#আমার_বোন_প্রীতি
#পর্ব:_০১
লেখক:_ #সানি_আহমেদ
আমার আব্বু আম্মুর বিয়ের ৪ বছরের মাথায় আমি হই, যেহেতু অনেক প্রব্লেমের মাঝে আমি হই তাই সবারই আদরের। তারপর আমার জন্মের ঠিক ১ বছর ৩ মাস ১৫ দিন পর আমার একটা ছোট বোন হয়।
তো আমরা পিঠাপিঠি হওয়ায় আম্মুর অনেক কষ্ট হয়ে যেতো, এরপর আমার বোনের ৪ বছরের মাথায় আমার ২ টা জমজ বোন হয় আলহামদুলিল্লাহ, মানে টোটাল আমরা ৪ বোন। তো বুঝতেই পারতেছো আমার আম্মু অনেক কষ্ট করছে!
আমার ছোট বোনেরা যখন হইছে সবাই ভাবছে আমার আব্বু মনে হয় রাগ করছে মেয়ে হওয়ায়, কিন্তু আমার আব্বু বলছে রাগ করার কি আছে আমার তো খুশি লাগতেছে আল্লাহ আমার ঘরে ৪ টা জান্নাত দিছে আলহামদুলিল্লাহ, এভাবেই আস্তে আস্তে আমরা ৪ বোন বড় হতে থাকি।
তাছাড়া আমরা ৪ বোন অনেক লাকি ছিলাম যে এরকম আম্মু আব্বু পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আব্বু আম্মুর সাথে সব শেয়ার করি, তাই ফ্যামিলিতে আমরা সবাই বন্ধুর মতো।
যাক এভাবে দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিলো। আমি আর আমার মেজো বোন পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিলাম। তারপর যখন ইন্টারে উঠি তখন ই আসল সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের ফ্যামিলিটা পুরো উলোট পালোট হয়ে যায়, আমার যে মেজো বোন ওর ব্রে*স্ট টিউমার দেখা দেয়, আমার ফুপ্পির এই সমস্যা ছিলো পরে উনি মারা যায়।তো আম্মুও ভয় পেয়ে যায় এবং ডিসিশন নেয় অপারেশন করাবে! কিন্তু আমার বোন লজ্জায় বলতো ডাক্তারের কাছে যাবেনা। অনেক বুঝানোর পর গেলো ২০২১ এর জানুয়ারিতে ওর ব্রেস্টের অপারেশন হলো।
বলে রাখি আমাদের ৪ বোনের মধ্যে ওর চেহারা ছিলো সবচেয়ে সুন্দর মা শা আল্লাহ। আমরা যেহেতু পিঠাপিঠি তাই ও বেশিরভাগ আমার নানুদের কাছেই থাকতো।তো অপারেশনের সময় আম্মু ডাক্তার কে বলেছিলো ওর পুরো শরীর যখন চেকআপ করবে যে অন্য কোথাও টিউমারটা ছড়িয়েছে কিনা, তখন আম্মু বলেছিলো মাথাও যাতে সিটি স্ক্যান করে। কারণ ওর অনেক মাথা ব্যাথা ছিলো তখন।
কিন্তু ডাক্তাররা বলেছিলো চিন্তার কিছু নেই অল্প বয়সে এমন রোগ হয়েছে তাই টেনশনে এমন হয়েছে। তাও উনারা চেকাপ করে নাই আমার বোনের বয়স তখন ১৫ হয় নাই। তো এক মাস খুব ভালো ছিলো। ফেব্রুয়ারীর লাস্ট এর দিকে ওর বমি, চোখ ট্যারা +মাথা ব্যাথা দেখা দেয়! ও নাকি ডাবল ডাবল দেখতো।
তারপর এক রাতে ওর এতো বমি হয় যে তাড়াতাড়ি ডাক্তার এর কাছে নিলে উনি একজন নিউরোলজিস্ট সাজেস্ট করেন। উনি পরীক্ষা করার পর দেখলেন আমার বোনের ব্রেইন টিউমার হয়েছে
