#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা
[রোমান্টিক পর্ব। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
আষাঢ় কাবাড থেকে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে তড়িঘড়ি করে আবার সেটা ঠেলেঠুলে ড্রয়ারে রেখে দিলো।
ছি মানুষ টা বড্ড খারাপ হয়েছে। আগের ড্রেস খারাপ ছিলো যে এখন আবার রাতের পোষাক পরিবর্তন করতে হবে?
আষাঢ় জীবনেও পড়বে না এসব।
আর্শিয়ান ওয়াশ রুম থেকে এসে আষাঢ় কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“দেখেছিস?”
-“হ্যাঁ।
কি,,,
-“যা ওটা পড়ে আয়।”
আষাঢ়’র পুরো টা কথা শেষ করার আগেই আর্শিয়ান ওকে আদেশ করল।
আষাঢ় কিছু সময় থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। অতঃপর হঠাৎ বলে উঠলো,
-“বাজে এটা।”
ততক্ষণে আর্শিয়ান ওর একদম কাছে চলে এসছে।কাবাড বন্ধ করতে করতে বললো,
-“তোর চেয়ে বেশি না।”
-“আর্শিয়ান ভাই।”
আষাঢ় অসহায় কণ্ঠে ডেকে উঠলো।ভাই ডাক শুনে মাথা খারাপ হলো আর্শিয়ান এর।দুই হাতে মেয়ে টার বাহু খাবলে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠলো,
-“এই চুপ বেয়াদব কোথাকার।
আমি তোর ভাই? রোজ রাতে এতো আদরের পরেও তোর আমাকে ভাইয়ের মতো লাগে?”
আর্শিয়ান এর ধমকে আষাঢ় কেঁদে ফেললো।আহ্লাদী হলো।নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-“আমি কি করবো অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে তো।”
-“খবরদার আষাঢ় তোর মুখে আর একবার জাস্ট আর একবার ভাই ডাক যদি আমি শুনেছি তাহলে খুন করে ফেলবো বেয়াদব।”
আরো জোরে জোরে কান্না জুড়ে দিলো আষাঢ়। আর্শিয়ান রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে মাথার পেছনে এক হাত রেখে ঘাড় দু’বার কাত করতেই কিছু মনে পড়লো হঠাৎ। হাতের ব্যাগ টার দিকে তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝে গেলো।মেয়ে টা আস্ত একটা বজ্জাত। আর্শিয়ান কম কিসে?বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো,
-“লাভ হবে না। অভিনয় করে লাভ হবে না।যা পড়ে আয় এটা।”
আষাঢ় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো।কান্না থেমে গিয়েছে। কি অদ্ভুত মানুষ টা বুঝতে কি করে পারলো সে নাইটি না পড়ার জন্য এমন মরা কান্নার অভিনয় করছিলো?
-“তুই যাবি?”
আর্শিয়ান শান্ত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো। আষাঢ়’র ইচ্ছে করলো চিৎকার করে বলতে আমি যাব না।কি করবি শ্লা আর্শিয়ান এর বাচ্চা?কিন্তু চাইলে কি আর সব সম্ভব?
উঁহু।মুখ ভোঁতা করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
আর্শিয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ানো।কি মনে করে ড্রয়ার খুলে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।সন্দেহ হচ্ছে আষাঢ়’র উপর মেয়ে টা বড্ড ছেলেমানুষী করে।এখন ততটা বুঝদার নয়।আর্শিয়ান একটা ঔষধ হাতে পড়তে মেজাজ বিগড়ে গেলো।গম্ভীর মুখ টা হঠাৎ কঠিন হয়ে গেলো।চোয়াল শক্ত করে কত সময় এভাবে দাঁড়িয়ে রইলো জানা নেই। কিছু দিন পর মেয়ে টার এইচএসসি ফাইনাল এক্সাম। এই মূহুর্তে কোনো অঘটন ঘটে আর্শিয়ান চাইছে না। সে চায় না তার জন্য আষাঢ় নিজের ক্যারিয়ার গড়তে কোনো সমস্যায় পড়ে। কিন্তু মেয়ে টা নিজেই যেন সমস্যার একটা বস্তা।
অনেক্ক্ষণ আর্শিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় আসছে না।আর্শিয়ান এবার গম্ভীর স্বরে জোরে ডাকলো,
-“আষাঢ়?”
