আমার প্রেয়সী পর্ব-১৫

0
111

#আমার_প্রেয়সী
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“আষাঢ় কোথায়?”

আর্শিয়ান এর শান্ত কণ্ঠ।তবে গম্ভীর স্বরে জানতে চাইলো।
কিন্তু কেউ কোনো রকম জবাব দিলো না। আর্শিয়ান এর রাগ এবার তরতর করে বেড়ে গেলো। অনেক কষ্টে সে নিজে কে এতো সময় ধরে কন্ট্রোল করে আসছে।কিন্তু এবার যেনো সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলো।বাড়ি ফিরেছে সে বিয়ের আগে। এয়ারপোর্ট গিয়েছিল সাঈদ এর বাবা কে রিসিভ করতে। ফিরে এসে আষাঢ় কে চোখের দেখা দেখতে পায় নি সে।অপেক্ষা করেছে বিয়ে বাড়ি কোনো ঝামেলা চায় নি সে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।বিয়ে পড়ানো হলো।মেহমান বিদায় নিলো।কিন্তু তার আষাঢ়’র দেখা পেলো না।
আর্শিয়ান এবার যেন অন্তরে জ্বলে উঠলো।চেচিয়ে উঠলো। উচ্চস্বরে আবার জিগ্যেস করলো,

-“আমার আষাঢ় মাস কোথায়?”

-“আর্শিয়ান?
তুমি ভুলে যাচ্ছো এখানে তোমার গুরুজনেরা উপস্থিত।”

আকরাম তালুকদার বললো।
আর্শিয়ান তোয়াক্কা করে না।বরং রাগ হচ্ছে। তবে নিজে কে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করলো।আজ কিছু দিন ধরে মন টা বড্ড অস্থির অস্থির করছিলো।এখন যেন সেটা দিগুণ হলো।
কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো আর্শিয়ান।
পেছন পেছন কচ্ছপের গতিতে তায়েফ তায়ুশ তাসফিয়া সাইফ গেলো।তাসরিফ চলে গিয়েছে দুপুরে।ও থাকলে নিশ্চয়ই খবর টা আর্শিয়ান এর কানে পৌঁছে যেতো।তাসফিয়া আয়াত এর সাথে ছিলো আজ সারাক্ষণ। তাই আষাঢ়’র কোনো খোঁজ পায় নি।তায়েফ তায়ুশ ছিলো বাচ্চাদের সাথে। সাইফ ছিলো কাজে।আষাঢ় কে কেউ দেখি নি।কিংবা খেয়াল করে নি।
আর্শিয়ান রুমে বসে।গম্ভীর হয়ে রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। একে একে সবাই রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে যাওয়ার সাহস করতে পারলো না কেউ।
তাসফিয়া তাও ভয়ে ভয়ে ডাকলো ভাইকে,

-“ভাইয়া!”

-“রুমে আয়।”

আর্শিয়ান কিঞ্চিৎ সময় পরে আদেশ করল।আর অমনি সব গুলো হুমড়ি খেয়ে রুমে ঢুকে গেলো।
আর্শিয়ান সব ক’টা কে পর্যবেক্ষণ করলো।
চোখ গোলগোল করে দেখলো সময় নিয়ে। রয়েসয়ে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো,

-“লাস্ট বার ওকে কে দেখেছিস?”

-“আমরা।খালামনির সাথে।
মেঝো মা কিছু বলছিলো।আষআপু কে কিছু নিয়ে জোর করছিলো। আপু বারবার না করছিলো।কিন্তু আমরা খেলছিলাম তখন সেইজন্য ভালো করে খেয়াল করি নি।”