রিপোর্ট হাতে নিয়ে সেদিন আমার আম্মু আর প্রিতী(আমার বোন)গিয়েছিলো ডাক্তার এর চেম্বারে। আম্মু তখন বুঝছিল যে খারাপ কিছু হইছে তাই ওরে বাইরে বসিয়ে রেখে আম্মু চেম্বারে ঢুকলো। তারপর ডাক্তার বললো আপনার সাথে আর কেউ আসেনাই? কারণ মায়ের সামনে মেয়ের এই অবস্থার কথা কিভাবে বলবে তিনি তাই, তো আম্মু বলে আমাকে বলেন স্যার সমস্যা নেই।
এদিকে আম্মু তো কেঁদেই যাচ্ছে পরে ডাক্তার বললো প্রিতীর নাকি ব্রেইন টিউমার হয়েছে আর এটা প্রায় ২/৩ বছর যাবৎ, ওর ব্রেইন থেকে ব্রেস্টে ছড়িয়েছে। ও অনেক সাহসী ছিলো কখনো অসুস্থতার কথা আম্মুকে বলতেন না, সহ্য ক্ষমতা ছিলো অনেক। নাহলে কি আর এই বয়সে এতো ধকল সহ্য করতে পারে! তো ব্রেস্ট তো দেখলে বুঝা যেতো তাই সেটার অপারেশন আগে করে ফেলেছিলাম। আমরা তো কেউ জানতাম না যে ব্রেইন থেকে ব্রেস্টে ছড়িয়েছে।
এরপর ডাক্তার বললো ওকে ইমিডিয়েটলি অপারেশন করাতে সরকারি হাসপাতালে। তখন আম্মু কেঁদেই যাচ্ছিলো, আর বলেছিলো কতো লাগতে পারে, পরে উনি বলেন সরকারি তে করলে ৩/৪ লাখে হয়ে যাবে। তারপর আম্মু নিজেকে একটু ফ্রেশ করে আমার বোনের হাত শক্ত করে ধরে বের হলো, রাস্তায় নাকি ও অনেক বার আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছিলো ওর কি হয়েছে, কিন্তু আম্মু বলছে কিছু হয়নাই। কারণ মনোবল যাতে নষ্ট না হয় তাই আম্মু একথা বলেছিল।
আমরা সবাই আবার এক বাসায় থাকি, আমার নানুরা থাকে ৩ তলায় আমরা নিচ তলায়, খালামনিরা ৪ তলায়। তো আম্মু আর ঘরে আসলো না নানুরদের বাসায় চলে গেলো আর আমার বোন বাসায় আসলো, তো আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তো? বলে তেমন কিছুনা। পরে ও খেতে বসেছিলো তার মধ্যেই আমার খালাতো ভাই (বয়স ১০) ও এসে বলে প্রিতী আপু তোমার মনে হয় বড় কিছু হইছে, নানু, নানাভাই, মামারা সবাই কান্না করতাছে।
এইটা শুনে ও অনেক কান্না করা শুরু করে, আমি দৌঁড়ে নানুর বাসায় গেলাম গিয়ে দেখি সবাই কান্না করতেছে, যেহেতু আগেই বলেছি ছোট থেকে ও বেশিরভাগ নানুদের কাছেই থাকতো তো নানাভাই তো অস্থির হয়ে গেছিলো। পরে আমাকে বললো যাতে ওরে না বলি। এদিকে ঐ ডাক্তার এর কাছে আর আমরা যাইনি, উনি সরকারি হাসপাতালের কথা বলেছিলেন কিন্তু আমরা প্রাইভেটে দেখলাম যাতে ওর কষ্ট না হয়। তবে সেখানে তো খরচ আরও বেশি তবে কিভাবে যেনো এতো গুলা টাকা ১ সপ্তাহের মধ্যে জোগাড় হয়ে গেল! যিনি অপারেশন করবেন উনি আমাদের আত্মীয়।
যাক সব ঠিকঠাক ২০২১ সালের মার্চের ২১ তারিখ ওর অপারেশন হওয়ার কথা।
