#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২১
#জান্নাত_সুলতানা
আর্শিয়ান এর রাগের প্রভাব মেয়ে টার উপর ভালোই পড়েছে।রাগের মাথায় অনেক টাই হিংস্র হয়ে পড়েছিলো।তখন সেটা আষাঢ় বুঝতে না পারলেও সকাল হতেই টের পেলো।বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতে গিয়ে শরীরের অসহ্য যন্ত্রণায় আবার বিছানায় বসে পড়লো।
আর্শিয়ান হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে মাত্র প্রবেশ করেছে। আষাঢ় কে এভাবে বসে পড়তে দেখে ত্বরিত হাতের প্লেট টেবিলে রেখে দ্রুত এগিয়ে এলো।আষাঢ় ঘুমানোর পরই আর্শিয়ান টের পেয়েছিল মেয়ে টার শরীরে জ্বর এসছে। তাই তো সকাল হতেই বুয়া কে বলে আষাঢ়’র জন্য নাস্তা বানিয়ে এনেছে। আষাঢ় আর্শিয়ান এর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
-“আপনার ভালোবাসার স্পর্শে প্রথম দিনেও এতো টা কাবু করতে পারে নি আমাকে।আজ আপনার হিংস্রতা যতটা করেছে।”
আর্শিয়ান কিছু বললো না। মেয়ে টা কি ভেবেছে সে প্রথম দিন তাকে ভালোবেসে স্পর্শ করেছে? আর করলেও এতো টা শক্ত সেদিন থাকতে পারতো?উঁহু। কখনো না আজকের চেয়েও দিগুণ খারাপ অবস্থা হতো মেয়ে টার।যেটা ওর ধারণাতীত।
আর্শিয়ান ওয়াশ রুম থেকে টাওয়াল ভিজিয়ে এনে মুখ মুছিয়ে দিলো।মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো,
-“এটা কিছুই না।তোমার এরচেয়ে ভয়ংকর অবস্থা করার ক্ষমতা আর্শিয়ান রাখে।শুধু তোমার দিক টা ভেবে আমি এতোদিন সেটার প্রখরতা তোমায় দেখায় নি।”
আষাঢ় খাবার টা মুখে নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হচ্ছে। কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। তাই চুপ করে কোনো রকম খাবার টা খেলো।খাবার শেষ আর্শিয়ান ওকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। ঔষধ খাইয়ে দিয়ে প্লেটে সব গুছিয়ে নিতে নিতে বললো,
-“এখন ঘুমিয়ে থাকো।ঘুম থেকে উঠলে পেইন হবে না আর।বিকেলে মার্কেট যেতে হবে। তাসফির বিয়ের জন্য আজই শপিং করতে যাচ্ছে সবাই।”
আর্শিয়ান আষাঢ় কে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলো।এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে নিজে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো।অবশ্য যাওয়ার আগে প্রেয়সীর কপালে নিজের রক্ষ ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়াতে ভুলে না।আষাঢ়’র ঘুমে বিভোর ততক্ষণে।
——-
-“আপনি ঘুমের ঔষধ কেনো দিতে গেলন আমায় তালুকদার সাহেব?”
