আমার প্রেয়সী পর্ব-১৮+১৯

0
4

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৮
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]

-“এটা খেয়ে নাও।
আমি ঔষধ নিয়ে এসছি।প্লিজ।”

সাঈদ এর দিকে আষাঢ় রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো।তবে ব্যাথার তোপে কঠিন মুখখানা মলিন হয়।পেট এক হাতে চেপে ধরে আরেক হাতে পাশ থেকে একটা বালিশ তুলে সাঈদ এর দিকে ছুঁড়ে ফেলে। সাঈদ কোনো রকম সেটা ধরে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে।আয়াত এবার মুখ খুলে,

-“অসভ্য পুরুষ।
একটা কথা বলবেন না।”

সাঈদ বালিশ রাখে।কি কপাল বউ কে একটু আদর করেছে। এতেই বউয়ের অবস্থা কাহিল। আজ সারা দিন এই পেট ব্যাথা সহ্য করেছে মেয়ে টা।ঔষধ ও খাচ্ছে না।সাঈদ এর কি দোষ সে খুঁজে পাচ্ছে না। বউ কে ভালোবাসেছে।এতে বউ যে এভাবে মূর্ছা যাবে কে জানতো!
সাঈদ কণ্ঠে আদুরে করে ডাকলো আয়াত কে।আয়াত তাকাতেই সাঈদ সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ়’র পাশে গিয়ে বসলো।
গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“বিয়ের আগে অনেকবার বলেছিলাম শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। এখন কষ্ট কে পাচ্ছে?”

আয়াত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। সে তো পর্যাপ্ত খাবার খায়।কিন্তু তাও কেনো স্বাস্থ্য বাড়ে না?আয়াত বুঝতে পারে না।
আয়াত এর ভাবনার মাঝেই সাঈদ চিন্তিত স্বরে আবার বলে উঠলো,

-“আল্লাহ ভালো জানে তোমার বোনের যে কি হবে।
এই ব্যাটা আর্শিয়ান তো আস্ত একটা হাতি।বাচ্চা একটা মেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে না মেরে ফ,,,

-“সাঈদ ভাই?
স্টপ।”

আয়াত চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে দুই হাতের তালুর সাহায্যে।ছোট বোন আষাঢ় তার।বোন আর বোনের হাসবেন্ড নিয়ে এসব কথা যেমন লজ্জা পাচ্ছে তেমন রাগ হচ্ছে। সাঈদ নামক পুরুষ টা বড্ড নির্লজ্জ সেটা আয়াত জানে।বড়ো ভাই কে ছোট বোনের স্বামী রূপে এসব কথা বড়ই বেমানান।
সাঈদ একদম চুপ করে গেলো।
তবে কথা সে সত্যি বলেছে।
যদি একটু দয়ামায়া করে মেয়ে টাকে রেহাই দেয়।নয়তো কাল কেনো এক সাপ্তাহ আষাঢ় বিছানা ছেড়ে উঠা দুষ্কর হবে।

——

তাসরিফ বেশ কয়েকবার কল দিয়েছে। কিন্তু তাসফিয়া রিসিভ করছে না।অভিমানে মন টইটম্বুর।
কথা বলবে না। কিন্তু মন তো।শুনলো না।মন টা মানুষ টার কণ্ঠ শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
কল রিসিভ করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে শান্ত কণ্ঠে তাসরিফ ডাকলো,

-“তাসফি জান?”

তাসফিয়ার বুকের ভেতর হু হু করে উঠে। কণ্ঠনালী দিয়ে কোনো শব্দ বেড় করতে পারে না। চুপ করে থাকে।ঘনঘন নিঃশ্বাস শব্দ শুনতে পাচ্ছে তাসরিফ। মেয়ে টা কান্না করছে কি? হ্যাঁ। তাসরিফ অবাক হয় নাহ।এটা নতুন নয়।মেয়ে টা ওকে এক দুপুর না দেখলে পাগল হয়ে যায়। সেখানে আজ চব্বিশ ঘন্টার বেশি সময় মেয়ে টা তাকে দেখা তো দূর কথা পর্যন্ত বলতে পারে নি।
তাসরিফ মৃদু হেঁসে বলে উঠলো,

-“কথা বলবি না পাখি?”

তাসফিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
তাসরিফ একটু ঘাবড়াল না।বরং প্রাপ্তির হাসি বদন জুড়ে। ভালোবাসার মানুষ টার চোখে তার জন্য পানি। এরচেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে! সব ভালোবাসার মানুষ চায় সে যাকে ভালোবাসে তাকেও তার ভালোবাসার মানুষ ভালোবাসে।তাকে প্রায়োরিটি দিবে। ভালো খারাপ সব তারজন্য বরাদ্দ থাকবে।
তাসফিয়া কোনো রকম কান্না থামিয়ে জানালো,

-“আমার কষ্ট হচ্ছে তাসরিফ ভাই।”

তাসরিফ কথা টা সম্পূর্ণ এভয়ড করে গেলো।এখন কিছু বললেই তাসফিয়া আরো আহ্লাদী হবে।
আর তাসরিফ ইমোশনাল হয়ে যাবে। যা হয় সেটা তাসরিফ চাইছে না।
বেশ উৎফুল্লতা নিয়ে জানালো,

-“সিলেক্ট করেছে আমায়।”

-“এক মাস থাকতে হবে! ওমাই গড।”

তাসফিয়া আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলো।
তাসরিফ হাসি পেলো।তবে অন্তর জ্বলে উঠলো। রমণীর কান্না মাখা মুখ অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া দেখার জন্য লোভ হলো।কিন্তু সম্ভব নয়।কথা বলে শান্তনা দিলো তাসফিয়া কে।তাসফিয়া শুনলো।কিন্তু মন মানলো না।কান্না করতে করতে কথা বলতে বলতে এক সময় ঘুমিয়ে গেলো।তাসরিফ তাসফিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারে তাসফিয়া ঘুমিয়ে গিয়েছে। কল কাটে না সে। প্রেয়সীর ভারী ঘনঘন নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনতে শুনতে সে নিজেও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

———-

আষাঢ় তখন থেকে চুপটি করে আর্শিয়ান এর বুকে দুই হাত ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান ওর কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই আষাঢ় তড়িৎ মাথা তুলে তাকালো পুরুষ টার মুখপানে।
কি ভয়ংকর সেই দৃষ্টি। আষাঢ় অবুঝ নয়।সতেরো বছরের কিশোরী আষাঢ় ঠিক বুঝতে পারছে এই দৃষ্টি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।

-“আর্শিয়ান ভ,,

-“হুঁশ।”