এদিকে ও শুধু রিপোর্ট দেখতে চাইত, সাইন্সের স্টুডেন্ট হওয়ায় জীববিজ্ঞান বইয়ে ওর লক্ষনগুলো মিলানোর ট্রাই করে, তখন ক্লাস 9 এ ছিলো। ঐসময় ও সারাদিন পড়ত ঘরে বসেই। আর শুধু কান্না করতো আমারে বলতো আপু আগে একবার পড়লেই মুখস্থ হতো এখন বারবার পড়ি তাও হয়না কেন! আর ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে বলছিলো ক্লাসে যা যা পড়ায় সব নোট যাতে ওরে দয়ে যায়, নইলে তো ও পিছিয়ে যাবে।
আমার বোন কি জানতো যে তার আর পড়ালেখা করা হবেনা! তারপর আস্তে আস্তে সময় ঘনাতে থাকে আমি শুধু কান্না করতাম আর ওর দিকে চেয়ে থাকতাম আর হাত ধরে রাখতাম, যেহেতু বুঝতেই পারছো পিঠাপিঠি বোন হওয়ায় সবসময় একসাথেই থাকতাম।
ও শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করতো তুই এতো কান্না করোছ কেন, কি হইছে আমার বল! আমি বলতাম কিছু হয়নাই এমনেই কান্না করি। এরপর অপারেশনের কিছুদিন আগে আম্মু আমাকে বলে এখন ওরে বল, যেহেতু আমি ওর সবচেয়ে কাছের তাই আম্মু আমাকেই বলতে বলেছিল। তারপর আমি বললাম, তোর ব্রেইনে টিউমার হয়েছে অপারেশন করাতে হবে।
ও তো চিৎকার করে কান্না করা শুরু করে আর বলে আমারে কি রোবট পাইছোত ?
দেড় মাসও হয়নাই একটা অপারেশন হইছে আবার কিসের অপারেশন। তখন ওরে বুঝালাম আর বললাম চুল ফেলতে হবে, এটা শুনে তো ও আরও রেগে যায়, কারণ মেয়েদের কাছে চুল জিনিসটা কি সবাই তো জানোই, আরও ওর ছিলো ঘন, সিল্কি চুল তারপর আমি বলি আমিও ফেলে দেবো চুল সমস্যা নাই, তখন ও রাজি হয়। তারপর বলে কয় টাকা লাগবে, আমি তখন মিথ্যা বলেছিলাম যে ১/১.৫ লাখ লাগবে, কারন এতো টাকা লাগবে শুনলে কখনো অপারেশন করাবে না। অনেক বুঝদার ছিলো যে! তারপরও বললো, এতো টাকা লাগবে!
আব্বুর টাকা দিয়ে আমি অপারেশন করাবো না, এমনেই অনেক টাকা খরচ হইছে আমার পিছনে, আর তোরা পরে আমারে যদি বলোছ যে আব্বুর সব টাকা আমি শেষ করে ফেলেছি,, তখন আমি বললাম সমস্যা নেই বড় হলে চাকরি পেলে সব শোধ করে দিছ, আর আমরা এগুলা কেন বলবো তুই আমাদের বোন না! যাক তারপর রাজি হলো, আমার ১৪ বছরের বোনটার মাথায় যে কতো চিন্তা ছিলো।
এর মধ্যে ও অনেক শপিং করে, ওর যা যা মন চেয়েছে সব কিনেছে হাসপাতালে পরার জন্য, তারপর আবার নিজ হাতে সবাইকে খাইয়ে দিয়েছিলো, সবাই কান্না করতে করতে শেষ, এরপর হঠাৎ ১৭ তারিখ ওর অনেক বমি হয়।
আম্মুকে একটুও কষ্ট দিতো না, নিজের বমি নিজেই সাফ করতো ঐ অবস্থাতেও। তারপর নানাভাই ডাক্তার কে কল দেয় উনি বলে কালকেই তারাতাড়ি যেনো মেডিক্যাল নিয়ে আসে কারণ বেশি বমি করলে এখন স্ট্রোক করতে পারে তারপর ১৮ তারিখ সকাল সকাল ওকে মেডিক্যাল নেয়ার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিল। আমারা কেউ কি আর জানতাম যে আমার বোন আর আসবেনা !
চলবে…..!