আর্শিয়ান কথা বলে না।এখন বিকেল।দুপুরে খাবার সবার জোরাজুরিতে খেতে গিয়েছে আষাঢ়। খাওয়া হতে আবার এসে সে-ই যে ঘুমিয়েছে আর উঠে নি।সবাই অনেক ডাকার পরেও না।শেষমেশ ওকে রেখেই যেতে হয়েছে।বুয়া আছে বাড়িতে দু’জন সেইজন্য আর তেমন চিন্তা নেই।আর্শিয়ান অফিস থেকে সোজা সবার সাথে জয়েন করেছিলো।কিন্তু সব জানার পর দ্রুত বাড়ি চলে এসছে।
এসে টেনেটুনে ঘুম থেকে তুলেছে। আষাঢ় এখনো ঝিমিয়ে যাচ্ছে। আর্শিয়ান প্রচন্ড অসহায় বোধ করে। কি জ্বালা!বউ এর ভালোর জন্য ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি হয়েছে।
আর্শিয়ান ওকে টেনে ওয়াশ রুম নিয়ে গেলো।চাইলে কোলে তুলে নিতে পারতো।কিন্তু এতে কি হবে? এতে আষাঢ় কোলেও গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়বে।
আর্শিয়ান চোখে মুখে ওকে পানি দিয়ে দিলো।ঘুম কিছু টা কাটলো।তবে পুরাপুরি নয়।আর্শিয়ান এবার বিরক্ত হলো।গায়ের শার্ট খুলে ওয়াশ রুমের দরজায় রেখে আষাঢ়’র গলা থেকে ওড়না কেড়ে নিয়ে ওয়াশ রুমের মেঝেতে ফেলে দিলো। আষাঢ় ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকাল। আর্শিয়ান এর নেশাতুর দৃষ্টি আষাঢ় পিটপিট করা চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। শরীরে পানির ঝাপটা লাগতে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।চিড়চিড় করে উপর থেকে পানি পড়ে দু’জন কে কিছু সময় ব্যবধানে ভিজিয়ে জুবুথুবু করে দিলো।আর্শিয়ান ঝর্ণা ছেড়ে ক্ষান্ত হলো না। নিজের শরীর এর উষ্ণতা মেয়ে টার সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হলো। আষাঢ় মুচড়াল।সাপের ন্যায় আঁকাবাঁকা করলো শরীর। হাত আর্শিয়ান এর অধীনে শরীর টার উপর সম্পূর্ণ রাজত্ব চালাচ্ছে পুরুষ টা। আষাঢ় কোনো উপয়ান্তর না পেয়ে নিজেও আর্শিয়ান এর সাথে তাল মেলাল।
—–
-“কিরে বউ কোথায় তোর?
সুস্থ আছে তো?নাকি নিজের রূপ দেখিয়ে দিয়েছিস?”
সাঈদ এতো দ্রুত কথা গুলো বললো যে আর্শিয়ান কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তবে সাঈদ এর দিকে রাগী চোখে তাকাল।দাঁত কটমট করে কিছু বলবে তার আগেই শর্মিলা বেগম খাবার প্লেট নিয়ে হাজির হলো।মেয়ে টা হঠাৎ এতো কেনো ঘুমোচ্ছে কেউ বুঝতে পারছে না। এই নিয়ে টেনশনে রয়েছে সবাই।আর্শিয়ান মায়ের হাত থেকে খাবার প্লেট নিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে এলো।সবাই সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছে।
আর্শিয়ান রুমে এসে দেখলো আষাঢ় বসে আছে বিছানায়। ঘুম নেই এখন আর।তবে শরীর টা কেমন ঝিমঝিম করছে। বিছানা থেকে উঠার সাহস পায় না।আর্শিয়ান নিজে ওকে খাবার খাইয়ে দিলো। সাথে নিজেও খেলো।খাবার শেষ বই নিয়ে বসলো আর্শিয়ান। আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাতেই আর্শিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
-“পড়তে হবে।
না পড়লে আমার মনে, ঘরে, বাড়িতে কোথাও যায়গা পাবে না।”
আষাঢ়’র মন কিছু টা খারাপ হলো।তবে পরক্ষণেই আর্শিয়ান এর বলা রাতের কথা মনে পড়লো।কোনো রকম উক্তি ছাড়া পড়তে বসে গেলো।
—-
-“আয়াত শোনো?”
-“হ্যাঁ বলুন।”
-“আমাদের একটা বাচ্চা এলে ভালো হবে। আমার শাশুড়ী মা তাহলে আর আমাদের উপর রাগ করে থাকতে পারবে না।”
আয়াত তৎক্ষনাৎ থমথম খেলো। কথা ঘুরাতে মিথ্যা বললো,
-“কই মা রাগ করে আছে।
আপনি ও না!
সাঈদ পুরুষ টা অদ্ভুত বলা চলে।হাসি ঠাট্টা নিজের কাজ সব দিকে দিয়ে সে এগিয়ে। তেমন বাড়িতে কি হচ্ছে সেটাও সে বুঝতে পারে। শিউলি বেগম যে আগের মতো আর মেয়েদের ভালোবাসে না কিংবা অভিমান থেকে আর আগের মতো অতো কথাও বলে না সেটা ঠিক ঠাহর করতে পেরেছে সে।কিন্তু এখন আয়াত এর কথা হাসি পেলো।হাসেও বটে।মেয়ে টা এতো চাপা স্বভাবের। মুখ ফুটে কখনো কিছু বলবে না।কিন্তু সাঈদ বুঝতে পারে। শাশুড়ী তার অভিমান করে আছে। তাছাড়া আয়াত লেখা পড়া করছে। অনার্স প্রায় শেষ এর দিকে। এখন একটা বেবি হলে অনার্স ফাইনাল এক্সাম এর আগে হয়ে যাবে। আর রেজাল্ট এলে তখন চাকরির জন্য ট্রাই করতে পারবে। সব দিক বিবেচনা করে সাঈদ এর এটাই বেস্ট মনে হচ্ছে।সেটা হচ্ছে বাচ্চা।আয়াত চুপ করে আবার কাপড় ভাজ করায় মনোযোগ দিলো।সত্যি মা কেমন বদলে গিয়েছে। সাঈদ কে জামাই আদরের কোনো কমতি রাখে না।কিন্তু আগের মতো মেয়েদের সাথে ততটা মাখো-মাখো সম্পর্ক টা আর নেই।
আয়াত চাপা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাপড় গুলো ভাজ করে ওয়ারড্রব এর ড্রয়ারে রেখে এসে বিছানায় বসলো।পাশের দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করে সাঈদ এর পাশে শুয়ে পড়ে।সাঈদ টেনে নিজের কাছে নিলো আয়াত কে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“সব ঠিক হয়ে যাবে।
মন খারাপ করো না।”
আয়াত কিছু বলে না।চুপ করে প্রিয় পুরুষের বুকে লেপটে থাকে।
—–
তাসফিয়া শপিং করে একদম অনেক টা নেতিয়ে পড়েছে।
শরীর এলিয়ে দিতেই বিছানায় চোখে এসে রাজ্যের ঘুম ভীড় করলো।ঘুমের ঘোরে গলদেশ চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো।আর্তনাদ করে ওঠে মেয়ে টা ঘুমের মাঝেই।গলায় হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই নজরে এলো বলিষ্ঠ এক পুরুষের অবয়ব।
নাসারন্ধ্রে গিয়ে চিরপরিচিত একটা মাতাল করা সুবাস ঠেকল। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে শুয়ে তাসরিফ এর হাত জড়িয়ে ধরে তাসফিয়া ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো,
-“আর তো কিছু দিন মাত্র তাসরিফ ভাই। তখন তো আমি আপনার বউ হয়ে আপনার ঘরে থাকবো।তখন না হয় রাত জেগে বসে বসে আমায় দেখবেন। এখন ঘুম নষ্ট করে কি দরকার এসব করার?”
তাসরিফ এর শ্বাস আঁটকে আসার জোগাড়।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে কিছু সেকেন্ড চুপ করে রইলো।মেয়ে টা বড্ড অবুঝ এভাবে কেউ কথা বলে?সামনে বসা পুরুষ টা যদি শ্বাস আঁটকে মা’রা যায় তার দায় কে নিবে?তাসরিফ ফোঁস করে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। নিচু হয়ে তাসফিয়ার কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিলো।ঠোঁট জোড়া তাসফিয়ার কান ছুঁই ছুঁই করছে। তাসরিফ দুষ্ট হেঁসে বলে উঠলো,
-“আছে। কারণ রুমে থাকলে শুধু দেখাদেখিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তখন অনেক কিছু করতে হবে। যা এখন মন চাইলেও সম্ভব হবে না।তাই তোমাকে শুধু চোখ দিয়ে দেখার তৃষ্ণা না হয় এখুনি মিটিয়ে নেই।”
তাসফিয়া ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে পারছে না মেয়ে টা।তবে ভালো লাগছে। তাই আর কোনো কথা না বলে তাসরিফ এর হাত জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে গেলো।তাসরিফ বসে রইলো। প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে।কত সময় পেরুলো তাসরিফ জানে না। তবে মনে হলো এবার যাওয়া প্রয়োজন। যেই ভাবা সেই কাজ।চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে কি মনে করে আবার ফিরে এলো।নিচু হলো।তাসফিয়ার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “আমার প্রেয়সী।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]