আষাঢ়’র ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আর্শিয়ান।
আর্শিয়ান আষাঢ় কে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না। সেই কখন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্শিয়ান এর গভীর দৃষ্টি আষাঢ়’র শরীরে কাঁটার ন্যায় বিঁধছে যেনো।পেটে মুচড় দিচ্ছে।আষাঢ় ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে আছে আর্শিয়ান এর দিকে।
আর্শিয়ান তাকিয়ে আছে আষাঢ়’র দিকে।মুখে নয়।লাল টকটকে লিপস্টিক রাঙানো ঠোঁটের দিকে।
রাত এখন এগারো টা। আর্শিয়ান বউয়ের মুখপানে তাকিয়ে আছে।
মেয়ে টা সামন্য ছোঁয়া নিতে পারছে না। গভীর স্পর্শ কিভাবে নিবে?তার ভালোবাসার ভার সইতে পারবে কি?না-কি মূর্ছা যাবে?কষ্ট পাবে?কিন্তু সে তো কষ্ট দিতে চায় না বউ কে।আদর করতে চায়।মন ভরে ভালোবাসতে।অন্তরে থাকা ভালোবাসা সব উজাড় করে ভালোবাসতে।মেয়েটা কে গভীর ভাবে ছুঁতে চায়।পুরুষ সত্তাও প্রেয়সী কে চাইছে। কিন্তু আষাঢ়? ফিরে আসতে চায়।সময় দিতে চায় মেয়ে টাকে।
তবে মন যেন মানতে চায় না।তার এক্ষুণি চাই আষাঢ় কে। সবরকম প্রস্তুতি সে আগে থেকে নিয়ে রেখেছে।
আষাঢ়’র শরীর কেমন করছে।নারীর শরীর পুরুষের ছোয়া পেলে গলে যায়।সবদিক ভুলতে বসে। আর যদি থাকে ভালোবাসা তাহলে তো কোনো কথা নেই।নারী শরীর বুঝতে পারে কোন টা ভালোবাসার স্পর্শ কোন টা কামনার স্পর্শ।
তবে সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টা যে নিজে থেকে একধাপ ও এগিয়ে আসবে না সেটাও জানা আছে আষাঢ়’র।
ভয় লজ্জা দূরে ঠেলে অনেক সাহস সঞ্চয় করে আষাঢ় আর্শিয়ান এর অধর আলতো করে স্পর্শ করে। আর্শিয়ান বুঝি এই হালকা স্পর্শে আশকারা পেলো!না-কি অপেক্ষায় ছিলো বউয়ের অনুমতির?
কে জানে।আষাঢ় কে সরে আসতেই দিলো না। চুলের ভাঁজে শক্ত করে হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে একদম হামলে পড়ে আষাঢ়’র ঠোঁটে।গম্ভীর আর্শিয়ান পাগলের ন্যায় স্পর্শ করে বউকে।এলোমেলো হাতের স্পর্শ আষাঢ় কাবু হলো।অনুভব করতে চায় সামনে উন্মাদ মানুষ টাকে।
এভাবে থেকেই কখন বিছানায় চলে এলো আষাঢ় টের ও পেলো না।ঠোঁটের অসহ্য যন্ত্রণা আর বক্ষদেশ শক্ত দানবীয় হাতের স্পর্শ তাকে এতোটাই কাবু করেছে আর কোনো দিকে ধ্যান নেই মেয়ে টার।শুধু মনে হলো সামনের এই পরিচিত অতিপরিচিত পুরুষ টার তার অচেনা বড্ড অচেনা আগে কখনো পুরুষ টার এমন ভয়ংকর রূপ সে দেখে নি।অবশ্য দেখবে কি করে আগে তো আর স্বামী ছিলো না।
আর্শিয়ান আষাঢ়’র বয়সের কথা মাথায় রেখেই নিজে আগে থেকে সচেতন। তবুও আষাঢ়’র কষ্ট কম হলো না।বলিষ্ঠ শরীর টা ছোট দেহখানার উপর পাথর মনে হলো।তবে সর্বাঙ্গে আর্শিয়ান ভাইয়ের ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া কষ্ট গুলো গিলে নিয়ে আষাঢ়।শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে পুরুষ টার ভালোবাসার প্রখরতা অনুভব করতে লাগলো।
আর্শিয়ান উন্মাদ। আষাঢ় জড়িয়ে রেখেই স্বল্প আওয়াজে জানালো,

-“আপনি শান্ত হোন।
আমি আপনারই।ভালবাসি তো।”

-“জানি।”

আর কি বলবে আষাঢ় ভেবে পেলো না। মানুষ টা এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমন কিছু বলবে আষাঢ়’র ধারণা ছিলো না। তবে ভালো কিছু আশাও সে করে নি।তবে মনে মনে চাইছিল যেন জবাব টা এমন হয় যে, “আমিও ভালবাসি” কিন্তু আর্শিয়ান ভাই তো তেমন কিছু বললোই না। আর্শিয়ান আষাঢ়’র কপালে চুমু খেয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগী হলো।
আষাঢ় চোখ বন্ধ করলো। মেনে নিলো নীরব ভালোবাসার চিহ্ন। মানুষ টা তাকে ভালবাসে।এটাই চিরন্তন সত্য। মানুষ টা মুখে না বলে কিন্তু আষাঢ়’র মন জানে।

#চলবে…..
#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ়।
উঠে পড়ো।”

ভোরের আলো সেই কখন ফুটেছে। সারারাত সুন্দর মূহুর্ত শেষ আর্শিয়ান বউ কে নিয়ে শাওয়ার শেষ তাহাজ্জুদ পড়ে ফরজ পড়ে তবেই ঘুমিয়েছে। আষাঢ় এতোটাই শকট যে পুরো টা সময় শুধু আর্শিয়ান ভাই এর দিকে তাকিয়ে অপলক দেখে গিয়েছে পুরুষ টাকে।মানুষ টা এতো টা যত্নবান হবে আষাঢ়’র ধারণাতীত ছিলো। আষাঢ়’র তেমন প্রবলেম হয় নি।আর্শিয়ান অবশ্য ভয় ছিলো।বয়স কম বাই এনি চান্স যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সে নিজে পাগল হয়ে যেতো আর পরিবার তো আছেই।নিশ্চয়ই তারা ইচ্ছে মতো আর্শিয়ান কে ধুয়ে দিতো।আচ্ছা আর্শিয়ান ভাই তখন কি বলতো? নিশ্চয়ই বলতো আমার বউ আমি আদর করেছি। তোমরা সেটা নিয়ে কথা বলার কে?
আষাঢ় গুটিশুটি মেরে আরো কম্বলের তলায় ঢুকছে। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেইজন্য আরাম পেয়ে আরো ঘুমতে চাইছে। আর্শিয়ান পাশে বসে বউয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত এক মায়া এই সতেরো বছর বয়সের কিশোরীর জন্য। কেমন কিছু সময় না দেখলে নিজে কে পাগল লাগে। আর্শিয়ান আজো ভেবে পায় না কিভাবে এই ছোট একটা মেয়ের প্রেমে পড়লো ভালোবাসল সে।
আর্শিয়ান নিজের অজান্তেই আষাঢ়’র চুল গুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে মুচকি হাসছে।যে পুরুষ বোম ফাটালেও হাসার পাত্র নয়।আর সে কি না এই মেয়ের প্রেমে পড়ে কল্পনা করতো নিজের অজান্তেই হেঁসে ফেলতো।তখন নিশ্চয়ই আষাঢ় দেখলে বেহুঁশ হতো।জ্ঞান ফিরলে জিগ্যেস করতো, আর্শিয়ান ভাই আপনি হাসতে পারেন?” আষাঢ় আর্শিয়ান এর হাত টেনে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতেই আর্শিয়ান নড়েচড়ে বসলো। দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরিয়ে গম্ভীর স্বরে ডাকলো,

-“আষাঢ় মাস?”

আষাঢ় জবাব দিলো না।সে গভীর ঘুমে।কোনো নড়চড় নেই। আর্শিয়ান গায়ের কম্বল সরায়।গায়ে একটা আর্শিয়ান এর শার্ট। মাত্র একদিন পড়েছে আর্শিয়ান ওটা।আষাঢ়’র পছন্দ ছিলো শার্ট টা।তাই তো যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো।আর নামজ শেষ সুন্দর গায়ে থ্রি-পিস ছাড়িয়ে এটা পড়িয়ে দিয়েছে। ধবধবে সাদা সুন্দর শরীরে কালো শার্ট কি দারুণ মানিয়েছে।আর্শিয়ান নিজেই আস্তে শুঁকনো ঢুক গিলে। আবার ডাকলো,

-“ন’টা বাজে উঠো আষাঢ়।”

-“উঁহু।”

আষাঢ় ঘুমঘুম কণ্ঠে চোখ বন্ধ করে উঠবে না জানায়।আর্শিয়ান আষাঢ় কে টেনে তুলে শোয়া থেকে। চুল ঠিক করে দিতে দিতে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

-“কোনো বাহানা নয়।
উঠতে বলেছি।”

আষাঢ় পিটপিট করে তাকায়।সামনে বসা তামাটে বর্ণের পুরুষ টা একান্তই আষাঢ়’র। মনে পড়তেই শিহরণ বয়ে যায় শরীরে।একবার ছুঁতে ইচ্ছে করছে। মনের কথাই শুনলো আষাঢ়। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আর্শিয়ান এর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে সরে আসতে নিলেই আর্শিয়ান আঁটকে দেয়।ওর ঘাড়ে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত চাহনিতে। আষাঢ়’র শরীর মৃদু কেঁপে উঠে।আর্শিয়ান বললো,

-“ভেবেছিলাম বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করলে আদর করা যাবে না।কিংবা লজ্জায় সে নিজেই দূরে দূরে থাকবে।ভাবি নি আমার বউ আমার চেয়ে দিগুণ রোমান্টিক আর নির্লজ্জ হবে।কিন্তু কাল রাতে বুঝতে পারলাম আমার বউ আমার গভীর স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।”