তায়েফ এর জবানবন্দি শুনে আর্শিয়ান এর মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।হ্যাঁ আষাঢ় এর খালা কেও আর্শিয়ান ফিরার পর আর দেখতে পায় নি।তবে কি?আর্শিয়ান আর কিছু ভাবে না।সেন্টার টেবিলে রাখা চাবির গোছা হাতে তুলে লম্বা লম্বা কদম ফেলে বেরিয়ে এলো।রাত এখন হয়তো এগারো টার আশেপাশে। আয়াত আর সাঈদ কে কিছুক্ষণ আগে বাসর ঘরে পাঠানো হয়েছে। সাঈদ রুমে এসে আয়াত কে চেঞ্জ করে আসার জন্য বলে।নিজে আগে বরাদ্দকৃত রুম হতে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসছে। আয়াত মাত্র লেহেঙ্গা হাতে ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে এসছে। মন টা বিশেষ ভালো না।বোন কে আজ এমন একটা দিনে সে কাছে পায় নি।তারউপর মা তাকে কোথায় পাঠিয়েছে সেটাও কেউ জানে না। আয়াত ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর সাঈদ খাবার প্লেট হাতে যেই না খাবারে হাত দিবে তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।সাঈদ ভ্রু কুঁচকালো।ভাবলো হয়তো আবার এসছে কেউ বিরক্ত করতে। এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই।আষাঢ়’র জন্য আয়াত এর মন খারাপ।সাঈদ খাবার প্লেট দড়াম করে টেবিলে রেখে দরজা খুলতে গেলো।যাওয়ার আগে অবশ্য মনে মনে ঠিক করলো দরজা খুলেই কয়েকটা গালি দিবে বিচ্ছুগুলো কে। আয়াতও পেছন পেছন এলো।কিন্তু আর্শিয়ান কে দেখে বিচলিত হলো।আয়াত এগিয়ে এসে জিগ্যেস করলো,

-“ভাইয়া ওর খোঁজ,,,

-“আয়াত খালামনি এখন সিলেট কোথায় থাকে?”

আয়াত এর কথা সম্পূর্ণ না শুনে আগে আগে নিজে গম্ভীর স্বরে জিগ্যেস করলো।
আয়াত অবশ্য অবাক হলো।তবে আর কিছু বলার সাহস জোগাতে পারে না।
তৎক্ষনাৎ সাঈদ এর থেকে ফোন নিয়ে আর্শিয়ান এর হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশ পাঠিয়ে দিলো।
আর্শিয়ান ততক্ষণে নেমে গিয়েছে দোতলা থেকে।

——

আলতাফ তালুকদার বিছানায় শুয়ে আছে। সারাদিন বড্ড দখল গিয়েছে।শরীর টা খুব একটা ভালো নয় সাথে মন টা বড্ড খারাপ। মেয়ে দু’টো কে কত টা ভালোবাসে আলতাফ তালুকদার সেটা আর কেউ না জানুক শিউলি বেগম ঠিক জানে।তারপরও কি করে তিনি এমন কিছু করলো ভেবে পাচ্ছে না আলতাফ তালুকদার।
শিউলি বেগম এখনো রুমে আসে নি।হয়তো কিছু সময় এর মধ্যে চলে আসবে।
আলতাফ তালুকদার কোনো ভাবে রাজি ছিলো না আষাঢ় কে ওর খালার সাথে পাঠানো নিয়ে।রাজি ছিলো না বললে ভুল হবে। তিনি রাজি ছিলো তবে এখন পাঠাতে নয়।কিন্তু শিউলি বেগম শুনলো না।বাড়িতে অবশ্য কেউ জানে না। শুধু বড়রা মিলে এমন টা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর্শিয়ান এ বাড়ির বড়ো ছেলে।বয়স তার অনেক টা হয়েছে।আর্শিয়ান এর বয়সে তফাৎ আষাঢ় অনেক ছোট।
আলতাফ তালুকদার এর ভাবনার মাঝেই রুমে শিউলি বেগম প্রবেশ করলো।
এসেই বিছানায় স্বামীর পাশে বসলেন।রুম অন্ধকার।আলতাফ তালুকদার শুয়ে আছে।শিউলি বেগম মিনিট দুই এক বসে রইলো।আলতাফ তালুকদারও অপেক্ষা করলো স্ত্রীর মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু শিউলি বেগম কিছু না বলেই হঠাৎ করে স্বামীর বুকে মাথা রাখলো।আলতাফ তালুকদার আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলো।
শিউলি বেগম ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।অপরাধী কণ্ঠে বলতে লাগলো,

-“আমি একদম ভালো মা হতে পারি নি।খারাপ স্ত্রী খারাপ মা ঠিকই হয়েছি।কিন্তু খারাপ জা হতে পারবো না। বড়ো ভাবির কত শখ আর্শিয়ান কে নিয়ে। আমাদের আষাঢ় কে দিয়ে সে-সব কি করে পূর্ণ করবে ভাবি?”

-“ভাবি তোমায় কিছু বলেছে?”

-“নাহ।
কিন্তু আমার সাথে কতশত গল্প করেছে আর্শিয়ান এর বউ কেমন হবে কিভাবে চলতে হবে। কিন্তু আমাদের আষাঢ়?কিছুই নেই ওর মাঝে।ভাবির কল্পনা করা পুত্রবধূ আর আমাদের আষাঢ়’র আকাশপাতাল পার্থক্য। তাছাড়া বয়সে কত ছোট।এতো বড়ো বাড়ির বড়ো বউ হয়ে সবদিক সামলাতে পারবে না।বয়স কম। কিছু দিন দূরে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আলতাফ তালুকদার স্ত্রীর কথা শুনলো মন দিয়ে।মাথায় হাত বুলিয়ে হঠাৎ করে মুচকি হাসলো।তবে শিউলি বেগম সেটা দেখতে পেলো না। আলতাফ তালুকদার হঠাৎ বলে উঠলো,

-“আষাঢ় ছোট। আর্শিয়ান কিন্তু নয়।”

——–

বৃষ্টি মাথায় আর্শিয়ান রাত তিন টা বাজে এসে পৌঁছালো সিলেট।বাড়ির ঠিকানা সে পেয়েছে।গেইটের কাছে গাড়ি থামিয়ে দারোয়ান কে বারকয়েক ডাকলো।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।
আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামলো।বেশ কিছু সময় ডাকার পর একজন বেরিয়ে এলো ছাতা হাতে গেইট খুলে।আর্শিয়ান তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়ার কথা জিগ্যেস করলো।
দারোয়ান জানালো তারা বিয়েতে গিয়েছে পরশু।এরপর আর ফিরে নি।আর্শিয়ান অবাক হলো।লাল চোখ জোড়া মূহুর্তে হতাশাগ্রস্ত হলো।বুঝতে সময় লাগলো না এখানে আষাঢ় কে নিয়ে আসে নি।মস্তিষ্ক সচেতন হলো।বৃষ্টির মধ্যেও চোখ জোড়া জ্বলে উঠলো।গাড়িতে বসে আবার গাড়ি স্টার্ট করলো।অনেকটা পথ যাওয়ার পর একটা ব্রিজের ওপর গাড়ি থামালো।
গাড়ি থেকে নামার আগে একটা সিগারেট ধরালো। সেটা তিন চার বার ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে ধোঁয়া ছাড়লো।এটা সচারাচর খাওয়া হয় না।খুব কম মাসে কিংবা তার-ও বেশি সময় এটা কে সে ছুঁয়েও দেখে না।এটা খাওয়া শুরু করেছিলো যখন বিদেশ থেকে ফিরলো।আষাঢ় কে নিয়ে মনে মনে ভাবতো।আষাঢ়’র মতিগতি যখন বুঝতে পারে নি।নিজে কে নিজে মনে মনে শান্তনা দিতো।আষাঢ় তার বোন।কিন্তু মন মানতো না।মাথায় প্রচুর পেইন হতো এসব মন মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করে সে তিক্ত বিরক্ত। এরমধ্যে আষাঢ়’র উষ্কানি।প্রায় পাগল প্রায় অবস্থা। তখন টেনশনে একদিন খেয়ে ছিলো।তবে কোনো বিশেষ লাভ হয় নি।সেই ঘুরেফিরে আষাঢ় তার মাথায় ঘুরতে থাকতো।আজ অনেকগুলো খেয়েছে।আর্শিয়ান গাড়ি থেকে নামার পর বৃষ্টির মাঝে সেটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে গাড়ি ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো।
চোখ জোরা লাল হয় আছে। যে-কেউ দেখলে এই মূহুর্তে ভয় পাবে পুরুষ টাকে।
বৃষ্টির পানিতে কিছু চুল কপাল বেয়ে পানি গুলো ঠোঁট ছুয়ে থুতনিতে জমে টপটপ করে নিচে পরছে।আর্শিয়ান দুই হাতে মুখ ডাকলো।হঠাৎ গাড়িতে রাখা ফোন টা বেজে উঠল। আর্শিয়ান দ্রুত ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কিছু শোনার পর মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।কিছু না বলে নিঃশব্দে ফোন কেটে বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

-“চব্বিশ ঘন্টা হওয়ার আগে আমি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো আষাঢ় মাস।অপেক্ষা কর।জানি তো ঘুমাস নি।অপেক্ষার প্রহর তবে এখন থেকে গুনতে শুরু কর কাল রাতে তুই মাহমুদ আর্শিয়ান তালুকদার এর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে এই এই বুকে এইখান টায় নিশ্চিন্তে ঘুমবি গড প্রমিস।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে