম্মুকে সামলাতে পারবেনা কেউ।
তারপর সবাই আম্মুকে বলে যে প্রিতীকে এখন অন্য মেডিক্যালে ট্রান্সফার করাবে! তাই আম্মুকে বাসায় নিয়ে যাবে ফ্রেশ হয়ে সেখান থেকে আরেক মেডিক্যালে যাবে। আসলে এগুলা সব মিথ্যা কথা ছিলো। এদিকে আন্টি আসে আমাকে বলে তোর আম্মু আসতেছে!
আমি তো ভীষন খুশি, তারপর বলি তো তুমি কান্না করছো কেন.? বলে অনেকদিন পর তোর আম্মুর সাথে কথা বলছি তাই কান্না করতেছি। এরপর মামানি আসে তখন আবার মামানি প্রেগন্যান্ট। উনার অবস্থাও অনেক খারাপ। ডেলিভারির ডেইট সামনেই। উনি আসে আমাকে খাওয়াতে, কারণ জানে এগুলা শুনলে আমি আর খাবো না। তারপর আমি বলি, মামানি আম্মু আসতেছে আম্মুর সাথে খাব।
তারপর আম্মুকে আনার সময় সি,এন, জিতে আব্বু নাকি সহ্য করতে না পেরে অনেক কান্না করছিল, প্রিতী,প্রিতী বলে চিৎকার দিচ্ছিলো। ঠিকমতো নিজের মনের কষ্ট কমাতেও পারছিলো না আম্মু সামনে থাকায়, কারণ আম্মু তো জানেনা। আর আম্মুকে অনেক কষ্ট করে আনা হইছে। তারপর আম্মুকে যখন বাসার সামনে আনা হয় সবাই গেছে আম্মুকে দেখতে, আমিও আনতে গেছি আজকে ১০ দিন আম্মুকে দেখিনা। এদিকে সবাই তো জানে খালি আমি আর আম্মু বাদে।
তারপর আমার খালামনি বলে আমরা গ্রামে যাবো, আমি বলি কেন? বলে প্রিতী বলছে। তখন আমি বলি প্রিতী সুস্থ হইছে? বলে হুম, আসলে তখন আমার হিতাহিত জ্ঞান কাজ করছিলো না,সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তারপর আম্মু কিন্তু বুঝে যায় সবাই এরকম আসার কারণে তখন অনেক কান্না করে, আমি তো কিছুই বুঝতেছিলাম না। মানে কেমন জানি লাগছিলো। অনেকে হয়তো বলতে পারেন না বুঝার কি আছে! আসলে যার পরিস্থিতি সে ই বুঝতে পারে।আমি তো জানতাম আমার বোন সুস্থ হয়ে গেছে আর কল্পনাও করিনাই যে ও মারা যাবে।
তারপর আম্মুর কান্না করায় বুঝতে পারছি, তখন আমার কি কান্না! আমার আম্মুরে জড়ায়া ধরে এতো কান্না করছি কেউ আমাকে আর আম্মুকে ছুটাতে পারছিলো না। একেতো এতোদিন পর আম্মুকে পাইছি তাও আবার যেই আশা নিয়ে ছিলাম সেই আশাও শেষ। আসলে এই অনুভূতি বুঝানোর মতো না! এদিকে আস্তে আস্তে সবাই জানাজানি হওয়ার পর সবাই আসে। আমার বোনের বেস্ট ফ্রেন্ড বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলো।
আমার সো কলড ফ্রেন্ডরাও এসেছিলো আমার আম্মু আমার সামনে কান্না করতে পারছিলোনা, কারণ তখন আমার যেই অবস্থা ছিলো, তাই সবাই আমাকে বুঝাচ্ছিলো তুই এমন করলে তোর মার কি হবে? তোকে সামলাতে হবে যেহেতু তুই সবার বড়! কিন্তু কে শুনে কার কথা, তারপর আম্মু আমাদের ৩ বোনকে খাওয়ায় নিজ হাতে। তারপর আমাদের বলে কান্না না করতে এরপর উনি আমার থেকে দূরে গিয়ে আরেক রুমে গিয়ে ইচ্ছামতো কান্ন করে, আমাকে ঐ রুমে যেতে দেয়না। কারণ ঐসময় আম্মুর কান্না করার দরকার ছিলো। আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে বসেছিলাম। ঐদিন শবে বরাতের চাঁদ উঠছিলো।
আমি শুধু কান্না করছিলাম বাইরে বসে। তারপর আমার বোনকে আনা হয়। গোসল করানো হয়, আর সবার কি কান্না। যারা গোসল করাইছে তারাও কাঁনছে, ওরে যখন গোসল করানো হয় দেখে নাকি বুঝাই যাচ্ছিলো না ওর যে এতো বড় অপারেশন হইছে এতোদিন মেডিক্যাল ছিলো।
তারপর আমার ফুফাতো বোন বলে তুই দেখিছ না সহ্য করতে পারবিনা। মাথায় নাকি জাস্ট পিন মেরে দিছে! আমি বলি যে না এটাই লাস্ট আমি দেখবো। তারপর সবার প্রথমে আমি গিয়ে ওর মুখে হাত দিলাম। এতো সুন্দর এতো স্নিগ্ধ লাগছিলো মা শা আল্লাহ।
তারপর আম্মুকে ডাক দেয় আম্মুকে ধরতে দেয়না। আমি আবার আম্মুকে দেখে এতো কিছু সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাই। হায়রে মানুষ, আমার আম্মুকে তখন অনেকে বলে তোর এইটাও মারা যাবে। তখন আম্মুর কি অবস্থা হইছে বুঝেন! আম্মু আমাকে কোলে নিয়ে কান্না করতে করতে শেষ সবাই হাতে পায়ে তেল দিচ্ছিলো। আসলে আমি সব শুনছিলাম তবে চোখ খুলতে পারছিলাম না। সবাই তো ভাবছে আমিও শেষ আম্মুর কি কান্না! এদিকে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পুরুষেরা সবাই যাবে গ্রামে, আমাদের নিবেনা।
কারণ আমার জ্ঞান তখনো ফিরে নি,আর এরপরের দিন ছিলো হরতাল। এই অবস্থায় আমাকে বা আম্মুকে নেয়া রিস্ক হয়ে যাবে। তারপর জ্ঞান ফিরলে আবার কান্না শুরু করি আর বলি আল্লাহ আমারে নাও আমার বোনরে দাও। তারপর ওকে নেয়া হয় গ্রামে, এই যে তখন এতো সমস্যা দেশে, পরেরদিন হরতাল আবার লাশের গাড়ি নিতে লাগে অনেক টাইম, রাস্তায় জ্যাম কিন্তু আল্লাহর রহমতে খুব তাড়াতাড়ি প্রিতীকে নিয়ে গ্রামে পৌঁছায় সবাই আল্লাহর ইচ্ছায়।
এদিকে গ্রামে ও সবাই অনেক কান্না করছে। আর আমার দাদা বাড়িতে আমরা ২ বোন যাইনা। আমার দাদা দাদি নাই , আর ভালো লাগতো না তাই। একদিন ও বলছিলো যে, ও মারা গেলে যাতে ওকে নানাভাইয়ের বাড়িতে কবর দেয়া হয়! তাই নানাভাই বলে আমার প্রিতীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করবো ইন শা আল্লাহ। সেজন্য নানাভাইয়ের বাড়িতে কবর দেয়া হয় রাত ১ টা ১৩ মিনিট।
তখন আমার ছোট মামা আম্মুকে ফোন দিয়ে যেই কান্না! এই যে এতো কিছু হলো ও কান্না করেনি, সবাইকে সামাল দিছে এরপর আর না পেরে আম্মুকে ফোন দিয়ে অনেক কান্না করছে, তারপর আম্মু ওর কান্না দেখে ওকে শান্ত্বনা দেয়। কারণ তার ভাইকে সে এমন অবস্থায় কখনো দেখেনি, তারপরের দিন আমি ওর ঐযে নতুন জামাগুলা নিয়ে বসে বসে শুধু কান্না করছিলাম, ঐগুলা ও শুধু একবার করে পরতে পারছে। আহারে আমার বোনরে।
এখনো পাশে যখন তাকাই ওকে না দেখতে পেলে কলিজা ফেটে যায়। আমাদের একি রকম জামা কাপড়, আমার গুলা যখন নিতে যাই ওর গুলা দেখলেই মনে পরে, আশে পাশে সব ওর স্মৃতি, ওর বই খাতা, ওর জিনিসপত্র সব আছে শুধু ও নাই। ঘুমাতে গেলে পাশে ওকে না দেখলে খারাপ লাগা,কান্না করা, এগুলা তো আছেই।
আমার ছোট ২ বোনদের যখন দেখি একসাথে তখন আমার বুক ফেটে কান্না আসে, কারণ আমি তো এখন প্রায় একা, ওদের মতো আমারও তো একজন ছিলো যার সাথে হাসি, তামাশা,দুঃখ, কষ্ট সব শেয়ার করতাম। আসলে যাদের পিঠাপিঠি বোন আছে তারাই বুঝবেন।অনেক কষ্ট করছে আমার কলিজার বোনটা, সবাই আমার বোনটার জন্য কান্না করেই চলছে। তখন থেকে এভাবেই দিন চলছে আমাদের, তবে ভুলতে পারিনা।
আল্লাহ ওকে জান্নাতবাসি করুক আমিন,সবাই দুয়া করবেন আমার কলিজার টুকরা বোনটার জন্য।
…………সমাপ্ত…….