সময় গড়ালো।কিন্তু আষাঢ়’র খবর নেই।সাড়াশব্দ না পেয়ে আর্শিয়ান দিগুণ জোরে আদেশ করলো,
-“বেরিয়ে আয়!”
মেয়ে টার সাহস যেন দিনদিন বেড়ে চলেছে। আর্শিয়ান এগিয়ে গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজায় শব্দ করলো।গম্ভীর কণ্ঠ বলে উঠলো,
-“আমি বেরিয়ে আসতে বলেছি।”
খট করে দরজা টা খুলে আষাঢ় বেরিয়ে আসতেই আষাঢ় কে খপ করে ধরলো আর্শিয়ান বাহু খাবলে ধরে মেঝে থেকে শুন্যে তুলে নিলো।
বিছানায় নিয়ে ধপাস করে ফেলে দিলো। আষাঢ় ভয়ে গুটিয়ে গেলো।বুঝতে অক্ষম দরজা খুলতে লেইট হয়েছে সেইজন্য না-কি অন্য কারণ?
মানুষ টা এভাবে রেগে আছে কেনো?আষাঢ়’র চোখে ভীতি সৃষ্টি হলো।পেছনের দিকে যেতে নিলেই আর্শিয়ান খপ করে ওকে টেনে ধরলো।হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো।গাল চেপে ধরে আলগোছে। এতেই আষাঢ় ভয়ে জান বেরিয়ে আসার উপক্রম। আর্শিয়ান ভাই এমন নয়।রাগে না মানুষ টা।সব সময় গম্ভীর থাকে।কিন্তু এতো টা রাগতে দেখে নি আষাঢ় কখনো।
-“এই বেয়াদব কেনো নিস না মেডিসিন?”
আর্শিয়ান এর ধমকে পুরো ঘর যেন কেঁপে উঠল। আষাঢ় ভয়ে কান্না করে দিলো।গলা দিয়ে টুঁশব্দ বেড় করতে পারে না। আর্শিয়ান আবার ধমক দিলো,
-“কাঁদবি না। কথা বল।
কেনো নিস না মেডিসিন?”
আষাঢ় আর্শিয়ান এর হাতের উপর নিজের হাত রেখে কাঁপা অধর নেড়ে আওড়াল,
-“মমনে ছিললনা।”
-“চুপ।মিথ্যা বলতে বলি নি।
বলেছিলাম আমি কোনো বাহানা করবি না। এই তুই আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।”
আর্শিয়ান ওকে ছেড়ে দিতেই আষাঢ় উলটো দিকে ফিরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।গায়ে নাইটি নয়তো আষাঢ় রুম থেকে চলে যেতো।নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো।কিন্তু এমন পোষাক পড়ে বাহিরে গেলে যদি কারোর নজরে পড়ে তাহলে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে।আর্শিয়ান মেঝেতে বসে রইলো। এমন নয় আষাঢ়’র শারীরিক কোনো দুর্বলতা রয়েছে। বয়স মোটামুটি যা তাতে বাচ্চাও নেয়া যাবে। কিন্তু এতে কি হবে? আঠারো বছর হতে এখনো অনেক সময় বাকি।তাছাড়া মেয়ে টার লেখাপড়ার দিক টাও চিন্তা করতে হবে। ভাই নেই।ভবিষ্যতে বাবা মায়ের জন্য নিজ থেকে কিছু করতে পারবে। এমন নয় যে আর্শিয়ান দূর্বল। কিংবা নিজের বাবা মা সহ শ্বশুর শ্বাশুড়ির দায়িত্ব নিতে পারবে না। কিন্তু মেয়ে টা নিজে কিছু করলো অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল এটা ভেবে মাথা নিচু করে থাকতে হবে না।
আষাঢ় চোখ বন্ধ করে ছিলো।তবে বিছানায় পায়ের কাছে ওড়না আছে মনে পড়তে চট করে ওঠে বসলো।আর্শিয়ান বসে আছে নিচে। আষাঢ় খুব সাবধানে পা দিয়ে ওড়না টা কাছে আনলো।গায়ে জড়িয়ে পা টিপেটিপে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা খোলার জন্য হাত এগিয়ে দিতেই হাত কাঁপার জন্য পাশের টেবিল থেকে একটা বই নিচে পড়ে বিকট এক শব্দ হলো।আষাঢ় ভীত চোখে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে দরজা ছিটকিনি খোলার জন্য হাত বাড়াতেই আর্শিয়ান ঝড়ের বেগে এসে টেনে নিজের বক্ষের উপর নিয়ে নিলো মেয়ে টাকে।আষাঢ় ছটফট করে। আর্শিয়ান দরজা ভালো করে আঁটকে দেয়।আষাঢ় কে জড়িয়ে ধরে বিছানায় এলো।আষাঢ় কে বিছানায় ফের ফেলে দিলো ধপাস করে। তুলতুলে নরম বিছানা।
আষাঢ় ব্যাথা পায় নি।তবে চোখ বন্ধ করে নিলো।
আর্শিয়ান একটা একটা করে শার্ট এর বোতাম খুলতে লাগলো।রাগে পুরো শরীর যেন কাঁপছে।
সব ক’টা বোতাম খুলতেই আষাঢ় চমকে উঠলো। ভীত চোখে তাকিয়ে আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগলো।
আর্শিয়ান সব গুলো বোতাম খুলে শার্ট টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো মেঝেতে। এক পা দুই পা করে এগিয়ে গিয়ে আষাঢ়’র পা ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। ভয়ে লজ্জায় কান্না গিলে খেয়েছে আষাঢ়।
আর্শিয়ান সময় নিলো না।অধরে গভীর স্পর্শ করলো।প্রথমে স্পর্শে হিংস্রতার আভাস পেলোও ধীরেধীরে সেটা ভালোবাসায় পরিণত হলো।আষাঢ় হারিয়ে গেলো।ভুলে গেলো একটু আগে কি হয়েছে। জড়িয়ে ধরে সামনের পুরুষ টার ভালোবাসার প্রখরতা অনুভব করতে লাগলো।
——
আষাঢ় আর্শিয়ান এর বুকে লেপটে আছে।যত্ন করে আগলে রেখেছে বউ কে।আষাঢ় আঁকিবুঁকি করছে আর্শিয়ান এর বুকে।আর্শিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। মেয়ে টা একদম সরল।সন্ধ্যা রাতে কত কিছু হলো।ভোর রাতে এসে সব ভুলে গেলো।অবশ্য ওর অভিমান করা সাজবে না। কারণ দোষ টা নিজের। আর্শিয়ান পরপর বউয়ের একটা হাত টেনে সেটার উল্টো পিঠে চুমু খেলো।আষাঢ় ব্যাথাতুর শব্দ করতেই আর্শিয়ান বিচলিত হলো।জিগ্যেস করলো,
-“কি হয়েছে?
ব্যাথা?”
-“হ্যাঁ।
কাঁধে।”
আষাঢ় আহ্লাদী স্বরে জানালো।আর্শিয়ান গা থেকে কম্বল সরালো।সুন্দর কাঁধ টায় কালচে দাগ হয়েছে। রোজকার ভালোবাসার চিহ্ন এটা।আর্শিয়ান সেখানে অধর চেপে ধরলো। আষাঢ় মুচড়াল।সরে যেতে চাইলো।আর্শিয়ান শক্ত করে ধরে নিজের সাথে পেঁচিয়ে রাখে।বললো,
-“লেখাপড়া করতে হবে আষাঢ় মাস।অনেক বড়ো হতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে। বাবা মাকে ভবিষ্যতে দেখতে হবে।”
আষাঢ় কি বুঝতে পারলো আর্শিয়ান এর কথার গভীরতা? কে জানে!তবে মাথা নাড়ে।অর্থাৎ সে পড়বে ক্যারিয়ার এর দিকে ফোকাস করবে।
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]