আষাঢ় লজ্জা পেলো।তবে বারবার আর্শিয়ান এর মুখে বউ ডাকটা শুনে ভালো লাগায় মন দুলিয়ে উঠলো।
আর্শিয়ান ওকে ফ্রেশ করতে পাঠিয়ে বেডশিট চেঞ্জ করে নতুন করে বিছিয়ে নিলো।রুম গুছিয়ে নিচে থাকা এলোমেলো নিজেদের কাপড় তুলে ওয়াশ রুমের সামনে রাখা বিনে রাখলো।
আষাঢ় ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো আর্শিয়ান ফর্মাল গেটআপে অফিসের জন্য রেডি হয়ে গিয়েছে।
আষাঢ় কে আসতে দেখে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে জিগ্যেস করলো,

-“শরীর খারাপ লাগছে?”

-“না তো।”

টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো আষাঢ়।আর্শিয়ান হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,

-“ওকে।
রেডি হয়ে নিচে এসো।কলেজ ছেড়ে দেব আমি।”

-“কিন্তু?”

-“কি?

-“সাড়ে ন’টা বেজে গেছে।
ক্লাস তো সাড়ে ন’টায় শুরু।”

-“আচ্ছা।
যেতে হবে না।”

আর্শিয়ান চলে গেলো।আষাঢ়’র মন টা খারাপ হলো।লোক টা এমন কেনো?যাওয়ার সময় একটু আদর করে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?

——-

-“তোর লজ্জা করে না?শ্লা!”

আর্শিয়ান চোখ কটমট করে তাকালো সাঈদ এর দিকে।সাঈদ হাঁটতে হাঁটতে আবার বললো,

-“কিভাবে পারছি এতো ছোট একটা মেয়ের সাথে বাসর করে সবার সামনে বীরপুরুষ এর মতো হাঁটতে?”

আর্শিয়ান সিঁড়ি তে পা রাখার আগে ফিরে তাকালো সাঈদ এর দিকে।
আর্শিয়ান বাঁকা হেঁসে বললো,

-“কি বলতো?আমার বউ তো তাই আমার মতোই স্ট্রং।তোর এতো এতো প্রশ্ন না হয় আমার বউ এলে তাকে দেখে জবাব পেয়ে যাবি।”

বলে আর্শিয়ান হাঁটা ধরে। সাঈদ ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।কত সময় এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো জানা নেই ওর।আয়াত এসে ডাকতেই হুঁশ এলো।
অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো,

-“চলো,চলো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

সাঈদ আয়াত এর হাত ধরে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
কিন্তু আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আষাঢ় আসছে। আয়াত নিজের হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলো বোনের কাছে।
সাঈদ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো আষাঢ়’র দিকে।

——-

তাসফিয়া আগের মতো আর মনমরা হয়ে থাকে না।সবার সাথে মিলেমিশে থাকছে।তাসরিফ আজ পনেরো দিনের ও বেশি সময় হয়েছে বাড়ি নেই।মেয়ে টা নিজে কে কেমন শক্ত করেছে। আগে এক বেলা না দেখলে অস্থির অস্থির লাগত।এখন নিজে কে সামলেছে। তাসরিফ বুঝিয়েছে। মেনে নিয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সামলাতে হবে নিজে কে।ভেঙ্গে পড়লে হবে না।
তাসফিয়া ব্যালকনিতে বসে আছে। বাড়িতে কেমন একটা পিনপতন নীরবতা। কোনো সাড়াশব্দ নেই।ঝড় আসার পূর্বে যেমন আকাশ থম মেরে যায়। বাড়ি টাও আজ এমন থম মেরে আছে।
তাসফিয়া বোঝে পায় না সবাই এমন নিশ্চুপ কেনো।সন্ধ্যায় লিভিং রুমে এসে তাসফিয়া সোফায় বসে আছে। তায়েফ তায়ুশ কার্টুন দেখছে।ওদের জন্য টেবিলে একটু আগে নাস্তা দিয়েছে বুয়া।তাই ওরা দু’জন চলে গেলো।
তাসফিয়া রান্না ঘরের দিকে তাকালো সবাই মিলে কি এতো রান্না করছে মাথায় এলো না।রিমোট হাতে চ্যালেন চেঞ্জ করে নিলো।মিনিট দুই এক পেরুনোর পর সদর দরজায় কলিং বেল বাজলো।বুয়া গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চলে এলো।তাসফিয়া ভেবেছে হয়তো বাবা চাচার কেউ এসছে তাই সেদিকে নজর না দিয়ে টিভির স্ক্রিনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কানে চিরপরিচিত কণ্ঠ শুনতে পেলো।মনের ভুল কি?তাসফিয়া এদিকে না তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে বসে আছে। তাসরিফ ভ্রু কুঁচকে ফের শুধালো,

-“আমার জন্য একটা কফি নিয়ে আয়।”

তাসফিয়া ত্বরিত ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তাসরিফ ভাই উলটো ঘুরে উপ-রে চলে যাচ্ছে।
তাসফিয়া থম মেরে বসে রইলো। চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনের ভুল ভেবে বসে রইলো। এরমধ্যে বুয়া কফি হাতে নিয়ে এলো।তাসফিয়া কে বলে ওর হাতে ট্রে দিয়ে আবার নিজের কাজে চলে গেলো।
তাসফিয়া আশেপাশে তাকিয়ে মিনি ট্রে টা হাতে নিয়ে উপরে এলো।দোতলায় এসে হৃৎস্পন্দন দিগুণ হলো।অনেক সাহস সঞ্চয় করে তাসরিফ এর রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আর অমনি ভেতর থেকে এক জোড়া পুরুষালী হাত তাসফিয়া কে টেনে নিলো।ট্রে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো মেয়ে টা।তাসরিফ ওর হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে স্টাডি টেবিলের উপর রাখলো।দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে সোজা করে মাথার উপর তুলে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তাসফিয়া চুল খোঁপা বেঁধে রেখেছিলো একদম ঢিল করে।যেটা তাসরিফ এর ধাক্কায় খুলে গেলো।তাসরিফ নেশাময় দৃষ্টিতে তাসফিয়ার অধরপানে তাকিয়ে আছে। তাসফিয়া ভয়ে চোখ তখন পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আগে অনেকবার তাসরিফ ভাই তাসফিয়া কে ছুঁয়েছে। শুধু ছুঁয়েছে বললে ভুল হবে।অধর স্পর্শও করেছে। কিন্তু আজ কে মানুষ টাকে একটু আলাদা লাগছে। মনে হচ্ছে বহুদিন এর তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো সেও কিছু পাওয়ার ছুঁয়ে দেওয়ার তৃষ্ণায় মরছে।
তাসরিফ অনেক সময় তাসফিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে দুই জোড়া অধর একত্রিত করে দিলো।সময় নিয়ে অধরসুধা পান করে তবেই ছাড়লো প্রেয়সী কে।

——

রাতে খাবার খেয়ে আষাঢ় তায়েফ তায়ুশ এর সাথে বসে আছে। আর্শিয়ান বারকয়েক দোতলায় করিডরে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু আষাঢ় পাত্তা দিচ্ছে না।
আজ এতোদিনে বিয়ের অথচ মানুষ টা ওকে কোনো গিফট দিলো না। ভেবেই আষাঢ়’র মন খারাপ হয়।
তবে নিচে আর কতক্ষণ বসে থাকবে।রাত বাড়ছে। রুমে তো যেতেই হবে। তায়েফ তায়ুশ ও চলে গিয়েছে।লিভিং রুমে কেউ নেই। আষাঢ় অল্পস্বল্প ভয় পেয়ে দ্রুত উপরে চলে এলো।রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরতেই আর্শিয়ান ওকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। আষাঢ় চোখ পিটপিট করে। আর্শিয়ান নিজের হাতে থাকা একটা সুন্দর চেইন ঝুঁকে আষাঢ়’র গলায় পড়িয়ে দিলো।
শান্ত কণ্ঠে জানালো,

-“এটা অর্ডার করেছিলাম একটা অনলাইন শপ থেকে। কিন্তু দেশের বাহিরে থেকে আনাতে একটু সময় লেগেছে। কিন্তু কুরিয়ার অফিসে এসছে আজ তিন দিন। আমি যাওয়ার সময় পাই নি।আর কাবাড একটা শপিং ব্যাগ আছে দেখতে বলেছিলাম সেদিন। দেখেছিস?”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে